ট্রেসার মফিট অবশ্য ওখানেই আছে, কিন্তু ওকে ভাল সঙ্গী কেউ বলবে না। বেশির ভাগ সময় সে ঘুমিয়েই কাটায়। নিজের শেয়ারের কাজটুকু করতে হচ্ছে বলে গজর-গজর করে, আর বাকি সময় একা বসে পেশেন্স খেলে। ডাক কথা বলতে পছন্দ করে বলেই লোকজন ওকে ওই নাম দিয়েছে। আরেকটা কারণ হচ্ছে ওর নাকটা লম্বা আর ঠোঁটগুলো হাঁসের মত।
আজ সকালে ওর মেজাজ খুব খারাপ। ট্রেসার কোনমতে চারটে খেয়েই আবার শুয়ে পড়েছে। এখন দিব্যি নাক ডাকছে ওর। লারামি আসছে না কেন? লারামি চমৎকারর সঙ্গী।ওর সাথে কথা বলে মজা পাওয়া যায়–সে ভাল ফাইটারও বটে। ফাইটার সম্পর্কে ডাক বেইলির কিছু নিজস্ব মতামত আছে, এবং ওর মতে লারামিই হচ্ছে দলের সবার থেকে টাফ। পিস্তলে ওর দারুণ হাত, রাইফেলও সে ভাল চালায়। একদিন লারামি বস্-এর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে; ডাক এই ব্যাপারে নিশ্চিত। কিভাবে জেমস হার্ট খুন হয়েছে শুনে লারামি মনে খুব কষ্ট পেয়েছে।
এটা মোটেও শোভন হয়নি, বেলকে একা পেয়ে মন্তব্য করেছিল সে। হার্ট ভালমানুষ ছিল এবং ভাল একটা ফাইট দিতে চেষ্টা করেছিল। ওভাবে একটা আহত লোককে হত্যা করা কোনমতেই ঠিক হয়নি।
বস্ তোমাকে ওকথা বলতে শুনলে বিপদ আছে, সাবধান করেছিল ডাক। তুমি তো জানো সে কেমন?
তা জানি, একমত হয়েছিল লারামি। ওর চোখের ভাব কঠিন।
মনে মনে ডাক বেইলি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল লারামির কথাই ঠিক। বস্-এর হৃদয় বলতে কিছু নেই। ঠাণ্ডা মাথায় নিষ্ঠুর ভাবে মানুষ খুন করতে তার মোটেও বাধে না। লারামি এখন এখানে থাকলে ভাল হত। সোনা যে এখন আর এখানে নেই এটা ওকে জানাতে চাইছে সে। হয়তো ওগুলো পাচার করার কোন উপায় বের করেছে বস্। যাহোক রাতের বেলা ওগুলো বাসা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
বিরক্ত হয়ে ট্রেসারের দিকে তাকাল সে। টাক-মাথা গানম্যান হাত পা ছড়িয়ে বাঙ্কে শুয়ে নিশ্চিন্তে নাক ডাকছে। সকালে দু’জনের মধ্যে চিৎকার করে এক দফা ঝগড়া হয়ে গেছে। ট্রেসার ওকে পছন্দ করে না, এবং ট্রেসার অলস। গত চার দিনে সে একবারও বিছানা ঠিক করেনি। ঘর পরিষ্কার করাতেও সে সাহায্য করেনি। ওকে দিয়ে কখনোই বিশেষ কাজ করানো যায় না।
বাইরে বেরিয়ে গুদামের দিকে যাওয়ার সময়ে একটা ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনতে পেল ডাক। বস্ বা লারামিকে দেখতে পাবে মনে করে তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াল সে। ওদের কেউ নয়। সাদা গেল্ডিঙের ওপর বসে আছে একজন অপরিচিত লোক। ঘোড়া থামিয়ে লোকটা হাসল।
নামটা ঠিকই মেলে। তুমি ডাক বেইলি?
হ্যাঁ। ডাকের হঠাৎ মনে পড়ল ওর গান-বেল্টটা বাঙ্ক-হাউসে চেয়ারের পিছনে ঝুলছে। তুমি কে?
আমার নাম রেড রিভার রেগান। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে আড়মোড়া ভাঙল রেড। সে বলেছিল, সুন্দর গুছানো একটা জায়গা এটা, এবং কথাটা সত্যি। এটা খুঁজে বের করতে আমার বেশ সময় লেগেছে।
ডাক বেইলি দুশ্চিন্তায় পড়ল। নতুন মানুষ আসার ব্যাপারে কোন কথাই হয়নি, অথচ লোকটা তার নাম জানে। এখানে আসার পথটাও চেনে দেখা যাচ্ছে। কোমরে পিস্তল ঝোলাবার কায়দা দেখে বোঝা যাচ্ছে সে ওগুলোর ব্যবহার জানে। তুমি এটা কিভাবে খুঁজে পেলে? প্রশ্ন করল সে।
বস্ আমাকে বলেছে। আবার চারপাশ দেখে নিয়ে আস্তাবলের কাছে কতগুলো গাছের ছায়ায় নিয়ে ঘোড়াটাকে বাধল। সে বলেছিল এখানে আরও একজন আছে। ট্রেসার কি যেন নাম।
ট্রেসার মফিট। ও ঘুমাচ্ছে। সবসময়েই ও কেবল ঘুমায়। ওর স্বরে প্রচণ্ড বিরক্তি প্রকাশ পেল।
রনি লোকটাকে ঠিকই যাচাই করতে পেরেছে। একটা হাসি চাপল সে। তুমি কি ঘোড়াগুলোকে খাওয়াতে যাচ্ছিলে?
হ্যাঁ। ওটা ট্রেসারের কাজ। কিন্তু ওর মত অলস লোক আমি সারা জীবনে আর দুটো দেখিনি।
ফর্ক আছে? আমি সাহায্য করছি। খড় কোথায় আছে দেখিয়ে দাও।
ডাকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। রনির আগেআগে আস্তাবলে ঢুকল সে। পিছন দিকে বড় একটা খড়ের গাদা রয়েছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই সব ক’টা ঘোড়াকে খড় আর কিছুটা করে কর্ন দেয়ার কাজ শেষ হলো।
ডাকের সন্দেহ পুরোপুরি যায়নি। কিন্তু রেডের জড়তাহীন সহজ সরল ব্যবহারে সে ধাঁধায় পড়েছে। বস্ না পাঠালে জায়গাটা রেড কিছুতেই খুঁজে বের করতে পারত না। এটাকে নিজের বাড়ি বলেও মনে করতে পারত না। কথা বলার লোক, আর কাজেও সাহায্য পেয়ে সে খুশি। তাই বেশি প্রশ্নের মধ্যে গেল না। বস্ পাঠায়নি এমন কোন লোক আজ পর্যন্ত এখানে আসেনি। তাছাড়া বস্ না বললে লোকটার ওদের নাম জানার কথা নয়। আজ সকালে উঁচু স্বরে ঝগড়া করার সময়ে যে নামগুলো রনি শুনতে পেয়েছে, এটা সে আঁচ করতে পারল না।
খেয়েছ? হঠাৎ প্রশ্ন করল ডাক। রান্না করা কিছু বাড়তি খাবার রয়েছে, যদি চাও খেতে পারো। কফিও আছে।
নিশ্চয়! রনি একটা লম্বা শ্বাস নিল। বুঝতে পারছে ঘরের ভিতর ঢুকলে হঠাৎ বস্লাকটা যেই হোক-এসে হাজির হলে সে পালাবার সুযোগ পাবে না। অন্য কেউ এসে পড়লেও বিপদ হতে পারে। সে হয়তো ডাক বেইলির চেয়ে চতুর হবে। যা জানার তা তাকে ঝটপট জেনে নিতে হবে। এখানে সে যতক্ষণ থাকবে, প্রতি মিনিটে ওর বিপদের সম্ভাবনা বাড়বে।
জায়গাটা সত্যিই দারুণ, তাই না? ডাক হাসিমুখে ওর দিকে চেয়ে বলল। বস্ গোপন আস্তানা একটা খুঁজে বের করেছে বটে! ভেবে অবাক হতে হয় এটার কথা সে জানল কিভাবে। তবে তার ভাবসাব দেখে মনে হয় এই জায়গার কথা সে বহু আগে থেকেই জানত! অনেক আগে থেকে।