- বইয়ের নামঃ ভূমিকম্প
- লেখকের নামঃ শামসুদ্দীন নওয়াব
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
ভূমিকম্প
পূর্ব কথা
গরমের এক দিনে, পেনসিলভেনিয়ার ফ্রগ ক্রীকের বনভূমিতে রহস্যময় এক ট্রী হাউস উদয় হয়।
তিন গোয়েন্দা দড়ির মই বেয়ে ওঠে ওটায়। ওরা আবিষ্কার করে ট্রী-হাউসটা বই দিয়ে ভর্তি।
ওরা শীঘ্রি টের পায় ট্রী হাউসটা জাদুর। বইয়ে উল্লেখিত নানান জায়গায় ওদেরকে নিয়ে যেতে পারে। ওদেরকে শুধু কোন ছবিতে আঙুল রেখে সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে হয়।
এক সময় তিন বন্ধু জানতে পারে, ট্রী হাউসটার মালিক মরগ্যান লে ফে। রাজা আর্থারের ক্যামেট রাজ্যের এক জাদুকরী লাইব্রেরিয়ান সে। টাইম আর স্পেসে ভ্রমণ করে বই সংগ্রহ করার বাতিক তার।
মরগ্যান বলে, ক্যামেলটকে রক্ষার জন্য বিশেষ চারটি জিনিস খুঁজে বের করতে হবে। তাই এবারের অভিযানে বেরোচ্ছে কিশোর আর জিনা। তারপর…
১
বিছানায় উঠে বসল কিশোর। জানালা দিয়ে বাইরে চাইল।
আকাশ গাঢ় ধূসর। শীঘ্রি সূর্যোদয় হবে।
সময় হয়ে গেছে প্রায়, আপন মনে ফিসফিস করল ও।
গতকাল, জাদুর ট্রী হাউসে মরগ্যানের নোট বলেছিল, কালকে ভোরে চলে এসো।
বিছানা থেকে লাফিয়ে নামল কিশোর। জিন্স আর টি-শার্ট পরে নিল। এবার ব্যাকপ্যাক তুলে নিয়ে পা টিপে টিপে হল-এ বেরিয়ে এল।
জিনার কামরায় উঁকি দিল ও। জিনাকে দেখতে পেল না। সন্তর্পণে নীচে নেমে এসে বেরিয়ে পড়ল সদর দরজা দিয়ে।
বারান্দার সিঁড়ির ধাপে বসে ছিল জিনা। কিশোর ওর পাশে বসল।
কী করছ তুমি? প্রশ্ন করল।
পাখিদের গানের অপেক্ষা করছি, জানাল জিনা। তারপর তোমাকে ডাকতে যেতাম।
আকাশ গাঢ় ধূসর থেকে হালকা ধূসর হতে দেখল ওরা। পাখিরা এবার গান শুরু করল।
টুইট-টুইট, বলল জিনা।
টু শব্দটি না করে, কিশোর আর জিনা বারান্দা ছাড়ল। রাস্তা ধরে ফ্রগ ক্রীক উডসের দিকে চলেছে।
গাছ-গাছালির নীচে ঠাণ্ডা ভাব। বনভূমি ভেদ করে হন্তদন্ত হয়ে দড়ির মইটার উদ্দেশে চলল ওরা। সবচাইতে উঁচু ওক গাছটা থেকে ঝুলছে ওটা। আর গাছের মাথায় জাদুর ট্রী হাউসটা।
ট্রী হাউসটাতে দড়ির মই বেয়ে উঠল ওরা। ভিতরটা অনালোকিত।
মেঝেতে পড়ে থাকা চিরকুটটা তুলে নিল জিনা। জানালার কাছে ধরে জোরে জোরে পড়ল:
প্রিয় কিশোর ও জিনা,
ক্যামেলটের সামনে বিপদ, রাজ্য রক্ষার স্বার্থে
দয়া করে আমার লাইব্রেরির জন্য বিশেষ এই চারটি লেখা খুঁজে দাও:
সামথিং টু ফলো
সামথিং টু সেণ্ড
সামথিং টু লার্ন
সামথিং টু লেণ্ড
ধন্যবাদ,
মরগ্যান
গভীর শ্বাস টানল কিশোর।
মরগ্যানের লাইব্রেরির জন্যে কেন এগুলো খুঁজে বের করতে হবে কে জানে, বলল কিশোর। ক্যামেলটকে এগুলো কীভাবে রক্ষা করবে?
জানি না, বলল জিনা। তবে রওনা হওয়া যাক, যাতে রহস্যটা ভেদ করা যায়। আমাদের রিসার্চ বইটা কোথায়?
ট্রী হাউসের চারধারে নজর বুলাল ও।
পেনসিলভেনিয়ার বইটা, ওদেরকে সব সময় যেটা বাড়ি ফিরিয়ে আনে, এক কোনায় পড়ে রয়েছে। ওটার পাশে আরেকটা বই। জিনা। তুলে নিল বইটা।
এটাই সেটা, মৃদু কণ্ঠে বলল। বইটার প্রচ্ছদ দেখাল কিশোরকে। ওতে লেখা:
স্যান ফ্রান্সিসকো, ক্যালিফোর্নিয়া, ১৯০৬
ক্যালিফোর্নিয়া? বলল কিশোর, ভাল!
বইটার প্রচ্ছদে আঙুল রাখল জিনা।
আমরা ওখানে যেতে চাই, বলল ও।
বাতাস বইতে শুরু করল।
ট্রী হাউসটা পাক খাচ্ছে।
বন-বন করে ঘুরছে।
এবার সব কিছু নিথর হয়ে গেল।
একদম স্থির।
২
সুন্দর ড্রেস, বলল জিনা।
কিশোর চোখ মেলল।
জিনার গায়ে সেইলর কলারওয়ালা নীল-সাদা পোশাক আর সাদা। স্টকিং।
কিশোরের পরনে হাঁটু অবধি বাদামী প্যান্ট, জ্যাকেট, ক্যাপ আর টাই। ওর ব্যাকপ্যাকটা এখন চামড়ার ব্যাগ হয়ে গেছে। দুজনের পায়েই শর্ট লেস-আপ বুট।
এক গির্জার ঘণ্টা বাজতে লাগল।
ঢং, ঢং, ঢং, ঢং, ঢং।
পাঁচবার বেজেছে, বলল কিশোর। তারমানে ভোর পাঁচটা।
হ্যাঁ, বলল জিনা। জানালা দিয়ে বাইরে চাইল।
কিশোরও তাকাল। ভোরের বাতাস তাজা আর ঠাণ্ডা।
এক পাহাড়ের নীচে এক গাছে নেমেছে ট্রী হাউসটা। নির্জন এক পাথর বিছানো রাস্তায় রঙ করা কাঠের বাড়ি-ঘর আর গ্যাস লাইটের সারি দেখা গেল। রাস্তার ট্র্যাক ধরে চলেছে এক ট্রলি কার, পাহাড়ের চূড়ায় বাঁক নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
দূরে উঁচু-উঁচু দালান। দালানগুলোর পিছনে সূর্য নীল আকাশে গোলাপী আভা ছড়িয়েছে।
দারুণ লাগছে, বলল জিনা।
হ্যাঁ, বলল কিশোর।
রিসার্চ বইটা বের করে পড়ল:
১৯০৬ সালের ১৮ এপ্রিল, বুধবার
স্যান ফ্রান্সিসকো ছিল মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের সবচাইতে
বড় শহর। এখানে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ
বাস করত। দেশের অন্যতম তিলোত্তমা
নগরী ছিল এটি।
নোটবই বের করে তথ্যগুলো টুকে নিল কিশোর। ও লিখল:
স্যান ফ্রান্সিসকো-এপ্রিল ১৮, ১৯০৬
পশ্চিমের সবচাইতে বড় শহর
তিলোত্তমা।
চলো, যাই! অধৈর্য কণ্ঠে বলল জিনা।
কিশোর বইটার দিকে চাইল। ও আরও জানতে চায়।
পরে পোড়ো, বলল জিনা। কিশোরের কাছ থেকে বই আর নোটবইটা কেড়ে নিয়ে চামড়ার ব্যাগটায় রেখে দিল। আর সময় নষ্ট। করব না।
ট্রী হাউস ত্যাগ করল জিনা।