- বইয়ের নামঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী
- লেখকের নামঃ মাইকেল এইচ. হার্ট
- প্রকাশনাঃ সালাউদ্দিন বইঘর
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, আত্মজীবনী
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী
১. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রি:)
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী – মাইকেল এইচ. হার্ট / সম্পাদনায় – রামশংকর দেবনাথ
প্রথম সংস্করণ : এপ্রিল ২০১৯
ভূমিকা
“বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী” শিরোনামের বইটি প্রথম রচনা ও সংকলন করেন পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব মাইকেল এইচ. হার্ট।
এ গ্রন্থে তিনি সর্বপ্রথম হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি অন্যান্য শ্রেষ্ঠ মনীষীদের জীবনী সংকলিত করেছেন। এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যনীয়, শুধু তিনি নন, সারা বিশ্বের মানুষ স্বীকার করেছেন, হযরত মুহাম্মদ (স.)-ই বিশ্বের সেরা মানব।
একশ জন মনীষীর জীবনীকে এক মলাটে স্থান দেয়া খুব সহজ কাজ নয়। অনেকেই মাইকেল এইচ. হার্ট-এর নাম দিয়ে নিজেদের পছন্দমত মনীষীদের জীবনী বইয়ে সংকলিত করে দেন। তবে আমাদের মনে হয় এতেও খুব একটা খারাপ কিছু নেই। একজন না হোন অন্য কোনো মনীষীর জীবনী তো গ্রন্থে সংকলিত হচ্ছে। যদিও আমাদের প্রকাশিত গ্রন্থে মাইকেল এইচ, হার্টের গ্রন্থটিকে যথাযথ অনুসরণের চেষ্টা করা হয়েছে। শুধু কয়েকজন বাঙালি মনীষীকে গ্রন্থটিতে আবশ্যিকভাবে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে কয়েকজন মনীষীর (যে সকল মনীষীগণ আসলে পাশ্চাত্য দেশেই সুপরিচিত) পরিবর্তে। বাঙালিদের কাছে একেবারেই অপরিচিত এসকল মনীষীদের জীবনীর বদলে বাঙালি মনীষীদের জীবনী সংকলন করাই আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে। যদিও স্বদেশ ও বিদেশের সহস্র সহস্র মহান মনীষীদের মধ্য থেকে মাত্র একশ জন মনীষীকে বেছে নেয়া সত্যিই কঠিন কাজ।
আমরা এ গ্রন্থে জনকল্যাণকামী ধর্মপ্রচারকদের জীবনী দিয়ে জীবনী বর্ণনা শুরু করেছি। এছাড়া এ গ্রন্থে আরো সংকলিত হয়েছেন বিশ্বের বিখ্যাত বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সাহিত্যিক, রাষ্ট্রনায়ক, কবি, মানবতাবাদী জনসেবক এবং চিত্রশিল্পীদের। আমাদের প্রত্যাশা স্ব স্ব ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ায় আরোহণকারী এসকল মহান ব্যক্তিত্বদের জীবনী, তাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনসংগ্রাম, প্রচেষ্টা ও সফলতা পাঠকদের অনুপ্রাণিত করবে।
১. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রি:)
যে মহামানবের সৃষ্টি না হলে এ ধরা পৃষ্ঠের কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না, যার পদচারণ লাখ পৃথিবী ধন্য হয়েছে; আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভালবাসা, অন্তরের পবিত্রতা, আত্মার মহত্ত্ব, ধৈৰ্য্য, ক্ষমা, সততা, নম্রতা, বদান্যতা, মিতাচার, আমানতদারী, সুরুচিপূর্ণ মনোভাব, ন্যায়পরায়ণতা, উদারতা ও কঠোর কর্তব্যনিষ্ঠা ছিল যার চরিত্রের ভূষণ; যিনি ছিলেন একাধারে ইয়াতীম হিসেবে সবার স্নেহের পাত্র, স্বামী হিসেবে প্রেমময়, পিতা হিসেবে স্নেহের আধার, সঙ্গী হিসেবে বিশ্বস্ত; যিনি ছিলেন সফল ব্যবসায়ী, দূরদর্শী সংস্কারক, ন্যায় বিচারক, মহৎ রাজনীতিবিদ এবং সফল রাষ্ট্র নায়ক; তিনি হলেন সর্বকালের সর্বযুগের এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনি এমন এক সময় পৃথিবীর বুকে আবির্ভূত হয়েছিলেন যখন আরবের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা অধঃপতনের চরম সীমায় নেমে গিয়েছিল।
৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার প্রত্যূষে আরবের মক্কা নগরীতে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মাতা আমেনার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্মের ৫ মাস পূর্বে পিতা আবদুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। আরবের তৎকালীন অভিজাত পরিবারের প্রথানুযায়ী তাঁর লালনপালন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অর্পিত হয় বনী সা’দ গোত্রের বিবি হালিমার উপর। এ সময় বিবি হালিমার আরেক পুত্র সন্তান ছিল, যার দুধ পানের মুদ্দত তখনো শেষ হয়নি। বিবি হালিমা বর্ণনা করেন, “শিশু মুহাম্মদ কেবলমাত্র আমার ডান স্তনের দুধ পান করত। আমি তাকে আমার বাম স্তনের দুধ দান করতে চাইলেও, তিনি কখনো বাম স্তন হতে দুধ পান করতেন না। আমার বাম স্তনের দুধ তিনি তার অপর দুধ ভাইয়ের জন্যে রেখে দিতেন। দুধ পানের শেষ দিবস পর্যন্ত তাঁর এ নিয়ম বিদ্যমান ছিল।” ইনসাফ ও সাম্যের মহান আদর্শ তিনি শিশুকালেই দেখিয়ে দিয়েছেন। মাত্র ৫ বছর তিনি ধাত্রী মা হালিমার তত্ত্বাবধানে ছিলেন। এরপর ফিরে আসেন মাতা আমেনার গৃহে। ৬ বছর বয়সে তিনি মাতা আমেনার সাথে পিতার কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনা যান এবং মদীনা হতে প্রত্যাবর্তনকালে আবহাওয়া নামক স্থানে মাতা আমেনা ইন্তেকাল করেন। এরপর ইয়াতীম মুহাম্মদ (সাঃ) এর লালন পালনের দায়িত্ব অর্পিত হয় ক্রমান্বয়ে দাদা আবদুল মোত্তালিব ও চাচা আবু তালিবের উপর। পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ যে মহামানব আবির্ভূত হয়েছেন সারা জাহানের রহমত হিসেবে; তিনি হলেন আজন্ম ইয়াতীম এবং দুঃখ বেদনার মধ্য দিয়েই তিনি গড়ে উঠেন সত্যবাদী, পরোপকারী এবং আমানতদারী হিসেবে। তাঁর চরিত্র, আমানতদারী, ও সত্যবাদিতার জন্যে আরবের কাফেররা তাঁকে, ‘আল আমীন’ অর্থাৎ ‘বিশ্বাসী’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। তৎকালীন আরবে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, হত্যা, যুদ্ধবিগ্রহ ইত্যাদি ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। ‘হরবে ফুজ্জার’ এর নৃশংসতা বিভীষিকা ও তান্ডবলীলা দেখে বালক মুহাম্মদ (সাঃ) দারুণভাবে ব্যথিত হন এবং ৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৪ বছর বয়সে চাচা হযরত যুবায়ের (রাঃ) ও কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে অসহায় ও দুর্গত মানুষদের সাহায্যার্থে এবং বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে শান্তি, শৃঙ্খলা ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠার দীপ্ত অংগীকার নিয়ে গড়ে তোলেন ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক একটি সমাজ সেবামূলক সংগঠন। বালক মুহাম্মদ (সাঃ) ভবিষ্যতে জীবনে যে শান্তি স্থাপনের অগ্রদূত হবেন এখানেই তার প্রমাণ মেলে।