- বইয়ের নামঃ রক্তরাঙা ট্রেইল
- লেখকের নামঃ কাজী মাহবুব হোসেন
- সিরিজঃ ওয়েস্টার্ন সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী বই
- বিভাগসমূহঃ ওয়েস্টার্ন
রক্তরাঙা ট্রেইল
০১. ন্যাড়া রিজটার মাথায়
ন্যাড়া রিজটার মাথায় রনি তার সাদা গেল্ডিংটা থামাল। ওখানে কোন মাটি নেই, বাতাস ঝেঁটিয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। কেবল কয়েকটা সিডার গাছ পাথরের উপরই জায়গা করে নিয়েছে। ওরা যে পাথর থেকে কেমন করে খাবার জোগাড় করে সেটা সত্যিই একটা আশ্চর্যের বিষয়। এক ঘণ্টার মধ্যেই সূর্য ডুবে যাবে। বাতাসটা অসম্ভব রকম পরিষ্কার। এত পরিষ্কার যে সামনের উপত্যকার প্রতিটা খুঁটিনাটি দেখা যাচ্ছে। যদিও উপত্যকাটা কম হলেও দশ মাইল দূরে।
যেখানে সে থেমেছে সেখানে সূর্যের আলোটা উজ্জ্বল। পশ্চিমেই যাচ্ছে রনি। বাম দিকের বিশাল উঁচু উঁচু পাহাড় বাকিগুলোকে বামুন করে দিয়েছে। পুব দিকে মেঘ করেছে। বৃষ্টি আসন্ন। মেঘের দিকে চেয়ে দেখল রনি। ওর ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। ভিজতে হবে।
সেভেন পাইনস পশ্চিমের একটা কঠিন জায়গা। ওটা এখনও বারো মাইল দূরে। পাহাড়ের পিছনে। কিন্তু ওখানে পৌঁছানোর আগেই বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হতে হবে ওকে। এখন ওর একটা আশ্রয় দরকার। বিশেষ প্রয়োজন।
ঘোড়ার পিঠে চড়ে সে চারদিক খুঁটিয়ে দেখল। স্টেজের রাস্তা মাইল খানেক উত্তরে। কিন্তু ওদিকে কোন আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগেই খোঁজ খবর নিয়ে এসেছে সে। পাকা খবর। মেঘ এগিয়ে আসছে। বিজলি চমকাচ্ছে। ভিজতেই হবে-বাঁচোয়া নেই। রক্তরাঙা ট্রেইল
দক্ষিণ আর পশ্চিমে উপত্যকাটা সরু হয়ে পরে আবার চওড়া হয়েছে। বৃষ্টির পর জায়গাটা পিছল, আর কাদাকাদা হয়ে যায়। পথ চলাই বিপদ। পাহাড়ে খাঁজ রয়েছে, কিন্তু এই ঝড়ে ওগুলো নিরাপদ হবে না। রনি জানে, পশ্চিমে অনেক দিন আছে সে। কোথায় বিপদ এটা ওর ভাল করেই জানা আছে।
রওনা হতে যাচ্ছে, এই সময়ে ওর চোখের কোনে একটা নড়াচড়া ধরা পড়ল। থমকে দাড়াল সে। নিচের ক্যানিয়নে কয়েকজন রাইডার দেখা যাচ্ছে। ওদের মাঝে কি যেন একটা বিশেষ কিছু রনিকে সাবধান করল। ঘোড়াটাকে একটা জুনিপার গাছের আড়ালে কিছুটা আড়াল করল। এত দূর থেকে বিনকিউলার দিয়েও সে কোন চেহারা চিনতে পারল না। কেবল একটা ঘোড়ার সাদা নাক ওর চোখে পড়ল। ছয়জন আরোহী। দ্রুত উত্তর দিকে এগোচ্ছে ওরা।
ওরা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত ওদের লক্ষ করল রনি। একটু বিকৃত মুখে-কারণ এই দেশটাকে সে ভাল করেই চেনে। এই এলাকায় যদিও সে নতুন তবু ওর বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না যে লোকগুলোর মতলব খারাপ। পাহাড়ের কোল ঘেঁসে ওরা স্টেজ রাস্তার দিকে এগোচ্ছে। নিজেদের অবস্থান যতদূর সম্ভব লুকাবার চেষ্টা করছে।
ঠিক আছে, টপার, শান্ত স্বরে ঘোড়াটাকে বলল রনি। চলো দেখা যাক ওদের কি মতলব। আমাদের মত ওদেরও ভেজার শখ নেই।
সাদা ঘোড়াটা দ্রুতবেগে কোনাকুনি উত্তর দিকে ছুটে চলল। আর একবার কাছিয়ে আসা মেঘের দিকে চেয়ে রনি তার পিস্তল দুটো বের করে ধুলো মুছল। দুটোই বহুল ব্যবহৃত কোল্ট ৪৫। ওগুলোর হাড়ের হাতলে চিকন ফাটল ধরেছে, কিন্তু চমৎকার ব্যালেন্স। বেশ কিছুদিন হলো সে পিস্তল ব্যবহার করেনি, কিন্তু ওগুলোর ব্যবহারে ওর পাকা হাত।
বর্তমানে ওর গন্তব্য স্থান সেভেন পাইনস। কিন্তু আসলে সে ঘুরতে বেরিয়েছে। উত্তরে তার এক বন্ধু আছে, নাম মরিসন। থ্রী এম র্যাঞ্চে সে তার বিধবা মেয়ের সাথে থাকে। ওদের সাথে কিছুদিন কাটিয়ে উত্তরে মনট্যানা যাওয়ার ইচ্ছা আছে তার।
সামনের আরোহীরা রনিকে কিছুটা বিব্রত করছে। কিন্তু ওদের সাথে বিরোধে যাওয়ার ইচ্ছে ওর নেই। ওর এই যাত্রাটা কেবল দেশ দেখার জন্যে। সাথে যথেষ্ট টাকা আছে, কোন তাড়া নেই।
কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ল হ্যাটের উপর। পানি ঝেড়ে ফেলে, বর্ষাতি বের করল রনি। ঘোড়ার গতি একটুও না কমিয়ে বর্ষাতি পরে নিল সে। রিজ থেকে নেমে ব্যস্ত চোখে আশ্রয় খুঁজছে। একটা মাইন চোখে পড়ল, কিন্তু টানেলটা ধসে পড়েছে। দালানও ভেঙে গেছে।
পাহাড়ের ধারে এসে সামনের মানুষগুলোর ট্রেইল দেখতে পেল রনি। বইয়ের পাতার মতই সহজে দাগগুলো পড়ল সে। ঘোড়াগুলো তাজা-একটার খুর কেটে সরু করা হয়েছে। আবার এক পশলা বৃষ্টি এল। তারপর বেগ বেড়ে মুষল ধারে বৃষ্টি শুরু হলো।
মাইন থেকে একটা ক্ষীণ ট্রেইল নিচের দিকে নেমেছে। এতে কিছুটা জোরে ঘোড়া ছুটাবার সুযোগ পেল রনি। পাহাড়ের গা বেয়ে মেইন রাস্তায় নেমে এল সে। ক্ষণিকের জন্যে থেমে আবার আরোহীদের ট্রাকগুলো দেখতে পেল। বৃষ্টিতে এখনও মুছে যায়নি। রাস্তা পার হয়ে ঝোঁপের ভিতর দিয়ে রাস্তার সমান্তরাল ভাবে এগিয়েছে ওরা।
বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমে এল। বৃষ্টির ফোঁটা অনেক দিনের শুকনো ধুলোর ওপর পড়ার পরিচিত গন্ধ ওর নাকে এল। তারপর প্রচণ্ড শব্দে একটা বাজ পড়ার সাথে আবার বৃষ্টি শুরু হলো। বাতাসের বেগও বেড়েছে। মেঘে সূর্য ঢাকা পড়ার পর এখন বেশ অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। কেবল বারবার বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় কিছুটা দেখা যাচ্ছে।
স্টেজের রাস্তায় উঠল রনি। ঘোড়াটা তার স্বাভাবিক গতি বজায় রেখেছে। হঠাৎ করেই ঝড়ের বেগ শান্ত হয়ে এল। নীরবতার মাঝে কতগুলো গুলির আওয়াজ রনির কানে এল।
দুটো…আরও তিনটে…তারপর আরও একটা। শেষটা একক, ফাইনাল শট। কিছুর যেন সমাপ্তি ঘটল।
লাগাম টেনে থেমে দাঁড়িয়ে কান পেতে শোনার চেষ্টা করল রনি, কিন্তু কিছু শোনা গেল না। আবার বৃষ্টি শুরু হলো। প্রথমে ধীরে তারপর প্রচণ্ড ধারায়। হ্যাটটা সামনের দিকে কিছুটা টেনে নামিয়ে, বর্ষাতির কলার উঁচিয়ে কান দুটো প্রায় ঢেকে, গুলির শব্দ সম্পর্কে ভাবছে সে। একটা ঠাণ্ডা পানির ফোঁটা ওর ঘাড়ের পিছনে পড়ে শিরদাঁড়া বেয়ে নিচে নামল। শিউরে উঠে অন্ধকারের ভিতর সামনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঠাহর করে দেখার চেষ্টা করল সে।
অন্ধের মত গোলাগুলির এলাকায় হাজির হওয়াটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এই এলাকাটা তার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত, যেটুকু জানে সেটাও লোকের মুখে শোনা। এখন ট্রেইল ছেড়ে সরে গেলে হারিয়ে যাওয়াটা মোটেও বিচিত্র হবে না। হঠাৎ সে অনুভব করল ঘোড়ার পেশীগুলো শক্ত হয়ে উঠেছে। বিদ্যুতের চমকে দেখতে পেল একটা গাঢ় আকারের কিছু কাদার মধ্যে হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে আছে।
থেমে দাঁড়িয়ে আবার বিদ্যুৎ চমকাবার অপেক্ষায় রইল রনি। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। লোকটার পিছনে যতদূর দেখা যায় দেখল-ট্রেইলটা খালি। এখানে যা ঘটেছে সেটা এখন শেষ। লোকটার পাশে নেমে ওকে চিত করল। মৃত সাদা একটা মুখের ওপর বৃষ্টির ফোঁটা পড়ল। দেহটা বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। একটা ম্যাচের কাঠি জ্বেলে বৃষ্টির থেকে আড়াল করে দেখল, আগের গুলিগুলোর আঘাতেই লোকটা পড়ে গিয়েছিল, কিন্তু শেষ গুলিটা করা হয়েছে। খুলির সাথে পিস্তল ঠেকিয়ে। গুলিতে লোকটার চামড়া আর চুল পুড়ে গেছে। লোকটার মৃত্যু ওরা একেবারে নিশ্চত করেছে।
লোকটার পকেট হাতড়ে কাগজ-পত্র টাকা পয়সা যা ছিল বের করে নিল রনি। ওগুলো তার আত্মীয়-স্বজন কেউ থাকলে তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কাগজ-পত্র থেকে হয়তো ওর পরিচয়টাও জানা যাবে। এই বৃষ্টির পানিতে ভিজে লেখাগুলো দুর্বোধ্য হয়ে যাবে রক্ষা করা না হলে।
লোকটা নিজের জীবন রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল। পিস্তলটা এখনও ওর হাতেই ধরা রয়েছে। ওটা থেকে একটা গুলিও ছোঁড়া হয়েছে।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওখানে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করল রনি। লোকটাকে স্টেজ থেকে জোর করে নামিয়ে নেয়া হয়েছিল। কারণ লোকটা ট্রেইলের একপাশে পড়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে ওকে তার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। সুযোগ নিয়ে হেরে গিয়েছে। স্টেজের চাকার দাগ গভীর হয়ে ট্রেইলের ওপর বসে গেছে। হোল্ডআপ, বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল রনি। লোকটা হয়তো নিজেই লাগতে গেছিল কিংবা জোর করে ওকে লাগতে বাধ্য করা হয়েছে। ওকে ঠিক কাঁচা বলা যাবে না, আগেও সে গান-ফাইট করেছে।
ঘোড়ার পিঠে চেপে ট্রেইল ধরে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে বিজলীর চমকে আরও একজনকে পড়ে থাকতে দেখে থামল। নেমে ঝুঁকে লোকটাকে ছুঁতেই সে ককিয়ে উঠল। সোজা হয়ে আবার বিদ্যুৎ চমকালে পাহাড়ের গায়ে একটা ছোট গুহা ওর চোখে পড়ল।
ঘোড়াকে জুনিপার গাছের সাথে বেঁধে রেখে লোকটাকে তুলে গুহায় নিয়ে এল রনি। ভিতরটা শুকনো। মরা একটা উপড়ে পড়া গাছের থেকে শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে আগুন জ্বালাল সে। ভাল করে জ্বলে উঠলে কিছু পানি গরম করতে দিয়ে আহত লোকটার কোট আর শার্ট খুলে ফেলল। এক নজরেই বোঝা গেল লোকটা গুরুতর ভাবে আহত হয়েছে।
প্ৰথম গর্তটা বাম পাশে নিচের দিকে কিছুটা মাংস কেটে নিয়ে বেরিয়ে গেছে। ওটার থেকে অনেক রক্ত বেরিয়েছে। পুরো জামা রক্তে ভেজা। কিছুটা উপরে আরেকটা জখম, ওটা মারাত্মক। ঠিক হার্টের একটু উপরে।
পানি গরম হলে, সময় নিয়ে ক্ষতগুলোকে ভাল করে ধুয়ে কিছুটা রোস্ট করা প্রিকলি-পেয়ার পাতা ছিলে শক্ত করে বেঁধে দিল। ফোলা কমানোর জন্যে ইণ্ডিয়ানরা এই ওষুধ ব্যবহার করে। বুলেটের ক্ষত রনির কাছে নতুন কিছু নয়, কিন্তু সে জানে লোকটার বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম। তবু লোকটার বয়স কম, শক্ত গড়ন, স্বাস্থ্যও ভাল, তাই বলা যায় না।
আরও কিছু কাঠ সংগ্রহ করে ঘোড়াটাকে গুহার ভিতরে এনে জিন খুলে দিল। ফিরে আসার সময়ে লক্ষ করল তার রুগীর চোখ খোলা। অবাক বিস্ময়ে লোকটা চারপাশে দেখছে। আরও এগিয়ে এসে রনি বলল, বিশ্রাম নাও, বন্ধু, খারাপ দুটো চোট পেয়েছ তুমি।
লোকটা ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে প্রশ্ন করল, কে, কে তুমি?
ভেসে বেড়াচ্ছি। আমার সামনে কিছু গোলাগুলির শব্দ পেলাম। যখন এগিয়ে এলাম একটা লাশ দেখতে পেলাম, তারপর তোমাকে।
তাহলে একজনকে আমি ঘায়েল করতে পেরেছি?
মনে হয় না। লোকটার পরনে একটা ফ্রক কোট ছিল। টুপিটা কালো। কঠিন চেহারা, গোঁফ লালচে।
ওহ। সে ছিল একজন যাত্রী। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল সে। শ্বাসটা ভারি। লোকটা পরিচ্ছন্ন, সুদর্শনই বলা যায়। কোমরে দুটো পিস্তল ঝুলছে, এবং মনে হয় ওগুলোর ব্যবহার সে জানে।
কি ঘটেছিল? রনি প্রশ্ন করল।
ডাকাতি। আমি স্টেজের ছাদে শটগান নিয়ে পাহারায় ছিলাম। ওরা প্রথমেই আমাকে গুলি করেছিল, কিন্তু আমি টিকে রইলাম। ধারণা করেছিলাম ওদের একজনকে খতম করেছি। ওরা আবার আমাকে গুলি করলে আমি স্টেজকোচ থেকে পড়ে যাই। ওরা মুখোশ পরা ছিল। প্রত্যেকবারই তাই ঘটে।
সব সময়ে?
তিন মাসে এটা চতুর্থবার…এটা ছিল আমার প্রথম ট্রিপ। আগের গার্ডগুলো সবাই মারা পড়েছে। একটু ক্ষীণ হাসি দেখা দিল আহত লোকটার মুখে। যারা এই কাজ করছে তারা শটগান মেসেঞ্জারদের মোটেও পছন্দ করে না।
শুকনো মাংস আর ময়দা দিয়ে ব্রথ তৈরি করছিল রনি। এখন সেটা গরম হয়েছে। আহত লোকটাকে একটু একটু করে খাওয়াল সে। আশা করছে এতে লোকটা একটু বাড়তি শক্তি পাবে। অনেক রক্ত হারিয়েছে
তোমার নামটা কি, বন্ধু? আমার জানা দরকার।
যুবক রনির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। অবস্থা তাহলে এত খারাপ? ভাল, আমার নাম জেমস হার্ট। আমার জন্যে কেউ দুঃখ করবে বলে মনে হয় না। তবে তুমি আমার ভাইকে একটা খবর দিতে পারো। সে রবার্টস মাউনটিনসে থাকে। ওর নাম ফিনলে হার্ট।
বৃষ্টি কমতে কমতে, এখন শুধু সরু ধারায় পানি বয়ে যাওয়ার শব্দ, আর গাছ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে। আহত লোকটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ওর টেনে-টেনে শ্বাস নেয়া দেখে রনির দুশ্চিন্তা হচ্ছে। স্টেজটা সেভেন পাইনসে পৌঁছে থাকলে ওখান থেকে লোকজন ডাকাতিতে যারা চোট পেয়েছে তাদের খুঁজতে আসবে। কিন্তু ওরা হয়তো দুজনই মারা পড়েছে বলে ধরে নিতে পারে। টপারের পিঠে জিন চাপিয়ে শক্ত করে পেটি এটে দিল রনি। সাহায্য আসার অপেক্ষায় বসে থেকে, জেমসকে একা রেখে, তাকেই যেতে হবে।
জেমস যখন আবার চোখ খুলল তখন আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে। প্রথমেই সে খেয়াল করল সাদা ঘোড়াটার ওপর জিন আঁটা হয়েছে। রনির দিকে চেয়ে সে ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় বলল, আমার অবস্থা খুব সুবিধের মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে খারাপের দিকেই যাচ্ছি।
হ্যাঁ। আহত লোকটাকে তুলে একটু আরামদায়ক ভাবে বসাল সে। সেভেন পাইনসটা কত দূরে? তোমার একজন ডাক্তার দরকার।
বারো মাইল। ডাক্তার হ্যাডলের খোঁজ কোরো লোকটা ভাল।
ক্ষতগুলো আবার ধুয়ে দিল রনি। তারপর প্রিকলি-পেয়ারের পাতা দিয়ে বেঁধে দিল। ক্ষতগুলো এখন আর ততটা খারাপ দেখাচ্ছে না।
আমি ডাক্তারকে আনতে যাচ্ছি। তুমি ঠিক থাকবে তো? জেমসের চোখে হাসিমাখা বিদ্রুপের ছায়া পড়ল। মনে হয় না এই অবস্থায় কোথাও গিয়ে আমার হাত-পা ভাঙার সম্ভবনা আছে। আর ডাক্তার ছাড়া আমার ভাল হওয়ার সুযোগ কম। আশাপূর্ণ দৃষ্টিতে রনির দিকে চেয়ে সে বলল, তোমাকে যেতে দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে, বন্ধু।
আহত লোকটার একটা পিস্তল বের করে ওর হাতে দিয়ে সে বলল, সাবধানের মার নেই। তুমি কিছু জানো মনে করে ওরা হয়তো আবার ফিরে আসতে পারে। কিন্তু আমার ধারণা হচ্ছে ওরা আর ফিরবে না। তোমার ভয়ের কিছু নেই।
ট্রেইল ধরে দ্রুতবেগে ঘোড়া ছুটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রনি। টপার দৌড়াতে ভালবাসে। এখন সে দৌড়াচ্ছে। চার মাইলের বেশি এগোয়নি-ট্রেইলের ওপর দূরে একটা কালো কি যেন ওর চোখে পড়ল। দ্রুত ওটা একটা বাকবোর্ডের রূপ নিল। পিছনে ছয়জন আরোহী। বাকবোর্ডে দুজন আরোহী, শক্ত গড়নের একজন কালো চুল আর কালো গোঁফের অধিকারী; অন্যজন লম্বা গড়নের যুবক, ওর সোনালি গোফ ছোট করে ছাটা। নীল চোখ দুটো ঠাণ্ডা কিন্তু বন্ধুসুলভ। রনি হাত তুলে ইশারা করায় ওরা থেমে দাঁড়াল।
সামনে একজন আহত মানুষ রয়েছে, বলল সে। তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার। ডাক্তার হ্যাডলে কি এখানে আছে?
সোনালি চুলের যুবক মাথা ঝাঁকাল। আমি হ্যাডলে।
ঘোড়া ঘুরিয়ে ফিরতি পথে এগোল রনি। ওদের একজনের বুকে স্টার শোভা পাচ্ছে। লোকটা বয়স্ক, লম্বা গড়ন। ওর গোঁফ ঠোঁটের দুপাশ দিয়ে নিচে নেমেছে। জীবিত লোকটা কে?
হার্ট নামের একজন।
সে কিছু বলেছে?
রনি অনুভব করছে চারপাশ থেকে সবাই ওকে ঘিরে রেখেছে–মনোযোগ দিয়ে ওরা কথা শুনছে। খারাপ ভাবে আহত হয়েছে সে। প্রশ্নের উত্তরটা এড়িয়ে গেল ও। ওরা কিছু নিতে পেরেছে?
সবই নিয়েছে, বাকবোর্ডের শক্ত গড়নের মানুষটা জবাব দিল। আমাকে প্রায় দেউলে করে দিয়েছে। আমার তিরিশ হাজার ডলারের সোনা নিয়ে গেছে। এমন আর একটা ডাকাতি হলে আমি শেষ হয়ে যাব।
ক্যানিয়নের ভিতর ঢুকে রনির ইশারায় সবাই থামল। পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর রনি হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। ওর চেহারাটা ফ্যাকাসে হলো।
মারা গেছে জেমস হার্ট। পিস্তলটা ওর হাতেই ধরা। নলটা কপালের ওপর।
আত্মহত্যা! একজন বলে উঠল। নিজেকে গুলি করেছে সে।
দেখে তাই মনে হচ্ছে, আর একজন বলল। ধীরে মাথা তুলে বক্তার দিকে তাকাল রনি। লোকটার স্বরে যেন সন্তুষ্টি প্রকাশ পেল।
কিন্তু এমন একটা কাজ সে কেন করল? এই লোকটাই আত্মহত্যার কথা প্রথম উল্লেখ করেছিল। এর কোন মানেই হয় না।
রনি ওদের পাশ থেকে সরে গেল। তার কঠিন নীল চোখ মেঝেটা খুঁটিয়ে দেখছে। ব্যর্থতায় ওর ঠোঁট বাঁকা হয়ে গেছে। কিন্তু সে কি করতে পারত? লোকটার ডাক্তারের চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল।
নিশ্চয় দারুণ যন্ত্রণার মধ্যে ছিল সে, একজন মন্তব্য করল। মনে হয় সে আর সহ্য করতে পারেনি।
শেরিফ কোন মন্তব্য করেনি। রনি ওর দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাল। বুড়ো যখন কোন কথা বলল না, রনি শান্ত স্বরে বলল, আত্মহত্যা করেনি সে। ওকে খুন করা হয়েছে।
খুন? সবাই ওর দিকে চোখ ফেরাল।
হ্যাঁ, খুন, পুনরাবৃত্তি করল রনি। আমি যখন ওকে ছেড়ে যাই তখন সে জীবিত আর আশাবাদী ছিল। নিজেকে সে হত্যা করেনি।
তোমার কাছে কি মনে হচ্ছে, রবার্ট? বক্তা একজন পুষ্ট, লম্বা মানুষ, চওড়া লাল মুখ ওর। যদি আত্মহত্যা না হয় তবে এটা কি? পিস্তলটাও ওর হাতেই রয়েছে।
রবার্ট চতুর চোখে রনির দিকে চেয়ে চিন্তিত ভাবে নিজের গোঁফ টানল। তুমি যখন যাও তখন সে জীবিত ছিল? পিস্তলটা কি ওর হাতের কাছে ছিল?
ওটা আমিই ওর হাতে তুলে দিই। আমি যেতে চাইনি, কিন্তু ডাক্তারের প্রয়োজন ছিল ওর। আমার বিশ্বাস সে বাচত।
ডাক্তার রবার্ট ওর দেহটা পরীক্ষা করে মুখ তুলে চাইলেন। কথাটা সত্যি। ক্ষতগুলো বেশ সুস্থ অবস্থাতেই আছে। ওর জখমের ওপর ওটা কিসের পটি?
প্ৰিকলি-পেয়ার, ইণ্ডিয়ানরা ওটা ক্ষতের উন্নতির জন্যে ব্যবহার করে।
দেখো! লাল মুখের লোকটা পিস্তলের অবস্থান দেখিয়ে বলল, এটা যদি আত্মহত্যা না হয় তবে এটা কি?
রনির রাগ তেতে উঠছে। চোখ তুলে চাইল সে-কঠিন শীতল চোখ। আমি যখন যাই তখন লোকটা জীবিত ছিল, পুনরায় বলল সে। ওর জখম কঠিন হলেও ও সামলে উঠতে শুরু করেছিল। ওর মধ্যে, কঠিন সুরে কথাগুলো বলল সে, বিন্দুমাত্র কাপুরুষতার লক্ষণও ছিল না। সে কিছুতেই আত্মহত্যা করেনি।
নিশ্চয় সে আবার জ্ঞান-হারিয়েছিল, কেউ এখানে সেই সুযোগে ঢুকে ওর পিস্তল দিয়েই ওকে খুন করে পিস্তলটা ওর হাতেই ধরিয়ে দিয়ে গেছে। দেখে ওর পিস্তলটা কোথায় আছে। নিজেকে গুলি করলে পিস্তলটা ওর হাত থেকে ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ত!
ডাক্তার হ্যাডলে মাথা ঝাঁকালেন। ভদ্রলোক ঠিকই বলেছে, গুলির পিছু-ধাক্কায় ওটা দূরে ছিটকে পড়ত। তাছাড়া এত কাছ থেকে গুলি করলে কপালে বারুদের পোড়া দাগ থাকত। কিন্তু চামড়ার ওপর আমি তেমন কোন দাগই দেখতে পাচ্ছি না।
লাল মুখো লোকটা রনির ওপর নজর রেখেছিল। ধীরে ওর নজর কালো সমব্রেরো, শার্ট, বুটের ভিতরে ঢুকানো প্যান্ট আর উরুর সাথে ফিতে দিয়ে বাঁধা পিস্তল দুটোর উপর পড়ল। এতে তোমার পরিস্থিতি কিছুটা খারাপের দিকেই যাচ্ছে। তুমিই ওকে শেষ জীবিত দেখেছ।
না, বরফ শীতল চোখে ওর দিকে চাইল রনি। খুনীই ওকে শেষ দেখেছে। মাথা ঝাঁকিয়ে ট্রেইলের পিছন দিকটা দেখাল সে। ওখানে আরও একজন আছে। ফ্রক কোট পরা বিশাল দেহ মানুষ।
রনি মানুষগুলোকে চিনতে শুরু করেছে এখন। যে লোকটা বাকবোর্ড চালাচ্ছিল তার নাম হ্যারিংটন। মাইনের সুপার আর আংশিক মালিক। ক্ষতির ভারটা ওর ঘাড়েই পড়বে। লাল মুখো মানুষটার নাম অ্যাডাম। ঘোড়া বেচা-কেনার ব্যবসা ওর। একটা লিভারি আস্তাবলও আছে। তিরিশ মাইল দূরে মাইনে সে গরুও সরবরাহ করে। আরেকজন হলুদ চোখের গাল বসা লোক, উরুর সাথে বাধা ওর পিস্তল, নাম রেড। ফ্ৰককোট পরা মৃত লোকটার খোঁজে গিয়েছিল সে।
ওর সবকিছু লুটে নিয়েছে কেউ, জানাল রেড।
তবে কি আশা করেছিলে তুমি? শুষ্ক স্বরে প্রশ্ন করল রবার্ট। এটা একটা ডাকাতি।
রনি কোন মন্তব্য করল না। জেমস হার্টের কপালে যা ঘটেছে, এরপর নিরিবিলি কাগজ-পত্রগুলো নিজে পরীক্ষা না করে, ওগুলো কারো কাছে হস্তান্তর করতে সে রাজি নয়।
শহর থেকে আরও একজন লোক এসে হাজির হলো। সুগঠিত গড়ন, প্রিয়দর্শন, চল্লিশ মত বয়স। কি খবর, কেসি? মৃত লোকটার দিকে মাথা হেলিয়ে ইঙ্গিত করল রবার্ট। কেউ ওকে আগে দেখেছ?
আমি দেখেছি। সিগারেট তৈরি করার জন্যে কাগজের আঠার ওপর জিভ ঠেকাল রেড। লোকটার নাম সায়মন। নামকরা একজন গানফাইটার।
সায়মন! লাশটার দিকে চেয়ে বলল বেন কেসি। মারা গেছে! কে করল এই কাজ?
সেটা জানলে অনেক প্রশ্নেরই জবাব মিলত, মন্তব্য করল রবার্ট। মনে হচ্ছে কাজটা যে করেছে সে তাকে পুরো সুযোগই দিয়েছিল, তারপর ওকে ছাদা করে দিয়েছে।
মাথায় পিস্তলের নল ঠেকিয়ে বাকি কাজটা শেষ করেছে, বলল রনি। মনে হচ্ছে ডাকাতের দলটা কোন সাক্ষীই রাখতে চায় না। ভয় পাচ্ছে হয়তো লোকজন ওদের চিনে ফেলবে।
কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলল না। ডাক্তার হ্যাডলে লাশটাকে পরীক্ষা করে উঠে দাঁড়ালেন। এখানে আমার আর কিছুই করবার নেই, বলল ডাক্তার। তোমার কি মত হ্যারিংটন?
লাশগুলো নিয়ে সেভেন পাইনসের পথে রওনা হয়ে যাওয়াই ভাল, বলল মাইন সুপার।
রনির দিকে ফিরল রবার্ট। তুমি থাকছ তো? আগামীকালের বিচার আর জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে তোমার উপস্থিতি জরুরী।
আমি আছি। ওখানেই যাচ্ছি আমি।
সেভেন পাইনসের পথে আর বিশেষ কোন কথা হলো না। সবাই ওই ডাকাতের দল সম্পর্কে বেশ বিব্রত। গত কয়েকটা স্টেজ ডাকাতিতে ওরা একশো হাজার ডলারেরও বেশি সোনা লুটেছে। সবই ভারি বার। ওগুলো কোথায় খালাস করা যেতে পারে এনিয়ে বেশ কিছু আলাপ-আলোচনা হয়েছে। বিক্রির সম্ভাব্য সব কয়টা জায়গাকেই খবর দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
রনিকে খুঁটিয়ে লক্ষ করছিল হ্যারিংটন। তুমি যেভাবে পিস্তল ঝুলিয়েছ তাতে মনে হয় ওগুলোর ব্যবহার তুমি জানো। জেমসের জায়গায় আমার একজন লোক দরকার।
শব্দ করে হাসল রনি। যা শুনলাম তাতে মনে হয় না ওটা খুব জনপ্রিয় কাজ। শুনেছি শটগান মেসেঞ্জাররা নাকি খুব দ্রুত পটল তোলে।
শান্তভাবে মাথা ঝাঁকাল হ্যারিংটন। তা ঠিক। আমি অস্বীকার করছি না। আমি এমন মানুষ চাই যে সহজে ভয় পায় না। জেমসের গোলাগুলির হাত ভালই ছিল। আমার ধারণা ছিল, এ-সব ডাকাতির পিছনে কারা আছে, তা সে আঁচ করতে পেরেছিল। কিন্তু বেশি কথা বলার অভ্যাস ছিল না ওর। এখন তো সে আর কোন কথাই বলবে না।
ও বলেছিল রবার্টস রেঞ্জে নাকি ওর এক ভাই আছে। খবরটা ওকে পৌঁছাতে বলেছিল।
হ্যাঁ। ফিনলে হার্ট। মাথা নাড়ল হ্যারিংটন। এটা সে সহজ ভাবে নেবে না। বললে ভুল হবে না যে এখন ওই খুনীদের দুশ্চিন্তার কারণ আছে। ভাইয়ের খুনের প্রতিশোধ সে নিয়েই ছাড়বে।
উপত্যকাটা পিছনে ফেলে বাকবোর্ডটা একটা সরু ক্যানিয়ন ধরে এগোল। ছাড়াছাড়া পরিত্যক্ত মাইন আর ছাপরা নজরে পড়ছে। তারপর ট্রেইল শেষ হলো একটা সরু রাস্তায়–দুপাশে ফল্স্ ফ্রন্ট দেয়া বাড়িঘর। ওগুলোর পিছনে সিকি মাইল দূরে পাহাড়টা ঢালু হয়ে নিচে নেমেছে, দুপাশে প্রচুর বাড়ি-ঘর। কিছু মাইনিঙ ক্লেইম আর কুঁড়ে-ঘরও রয়েছে।
এক্সপ্রেস অফিসটা লিভারি আস্তাবলের ঠিক উল্টো দিকে। এক্সপ্রেস অফিসের পাশেই একটা সেলুন। ওটার বাতির আলো গিয়ে পড়েছে। ওপাশের জেনারেল স্টোরের ওপর। সামনে ঘোড়ার জিনের দোকান, বুটের দোকান, কামারের দোকান, নাপিত আর দাঁতের ডাক্তারের পিছনে আইনজীবীর অফিস রনির নজরে পড়ল। জেল, হোটেল, বিভিন্ন দোকান আর জুয়া খেলার জায়গাও আছে ওখানে। গুনে দেখল মোট নয়টা সেলুন। শেষ মাথায় সোনার আকর মূল্যায়নের অফিস।
লিভারি আস্তাবলের দিকে এগোল রনি। ওর দিকে চেয়ে আছে হ্যারিংটন। ভুলো না! কাজটা এখনও তোমার!
অ্যাডাম আর রেডও ওই দিকে মোড় নিল। অ্যাডাম রনির দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাল, কিন্তু কিছু বলল না। ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল রেড। অ্যাডাম লিভারি স্টেবলে ঢুকলে সে নিচু স্বরে বলল, শটগান মেসেঞ্জারের কাজটা নেয়ার আগে ভাল করে চিন্তা করে দেখো। ওরা বেশিদিন টেকে না।
ঠিক, জবাব দিল রনি। মনে হয় কেউ ওদের মৃত্যু চায়।
এই শহরটায় থাকলে মানুষের ঝামেলাই বাড়ে, মন্তব্য করল রেড। মনট্যানা ভাল জায়গা। কখনও ওখানে গেছ?
হয়তো। অনেক জায়গাই ঘুরেছি আমি।
বুটের মাথা দিয়ে মাটিতে একটা লাথি মেরে টপারের পিঠ থেকে জিন নামানো লক্ষ করল রেড। তোমাকে কেমন যেন চেনা ঠেকছে।
তাই নাকি?
মনে হয় তোমাকে মন্ট্যানায় দেখেছি। কিংবা টেক্সাসে।
কে বলতে পারে? হয়তো। কথাটা হজম করতে রেডের কষ্ট হচ্ছে। এই এলাকায় কঠিন মানুষ হিসেবে ওর নাম আছে। এটা অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় ও। ওর প্রশ্নের জবাব কেউ এড়িয়ে যাবে, এটা ওর পছন্দ নয়। কিন্তু ওর ধারণা হচ্ছে এই লোকটাকে জানা ওর দরকার। একান্ত প্রয়োজন। একটা সিগারেট তৈরি করে, আড়চোখে রনির দিকে একবার চেয়ে, এক মুঠো খড় নিয়ে নিজের ঘোড়াটাকে ঘসতে শুরু করল সে।
হার্ট কি অনেক কথা বলেছে? খবর বের করতে চাইছে সে।
বলল ওর এক ভাই আছে, স্বীকার করল রনি। ওকে আমার খুঁজে বের করতে হবে।
জনাব, তোমার কেটে পড়াই ভাল। এই শহরটা মোটেও সুবিধের।
ভাল, রনির চোখ কৌতুকে একটু চিকচিক করে উঠল। আমি কারও সাথে ঝগড়া-বিরোধ করার জন্যে এখানে আসিনি। ঘুরে দরজার দিকে রওনা হলো সে। আবার দেখা হবে।
থামো! রেড এখন খেপে গেছে। আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। সেটার জবাব চাই আমি!
রনি ধীরে আস্তাবলের আধো আলোয় ঘুরে পঁড়াল।
হার্ট কি বলেছে তা আমি জানতে চাই। প্রয়োজন হলে পিটিয়ে আমি তোমার থেকে সেটা বের করব।
কথাটা বলেই সে বুঝতে পারল ভুল কথা বলা হয়েছে। ওর দিকে এক পা এগিয়ে গেল রনি। ঠিক আছে, স্বীকার করে নিল সে। তুমি তাহলে পিটিয়েই তা বের করো। কিন্তু জলদি করো, অপেক্ষা করার সময় নেই আমার।
ঢোক গিলল রেড। জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চাটল একবার। সে বুঝে নিয়েছে এই লোককে ধমক দিয়ে কাজ আদায় করা যাবে না–ওর ভয়-ডর বলতে কিছু নেই। পাল্টা চ্যালেঞ্জের মুখে সিঁটিয়ে গেল সে। গোলমাল চাচ্ছে না ও। অন্তত এখন, এখানে নয়।
আরে ছিঃ! বলল সে। তুমি কি আমার কথা সিরিয়াসলি নিলে নাকি? আমি তো ঠাট্টা করছিলাম।
কথার কোন জবাব না দিয়ে রনি ওর দিকে চেয়ে রইল, অপেক্ষা করছে। অস্বস্তিভরে একটা পা সরাল রেড। ওর ছুটে এগিয়ে এসে আঘাত করতে, কিংবা গুলি চালাতে ইচ্ছে করছে। এগুলো চাইছে বটে, কিন্তু ওর সহজাত প্রবৃত্তি ওকে সাবধান করছে, বলছে, এটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
ওকে আর একটা চাহনি দিয়ে রনি বাইরে বেরিয়ে এল। একবারও পিছন ফিরে চাইল না।
কঠিন চোখে ওর প্রস্থান দেখল রেড। তারপর ফিসফিস করে বলল, দেখে নিও! তুমি চব্বিশ ঘণ্টাও টিকতে পারবে না এই শহরে।
০২. রনি আস্তাবল থেকে
রনি আস্তাবল থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গেসঙ্গেই অ্যাডাম গভীর ছায়ার আড়াল থেকে বেরিয়ে এল। জাগে লাল হয়ে উঠেছে ওর চেহারা। হাঁদা রাম! গর্জে উঠল সে। তোমাকে কে বলেছিল জেমস সম্পর্কে ওকে প্রশ্ন করতে? সে কিছু বলেছে বা বলেনি, তাতে কি আসেযায়? এসব প্রশ্ন ওকে কেবল সন্দিগ্ধই করে তুলবে।
কী বলো? জবাবে বলল রেড। ও কে, যে কিছু সন্দেহ করবে?
লোকটা কে তা আমিও জানি না, কিন্তু এটুকু বুঝি ওর সাথে লাগতে গেলে পিস্তল ছোড়ার জন্যে তৈরি হয়ে যেতে হবে। এবং তাতে ফলাফল ভাল হবে না। আমার ধারণা লোকটা পিস্তল চালাতে জানে–ধাপ্পা দিচ্ছে না।
গোড়ালির ওপর ঘুরে রাগত গানম্যানকে পিছনে ফেলে অ্যাডাম এগিয়ে গেল। কিন্তু মুখে যাই বলুক ওর মাথা থেকে দুশ্চিন্তা দূর হচ্ছে না। জেমস যে কথা বলেছে সেটা জানা কথা। মরার আগে সে যদি ওকে তার ভাইয়ের কথা বলে থাকে–হয়তো আরও অনেক কথাই বলেছে। তবু, অন্ধকার রাতে ও কিবা এমন দেখে থাকতে পারে? ওর বলার কি থাকতে পারে? এটা প্রায় অসম্ভব যে ও কাউকে চিনতে পেরেছিল। সুতরাং এখন টাইট হয়ে বসে থাকা ছাড়া ভিন্ন উপায় নেই। দেখতে হবে পরিস্থিতি কোনদিকে গড়ায়।… স্ট্রেঞ্জার লোকটাকে এই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়াই ভাল।
কিন্তু জেমসের মৃত্যুর ধরনটা অস্বাভাবিক। ওরা কি তার উদ্দেশ্য টের পেয়েছিল? কিংবা সে কি কোন কথা বলেছে?
নিকটস্থ সেলুনের দিকেই পা বাড়িয়েছিল রনি, কিন্তু মলির স্টেক, ডিম আর পাইয়ের লোভ ওকে ওদিকেই টেনে নিয়ে গেল। কাঠের ফুটপাথে উঠে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল সে। কেবল একজন কাউবয়কেই ওখানে দেখতে পেল। লোকটার বুট ক্ষয়ে গেছে–হ্যাটটারও খারাপ অবস্থা।
ওর ঢোকার সময়ে দরজার বেলের ঘণ্টায় কাউবয়ের কোন বিকার দেখা গেল না–কিন্তু ঘণ্টার আওয়াজে রান্নাঘর থেকে একজন সুন্দরী যুবতী বেরিয়ে এল। কালো চুল মাথার ওপর খোঁপা করে বাঁধা। গাড়ো নীল চোখ। কৌতূহলী চোখে মেয়েটা ওকে দেখছে। জবাবে সে হেসে বলল, হাওডি! আমি স্টেক, ডিম আর পাই চাই।
মেয়েটা বড় একটা কাঠের চামচ হাতে এগিয়ে এল। সামনে হেলে পড়া একগোছা চুল পিছনে ঠেলে দিয়ে সে বলল, তা হবে না। হয় স্টেক আর পাই, নয়তো ডিম আর পাই–দুটোরই দাম দুই বিট!
দুটোই দাও আমাকে। বলল রনি। সবথেকে বড় আর রসালো স্টেক, দুটোর বদলে চারটে ডিম! কিছু বীনস্ যদি থাকে, সাথে ওটাও কিছু দিও।
বীনস দুটো অর্ডারের সাথেই আসে। কিন্তু এতে তোমার দাম পড়বে ছয় বিট। এত পয়সা তোমার আছে?
যদি না থাকে, হেসে বলল রনি, তাহলে আমি তোমার থালা বাসন ধুয়ে দেব।
তা হবে না! পাকা ব্যবসায়ীর মত জবাব দিল মেয়েটা। ড্যাকোটার এপাশে সব কাউবয়ই ওই চেষ্টা করেছে, কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে ডিশ ধোয়ার চিন্তা আর কেউ করে না। তোমাকে পয়সা দিতে হবে-ক্যাশ!
ঠিক আছে, মলি, সশব্দে একটা ডলার টেবিলের ওপর ফেলল রনি। আমাকে খাওয়াও।
দ্রুত ডলারটা তুলে নিয়ে এপ্রোনের পকেটে রাখল মেয়েটা। বসো আমি এখনই খাবার নিয়ে আসছি, বলেই আবার ফিরল সে। মাংসটা তুমি কেমন চাও?
কেবল শিঙ দুটো কেটে ভেজে আনলেই চলবে-বাকিটা আমি সামলাব।
মাংস ভাজার শব্দ পাওয়া গেল। অল্পক্ষণ পরেই সে গরম কফি নিয়ে এল। মেয়েটা লম্বা-চমৎকার ফিগার। কাউবয়রা যে কেন রান্না ঘরে ডিশ ধোয়ার বাহানা করে সেটা আঁচ করা কঠিন নয়।
এখানে তুমি নতুন? কিছু খবর জানতে চাইছে মেয়েটা। তুমিই কি জেমস হার্টকে পেয়েছিলে?
মাথা ঝাঁকাল সে। খবর দ্রুত ছড়ায়। ওকে তুমি চিনতে?
হ্যাঁ, চিনতাম। টেক্সাসের এপাশে ওর মত কাউবয় আর দুটো পাওয়া যাবে না। আর পিস্তল-বন্দুকেও ওর হাত ছিল ভাল। তবে ওর ভাই ফিনলের তুলনায় ওটা কিছু না।
আরও শোনার জন্যে অপেক্ষা করছে রনি। কিছু সময় আছে যখন, চুপ করে শোনা ভাল। এই ব্যাপারে ওর আরও কিছু জানা দরকার। প্রাথমিক গুলির ক্ষত থেকে যদি ওর মৃত্যু হত তাহলে রনির এতে নাক গলাবার কিছু ছিল না। কিন্তু এটা এখন ওর জন্যে একটা ব্যক্তিগত ব্যাপারে দাঁড়িয়েছে। ওকে বাচাবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু যুবককে অন্যায় ভাবে খুন করা হয়েছে। ও দেখতে চায় কে এমন গর্হিত কাজটা করেছে।
শটগান রাইডারের ব্যাপারে হ্যারিংটন এখন কি করবে? কথা বাড়াতে চাচ্ছে রনি।
রনির দিকে তাকাল মলি। শুনেছিলাম তোমাকেই ওরা ওই কাজের প্রস্তাব দিয়েছে।
কথাটা ঠিক। কিন্তু আমি এখন কাজের ধান্ধায় নেই। আর কাজ করলেও সেটা কাউবয়ের কাজই হবে।
রান্নাঘরে ঢুকে রনির জন্যে স্টেক আর ডিম নিয়ে এল মেয়েটা। ওর খাওয়ার মাঝে কথা বলে চলল মলি। এখন কেউই তেমন কাজের লোক খুঁজছে না। একমাত্র বেন কেসির কাজের লোক দরকার, কিন্তু ওর দুই বোনের জন্যে সে কাউকে টেকাতে পারে না।
বেন কেসি? মুখ তুলে চাইল রনি। আজ রবার্ট আর অ্যাডামের সাথে সেও ছিল।
হ্যাঁ, ওই লোকই। সে রকিঙ কে র্যাঞ্চের মালিক। তবে শোনা যায় এখন ওর টাকা-পয়সার টানাটানি চলছে।
তুমি মেয়েদের কথা কি যেন বলছিলে?
ঝট করে আড়চোখে রনির দিকে তাকাল মলি। বুঝেছিলাম ওটা তোমার মনে ধরবে। এ দেশের সব কাউবয়ই ওখানে কাজ নেয়ার জন্যে পাগল। সবাই দুজনের কারও সাথে ঝুলে পড়তে চায়। তবে শেলীই রক্তরাঙা ট্রেইল
বেশি জনপ্রিয়। লিসার মধ্যে কিছু একটা আছে যার জন্যে লোকজন ওকে একটু ভয় পায়। যাহোক, মেয়েটার একজন মনের মানুষ আছে।
ওরা দেখতে ভাল?
ভাল মানে? অত্যন্ত সুন্দরী। গম্ভীর ভাবে মাথা ঝাঁকাল রনি। বেন কেসির বোনদের কথা ভাবছে
সে। এই এলাকার লোকজনের মতিগতির কিছুটা ধারণা নিতে চায় মাত্র। কোথায় কি চলছে জানতে ইচ্ছুক। শেরিফ রবার্ট লোকটা যে ভাল এটা সে বাজি ধরে বলতে পারে। কিন্তু ওর বিবেচনা শক্তি যে কতটা, সেটা সন্দেহের বিষয়।
খাওয়ার মাঝে মলিকে কথায় ব্যস্ত রাখল রনি। এখানকার লোকজন আর পরিবেশ সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা গড়ে উঠছে ওর মনে।
এখানে মাইনার আর র্যাঞ্চারদের নিয়ে এই সমাজ। বেন কেসিই এখানকার সবথেকে বড় র্যাঞ্চার। আর মাইন বলতে হ্যারিংটনের সোনার খনিটাই উল্লেখযোগ্য। বেন তার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে র্যাঞ্চটা পেয়েছে। ওর বাবা ছিল একটা পাহাড়ী বাঘ। দাঁত ছিল ওই বুড়োর প্রয়োজনে ওগুলো ব্যবহার করতেও সে জানত। লোকটা তার আদান-প্রদানে ছিল সৎ-কিন্তু সেইসাথে ব্যবসায়ী বুদ্ধিও ছিল তার। রকিঙ কে র্যাঞ্চের বন্ধুর চেয়ে শত্রুই ছিল বেশি। বুড়োর মৃত্যুর পর রাসলাররা লুটেপুটে র্যাঞ্চটার আর কিছু রাখেনি।
এক বছরের মধ্যেই র্যাঞ্চের দুজন কর্মচারী গুপ্তঘাতকের গুলিতে মারা পড়ল। রাসলাররা এক হাজার গরু তাড়িয়ে নিয়ে গেল। বাধা দেয়ার কেউ ছিল না।
আশপাশের ছোট র্যাঞ্চগুলো ওদের গরু চুরি করেই সমৃদ্ধ হলো। রকিঙ কে দিনদিন গরীব হতে থাকল। চারপাশে আরও নতুন মুখ দেখা দিতে শুরু করল। বুড়ো কেসি জানত কিভাবে শহরের আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হয়, কিন্তু এখন চোর-ডাকাত আর ফটকাবাজে শহর ভরে গেছে। ঠেকাবার কেউ নেই।
সোনার খনি থেকে প্রচুর সোনা বেরোচ্ছে। ওরা চোখ রাখে কখন স্টেজে করে সোনা কোনদিকে যায়। ওদিকে, যদিও এখনও রকিঙ কে তে গরুর সংখ্যা প্রচুর, কিন্তু দিনদিন তা আরও পাতলা হয়ে আসছে। কে চুরি করবে, এই নিয়ে রাসলারদের মধ্যে মারপিট চলছে। পুরানো রাসলার নতুন রাসলারদের হাতে মারা পড়ছে।
ছোট মাইনগুলোর উৎপাদন বাড়লে, দুটো মাইন লুট হয়ে গেল। একটার মালিকই মারা পড়ল। অরাজকতার চরম। আগের শেরিফ গুলি খেয়ে মারা পড়ার পর রবার্ট এখন শেরিফের কাজ চালাচ্ছে।
সবখানেই একজন পালের গোদা থাকে, বলল রনি। এই শহরটাকে কে চালাচ্ছে?
আসলে কেউই না। র্যাঞ্চাররা সবাই বুড়ো কেসিকে মানত, কিন্তু এখন লোকজন অ্যাডামের কথা শুনতে শুরু করেছে।
ঘোড়ার ব্যবসায়ী?
হ্যাঁ, কিন্তু ওর একটা ছোট র্যাঞ্চও আছে। লোকটা কিছু গরুও কেনা-বেচা করে।
কাঠের ফুটপাথে প য়ের আওয়াজ পাওয়া গেল। ওই যে, জেরি সমার্স আসছে, পাশ কে সরে যেতেযেতে বলল মলি। ও এখানে নতুন, কিন্তু অনেক খোঁজ-খবর রাখে।
মলি কি বোঝাতে চাইল সেটা জিজ্ঞেস করার আগেই দু’জন লোক দোকানে ঢুকল। প্রথমজনের কালো ভুরু, ধনুকের মত বাঁকা পা, পুষ্ট দেহ, চোখ দুটো যেন একটু গর্তে ঢোকা। কিন্তু ওর পিছনের লোকটাই রনির দৃষ্টি আকর্ষণ করল।
জেরি সমার্স লোকটা সুদর্শন, ধূসর চোখ আর লালচে চুল। লোকটার বেপরোয়া চলার ভঙ্গি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
কি খবর, মলি? বিশদ হাসির সাথে সম্ভাষণ জানাল জেরি। রক্তরাঙা ট্রেইল
আমাদের দু’কাপ কফি আর কিছু খাবার দাও!
বসো, জেরি, কঠিন স্বরে বলল মলি। আর সবার মত তোমাকেও অপেক্ষা করতে হবে। তোমার বন্ধু, রনির দিকে এক ঝলক চেয়ে সে আবার বলল, ডাকি কেও।
জেরির দিকে তাকাল রনি। সেও ওকে দেখছে। এখানে নতুন? প্রশ্ন করল জেরি।
তুমি আগে কখনও এদিকে দেখেছ আমাকে? শান্ত স্বরে প্রশ্ন করল রনি।
না, তাই জিজ্ঞেস করছি।
আগে আমাকে দেখে না থাকলে আমি নিশ্চয় স্ট্রেঞ্জার। হাসল রনি। তারপর মলির দিকে চেয়ে বলল, আমাকেও এক কাপ কফি দিও। চমৎকার কফি বানাতে পারো তুমি।
নিজের গুরুত্ব এভাবে খর্ব হতে দেখে রুষ্ট হয়েছে সে। ওর চেহারায় সেটা প্রকাশ পাচ্ছে।
কিছু বলতে গিয়েও থমকে গেল সে। উরুর সাথে ফিতে দিয়ে বাঁধা পিস্তল দুটো ওর নজরে পড়েছে। সে বুঝেছে এই লোকটা যেই হোক, ফেলনা মোটেও নয়।
মানুষ চিনতে রনিরও ভুল হয়নি। সে জানে ওই সহজ হাসির পিছনে আছে একজন ভয়ঙ্কর মানুষ। কফি শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এল রনি। লোকটা পিস্তলবাজিতেও ওস্তাদ। বিপদ ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু বিপদকে কোনদিন ভয় পায়নি, রনি। সরাসরি মোকাবিলা করেছে।
হাই-গ্রেড সেলুনটা কয়েক দরজা পরেই। ওদিকেই রওনা হলো রনি।
মলির দরজা দিয়ে ওকে লক্ষ করল ডাকি। ওর চওড়া কাঁধ, উরুর সাথে ফিতে দিয়ে বাঁধা দুইটা পিস্তল, সবই দেখল। জেরি ওর পাশে এসে দাঁড়াল, ওকে কি ভয় পাও তুমি?
হোহ, কাউকে ভয় পাই না আমি।
হয়তো ওকে ভয় করে চললে আরও কিছুদিন বাঁচবে তুমি। ওকে সহজ লোক মনে কোরো না। শক্ত লোক সে। ওর থেকে সাবধানে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আমার সামনে ও দাঁড়াতেই পারবে না।
ধপ করে টুলের ওপর বসে নিজের কফিতে চিনি মেশাতে ব্যস্ত হলে ডাকি। ভয় কিছু না। তবে লোকটাকে খুব পরিচিত ঠেকছে। ওকে আমি আগেও কোথাও দেখেছি, কিন্তু কোথায় সেটা মনে করতে পারছি না।
কাঁধ উঁচাল জেরি। কালের সোতে ভেসে বেড়ানো এক কাউবয়। থাকবে না–চলে যাবে।
যাবে না, রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে মন্তব্য করল মলি। অন্তত কিছুদিন থাকবে। ছেলেটার খুন হওয়া সে সহজ ভাবে নিতে পারেনি।
সে কিভাবে শেরিফের থেকে ভাল করতে পারবে? প্রশ্ন করল সমার্স।
জানি না সে রবার্টের চেয়ে ভাল করতে পারবে কি না, সহজ সুরে মেয়েটা বলল, কিন্তু আমি খুনী হলে খুব চিন্তায় পড়তাম।
বিভিন্ন সেলুন আর আড্ডাখানায় ঘোরার কালে চোখ-কান খোলা রাখছে। রনি। বহু আগেই সে শিখেছে কঠিন শহরের হাওয়া কিভাবে আঁচ করতে হয়। শহরটা প্রায় টগবগ করে ফুটছে। কয়েকটা খুনের খবর সে শুনেছে। গত রাতেও মাথায় বাড়ি দিয়ে একটা ডাকাতি করা হয়েছে। একজন প্রসপেক্টারকে তার ক্লেইমে মৃত পাওয়া গেছে। দেখার কেউ নেই, নেকড়েরা এখন নির্ভয়ে শিকার ধরছে।
বুড়ো কেসি যতদিন বেঁচে ছিল শক্ত হাতে শহরটাকে সে কাবুতে রেখেছিল। সে আর তার কর্মচারীরা শহরের আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এখন সে আর নেই। তার ছেলে বেন কেসি চমৎকারর কাউম্যান, কিন্তু লড়তে জানে না। এখন যে যার খেয়াল-খুশি মত চলছে বাধা দেয়ার কেউ নেই। এখানেই হাঙ্গামার শুরু।
এক বোতল মদ নিয়ে বুড়ো কাউহ্যাণ্ডের সাথে কথা বলছে রনি। লোকটা মাথা হেলিয়ে জন মার্সারকে দেখাল। বেঁটে মোটা একটা লোক। সামনের দিকে চুল উঠে মাথার অনেকখানি জায়গায় টাক পড়েছে। বিশাল বপুর ওপর ঘড়ির সোনার চেইনটা শোভা পাচ্ছে। বুড়ো কেসি মারা যাওয়ার পর জন এখন মাথা উঁচিয়ে দাড়িয়েছে! নাক সিঁটকে বলল সে। কেসি বেঁচে থাকতে ওর মুখ থেকে কেউ টু-শব্দটিও শুনতে পায়নি। কিন্তু এখন ওর দাপটে মানুষের টেকাই দায় হয়ে উঠেছে।
উঠে দাঁড়িয়ে বারের দিকে এগোল রনি। হ্যারিংটন ওখানে দাড়িয়ে ছিল। ঘুরে রনিকে দেখে সে হাসল। তোমাকে দেখে খুশি হলাম, বন্ধু, বলল সে। আমার হয়ে শটগান মেসেঞ্জার হওয়ার ব্যাপারে তোমার মত পাল্টাল?
মাথা নাড়ল রনি। এখনও পাল্টায়নি। এখানে আমি কিছুদিন থাকতে চাই, কিন্তু ঘোড়ার পিঠে চড়ে কাজই আমার পছন্দ। হয়তো বেন কেসিকে তার হয়ে কাজ করার প্রস্তাব আমি দিতে পারি। ওখানে ফোরম্যান কে?
নিজের কাজ নিজেই দেখে বেন। গরু আর র্যাঞ্চ সম্পর্কে হয়তো ওর চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না। কিন্তু বাপের সেই শক্ত শিরদাঁড়াটা সে পায়নি। এটা যে কেন তা বোঝা কঠিন নয়। বিশাল কামরার লোকজনের দিকে রনির দৃষ্টি আকর্ষণ করাল হ্যারিংটন। কামরায় অন্তত ষাটজন লোক আছে এখন। আমি বাজি ধরে বলতে পারি ওদের অন্তত বিশজন মানুষ হত্যা করেছে। কয়েকজন একাধিক।
ওদের বেশির ভাগ লোকই গরু চোর। হয়তো দশজন অসৎ জুয়াড়ী। এদের সামলানো কোন কচি ছেলের কাজ নয়।
ওদিকে, জন মার্সারকে দেখাল সে, লোকটা শহর চালাতে চায়, কিন্তু এত বড় সে নয়।
কে বড়? রনির দিকে তাকিয়ে হাসল হ্যারিংটন। বন্ধু, ওটা একটা ভাল প্রশ্ন। কিছু লোক মনে করে, আমি। কিন্তু আমি এসবের মধ্যে জড়াতে চাই না। প্রয়োজন হলে আমি নিজেই আমার শিপমেন্ট বাঁচাতে শটগান রাইড করব–কিন্তু ওটা নয়।
মাথা নাড়ল হ্যারিংটন। উপযুক্ত লোক আসলে বর্তমানে কেউই নেই। ডাক্তার হ্যাডলে বুদ্ধিমান লোক, কিন্তু নেতৃত্ব দেয়ার ইচ্ছা বা ক্ষমতা কোনটাই তার নেই। ডাক্তারি করেই সে সন্তুষ্ট। আর রবার্ট এটা পারবে না।
অ্যাডাম কেন হাল ধরছে না? প্রশ্ন রাখল রনি।
একটু ইতস্তত করল হ্যারিংটন। হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত বলল সে। কিন্তু ওকে বোঝা সত্যিই কঠিন।
প্রসঙ্গ পাল্টাল রনি। তোমার সোনার ব্যাপারে কি বুঝছ? সোনা সহজে পাচার করা সম্ভব না। বিশেষ করে এত সোনা।
তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু আমি যতটা খবর পেয়েছি চুরি করা সোনার এক ভোলাও কোন বাজারে এখনও বিক্রি হয়নি। আমার বিশ্বাস চুরি করার আগেই ওরা কি ভাবে কি করা হবে, সব ভেবেই কাজে নেমেছে। তবে কাজটা বেশ কঠিন হবে। কিন্তু কাকে সন্দেহ করব? হাত ঘুরিয়ে কামরার সবাইকে দেখাল সে। এদের সবাই চোর আর হত্যাকারী-কাকে সন্দেহ করব?
হঠাৎ খুশির সুরে কেউ একজনকে সংবর্ধনা জানাল। ওই যে! বেন কেসি এসেছে। চাকরি চাইলে এখনই প্রস্তাব দাও, বলল হ্যারিংটন।
লম্বা গড়নের লোক বেন কেসি। বন্ধুসুলভ চেহারা। সোজা বারের কাছে হ্যারিংটনের দিকে এগিয়ে এল সে। কেমন আছ, বিল? রনিকে কিছুক্ষণ খুঁটিয়ে দেখে সে জিজ্ঞেস করল, তুমিই না হার্টকে খুঁজে পেয়েছিলে?
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছ, বলল রনি। আমি তোমার ওখানে একটা কাজ নিতে চেয়েছিলাম।
হাসল বেন কেসি। আমার অনেক লোক দরকার, বলল সে, কিন্তু রকিং কে-তে কাজ নেয়া এখন বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজের লোকেরা পটপট মারা পড়ে।
আমার দিকে লোকে গুলি আগেও করেছে, কিন্তু ওরা কেউ বাঁচেনি।
ঠিক আছে, আগামীকাল সকাল থেকেই তুমি কাজে আসতে পারো। ঘুরে চলে যেতে গিয়েও সে দাঁড়াল। তোমার নামটা কি?
রনি ড্যাশার, কিন্তু বন্ধুরা আমাকে রনি বলেই ডাকে। ওই নাম উচ্চারণে ওখানে অনেকের চোখই ছানাবড়া হয়ে গেল। নামটা জোরে বলেনি সে-তবু। সবাই ওদের কথাই কানপেতে শুনছিল।
কথাটা ডাকির কানেও গিয়েছে। পিলে চমকে গেছে ওর। টেক্সাসে ওকে অ্যাকশনে দেখেছে সে। এমন তুখোড় পিস্তলবাজ সে আগে কখনও দেখেনি। কখন যে ওর হাতে পিস্তল উঠে আসে আর কখন সে গুলি করে, তা পরপারে পৌঁছার আগে কেউ বোঝে না।
রনি ড্যাশার… অবাক চোখে তাকাল বেন। সকালেই তুমি চলে এসো। আমার র্যাঞ্চে তোমার কাজ পাকা!
ডাকি দ্রুত ঘুরে সেলুন ছেড়ে বেরিয়ে সেল। আড়চোখে ওকে লক্ষ করল রনি। রোদে পোড়া গানম্যানকে বেশ বিচলিত মনে হলো। হ্যারিংটন সবই খেয়াল করল, কিন্তু কোন মন্তব্য করল না। অ্যাডাম কাছেই দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ওদের দিকে পিছন ফেরা। সে শুনেছে কি না ঠিক বোঝা গেল না।
ঠিক আছে, বলল রনি, তাহলে সকালে দেখা হবে। কামরার লোকজন পেরিয়ে সে দরজার দিকে এগোল।
০৩. রকিঙ কে অ্যান্টিলৌপ
রকিঙ কে অ্যান্টিলৌপ এর একটা খুঁজের ভিতর। বিশাল স্প্যানিশ স্টাইলের একটা বাড়ি। কটনউড গাছগুলোর ভিতর তৈরি। পাশেই বিরাট একটা গুদাম ঘর। পাশে এক সারি করাল। সামনে একটা বিরাট পুকুর। ওটার পানি একেবারে স্বচ্ছ। টপারের পিপাসা পেয়েছে। পানিতে নাক ডুবিয়ে সে তৃষ্ণা মেটাল। দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজে মুখ তুলে চাইল রনি।
একটা মেয়ে হরিণীর মত লঘু পায়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ব্রাউন চুল, কিন্তু সূর্যের আলোয় একটু যেন লালচে আভা ছড়াচ্ছে। বয়স সতেরো হবে। অপূর্ব সুন্দরী। কেটি যা বলেছিল তা সম্পূর্ণ সত্যি।
মেয়েটা হাসল, ওর সবুজ চোখ দুটো রনিকে খুঁটিয়ে দেখছে। তুমিই ড্যাশার? বেন তোমাকে বলতে বলেছে, একটা বাঙ্ক বেছে নিয়ে জিনিস-পত্র রেখে, এলাকাটা একটু ঘুরে দেখতে। রেঞ্জের অন্য মাথায় গেছে সে, ফিরতে রাত হবে। বলেছে, তুমি হয়তো র্যাঞ্চটার সাথে কিছুটা পরিচিত হতে চাইবে।
ধন্যবাদ। রনি হাসল। ঠিকই বলেছে বেন। এলাকার সাথে পরিচিত না হতে পারলে কারও স্বস্তি পাওয়ার কথা নয়। তোমাদের কি অনেক গরু আছে?
ওর হাসিটা উবে গেল। এক সময়ে ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। তবু বেশ কয়েক হাজার হবে। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই চুরি শুরু হয়েছে।
শুনেছি। কিন্তু কর্মচারীরা এটা থামাবার চেষ্টা করে না?
ওরা চেষ্টা করেছিল ঠিকই, কিন্তু যারা চেষ্টা করল, তারা বেশিদিন টিকল না। পটাপট মারা পড়ল। মেয়েটার স্বরে তিক্ততা। এই র্যাঞ্চে একজন শক্ত ফাইটিঙ ফোরম্যানের দরকার। যে এটাকে সত্যিই চালাতে পারবে।
হয়তো। আবার হয়তো না। ওই ধরনের জিনিসে অনেক ঝামেলা আসতে পারে, যদি তোমার ফোরম্যানের ভাল বিবেচনাও না থাকে।
শেলী যদি সব সময়ে বেন-এর পক্ষ না নিত তাহলে আমরা একজন পেতাম। মেয়েটার চোখ দুটো জ্বলে উঠল। জেরি সমার্সকে কাজে নেয়ার জন্যে বেনকে আমি বহুবার বলেছি। উপযুক্ত লোক। সবাইকে ঠাণ্ডা করতে ওর বেশি সময় লাগত না। তখন আর কেউ আমাদের ওপর কথা বলতে পারত না।
সমার্স? অবাক হলো রনি। সতর্ক নজরে মেয়েটাকে দেখল সে। হয়তো কাজটার জন্যে ও-ই ঠিক মানুষ হবে। কিন্তু আমার তা মনে হয়নি, ম্যাম। অবশ্য আমি এখানে নতুন। লোকটা কি করে?
করে? মুহূর্তের জন্যে হতবুদ্ধি হয়ে রনির দিকে চেয়ে থাকল লিসা। কি বোঝাতে চাচ্ছ?
ওর পেশাটা কি? ও কি কাউহ্যাণ্ড?
হ্যাঁ, ওই কাজও করেছে সে। কিন্তু বর্তমানে কিছু করছে না।
বোঝার ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল রনি। বুঝলাম। টপারের পিঠ থেকে জিন নামাল সে। হ্যাঁ, ওটা খুব ভাল পেশা-কিন্তু ওতে টাকা নেই। মানুষ ওটা বেশিদিন করতে পারে না। টাকা ফুরিয়ে যায়। অন্য কোন পেটের ধান্ধা করতে হয়। কিন্তু হয়তো ওর বেশি টাকার প্রয়োজন নেই-বন্ধু-বান্ধবের থেকেই সেটার ব্যবস্থা হয়ে যেতে পারে।
মেয়েটা খেপে উঠল। কী? কেন, ওর সম্পর্কে এমন একটা কথা তুমি কিভাবে বললে?
নিষ্পাপ চেহারা রাখার চেষ্টা করল রনি। কঠিন কথাটা সে কেন যে বলেছে, তা সে নিজেও জানে না। মুহূর্তের জন্যে তার খারাপ লাগল।
কে জানে? জেরি সমার্স হয়তো এই সমাজের একজন মাথাও হতে পারে। কিন্তু ওর সহজাত প্রবৃত্তি বলছে লোকটা নীচ। এমন মনে হওয়ার বিশেষ কোন কারণ নেই–তবু মনে হচ্ছে।
হয়তো আমি ভুল বলেছি, ম্যাম। আন্তরিক হৃদ্যতার সাথেই বলল সে। কিন্তু মানুষের পেট চালাবার জন্যে সবাইকেই কিছু না কিছু করতে হয়। সে কাউবয়ের কাজ করে কোথাও, বা র্যাঞ্চের মালিক, প্রসপেক্টার, কিংবা মাইনে কাজ করে, বারটেণ্ডার কিংবা আর কিছু। ওর কিছু একটা রোজগার থাকতেই হবে। নইলে কারও পেট চলে না। জানি না, হয়তো ওর অন্য কোন আয় আছে।
নিরাসক্ত চাহনিতে রনির দিকে তাকাল লিসা। ওর প্রিয় লোক জেরি ওর ভাইয়ের বিরক্তির কারণ-আর বোনের দুশ্চিন্তা। কিন্তু যে যাই বলুক তুষোড় গানম্যান জেরিকে ওর ভাল লাগে। কাউকে ভয় পায় না, অথচ হাসি-খুশি। ভাইয়ের মত মনের জোরের কমতি ওর নেই। লিসার মনে জ্বালা, কারণ সবাই ওদের র্যাঞ্চ লুটেপুটে খাচ্ছে–ওর ভাই কিছু করছে না।
ওদের তিনজনেরই র্যাঞ্চে সমান শেয়ার আছে। সেটা বেন দিয়েছে। কিন্তু বোন শেলী সব কিছুতেই ভাইয়ের পক্ষ নেয়। এতে যে ওর মনের ভিতরে আগুন ধরে যায়, সেটা কেউ বোঝে না। র্যাঞ্চে চুরি হচ্ছে, কিন্তু ভাই কিছুই করছে না।
তোমার ঘোড়াটা সত্যিই চমৎকার। প্রসঙ্গ পাল্টাল সে।
সত্যিকার সন্তুষ্টির সাথে মাথা ঝাঁকাল রনি। ওঁর চেয়ে ভাল ঘোড়া আর হয় না। আজ পর্যন্ত অনেক ঘোড়াই আমি চড়েছি। অনেক মানুষের থেকে ওর বেশি বুদ্ধি।
তুমি কি অনেকদিন থাকবে? নাকি বেন তোমাকে কেবল গরু জড়ো করার জন্যে কাজে নিয়েছে?
সেটা আমি নিজেও ঠিক জানি না, জানাল রনি। ওই বিষয়ে আমাদের কোন কথা হয়নি। শুনলাম ওর লোক দরকার তাই কাজের জন্যে ওকে বললাম-সে’ও রাজি হয়ে গেল।
তুমি কি জানো আমরা কিছু লোক হারিয়েছি? প্রশ্ন করল লিসা। বেন তোমাকে বলেছে?
হ্যাঁ, সে এবং আরও কয়েকজনে বলেছে। রোদে উজ্জ্বল পাহাড়গুলোর দিকে চেয়ে লম্বা একটা বড় শ্বাস নিল রনি। তবে আমার বিশ্বাস সব রেঞ্জেই কিছু না কিছু ঝামেলা থাকে।
জিনটা বয়ে নিয়ে শেডের ভিতর নির্দিষ্ট জায়গায় ঝুলিয়ে রাখল রনি। বর্তমানে কতজন লোক কাজ করে এখানে?
মাত্র পাঁচজন। একটা সময় ছিল যখন বারো থেকে বিশজনও এখানে কাজ করেছে। লিসার স্বরটা একটু তেতো। এটাই এখানকার সব থেকে বড় র্যাঞ্চ।
ওরা কি এখানে অনেক দিন থেকে আছে?
মাত্র দু’জন। টেরি আর হ্যারি। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই টেরি আছে। হ্যারি এসেছে বছর চারেক আগে।
আর বাকি তিনজন?
তোমাকে ওদের সাথেই কাজ করতে হবে–তুমি নিজেই বিচার করে নিতে পারবে। ওরা সবাই ভাল, আর কাজের লোক বলেই আমার বিশ্বাস। কিড লেকার মাত্র দু’হপ্তা হলো আছে। বাকি দুজন মাসখানেক আগে কাজে এসেছে। রজার আর হেনরি স্যাড়ল পার্টনার।
মেয়েটা কয়েক মিনিট চুপ করে রইল। তীক্ষ্ণ চোখে চারপাশটা খুঁটিয়ে দেখছে রনি। দালান আর জমি পরিপাটি ভাবে রাখা হয়েছে। গরু যা দেখা যাচ্ছে ওগুলোর চেহারাও ভাল। বেন কেসি ফাইটার না হলেও র্যাঞ্চিঙ বোঝে।
রাউণ্ড-আপের সময়ে ঝামেলা হবে, শান্ত স্বরে বলল লিসা। তোমাকে আগে থেকে সাবধান না করাটা আমাদের অন্যায় হবে। পুবে, একটা র্যাঞ্চ আছে–ওদের দৌরাত্ব দিনদিন বেড়েই চলেছে। ওরা তিন ভাই, ব্লু মাউন্টিনের কাছে থাকে।
ঝামেলাটা কি?
ওরা রেঞ্জ চায়। বেনের ধারণা, গরু চুরিতে ওদের হাত আছে। হ্যারিরও তাই ধারণা। বিশ বছর ধরে আমাদের গরু যে জমিতে চরেছে সেখান থেকে ওরা তাদের খেদিয়ে দিচ্ছে। হ্যারি ওদের মুখোমুখি হলে ওরা তার মুখের ওপর হেসেছে। বলেছে মুরোদ থাকলে সে কিছু করার চেষ্টা করতে পারে। ওরা তিনজনই উপস্থিত ছিল। হ্যারিকে উস্কে পিস্তল বের করাতে চাচ্ছিল, তাহলে ওকে মেরে ফেললেও কেউ ওদের দোষ দিতে পারত না।
লঙই সবথেকে পাজি, আমার বিশ্বাস। কিন্তু ওদের মধ্যে বাছাবাছিতে লাভ নেই, কারণ কেউ কারও চেয়ে কম যায় না। ওরা বড়াই করে বলেছে আমাদের ওরা ভিটেছাড়া করবে।
ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনে মুখ তুলে তাকাল রনি। দেখল তিনজন কাজের মানুষের পাশে বেন ঘোড়ার পিঠে এসে হাজির হলো। রোদে পোড়া চতুর চোখের লোকটাই টেরি হবে বলে আঁচ করল রনি। সরু কোমরের লোকটার চেহারায় পুরোপুরি টেক্সাসের ছাপ রয়েছে–ও হ্যারি ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। ওদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল বেন। শেষ লোকটার বিশাল দেহ-নাম হেনরি।
আজ থেকে রনি তোমাদের সেগুলো (ফোরম্যান)। তোমরা আমাকে যেমন মানেনা, ওকেও তেমনি মানবে। ওর আদেশকে আমারই আদেশ মনে করবে। ড্যাশার! এসো আমরা ভিতরে বসে কথা বলব। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল সে।
ভিতরে ঢুকে পকেটে হাত ঢুকাল বেন। ওর চোখ দুটো চকচক করছে। ড্যাশার, বলল সে, তোমার সম্পর্কে আমি অনেক শুনেছি। খ্রী J-এর জনসন তো কেবল তোমার গল্পই করে। এখন তুমি এখানে এসেছ এটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। ওরা তোমার সম্পর্কে যা বলে তা যদি ঠিক হয়। তাহলে আমরা এবার সত্যিই ত্রাণ পাব।
তুমি ফাইটার। আমি মানুষ চিনি, তুমি একাই একটা যুদ্ধ জিততে পারো। যুদ্ধ হলে তুমি আদেশ দেবে। র্যাঞ্চ আমি সামলাতে পারি কিন্তু ফাইটিঙ যা হয় সেটা তোমাকে সামলাতে হবে। তোমাকে সেগুন্দো করে আমার কাঁধ থেকে একটা বিরাট বোঝা নেমে গেল। এখন নিশ্চিন্ত হয়ে আমি র্যাঞ্চের কাজ দেখতে পারব। হোল্ড-আপের পর ওখানে তোমাকে দেখেই আমি বুঝেছি, জনসন ঠিকই বলেছিল–আমি দুর্বল মানুষ ফাইটিঙ সামলাতে পারি না।
তুমি কি ব্লু মাউন্টিনের ওই তিন ভাইয়ের সাথে ঝামেলার আশা করছ?
ওদের কথা তুমি শুনেছ? হ্যাঁ, অন্য সূত্র থেকেও ঝামেলা আসতে পারে। এখানে আমরাই হচ্ছি তরমুজ, সবাই আমাদের কেটে খেতে চায়।
পাতলা গড়নের র্যাঞ্চারের প্রতি রনির শ্রদ্ধা আরও বাড়ল। ঠিক আছে, বলল সে, আমি গোলাগুলি ছাড়াই সব সামলাবার চেষ্টা করব। কিন্তু সেটা যদি সম্ভব না হয়?
তোমার নিজস্ব বিবেচনা ব্যবহার কোরো। অস্থির ভাবে পায়চারি করছে বেন। ওরা ঝামেলা করতে চাচ্ছে, যদি চায় ওদের শিক্ষা দিয়ে দিও। কিন্তু–ওর চোখ কঠিন হলো। ওরা শুরু করলে তবেই কেবল আমরা ফাইট করব। বুঝেছ?
সত্যি কথা হচ্ছে, রনি র্যাঞ্চের জীবন পছন্দ করে। গরু আর ঘোড়া ওর অত্যন্ত প্রিয়। ঘোড়া খারাপ হোক বা ভাল কোনটাতেই তার আপত্তি নেই। ওদের সাথে খেলতে ওর ভাল লাগে।
এমনও একসময় ছিল যখন এদেশে অফুরন্ত বসতি ছাড়া রেঞ্জ ছিল। এখন সেখানে পুব থেকে মানুষ এসেছে, বসবাস করছে। কিছু নেস্টারও জুটেছে, বড় র্যাঞ্চারদের একটা-দুটো গরু চুরি করে খায়। সুযোগ পেলে পনেরো-বিশটা বা একশোটা তাড়িয়ে নিয়ে আর কোথাও বিক্রি করে দেয়।
অবশ্য ওদের মাঝে অনেক সৎলোকও আছে, যারা কেবল থাকার একটা জায়গা ছাড়া আর কিছু চায় না। এদের খারাপ চোখে দেখে না রনি। কিন্তু কিছু ক্ষমতাশালী র্যাঞ্চার, গুণ্ডা ভাড়া করে ওদের তাড়ানোর ব্যবস্থা করে।
কোন খবরের কাগজে ছাপানো হয়নি। কিন্তু বুড়ো কেসির মৃত্যুর খবর মুখে-মুখে ঠিকই অনেক দূর পৌঁছেচে। খামচি দিয়ে একটু লাভ করার আশায় অনেকেই এখানে এসে হাজির হয়েছে।
প্রথম কয়েকটা রেইড ছিল মৃদু। ওরা পরীক্ষা করে দেখছিল বাঘের বাচ্চাও বাঘ কি না। যখন বুঝল সে দুর্বল–সবাই ওকে পেয়ে বসল।
আউট-ল-দের মাঝে ওই তিন ভাইই শ্রেষ্ঠ। কঠিন বলে ওদের নাম আছে। একসাথেই বসে খাচ্ছে। খবর পৌঁছল। রনি এসেছে। খাওয়া ছেড়েই উঠে দাঁড়াল মিক। আমার কাজ আজই শেষ। আমার টাকা মিটিয়ে দাও। রনির বিরুদ্ধে দাঁড়াব না আমি। ও যে কি তা আমি টেক্সাসেই দেখেছি। পিস্তল দেখা যায় না, কিন্তু গুলি ছোটে। যেখানে মারে সেখানেই বেঁধে গুলি।
লঙ এর গুরুত্ব বুঝছে না। ড্যাশারের নাম সে আগে কখনও শোনেনি। তুমি কি ওই লোকের নাম শুনেই ভেগে যাচ্ছ?
হ্যাঁ, ওকে চিনলে তুমিও দেশ ছেড়ে পালাতে। লোকটা সৎ। কোন রকম অন্যায় সে সহ্য করে না। নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করে।
পালিয়ে যাচ্ছ? অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করল লঙ। ঘটনাটা কি?
ঘটনা? লঙের দিকে তাকাল মিক। শোনো, লঙ। আমার সাহস রক্তরাঙা ট্রেইল
কারও চেয়ে কম নয়। কিন্তু আমি বোকা নই। কোন মূল্যেই আমি ওর বিরুদ্ধে দাঁড়াব না। যাহোক, আমার ইচ্ছে আমি দক্ষিণে যাব, যেখানে রোদ আছে।
আশ্চর্য, কি আবোল-তাবোল বলছ? এখন বসন্ত চলছে, মাসখানেক পরে এখানেই তুমি অনেক সূর্য পাবে।
হতে পারে। কিন্তু এখন আমার খুব ঠাণ্ডা লাগছে।
মিছেই ভয় পাচ্ছ তুমি, একটু কঠিন স্বরেই বলল সিলভার। মনে হচ্ছে তোমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।
সিলভারের দিকে ফিরল মিক। তুমি ঠিকই বলেছ সিলভার। আমার পকেটে এখন চল্লিশ ডলার আছে। এখানে থাকলে, হয়তো চারশো ডলার থাকবে। কিন্তু মারা পড়লে ওই চারশো ডলার আমার কি কাজে আসবে? মনে হয় এমনও দিন আসবে যখন তুমিও ভাববে আমার সাথে চলে গেলেই তুমি ভাল করতে!
তিন দিন রেঞ্জটা ঘুরে ভাল করে চিনে নিল রনি। একবার ব্ল্যাক স্যাণ্ড ডেজার্টের দিকেও গেছিল। কিন্তু ঘাস নেই বলে গরু ওদিকে যাবে না। কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই সে কাটাল, হে স্ট্যাক ভ্যালি, আর দূরের ব্লু মাউনটিনের আশেপাশে। পুরো এলাকাটা খুঁটিয়ে দেখছে সে। রেঞ্জের পুরোটাই সুন্দর করে রাখা হয়েছে। শান্তি পেলে বেন কেসি উন্নতি করবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
র্যাঞ্চ বাড়িটা অ্যান্টিলৌপের পশ্চিম ঢালে। কিন্তু ছোট একটা গিরিপথ ধরে সহজেই পুবের বিশাল রেঞ্জে পৌঁছা’নো যায়। ওখানে ওদের প্রচুর গরু চরে। ওই রেঞ্জ নিয়েই তিন ভাইয়ের সাথে কে র্যাঞ্চের বিরোধ। কেবল গরুই চুরি করছে না–ওরা নিজেদের গরু কে রেঞ্জে চরাতে শুরু করেছে।
দক্ষিণে কে-র্যাঞ্চের গরু পোকার গ্যাপ আর কাউ ক্রীক ক্যানিয়ন, আর পশ্চিমে ব্ল্যাক স্যাণ্ড ডেজার্ট পর্যন্ত চরে বেড়ায়। টেরির কথায় রনি জানল দক্ষিণ-পুবে কর্ন প্যাঁচ নামে একটা আউটল গ্রাম আছে। মাঝেমাঝে ওটা শূন্য থাকে, আবার কখনও লোক গিজগিজ করে। আর
এখন? প্রশ্ন করল রনি।
লোকজনে ভরা, বিষণ্ণ মুখে জানাল টেরি। নতুন শিকার ধরার আগে কয়েটিরা যেমন একজোট হয়, ঠিক তেমনি। কিন্তু হিউবার্ট ভাইয়েরা আমার মতে সাধারণ আউটলর চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। ওরা প্রত্যেকেই শক্ত লোক, আর জঘন্য রকম নীচ। বিবাদে ঝাপিয়ে পড়তে ওরা ওস্তাদ। ওদের দৌরাত্মে ব্লু ক্লে সাইডহিলে কেউ টিকতে পারেনি!
ওদের দেখা পেলে আমরা ওদের সাথে কথা বলব, সহজ স্বরে বলল রনি।
তোমাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না, টেরি শুষ্ক স্বরে বলল। ওই যে ওরা আসছে।
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নেমে এল হ্যারি। ওই যে, লঙ হিউবার্ট তার লোকজন নিয়ে আসছে, জানাল সে।
ওরা সংখ্যায় চারজন। আরোহীরা দ্রুত এগিয়ে এল। রনি ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে গেল।
হাওডি, ঠাণ্ডা স্বরে বলল সে। আমি ধরে নিচ্ছি তুমিই লঙ হিউবার্ট।
ওদের মধ্যে সবথেকে লম্বা আর চিকন লোকটা মুখ বাঁকিয়ে ওর দিকে বিদ্বেষের চোখে তাকাল। তুমি ঠিকই ধরেছ, কিন্তু তোমরা থ্রী এইচ এর রেঞ্জে রয়েছ।
আমি যতদূর জানি এটা কে-রেঞ্জ, হেসে জবাব দিল রনি। শুধু এটাই নয়, ব্লু পর্যন্ত পুরোটাই ওদের জমি। থ্রী-এইচ আসার বহু আগে থেকেই ওরা এখানে আছে। রেঞ্জটা তোমাদের কি করে হলো?
কৈফিয়ত আমি দেব না! বিচ্ছিরি শব্দ তুলে জোরে হেসে উঠল লঙ। বুড়ো কেসি বেঁচে থাকতে সে গায়ের জোরে প্রতিবেশীদের সব জায়গা কেড়ে নিয়েছিল। এখন বুড়ো মরেছে, সুতরাং তোমরা যেতে পারো–আর ফিরো না!
ঘোড়ার পিঠে বসেই ঠাণ্ডা নীল চোখে থ্র-এইচ রাইডারদের একেএকে খুঁটিয়ে দেখল রনি।
লঙ, নিচু স্বরে বলল সে, এটা রকিঙ কে-রেঞ্জ। আগেও ছিল, এখনও আছে। ব্লু মাউনটিনসের ওপাশে প্রচুর জমি রয়েছে। তোমরা গরু চরাতে চাইলে, আর কেউ নিয়ে। য়ার আগেই তোমাদের ওখানে যাওয়া উচিত। তুমি আর তোমার ভাইয়েরা শান্তিতে থাকতে চাইলে সেটা সম্ভব। কিন্তু তোমরা যুদ্ধ চাইলে অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই–এখনই শুরু করতে পারো।
অ্যাঁ? কথাগুলো রনি এত নিচু স্বরে বলেছে যে কথার মর্ম উপলব্ধি করতে লঙের কিছুটা সময় লাগল। যখন বুঝল, রাগে ওর মুখটা লাল এবং ভীষণ হয়ে উঠল। কিন্তু সেই সাথে একটা ঠাণ্ডা অনুভূতিও জাগল। পরিস্থিতিটা ওদের অনুকূলে আছে বলা যায় না। সাঙ্ঘাতিক লোক বলে রনির নাম আছে। টেরি আর হ্যারির থেকেও কোন দুর্বলতা আশা করা যায় না। গানম্যান না হলেও ওরা পাশাপাশি দাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ফাইট করবে। লঙ বোকা নয়। সেই যে ওদের তিনজনেরই প্রথম টার্গেট হবে এটা সে জানে। ইতস্তত করছে হিউবার্ট।
ঘোড়াটাকে এগিয়ে নিয়ে রনি ওর খুব কাছে গিয়ে দাঁড়াল। আমার কথা কানে গেছে তোমার? যুদ্ধ, না শান্তি, কোনটা চাও তোমরা? যুদ্ধের কথা তুমিই প্রথম তুলেছ। অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। মনস্থির করে নাও। যুদ্ধ চাইলে তোমাদের তাই দেয়া হবে।
লঙের পিছনে, একটু বাম দিকে বিষণ্ণ চেহারার একটা লোক গোড়ার পিঠে বসে আছে। উঁচু গালের-হাড়ের ওপর ছোটছোট দুটো চোখ। চোয়ালটা ভারি আর নিষ্ঠুর। ওকে আমার হাতে ছেড়ে দাও, লঙ, অনুনয় করে বস-এর অনুমতি চাইল সে। অনেক বড় বড় কথা—
ওর কথাটা শেষ হলো না। রনির উল্টো হাতের ঘুসি খেয়ে জিনের ওপর টলে উঠল আংশিক টাকমাথা লোকটা। পাদানি থেকে ওর ডান পা ছুটে গেছে। একটু ঝুঁকে ওর পাটা হেঁচকা টানে উপরে তুলল ড্যাশার। আছাড় খেয়ে সশব্দে মাটিতে পড়ল সে। লোকটা সামলে ওঠার আগেই লাফিয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল রনি। পরক্ষণেই শার্টের কলার ধরে ওকে ধুলো থেকে টেনে তুলে প্রচণ্ড একটা ডান-হাতি ঘুসি মেরে লোকটাকে আবার মাটিতে ফেলে পিছিয়ে এল।
প্রচণ্ড ঘুসিতে কুতকুতে চোখের লোকটার ধাঁধা লেগে গেছে। মাথা আঁকাল সে। পরিস্থিতিটা কিছুটা পরিষ্কার হতেই মুখ দিয়ে ঘোৎ করে একটা শব্দ তুলে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। হাত ঘুরিয়ে বাম হাতের ঘুসিতে ওর গাল হাড় পর্যন্ত চিরে গেল। ডান হাতের বিরাশি-সিক্কা ঘুসিটা থুতনির ওপর পড়তেই মুখ থুবড়ে ধুলোর ওপর পড়ল সে।
পিছিয়ে এসে রনি দেখল, হ্যারির রাইফেলটা জিনের ওপর রাখা। বিপক্ষ দলের বাকি লোকজনকে কাভার করে রেখেছে। অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটানো লোকটার দিকে দেখিয়ে সে বলল, দেখতেই পাচ্ছ, লঙ, ও লড়তে চেয়েছিল–মনে হচ্ছে ওর সাধ মিটেছে।
রেহাই পাবে না তুম! ভীষণ খেপেছে লঙ, কিন্তু সতর্কও হয়েছে। এখন ওর জেতার সম্ভাবনা আরও কমেছে। ধুলোয় লুটানো লোকটা নড়ছে না। যদি সে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতেও সক্ষম হয়, গোলাগুলির যুদ্ধ সামলাতে পারবে না।
তোমার ভাইদের জানিও, এখানে বার জন্যেই যথেষ্ট রেঞ্জ আছে। তোমাদের গরু রু-ওপাশে চরালে, আর আমাদের গরু খেদিয়ে নিলে, কোন বিরোধ হবে না। আমরা বিরোধ চাই না, কিন্তু ঝামেলা সামলাবার ক্ষমতা আমাদের আছে।
মার-খাওয়া লোকটা উঠে বসেছে। মাথা ঝাঁকিয়ে কুয়াশা কাটাবার চেষ্টা করছে। কয়েক সেকেণ্ড পর রোষের সাথে রনির দিকে তাকাল। পরেরবার, রাগী কুকুরের মত দাঁত বের করল সে, গুলির লড়াই হবে!
অপেক্ষা কেন? ওর দিকে ঘুরে দাঁড়াল ড্যাশার। তোমার কোমরে পিস্তল রয়েছে। মরতে চাইলে ওদিকে হাত বাড়াও।
অনেকক্ষণ রনির দিকে তাকিয়ে রইল লোকটা। খুনের নেশা ওর চোখে। আগ্রহ আর উত্তেজনায় হাতের আঙুল মাঝেমাঝে লাফাচ্ছে। ধীরে চোখ থেকে খুনের নেশাটা কেটে গেল। এখন না, বলল সে। পরে।
ঠিক আছে, তাই হবে। লঙের দিকে চোখ ফেরাল ড্যাশার। আমি যদি তোমাদের কোন রাইডারকে কখনও এই রেঞ্জে দেখি, ঘোড়া হারাবে সে। হেঁটে ফিরতে হবে। কথাটা মনে রেখো!
কি? হুঙ্কার ছাড়ল লঙ। আগুন ঝরছে ওর চোখে। আম্পর্ধা! তোমাকে আমি—
রনির হিম-শীতল নীল চোখের দিকে চেয়ে ঢোক গিলল লঙ। কথাটা শেষ করতে পারল না। ঠিক আছে, আমন্ত্রণ জানাল ড্যাশার, ইচ্ছে থাকলে কিছু শুরু করো। তুমি ঘোড়ার পিঠে চড়ে, নাকি তার পিঠে উপুড় হয়ে ফেরো, তাতে আমার কিছু আসে যায় না।
ওরা ফিরে গেলে খিলখিল করে হেসে উঠল হ্যারি। ওহ! লঙের চেহারাটা লক্ষ করেছিলে? এই প্রথম কেউ একজন হিউবার্টের মুখোমুখি পঁড়িয়ে তাকে ভয়ে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করল। এটা ওরা সহজ ভাবে নেবে না!
টেরি দাঁত বের করে হাসল, কিন্তু ওর চোখে দুশ্চিন্তা। উচিত শিক্ষা হয়েছে ওদের, স্বীকার করল সে। কিন্তু ওরা এখন লোকজন নিয়ে গোলাগুলির জন্যে তৈরি হয়ে আসবে। ওদের কাউহ্যাণ্ডের সংখ্যা আমাদের চেয়ে বেশি।
ওরাও নিজেদের র্যাঞ্চের পথে রওনা হলো। রেঞ্জের চারপাশ ভাল করে খুঁটিয়ে দেখছে রনি। এই নেভাডা স্টেটটা অন্যান্য স্টেটের তুলনায় শুকনো। বসন্তকালটাই এখানকার সব থেকে ভাল সময় হলেও ততটা সবুজ নয়। যেসব জায়গায় উইন্টার ফ্যাট জন্মেছে সেগুলো হালকা ধূসর রঙ দেখে দূর থেকেই চেনা যায়। ওগুলোই এসব এলাকার সবচেয়ে ভাল চারণভূমি। কেসির রেঞ্জে উইন্টার ফ্যাট বেশি জন্মায়। ওগুলোর দখল, বিরোধের একটা মূল কারণ। সাথে কিছু অন্যরকম স্বার্থও জড়িত আছে।
কিছুক্ষণ নীরবে পথ চলার পর রনি প্রশ্ন করল, শহরে কোন বেকার ভাল রাইডার আছে? আমি এমন লোক কাজে নিতে চাই যারা ফাইট করবে।
কাঁধ উঁচাল হ্যারি। হয়তো দু’জন পাওয়া যাবে। শর্টি মাইক শহরেই আছে। দারুণ ফাইটার। কিন্তু বেন কেসির হয়ে কাজ করবে না সে। দু’বার প্রত্যাখ্যান করেছে। বুড়ো কেসির সাথে ওর কিছু সংঘর্ষ ঘটেছিল।
কঠিন কিছু?
না, কিছু কথা কাটাকাটি মাত্র। শর্টির ভয়-ডর বলতে কিছু নেই। যেকোন বিপদের মুখে গুলি ছুঁড়তে-ছুঁড়তে সে এগিয়ে যেতে পারে। জেমস হার্টের সাথে ওর খুব ভাব ছিল। ওর একটাই দোষ কাজ না থাকলে মদে চুর হয়ে থাকে।
আর যখন কাজ করে?
কখনও ছুঁয়েও দেখে না। মানুষটা ঝগড়া-প্রিয়। কিন্তু ফাইটিঙের জন্যে ওর মত লোক তুমি কমই পাবে।
জেতে?
ফিফটি-ফিফটি। কিন্তু তাতে ওর কোন আক্ষেপ নেই। ওর রক্তের সাথেই মিশে আছে মারপিট। ইউনিয়নভিলে একটা লোক ওকে তিনবার হারিয়েছিল। এর পর থেকে প্রতি শনিবারে ওখানে লোকটার বিরুদ্ধে লড়তে যেত শর্টি। শেষে অতিষ্ঠ হয়ে লোকটা ওর থেকে দূরে থাকার জন্যে দেশ ছেড়েই চলে গেছে।
হাসল রনি। হয়তো শহরে গিয়ে শর্টির সাথে কথা বললে কিছু কাজ হতে পারে।
ওকে কোথায় পাওয়া যাবে?
মলি ব্রাউনের ওখানেই ও বেশি সময় কাটায়। বাকিটা নেভাডা সেলুনে।
একটা সরু ধোয়ার রেখা উঠতে দেখে, আকৃষ্ট হয়ে ওরা ওদিকে এগোল।
কিড লেকার তার আগুন থেকে মুখ তুলে চাইল। রাইফেলটা ওর পাশেই রাখা–কোমরেও পিস্তল ঝুলছে। পাতলা গড়নের কম বয়সী বেটপ একটা ছেলে। কিন্তু ওর হাসিটা সরল আর বিশদ। হাওডি! বলল সে। নেমে, বসো! কফি গরম আছে–খাবারও তৈরি হচ্ছে। রনির দিকে একটা চোরা-চাহনি দিল। ওখানে কি ঘটেছে তা আমি দেখেছি। আমি কাছেই ছিলাম।
মনোযোগ দিয়ে নতুন চোখে রনি ছেলেটাকে খুঁটিয়ে দেখল।
কাছেই মানে? কোথায় ছিলে তুমি?
তিনশো গজ দূরে একটা পাথরের আড়ালে। আমার রাইফেল সর্বক্ষণ লঙ হিউবার্টের দিকে তাক করা ছিল।
মাথা হেলিয়ে কিড লেকারের দিকে ইঙ্গিত করল টেরি। রাইফেলে ছেলেটার হাত ভাল, রনি। ওকে আমি তিনশো গজ দূরে ছুটন্ত অ্যানটিলৌপ শিকার করতে দেখেছি। ঠিক মাথায় লেগেছে গুলি।
ওটা কিছু না। লজ্জা পেয়েছে লেকার। শ্যুটিঙ করেই সারা জীবন কেটেছে আমার।
টিনের কাপে কফি ঢেলে ড্যাশারের দিকে এগিয়ে দিল হ্যারি। এই কফি সম্পর্কে তোমাকে আগেই সাবধান করছি, বলল সে। একবার, কফি শেষ হওয়ার পর তলানিটা আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। দেখা গেল চল্লিশ ভাগ কফি, চল্লিশ ভাগ ক্ষার, দশ ভাগ সোনা আর বাকি দশ ভাগ মিশ্র পদার্থ আছে ওর ভিতর।
এদিককার লোকজন, গভীর সুরেই বলে চলল সে, এই কারণেই সব সময়ে কফির শেষে তলানিটা পরীক্ষা করে দেখে। অনেক কাউহ্যাণ্ডই এভাবে সোনা পেয়ে বড়লোক হয়ে গেছে।
নাক দিয়ে অবজ্ঞাসূচক একটা শব্দ করল টেরি। ওর কথায় তুমি কান দিও না। উদ্ভট সব গল্প বানিয়ে বলা ওর অভ্যাস।
আমি গল্প বানাই? কক্ষণও না! প্রতিবাদ জানাল হ্যারি। চুপ করে বসে তোমার কফি খাও, বিরক্ত টেরি বলল।
একটু হেসে রনি তার নিজের কফিতে চুমুক দিল। কফির স্বাদ আর গন্ধে নাক কুঁচকাল সে। ওতে সোনা আছে কি না সেটা বোঝ না গেলেও, ক্ষার যে প্রচুর আছে এটা সত্যি। মনেমনে হাসল আবার। ক্যাম্পে কফি থেকে যত সোনার গুঁড়ো সে গিলেছে, তা একসাথে জড়ো করলে তার আজ নিজেরই একটা র্যাঞ্চ হতে পারত।
রনির দিকে ফিরল টেরি। ড্যাশার, আমি এই টেক্সান টার্কির সাথে একটানা দুবছর কাজ করেছি। এখন আমাকে কিড বা আর কারও সাথে জুটি বেঁধে কাজ করতে দেয়া যায় না? ওর গল্পে আমার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছে।
ভাল কথা, হঠাৎ মুখ তুলে মন্তব্য করল লেকার, আমি শুনলাম জেরি সমার্স নাকি গোস্ট মাউন্টিনে সোনা পাওয়ার আশায় কিছু জমি কিনেছে! ওটা কর্ন প্যাচের পুবে।
সমার্স? ভুরু কুঁচকাল টেরি। আমি ধারণাই করতে পারিনি সে একজন মাইনার।
গোস্ট মাউন্টিন? কৌতূহল মেটাতে প্রশ্ন করল ফোরম্যান। এমন অদ্ভুত নাম কেন? রক্তরাঙা ট্রেইল
ওখানে নাকি ভূত আছে। স্টার সিটি ছিল ওখানকার একটা মাইনিং টাউন। ১৮৬৮তে ওটা খালি হয়ে গেল। কিন্তু দু’জন লোক মাইন শাক্ট দিয়ে নিচে পড়ে যায়–ওদের খুঁজে পাওয়ার আগেই ওরা খাবারের অভাবে মারা পড়েছিল। লোকে বলে ওখানে নাকি ভূত দেখা গেছে। আমার ধারণা ওটা কর্ন প্যাচের লোকেরাই রটিয়েছে।
শুনেছি কর্ন প্যাঁচ নাকি কঠিন জায়গা, মন্তব্য করল রনি।
মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল টেরি। যেকোন সময়েই বিপজ্জনক। ওখানে বিল ওয়াটসন, একটা স্টোর, সেলুন আর জুয়ার আড্ডা চালায়। আউটলদের একটা নিরাপদ আখড়া। লোকটা সাপের থেকেও বিষাক্ত। নল কাটা একটা শটগান সবসময়েই কাছে রাখে। লোকে বলে ড্র পোকারে বিল ওস্তাদ।
চার, কি পাচজন আউটল ওখানে থাকে। তিনজন সবসময়েই থাকে। কিন্তু ওদের সংখ্যা বর্তমানে বিশেরও বেশি। সবাই কঠিন লোক।
বিদ্যুত লেফটি বর্তমানে ওখানে এসে হাজির হয়েছে, জানাল হ্যারি। টেক্সাসের বিগ বেণ্ডের লোক সে।
ওকে আমি চিনি, রনি বলল, ট্যালি মাউন্টিন দলের লোক।
টেক্সাসের হ্যারির চোখ দুটো চকচক করে উঠল। তুমি এলাকাটা চেনো? শাফটার থেকে একটু নিচে বান্ট ক্যাম্পে আমার জন্ম।
চিনি, মুচকি হেসে বলল ড্যাশার। ওটা ফ্রেসনো ক্যানিয়নের কাছে।
ঠিক বলেছ, দাঁত বের করে হাসল হ্যারি। যেন একজন দেশী ভাইয়ের দেখা মিলেছে। আশ্চর্য!
কাপটা ধুয়ে উঠে দাঁড়াল রকিঙ K-র ফোরম্যান। তুমি কি টহল দিয়ে এই এলাকার দেখাশোনা করছ, বাছা?
হ। অন্য কাউহ্যাণ্ডদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখল, ওরা ঘোড়ার পেটি বাধায় ব্যস্ত। হঠাৎ সে নিচু স্বরে বলল, রনি, হয়তো কথাটা তোমাকে বলা আমার ঠিক হচ্ছে না, কিন্তু আমার বিশ্বাস, এটা তোমার জানা উচিত। মিস লিসা কেসি মাজুবা ক্যানিয়নে এটা লোকের সাথে প্রায়ই দেখা করতে যায়। আমি ঝামেলা শুরু করতে চাইনি বলেই ভয়ে বেনকে জানাইনি।
সেটা ওর নিজস্ব ব্যাপার, মন্তব্য করল সে। এখানে আমাদের কাজ কেবল রেঞ্জ আর গরু দেখা।
হ্যাঁ। ছেলেটার মুখ লাল হলো। কিন্তু লোকটা সত্যিই খারাপ সে হচ্ছে পিস্তলবাজ, জেরি সমার্স!
নামটা শুনে একটু থমকাল ড্যাশার। কিড লেকারের অনুভূতি বুঝতে পারছে সে। সমার্স নোকটা হয়তো ভাল হতে পারে, কিন্তু মলির দোকানে দেখা সুদর্শন লোকটাকে তারও ভাল মনে হয়নি। মানুষ চিনতে তার কদাচিৎ ভুল হয়।
আমি-র্যাঞ্চে কিছু কথা আমার কানে এসেছে, যেচেই সে রনিকে জানাল। মেয়েটা ওর সাথে দেখা করুক এটা বস্ মোটেও চায় না। কথাটা কিছুদিন আগে বেন নিজেই বলেছে। জেরিকে র্যাঞ্চ থেকে বের করে দিয়েছিল সে। বেনের মুখের ওপরই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বেরিয়ে গেছিল সমার্স।
মাথা ঝাঁকাল রনি। ঠিক আছে, কিড। এ সম্পর্কে আর কারও সাথে আলাপ কোরো না। ব্যাপারটা আমার একটু ভেবে দেখতে হবে।
র্যাঞ্চে ফেরার পথে রনি আপন মনেই ভাবছে এটা তার কোন ব্যাপার নয়। এতে নাক গলানো তার উচিত নয়কোন মতেই না। পুরোটাই হয়তো ছেলেটার কল্পনা। লিসার প্রতি লেকারের দুর্বলতা থাকা অস্বাভাবিক নয়। আর লিসা যে সুদর্শন সমার্সের প্রতি কেন আকৃষ্ট, সেটা বোঝা খুব সহজ।
ট্রেইল ধরে দু’মাইল পথ নীরবে চলার পর রনিই প্রথম মুখ খুলল। জেরির সম্পর্কে তোমরা কিছু জানো?
লোকটা খারাপ, নিচু স্বরে জানাল টেরি। গত বছর ইউনিয়নভিলে সে একজনকে মেরেছে…বিনা কারণে লোকটার সাথে ঝগড়া করে খেপিয়ে ওকে হত্যা করেছে। এর আগে তিনজনকে যে ও হত্যা করেছে, সেটা আমি জানি। এমন আরও দু’জন আছে, যাদের ব্যাপারে আমার ওকেই সন্দেহ হয়। ওর পার্টনার ডাকি–সেও প্রায় ওর মতই খারাপ।
গরু জড়ো করার কাজ শুরু হতে এখনও কয়েকদিন বাকি, এবং তার প্রস্তুতিতে ওদের হাতে অনেক কাজ। সবাই মিলে কাজ করেই তা শেষ করতে হবে। রাউণ্ডআপে ঝামেলা হতে পারে, কিন্তু তা নিয়ে রনির ভাবনা নেই। সব শেষ হলে পরে, হিসেব মিলিয়ে দেখবে সে। রকিঙ কে কত গরু হারাল, আর অন্যান্য র্যাঞ্চাররা কতটা লাভ করেছে, তা থেকেই ব্যাপারটা খোলাসা হয়ে যাবে। তবে রাউণ্ডআপের সময়ে এমন কিছু ঘটতে পারে, যার ফলে খুব দ্রুত পরিস্থিতি র্যাঞ্চ-ওয়ারের দিকে এগোবে।
সাবধানের মার নেই, তাই সবদিক বিচার করে আগে থেকে তৈরি থাকাই ভাল। শহরে গিয়েশটি মাইকের সাথে কথা বলে দেখতে দোষ নেই। যতটুকু সে শুনেছে তাতেই বুঝেছে সত্যিকার ফাইটার শর্টি। বর্তমানে এমন লোকই তার দরকার। যত ফাইটিঙ লোককে সে রকিঙ কে-তে নিতে পারবে, বিপদের সম্ভাবনাও ততই কমবে।
তাছাড়া লঙের রাইডারকে পিটানো, আর লঙকে সবার সামনে ওভাবে অপমান করায় ওদের সাথে মোকাবিলা ইতোমধ্যেই আসন্ন হয়ে উঠেছে। তবে এটা ওদের বুঝিয়ে দেয়া গেছে যে রকিঙ কে, ওট খাওয়া মোটা ভেড়া পোষে না-কিছু চাইলে সেটা ওদের লড়েই নিতে হবে। এতে যারা কঠিন তাদের চেষ্টায় ভাটা পড়বে না, কিন্তু রাউণ্ডআপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চুরিটা কমবে।
এর মধ্যে জেরির ভূমিকা যে কি সেটা আঁচ করতে পারছে না। এবং পরের ব্যাপারে নাক গলানোর অভ্যেস ওর নেই।
র্যাঞ্চে যাওয়ার পথে স্টেজ ডাকাতি নিয়ে ভাবতে গিয়ে সায়মন হত্যার কথা মনে হলো ওর। সে জেনেছে সায়মন মারাত্মক পিস্তলবাজ ছিল। লোকটা কোথায় যাচ্ছিল? কে মেরেছে ওকে? কে এমন লোক, যে সায়মনের মত তুখোড় লোককে গুলি করার সুযোগ দিয়েও নিশ্চিত ছিল, সে ওকে সহজেই হারাতে পারবে? এমন লোক ক’জন থাকতে পারে? বেশি নয়। ওকে খুঁজে বের করা তাই কঠিন হবে না। লোকটা চরম আত্মবিশ্বাসী এবং প্রচণ্ড অহঙ্কারী। সে নিষ্ঠুরও বটে। সম্ভবত একই লোক জেমসকেও হত্যা করেছে।
র্যাঞ্চের কাছে এসে পড়েছে রনি। টেরি আর হ্যারি ওকে ছেড়ে অনেকটা এগিয়ে গেছে। রিজের মাথায় উঠে, থেমে, একটা সিগারেট তৈরি করার ফাঁকে, পুরো পরিস্থিতিটা নিয়ে ভাবছে সে–গভীর চিন্তায় মগ্ন। সমস্যাটার অনেকগুলো দিক রয়েছে। থ্রী এইচ র্যাঞ্চের তিন ভাই, কর্ন প্যাচের আউটল-এর দল, জেরি সমার্স, স্টেজ ডাকাতি এবং জেমস হার্টের খুন হওয়া।
এগুলোর মাঝে কি কোন যোগাযোগ আছে? সেটাই প্রশ্ন, কিন্তু সম্ভাবনা কম। পশ্চিমের অনেক শহরেই জেরি সমার্সের মত লোক বাস করে। সামান্য কিছু থাকলেও বড়লোকি চাল দেখিয়ে চলে। কাজ কিছুই করে না-আলস্যে, পোকার খেলে দিন কাটায়। মাঝেমাঝে ওরা রাসূলিঙও করে। জেরি লোকটা আবার নিষ্ঠুর গানফাইটার। তবে কি সেই সায়মন আর জেমসকে মেরেছে?
এত বেশি চিন্তা করছ, নিশ্চয় সিরিয়াস কিছু?
ঘুরে সে একজন লম্বা মহিলার মুখোমুখি হলো। মনে ছাপ রাখার মত চেহারা। নীরব একটা সম্রান্ত ভাব, আর আকর্ষণ আছে মেয়েটার মধ্যে।
এটা, আমার ধারণা, রনি সরল সুরে বলল, তুমি নিশ্চয় শেলী কেসি? রক্তরাঙা ট্রেইল
হ্যাঁ। তুমি এই র্যাঞ্চটা সম্পর্কে ভাবছিলে? আমি প্রায়ই এখানে এই রিজের ওপর আসি। জানি, যখন চলে যাব, এর জন্যে আমার মন কাঁদবে।
তুমি চলে যাচ্ছ?
কেবল শহর পর্যন্ত। সেভেন পাইনসের ডাক্তার হ্যাডলের সাথে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে।
লোকটা ভাগ্যবান।
মাঝেমাঝে মনে হয় আমি বিশ্বাসঘাতক। আশপাশের পাহাড়গুলোর দিকের সে চোখ তুলে চাইল। এতসব ঝামেলার মধ্যে র্যাঞ্চটার কি হবে ভেবে আমার খুব ভয় হয়।
আমরা একে রক্ষা করব, শান্ত স্বরে রনি বলল, তোমার ভাই একজন ভাল মানুষ।
তারপর বিকেলে যা যা ঘটেছে সব ওকে শোনাল। কেবল লিসা আর জেরির সম্পর্কে কিড তাকে যা বলেছে, সেটা চেপে গেল। মনোযোগ দিয়ে মেয়েটা সব শুনল। কেবল মাঝেমাঝে নীরবে মাথা ঝাঁকাল।
হিউবার্টদের সাথে যে আমাদের লড়াই অনিবার্য এটা আমরা সবাই জানতাম, বলল সে। লিসা ওখানে জেরিকে পাঠাতে চেয়েছিল, সেও সানন্দেই যেতে রাজি ছিল। বেন কিছুতেই মত দিল না।
মনে মনে বেনকে সুবিবেচক বলে মানল রনি, কিন্তু মুখে কিছু বলল। হঠাৎ ঘুরে ড্যাশারের মুখোমুখি হলো শেলী। তোমার এখানে একজন শত্রু আছে, নিচু স্বরে বলল সে, আমার বলতে লজ্জা লাগছে যে তোমার সেই শত্রু, আমারই বোন। তোমাকে আমার ভাই কাজে নেয়ায় সে ভীষণ খেপে গেছিল। ওকে আমি অত্যন্ত ভালবাসি। কিন্তু লিসা খুব একগুয়ে। ওর বদ্ধমূল ধারণা সমার্স ছাড়া আর কারও এই র্যাঞ্চ চালাবার ক্ষমতা নেই।
রক্তরাঙা ট্রেইল
কিন্তু আমি তো এটা চালাচ্ছি না, প্রতিবাদ জানাল সে। আমি কেবলমাত্র সেগুন্দো–বিপদ ঠেকানোর দায়িত্ব আমার।
জানি, কিন্তু লিসার সেটা মোটেও পছন্দ হয়নি। সে ভাবছে ওকে জোর করে ঠেলে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বেন আর আমার চিন্তাধারায় খুব মিল। কিন্তু লিসা…সে সম্পূর্ণ নিজস্ব ধারায় ভাবে।
পিছন থেকে ঘোড়ার খুরের আওয়াজ শুনে দু’জনেই ফিরল। মেয়েটার চুলে বিকেলের রোদ পড়ায় মনে হচ্ছে যেন আগুন ধরেছে। লিসা ঘোড়ার পিঠে বসেই ওদের দেখল। গম্ভীর মুখে ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে সে বলল, হ্যাঁ ঠিক, আমি গেছিলাম। আমার মতে রনি ড্যাশারকে কখনোই কাজে নেয়া ঠিক হয়নি!
আড়চোখে রনির চোখের দিকে চেয়ে বরফ-শীতল হলো ওর চোখ। তুমি জানো ওরা কি বলছে? তুমিই জেমস হার্টকে হত্যা করেছ! তুমিই স্টেজ লুট করেছ! সায়মনকেও তুমিই খুন করেছ! একটু থামল সে। ওরা ঠিক এই কথাই বলছে, এবং ফিনলে হার্টকেও ওরা খবরটা দিয়েছে। শহরে এসেছে সে, তোমাকে খুঁজছে! তোমাকে হত্যা করবে ফিনলে! আর আমি-আগুন ঝরল মেয়েটার চোখে আমি এতে খুব খুশি হব।
০৪. রনি যখন ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল
রনি যখন ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল, নেভাডা সেলুন তখন আলোয় ঝলমল করছে। ঘোড়ার পেটি ঢিলে করার অবসরে রাস্তাটা খুঁটিয়ে দেখে নিল। মলির ওখানে এখন আর রাতের খাবার পাওয়া যাবে না-সময় পেরিয়ে গেছে। রাতের বেলা সেলুনের ব্যবসা জমে উঠেছে। পাহাড়ের দিক থেকে ঠাণ্ডা বইছে। তাই রাস্তায় একটা লোকও নেই। সবাই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। কেবল একজন অন্ধকার স্যাডল শপের সামনে একটা পোস্টের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাত দুটো বুকের ওপর ভঁজ করা। মাইনারদের বুট পরেছে সে। হ্যাটটা সাধারণ।
লিসা যা বলেছে, সেটা স্মরণ করেই মলির খাবার দোকানের দিকে পা বাড়াল সে।
ফিনলে কি তার খোঁজেই শহরে এসেছে? সে কি তাকে সত্যিই মেরে ফেলবে বলেছে? নাকি লিসা তাকে নিছক একটু বিব্রত করার জন্যেই ওকথা বলেছে? লোকটা পারিবারিক লড়াই করা পরিবার থেকে এসেছে। কে বলতে পারে, হয়তো সে আগে গুলি কোরে, পরে প্রশ্ন করবে? রাস্তা পেরিয়ে মলির দোকানের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল।
ওকে দেখেই মিষ্টি করে হাসল মলি। একাই ছিল সে।
মলি, চট করে জিজ্ঞেস করল সে, ফিনলে কি এখন শহরে?
মুহূর্তে গম্ভীর হলো ওর মুখ। হ্যাঁ, আছে। তোমার সাথে সে কথা বলতে চায়।
লোকটা কেমন?
ইতস্তত করল মলি, তারপর বলল, আমি–আমি জানি না। তিরিশের নিচে ওর বয়স, একটু রুক্ষ হলেও দেখতে ভাল। হাসে কম। জেমস ওকে দেবতার মত ভক্তি করত। আমার কাছে সবসময়ে কেবল ভাইয়ের গল্পই করত। ফিনলে এটা করেছে, ফিনলে সেটা করেছে, এইসব।
এখানে আসার আগে ওরা মিসৌরিতে একটা গৃহযুদ্ধে জড়িত ছিল। ওদের বাবা আর চাচাকে হত্যা করা হলো। প্রতিশোধে ফিনলে বিপক্ষ দলের সবাইকে শেষ করে দিল। তারপর দু’ভাই একসাথেই এখানে চলে এল। কঠিন পরিশ্রম করে সে। আমার বিশ্বাস লোকটা অত্যন্ত সৎ। এবং ভাইকে সে খুব ভালবাসত।
চিন্তাযুক্ত ভাবে মাথা ঝাঁকাল রনি। আমাকে কিছু কফি দাও, বলল সে; তারপর আবার বলল, কফি আর পাই।
হঠাৎ দরজা খুলে গেল। মুখ তুলে তাকাল ড্যাশার। অ্যাডাম আর জেরি সমার্স ভিতরে ঢুকেছে। ওকে দেখে দুজনেই হেসে সামান্য একটু মাথা ঝুঁকাল। হাওডি, রনি, বলল অ্যাডাম। তুমি যে এখানে আছ, সেটা শহরের সবাই জানে। এই শহরে গত ছয় মাসে এটাই সম্ভবত সবথেকে বড় খবর!
স্টজ লুট হওয়ার থেকেও বড়? শুষ্ক স্বরে জিজ্ঞেস করল রনি।
কাঁধ উঁচাল অ্যাডাম। ওগুলো এখন ডাল-ভাত হয়ে গেছে। অহরহই ঘটছে, তাই ওটা আর এখন গরম খবর নয়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ড্যাশারের দিকে তাকাল সে। হ্যাঁ, ভাল খবর। আজ এখানে ইলেকশন হলো। আজ থেকে আমি এই শহরের নতুন মেয়র। শহরে একজন টাউন মার্শাল নিযুক্ত করার জন্যে আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রথমেই তোমার কথা আমার মনে এসেছে। ওই কাজের জন্যে তুমিই সব থেকে উপযুক্ত। তুমি কি বলো?
বর্তমানে একটা চাকরি করছি আমি, হেসে মাথা নেড়ে জবাব দিল ড্যাশার। যাহোক, অফার করার জন্যে ধন্যবাদ।
কিন্তু এই চাকরিতে তুমি ডবল পাবে! প্রতিবাদ জানাল অ্যাডাম। আমরা তোমাকে মাসে একশো-পঞ্চাশ ডলার করে দেব। এছাড়া যত অ্যারেস্ট হবে, তাদের মধ্যে যারা জেলে যাবে, সেই টাকা আমরা আধাআধি ভাগ করে নেব। আরও অনেক উপরি পাওনাও আছে।
আমার চাকরি একটা রয়েছে, পুনরাবৃত্তি করল সে। আসলে আমি একজন র্যাঞ্চাইডার, আইনরক্ষী নই।
দুঃখের কথা! অ্যাডাম বিরক্ত হলো। তোমাকে পেলে আমি নিশ্চিন্ত হতাম।
কফিতে চুমুক দিয়ে মলির দিকে চোখ তুলে তাকাল। ম্যাম, বলল সে, আমি মনে-প্রাণে কামনা করছি, আমি শহর ছাড়ার আগে কোন কাউবয়ের সাথে যেন তোমার বিয়ে না হয়! চমৎকার কফি তৈরি করতে পারো তুমি। টেক্সাস ছাড়ার পর যত কফি খেয়েছি, এর সাথে তার তুলনা হয় না!
আবার দরজা খুলল। খাটো একটা মানুষ ভিতরে ঢুকল। পিপের মত বুক, চওড়া চোয়াল-নাকটা ভাঙা। চোখ দুটো নীল। অনেক মদ খেলেও, ওর চেহারা ঝাঁপসা হয়নি। ওর হাতের পাঞ্জা দুটো বড়। দুটো পিস্তল ঝুলছে ওর কোমরে, বেশ নিচুতে। দুটোই উরুর সাথে ফিতে দিয়ে বাঁধা।
শর্টি, কঠিন স্বরে বলল মলি, আবার মাতাল হয়েছে তুমি!
একটা বিশদ নির্লজ্জ হাসি দিল লোকটা। এখনও হইনি! আমার হাঁটা এখনও স্বাভাবিক আছে, কথাও জড়ায়নি। কিন্তু–অ্যাডাম আর জেরির দিকে তাকাল সে-কেমন যেন একটা বোটকা গন্ধ নাকে আসছে।
শর্টি একদৃষ্টে চেয়ে আছে ওদের দিকে। ঠিক! খাটাসের মত গন্ধ। একটা নয়, দুটো! কপট বিস্ময়ে চারপাশে তাকাল সে। তৃতীয়টা কই?
অ্যাডামের চেহারা কঠিন হলো, ঠোঁট পরস্পারের ওপর চেপে বসল। জেরি সমার্সের চেহারা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। চোখ দুটোর পিছনে যেন সাক্ষাত শয়তানের বাসা। রনি আঁচ করতে পারছে, জেরি অপমানিত হওয়ার পরও কেন কিছু করতে ইতস্তত করছে। শর্টি এখানে জনপ্রিয়। জেরির হাতে সে মারা পড়লে, হাটে অনেক হাঁড়িই হয়তো ভাঙবে। এতে ওর ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না। আর অ্যাডাম কোন অবস্থাতেই শর্টির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে রাজি নয়। দৃশ্যটা থেকে অনেক কিছুই রনির কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। কফিতে চুমুক দিতে দিতে সব খেয়াল করছে সে। শর্টি যে ওদের দুজনের কাউকেই ভয় পায় না, এটা পরিষ্কার। কারণ ওদের খোঁচাতে সে ইতস্তত করেনি। কিন্তু বিবাদে যাওয়াটা অ্যাডাম বা জেরি কারও জন্যেই লাভজনক হবে না।
টেবিলের ওপর বিশাল থাবা দুটো রেখে একটু সামনে ঝুঁকল শর্টি। আমি জিজ্ঞেস করছি অন্য খাটাসটা কোথায়?
শর্টি! ধমকের সুরে তীক্ষ্ণ স্বরে চ্যাঁচাল মলি। শর্টি, এদিকে এসে তোমার কফি খাও! ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে?
মাতাল লোকটা অ্যাডাম আর জেরির দিকে চেয়ে একটু ইতস্তত করল, তারপর ধপাস করে বসে পড়ল। মাথা নেড়ে সে বিড়বিড় করে বলল, নারী! নারী! ওরা পুরুষকে কোনদিনই শান্তি দিল না। কেবলই বাধ সাধে। ওদের জালায় একটা ভাল ফাইটও কেউ করতে পারে না। দুটো খাটাসের সাথে একটু মারপিট করব, ওটাও ওরা সহ্য করবে না। এক জোড়া খাটাসের সাথে লড়ব, তারও উপায় নেই!
দরজা বন্ধ হওয়ার মৃদু শব্দে রনি তাকাল। দেখল ওরা দুজন বেরিয়ে গেছে। বাইরে থেকে কথাবার্তার মৃদু আওয়াজ আসছে। তেতো কথা কাটাকাটি। অ্যাডাম সত্যিই রনিকে টাউন মার্শাল হিসেবে চেয়েছিল, এটা ওর মনে হয় না। কেউ তাকে রকিঙ কে থেকে সরাতে চাইছে। কিন্তু কে? এবং কেন?
পাই খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিল রনি। পাই শেষ করে মুখ তুলে দেখল, শার্ট স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে।
নিচু স্বরে রনি বলল, বেন আমাকে তার ফোরম্যান করেছে। ঝামেলা সামলানো আমার কাজ।
এমন একজন ওর দরকার, শর্টি শুষ্ক স্বরে বলল। ওর স্বরে মাতাল ভাবটা আর নেই।
তা ঠিক। ওর সাথে একমত হলো ড্যাশার। হিউবার্টরা ওর রেঞ্জ দখল করে নিতে চাচ্ছে।
হিউবার্টদের সেই শক্তি আছে, মন্তব্য করল শর্টি।
ওদের একজনের সাথে আজ আমার মোকাবিলা হয়েছে। বিকেলের ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিল সে। ওরা এখন লড়াইয়ে নামবে সন্দেহ নেই। আমার এখন কিছু ভাল কাউহ্যাণ্ড দরকার। শুনেছি তুমি মারপিট পছন্দ করো। তোমাকে আমার এই কাজের জন্যে উপযুক্ত বলে মনে হচ্ছে। তোমাকে আমি চাই। তোমার কি মত?
ইতস্তত করল শর্টি। তারপর ধীরে মাথা নাড়ল। বুড়োর সাথে কথা কাটাকাটির পর আমি শপথ করেছি এই র্যাঞ্চে আর কখনও কাজ করব না।
যে কেউ মত পাল্টাতে পারে, বলল রনি। বেন কেসি জানে সে কোন ফাইটার নয়, কিন্তু লড়াই আসন্ন। ওকে পছন্দ করি আমি। তাই লড়াইয়ের দিকটা আমি দেখছি। তোমাকে আমার প্রয়োজন।
নীরবে কফিতে চুমুক দিল মাইক। শেষে সে বলল, রজার আর হেনরি এখনও ওখানে আছে?
আছে।
তাহলে আমি নেই।
ওদের পছন্দ করো না?
উঠে দাঁড়াল শর্টি মাইক। রজারকে হয়তো সহ্য করা যায়। আর সবার মত হেনরি কেন শনিবার শহরে আসে না? কোথায় যায় সে?
কৌতূহলী চোখে শর্টিকে খেয়াল করে দেখছে। এই লোকটাকে তার চাই। ওর সম্পর্কে যা শুনেছে, আর আজ যা দেখেছে, তাতে বুঝেছে মারপিটে শর্টি একাই ছয়জনের সমান। কোথায় যায় সে?
হাসল শর্টি। ঘোড়ায় চেপে লম্বা রাইডে যায়। বুঝে নাও কোথায় যেতে পারে এবং কেন। তাহলেই বুঝবে কেন ওকে আমি অপছন্দ করি।
তার পিছনে দরজা বন্ধ করে দিয়ে শর্টি বেরিয়ে গেল। চিন্তাযুক্ত মনে সিগারেটে টান দিয়ে রনি বলল, দারুণ ভাল একটা লোক। ওকে পেলে আমি খুশি হতাম।
পাবে। মলি নিশ্চিত। ওটা আমার আর শর্টির নিজের ওপরই তুমি ছেড়ে দাও। মারপিট ওর প্রিয়, আর আমি জানি এটাতে ঢোকার জন্যে সে পাগল। তাছাড়া, তোমাকে ওর পছন্দ হয়েছে।
আমাকে? অবাক হয়ে মলির দিকে চাইল সে।
হ্যাঁ, তোমাকে। শর্টিকে আমি চিনি। এখন সে খোঁজ-খবর নিচ্ছে। আজ লঙ হিউবার্ট আর তোমার মাঝে কি ঘটেছে। যা শুনবে, সেটা যদি ওর পছন্দ হয়, কাল সকালেই সে কাজে যোগ দেবে। কেবল সে যখন আসবে, কোন প্রশ্ন তুলো না।
বাইরে বেরিয়ে রাস্তাটা খুঁটিয়ে দেখল রনি। স্যাডল শপের সামনে যে লোকটা দাড়িয়ে ছিল, সে এখন আর একটু দূরে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। কেবল ওর পা দুটো দেখা যাচ্ছে।
ধীর পায়ে রাস্তা ধরে এগোল রনি। পিছন ফিরে না তাকিয়েও সে বুঝতে পারছে তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। লোকটা তাকে গুলি করার কয়েকটা ভাল সুযোগ পেয়েছে; সুতরাং হয় সে কথা বলতে চায়, অথবা গুলি করে গোপনে পালিয়ে যাবার মত সুযোগ খুঁজছে।
হঠাৎ লোকটা দ্রুত য়ে এগিয়ে এল। ঘুরে দাঁড়াল রনি। তৈরি।
ড্যাশার? প্রশ্ন নয় বক্তব্য। আমি কাৰ্প। তোমার সাথে নির্জনে কথা বলার সুযোগ খুঁজছিলাম আমি।
কেন?
আমি রাসলার হওয়া সত্ত্বেও আমাকে ফাঁসি না দিয়ে তুমি আমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছিলে। তাই তোমাকে ফাঁদ থেকে সাবধান করতে এসেছি।
কেমন ফাঁদ?
অ্যামবুশ! রোউজবাড ক্যানিয়নে। ওখানে সাত বা আটজন লোক প্রস্তুত হয়ে লুকিয়ে থাকবে। তোমারই একজন লোক তোমাকে ওখানে নিয়ে যাবে। ওরা সবাই একসাথে গুলি করে তোমাকে ঝাঁঝরা করে দেবে আউটল দল।
ধন্যবাদ, কার্প। একটু ইতস্তত করল ড্যাশার। তুমি কি করবে?
শুকনো একটু হাসল কার্প। আমি? আমি কাল সকালেই মনট্যানার পথ ধরব। যখন শুনলাম তুমি এখানে এসেছ, বুঝলাম রাসলিঙের খেলা শেষ।
রাস্তা ধরে কয়েকজন আরোহীকে এগিয়ে আসতে দেখে দেয়াল ঘেঁষে একটা অন্ধকার জায়গা বেছে নিয়ে দাঁড়াল রনি। দেখল, ওরা পাঁচজন। ওদের মধ্যে লঙ হিউবার্ট আর টাকমাথা কাউহ্যাণ্ডকে চিনতে পার।
রাস্তার উল্টো পাশে অন্ধকারে সামান্য নড়াচড়া লক্ষ করে খুব খেয়াল করে দেখার চেষ্টা করল সে। চিনতে পারল–ওটা শর্টি মাইক।
কাউহ্যাণ্ড হিউবার্টদের পিছুপিছু হাই-গ্রেড সেলুনে ঢুকল। একটু ভেবে নিয়ে রাস্তা পার হয়ে ঘুরে পিছন দিকে চলে এল রনি।
হাই-গ্রেড শহরের প্রধান হোটেল। দোতালা কাঠের দালানে বার, আর জুয়া খেলার টেবিল রয়েছে একতালায়, আর দোতালায় করিডোরের একপাশে রয়েছে পর্দা দেয়া বুথ-অন্যপাশে এক-সারি ছোটছোট কামরা। পিছন দিকের সিঁড়ি দিয়ে দোতালায় ওঠা যায়। একতালাতেও পিছনের একটা দরজা আছে।
ড্যাশার সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় উঠে এল। করিডোর ধরে হালকা পায়ে এগিয়ে শেষ বুথে ঢুকে পর্দাটা একটু ফাঁক করে দিল। নিচের বাটা ওখান থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।
থ্রী এইচ র্যাঞ্চের লোজন বারের সাথেই সার বেঁধে দাঁড়িয়েছে। লঙকে সে চেনে, জনিকেও অল্পক্ষণের মধ্যেই চিনল ওকে নাম ধরে ডাকতে শুনে। লোকটার চওড়া কাধ আর বুক, একটু মোটাসোটা, লালচে গোঁফ আর ছোটছোট দুটো নিষ্ঠুর চোখ। সিলভারও জনির মতই বিশাল, কিন্তু মেদ বলতে ওর দেহে কিছু নেই। সবটাই পেশী। পরিষ্কার করে কামানো মুখ। তিনজনেরই শক্ত চেহারা, সবার কোমরেই দুটো করে পিস্তল ঝুলছে।
শর্টি মাইক ভিতরে ঢুকেছে। ধীর পায়ে ওদের পাশ দিয়ে এগোচ্ছে সে। টাক মাথা লোকটার পাশে এসে থামল। ঝুঁকে ওর বিকৃত ফোলা মুখটা খুঁটিয়ে দেখল। ঘুরে তাকাল টেকো। ভিতরে ভিতরে রাগ তেতে উঠছে ওর।
ঘটনাটা কি? জানতে চাইল সে।
কিছু না। শর্টির বুড়ো আঙুল দুটো বেল্টের পিছনে গোঁজা, আমি কেবল অবাক হয়ে ভাবছিলাম।
কি বিষয়ে? সন্দিগ্ধ হয়ে প্রশ্ন করল সে।
একটা নিষ্পাপ হাসি দিল শর্টি। কোন এমন জন্তু আছে যে মাড়িয়ে তোমার মুখের এমন অবস্থা করতে পারে। ঘোড়ায় টেনে নিলে চামড়া উঠত আর আঁচড় পড়ত।
শাট আপ! খেকিয়ে উঠল বডি। ইটস নান অব ইওর বিজনেস!
খুবই সত্যি কথা, বিনীত ভাবে স্বীকার করল শর্টি। ইট শিওর ইজ নান অব মাই বিজনেস। কিন্তু কথা হচ্ছে কেউ কি বন্ধুসুলভ কৌতূহলও ব্যক্ত করতে পারবে না? তুমি মানুষকে কিউরিয়াস হওয়ার জন্যে দোষ দিতে পারো না। আমি টুম্বস্টোনের একজনকে চিনি গাধার লাথি খেয়ে লোকটার চেহারা ওইরকম হয়েছিল।
ওই চোখ, বলে চলল শর্টি, ওটার কাটাটা বেশ গভীর। ওটা খচ্চর বা গাধার লাথিতে হয়ে থাকতে পারে, এটা ঠিক। তোমার ঠোঁট আর মুখ যেভাবে ফুলে ফেঁপে উঠেছে–মনে হয় না ওটা
শাট আপ! বলডি খেপে উঠল। চুপ করো, নইলে আমিই তোমার মুখ বন্ধ করাচ্ছি!
ভয় পাওয়ার ভান করে দু’পা পিছিয়ে গেল শর্টি। এই! কি ব্যাপার? আমি গোল পাকাতে চাইনি, বলডি! কেবল জানতে চেয়েছিলাম কি ঘটেছে।
অনেক বকরবকর করেছ। যথেষ্ট হয়েছে! বারের শেষ-মাথা থেকে হঠাৎ ধমকে উঠল অ্যাডাম। আমরা এখানে ঝামেলা চাই না, শর্টি। আমি সেটা সহ্য করব না!
আহা, উত্তেজিত হয়ো না, অ্যাডাম। হাসি মুখে প্রতিবাদ করল শর্টি। আমি একটু হাসি-ঠাট্টা করছিলাম মাত্র! দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে জেনে থ্রী এইচের সবাইকে আমি বিদায় জানাতে এসেছি।
বারে যারা ছিল তাদের সবার কথা বন্ধ হয়ে গেল। কান খাড়া করে শুনছে সবাই। চলে যাচ্ছে? অবাক হয়েছে অ্যাডাম। লঙের দিকে চেয়ে সে প্রশ্ন করল, তল্পিতল্পা গুটাচ্ছ নাকি তোমরা?
না! রাগে ফেটে পড়ল হিউবার্ট। স্তম্ভিত হয়েছে সে। এমন একটা উদ্ভট আইডিয়া তুমি কোথায় পেলে, শর্টি?
কেন, আমি শুনলাম ড্যাশার এখন রকিঙ কে-র ফাইটিঙ সেগুলো। তাই ধরে নিলাম তোমরা এখন লেজ তুলে ছুটে পালাবে। আমি ভাবিনি, গম্ভীর ভাবে বলল সে, তোমরা ওর মোকাবিলা করার মত বোকামি করতে পারো!
ওহ, কি দুঃসাহস! গ্লাসটা সশব্দে ঠুকে বারের ওপর রাখল সে। ওর মত তুচ্ছ একজন গানফাইটারকে আমরা যথাড়াই কেয়ার করি, শার্ট! আমরা এখানে থাকতে এসেছি, এবং বিশ্বাস করো, আমরা থাকব।
সমর্থন করে মাথা কঁকাল শর্টি। স্লিম, বারটেণ্ডারকে বলল সে, থ্রী এইচের সবাইকে আমার নামে এক রাউণ্ড ড্রিঙ্ক দাও। একটা সোনার মুদ্রা বারের ওপর ফেলল মাইক। তারপর ওদের গ্লাস ভরা হলে নিজের গ্লাস শূন্য তুলে টোস্ট করল। থ্রী এইচ আউটফিটের সম্মানে! যারা সংগ্রামী মনোভাব নিয়ে লড়ে বুট পায়েই মারা পড়বে, তবু পিছাবে না!
রাগে লাল হয়ে শর্টির দিকে ফিরল লঙ। তুমি ভাবছ এটা খুব ফানি, মাইক? ওর চোখ থেকে যেন আগুন ঝরছে। আমার ইচ্ছে করছে তোমাকে ছিঁড়ে দেখি কোন যন্ত্র তোমাকে চালাচ্ছে!
ভুলেও চেষ্টা কোরো না, লঙ! শর্টি সাবধান করল। হঠাৎ ওর স্বরটা সিরিয়াস হলো। তোমার সেই মুরোদ নেই! তাছাড়া-হাসল সে-অ্যাডাম এটা পছন্দ করবে না। ওর মেঝে রক্তাক্ত হোক এটা সে মোটেও চাইবে না।
জনি হিউবার্ট বোকা নয়। সে জানে শর্টি আগে যেসব ইঙ্গিত দিয়েছে, সেটা শ্রোতারা মনে রাখবে। সে এটাও বোঝে যে জনমত উপেক্ষার জিনিস নয়।
আমরা ট্রাবল চাচ্ছি না, বলল সে। সাবধানে শব্দ-চয়ন করছে জনি। এটা ঠিক যে আমরা রকিঙ কে র্যাঞ্চের কিছু জমিতে আমাদের গরু চরাচ্ছি। কিন্তু বুজ থেকে অ্যান্টিলৌপ পর্যন্ত জমি যতক্ষণ খালি পড়ে রয়েছে, আমি এতে কোন অন্যায় দেখি না।
কথাটা যে মিথ্যা, এটা সে জানে। কিন্তু এটাও জানে যে শ্রোতাদের কেউ বুড়ো কেসি মরার পর ওদিকে যায়নি। তাই ওর বক্তব্যের প্রতিবাদ কেউ করতে আসবে না। রকিঙ কে র্যাঞ্চ ওর চাই। যদি শক্তি প্রয়োগ করতে হয় তাও সে করবে, কিন্তু সবটার দখল তার চাই।
ফ্রী রেঞ্জ, বলে চলল সে, এটা যতক্ষণ ওই জমিতে গরু চরানো হবে, ততক্ষণই কোন নির্দিষ্ট আউটফিটের দখলে থাকে।
বুথ ছেড়ে নিঃশব্দে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল রনি। সবার চোখ শর্টি আর হিউবার্টদের ওপর থাকায় কেউ ওর নেমে আসা খেয়াল করল না।
এবার সে মুখ খুলল।
তুমি ভুল ধারণা করেছ, শান্ত স্বরে বলল সে। রকিঙ কে কোন অধিকারই ছাড়েনি। আমাদের গরু এখনও ওই রেঞ্জে চরছে এবং ভবিষ্যতেও চরবে। আরও বলছি, তোমাকে তোমাদের গরু রুর ওপাশে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া হয়েছিল। এখন সবার সামনে সেই আদেশের পুনরাবৃত্তি করছি আমি,
মুহূর্তের জন্যে বারটা একেবারে নীরব হলো। জনি হিউবার্ট ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড রেগেছে। কিন্তু আর সবার থেকে সে ভাল বুঝছে কিভাবে ড্যাশার পুরো ব্যাপারটাই উল্টে তার বিপক্ষে নিয়ে গেছে। এখন তার কোন কাজে যদি দাঙ্গা হয়, তবে সবাই তাকেই দুষবে। তিক্ত মনে বারের দিকে চেয়ে রইল সে। একটু পরে মুখ তুলে চাইতেই অ্যাডামের চোখে চোখ পড়ল ওর। দেখল অ্যাডামের চোখ হোটেলের অফিসের দিকে সামান্য কাত হলো।
ওর সাথে অ্যাডামের মৌখিক আলাপের বেশি ঘনিষ্ঠতা ছিল না। লোকটাকে তার পছন্দ হয় না। এখন নতুন করে পছন্দ করারও কোন কারণ সে দেখছে না। তবু ওই ভঙ্গিতে এমন কিছু ছিল, যা ওকে আকৃষ্ট করল। দু’এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে ঘুরে দরজার দিকে রওনা হলো। রনির নীল চোখ দুটো ওকে অনুসরণ করল। ইশারাটা সেও লক্ষ করেছে। ওপাশে কি আছে সে জানে না। তবে এর মানে যে বাড়তি ঝামেলা, এটা নিশ্চিত।
শর্টি মাইক রনির পাশে সরে এল। মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত তোমার ইচ্ছাই টিকল, বলল সে। সকালে আমি কাজে রিপোর্ট করলে ঠিক আছে?
অবশ্যই। সেটা তুমিও জানো! জোর দিয়ে বলল রনি।
শর্টি বলল, একটা কথা, যতক্ষণ থ্রী এইচ আউটফিট, এবং আরও কিছু লোককে শেষ না করা হচ্ছে, ততক্ষণ এখানে শান্তি আসবে না।
ঠিকই বলেছ, আমি ভাবছি। চিন্তাযুক্ত ভাবে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে বলল, মনে হচ্ছে আমার কিছু রাইডিঙ করার সময় এসেছে।
কামরা ছেড়ে বেরোবার জন্যে ঘুরে রওনা হলো ড্যাশার। শর্টি ওর পিছু নিল। আমাকে সকালে র্যাঞ্চে না পেলে বেন কেসিকে বোলো আমি তোমাকে কাজে নিয়েছি। তারপর কাজ শুরু কোরো। তুমি তো জানো র্যাঞ্চে কোথায় কি করা দরকার।
তুমি কোথায় যাবে? জানতে চাইল মাইক।
একটু ইতস্তত করল রনি। ভাবছি কর্ন প্যাচের ওদিকে যাব। আমি নিজের চোখে দেখতে চাই ওখানে কি ঘটছে।
মাথা নাড়ল শর্টি। রনি, তুমি সাবধান থেকো। ওই লোকগুলো একেবারে বিষাক্ত। বিশেষ করে ওই বিল ওয়াটসন। ওকে এক ফোঁটা বিশ্বাস কোরো না। মাছি মারার মতই নির্বিকার ভাবে সে মানুষ মারতে পারে।
০৫. বিল ওয়াটসন কর্ন প্যাচের হর্তা-কর্তা-বিধাতা
বিল ওয়াটসন কর্ন প্যাচের হর্তা-কর্তা-বিধাতা। ওর আগের জীবন সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না। তবে মনে হয় আর সবকিছুর সাথে, নিষ্ঠুর খুন, দাঙ্গা, আর বিভিন্ন রকম ডাকাতিতে একটা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রীও সে করেছে।
খালি পায়ে সে ছয় ফুট চার ইঞ্চি উঁচু। ওজন, দু’শো ষাট পাউণ্ড। একটা পিস্তল সে কোমরে ঝুলায় বটে, কিন্তু ওর প্রধান অস্ত্র হচ্ছে নল কেটে ছোট করা একটা শটগান। বাটটা বদলে ওটাকে পিস্তল গ্রিপ করে নেয়া হয়েছে। ওর এই অস্ত্রটাই আশপাশের সবাইকে সন্ত্রস্ত করে রাখে। পিস্তলের গুলিতে দেহে একটা ফুটো হবে। জায়গা-মত না লাগলে প্রাণের আশঙ্কা নেই। কিন্তু কাছে থেকে শটগানের গুলিতে দেহ দু’টুকরো হয়ে যেতে পারে।
বছর পঞ্চাশেক আগে এক ভবঘুরে মাইনার এখানে এসে, একসারি কর্ন দেখতে পায় ওয়াটার হোলের চারপাশে। বোঝা যায় কেউ এই শস্য বুনে কিছুদিন ভোগও করেছে–কিন্তু তারপর হয়তো নিজের কাজে কোথাও চলে গেছে, অথবা কোন বিজন এলাকায় মারা পড়েছে। সুযোগ পেলে কর্ন (ভুট্টা) খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। কিন্তু কাটা না হলে দানাগুলো মাটিতে ছড়ায় এবং আরও কর্ন জন্মায়।
কর্নে আকৃষ্ট হয়ে মাইনার একটা ছাপরা তৈরি করে ওখানেই থেকে গেল। ঝর্নায় কিছু সোনাও পেল। কপাল-গুণে ওয়্যাগন ট্রেইন থেকে হারানো দুটো গরুও মিলল। অল্পদিনের মধ্যেই বেশ একটা সচ্ছল জীবন যাপন করা সম্ভব হলো। আরও মাইনার এল, কিছুদিন থাকল, তারপর তাদের ছাপরা ছেড়ে অন্যদিকে কোথাও চলে গেল। পরে হঠাৎ করেই কিছুদিনের জন্যে এলাকাটা জমজমাট হলো। একটা সেলুন আর চলনসই একটা হোটেলও তৈরি হলো। ছাপরার মলিকানা প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে বা প্রতিমাসে বদলাচ্ছে। কোন লেখা-পড়া নেই–যে থাকছে সেই মালিক, এই রকম ব্যবস্থা। তারপর বিল ওয়াটসন এল, এবং থাকল।
আদি মাইনার বাসিন্দা অদৃশ্য হলো। দুটো গরু এখন বেড়ে বারোটা হয়েছে। ওগুলোর মালিকানা বিলের নামে লিখে দেয়া হয়েছে। শটগানের হুমকি দেখিয়ে কর্ন প্যাচের পুরো মালিকানাই সে নিয়ে নিল। কেউ কোন বিবাদ বা প্রতিবাদ করলে বুটহিলে তাদের জন্যে স্থায়ী ব্যবস্থা হয়।
এর কিছুটা রনি জানে। কিন্তু আরও অনেককিছুই সে আগামীতে জানবে।
বিল যেখানে বসে সেখান থেকে প্রত্যেকটা ছাপরার ওপরই সে নজর রাখতে পারে। সে নিজেই নিজের সিকিউরিটি এজেন্ট। কোথায় কি চলছে সবই সে জানে। ওকে ফাঁকি দিয়ে কারও কিছু করার উপায় নেই।
লোকজন দুই রকম ধারায় কয়েকবার চেষ্টা করে দেখেছে। প্রথমটা চারবার চেষ্টা করা হয়েছে–ফলে চারটা কবর ওদের জন্যে খোড়া হয়েছে বুট হিলে। পরে আরও আরও দু’বার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু ফলাফল ভাল হয়নি। সাতটা বাড়তি কবর খুঁড়তে হয়েছে ওদের জন্যে। আরও চারজনকে ওখানে কবর দেয়া হয়েছে, যারা বিল ওয়াটসনের ক্ষমতায় সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। প্রত্যেকেই একক ভাবে বুঝতে গিয়েছিল–কিন্তু সবার একই পরিণতি ঘটেছে। বিল ওয়াটসন সীসা দিয়ে সবার সন্দেহের অবসান ঘটায়।
সেলুনে জনাবারো লোক অলসভাবে খুবই অল্প পয়সায় পোকার খেলছে। বিল ওয়াটসন ঝিমাচ্ছে বারে। মাঝেমাঝে জাগছে। একবার জেগে সে খেয়াল করল একজন আরোহী সাদা স্ট্যালিয়নে চড়ে এগিয়ে আসছে। আরোহীর মাথায় একটা কালো হ্যাট, কালো প্যান্ট উঁচু বুটের ভিতরে গোজা। পরনে কালো গেঞ্জি। দু’পাশে দুটো পিস্তল, ফিতে দিয়ে ঊরুর সাথে বাধা।
রাইফেলের খাপে উইনচেষ্টার দেখে বিভ্রান্ত হলো বিল ওয়াটসন। ওখানে যদি ৫০ শাপর্স থাকত, তাহলে ওকে রনি ড্যাশার বলেই সন্দেহ করত সে।
বিল ওয়াটসন মানুষকে জিনিসের সাথে বিচার করে চিনতে অভ্যস্ত। ড্যাশার যে শার্পস ভালবাসে সেটা প্রতি কাউক্যাম্প আর ক্যাটল ড্রাইভের সবারই জানা আছে। হাড়ের হাতলওয়ালা কোল্ট দেখেই বিল বুঝল লোকটা ওগুলোর ব্যবহার জানে। এই লোকটা কর্ন প্যাচে এসেছে, যে জায়গা আউটলদের জন্যে নিরাপদ, আর আইনের অফিসারদের জন্যে নিশ্চিত মৃত্যু। সুতরাং এই লোকটা নিশ্চয় আউটল। তবু, বিল ওয়াটসন সতর্ক রইল।
দরজা ঠেলে রনি লম্বা কামরাটায় ঢুকল। লোকগুলো মুখ তুলে তাকাল, তারপর যে যা করছিল সেদিকে মন দিল। ওয়াটসনই সব সামলাবে। সবসময়েই সে তা করেছে। ওদের মাথা ঘামিয়ে কোন লাভ নেই।
পানি, প্রস্তাব রাখল রনি। হাত বাড়িয়ে বারের পিছন থেকে একটা গ্লাস নিয়ে পানি ভরে ড্যাশারের দিকে ঠেলে দিল বিল। পানিটা চেখে দেখে পুরোটা শেষ করে ফেলল। ভাল, বলল সে।
ঝর্নার পানি, গর্বের সাথে বলল বিল। কোন ক্ষার নেই।
যারা কম কথার মানুষ, বিল ওয়াটসন তাদের পছন্দ করে। ঠাণ্ডা নীল চোখ ওকে যাচাই করে দেখছে। অস্বস্তি বোধ করছে ওয়াটসন। এটা ওকে কিছুটা বিচলিত করে তুলল, কারণ নিজের ওপর তার এতটা আস্থা আছে, যে কোন কিছুতেই অস্বস্তি বোধ করে না।
পোকার খেলোয়াড়দের দিকে তাকাল ড্যাশার। ড্র পোকার খেলোয়াড় কেউ আছে?
বিলের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কয়েকজন। আমি নিজেও মাঝেমধ্যে খেলি।
খেলাটা আমার পছন্দ, স্বীকার করল রনি। তবে একটু ফাস্ট গেমই আমি ভালবাসি।
টুলটা একটু এগিয়ে আনল বিল। আমি একটা নতুন প্যাকেট খুলব। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল সে। ঘোড়াটাকে ওখান থেকে সরিয়ে নেয়া ভাল। বাইরে খুব গরম।
ঘুরে, সেলুন থেকে বেরিয়ে গেল ড্যাশার। ওয়াটসন চেয়ে আছে। ওর মনে হচ্ছে ওই লোকটাকে তার চেনা উচিত। দারুণ বিরক্তিতে মাথা নাড়ল সে। পরে মনে পড়বে। ঘোড়াটাকে হটিয়ে না নিয়ে, রনিকে ওর পিঠে চেপে বসতে দেখে হাসল। রাইডার, সন্দেহ নেই।
আস্তাবলটা লম্বা, প্রশস্ত, আর ভিতরটা বেশ ঠাণ্ডা। ঘোড়াটাকে একটা স্টলে নিয়ে, পিঠ থেকে জিন নামিয়ে খড় দিয়ে ওর গা ডলে দিল। তারপর ওকে কিছু চানা খেতে দিয়ে, দ্রুতপায়ে এগিয়ে আস্তাবলের সবগুলো ঘোড়া চেক করে দেখল। স্টেজ ডাকাতিতে দেখা ঘোড়াটা এখানে নেই। হয়তো কর্ন প্যাচে আরও আস্তাবল আছে, অথবা পাহাড়ে কোন গুপ্ত জায়গা আছে যেখানে ঘোড়া রাখা সম্ভব। ফিরে চলল সে। রোদে-পোড়া রাস্তা পার হয়ে সেলুনে গিয়ে ঢুকল।
বিল মুখ তুলে তাকাল। তুমি না খেলতে চেয়েছিলে? খেলবে?
নিশ্চয়। প্রথম রাউণ্ড ব্লাই?
আমিও তাই খেলি। টুল থেকে উঠে বার ঘুরে একটা খালি টেবিলে গিয়ে বসল সে। চেয়ারটা বিশাল, বোঝাই যায়, ওর নিজের আরামের জন্যে বিশেষ ভাবে তৈরি। একটু ঘুরে অন্যান্য লোকজনের দিকে ফিরল। তোমাদের কেউ যোগ দিতে চাও?
কঠিন চোখ আর কালো চুলওয়ালা একটা লোক মুখ তুলে চাইল। তোমার সাথে খেলায় আমি নেই! তুমি যেমন ফাস্ট খেলো তাতে আমার রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে আসে!
শব্দ করে হাসল ওয়াটসন। ওই লোক খুব সাবধানী খেলোয়াড়।
সরু চেহারার একটা লোক, অস্থির, বিরক্তিভরা মুখ, এগিয়ে এল। নামটা ট্রয়। আমি খেলব।
আরও দুজন, একজন মোটাসোটা কাউবয়, হ্যানকি, হাতের নখগুলো ময়লা আর ভাঙা, কঠিন সতর্ক চোখ, এবং লম্বা, পাকা চুলওয়ালা লোক, কালো চোখ আর মসৃণ হাত। রাইণ্ড ওপনার? পাকা চুলের লোকটা হাসল। ওটা ক্ষতিকর হতে পারে। রক্তরাঙা ট্রেইল
বিল বুড়ো আঙুল ঝাঁকিয়ে লোকটাকে দেখাল। নাম ড্রেনান, তোমার?
রেড রিভার রেগান। হাসল ড্যাশার।
সবাই কেটে হাই কার্ড বাটবে? সবার দিকে তাকাল সে। কিন্তু সম্মতির জন্যে নয়, কে কোথায় বসেছে মনে গেঁথে নেয়াই উদ্দেশ্য। রেড রিভার রেগানের কাছে নোটের একটা মোটা বাণ্ডিল দেখা যাচ্ছে। বিল আজ ওকেই টার্গেট করবে। হাবা লোক আজকাল কমই পাওয়া যায়।
রনি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। সেলুনকীপারের পটু হাতে তাস শাফল করা সে লক্ষই করছে না। তাসের প্যাকেটটা রনির দিকে বাড়িয়ে দিল বিল। কেটে আট তুলল সে। ড্রেনান ছয় তুলল। হ্যানকিনস আর ট্রয় দুজনেই দশ তুলল, আর বিল তুলল সাহেব।
আর একবার তাস ফেঁটে ট্রয়ের সামনে রাখল। কাটা হলে বিল বাটল। দ্রুত এগিয়ে চলল খেলা। কয়েকটা ছোট পট (বা কিটি) জিতল রনি। ড্রেনান আর বিল জিতছে। ট্রয় আর হ্যানকিনস দু’জনেই হারছে। ট্রয় ভাল তাস পাচ্ছে না বলে গজর-গজর করছে। রনির পোকারের দক্ষতা, টেক্স ইউয়াল্টের ট্রেইনিঙের ফল। অসাধারণ পোকার খেলোয়াড় র্টেক্স। সে যা জানে না তা কেউ জানে না। বিল ভালই, তবে টেক্সের তুলনায় কিছুই না। রনি সাবধানে খেলে চলল, একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। হঠাৎ সুযোগটা এল।
ড্রেনান আর হ্যানকিনস দুজনেই বসে গেছে। ট্রয়, বিল, আর রনি খেলায় রয়েছে। বিল রুমাল দিয়ে ঘাম মুছে নিজের তাস দেখল। ওয়াটসন অলস ভাবে চোখ তুলে ট্রয়ের দিকে তাকাল। একই সাথে ওর মুঠো করা বাম হাতের বুড়ো আঙুল উপরে উঠল।
রনির চোখের কোনে ইশারাটা ধরা পড়ল। মনে মনে হাসল সে।
তাহলে এই ব্যাপার? ওরা রেইজ করতেই থাকবে? ঠিক আছে, ওদের সাথে সেও থাকবে এবার। নিজের ফুল হাউসের দিকে আর একবার তাকাল সে-তিনটে কুইন আর দুটো ছয়। তিনটে নীল চিপ মাঝখানে রেখে বিল বলল, তিরিশ রেইজ করলাম।
হ্যানকিনস ট্রয়ের দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে রনির দিকে তাকাল। ঠোঁট চাটল ট্রয়। তোমার তিরিশ এবং আরও দশ।
একবার মাঝখানে চিপসের স্তৃপটা দেখল রনি, তারপর চারটে নীল চাকতি কিটিতে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, আছি।
বিলের কাছ থেকে ট্রয়কে দেয়া গোপন সঙ্কেত রনির তীক্ষ্ণ চোখকে ফাঁকি দিতে পারল না। চারটে রাজা, শান্ত স্বরে বলল বিল। তারপর তাসগুলোকে একত্র করে টেবিলের ওপর চিত করে রাখল–কেবল উপরের তাসটা দেখা যাচ্ছে।
ট্রয় তাসগুলো ছড়াবার জন্যে দ্রুত ডান হাত বাড়াল, কিন্তু রনির বাম হাত তার আগেই বিলের তাসের ওপর পৌঁছে গেছে। চট করে তাসগুলো ছড়াল সে। মাত্র চারটে তাস দেখা যাচ্ছে এবং কেবল তিনটে কিঙ।
ট্রয়ের মুখটা কুৎসিত হয়ে উঠল, এবং বিলের চোখ কঠিন হলো। রনি কেবল হাসল। তোমার একটা তাস নিশ্চয় হাত ফসকে নিচে পড়ে গেছে, বিল। এখানে আমি কেবল তিনটে সাহেব দেখতে পাচ্ছি।
গলা লম্বা করে টেবিলের তলাটা দেখল ওয়াটসন, তারপর নিচু হয়ে একটা তাস তুলে আনল। ওটা একটা তিন। ওর মুখ লাল হলো। ভুল, বলল সে, আমি নিশ্চিত ভেবেছিলাম আমার চারটে কিঙ আছে।
কাঁধ উঁচাল রনি। ভুলে যাও-ওকিছু না। ভুল আমাদের সবারই হয়। দেখা যাচ্ছে নিরীহ স্বরে সে বলল, আমার ফুল হাউসই পট জিতেছে।
ট্রয় তার হাত সরিয়ে নিয়েছে। চিপসগুলো টেবিলের মাঝখান থেকে শান্তভাবে নিজের দিকে টেনে নিল ড্যাশার। চতুর্থ সাহেবটা ট্রয়ের হাতে ছিল। ছড়াবার সময়ে ওটাও সে বাকিগুলোর সাথে মিশিয়ে দিত। একটা পুরানো চালাকি।
এবার রেড রিভার রেগানের ডীল। অপটু হাতে তাস জড়ো করে নিজের দিকে নিয়ে এল সে। ডিসকার্ড করা তাসের ভিতর দুটো টেক্কা ছিল। কৌশলে ওগুলোকে নিচে নিয়ে এল। ফেঁটার সময়ে আরও একটা টেক্কা ওর চোখে পড়ল। দুই শাফলের পরে ওটাও নিচে চলে গেল। টেক্কা তিনুটে হাতের তালুতে লুকিয়ে রেখে বিলকে বাকি তাস কাটতে দিল। কাটার পর টেক্কাগুলো আবার নিচেই স্থান পেল। শান্ত ভাবে পাঁচ হাত বাটল। বটম ডীল করে নিচে থেকে দুটো টেক্কা সে নিজে রাখল।
ড্রেনান নিজের তাস দেখে ওগুলো ছুঁড়ে একপাশে ফেলে দিল। হ্যানকিনস পাঁচ ডলার বাজি ধরল। ট্রয় ওটাকে বাড়িয়ে দশ করল। এবার দেখব এটা তোমার কেমন পছন্দ হয়, রেড! ওই দশের সাথে আরও চল্লিশ।
রনি নিজের তাসের দিকে চেয়ে একটু ইতস্তত করে পঞ্চাশের ওপর আরও বিশ বাড়াল। হ্যানকিনস নিজের তাস ভঁজ করে রেখে দিল। ট্রয় আরও বাড়াল, বিল বাড়াল আবার। আরও এক রাউণ্ড স্টেক বাড়ানো চলল।
ড্র এর সময় বিল নিল দুই তাস এবং ট্রয় আর রনি দু’জনেই তিনটে করে তাস নিল। নিজে যে তিনটে নিল তার মধ্যে নিচের বাকি টেক্কাটাও ছিল।
ট্রয় দুটো নীল কাউন্টার দিয়ে শুরু করল। বিল দুটোর সাথে আরও তিনটে যোগ করল। রনি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ওদের দিকে চেয়ে হাসছে। ওর কঠিন নীল চোখ দুটোও চোখের গভীরের বরফ ভেদ করে হাসছে। ড্রেনান হঠাৎ পা সরিয়ে বিলের দিকে তাকাল। কিন্তু বিশাল লোকটা রেডের দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে আছে। হ্যানকিনস চুপ করে চেয়ারের হাতলে হাত রেখে বসে আছে। রনিকে দেরি করতে দেখে নার্ভাস ভাবে দেহ মোচড়াচ্ছে ট্রয়, আর সেইসঙ্গে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে রেড রিভারের দিকে চেয়ে আছে।
হ্যানকিনসের গানগুলো চেয়ারের হাতলের নিচে, ঝট করে বের করা অসম্ভব খেয়াল করেছে ড্যাশার। ড্রেনানের কাছে দৃশ্যত কোন গান দেখা যাচ্ছে না। ঝামেলা এলে সে পক্ষ নেবে কি না সেটা বিবেচনার বিষয়। লড়াই বাধলে ট্রয়ই সবথেকে প্রথম অ্যাকশনে যাবে। আর, বিল হচ্ছে সবথেকে শক্ত লোক।
এসো আমরা পট লিমিটে খেলি। হাসিমুখে বলল রেড। উত্তেজনা থাকলে খেলায় মজা আসে না!
তিক্তভাবে গাল দিল ট্রয়-মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল ওয়াটসন। নিজের হাতটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চেয়ারটাকে একটু পিছিয়ে নিল। প্রয়োজন হলে রেডকে সে কাভার করতে পারবে।
কৌতূহলী চোখে ওপাশে বসা লোকটাকে বিল ওয়াটসন খুঁটিয়ে দেখছে। হতে পারে গত হাতের খেলায় ওদের চালাকিটা রেড রিভার আঁচ করেছে। তাই যদি হয় তবে তাসে চুরির ব্যাপারে কিছুটা জ্ঞান অন্তত তার আছে। তাস বিছানোয় ট্রয়কে হারানো, হয়তো একটা ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু সে নিঃসন্দেহ নয়, আর অনিশ্চয়তা তার পছন্দ নয়। অন্যের মধ্যেও না, আর নিজের মধ্যে হলে তো আরও খারাপ।
পট লিমিট, মন্তব্য করল সে, অনেক টাকার ব্যাপার হয়ে দাড়াতে পারে। তোমার কাছে তা আছে?
জবাবে পকেট থেকে নোটের একটা মোটা বাণ্ডিল বের করে সামনে রাখল। তুমি যতই বাজি ধরো আমি তা কাভার করতে পারব, বিল, বেপরোয়া ভাবে বলল সে। তুমি যত খুশি উঁচুতে উঠতে পারো।
একটা কাউহ্যাণ্ডের রোজগারের তুলনায় অনেক টাকা, মন্তব্য করল বিল।
আমি ভালই কামাই। বিশদ ভাবে হাসল রনি।
এই রেড রিভার রেগানই তাস বেঁটেছে। কিন্তু যেভাবে সে তাস গুছিয়ে শাফল করেছে তাতে মনে হয় খেলাটা সে নতুন শিখেছে। আর লোকটা যদি গ্যাম্বলার হয়–জীবনে অনেক পেশাদার জুয়াড়ি সে দেখেছে-রেডকে তেমন মনে হয় না।
না, বিল বলল, পট লিমিটের প্রয়োজন নেই। পটে যা আছে তার ওপর আমি আরও পাঁচশো ডলার বাজি ধরছি। তোমার চেয়ে বড় তাস আমার আছে।
‘শশা, বলল রনি, এখনও হাসছে। নিজের তাসগুলো উল্টে টেবিলের ওপর ছড়িয়ে দিল–চারটে টেক্কা। তিনটে নিচের থেকে আর একটা কপাল গুণে।
বিস্ফারিত হলো বিলের চোখ। চেয়ার ছেড়ে অর্ধেকটা উঠেছে, গলার শিরাগুলো ফুলে গেছে। পাজি শয়তান!
পিস্তল বের করার জন্যে হাত বাড়াল ট্রয়। লাফিয়ে পিছিয়ে গেল রনি। ওর চেয়ারটা উল্টে পড়ল। কোল্ট দুটো উঠে এসেছে ওর হাতে।
পিস্তলের বাটের ওপরই ট্রয়ের হাত জমে গেল। ওয়াটসন জায়গাতেই আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ড্যাশার হাসল। ঘটনাটা কি? তোমরাও কি চারটে টেক্কা নাকি? পিস্তল দিয়ে ইশারা করল রনি। পিছিয়ে যাও!
বাম হাতের পিস্তলটা খাপে ভরে বিলের তাসগুলো উল্টে দিল। তারপর হাসল। তোমার টেক্কাগুলো নতুন ডেক থেকে এসেছে। সমান সমান ডেক ব্যবহার করা উচিত ছিল তোমার। খেলা তাস আর নতুন তাসের তফাত সহজেই ধরা যায়। শান্তভাবে টাকাগুলো পকেটে ভরতে শুরু করল সে। সরি, খেলাটা এভাবে নষ্ট হয়ে গেল, কিন্তু তোমরা রা খুলতে শুরু করলে। আমিও জবাব দিলাম। নড় করে নিজের তাসগুলোর দিকে ইঙ্গিত করল সে। চারটে বুলেট। এর বেশি ব্যবহার করতে আমাকে বাধ্য কোরো না।
রাগে ফুঁসছে ট্রয়, বিল ওয়াটসন নিজেকে সম্পূর্ণ সংযত রেখেছে, কেবল ওর চোখে রাগের আভাস। হ্যানকিনস পিস্তল ড্র করতে গিয়ে, ওই অবস্থান থেকে সেটা মারাত্মক হবে বুঝে জায়গাতেই বসে আছে। কেবল ড্রিনানের কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি, ব্যাপারটাকে যেন উপভোগই করছে সে।
খেলাটা উপভোগ করলাম, নিচু স্বরে বলল রনি। তোমরা চুচাপ বসে একটু বিশ্রাম নাও, আমি বিদায় নিচ্ছি।
এক মিনিট! বিল নিজের চেয়ারে আয়েশ করে বসেছে। যাবে কেন? আমার ধারণা তুমি নিজেরটা নিজেই সামলাবার ক্ষমতা রাখো, তাছাড়া তোমার অভিজ্ঞতাও প্রচুর। পিস্তলের ড্র দেখেই বুঝেছি ওগুলোর ব্যবহারও তুমি ভালই জানো। পিস্তল এত ফাস্ট ড্র করতে আমি আর কাউকে দেখিনি–একজন ছাড়া। কাজ করবে?
রনি পকেটের টাকার দিকে ইঙ্গিত করল। এত থাকার পরেও? তোমার মাথা খারাপ হয়েছে?
ওটা চিকেন ফীড। এখানে আশপাশে প্রচুর আছে।
বস-ট্রয় প্রতিবাদ জানাল। শাট আপ! বিরক্ত হয় ধমক দিল বিল। তোমার মত একজন শক্ত মানুষকে আমি অনেক কাজে লাগাতে পারব।
রেড রিভার রেগান কাঁধ উঁচাল। বিজনেসের আলাপে আমি সব সময়েই আগ্রহী।
তাহলে ওখানে একটা বাঙ্ক বেছে নাও। নো হার্ড ফিলিঙস। সকাল পর্যন্ত থাকো। সকালে কথা হবে।
নিশ্চয়। ঠাণ্ডা মাথায় পিস্তলটা খাপে ভরল ড্যাশার। ট্রয়ের চোখ দুটো জ্বলছে। তোমাকে আমি হত্যা করব! বলল সে। তুমি আমার সামনে দাঁড়াতেই পারবে না! রক্তরাঙা ট্রেইল
শান্ত স্বরে রনি বলল, মরতে চাইলে যেকোন সময়ে ড্র করতে পারো।
ট্রয়ের হাতের আঙুল পিস্তলের ব্যাটের কাছে কঁপছে। এক ঝটকায় পিস্তল বের করার পূর্বাভাস। এমন লোক আগেও দেখেছে রনি। এরা খুনের নেশায় এমনই বিভোর যে আর কিছুই তাদের এই ভাবটা মুছে দিতে পারে না।
ট্রয়! গালি দিয়ে ধমক দিল ওয়াটসন। বোকার মত কাজ কোরো! এসব বন্ধ করো!
রোষের সাথে থুতু ফেলে কামরা ছেড়ে বেরিয়ে গেল সে। ওর যাওয়া চেয়ে দেখল উ্যাশার, তারপর কাঁধ উঁচাল। কিন্তু ওর মুখ চিন্তামগ্ন।
রনি বুঝতে পারছে, সে বা তার টাকা এখানে সকাল পর্যন্ত কিছুতেই নিরাপদ থাকতে পারে না। কিন্তু ঝামেলা ছাড়াই এখান থেকে সে বেরিয়ে পড়তে চায়। বিল ওয়াটসনের দিকে ফিরল সে। বলল, ঠিক আছে, কাল সকালে দেখা হবে। আমার ঘোড়াটা কেমন আছে খবর নিয়ে আমি ঘুমোতে যাব।
বেরিয়ে এল সে। ছায়ায় দাঁড়িয়েছে। তাকিয়ে দেখল লিভারি আস্তাবলের দরজার সামনে কিছু নড়ল। কিন্তু ও ট্রয় নয়। রাস্তা পার হলো রনি। একজন বিশাল লোক ওকে পেরিয়ে গেল। লোকটাকে খুব পরিচিত মনে হলো ওর। লোকটা যে ওর দিকে ফিরে তাকিয়েছে এটা খেয়াল করল না সে। দ্রুত আস্তাবলে গিয়ে টপারের ওপর জিন চাপিয়ে, মাথার সাজ পরিয়ে ওকে তৈরি করল।
ঘোড়াটাকে হটিয়ে নিয়ে আস্তাবলের দরজায় এসে দাঁড়াল রনি। বিশাল লোকটা সেলুনে ঢোকার আগে সিঁড়ির ওপর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করল। বুঝতে পারছে না ওর পরিচয় ফাঁস হয়েছে কি না। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল সে।
হাওডি, বিল বলল সে। হ্যাটটা পিছন দিকে ঠেলে দিল। ও এখানে কি করছিল? বিল ওয়াটসনকে প্রশ্ন করল সে।
কেন, তুমি ওকে চেনো? হেনরির দিকে কঠিন দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ওয়াটসন।
চিনি? ফেটে পড়ল হেনরি। অবশ্যই চিনি! ও রকিঙ কে-এর নতুন ফোরম্যান। রনি ড্যাশার।
কি! প্রথমে ওয়াটসনের মুখটা বিবর্ণ হলো, তারপর প্রচণ্ড রাগে লাল হলো। কি বললে? রনি ড্যাশার?
একটা গালি দিয়ে নিজের অস্ত্র তুলে নিল বিল। ওর পিছনে আরও দু’জন লোক বেরিয়ে এল। ওরা বাঙ্ক হাউসের দিকে ছুটল। কিন্তু ওখানে কেবল তার নিজের লোকজনই রয়েছে। দ্রুত আস্তাবলে পৌঁছল ওরা, সাদা ঘোড়াটা ওখানে নেই!
ওয়াটসন খেপার মত চিৎকার করছে, কিন্তু হেনরি তার সিগারেট ধরাল। উত্তেজিত হয়ে কোন লাভ নেই, বলল সে। সে চলে গেছে। আর ওকে যদি চেনো, তাহলে জানবে, এখন সারারাত ঘুরলেও ওকে খুঁজে পাবে না তুমি!
যখন হেনরি ওখানে ওয়াটসনের সাথে কথা বলছিল ততক্ষণে ঘোড়াটাকে ক্যানিয়ন ধরে হাঁটিয়ে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ল রনি। কিন্তু সে রকিঙ কে-এর পথ না ধরে, দক্ষিণে স্টেজ কোচ পথের দিকে এগোল। স্টেজ হোল্ড আপের জায়গাটা আরেকটু ভাল করে দেখার এটাই ভাল সময়। কর্ন প্যাচে যাওয়ায়, জুয়ায় জেতা ছাড়াও ওর আরও কিছু লাভ হয়েছে। সে জেনেছে ওখানকার কে কেমন।
বিল ওয়াটসন চতুর, সক্ষম, এবং ভয়ানক রকম বিপজ্জনক। ট্রয় সাইড ওয়াইণ্ডার সাপের মতই বিষাক্ত। ওকে কোন মতেই বিশ্বাস করা যায় না। হ্যানকিনস হচ্ছে ওয়াটসনের পর সবথেকে শক্ত লোক। আর ড্রেনান-ড্রেনান অনিশ্চিত মানুষ।
হিউবার্টরা চায় রকিঙ কে, কর্ন প্যাচের ওরা চায় গরু, আর স্টেজ ডাকাতরা নিয়েছে সোনা। এই তিনটের মধ্যে কোন যোগাযোগ আছে। বলে মনে হচ্ছে না।
অন্ধকার হয়ে এল, কিন্তু আকাশের একটা-দুটো তারা দেখে দিক চিনতে কোন অসুবিধে হচ্ছে না ওর। দক্ষিণে এগোলে একসময়ে স্টেজ ট্রেইলে সে নিশ্চয় পৌঁছবে। পোকার গ্যাপের কাছে একটা ছোট্ট গর্তে রাত কাটাবার জন্যে ক্যাম্প করল। আগুন জ্বেলে কিছু খাবার আর কফি তৈরি করে, খেয়ে, আগুন নিভিয়ে শুয়ে পড়ল সে।
সম্পূর্ণ নীরবতা হঠাৎ রনিকে জাগিয়ে দিল। এমনকি ঝিঝি পোকাগুলোও স্তব্ধ হয়ে গেছে। বাতাস বইছে না। ঝোঁপের ভিতর কোন জীবজন্তুর নড়াচড়ার আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছে না। ভয়ে পুরো এলাকাটাই যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। ডান হাতে পিস্তলের হাতলটা ধরে টপারের দিকে তাকাল সে। আবছা দেখা যাচ্ছে ওকে। ঘোড়াটা কান খাড়া করে দূরে কোন কিছুর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। আকাশের দিকে চেয়ে সে বুঝল রাত তিনটে হবে।
পিস্তল বের করে, হাতলটাকে আঁকড়ে ধরে গড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে এল। কিছুই নড়ছে না, রাত স্তব্ধ হয়ে গেছে যেন কোন ভয়ানক ঘটনার আশঙ্কায়। কোল্টটাকে খাপে ভরে বুট পরার কথা ভাবছে, এই সময়ে দূর থেকে একটা গুড়গুড় আওয়াজ এল। কেউ যেন মাইনে ডাইনামাইট ফাটাচ্ছে। শব্দটা কাছে, আরও কাছে আসছে।
রনির পায়ের তলায় মাটি কাঁপছে। তারপর ধাক্কা দিল। টপার নাক ঝাড়া দিয়ে একটু পিছিয়ে গেল। ওর ডান দিকে শব্দ তুলে একটা পাথর গড়িয়ে পড়ল। তারপর সব চুপ। অস্থির হয়ে উঠেছে টপার। কাছে গিয়ে ঘোড়াটাকে শান্ত করল রনি। আদর করে কাধ চাপড়ে বলল, ওটা একটা ভূমিকম্প, বাছা, ভয়ের কিছু নেই, ওটা শেষ হয়েছে। এখন দেখি আমরা আরও দু’ঘণ্টা ঘুমাতে পারি কি না।
দিনের আলো ফোঁটার আগেই উঠল রনি। চারপাশ ভাল করে একবার দেখে একটা ছোট্ট আগুন জ্বেলে নিল। জানে সে এখন প্রতিপক্ষের এলাকায় রয়েছে। স্টেজ ডাকাতের গোপন আস্তানা এখানে যেকোন জায়গায় হতে পারে। এখন থেকে ওকে খুব সাবধানে এগোতে হবে। জিনে চেপে রওনা হলো। যতদূর সম্ভব ওয়াশ বা নিচু জমি দিয়ে চলছে। রিজ বা পাহাড়ের চূড়া এড়িয়ে চলছে।
হঠাৎ থেমে দাঁড়াল সে। মাটিতে টাটকা ট্র্যাক দেখা যাচ্ছে। পরীক্ষা করে বুঝল, মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগের ছাপ। ওর মধ্যে হেঁটে সরু করা খুরের ঘোড়াটাও রয়েছে। ওটা স্টেজ ডাকাতির সময়ে ব্যবহার করা হয়েছিল। একেই বলে কপাল! ওটার সাথে বাকি তিনটে ট্রাকও সে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখল। কারণ ভবিষ্যতে হয়তো ওই বিশেষ ঘোড়াটা নাও থাকতে পারে।
হ্যাটের তলা দিয়ে পুরো এলাকাটা খুঁটিয়ে দেখল রনি। ওর অভ্যস্ত নীল চোখ দুটো মরুভূমি বা রেঞ্জে কোথায় কি দেখতে হবে জানে। এবং যেকোন অস্বাভাবিক কিছু সে মুহূর্তেই চিনতে পারে। দেখা শেষ হলে আবার ঘোড়ার পিঠে উঠল। কিন্তু সরাসরি ট্যাক অনুসরণ না করে মোটামুটি ওই দিকেই এগোল। পথে আরও একবার ওই ট্রেইল পার হলো সে।
ট্রেইলটা পাহাড়ের একটা সরু খাজে ঢুকেছে। ওই পথে না এগিয়ে রিজের ধার ধরে বাইরে দিয়ে আধ মাইল গিয়ে সে থামল। জুনিপার গাছের সাথে ঘোড়াটাকে বেঁধে রিজের ওপর উঠল। উপরে উঠে মাথা থেকে হ্যাটটা খুলে ওপাশে উঁকি দিল।
সরু পাথুরে তলায় একটা ক্ষীণ ট্রেইল দেখতে পেল। ওটা এঁকেবেঁকে এগিয়ে একটা সরু উপত্যকায় পৌঁছেচে। ওখানে পাথর, মাটি, আর কাঠ দিয়ে তৈরি কয়েকটা অস্থায়ী কেবিন দেখা যাচ্ছে। পোল দিয়ে আটকানো একটা করালে তিনটে ঘোড়া রয়েছে। ওর চোখের সামনেই একটা কেবিন থেকে একজন লোক বেরিয়ে, বালতি থেকে পানি ফেলে খালি বালতি নিয়ে পিছন দিকে পাথরের আড়ালে অদৃশ্য হলো। কিছুক্ষণ পরেই ওকে পানি ভরা বালতি নিয়ে কেবিনে ঢুকতে দেখা গেল। ট্রেইলটা কেবিন ছাড়িয়ে এঁকেবেঁকে আরও এগিয়ে গেছে।
ঘোড়ার পিঠে চড়ে পশ্চিমে এগোল রনি। কিছুদূর এগিয়ে যেখানে কেবিনগুলো দেখেছে সেটা ছাড়িয়ে আরও দূরে একটা জায়গায় এসে থামল।
রিজ পার হয়ে ট্রেইলে নামল সে। পিছন দিকে কয়েকটা ছাপরা ছাড়া আর কিছুই নেই। কিন্তু সামনে পাইন আর ফার গাছের ফাঁকে পাহাড়ের গায়ে একটা পাথরের তৈরি কেবিন দেখা যাচ্ছে। ওটা নিশ্চয় পুরানো ইণ্ডিয়ানদের তৈরি-সংস্কার করা হয়েছে। কাছেই একটা করাল, পঁচটা চমৎকার ঘোড়া রয়েছে ওখানে। ঝর্না বয়ে যাওয়ার শব্দ আসছে ওর কানে। আরও একটু এগিয়েই থমকে দাঁড়াল সে। করালে, যেটার নাকের পাশটা সাদা, সেই ঘোড়াটাও আছে-ওটাকে সে স্টেজ হোল্ড আপের সময়ে দেখেছে।
০৬. ডাক বেইলি পাগল হয়ে উঠেছে
ডাক বেইলি পাগল হয়ে উঠেছে। প্রায় পুরোপুরি পাগল। হোল্ড আপের তিন দিন আগে থেকে আজ পর্যন্ত সে এখানেই আবদ্ধ আছে। অথচ সঙ্গ ছাড়া সে টিকতে পারে না। কথা বলতে না পারলে ওর পেট ফেঁপে ওঠে।
ট্রেসার মফিট অবশ্য ওখানেই আছে, কিন্তু ওকে ভাল সঙ্গী কেউ বলবে না। বেশির ভাগ সময় সে ঘুমিয়েই কাটায়। নিজের শেয়ারের কাজটুকু করতে হচ্ছে বলে গজর-গজর করে, আর বাকি সময় একা বসে পেশেন্স খেলে। ডাক কথা বলতে পছন্দ করে বলেই লোকজন ওকে ওই নাম দিয়েছে। আরেকটা কারণ হচ্ছে ওর নাকটা লম্বা আর ঠোঁটগুলো হাঁসের মত।
আজ সকালে ওর মেজাজ খুব খারাপ। ট্রেসার কোনমতে চারটে খেয়েই আবার শুয়ে পড়েছে। এখন দিব্যি নাক ডাকছে ওর। লারামি আসছে না কেন? লারামি চমৎকারর সঙ্গী।ওর সাথে কথা বলে মজা পাওয়া যায়–সে ভাল ফাইটারও বটে। ফাইটার সম্পর্কে ডাক বেইলির কিছু নিজস্ব মতামত আছে, এবং ওর মতে লারামিই হচ্ছে দলের সবার থেকে টাফ। পিস্তলে ওর দারুণ হাত, রাইফেলও সে ভাল চালায়। একদিন লারামি বস্-এর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে; ডাক এই ব্যাপারে নিশ্চিত। কিভাবে জেমস হার্ট খুন হয়েছে শুনে লারামি মনে খুব কষ্ট পেয়েছে।
এটা মোটেও শোভন হয়নি, বেলকে একা পেয়ে মন্তব্য করেছিল সে। হার্ট ভালমানুষ ছিল এবং ভাল একটা ফাইট দিতে চেষ্টা করেছিল। ওভাবে একটা আহত লোককে হত্যা করা কোনমতেই ঠিক হয়নি।
বস্ তোমাকে ওকথা বলতে শুনলে বিপদ আছে, সাবধান করেছিল ডাক। তুমি তো জানো সে কেমন?
তা জানি, একমত হয়েছিল লারামি। ওর চোখের ভাব কঠিন।
মনে মনে ডাক বেইলি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল লারামির কথাই ঠিক। বস্-এর হৃদয় বলতে কিছু নেই। ঠাণ্ডা মাথায় নিষ্ঠুর ভাবে মানুষ খুন করতে তার মোটেও বাধে না। লারামি এখন এখানে থাকলে ভাল হত। সোনা যে এখন আর এখানে নেই এটা ওকে জানাতে চাইছে সে। হয়তো ওগুলো পাচার করার কোন উপায় বের করেছে বস্। যাহোক রাতের বেলা ওগুলো বাসা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
বিরক্ত হয়ে ট্রেসারের দিকে তাকাল সে। টাক-মাথা গানম্যান হাত পা ছড়িয়ে বাঙ্কে শুয়ে নিশ্চিন্তে নাক ডাকছে। সকালে দু’জনের মধ্যে চিৎকার করে এক দফা ঝগড়া হয়ে গেছে। ট্রেসার ওকে পছন্দ করে না, এবং ট্রেসার অলস। গত চার দিনে সে একবারও বিছানা ঠিক করেনি। ঘর পরিষ্কার করাতেও সে সাহায্য করেনি। ওকে দিয়ে কখনোই বিশেষ কাজ করানো যায় না।
বাইরে বেরিয়ে গুদামের দিকে যাওয়ার সময়ে একটা ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনতে পেল ডাক। বস্ বা লারামিকে দেখতে পাবে মনে করে তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াল সে। ওদের কেউ নয়। সাদা গেল্ডিঙের ওপর বসে আছে একজন অপরিচিত লোক। ঘোড়া থামিয়ে লোকটা হাসল।
নামটা ঠিকই মেলে। তুমি ডাক বেইলি?
হ্যাঁ। ডাকের হঠাৎ মনে পড়ল ওর গান-বেল্টটা বাঙ্ক-হাউসে চেয়ারের পিছনে ঝুলছে। তুমি কে?
আমার নাম রেড রিভার রেগান। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে আড়মোড়া ভাঙল রেড। সে বলেছিল, সুন্দর গুছানো একটা জায়গা এটা, এবং কথাটা সত্যি। এটা খুঁজে বের করতে আমার বেশ সময় লেগেছে।
ডাক বেইলি দুশ্চিন্তায় পড়ল। নতুন মানুষ আসার ব্যাপারে কোন কথাই হয়নি, অথচ লোকটা তার নাম জানে। এখানে আসার পথটাও চেনে দেখা যাচ্ছে। কোমরে পিস্তল ঝোলাবার কায়দা দেখে বোঝা যাচ্ছে সে ওগুলোর ব্যবহার জানে। তুমি এটা কিভাবে খুঁজে পেলে? প্রশ্ন করল সে।
বস্ আমাকে বলেছে। আবার চারপাশ দেখে নিয়ে আস্তাবলের কাছে কতগুলো গাছের ছায়ায় নিয়ে ঘোড়াটাকে বাধল। সে বলেছিল এখানে আরও একজন আছে। ট্রেসার কি যেন নাম।
ট্রেসার মফিট। ও ঘুমাচ্ছে। সবসময়েই ও কেবল ঘুমায়। ওর স্বরে প্রচণ্ড বিরক্তি প্রকাশ পেল।
রনি লোকটাকে ঠিকই যাচাই করতে পেরেছে। একটা হাসি চাপল সে। তুমি কি ঘোড়াগুলোকে খাওয়াতে যাচ্ছিলে?
হ্যাঁ। ওটা ট্রেসারের কাজ। কিন্তু ওর মত অলস লোক আমি সারা জীবনে আর দুটো দেখিনি।
ফর্ক আছে? আমি সাহায্য করছি। খড় কোথায় আছে দেখিয়ে দাও।
ডাকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। রনির আগেআগে আস্তাবলে ঢুকল সে। পিছন দিকে বড় একটা খড়ের গাদা রয়েছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই সব ক’টা ঘোড়াকে খড় আর কিছুটা করে কর্ন দেয়ার কাজ শেষ হলো।
ডাকের সন্দেহ পুরোপুরি যায়নি। কিন্তু রেডের জড়তাহীন সহজ সরল ব্যবহারে সে ধাঁধায় পড়েছে। বস্ না পাঠালে জায়গাটা রেড কিছুতেই খুঁজে বের করতে পারত না। এটাকে নিজের বাড়ি বলেও মনে করতে পারত না। কথা বলার লোক, আর কাজেও সাহায্য পেয়ে সে খুশি। তাই বেশি প্রশ্নের মধ্যে গেল না। বস্ পাঠায়নি এমন কোন লোক আজ পর্যন্ত এখানে আসেনি। তাছাড়া বস্ না বললে লোকটার ওদের নাম জানার কথা নয়। আজ সকালে উঁচু স্বরে ঝগড়া করার সময়ে যে নামগুলো রনি শুনতে পেয়েছে, এটা সে আঁচ করতে পারল না।
খেয়েছ? হঠাৎ প্রশ্ন করল ডাক। রান্না করা কিছু বাড়তি খাবার রয়েছে, যদি চাও খেতে পারো। কফিও আছে।
নিশ্চয়! রনি একটা লম্বা শ্বাস নিল। বুঝতে পারছে ঘরের ভিতর ঢুকলে হঠাৎ বস্লাকটা যেই হোক-এসে হাজির হলে সে পালাবার সুযোগ পাবে না। অন্য কেউ এসে পড়লেও বিপদ হতে পারে। সে হয়তো ডাক বেইলির চেয়ে চতুর হবে। যা জানার তা তাকে ঝটপট জেনে নিতে হবে। এখানে সে যতক্ষণ থাকবে, প্রতি মিনিটে ওর বিপদের সম্ভাবনা বাড়বে।
জায়গাটা সত্যিই দারুণ, তাই না? ডাক হাসিমুখে ওর দিকে চেয়ে বলল। বস্ গোপন আস্তানা একটা খুঁজে বের করেছে বটে! ভেবে অবাক হতে হয় এটার কথা সে জানল কিভাবে। তবে তার ভাবসাব দেখে মনে হয় এই জায়গার কথা সে বহু আগে থেকেই জানত! অনেক আগে থেকে।
হয়তো আমরাই এটা প্রথম ব্যবহার করছি না। যাহোক, একটা পাসিকে এখানে ঢোকার মুখের বারো ফুট দূর দিয়ে গিয়েও এটা মিস করতে দেখেছি।
এখানে খাবারের ভাল সাপ্লাই রাখা হয়, সাথে বাড়তি ঘোড়া, আর প্রচুর গুলি। একটা আর্মি দল এলেও এটা দখল করতে পারবে না।
দেখে মনে হয় না পারবে। কাপটা টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখল রনি। তবে এখানে অনেকদিন থাকাটা বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে। সরল ভাবেই মন্তব্য করল সে-যেন সকালে ওকে গজর-গজর করতে শোনেনি। সঙ্গী হিসেবে ওকে আদর্শ বলে মনে হয় না। ঘুমন্ত আউটলর দিকে সে ইঙ্গিত করল। আমি ফ্রেণ্ডলি লোক। কথা বলতে আর শুনতে পছন্দ করি।
ওর কথায় গলে গেল ডাক। নতুন লোকটা সত্যি আলাপী। ওর মত আরও কিছু লোককে দলে নেয়া উচিত। লারামি ওদের মধ্যে সবথেকে ভাল। কিন্তু লোকটা সবসময় এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায়–আস্তানায় খুব কমই থাকে। কেবল ডাককেই সর্বক্ষণ হাইড-আউটে আটকা পড়ে থাকতে হয়। ওর বেশি কথা বলাই যে এর কারণ, এটা সে আজও বোঝেনি। বস্ ওকে অনেক আগেই বিদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু লারামি ওকে পছন্দ করে। তাছাড়া লোকটা ঘোড়ার ভাল যত্ন নিতে পারে। পিস্তলবাজ না হলেও ওর সাহসের অভাব নেই।
তুমি কোথাকার লোক, রেগান? প্রশ্ন করে জবাবের অপেক্ষা না রেখেই সে আবার বলল, আমি মনট্যানা থেকে এসেছি। কিন্তু অনেকদিন দেশে ফেরা হয়নি। ওয়াইওমিঙের আউলহুটে (Owlhoot-আউটলদের একটা নিরাপদ আস্তানা) ছিলাম কিছুদিন। তারপর নেব্রাসকার ওগালালায় গরু চুরি শুরু করি। একটা শহর বটে! কখনও গেছ ওখানে?
ওয়ালালায় তার গত যাত্রায় কি ঘটেছিল মনে পড়তেই সে হাসল।ওর সাথে ডাগ মারফি আর ডেড শট ওয়াইলসও ছিল। স্নান করতে নেমে ওরা সাতার কাটছিল। এই সময়ে তিনজন আউটল ওদের নাগাল পায়। বিনা অস্ত্রে অল্পের জন্যে ওরা বেঁচে যায়। এক সময়ে অ্যাবিলিন আর ডজ সিটি যা ছিল, ওই সময়ে ওগালালাও ছিল ওই রকম।
হ্যাঁ, গেছি। টেক্সাস থেকে গরুর একটা দলকে তাড়িয়ে নিয়ে গেছিলাম।
ওটা আমি দু’বার করেছি। একবার কোমাঞ্চির একটা দলের সাথে যুদ্ধও করতে হয়েছে। বিশ্বাস করো, ওই ট্রেইলটায় অনেক ঝামেলা। আমার বাবা ছিল টেনেসির লোক। কিন্তু আমি যখন ছোট, তখন সে মিসৌরিতে যায়। বন্ড নবের পাশেই আমরা সেট করি–ওদের নাম
তুমি শুনেছ?
রনির মাথা আঁকিয়ে সায় দেয়ায় সে আবার বলে চলল, ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম। পশ্চিমে মোষ শিকারে গেলাম। লারামির সাথে আমার পরিচয় হয় টাসকোসায়। একই সাথে আমরা পশ্চিমে গেলাম। এখানে-সেখানে কিছু গরু আর ঘোড়া তুলে নিলাম। কিন্তু জেমস ব্রাদার্সের চিন্তা মাথায় ঘুরঘুর করছে-তুমি তো জানো, ট্রেন ডাকাতি-এইসব। ওতে পয়সা ভালই রোজগার হয়।
ওটা চেষ্টা করে দেখিনি, রনি সত্যি কথাই বলল। এখানেও তো ভাল রোজগার হওয়ার কথা। ভাগে কেমন পড়ে?
ডাকের চেহারা কিছুটা উত্তেজিত হলো। ভাগ? কোন ভাগই হয়নি। সব সোনা বস্ নিজেই নিয়ে গেছে! সবই সোনার বার, সহজে পাচার করা অসম্ভব। তবে মনে হয় এগুলো ঝাড়ার একটা উপায় সে বের করেছে।
ইতস্তত করছে রনি। সে বুঝতে পারছে না আর কত প্রশ্ন ডাক বিনা সন্দেহে সহ্য করবে। শেষে সাবধানে এগোনোর সিদ্ধান্তই নিল। হয়তো এমন একটা ব্যবস্থা হতে পারে-যে জানে এটা চুরি করা সোনা, সেও তিরিশ বা চল্লিশ পারসেন্ট কমে পেলে কিনতে রাজি হতে পারে।
জানি। বসও একই কথা বলেছিল। কিন্তু মনে হচ্ছে সে নতুন একটা লাইন খুঁজে পেয়েছে। মনে হয় শীঘ্রি আমরা কিছু টাকা পাব।
একটা স্টেজ কাজের ঘটনা ইদানীং শুনলাম। দু’জন লোক মারা পড়েছে।
হ্যাঁ। টোপ গিলল না ডাক। সরে গিয়ে অন্য কথায় এল। ওর সন্দেহ না জাগিয়ে ওই কথায় ফিরে যাওয়ার আর সুযোগ রইল না। রনি চুপ করে বসে ওর কথা শুনছে, মাঝেমাঝে দু’একটা মন্তব্যও করছে।
একজন ভাল শ্রোতা পেয়ে উৎসাহের সাথে সে কথা বলে চলল।
ট্রেইল ড্রাইভ, গরু চুরি, কঠিন মার্শাল আর শেরিফ–নানান বিষয়ে সে অবিরাম কথা বলে চলেছে। গুপ্ত আস্তানা, অজানা ট্রেইল, যদিও এর বেশির ভাগই সে চেনে, তবু কিছু আছে, যার সম্পর্কে সে কিছুই জানে না। কিন্তু ডাকের ধারণা সে সবই চেনে–আপন মনে কথা বলে চলল সে। রনি অপেক্ষা করছে, কোনমতে সেভেন পাইনসের স্টেজ হোন্ড আপের দিকে ওর কথার মোড় ঘোরাতে চাইছে।
লারামির প্রতি ডাকের এমন প্রচন্ড টান, এটা বারবার ঘুরে ফিরে ওর কথায় ফুটে উঠছে। তাই ওই ব্যাপারেই কথা বলতে উৎসাহিত করল ওকে। লারামি কি শেষ কাজটায় সাহায্য করেছিল?
নিশ্চয়। আমাদের সবথেকে ভাল লোক ওই একটাই আছে। কিন্তু ও ওই খুনের কথা জেনে খুব দুঃখ পেয়েছে।
সায়মন? কিন্তু যা শুনেছি, ওকে ওর সুযোগ দেয়া হয়েছিল।
না, সায়মন না। হার্ট।
কিন্তু সায়মনকে ডেকে হত্যা করায় বুকের পাটা দরকার। এই কথায় রনির দিকে অবাক দৃষ্টিতে চাইল ডাক। পুরো বুঝতে পারছে না সে। সায়মন এখানে কি করছিল? প্রশ্ন করল রনি।
জানি না, কিন্তু ওকে দেখেই কেন যেন খেপে উঠল বস। ডাবল ক্রসের ব্যাপারে কি যেন বলল, তারপর ওকে ডেকে একপাশে নিয়ে গেল। গুলি করে মারার উদ্দেশ্যে!
সায়মনের মত মানুষকে এভাবে ডেকে নিয়ে হত্যা করা, এটা একটু বেখাপ্পা না? লোকটা নাম করা গানম্যান ছিল। কিন্তু মনে হয় ওকেও সুযোগ দেয়া হয়েছিল।
তা ঠিক, মনে হয় এর পিছনে বসের বিশেষ কোন উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু সে এতই ভাল যে ওর চিন্তার কোন কারণ ছিল না।
খুব ফাস্ট
আমার বিশ্বাস, হার্ডিনের থেকেও ফাস্ট। ক্লে অ্যালিসন, ব্যাট মাস্টারসন, ওরা কেউ ওর সামনে দাঁড়াতেই পারবে না। এবং খেপলে, ওর মত নিষ্ঠুর আর কেউ হতে পারে না। হাই তুলল ডাক। লারামির এতক্ষণে এসে পৌঁছবার কথা, বলল সে, ও এসে পৌঁছলেই বাচি। আমার সিগারেটের তামাক প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
ডাক বেইলি আরেকটা সিগারেট তৈরি করার ফাঁকে ট্রেসার নড়েচড়ে জেগে ওঠার জোগাড় করল। ওর সম্পর্কে যা শুনেছে, তাতে মনে হয় না ওই নোক ওকে ডাকের মত সহজে মেনে নেবে। এই এলাকায় ঢুকে সে যা জেনেছে, তাতে মনে হয় ট্রেসারও ওই হোল্ড আপে জড়িত ছিল।
সে যা শুনেছে তাতে বসের সঠিক পরিচয় না পেলেও কিছু লোকের পরিচয় সে পেয়েছে। কিন্তু ওই বসকে ওর চাই-যে ঠাণ্ডা মাথায় হার্টকে ওভাবে হত্যা করেছে। রনির এখানকার কাজ শেষ হয়েছে; এখন যত জলদি বেরোনো যায় ততই ভাল। কিন্তু হঠাৎ ঘোড়ার পিঠে চড়ে এখান থেকে চলে গেলে, ডাকের কাছে সেটা অদ্ভুত ঠেকবে। পিস্তলের ব্যবহার না করে এখান থেকে বেরোতে পারলেই সবথেকে ভাল হয়। অবশ্য পরিচয় ফাস না করে যদি এখানে থাকা সম্ভব হত, তাহলে বস–যেই হোক তার দেখা পাওয়া সম্ভব হত। হার্টের হত্যাকারীকে সে চায়।
আমার ঘোড়াটাকে একটু পানি খাওয়ানো দরকার, বলে উঠে বেরিয়ে এল সে। পিছনে চেয়ার ঠেলে সরাবার আওয়াজে বুঝল ডাক চেয়ার ছেড়ে উঠে ওকে লক্ষ করে দেখছে। নির্বিকার ভাবে সে খোলা জায়গা দিয়ে এগিয়ে ঘোড়াটার পাশে হাজির হলো। ওকে দেখে ঘোড়াটা খুশির একটা হ্রেসা ধ্বনি করল। সে যদি পিস্তল ব্যবহার না করে এখান থেকে বেরোতে পারে, সেটাই সবচেয়ে ভাল হবে। ঘোড়াটাকে পানি খাওয়াবার জন্যে নিয়ে গেল সে। লক্ষ করল, পিছন থেকে ডাক ওর ওপর নজর রেখেছে। ঘোড়াটা নাক ডুবিয়ে পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানি খেলো। রনি পাশেই একটা কাঠের গুঁড়ির ওপর বসল। কেবিনের দরজা থেকে ওকে দেখা যাচ্ছে না। হ্যাটটা খুলে পোস্টের ওপর এমন ভাবে বসাল, যে আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে সেই ওখানে বসে আছে। হামাগুড়ি দিয়ে করাল পার হয়ে সোজা হয়ে দাড়াল। তারপর হালকা পায়ে কেবিনের পিছনে এসে দাঁড়াল।
ওর ধারণা ডাক এখন ট্রেসারকে জাগাবে। ওর ধারণা যে ঠিক তা একটু পরেই বোঝা গেল। একটা বিরক্ত স্বর খেকিয়ে উঠল। কি হয়েছে? আমাকে খামোকা কেন ওঠালে?
আমাদের এখানে একজন নতুন মানুষ কাজে এসেছে।
ট্রেসার যে চমকে বিছানায় উঠে বসেছে সেটা ওর খাটটা ককিয়ে উঠতে শুনেই বোঝা গেল। কি বললে?
একটা নতুন মানুষ। ঘণ্টা দেড়েক আগে এখানে এসেছে। ওর নাম রেড রিভার রেগান। চেনো?
মনে হয় না। কোথায় সে?
ঘোড়াকে পানি খাওয়াচ্ছে। লম্বায় আমার সমানই হবে, কিন্তু আমার চেয়ে একটু ভারি। বলল, বস্ ওকে পাঠিয়েছে। সোজা ঢুকে এসেছে–মনে হলো কোথায় আছে সে জানে। আমার নাম সে ঠিকই বলল, তোমারটাও।
নতুন মানুষ নেয়ার কোন কথাই হয়নি। আমাদের যথেষ্ট লোক আছে।
ওটা বসুকে বোলো। ক্ষুব্ধ হয়ে জবাব দিল ডাক। লোকটা সত্যিই ভাল। মনে হয় টেক্সাসের লোক।
বসের আরও লোক কিসের দরকার? এমনিতেই ভাগে টাকা কম পড়বে। লারামি, হেনরি, তুমি, আমি আর বস্-যথেষ্ট। এই লোকের এখানে নাক গলানো আমার পছন্দ হচ্ছে না। ওকে কঠিন লোক বলেই মনে হয়।
আমার গান-বেল্টটা কই? ওকে আমি দেখতে চাই। দ্রুত ছুটে ফিরে হ্যাটটা মাথায় পরে ঘোড়াটাকে আবার গাছের নিচে নিয়ে গেল রনি।
ট্রেসার দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে–ওর বিশাল দেহ দরজাটা প্রায় ভরে ফেলেছে। ওর পরনে ময়লা শার্ট আর তালি দেয়া জিন্স্। ওর বুট গোড়ালির দিকে অনেকটা ক্ষয়ে নিচু হয়ে এসেছে। ওর পিস্তলটা একটু নিচুতে ঊরুর সাথে ফিতে দিয়ে বাঁধা। দাড়ি কামায়নি, চুল উষ্কখুষ্ক, শক্ত লোকটার চোখে বিদ্বেষ। ধীর পায়ে সূর্যের আলোয় বেরিয়ে এসে সে চিৎকার করে বলল, অ্যাই, শোনো।
রনি ওকে উপেক্ষা করল। আরও কয়েক পা এগিয়ে এল সে। অ্যাই! আমি যখন কথা বলি, জবাব আশা করি!
টপারের লাগামটা ছেড়ে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল ড্যাশার। ওর নীল চোখ দুটো কঠিন হয়ে উঠেছে। কারও থেকে এমন ব্যবহার সে সহ্য করতে রাজি নয়। ট্রেসার যদি ঝামেলা চায় তবে সে উচিত জবাবই পাবে। আমার সাথে ভাল ভাবে কথা বললে আমি জবাব দিই। নইলে আমার ইচ্ছা হলে জবাব দেব।
খেপল ট্রেসার। কঠিন লোক, হ্যাঁহ? তোমাকে কে এখানে পাঠিয়েছে?
বস পাঠিয়েছে।
কে পাঠিয়েছে? কোন বস? বিপদের আশঙ্কায় রনির পেশীগুলো শক্ত হলো। আমি নাম বলব। মানা আছে।
আঘাতটা ঠিক জায়গাতেই পড়েছে বোঝা গেল, কারণ ইতস্তত করছে ট্রেসার। তারপর বলল, ওর চেহারার বর্ণনা দাও।
কোন বর্ণনা আমি দেব না! সরাসরি জবাব দিল রনি। আমি জানি
তুমি কে। ডাক কে তাও আমি জানি না, তবে আমাকে যে পরিচয় দেয়া হয়েছে তার সাথে ওর সবই মেলে। ওকে সহজেই চেনা যায়।
এই লোকটাকে যদি বস্ পাঠিয়ে থাকে, তবে ঝামেলা করতে চায়
ট্রেসার। ইতস্তত করছে সে। কিন্তু লোকটা যদি পাই হয়? ফিনলে হার্ট শহরে এসেছে, এটা সে জানে। ফিনলের কথা শুনে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শুর মুখোমুখি হতে চায় না। এই লোকটাই ফিনলে হতে পারে।
তোমার ভাবনার কিছু নেই! শক্ত স্বরে জবাব দিল ট্রেসার। আমি এখানকারই মানুষ! তুমিও কি তাই?
ঘোড়ার কাছে ফিরে গেল রনি। জ্বলন্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ট্রেসার।
মুহূর্তের জন্যে গুলি করতে ইচ্ছে হচ্ছিল ওর–কিন্তু মনটা যেন কেমন দুর্বল হয়ে এল–মনে হলো এই লোকের বিরুদ্ধে পিস্তলের খেলায় নামলে তাকে মরতে হবে। কিন্তু ভয় ওর ধাতে সয় না। ভয় কাটিয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠল সে। কঠিন লোক বলে ওর অহঙ্কার আছে। কেবল বসের কাছেই সে একটু নিচু হয়ে থাকে। এমনকি লারামিও ওকে ঘাটাতে চায় না। এড়িয়ে যায়। জানে নোকটা সহজেই খেপে ওঠে।
অযথা হত্যা লারামির নীতি-বিরুদ্ধ।
ঘোড়ার কাছে পৌঁছে ইতস্তত করছে রনি। বোকা নয় সে। জানে সময় দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। দলের লোকজন ফিরবে। ওদের কেউ হয়তো ওকে সেভেন পাইনসের শহরে দেখে থাকতে পারে। তাছাড়া ওরা সবাই আসবে সরাসরি বস্-এর কাছ থেকে। সুতরাং ওরা জানবে নতুন কাউকে নিয়োগ করা হয়নি।
ট্রেসার সন্দিগ্ধ ভাবে ওকে লক্ষ করছে। মনে মনে নিজেকে দুষছে রনি। এই লোকটা জেগে ওঠার আগেই তার সরে পড়া উচিত ছিল। ধীরে ঘোড়া নিয়ে আস্তাবলের দিকে সরতে শুরু করল। একটা সংঘর্ষ ছাড়া এখান থেকে বেরোনো যাবে না বুঝে মনে একটা জ্বালা বোধ করছে রনি। সাধারণত সহজে রাগে না সে। কিন্তু এখন ওর ভিতরটাও খেপে উঠছে।
দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে ট্রেসার। রনিকে সরাসরি কেবিনের দিকে আসতে দেখে দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়াল সে। ভিতরে ঢুকে রনি
কফি পটটা পরিষ্কার করে আগুনে চাপাল।
কফি আমি সব সময়েই পছন্দ করি, অনিশ্চিতভাবে মন্তব্য করল ডাক।
ট্রেসার কিছুই বলল না, দরজা ছেড়ে ভিতরে ঢুকে একটা চেয়ারে বসল সে। চেয়ারটা ঘুরিয়ে রনির মুখোমুখি করে নিল।
টপারের কথা ভাবছে রনি। পিঠে চড়লে ওই ঢাল বেয়ে উঠতে রক্তরাঙা ট্রেইল
পারবে না ও। কিন্তু অন্য কোন পথে গেলে প্রহরীর গুলি খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া ট্রেইল ধরে এগোনোও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। ওদিক থেকে কেউ এসে পড়তে পারে। তখন গোলাগুলি ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। হয় মারতে হবে, নইলে মরতে হবে।
তোমরা কেউ পোকার খেলো?
হ্যাঁ, খেলি। ড্র পোকার আমার খুব পছন্দ। ট্রেসারও খেলে।
তবে-ট্রেসার খোঁচা দেয়ার সুযোগটা ছাড়ল না–আমি কার সাথে খেলব, এতে আমার বাছ-বিচার আছে!
রনি নীরবে, ধীরে ঘুরে দাঁড়াল। কফি পটটা হাতে তুলে নিয়েছিল সে, ওটা এখন নামিয়ে রাখল। মনে হচ্ছে তুমি গায়ে-পড়ে ঝামেলা করতে চাই, বন্ধু? আমি কিন্তু ঝামেলা চাচ্ছি না। বস্ যখন আমাকে এই আউটফিটের কথা বলেছিল তখন ভাল লোকজনের কথাই বলেছিল। তোমার মত বিষাক্ত মানুষের কথা সে বলেনি। আমি যদি থাকি, তাহলে তোমাকে আমার নিশ্চয় মেরে ফেলতে হবে!
ট্রেসারের ঠোঁট চিকন হলো। আমাকে মারবে? তাচ্ছিল্যের সাথে বলল সে। তুমি নিশ্চয় নিজেকে একজন বড় গানম্যান মনে করো।
বোঝার একটাই উপায় আছে, বলল রনি। তুমি যে কোন সময়ে চেষ্টা করে দেখতে পারো। ঠাণ্ডা নীল চোখের লোকটা ট্রেসারকে পাল্টা হুমকি দিল। মরতে চাইলে কেউ তোমাকে ঠেকাবে না।
ট্রেসারের আঙুলগুলো ওর পিস্তলের বাটের ওপর ছটফট করছে। চোখ দুটো সচেতন। তবু রেড রিভার রেগানের নীল চোখের দিকে চেয়ে ওর ভিতরটা কেমন যেন কুঁকড়ে এল। একটা মাছি উড়ে গিয়ে ওর নাকের ওপর বসল। একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল ওর শিরদাঁড়া বেয়ে।
আমি কে তুমি জানো?
তাতে কিছু আসে যায় না। মরা মানুষের পরিচয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই।
কী, এত বড় কথা?
মুহূর্তে ঘটে গেল ঘটনা। খাপ থেকে পিস্তল বের করার আগেই দুটো গুলি বিধল ট্রেসারের বুকে। প্রায় একই জায়গায়, বুকের বাম দিকে–এক ইঞ্চি ব্যবধানে।
চিত হয়ে পড়ল সে, মৃত।
একবার বেইলির দিকে চাইল সে। লোকটা দ্রুত এগিয়ে সঙ্গীকে পরীক্ষা করে দেখল। সন্দেহ নেই সে মৃত। অথচ এদিককার সবথেকে নামজাদা গানম্যান ছিল সে। নবাগত লোকটা ওকে এভাবে সুযোগ দিয়ে…ভাবতে পারছে না ডাক। চোখের সামনে এভাবে ট্রেসার…অবশ্য ট্রেসারেরই দোষ, সেই আগে পিস্তল বের করার জন্যে হাত বাড়িয়েছিল। সবটাই সে নিজে দেখেছে। অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। ও পিস্তলের বাঁটে হাত দেয়ার আগে পিস্তল তোলেনি রেগান। তাই সে কিছুই বলল না। বলার উপায়ও নেই-কারণ সবটাই সে দেখেছে। লড়াই ট্রেসারই প্রথম শুরু করেছে। এটা ওরই দোষ।
রেড রিভার রেগান নীল চোখে ওদিকে চাইল। ওকে সুযোগ আমি দিয়েছিলাম। নিজের মৃত্যু সে নিজেই ডেকে এনেছে।
মাথা ঝাঁকাল ডাক। ও-ও সবসময়েই ছিল ঝগড়াটে। সবটাই আমি দেখেছি। তোমাকে কেউ দোষ দিতে পারবে না।
এবার যাবার একটা ভাল সুযোগ দেখে তা ছাড়ল না রনি। মনে হয়, বলল সে, এখন আমার বসের সাথে দেখা করে ওকে সব কথা জানানো দরকার। এটা সে পছন্দ করবে না।
মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল ডাক। হ্যাঁ। তোমার ওর সাথে দেখা করা দরকার। তবে সে খুব বিরক্ত হবে বলে মনে হয় না। তুমি আছ, ওর চেয়ে অনেক ভাল পিস্তলবাজ তুমি। অনেক ফাস্ট।
পিস্তলে দুটো গুলি ভরে নিল রনি, তারপর দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল। ঘোড়ায় চড়ে যেদিক দিয়ে এসেছে সেদিকেই রওনা হলো রনি।
ডাক বেরিয়ে ওকে উল্টো পথে যেতে দেখে খুব অবাক হলো। কিন্তু রনি সোজা পথে বেরোতে চায় না, কারও সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে–তাহলে ঝামেলা হবে। ঝামেলা নিজে ডেকে আনতে চায় না সে। ওটা যদি সেধে ওর কাছে আসে, সে তার ব্যবস্থা নিতে পারবে।
ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে ওকে হটিয়ে নিয়ে রিজ পার হলো সে। কারণ ওকে পিঠে নিয়ে ওই ঢালু রিজ পার হতে পারত না টুপার। ওপারে পৌঁছে ঘোড়ায় চেপে রওনা হলো রনি।
সেভেন পাইনস আজকে জম-জমাট। কারণ আজ সবাই বেতন পেয়েছে। রনিকে নিয়ে ক্লান্ত গেল্ডিঙটা সেভেন পাইনসে ঢুকল।
আস্তাবলে পৌঁছে ঘোড়াটাকে রাখল সে। আস্তাবলরক্ষীই ওটার যত্ন নেবে। সেলুনগুলো ভর্তি। সবাই আনন্দ করছে–পে ডে। পিয়ানো বাজছে। সেইসাথে বাইরে কিছু মাতালও ওই সুরে বেসুরো গলায় গান গাইছে। পিয়ানো আর চিৎকারের আওয়াজ শহরটাকে যেন মাতিয়ে রেখেছে। মাঝে মাঝে পিস্তলের আওয়াজও শোনা যাচ্ছে–কিন্তু সেটা কাউকে মারার জন্যে নয়–স্ফূর্তিতে। অ্যাডাম বারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠাণ্ডা সতর্ক চোখে সে সব খেয়াল করে দেখছে।
ওরা হৈচৈ করে বটে। কিন্তু ক্যাশ টাকা দিয়ে মদ কিনে খায়।
একটা চতুর কল্পনা এটা। একটা ভুয়ো ক্লেইমে কিছু সোনা ছড়িয়ে রেখো, এতে অন্য সোনাগুলো পাচার করা সহজ হবে। ওগুলো নিজের মাইন থেকে এসেছে বলে দাবি করা যাবে।
সোনা সোনাই। খনি থেকে একবার বেরিয়ে এলে, কোন খনি থেকে এল, এটা বোঝার কারও উপায় নেই।
একটা লোক দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। শান্ত ঠাণ্ডা চোখ। ওর পরনে মাইনারের পোশাক। কিন্তু দুটো গান ঝুলছে ওর দুপাশে। ভুরু কুঁচকাল অ্যাডাম। লোকটা নতুন তারপর সে চিনতে পারল।
লোকটা ফিনলে হার্ট।
জেমস অনেক কথাই বলেছে ওর ভাই ফিনলের সম্পর্কে। পিস্তলে জেমস-এর হাত ভাল ছিল, একথা সবাই জানে। কিন্তু সে সবসময়েই বড়াই করত যে তার ভাইয়ের হাত আরও ভাল। এই ছিপছিপে লোকটার দিকে এক নজর দেখলেই বোঝা যায় এই লোকের একটা লক্ষ্য আছে। সেটা থেকে ওকে কেউ নড়াতে পারবে না।
বারের মাথায় নিজের আসন পেরিয়ে ঘুরে এগিয়ে এল অ্যাডাম। সেভেন পাইনস-এ ওয়েলকাম! স্বাগত জানাল অ্যাডাম। স্ট্রেঞ্জার, তাই না?
না। স্বরটা নিচু আর ঠাণ্ডা।
সরি, সহজ স্বরে বলল অ্যাডাম। তোমাকে আঘাত দিতে চাইনি আমি। তোমাকে কোনভাবে সাহায্য করতে পারলে আমি খুশি হর।
চারপাশে একবার চেয়ে দেখল লোকটা। তারপর অ্যাডামের চোখে চোখ রাখল। রনি ড্যাশারকে কোথায় পাওয়া যাবে? প্রশ্ন করল ফিনলে।
জয় হয়েছে–একটা পুলক অনুভব করল অ্যাডাম। ড্যাশার? ভুরু উঁচাল সে। মানে যে লোকটা ডাকাতির পরে দেখা দিয়েছিল? ও তো রকিঙ কে-তে গানম্যানের কাজ নিয়েছে।
আজ রাতে সে কি শহরে এসেছে?
হয়তো। আমার সাথে ওর দেখা হয়নি। সাবধানে কথা বলছে। অ্যাডাম। আমার নাম অ্যাডাম। আমি এই সেলুনের মালিক।
লোকটার মুখের ভাবে কোন পরিবর্তন দেখা গেল না। আমার নাম হার্ট, তরুণ লোকটা বলল। আমার একটা ভাই এখানে থাকত।
জেমস। ওকে আমি ভালভাবেই চিনতাম। চমৎকার মানুষ!
দীর্ঘ এক মিনিট অ্যাডামের দিকে চেয়ে থাকল হার্ট। তোমার সম্পর্কে সে ওই কথা বলেনি।
অ্যাডাম ওর কথায় খুব ক্ষুব্ধ হলো। ফিনলের ব্যবহারে সে অত্যন্ত বিরক্ত বোধ করছে। হাজার হলেও সে এই শহরের মেয়র। এই লোকটা তাকে এভাবে অগ্রাহ্য করছে, এটা ওর সইছে না। জেমসের কাউকে তোয়াক্কা না করে চলাফেরা করা। এটাও ওর খুব অপছন্দ ছিল। ওর ভাইও ওর চেয়ে কিছু কম যায় না বরং একটু বেশিই। দুজন একই রকম।
খুব খারাপ কথা! ফেটে পড়ল অ্যাডাম। আমাকে অপছন্দ করার ওর কোন কারণ দেখি না। আর ও কে, যে আমার মত মানুষকে বিচার করবে? অ্যাডাম মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করে না। সে নিজেই সবার বড়। মেয়র।
ওহ, ওসব কথা ভুলে যাও। বিষয়টা যে কেমন বিচ্ছিরি আকার নিয়েছে, এটার সে প্রতিবাদ করল না। ওর একটাই প্রশ্ন-ড্যাশার কই?
জানি না। হয়তো শহরেই আছে। আসলে কি যে ঘটেছে সেটা কেউ জানে না। ড্যাশার আসার পরে আমরা কোন গুলির শব্দ শুনিনি।
তাহলে বলতে চাও, ড্যাশারই মেরেছে ওকে?
না, তা বলছি না, তবে ঘটনা যেন একটু কেমন। বলা যায় না, হয়তো রনিও জেমসকে মেরে থাকতে পারে।
ঠিক আছে, ওর সাথে কথা বলতে চাই আমি। অ্যাডাম বুঝতে পারছে এটাই জেমসের ভাই ফিনলে হার্ট। ও যে পিস্তলবাজিতে দক্ষ এটা সবাই জানে। ওদের মধ্যে একটা গান-ফাইট হোক এটাই সে চাইছে। আমি ওকে চাই। ও কি শহরে আছে?
হয়তো, জানি না আমি। জবাব দিল সে। আসলেই সে জানে না, ও শহরে আছে কিনা।
আমার ওর সাথে দেখা করা দরকার।
তোমাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না। অ্যাডামের স্বরটা সন্তুষ্টিতে একটু কঠিন শোনাল। আর, সায়মন, কোন গান-ফাইটারের হাতে মারা পড়েছে। ও নিজেও ভাল গানম্যান ছিল। কিন্তু যে ওকে
মেরেছে সে আরও ভাল। ওকে যথাযথ সুযোগ খুনী দিয়েছিল।
তাই? গ্লাসটা বারের ওপর রাখল হার্ট। আমি ভাবছি, শান্তস্বরে সে বলল, রনি ড্যাশারের সাথে আমার কিছু কথা হওয়া দরকার।
তোমাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না। অ্যাডামের গলার স্বর একটা বিকৃত আনন্দে ফ্যাসফ্যাসে শোনাল। ওই যে, দরজায় ওকে দেখা যাচ্ছে!
ফিনলে হার্ট ঘুরে ট্রেইলের সবথেকে নামকরা পিস্তলবাজের মুখোমুখি হলো। লোকটা ওয়াইল্ড বিল হিককের মতই নামকরা ফাইটার। বারে বসা লোকজনের মাথার উপর দিয়ে ওর দিকে তাকাল হার্ট। সতর্ক নীল চোখ, কঠিন চোয়াল, সুদর্শন লোকটা কালো চওড়া হ্যাটের তলা দিয়ে ওর দিকেই চেয়ে আছে। ঊরুর সাথে বাঁধা দুটো সাদা হাতলের পিস্তল ওর দু’পাশে ঝুলছে। লোকটা ওই সময়ের একজন ভয়ঙ্কর আর সম্মানিত মানুষ।
বার থেকে কিছুটা দরজার দিকে এগিয়ে পরিষ্কার গলায় সে বলল, ড্যাশার, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
০৭. লম্বা গড়নের যুবকটাকে দেখল রনি
কিছুক্ষণ লম্বা গড়নের যুবকটাকে দেখল রনি, তারপর মাথা ঝাঁকাল। নিশ্চয়! তুমি কি এখানেই কথা বলতে চাও, নাকি আর কোথাও যেতে চাও?
হার্ট এগিয়ে গেল স্থির দৃষ্টির নীল চোখের লোকটার দিকে। লোকটা ভয়ানক, কিন্তু উগ্র নয়। হার্ট বুঝল, ঝামেলা হলে রনি তা সামলাবে, কিন্তু গায়ে পড়ে লাগাতে যাবে না। যেকোনখানে, বলল হার্ট। শুনলাম তুমিই আমার ভাইয়ের সাথে শেষ কথা বলেছ।
ঠিকই শুনেছ। লোকটা কে তা বুঝতে পারছে রনি। কিন্তু রটনা সত্ত্বেও সে বুঝতে পারছে, ওর সাথে তার বিরোধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ও খুব খারাপ ভাবে আহত হয়েছিল, কিন্তু আমি যখন ওর জন্যে ডাক্তারের খোঁজে আসি তখন সে বেঁচেই ছিল। আমার অনুপস্থিতিতে কেউ ওকে গুলি করে হত্যা করেছে।
শহরে ওই ঘটনার অন্তত ছয়-সাত রকম বিভিন্ন বর্ণনা চালু আছে। একটার সাথে আরেকটার কোন মিল নেই। ড্যাশারকে অভিযুক্ত করার সব রকম চেষ্টাই চলছে। ওর মৃত ভাইয়ের সম্পর্কে পরিষ্কার বক্তব্য ব্যাপারটা সহজ করে দিল। এটা, ও বেঁচে না থাকলে, আমি বানিয়ে বলতে যাব না।
ওর মন্তব্যটার মধ্যে নির্ভেজাল সত্যের একটা গন্ধ রয়েছে। কয়েকজন মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল। কিন্তু অ্যাডাম, ঘটনা ওর মন মত এগোল না দেখে অস্থির বোধ করছে। ওরা দুজন একটা টেবিলে গিয়ে বসল। কথা বলছে কিন্তু সব শুনতে পাচ্ছে না অ্যাডাম। ড্যাশার আর হার্টের সাক্ষাতে সে যা ঘটবে আশা করেছিল তার কিছুই ঘটল না। এই সময়ে ডাক বেইলি বারে ঢুকল।
অ্যাডামই ওকে প্রথম খেয়াল করেছে–ওর ভুরু একটু কুঁচকাল। রনিও ওকে লক্ষ করল। এবং সাথেসাথেই সাবধান হলো।
আউটল লোকটা সোজা বারে গিয়ে একটা ড্রিঙ্কের অর্ডার দিল। ওর চোখ দুটো বারের চারপাশে একবার ঘুরে এল। কিন্তু কাউকে ইশারা দিল বলে মনে হলো না। সে রনিকে চিনতে পারলেও তার কোন চিহ্ন দেখা গেল না। হার্ট খেয়াল করেছে কিনা জানে না রনি।
আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বলিনি, আমি ওদের গোপন আস্তানাও খুঁজে বের করেছি। আমি ওদের ট্র্যাকও দেখেছি।
কোন লোকেশন না দিয়ে, গত দু’দিনের ঘটনা সে ফিনলেকে বলল। ওর কথা শুনে যেটুকু সন্দেহ ছিল ওর মনে, সেটাও দূর হয়ে গেল। হার্ট ওর সরাসরি বক্তব্য পছন্দ করেছে। কঠিন লোক সে। ওর ভাইকে যে মেরেছে সে এ নয়। এই ব্যাপারে সে নিশ্চিত।
সকাল হওয়ার আগেই সেভেন পাইনসের লিভারি আস্তাবলের খড়ের বিছানা ছেড়ে রকিঙ কে-এর দিকে রওনা হলো রনি। টপার সকালের ঠাণ্ডা হাওয়ায় দ্রুত ছুটল। নাস্তা খাওয়ার সময় মতই র্যাঞ্চে পৌঁছে গেল সে। দেখল শর্টি মাইক ওর আগেই র্যাঞ্চে পৌঁছে গেছে। করালে কাজ করছে সে। শর্টি আড়চোখে ওর দিকে চাইল। তুমি যখন বলেছিলে এখানে অনেক কাজ আছে-ঠাট্টা করোনি, বুঝতে পারছি। অ্যান্টিলৌপের পুবে অনেক গরু ক্যানিয়নের ভিতরে আছে।
চোখ দুটো খোলা রেখো, পরামর্শ দিল রনি। তুমি হ্যারি আর কিডের সাথে কাজ করবে। কোন ঝামেলা শুরু করতে যেয়ো না। কিন্তু কারও দুর্ব্যবহারও সহ্য করতে বলছি না। থ্রী এইচের কোন গরু দেখলে ওদের পুব দিকে তাড়িয়ে দিও।
হেনরি বাঙ্ক-হাউস থেকে বেরিয়ে এল। ওর চাল-চলন একটু উদ্ধত, খেয়াল করল রনি। অল্পক্ষণ ওকে লক্ষ করে চোখ ফিরিয়ে নিল সে। রজার কাজের মানুষ, কিন্তু হেনরির সাথে ওর মোটেই বনে না। রজারকে সে খেয়াল করেছে–কিন্তু হেনরির থেকে দূরে থাকলেই সে ভাল কাজ করে। রজার তুমি আজ টেরির সাথে কাজ করবে। গরুগুলোকে তাড়িয়ে ম্যাণ্ডালে স্প্রিংসের কাছে জড়ো কোরো। তোমরা যারা খড়ের গাদা নিয়ে কাজ করছ, তোমাদেরও ওই একই কাজ।
আর আমি? হেনরি জানতে চাইল।
তুমি আমার সাথে যাবে। আমরা রোউজ বাডের দিকে যাব।
ওর চেহারায় কিছু চকচক করে উঠল। কিন্তু আমি তো রজারের সাথেই কাজ করি। আমরা দুজনে চমৎকার আছি।
হ্যাঁ, কিন্তু আজকে তুমি আমার সাথে যাবে। আমরা রোউজ বাডের দিকে যাব। তুমি আর আমি একসাথেই যাব। রোউজ বাড, র্যাবিটহোল, আর শুগারলোফের কাছে মরুভূমিটাও একটু দেখে আসব।
কার্প ওকে সাবধান করেছে যে বোজ বাডের কাছেই কোথাও ওকে অ্যামবুশ করে হত্যা করার চেষ্টা করা হবে। এটা খুবই সম্ভব যে হেনরি নিজেই এর সাথে জড়িত আছে। কিন্তু লোকটা যদি তার সাথেই থাকে তবে তার পক্ষে হত্যাকারীদের গোপনে খবর দেয়াটা সম্ভব হবে না। সেই সাথে ওই বিশাল লোকটা সম্পর্কে, আর অচেনা এলাকা সম্পর্কেও তার জ্ঞান বাড়বে।
পুবের আকাশে রিজের মাথায় সূর্যটা মাত্র উঁকি দিয়েছে, এই সময়েই ওরা রওনা হয়ে গেল। হেনরিকে কিছুটা বিষণ্ণ দেখাচ্ছে-কোন কথাই বলছে না সে। ওর পাশাপাশি রোউজ বাড ক্যানিয়নের দিকে এগোচ্ছে রনি।
গরু চুরি, হঠাৎ বলে উঠল রনি, ওটা এই এলাকার জন্যে শেষ। এক মাসের মধ্যেই আমরা ওটার শেষ দেখে ছাড়ব। এই দলটা খুব অসাবধান হয়ে উঠছে। স্টেজ ডাকাতদের থেকেও ওরা খারাপ।
এখন পর্যন্ত ওদের কেউ কিছু করতে পারেনি, মন্তব্য করল হেনরি। ওর মুখের ভাবে কৌতুক।
এখনও পারেনি, এটা ঠিক, স্বীকার করল রনি। কিন্তু ওদের গোপন আস্তানা এখন আর ওদের কোন কাজে আসবে না।
কোন আস্তানা? অবাক হয়েছে হেনরি। আর ওটা কেন কাজে আসবে না?
গতকাল আমি ওখানে গেছিলাম। যেন কোন গুরুত্বই নেই এভাবে কথাটা বলল সে। ওখানে দু’জনের সাথে দেখা হলো। একজন ডাক বেইলি, অন্যজন ট্রেসার। লারামি ওখানে ছিল না।
হেনরি যে অবাক হয়েছে সেটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। তার মানে তুমি ওদের গোপন আস্তানা খুঁজে পেয়েছ?
মাথা ঝাঁকাল রনি। ইচ্ছে করে খুব সাধারণ ভাবেই কথাটা বলল সে। ওখানে ডাক আর ট্রেসার ছিল।
বেইলিকে চিনি না। কিন্তু ট্রেসারকে চিনি। খুব সাংঘাতিক লোক।
হা, কঠিন লোকই ছিল সে। স্বীকার করল ড্যাশার। খুব খারাপ লোক। কিন্তু সে এখন কবরে।
কি বললে? অবাক হয়ে প্রশ্ন করল সে। ট্রেজার মারা গেছে?
হ্যাঁ, সে নিজেকে যতটা ফাস্ট মনে করেছিল, তা সে ছিল না। তাই মারা পড়েছে।
এই ব্যাপারে কিছুই সে শোনেনি। কর্ন প্যাচের পোকার খেলার কথা সে শুনেছে। কিন্তু ট্রেসারের মত ফাস্ট গানকে হারানো–এটা একটা অচিন্তনীয় ঘটনা।
এদেশে ঢোকার পথে এদেশের সবথেকে ফাস্ট পিস্তলবাজকে ড্যাশার প্রায় ঠেকিয়ে দিয়েছিল। লঙ হিউবার্টও শক্ত মানুষ–কিন্তু এর সামনে দাঁড়াতে পারেনি। এই লোকই স্বেচ্ছায় কর্ন প্যাচের মত জায়গায় গিয়ে বেরিয়ে এসেছে। ওখান থেকে বেরিয়ে সে নিশ্চয় ডাকাতদের গোপন আস্তানায় গিয়েছিল। এবং ট্রেসারের মত লোককে হত্যা করে বেরিয়ে এসেছে।
একটু অস্বস্তিভরেই নিজের অবস্থাটা বিচার করে দেখল সে। বছরখানেক ধরে গরু চোরদের সাথে সহযোগিতা করে লাভের অংশ নিয়েছে হেনরি। কিন্তু আজ সত্যিই সে ভয় পেয়েছে। রনি কি ওর সম্পর্কে জানে? এত কিছু সে এই অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে জানল? এবং রোউজ বাডে যাবার সঙ্গী হিসেবে তাকেই কেন সে বেছে নিল? ও কি সবই জানে?
হয়তো ড্যাশার তাকে মারার প্লট সম্পর্কেও জানে। তাই ইচ্ছে। করেই ওকে সাথে নিয়ে রোউজ বাডের দিকে যাচ্ছে-হয়তো ওকেই কান ফাঁদে ফেলার মতলব আছে ওর। কাপুরুষ নয় হেনরি। কিন্তু তবু…কেন যেন ওর ভয় করছে। লোকটা কি ওকে কোন ফাঁদে ফেলার চেষ্টায় আছে? অজ্ঞ মানুষের সন্দেহ অনেক বিচিত্র দিকেই যায়। রনি কি, আর কতটা জানে, তা হেনরি আঁচ করতে পারছে না। এই লোকটা আসার পর থেকে যা ঘটেছে, আর ওর সম্পর্কে যা শুনেছে, তাতে সে ঘামতে শুরু করল।
তাছাড়া রোউজ বাডের দিকে যাওয়ায় সে নার্ভাস বোধ করছে। সে ওদের খবরটা না দিতে পারলে ফাঁদটা কার্যকর হবে না। কিন্তু পোকার হ্যারিস ওর ওপর প্রচণ্ড খেপেছে, কারণ ওর কাছে তার দারুণ হার হয়েছে। নিজেকে হেনরি প্রচণ্ড শক্ত লোক মনে করে। কিন্তু একে সে প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছে। ভীষণ ভয়। তার জীবন নাশেরও সম্ভাবনা রয়েছে। যে ট্রেসারের মত ফাস্ট লোককে যে শেষ করতে পারে সে অনেক কিছুই করতে পারে। ঘামছে সে।
এই লোকের সাথে রোউজ বাডে যেতেও ওর ভয় করছে। সন্দেহ নেই লোকটা ভয়ানক। ওর ভয় হচ্ছে কেউ হয়তো পাহাড়ের মাথা থেকে ওদের লক্ষ করছে। যে কোন সময়ে গোলাগুলি আরম্ভ হতে পারে। রনিকে মারতে গিয়ে যদি হেনরিও মরে, তাতে বিলের ঘুম নষ্ট হবে না।
বিশাল লোকটার শঙ্কা ক্রমাগত কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার কারণ আঁচ করতে রনির মোটেও অসুবিধা হচ্ছে না। ওর চোখ দুটো এখন অত্যন্ত সতর্ক হয়ে উঠেছে। মাটিতে কোন ট্র্যাকই দেখা যাচ্ছে না। তবে যে কোন গুপ্তঘাতক অবশ্যই চক্রাকারে ঘুরে সুবিধা মত জায়গায় লুকিয়ে অবস্থান নেবে।
জানো, হঠাৎ বলে উঠল ড্যাশার, কেউ যদি একটা মানুষকে অ্যামবুশ করে মারতে চায়, তবে সামনের ড্ৰটাই হবে উৎকৃষ্ট জায়গা।
চমকে উঠল হেনরি। ওর মুখটা ফেকাসে হয়ে গেছে। রনির চোখের দিকে সরাসরি তাকাতে পারছে না। কাঁধ উঁচাল সে। হতে পারে। কিন্তু এখানে কেউ কাউকে মারতে আসবে কেন?
খবর পেয়েছি আমি, এখানে কিছু লোক আছে যারা আমাদের মারতে চায়।
আমাদের? আবার নতুন করে চমকাল হেনরি।
হ্যাঁ, রাসলাররা রকিঙ কে-এর সব গরুই চায়। আমরা বিরোধিতা করাতেই পারছে না। ওরা তাই সব ফাইটিঙ হ্যাণ্ডকেই শেষ করতে চায়। তার মধ্যে তুমি আর আমিও পড়ি।
স্বভাবতই আমাকে ওরা চায়। আর ওরা ভাবছে তুমি এই এলাকা এত ভাল করে চেনো যে তুমি হয়তো আমাকে বলে দিতে পারো গরুগুলো কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু ইউনিয়নভিলের মাইনে যায়, কিছু যায় সেভেন পাইনসে। তবে একটা বিরাট অংশ অন্যখানে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার বিশ্বাস ওগুলো উত্তরে আর পশ্চিমে যায়।
কথাটা যে কতটা সত্যি এটা হেনরির চেয়ে বেশি আর কেউ জানে। সে নিজেই ওই ড্রাইভে কয়েকবার সাহায্য করেছে। কিন্তু ড্যাশার এটা কেমন করে বুঝল? সরাসরি প্রশ্নই করে বসল সে।
সহজ। এখানকার পুবে কি? ওয়াইওমিঙ আর ইউটাহ। ওদের কি গরুর কোন দরকার আছে? ওদের প্রচুর আছে। বাকি রইল কি? অরিগন, ক্যালিফোর্নিয়া, এবং হয়তো পশ্চিম মনট্যানার মাইন। পুবে অল্পই দাম পাওয়া যাবে। কিন্তু উত্তরে বা পশ্চিমে দেড় থেকে দুইগুণ দাম মিলবে।
কিন্তু গরু নেবে কোন পথে?
জেসি অ্যাপলগেটের নাম কখনও শুনেছ? কিংবা লাসেন? ওদের একটা জায়গা আছে উত্তর-পশ্চিমে। কয়েকটা খারাপ প্যাঁচও আছে, কিন্তু শুনেছি হাই রক ক্যানিয়নে প্রচুর ঘাস আর পানি আছে। রাসলাররা অনায়াসেই ওই পথে গরু পাচার করতে পারবে।
ক্যানিয়নের সরু গিরিপথটার দিকে চেয়ে একটা ময়লা রুমাল বের করে ভুরুর ঘাম মুছল হেনরি। ওরা যদি আজই অ্যামবুশ করার পরিকল্পনা নিয়ে থাকে, তবে সামনের গিরিসঙ্কটের মাথা থেকেই গুলি আসবে। ঘোড়ার পিঠে সে ওর ভিতরেই ঢুকতে যাচ্ছে। ড্যাশার ঠিক কথাই বলেছে বলে মনে হচ্ছে-এই এলাকা থেকে রাসলি সে বন্ধ করেই ছাড়বে। রকিঙ কে-এর এই সেগুলো যদি এত ভালভাবে সব কিছু আঁচ করতে পারে, তবে ঝুঁকি নেয়াটা তার কোন মতেই সঙ্গত হবে না।
ওর মুখের ভিতরটা শুকিয়ে গেছে। বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটছে হেনরি। অস্বস্তিভরে আড়চোখে একবার রনির দিকে তাকাল সে। কিন্তু ওস্তাদ পিস্তলবাজ লোকটা শান্তভাবেই সামনে এগিয়ে চলেছে। ওর জন্যে সামনে কি অপেক্ষা করছে, সেটা যদি আঁচ করেও থাকে, ওর চেহারা দেখে তা বোঝার উপায় নেই।
কয়েকবার গরুকে ঘাস খেতে দেখে, যেখানে গরু জড়ো করা হবে, সেদিকে তাড়িয়ে দিল ওরা। এবং তারপর গিরিসঙ্কটে মুখের কাছে পৌঁছে, হঠাৎ ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে একটা ক্ষীণ ট্রেইল ধরে সোজা উত্তর দিকে রওনা হলো রনি।
ওর এই কাজে হেনরি নিশ্চিন্ত হওয়ার চেয়ে দুশ্চিন্তাতেই পড়ল বেশি। সে নিজেও এই ট্রেইল সম্পর্কে কিছু জানে না, অথচ ড্যাশার কিভাবে এর অস্তিত্ব জানল? আসলে কয়েক মাইল দূর থেকেই একটা সবুজ এলাকা রনির চোখে পড়েছে। পানির এমন সুন্দর একটা উৎসে পৌঁছা’র একটা ট্রেইল থাকতেই হবে, এটা সে পুরানো অভিজ্ঞতা থেকে জানে।
আরও অনেক গরু ওদের চোখে পড়ল। ওরা দুজনে কঠিন পরিশ্রম করল। হেনরি রাসলার হলেও, অনেক রাসলারের মত সে ভাল কাউহ্যাণ্ডও বটে। দুই ঘণ্টার মধ্যেই ওরা দুশোর বেশি গরু ম্যাণ্ডালে ম্প্রিংসের দিকে পাঠাল।
এর মাঝেও রনি সতর্ক নজর রেখেছে কিন্তু আশপাশে কোন রাইডারের চিহ্ন সে দেখতে পেল না।
মনে হচ্ছে ওই ট্রেইলটা একজন লোকেরই তৈরি। ওর খোঁজেই রওনা হবে ড্যাশার। হেনরিকে গরু তাড়িয়ে নেয়ার কাজে রেখে, সে ট্রেইল ধরে এগোল।
ঘোড়ার পিঠে চলার সময়েই সে লক্ষ করেছে বেশিরভাগ গরুই রকিঙ কে র্যাঞ্চের। তবে থ্রী এইচ র্যাঞ্চেরও কিছু গরু এত ভিতরে চরছে। ওদের সাথে একটা বোঝাপড়া হওয়া দরকার। বুড়ো কেসি মারা যাওয়ার পর থেকেই কঠিন লোকের অভাবে রকিঙ কে র্যাঞ্চ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বুড়ো ছিল বাঘ। আর ছেলেটা হচ্ছে ভেড়া। কোন সাহস নেই। শক্ত নয় সে।
চলার পথে বারকার উত্তর-পশ্চিমের দিকে দেখছে রনি। ওখানেই একক রাইডারের ট্রেইলটা হারিয়ে গেছে। ওদিকে মরুভূমি। কিন্তু ওদিকেই কোথাও আছে হাই রক ক্যানিয়ন, যেখানে ভাল ঘাস আর পানি আছে। কয়েকটা ছোট লেকও আছে ওখানে। এটা পার হওয়া কঠিন কাজ নয়। যে জানে কোথায় পানি আছে, সে সহজেই পার হতে পারবে। কিন্তু যে জানে না, সে পানির থেকে দশ গজ দূরেও তৃষ্ণায় মারা যেতে পারে। কারণ ওগুলো পাহাড়ের ভাজে এমন সব জায়গায় আছে যে আগে থেকে না জানলে খুঁজে বের করা অসম্ভব।
এদিকে লোকের অভাবে রকিঙ কে-এর লোক নজর রাখতে পারে। এখান থেকে যে অল্পদিন আগেই গরু চুরি করা হয়েছে তার চিহ্ন সে সব জায়গাতেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।
ছোটছোট পাহাড় পার হয়ে চলেছে ও। সামনে ঘোড়ার গাড়িতে একটা লোককে যেতে দেখল। সাবধানে এগিয়ে নড় করল রনি।
হাওডি! খুশি মনেই লোকটা বলল। অনেক দিন হলো এদিকে কোন মানুষের দেখা পাইনি।
তুমি কোন দিকে যাচ্ছ?
ওই রকগুলোর দিকে। ওই পাহাড়ে অনেক সোনা আছে। কেবল খুঁজে বের করাটাই সমস্যা। ওর খোঁজেই আমি যাচ্ছি।
এখানে কতদিন আছ?
তিরিশ বছর। পাহাড়ের প্রতিটা ইঞ্চি আমি চিনি, কিন্তু কোন সোনা এখনও পাইনি।
নিশ্চয় এলাকাটা বুনো ছিল তখন। অনেক আউটল।
বুনো ছিল, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিছু খারাপ লোকও ছিল। পুবের দিকে দেখাল সে। আমি বুড়ো কেসিকে ওদিক দিয়ে রাসলারদের তাড়িয়ে নিয়ে মারতে দেখেছি।
তুমি দেখেছ? কিন্তু ড্যাকোটা জ্যাক তো খুব শক্ত মানুষ ছিল।
তুমি যদি নিজের চোখে দেখতে–দুটোই ছিল শক্ত দল। কিন্তু রাসলারের দলকে ওরা একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিল। শক্ত লোক ছিল বুড়ো কেসি। ড্যাকোটা জ্যাক মরেনি, প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছিল ভাস্কো গ্ৰেহাম আর তার দল নিয়ে। কিন্তু বুড়ো গুলি করে ঘোড়ার থেকে স্কোকে ফেলে দিল। সবই আমি নিজের চোখে দেখেছি। ভাস্কোর ঘোড়া গুলি খাওয়ায় সে পড়ে গেল। ড্যাকোটা জ্যাক ওর জন্যে ফিরে এল। গুলি করে ওকে ঘোড়ার পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে, ওর ঘোড়া নিয়েই পালাল ভাস্কো।
ড্যাকোটা জ্যাক ওকে সাহায্য করতে ফিরে আসছিল?
হা। এমন ঘটনা আমি আর দুটো দেখিনি। আমার বিশ্বাস সে বুঝেছিল এক ঘোড়ার পিঠে দু’জনে চাপলে বুড়ো কেসির ঘোড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে ওরা পারবে না। তাই এমন জঘন্য একটা কাজ করল।
এটা হজম করা কঠিন…সত্যিই খুব শক্ত। মন্তব্য করল রনি।
তা ঠিক। কিন্তু ওটা ছিল ভাস্কো। প্রায়ই ভাবি লোকটার পরে কি হলো। এই এলাকার প্রতিটা ইঞ্চি লোকটার মুখস্থ ছিল। পিস্তলেও ওর হাত ছিল খুব চালু। এবং এর ব্যবহারে সে মোটেও দ্বিধা করত না।
হ্যাঁ, ওর কথা আমি শুনেছি, মন্তব্য করল রনি। মনটানায় একজন শেরিফকেও সে হত্যা করেছে।
র্যাঞ্চে ফিরতে ওর বেশ রাত হলো। চীনা রাধুনী ওকে রান্নাঘরের দিকে আসতে দেখে বিরক্ত হয়ে তাকাল। সাপার, সে ঠাণ্ডা, অসন্তোষভরে
সে বলল। সময় মত কেন আসোনি?
ব্যস্ত, চায়না, হেসে জবাব দিল রনি। একটু কফি দিলেই চলবে। বাকিটা ভুলে যাও।
কিছু ভুলব না, জবাব দিল রাঁধুনী। তুমি কাজ করো, তোমাকে খেতে হবে।
দরজা খুলে গেল। চোখ তুলে তাকিয়ে লিসাকে দেখতে পেল রনি। ওহ, তুমি? মনে হলো নিরাশ হয়েছে মেয়েটা। শুনলাম তুমি বেশ ব্যস্ত ছিলে। ওর স্বরটা ঠাণ্ডা। ঝামেলা পাকানোটা তোমার স্বভাব।
কেউ-কেউ করে, স্বীকার করল রনি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি এর পক্ষপাতি নই।
একজুন লোক যে দাবি করে ঝামেলা অপছন্দ করে তার পক্ষে সর্বক্ষণ বিপদের মাঝখানে কাটানোটা মানায় না! ছ্যাঁৎ করে জ্বলে উঠল মেয়েটা। আমি জেনেছি কর্ন প্যাচে গিয়ে তুমি গোলমাল বাধিয়ে এসেছ?
মুহূর্তে সতর্ক হলো রনি। আমি আবার ওখানে কি করলাম? আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না।
একটা মানুষকে মেরেছ। ট্রেসারকে তুমি খুন করেছ!
পুরো এক মিনিট লিসার দিকে তাকিয়ে থাকল রনি। হেনরি ছাড়া আর কাউকে সে কথাটা জানায়নি। এবং লোকটা রাত করেই ফিরেছে। সুতরাং কথাটা লিসা ওর কাছ থেকে শোনেনি। তাছাড়া ঘটনাটা ঘটেছে ওদের গোপন আড্ডায়। কেবল বেইলি ছিল তার একমাত্র সাক্ষী। মেয়েটাকে একটু বাজিয়ে দেখতে চাইল সে।
তুমি এটা শুনেছ? কি জানো তুমি? এর থেকেই বোঝা যায় লোকজন যে বিষয়ে কিছুই জানে না সেই সম্পর্কেও কথা বলে।
এটা আমি নিশ্চিতভাবে জানি? প্রতিবাদ করল লিসা। তুমি ওর সাথে একটা ঝগড়া বাধিয়ে ওকে মেরেছ।
শহরের সবাই বুঝি এই কথাই বলছে?
আমি শহরে যাইনি। কিন্তু ওরা সবাই কথাটা অবশ্যই শুনবে। এবং ওরা সবাই বলবে আমরা একজন খুনীকে ভাড়া করেছি!
হতে পারে। নিজের কাপে আবার কফি ঢেলে নিল সে। কিন্তু আমি তো শুনলাম জেরি সমার্সকে তোমার ভাই কাজে নিক, এটাই তুমি চেয়েছিলে। সে কি খুনী নয়?
রাগে ওর মুখটা লাল হয়ে উঠল। সে তা নয়! প্রতিবাদ করল সে। মানুষকে গুলি করেছে সে, কিন্তু সে একজন ইতস্তত করছে লিসা। কিন্তু হঠাৎ বুঝতে পারল সে যা বলছে সেটা কতটা অবাস্তব। নিজের মনেই ওকে স্বীকার করতে হলো অনেক মানুষ হত্যা করেছে সমার্স। তার মধ্যে কিছু প্রায় বিনা কারণে। এটা নিয়ে ওকে অনেকবার দোষারোপও করেছে লিসা। কিন্তু ওর মুখের ওপরই হেসেছে জেরি।
যাহোক, বলল সে, যদি সে তা করেও সেটা প্রশ্রয়ের যোগ্য কোন কাজ হলো না। অযথা হত্যা আমি মোটেও দেখতে পারি না।
আমিও না, শান্ত স্বরে রনি বলল, কিন্তু তাই বলে ভাল লোকের অস্ত্র ছেড়ে দেয়ার কোন অর্থ হয় না, যখন অন্যেরা তা করছে না। শান্তির কথা দুই পক্ষ থেকেই আসতে হবে।
তোমার বাবা সুন্দর একটা র্যাঞ্চ গড়ে তুলেছিল। এখানে শান্তিও সে রক্ষা করেছে, মাঝেমাঝে কঠিন হাতে, কিন্তু সে তা রক্ষা করেছে। মানুষ শান্তিতে বাস করেছে।
তোমার ভাইয়ের অনুভূতিও তোমারই মত। সেও হত্যার বিরোধী, কিন্তু তাতে কি ঘটছে? আর সবাই কি সে ভাল বোলে তার সাহায্যে এগিয়ে আসছে? তার বদলে ওকে নরম পেয়ে র্যাঞ্চটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে। এখন তোমার ভাই আমাকে কাজে নিয়েছে, এক মাসের মধ্যেই যে এখানে আবার শান্তি ফিরে আসবে, তার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি।
আবার খাওয়ার দিকে মন দিল রনি। লিসা চিন্তামগ্ন ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। জেরির বদলে তার ভাই ড্যাশারকে কাজে নেয়ায় সে খাপ্পা হলেও এই নীল চোখের গানম্যানকে ওর পছন্দই হচ্ছে। নিশ্চয়তা নিয়ে লোকটার ওপর নির্ভর করা যায়।
তুমি জেরিকে পছন্দ করো না, তাই না? হঠাৎ প্রশ্ন করল সে।
ইতস্তত করল ড্যাশার। জানে ওই বিষয়ে লিসার সাথে আলাপ করা বিপজ্জনক ব্যাপার। লিসা, ধীরে আরম্ভ করল সে, ওকে আমি চিনি না। কিন্তু ওর সম্পর্কে যা শুনেছি তা আমার মনকে নাড়া দিতে পারেনি। হয়তো আমার ভুলও হয়ে থাকতে পারে। অনেকবারই আমি করেছি। তোমার নিজেরই অনেক বুদ্ধি আছে। তুমি তো ওকে চেনো। ও কেমন, আর তোমার বিচারে মানুষের কেমন হওয়া উচিত, সেটা তুমি নিজেই সভাবে বিচার করে দেখো।
উঠে দাঁড়াল লিসা। মনে হচ্ছে আমিই তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম।
দরজা দিয়ে বেরোবার সময়ে একটু ইতস্তত করল রনি। হ্যাঁ, ভাল কথা, সন্ধ্যায় তুমি হেনরিকে ফিরতে দেখেছ?
না তো? জবাব দিল লিসা, ওর সাথে গত দু’দিনে আমার একবারও দেখা হয়নি। ও কি কোথাও গেছে?
না, ঠিক মত ফিরল কিনা জানতে চাচ্ছিলাম। বাইরে বেরিয়ে সিঁড়ির ওপর একটা সিগারেট তৈরি করার জন্যে থামল সে। তাহলে ট্রেসার মফিটকে হত্যার কথা হেনরি মেয়েটাকে বলেনি। তাহলে কে ওকে খবরটা দিল। আর ঘটনা কর্ন প্যাচে ঘটেছে, এটাই বা কেন। বলেছে?
হেনরি জেগেই তার বাঙ্কে শুয়ে আছে–ভাবছে। আজকের দিনটা ওর ব্যস্ততা আর দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে কেটেছে। সন্দেহ আর চিন্তা ওর মাথায় ভিড় করে আছে।
ড্যাশার কতটা জানে? স্টেজ ডাকাতদের গোপন আস্তানাই বা সে কিভাবে চিনল? রাসলাররা অবশ্য অন্য দলটার সম্পর্কে জানে। কিন্তু ওরা কে বা কারা তা কেউ জানে না। জানলে, কেবল বিল ওয়াটসন জানতে পারে। হেনরি হঠাৎ টের পেল সে ভয় পেয়েছে–দারুণ ভয়। মৃত্যুকে সে আগে কখনও ভয় করেনি। গুলি খেয়ে মৃত্যু, স্ট্যামপিড, বা খ্যাপা ষাড় কিছুই সে কেয়ার করেনি। ওর কেবল একটাই ভয়, সেটা ফাঁসির দড়ি। সারা জীবন সে কাউহ্যাণ্ড হিসেবেই কাজ করেছে। ওর ভাল করেই জানা আছে রাসলিঙ করে ধরা পড়লে ফঁসি অনিবার্য। রনি ড্যাশার আসার পর থেকেই তার ভয়টা দ্বিগুন হয়েছে। হেনরির দেশ ছাড়ার স হয়েছে। কাউকে কিছু না জানিয়ে সে সরে পড়বে। হেনরি সিদ্ধান্ত নিল, সকালেই চুপিচুপি অরিগমের পথে রওনা হবে।
০৮. চলিত প্রথা অনুযায়ী
চলিত প্রথা অনুযায়ী বেন কেসি আর ড্যাশার গরু জড়ো করার ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটা পুরোপুরি একটা স্থানীয় ব্যাপার। রকিঙ কে-এর যেসব গরু-বাছুর ব্র্যাণ্ড করা হয়নি সেগুলোকে ব্র্যাণ্ড করা আর স্টকের সংখ্যা গুণে দেখাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। তবে ঘাস খেতেখেতে অন্য র্যাঞ্চের কিছু গরুও এই দলের সাথে যোগ দেয়াই স্বাভাবিক বলে, প্রতিবেশী র্যাঞ্চগুলোকেও ব্র্যাণ্ডিও দেখার জন্যে তোক পাঠাতে বলা হয়েছে। ওদের র্যাঙ্কের গরুগুলোকে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ দেয়ার কারণেই এই ব্যবস্থা।
গত সপ্তাহের পুরোটাই ওরা র্যাঞ্চের দূর সীমানা থেকে গরু তাড়িয়ে আনার কাজে ব্যস্ত ছিল। লোকবলের অভাবে, একেকবারে গরুর ছোটছোট দলকে সামলাচ্ছে ওরা। কাজের চাপে হেনরি আর সরে পড়ার সুযোগ পায়নি।
ড্যাশার আজ তার প্রিয় গেন্ডিঙ টপারের পিঠেই আরোহী হয়েছে। টেরি, হ্যারি, কিড লেকার, রজার, শটি মনটানা, হেনরি–সবাই কাজে ব্যস্ত। ভালই এগোচ্ছে কাজ।
চাক ওয়্যাগনের পাশ থেকে জনি হিউবার্ট বিরক্ত চোখে সব খেয়াল করছে। সে ঠিক বুঝতে পারছে না ওর কি করা উচিত। সিলভার হিউবার্টের মনে কোন সন্দেহ নেই। সে লড়তে চায়, এবং সেজন্যে সে তৈরি। লঙ হিউবার্ট কাজে সাহায্য করছে। খ্রী এইচের কিছু গরু পাওয়া গেছে, একটা জেএ কানেকটের এবং একটা বার এল ইউ র্যাঞ্চের।
রনি কঠিন পরিশ্রম করছে, নিজের অংশের পরেও আরও করছে। দিনের তাপমাত্রা বেড়ে উঠেছে। বেন কেসি চিন্তাযুক্ত ভাবে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে, পেনসিলটা চোখা করে নিয়ে, হিসাবের খাতার পাতা উল্টাল।
চাক ওয়্যাগন থেকে খাবার ঘণ্টা শুনে হ্যাট থেকে ধুলো ঝেড়ে রনি চিৎকার করল, সবাই চলো, খাবার তৈরি।
ঝট করে লাগাম টেনে পিছনের দুই পায়ের ওপর বে ঘোড়াটাকে ঘুরিয়ে নিয়ে হ্যারির সাথে পাল্লা দিয়ে চাক ওয়্যাগনের দিকে ছুটল কিড লেকার। ওদের পিছনেই টেরি। হেনরি এতক্ষণ আগুনের পাশে ব্র্যাণ্ডি করছিল। আগুনের তাপে ওর মুখটা লাল হয়ে উঠেছে। উঠে দাঁড়িয়ে রনির দিকে চেয়ে সে হাসল।
কাজ ভালই এগোচ্ছে, বলল হেনরি। কিন্তু অপেক্ষা করো, শুগারলোফের ল্যাণ্ডিনো গরুগুলোকে কাবু করা যে কি কঠিন তা বুঝবে।
খারাপ?
প্রত্যেকটাই প্রিকলি পেয়ার খায়। একেবারে বুনো। ওরা হাঁটুতে ভর দিয়ে ঝোঁপের ভিতর ঘুরে বেড়ায়! সত্যি! মাসখানেক আগে আমি একটাকে দেখেছি, ওর হাঁটুতে একটা লোমও নেই, আর ওর নাকমুখ পেয়ারের কাঁটায় বোঝাই!
বয়স্কগুলো অনেক স্মার্ট, রনি সায় দিল। কাটার খোঁচা না খেয়েই ওরা বেশিরভাগ প্রিলি পেয়ার খেতে পারে। টেক্সাসের বিগ বেণ্ডে আমি দেখেছি। মাসের পর মাস ওরা কোন ওয়াটার হোলের কাছে না গিয়েও থাকতে পারে। পেয়ারের পানিই ওদের জন্যে যথেষ্ট।
ওটা ল্যাসের কাজ, একমত হলো জনি হিউবার্ট। ওদের দল বেঁধে বের করা অসম্ভব। দড়ি দিয়ে একটা একটা করে টেনে বের করতে
রাতের বেলা দড়ি খুঁড়ে কখনও গরু ধরেছ? টেরি প্রশ্ন করল। ওটা একটা ভয়ঙ্কর কাজ। টেক্সাসে আমি তা করেছি। বুনো বিশাল মসি হর্নস। রাতের বেলা জঙ্গলের গভীর থেকে বেরিয়ে ওয়াটার হোলের দিকে যায়। চুপিসারে ওদের পিছু নিয়ে বিকট চিৎকার দিয়ে চার্জ করে ওদের ভিতর ছুটে যেতাম!
অন্ধকারে কেউ ভাল দেখতে পেতাম না। সামনে কালো যা কিছু দেখা যায় সেটাই হয়তো গরু হতে পারে। আমি শুনেছি একবার এক মেক্সিকান একটা ভালুককেই গরু মনে করে দড়ি খুঁড়ে আটকে ফেলেছিল।
অবিশ্বাস করার কোন কারণ দেখি না, মন্তব্য করল হেনরি। ক্যালিফোর্নিয়ায় ভ্যাকেরোরা (কাউবয়) নিছক আনন্দের খাতিরেই সেটা করত। মাঝেমাঝে বিশাল লঙহর্ন ষাড়ের বিরুদ্ধে লড়াই করিয়েও মজা দেখত।
বাজে কথা, প্রতিবাদ করল লঙ হিউবার্ট। গ্রিজলির বিরুদ্ধে ষড় কিছুই করতে পারবে না!
সেটা তোমার কথা, কিড লেকার আপত্তি জানাল। একবার আমি একটা বিরাট লঙহর্নকে ঝোঁপের ভিতর মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছি। একটা চোখ নেই, ক্ষতবিক্ষত দেহ, কিন্তু সে নিজের পায়েই দাড়িয়ে ছিল। কিছু খোজাখুজির পর দেখলাম একটা গ্রিজলি মরে পড়ে আছে। বিশাল আকার।
সপ্তাহখানেক পরে আমি আবার ওদিকে গেছিলাম, দেখলাম ওই লঙহর্ন খ্যাপার মত ঘুরছে। মনে হলো সে আরেকটা গ্রিজলি শিকার করার জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরছে।
লঙ একদৃষ্টে কিড লেকারের দিকে কয়েক সেকেণ্ড চেয়ে রইল। যত সব আষাঢ়ে গল্প, বলে, অবজ্ঞা প্রকাশ করল সে। এমন গল্প কেবল কচি ছেলেরাই বড়দের আসরে বলতে পারে!
সহসা সবাই নীরব হলো। রনির চোখ বিশাল জনি হিউবার্টের ওপর। লোকটা সতর্ক চোখে মাথা তুলে দেখছে। ম্যাজিকের মতই সবাই ছড়িয়ে পড়ল। কেবল রান্নার আগুনটার পাশে কিড লেকারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে লঙ। হিউবার্টকে আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে, চেহারায় হেলার ভাব।
লেকারের গড়ন পাতলা, এবং সে কম কথার মানুষ। মাথায় সরু প্রান্তের হ্যাটটা পুরানো আর তোবড়ানো। মুখে দাড়ি নেই বটে, কিন্তু ওর চোখ দুটোয় অভিজ্ঞতার ছাপ। হঠাৎ রনি উপলব্ধি করল লঙ বোকামি করতে যাচ্ছে।
আমার বিশ্বাস, ধীর স্বরে বলল কিড, আমার ট্র্যাকও তোমার মতই বড়, লঙ। তুমি আমাকে মিথ্যাবাদী বলতে চাইলে, বলতে পারো কিন্তু তা বলতে হবে পিস্তল ড্র করে!
অবাক হয়েছে লঙ এবং ভীষণ খেপেছে! পুঁচকে ছেলের সাহস। দ্রুত ওর হাত পিস্তলের বাটের দিকে নামল। মুহূর্তে কিড লেকার বাম হাতে ড্র করে ওর মাথা ফুটো করে দিল।
লঙ হিউবার্ট আধ-পা এগিয়ে মুখ থুবড়ে আগুনের পাশে পড়ল। ওর মাথা আর ঘাড়ের পিছন দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে।
কিছুক্ষণের জন্যে সবাই স্তব্ধ। তারপর সিলভার হিউবার্ট আগুনের চক্রটার পাশে এসে দাঁড়াল। ওর চেহারা নিষ্ঠুর আর কঠিন। হতচ্ছাড়া, ডেঁপো ছোকরা! তুই আমার ভাইকে মেরে ফেলেছিস!
কিড তার খোলা পিস্তলটা স্থির হাতে ধরে আছে। ওর স্বরটা ঠাণ্ডা। সে নিজেই তার মৃত্যু ডেকে এনেছে, শান্ত স্বরে সে বলল। ওর বড়াই এর মুখটা একটু বড়ই ছিল, এটা সবাই জানে। আমাকে হারাতে পারবে মনে না করলে লড়তে আসত না। হত্যা করাটা আমার স্বভাব নয়, সে আরও বলল, হিউবার্টদের বিরুদ্ধে আমার কোন বিরোধ নেই-তোমরা পাহাড়ের ওপাশে থাকলেই হলো। ওখানে যদি ওর বদলে আজ আমি পড়ে থাকতাম, তাহলে কি তুমি এত হৈচৈ করতে? মনে হয় না!
কিড ঠিকই বলেছে, শান্ত স্বরে বলল বেন। লঙই এটা শুরু করেছিল, কিন্তু সে স্নো বলে হেরে গেছে।
হয়তো পরেরবার যখন দেখা হবে! চিৎকার করেবলল সিলভার। আমি এতটা স্লো হব না!
হয়তো। লেকারের চেহারা একটু ফেকাসে, চেহারা কিন্তু শান্ত। আমি ঝগড়া বা লড়াই চাচ্ছি না। তোমার যেমন খুশি তাই হবে। ঠাণ্ডা ভাবে পিস্তল খাপে ভরে পিছন ফিরল কিড! ওয়্যাগনের কাছে গিয়ে নিজের কাপে কফি ভরার আগে সিলভার বা জনির দিকে ফিরল না। লোকটার দিকে একবারও তাকাল না।
রনি সহজ ভঙ্গীতে আগুনের পাশে এসে দাঁড়াল। আমাদের অনেক কাজ বাকি পড়ে আছে। আমরা লড়াই করলে কোন কাজই এগোবে না।
আমরা সবাই দেখেছি কি ঘটেছে। লঙ তোমার ভাই ছিল এবং তোমার একটু উত্তেজিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা ভুলে যাওয়াটাই এখন সব থেকে ভাল।
আমরা কিছুই ভুলব না! গর্জে উঠল সিলভার।
তাহলে মনে রেখো ওই ছেলেটা রকিঙ কে-এর রাইডার! বব কেসি কথা বলল। ওর স্বরে হঠাৎ কঠিন চ্যালেঞ্জের সুর ঝেজে উঠল। মনে রেখো হিউবার্ট! তোমরাই এর শুরু করেছ। আমি বেঁচে থাকতে রকিঙ কে-এর কোন রাইডারের কেউ ক্ষতি করবে, এমন লোকের জন্মই হয়নি। তোমরা যদি ফাইটই চাও, এখন বা যেকোন সময়ে শুরু করতে পারো।
রনির দেহ বেয়ে উত্তেজনার ছোট একটা ঢেউ খেলে গেল। ওখানকার সবার চেহারায় দারুণ একটা বিস্ময়ের ভাব ফুটে উঠতে দেখল সে। অনেকের মনেই সন্দেহ ছিল, বব কেসির মত ঠাণ্ডা লোক রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে কিছুতেই নামবে না। কিন্তু ওর আজকের এই শক্ত চেহারা আগে কেউ কখনও দেখেনি। হিউবার্টরা যে এটা আশা করেনি এ’সম্পর্কে রনি নিশ্চিত। রকিঙ কে-এর কিছু লোকও এতে অবাক হয়েছে। এখন বব নিজেকে স্পষ্টই ব্যক্ত করেছে। জনি হিউবার্ট সবথেকে অবাক হয়েছে। ভুরু কুঁচকে তরুণ র্যাঞ্চারের দিকে অস্বস্তিভরে তাকাল সে।
এখনই আমি ঘোষণা করে দিচ্ছি, রেঞ্জ-ওয়ার শুরু হলে আমরা শেষ ডলার আর শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়ব। সে একটু থামল। চলো আবার আমরা কাজে নামি।
কফির কাপ নামিয়ে রেখে কিডের পাশে এসে থামল টেরি। আজ বিকেলে আমি তোমার সাথে রাইড করর, লেকার।
তোমাদের দুজনের কাউকে আজ রাইডিঙে যেতে হবে না, বাধা দিয়ে বলল ড্যাশার। তোমরা হেনরি আর রজারের কাজটা করবে। কিড ব্র্যাঙি করবে, আর আগুন জিইয়ে রাখবে।
এতক্ষণ জনি হিউবার্ট একটা কথাও বলেনি। কেবল একবার ভাইয়ের মৃতদেহটার দিকে তাকাল, ঠাণ্ডা চোখে যাচাই করল। কিডকে পাত্তাও দিল না। ওকে মনেমনে আগেই জরিপ করেছে। ওর ওপর জীবন নাশের হামলা আসতে পারে বুঝেই যে ওকে বাইরে যেতে দিচ্ছে না ড্যাশার, সেটা বুঝতে এক সেকেণ্ড দেরি করেনি। পরিস্থিতির টেনশন এখনও কমেনি।
তোমাদের রাউণ্ডআপ আমরা শেষ করে দেব, বাছারা। কিন্তু কোন ঝামেলা নয়। আমরা কোন বিপদ চাই না!
ওরা তাজা ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে গেল।
রনিকে ঘোড়ায় চড়তে দেখে বব এগিয়ে এল। রনি, তোমার কি মনে হয় ওরা সরে থাকবে? নাকি ঝামেলা করার ফন্দি আঁটছে?
আমার সন্দেহ হচ্ছে আমাদের কপালে লড়াই করাই আছে, জবাব দিল রনি। তবে আমার বিশ্বাস রাউণ্ডআপ ওরা শেষ করবে-কিন্তু পরে ঝামেলা করবে।
প্রায় এক ঘণ্টা পর হেনরি ছয়টা গরু তাড়িয়ে নিয়ে হাজির হলো। ওই হিউবার্টদের আমার মোটেও বিশ্বাস হয় না, হঠাৎ মন্তব্য করল সে। ওরা ঝগড়াটে পরিবার থেকে এসেছে। কিড না মরা পর্যন্ত ওরা এখন শান্ত হবে না। সাথে আমাদেরও অনেককেই শেষ করবে।
কৌতূহলী দৃষ্টিতে রনি ওর দিকে তাকাল। তুমি আমাদের বললে, হেনরি। তার মানে তুমি থাকছ?
হেনরির চেহারাটা সামান্য লাল হলো। তোমার কি করে ধারণা হলো আমি চলে যাচ্ছি?
আঁচ করেছিলাম। গতরাতে তোমাকে খুব অস্থির আর চঞ্চল দেখলাম। তুমি যদি থাকো, আমি খুব খুশি হব।
একটু থমকাল হেনরি। কিছুক্ষণ রনির দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর বলল, কিন্তু আমি রাসলারদের সাথে কাজ করেছি।
তা আমি জানি। অনেক ভাল লোকই সময় কালে কিছু গরু চুরি করে। কিন্তু সঙ্কটের মুহূর্তে সে কোন পক্ষ নেয়, তাতেই মানুষ চেনা যায়। শোনো, হেনরি। এই রেঞ্জের ওপর অনেক আক্রমণ আসবে। লড়াই হবে–আমি হিসেবে যদি খুব ভুল না করে থাকি, রকিঙ কে-কে একাই ওদের মোকাবিলা করতে হবে।
আমারও তাই ধারণা। তাহলে আমি থাকতে পারি?
হাসল ড্যাশার। নিশ্চয়! তবে তুমি যে পরিমাণ খাও, তাতে আমাদের প্রতিদিন একটা করে আস্ত গরু লাগবে!
প্রাণ খুলে হাসল হেনরি। আমার চিরকালই একটু বেশি খাওয়ার অভ্যাস। এক টুকরো তামাক দাঁত দিয়ে কেটে নিল সে। রনি, রজার আমার সাথে এর মধ্যে ছিল না। সে জানত আমি কিছু কিছু গরু সরাই, কিন্তু সে এতে কোন অংশই নেয়নি। কথাটা তোমাকে জানিয়ে রাখলাম।
ধন্যবাদ। ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে ওয়াশ ধরে রওনা হলো ড্যাশার। খাবার টেবিলে দেখা হবে।
জনি হিউবার্ট তৃতীয় দিন শহরে পৌঁছল! সতর্ক চিন্তা-ভাবনা করেই সে এসেছে। ওর প্ল্যানের কথা সে কাউকে জানায়নি। এমনকি সিলভারকেও না। এক নজর দেখেই বুঝল যার খোঁজে সে এসেছে, সে নেভাডা সেলুনে নেই। রেড রয়েছে। অ্যাডামের গানম্যান বারে হেলান দিয়ে সতর্ক চোখে হিউবার্টকে লক্ষ করছে। ওর চাহনিটা খেয়াল করেছে জনি। লোকটাকে সে মোটেও পছন্দ করে না। তবু শেষে ওর দিকেই এগোল।
ডাকি বা জেরিকে শহরে দেখেছ? প্রশ্ন করল জনি।
একটু ইতস্তত করল রেড, দ্রুত চিন্তা চলেছে ওর মাথায়। তারপর সে মাথা ঝাঁকাল। হ্যাঁ, একটু আগেই মলির ওখানে ঢুকেছে ওরা। ওদের বেরোতে দেখিনি।
সেলুন থেকে দ্রুতপায়ে বেরিয়ে এল জনি। ঝট করে ঘুরে পিছনের অফিসের দরজায় দুটো হালকা টোকা দিয়ে ভিতরে ঢুকল রেড।
বস, উত্তেজিত স্বরে বলল সে, জনি হিউবার্ট শহরে এসেছে। ডাকি আর জেরি সমার্সের খোঁজ করছিল সে।
সঙ্গেসঙ্গে উঠে দাড়াল অ্যাডাম। ওর চোখ দুটো বিজয় উল্লাসে ঠাণ্ডা আর কুৎসিত হয়ে উঠেছে। হতে পারে, মন্তব্য করল সে। জেরি সমার্স, তাই না? রনি ড্যাশারের বিরুদ্ধে জেরি! ওটা একটা দেখার মত দৃশ্যই হবে।
শুধু তাই না, শব্দ করে হাসল রেড। ওরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে ব্যস্ত থাকবে। দুটো রেঞ্জেই অনেক ভাল স্টক আছে।
ঠিক তাই। দাঁত দিয়ে অ্যাডাম চুরুটের গোড়া কাটল। ঘোড়া নিয়ে ওদিকে যাও, হেনরির দেখা না পাওয়া পর্যন্ত লুকিয়ে থেকো। ওকে বলো, সে যেন আমার সাথে দেখা করে।
জনি হিউবার্ট রাস্তা পার হয়ে মলির রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঢুকল। দেখল জেরি সমার্স আর ডাকি ছাড়া ওখানে আর কেউ নেই। কফি আর পাই ওদের সামনে। জনিকে ঢুকতে দেখে নড করল জেরি। হিউবার্টকে ওর দিকেই আসতে দেখে সমার্সের চেহারা থেকে হালকা ভাবটা মিলিয়ে গেল। তুমি কি ড্যাশারকে ভয় পাও? জানতে চাইল জনি।
রান্নাঘরে পাথর হয়ে জমে গেল মলি ব্রাউন। ওর ময়দা মাখা হাত দুটো মাখানো ময়দার ওপর শূন্যে ঝুলে আছে।
কৌতুকে মিটমিট করে জ্বলল জেরির চোখ; তারপর সে হাসল। ড্যাশার? আমি ওকে ভয় করব কেন?
তাই যদি হয়, তোমার একটা কাজ জুটল। কিড লেকার আমার ভাইকে হত্যা করেছে।
শুনেছি, জেরি স্বীকার করল। ভাবিনি কিড এতটা ফাস্ট। তবে কাজের চেয়ে লঙের মুখটা একটু বেশি চলত।
জনি হিউবার্টের ঠোঁট দুটো পরস্পারের ওপর চেপে বসে সরু হলো। তার নিজেরও একই ধারণা, কিন্তু অন্যের মুখ থেকে কথাটা শুনতে খারাপ লাগে।
আমি তোমাকে দুশো দেব, ঠাণ্ডা ভাবেই বলল জনি। এবং লেকার, ড্যাশার, বা কেসির জন্যে একটা বোনাস।
কফির কাপে চুমুক দিল জেরি, ওর চোখ সতর্ক, ঠাণ্ডা এবং সন্তুষ্ট। ডাকির কি হবে? সে শক্ত লোক।
ওর কথাও আমি বিচার করেছি। একশো। বোনাস রোজগার সেও একই হারে পাবে।
মাথা ঝাঁকাল জেরি। আগামীকালই আমরা রওনা হব।
রান্নাঘরে নীরবে দ্রুত কাজ করছে মলি, ওর মাথাটাও সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছে। তাহলে গুজবগুলো সত্যি। একটা রেঞ্জ ওয়ার লাগতে যাচ্ছে। হিউবার্ট, রাসলারস আর অ্যাডামসের বিরুদ্ধে রকি
কে একা। ওদের মানুষও অনেক কম। বুড়ো কেসি মারা যাওয়ার পর থেকেই নেকড়েরা এগিয়ে আসছে। ছিঁড়েখুড়ে রকিঙ কে ধ্বংস করে দিতে চাইছে ওরা।
রনি ড্যাশারের কথা মনে পড়তেই সে ভাবল, ওরা হয়তো বিফলও হতে পারে। শর্টি মাইণ্ড ওখানে আছে জেনে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে। শর্টি শীঘ্রি ওর সাথে দেখা করতে আসবে। ওই ছেলেটার মাধ্যমেই হিউবার্ট আর জেরির চুক্তি সম্পর্কে রনির কাছে খবর পৌঁছনো যাবে। হঠাৎ আর একজনের কথা তার মনে পড়ল। লোকটা ভাল। ওই লোকের সম্পর্কে মলির নিজস্ব কিছু প্ল্যান আছে।
আইন-শৃঙ্খলাহীন অবস্থার সুযোগ নিয়ে যারা লাভ করতে চায়, তারা সবাই একজোট হতে শুরু করেছে। ওদের ভয়, রনি ড্যাশারের নেতৃত্বে রকিঙ কে হয়তো আবার শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। এবং আগে ওরা যেমন শক্ত হাতে আইন বজায় রেখে অপরাধীর শাস্তি দিয়েছে, সেই অবস্থাও আবার ফিরে আসতে পারে। বিল ওয়াটসন তার সেলুনে নিজস্ব প্ল্যান আঁটছে। অ্যাডামও তার সেলুনে বসে কিছু গভীর চিন্তা ভাবনা করছে। তার বিশ্বাস, ড্যাশার যেটা শুরু করেছে, সেটা সে শেষ করার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। এবং সেও নিশ্চিত করবে রনি যেন এটা শেষ করতে না পারে।
জেরি সমার্স শহরেই আলস্যে সময় কাটাচ্ছে। ওর মুখে চট করেই হাসি ফোটে, কিন্তু চোখে তার কোন ছাপ পড়ে না। সবার আলোচনা শুনে খবর সংগ্রহ করছে সে। হিউবার্টের প্রস্তাব গ্রহণ করার পিছনে ওর নিজস্ব কিছু মতলব আছে। এই দুই দলের খুনাখুনিতে সে বেশ কিছু মুনাফা লুটে নিতে পারবে।
জনি একাই কর্ন প্যাচে হাজির হলো। বিল ওয়াটসনের সাথে অনেকক্ষণ গোপনে আলাপ হলো ওর। সে যখন কর্ন প্যাঁচ ছাড়ল তখন ওর সাথে এল আরও তিনজন। ড্রিনান, হ্যানকিনস আর ট্রয়। প্রত্যেকেই সশস্ত্র এবং প্রস্তুত। জনি হিউবার্ট ওই পরিবারের সবথেকে স্থির মস্তিষ্কের প্ল্যানার, ঝুঁকির মধ্যে সে যেতে রাজি নয়। ফিফটি-ফিফটি চান্সেও নয়।
সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে।
লঙ মারা যাওয়ার চতুর্থ দিন ফিনলে হার্ট মলি ব্রাউনের রেস্টুরেন্টে ঢুকল। কিছুক্ষণ আগেই একটা শীপ ক্যাম্পে সে পেট ভরে খেয়ে এসেছে। কিন্তু ইদানীং সে লক্ষ করছে পেট যতই ভরা থাকুক, মলির রেস্টুরেন্টে না এলে ওর যেন ঠিক পেট ভরে না। মনও না।
ফিনলে যখন এল, মলির রেস্টুরেন্টটা তখন একেবারে খালি। কফির কাপটা প্রায় শেষ করে মেয়েটার দিকে চোখ তুলে তাকাল সে। মলি, তুমি তুমি একটা জুয়েল। তোমাকে যে পাবে সে সত্যিই ভাগ্যবান পুরুষ।
কথাটা শুনে সে কেবল হাসল। কিন্তু পরক্ষণেই গম্ভীর হলো। লঙ হিউবার্ট কিড লেকারের মোকাবিলা করে মারা পড়েছে। এখন মনে হচ্ছে পুরো কাউন্টিটাই ওদের বিরুদ্ধে চলে গেছে।
খবরটা শুনে একটু চিন্তা করল ফিনলে। রনি ড্যাশার ওর ভাইকে বাঁচাতে চেয়েছিল। ডক্টর হ্যাডলের কাছ থেকেও সে একই খবর পেয়েছে। যদি সন্দেহ ওর মনে থেকেও থাকে-এতে তার সন্দেহ দূর হয়ে গেছে। ডক্টর হ্যাডলে ওর কাছে মিথ্যে কথা বলবে না।
ড্যাশার একজন সত্যিকার পুরুষ, মন্তব্য করল সে।
হ্যাঁ, সে সত্যিই ভাল, মলি বলল। কেসি আর শর্টিও তাই।
শর্টি তোমার খুব প্রিয়, তাই না? ওর সম্পর্কে তুমি অনেক ভাব।
ক্ষণিকের জন্যে ওদের চোখ মিলল। আমি তা করি। খাঁটি সোনা সে। সত্যিই আমি ওর জন্যে অনেক ভাবি।
জীবনে এই প্রথম ঈর্ষা যে কি বুঝল ফিনলে। শর্টি মাইক এখানে প্রচুর সময় কাটায়। মাতাল হলেও সে এখানেই আসে, এবং মলি সব সময়েই ওর যত্ন নেয়। এই সম্পর্কে কিছু রটনা সে শুনেছে, কিন্তু ওসব কান দেয়নি। তবু মনটা কেন ব্যথা পায়? দ্বিতীয় কাপ কফি খাওয়ার মাঝে জেরি সমার্স ভিতরে ঢুকল।
অল্পক্ষণের জন্যে ওদের চোখাচোখি হলো। দুজনের দেহেই কেমন যেন একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল। তবে দুজনের দুই কারণে।
তুমি হার্ট, তাই না? জিজ্ঞেস করল জেরি। মুখ তুলে তাকিয়ে ছোট্ট একটা নড় করে সম্মতি জানাল সে।
শুনলাম তুমি তোমার ভাইয়ের খুনীকে খুঁজছ। গুডলাক। ধন্যবাদ। আমি ওকে বের করব। হয়তো এতে অনেক সময় লাগতে পারে।
হার্ট কাঁধ উঁচাল। মনে হয় আমার জীবনের এখনও তিরিশ-চল্লিশ বছর বাকি আছে। আমার বিশ্বাস এটা যথেষ্ট সময়।
লোকটাকে আবার নতুন চোখে বিচার করে দেখল জেরি। না, সে বড়াই করছে না। সে যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিনই খুঁজবে; সন্দেহ নেই। একটু অস্বস্তি অনুভব করছে জেরি। ড্যাশারের সাথে কথা বলেছ? একটু অপেক্ষা করল জেরি। তোমার জানা উচিত ওই জেমসকে শেষ জীবিত দেখেছে। জেমস হয়তো ওকে কিছু বলেছে যেটা সে প্রকাশ করছে না।
হতে পারে।
সে তোমাকে নতুন কিছু বলেছে? হঠাৎ কেন যেন সতর্ক হলো,,। ঠাণ্ডা মাথায় সে পরিস্থিতিটা বিচার করে দেখা শুরু করল। জেরি কি নিজেও এই ঘটনার সাথে জড়িত? লোকটা খুন–এবং সন্দেহ নেই লোকটা তার কার্যকলাপের অনেক কিছুই গোপন রাখে।
নতুন তেমন কিছুই না। প্লেট থেকে ডোনাটটা তুলে নিল হার্ট। মনে হচ্ছে এখন চারদিক থেকে ওকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে।
জেরির ঠোঁট বাঁকা হলো। সে বেঁচে থাকতেই ওর সাথে তোমার আরেকবার কথা বলা ভাল।
সে হয়তো সহজে মরবে না। এই লড়াইয়ে সে জিততেও পারে। ধরো সে তার পুরানো বার ২০ দলকে ডাকল, তখন?
মনের ভিতরে প্রচণ্ড একটা ঝাঁকি খেলো জেরি। এই সম্ভাবনার কথা তার একবারও মনে আসেনি। জনি হিউবার্ট যখন ওর সাথে যোগ দিয়ে ড্যাশারকে হত্যা করার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল তখন সে অত্যন্ত খুশি হয়েছিল। নিশ্চিত ছিল রকিঙ কে কিছুতেই জিততে পারবে না। নিজের প্ল্যানের সাফল্য সম্পর্কে সে নিশ্চিন্ত ছিল। লড়াইয়ে দুই পক্ষই দুর্বল হবে। বর ২০-র কঠিন লোকগুলোর দুঃসাহসিক অনেক কর্মকাণ্ডের কথাই সে কাপের মুখে শুনেছে।
ওসব বার ২০ কিছুই না, টেবিল ছেড়ে উঠতে-উঠতে বলল জেরি। এই লড়াইটা স্থানীয়, এবং আমার মনে হয় বাইরের কোন সাহায্য পৌঁছা’র বহু আগেই এটা শেষ হয়ে যাবে।
হয়তো, কিন্তু ড্যাশার জানে সে কি করছে। লোকটা যে কঠিন আর অভিজ্ঞ, তাতে সন্দেহ নেই। শুনলাম ট্রেসার নামের এক আউটলকে সে পাহাড়ের ভিতর তাদের হাইডআউটে ঢুকে মেরে এসেছে। যে স্টেজ ডাকাতের দলটা আমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্যে দায়ী, লোকটা তাদেরই একজন ছিল।
স্থির দাঁড়িয়ে রইল সমার্স। ট্রেসার মারা পড়েছে এটা সে জানে। ড্যাশারই যে ওকে মেরেছে এটাও তার অজানা নয়। কিন্তু ওরা কিভাবে জানল ট্রেসার ট্রেজ-ডাকাত দলের একজন?
ঝট করে ঘুরে সে দরজা ঠেলে বেরিয়ে পড়ল। রাস্তা পেরিয়ে নিজের কামরায় ফিরে চমৎকার বাটের উইনচেস্টার রাইফেলটা নামাল। মনে হচ্ছে এবার আমার খেলায় নামার সময় এসেছে, নিজের মনেই বিড়বিড় করে বলল জেরি। এরপর ড্যাশার যে কি খুঁড়ে বের করে ফেলবে, কিছুই বলা যায় না! বেরিয়ে আস্তে করে দরজাটা বন্ধ করল সে।
০৯. কাজের সময়ে জনি হিউবার্ট
কাজের সময়ে জনি হিউবার্ট ঠাণ্ডা মাথায় অত্যন্ত সাবধানে প্ল্যান করে। কাজের লোকগুলো রেঞ্জে গেলে রকিঙ কে র্যাঞ্চ আক্রমণ করে দখল করার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু মাত্র দু’জন ওখানে থাকলেই এমন আক্রমণকে খুব ক্ষতিকর করে তুলতে পারে। তাছাড়া লিসা আর শেলী ওখানে থাকে কোন ভদ্রমহিলার জীবন বিপন্ন হয়, এমন কিছু শুধু পশ্চিমেই নয়, সেভেন পাইনসের লোকজনও সহ্য করবে না।
ওর যুদ্ধ-কৌশল হবে, কাউহ্যাণ্ডরা রেঞ্জে কাজে বেরোলে, ওদের একজন-দু’জন করে শেষ করা। তার পরিকল্পনায় কোন ফাঁক নেই। একদল কঠিন রাইডার তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। সে জানে কোথায়-কোথায় রকিঙ কে-র রাইডাররা থাকবে। কিছু তাজা-ঘোড়া সে বিশেষ বিশেষ এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। তাতে তার কঠিন আরোহীরা দ্রুত রাইড় করে ওদের সবাইকে শেষ করতে পারবে। এতে একদিনেই লড়াই শেষ হবে। কিন্তু সে যে আর একজনের প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করছে, এটা সে বুঝল না।
রজারের সাথে রাইড করছিল হেনরি। স্মোক সিগন্যাল দেখতে পেল ওরা। বিশাল লোকটা জানে ওই সঙ্কেতের প্রকৃত অর্থ। ওকে ওখানে যেতে বলা হচ্ছে। কর্ন প্যাচে এই মুহূর্তে যাওয়ার কোন বাসনা নেই ওর। কি করবে বুঝে পাচ্ছে না সে। শেষে সিদ্ধান্ত নিয়ে বলল, আমি ওখানে যাচ্ছি, রজার। ওরা যা চায় তা আমাকে করতে হবে, কিন্তু রনিকে সাহায্য করবে এমন কিছু তথ্য হয়তো আমি সংগ্রহ করতে পারব।
ওদের থেকে তোমার দূরে থাকাই ভাল, রজার ওকে সাবধান করল। ওই বিল ওয়াটসন লোকটা যে শয়তানের হাড্ডি তা তুমি ভাল করেই জানো।
আমি যে দল বদল করেছি এটা সে আঁচই করতে পারবে না, জোর দিয়ে বলল হেনরি। এই সবকিছুর পিছনে আর কেউ আছে। লোকটা কে জানতে পারলে ভাল হত। ওয়াটসন তারই নির্দেশে কাজ করে। আমার বিশ্বাস স্টেজ ডাকাতির পিছনেও ওই একই লোকের হাত আছে।
সিগারেট মুড়ানোর পর জিভ দিয়ে কাগজের আঠাটা ভিজিয়ে পুরো রেঞ্জার ওপর রজার একবার ভাল করে চোখ বুলিয়ে নিল। হতে পারে, বলল সে। কিন্তু আমি বলব ওই সাপের গর্ত থেকে তোমার দূরে থাকাই ভাল।
হেনরি ঘোড়ার পিঠে কর্ন প্যাচের সেলুনে পৌঁছল। এলাকাটা নীরব। সেলুনটাও খালি। বারের দিকে এগিয়ে গেল সে। ওর দিকে চেয়ে নড করল বিল।
চারদিক একেবারে চুপচাপ দেখাচ্ছে? প্রশ্ন করল হেনরি। লোকজন সব কোথায়?
সব থ্রী এইচে, জবাব দিল বিল। এরকম একটা সুযোগের অপেক্ষাতেই আমরা ছিলাম। রকিঙ কে আর থ্রী এইচের লড়াইয়ে রকিঙ কে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে-তখন আমরা সহজেই ওদের গরুগুলো সব লুটে নিতে পারব।
থ্রী এইচ হয়তো নাও জিততে পারে।
পাগল হয়েছ? হিউবার্টদের নিজের লোক তো আছেই, সাথে আছে। জেরি সমার্স, ডাকি, ড্রিনান, হ্যানকিন্স, ট্রয়, আর আরও ছয়জন লোক। ওরা একদিনেই সব শেষ করে ফেলবে। ফিরে লড়ার মত একজনকেও জ্যান্ত রাখা হবে না।
এর ভিতর আমার কাজটা কি হবে?
দরজা ঠেলে জনি হিউবার্ট ভিতরে ঢুকল। একটু আড়ষ্ট হলো হেনরি। বুঝতে পারছে এই সবই আগে থেকে প্ল্যান করা।
তুমি ড্যাশারকে আমাদের কাছে পোকার গ্যাপে নিয়ে আসবে। কথাটা জনি হিউবার্ট বলল।
হেনরি জনির দিকে তাকাল। এই–প্রথমবারের মত ওদের গোলামিতে তার মন বিষিয়ে উঠেছে। সব কিছুরই একটা সীমা আছে। কিছু রাসলি করেছে সে, কিছু লোককে হাইজ্যাক করে টাকাও লুট করেছে। কিন্তু সে কখনও একটা সৎ আর নির্ভীক লোককে মৃত্যুর ফাঁদে টেনে নিয়ে যায়নি। হঠাৎ একটা অদ্ভুত অনুভূতি ওকে গ্রাস করল। মনে হচ্ছে দিন ফুরিয়েছে এটাই তার জীবঘ্নে শেষ দিন। অবান্তর হলেও অনুভূতিটাকে সে মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে আর একটা রোল করল। ড্যাশার, বলল সে, লোকটা নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী চলে। ওকে আমি বা আর কেউ লীড করতে পারবে না।
চেষ্টা করো, দৃঢ়স্বরে বলল ওয়াটসন। ওকে কেবল একবার পোকার গ্যাপে নিয়ে এসো, বাকিটা আমরা সামলাব।
কোন সম্ভাবনা নেই! ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়াল হেনরি। ওর ভারি মোটাসোটা আঙুলের হাত দুটো বারের ওপর। শক্ত লোকটার চেহারা এখন আরও কঠিন হয়েছে। ও এত বোকা নয়। ওর চোখ এবার য়াটসনের দিকে ঘুরল। লোকটা পোকার খেলায় তোমাকে হারিয়েছে–যেটা কেউ কোন দিন পারেনি। দু’বার সে হিউবার্টদের মোকাবিলায় ওদের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে, অথচ দু’বারই ওরা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। বিশ্বাস করো সে এবারও তাই করবে। চাইলেও আমি ওকে ফাঁদে ফেলতে পারব না। এবং আমি সেটা চাইও না!
ওদের মুখের ওপর কথাগুলো বলে দিতে পেরে ওর মন তৃপ্তি আর প্রশান্তিতে ভরে উঠল। দেখল হিউবার্টের চেহারা রাগে লাল হয়ে উঠেছে। ওরাটসনের মুখটা মনে হচ্ছে পাথরে খোদাই করা। বোকামি কছ তোমরা! হেনরির স্বরটা এখন কর্কশ। তোমাদের জেতার কোন সম্ভাবনাই নেই! তোমরা যার বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছ, সে বুড়ো কেসির থেকেও অনেক কঠিন, আর স্মার্ট!
ওর কথার শেষে কামরায় নীরবতা বিরাজ করছে। বাইরে একটা সিকাডা পাখি গ্রীজউড বনে ডাকছে। একটা রুবল মাছি ভিতরে ঢোকার জন্যে ময়লা জানালাটার কাঁচে বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সিগারটা দাঁতের ফাঁকে কামড়ে ধরে জনি বলল, তুমি বলেছিলে এই লোকটাকে বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু মনে হচ্ছে ও ড্যাশারের দলেই যোগ দিয়েছে।
কথায় তাই মনে হচ্ছে, স্বীকার করল বিল। বলো, হেনরি, এখন তুমি কোন দলে?
জীবনে অনেক লোকের অনেক আদেশই হেনরিকে পালন করতে হয়েছে। কিছু ভাল, কিছু খারাপ। হঠাৎ সে উপলব্ধি করল, নিকৃষ্ট হয়েই তার সারাটা জীবন কেটেছে। তৃতীয় শ্রেণীর। জানে, কথা বলে সে এর থেকে বেরোতে পারবে। মাফ চেয়ে, ওদের প্ল্যানে সম্মতি জানিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে খবরটা সে রনির কাছে পৌঁছে দিতে পারবে। কিংবা ওদের দু’জনের মোকাবিলা এখনই এখানে করতে পারে।
এই দুটো লোক যদি মরে, হয়তো লড়াইয়ের এখানেই ইতি ঘটবে। যদি শেষ নাও হয়, তবে চাপ কিছুটা যে কমবে তাতে সন্দেহ নেই। ক্ষতি কি?
মুখ তুলে চাইল সে। হেনরি প্রায় ওয়াটসনের মতই বিশাল। শেভ করেনি। পোশাকও অগোছাল। তবু ওই মুহূর্তে সে ভাল বোধ করছে। এত ভাল সে আগে কখনও বোধ করেনি।
আমি ফাইটে ড্যাশারের পাশেই দাঁড়াব। হেনরির স্বরটা শান্ত। আমি রকিঙ কে-এর লোক।
কোনদিন এমন একটা লোকের সাথে রাইড করার সুযোগ আমি পাইনি। এখন দেখছি এটা আমারস্তাবই লাগছে। খুব ভাল। তুমি সব সময়েই কি-র্যাট ছিলে, বিল, আর এই জনি হচ্ছে দুই পয়সার মানুষ, যে তার নিজের লড়াইয়ের জন্যে তোক ভাড়া করে। আমার মনে হয় না তোমাদের কারও মধ্যে একটুও মনুষ্যত্ব আছে।
হেনরি ধারণা করেছিল এই কথার পর ওরা পিস্তল ড্র করবে। কিন্তু ওরা কিছুই করল না। একটু রাগ তাও না। পুরো এক মিনিট ওরা চুপচাপ বসে রইল। তারপর হিউবার্ট উঠে দাঁড়াল। বোঝা যাচ্ছে আমাদের প্রশ্নের একটা জবাব পাওয়া গেল, বলল সে। তুমি কিভাবে এর নিষ্পত্তি করো সেটা আমাকে জানিও। দরজার দিকে এগোল সে। হেনরি মনে করেছিল লোকটা চলেই যাচ্ছে। ওর চোখ জনিকে অনুসরণ করছে। হঠাৎ কি বে বিলের দিকে ফিরল সে। দেখল ওর ডবল-ব্যারেল শটগানটা খেচে আভা বেরোল। আঘাতটা হেনরির পেটের মাঝখানে লাগল। পড়ে যাচ্ছে সে।
পড়ার মধ্যেই পিস্তল বের করে পরপর তিনটে গুলি করল। কিন্তু ওগুলো লক্ষ্য করে ছোড়া গুলি নয়। অবশ্য তা হতেও পারে না। প্রথমটা ওয়াটসনের পিছনে একটা বোতল ভাঙল। দ্বিতীয়টা বারের কোনায় লাগল, তৃতীয়টা ওর গলায় বিঁধে মেরুদণ্ডের কিছুটা উড়িয়ে নিয়ে গেল।
জনির কপালে চিকন ঘাম দেখা দিয়েছে। ঠোঁট দুটো পরস্পারের চাপে সাদা হয়ে গেছে। ওয়াটসন বারের পিছনে লম্বা হয়ে পড়েছে। সে যে মারা গেছে তাতে সন্দেহ নেই। কাঠের গুঁড়ো ছড়ানো মেঝেতে চিত হয়ে পড়ে আছে হেনরি। দেহটা রক্তে লাল।
বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এল জনি। লোকটা সাহসী বটে–কিন্তু চোখের সামনে দু’দুটো লোককে মুহূর্তে মরতে দেখে ওর পেটটা গুলাচ্ছে। নিজের ঘোড়ার পিঠে চেপে ট্রেইল ধরে রওনা হলো সে।
হেনরি মরেনি, কিন্তু মারা যাচ্ছে। ধীরে, অনেক ব্যথা সহ্য করে নিজেকে একটু-একটু করে টেনে বারের পিছনে রাইফেলের র্যাকটার সামনে নিয়ে এল হেনরি। কঁকি দিয়ে শার্পস .৫০ রাইফেলটা তুলে দিল।
জনিকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। তিনশো গজ দূরে ঘোড়াটাকে হটিয়ে নিয়ে চলেছে।
রাইফেলটা ওর দিকে তাক করল হেনরি। কেমন যেন এলোমেলো লাগছে। ঠিক লক্ষ্য করতে পারছে না। লক্ষ্যটা দুলছে, নাচছে, তারপর স্থির হলো। ট্রিগার টিপল সে।
বাফেলো গানটা ওর হাতে লাফিয়ে উঠল। কাঁধে প্রচণ্ড ধাক্কা দিল। তিনশো গজ দূরে জনি অনুভব করল তার ঘোড়াটা আড়ষ্ট হলো। তারপর পড়ে গেল। লাফিয়ে নেমে ছুটে পাথরের আড়ালে আশ্রয় নিল হিউবার্ট।
সেলুনের ভিতর রাইফেলটা ওর হাত থেকে খসে পড়ে গেল। আর অনুভব করার শক্তি আর নেই–মেঝের ওপর লুটিয়ে পড়ল সে।
রকিঙ কে-তে ঘোড়ায় জিন চাপাচ্ছে রনি। অপেক্ষা করছে লিসা। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সারারাত মেয়েটা ঘুমায়নি। হঠাৎ সে প্রশ্ন করল, রনি, এখন কি ঘটবে?
গভীর ভাবেই ওর দিকে তাকাল ড্যাশার। আমি ঠিক বলতে পারছি, লিসা। তবে মনে হচ্ছে যুদ্ধ আসন্ন। হিউবার্টরা এখন আর থামবে না। কিডকে ওদের হাতে তুলে দিলেও হয়তো ওরা থামবে না।
ঠিকই বলেছ। রক্ত ক্ষয় ছাড়া এখন আর কোন উপায় নেই।
হঠাৎ এগিয়ে এসে ওর হাত চেপে ধরল লিসা। তুমি-তুমি কেন জেরি সমার্সকে কাজে নিচ্ছ না?
সে আগেই বিপক্ষ দলে যোগ দিয়েছে।
বিশ্বাস করি না।
বিশ্বাস করো আর না করো, কথাটা সত্যি! সে জনির পক্ষ নিয়ে। কাজ করেছে। আমাদের বলার কিছুই নেই।
সে-সেকি সত্যিই ওদের দলে যোগ দিয়েছে?
হ্যাঁ, কথাটা তোমার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকলেও সত্যি।
ওর ঠোঁট জোড়া শক্ত হলো। ভিতরটা একেবারে খালি বোধ হচ্ছে। তবু সে মনে মনে জানত, হয়তো এমনই ঘটবে। আগে কখনও স্বীকার করেনি। নাচের সঙ্গী হিসেবে সে সবার থেকে ভাল। এটা স্বীকার না করে উপায় নেই।
রনি, বলল লিসা, ওর গলার স্বরটা সিরিয়াস। জেরি সমার্স যদি হিউবার্টদের সাথে যোগ দিয়ে থাকে, তবে সে আর আমার বন্ধু নয়। আমি-আমি এখন বুঝতে পারছি, লোকটা যে বিশ্বাসযোগ্য নয় এটা আমি আগে থেকেই জানন।
নীরবে একটা সিগারেট রোল করছে রনি। অনেক সমস্যার সমাধানই সে পেয়েছে, কিন্তু প্রমাণ নেই। নিশ্চিত ভাবেই সে জানে জেমস হার্টকে কে মেরেছে। সে জানে ডাকাতিগুলো কে করাচ্ছে। ওরা দু’জনেই ঠাণ্ডা মাথার মানুষ-ওদের কাছে মানুষের জীবনের কোন দাম নেই। জেরিকে লিসা ভাল করে চেনে, হয়তো লোকটা এমন কিছু মন্তব্য করেছে যেটা জানতে পারলে অনেক সুবিধা হত।
কিছুক্ষণ ইতস্তত করে লিসা বলল, এই এলাকাটা সে ভাল করে চেনে–খুব ভাল। আমি যখন ওকে প্রথম দেখি তখনই সে চিনত। অথচ মাত্র শহরে এসেছে সে।
ডাকি একবার বলেছিল জেরি প্রভাবশালী লোক ছিল। ও যখন কথা বলত সবাই সন্ত্রস্ত থাকত। কর্ন প্যাচের লোক-এমনকি শহরের গণ্যমান্য লোকেরাও।
আগের মন্তব্যে ফিরে গেল রনি। তোমার ধারণা সে এখানে আগেও এসেছে?
লিসার চোখ অলস ভাবে টেরি, কিড লেকার, আর মিলিগানের ওপর ঘুরে আসল। বাঙ্ক-হাউসের আশেপাশেই ঘঘারাফেরা করছে ওরা। শর্টি মাইক রিজের মাথায় শুয়ে দূরবীন দিয়ে রেঞ্জের ওপর কড়া নজর রেখেছে।
লিসা, বলল রনি, একজন, বা বড় জোর দুজন, এইসব ঘটনার পিছনে রয়েছে। আমার ধারণা অ্যাডাম ওদের একজন। হয়তো বিল ওয়াটসন আর একজন। কিন্তু আমার বিশ্বাস ওই লোকটা চুনোপুঁটি। কর্ন প্যাঁচটাকেই সবাই বড় করে দেখছে, কিন্তু আমার বিশ্বাস ওটা একটা ভাঁওতা। জেরি সমার্স হয়তো জানে এর মূলে কে আছে। তোমার যদি এমন কিছু মনে পড়ে যেটা আমাদের সাহায্য করতে পারে, তবে জানিও। জেরি কোন কাজ করে না, অথচ ওর টাকার অভাব নেই–কিভাবে? আমি জানতে চাই কার সাথে ওর যোগাযোগ আছে।
মুখ বাঁকাল সে। একটা লোক আছে–সে বলেছিল ওর নাম লারামি। মাঝেমধ্যে ওরা কথা বলত, কিন্তু আড়ালে।
লারামি!
ওই মুহূর্তে রজার ঘোড়া ছুটিয়ে রনির কাছে এসে থামল। ওরা আসছে! বলল সে। আরোহীরা থ্রী এইচ ছেড়ে এগিয়ে দক্ষিণ দিকে আর একটা দলের সাথে যোগ দিয়েছে। ওরা আমাদের লাইন কেবিন উইলো স্প্রিংসের দিকে যাচ্ছে।
হেনরি কোথায়?
রজারকে একটু উদ্বিগ্ন মনে হলো। কর্ন প্যাঁচ থেকে একটা ধোয়ার সঙ্কেত পেয়ে সে ওখানেই গেছে। কিন্তু সেটাও অনেকক্ষণ আগে।
কর্ন প্যাচের থেকে কোন সাড়া দেখা যাচ্ছে?
না, কিন্তু ওদের সাথে হ্যানকিনসের রোন ঘোড়াটাকে আমি চিনতে পেরেছি।
ঠিক আছে, রজার; তুমি এখানে বেন কেসি আর চায়নার সাথে থাকো। আমরা থ্রী এইচআর কর্ন প্যাঁচ হয়ে আসছি। ওদিকে কিছু ঘটলে সেটা আমাদের জানা দরকার। এদিকে যদি আক্রমণ আসে, তবে রিজের ওপর ধোয়ার সঙ্কেত দিও আমরা দেখতে পাব।
বেসিন ধরে এগোল রনি। ওর সাথে আরও চারজন রাইডার। রেঞ্জ ওয়ার পছন্দ করে না রনি। কিন্তু এটা ওকে লড়ে জিততেই হবে। আসলে, বহু দক্ষিণে কর্ন প্যাচের বিরুদ্ধে একটা বিরাট আঘাত আগেই হানা হয়েছে।
হেনরি মরেছে। কিন্তু ওর মৃত্যু বৃথা যায়নি। নিজের সাথে ওয়াটসনকেও সে নিয়ে গেছে। শেষ শক্তি দিয়ে রাইফেলটা কাঁধে তুলে গুলি করেছিল সে। কাউকে মারার জন্যে নয়-কেবল একটা ওয়ারনিং শট। কিন্তু সেটাই থ্রী এইচকে ঠেকাল।
জনি হিউবার্ট ওদের বস্। সিলভারও ওকে কখনও রাগাতে সাহস পায়নি। জনি ওদের লীডার, কিন্তু সে ওখানে উপস্থিত নেই। দ্রুত আক্রমণকারী দলটা ওর আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু সে কর্ন প্যাঁচ থেকে ফেরেনি। হেনরির গুলিতে সে আহত হয়নি, তবে ওর ঘোড়াটা মারা পড়েছে। হেনরি যে বাফেলো গানটার পাশে মরে পড়ে আছে, এটা সে বুঝতে পারেনি। জনি সাবধানী লোক। নিজের ঘোড়াটা মারা পড়ার তিন ঘণ্টা পরে সে হেনরির ঘোড়াটা নিয়েই ফেরার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু বিগত রাসলারের মাসট্যাঙটা বুনো। জনিকে গুঁড়ি মেরে ওর দিকে এগোতে দেখে ভয় পেয়ে সে পালিয়ে গেল। ওকে ধরার জন্যে ওর পিছনে ছুটল জনি।
সতর্কতার সাথে তৈরি করা আক্রমণের প্ল্যানটা ওর অপেক্ষায় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত দুপুরের পর লাইন কেবিনের লোক দু’জনকে মারার উদ্দেশ্যে ওরা রওনা হলো। কিন্তু ওরা যে ভোর বেলাতেই র্যাঞ্চে ফিরে গেছে এটা ওদের জানা ছিল না। সিলভাবের নেতৃত্বে ওরা রাইড করছে। এখন।
একটা সরু ড্র ধরে রনির পিছুপিছু মরুভূমিতে বেরিয়ে এল ওরা। কিছু ট্র্যাক দেখতে পেয়ে লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল ড্যাশার। দু’জন লোক কিছু ঘোড়াকে লীড করে উত্তর দিকে নিয়ে গেছে। এর মানে কি হতে পারে?
ঘোড়াগুলোকে লীড করে নেয়া হয়েছে এ বিষয়ে তুমি কি নিশ্চিত? প্রশ্ন করল হ্যারি। সম্ভবত ওরা উইলো স্প্রিংসের দিকে গেছে।
দু’জন আরোহী ওই ঘোড়াগুলোকে হটিয়ে নিয়ে গেছে, অনেক দিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলল রনি।
ওরা পুব দিকে এগোল। আবার থামল সে। আরেকটা দল, একজন রাইডার। ওর চোখের পাতা পড়ল। কপালের ঘাম বেয়ে চোখে পড়েছে। হ্যাটটা ঠেলে একটু পিছনে সরিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে রেঞ্জটা পুরো খুঁটিয়ে দেখল। নীল হৃদটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ওটা মরীচিকা হতে পারে–কিন্তু ট্রাকগুলো তা নয়।
ডোনাটের সাথে ডলার বাজি রেখে বলতে পারি ওরা, ফ্রেশ ঘোড়া নিয়ে গেছে। ওরা আমাদের শেষ করে দূরে কোথাও যেতে চাচ্ছে।
মনে হচ্ছে এটা হিউবার্টের প্ল্যান, মন্তব্য করল টেরি।
রনি ড্যাশার পুব দিকে ফিরল। থ্রী এইচ মরুভূমির মধ্যে। করালের গেট খুলে সবগুলো ঘোড়াকে তাড়িয়ে দিল সে। টেরি, তুমি খেয়াল রেখো। কেউ আসলে আমাদের সাবধান করবে।
টেরি তীক্ষ্ণ চোখে চারপাশে খেয়াল রেখেছে। ওর চোখ এড়িয়ে কারও আসার উপায় নেই।
হ্যারি আর শর্টি মাইক, তোমরা আমার সাথে এসো। আমরা ওদের সব খাবার এমন জায়গায় লুকিয়ে রাখব যে ওরা কেউ তা খুঁজে পাবে না। গোলাগুলিও। আমরা এদের এমন অসহায় অবস্থায় ফেলব যে ওরা বুঝতেই পারবে না আঘাতটা কে হেনেছে।
খিলখিল করে হাসতে হাসতে হ্যারি আর শর্টি ওদের খাবার রাখার তাক আর স্টোররূম রেইড করল। টিনের খাবার সহ সব খাবার আর কার্তুজ ওরা পাহাড়ের একটা গর্তে লুকিয়ে রাখল। তারপর ঘোড়ার পিঠে উঠে আবার উত্তর দিকে রওনা হলো ওরা।
এক খসড়া প্ল্যান করে ফেলেছে রনি। ঘোড়াগুলোকে উত্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সম্ভবত ম্যাণ্ডালি স্প্রিংসের দিকে।
দিন শেষ হয়ে আসছে। বাতাসে এখন আর তাপ নেই। ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করেছে। উঁচু জায়গায় বাতাসটা পাতলা। আকাশে মেঘ নেই। খুব দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে আসতে পারে।
রাইড করতে-করতে চিন্তা করছে রনি। ঘোড়াগুলোকে তাড়িয়ে দেয়ায় থ্রী এইচের লোকজনকে এখন পায়ে হেঁটেই চলতে হবে। একটা দুটো ঘোড়া যদি ওরা ধরতেও পারে, কঠিন রাইডিঙের জন্যে ওরা উপযুক্ত থাকবে না।
জনি হিউবার্ট যে কি প্ল্যান করেছে তার একটা আঁচ করতে পারছে রনি। বিকেলের আগেই ঘোড়ার আরও দুটো দল দেখতে পেয়ে ওদের পাহাড়ের দিকে তাড়িয়ে দিল।
ধোয়া! হঠাৎ বলে উঠল রজার। ওটা কি আমাদের র্যাঞ্চের দিক থেকে উঠছে?
তীক্ষ্ণ নজরে কিছুক্ষণ চেয়ে দেখে রনি বলল, মনে হচ্ছে ওরা আমাদের লাইন কেবিনটা জ্বালিয়ে দিয়েছে।
ইশ! গেল, বলল কিড। আমার নতুন শার্টটা ওখানে ছিল।
বাজে কথা, হ্যারি বলল। তোমার বাড়তি শার্ট কোনদিনই ছিল
না।
কী, প্রতিবাদ জানাল কিড। নিশ্চয় ছিল! তুমি কি জানবে? তুমি তো জীবনে কোনদিন বুটের সাথে মোজাই পরোনি।
ওটাই বুট পরার সবথেকে ভাল উপায়, উৎফুল্ল স্বরে বলল হ্যারি।
অনেক ঠাণ্ডা।
হ্যাঁ, তোমার মত কর্নওয়ালা মানুষের জন্যে তাই।
ওদের কথা শুনে সশব্দে হাসল রনি। এটা ওকে পুরানো বার ২০-র কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। রেড কনরস, জনি নেলসন, আর বাকি সবাই।
দিন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। বাতাসটাতে এখন আর তাপ নেই। ঠাণ্ডা। উঁচু এলাকায় বাতাসও পাতলা। দিনের শেষে খুব দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। আকাশে মেঘও নেই।
রাইড করতে করতে রনি ভাবছে ঘোড়াগুলোকে তাড়িয়ে দেয়ায় একটা দুটো ঘোড়া ধরতে পারলেও বেশিরভাগ লোককেই এখন পায়ে হেঁটে ফিরতে হবে।
বিশ্রাম পেলে ওদের ঘোড়াগুলো একটু তাজা হবে বটে, কিন্তু কঠিন রাইডিঙ করতে পারবে না। ওরা জানে না রনি কি প্ল্যান করেছে।
জনি কি করতে চাইছে সে সম্পর্কে রনির একটা আন্দাজ আছে।
রনি যে বার ২০-র দু’জন রাইডারকে আসতে বলেছে এটা ওরা জানে না। ওদের দ্রুত শেষ করে ফেলতে চায় জনি। একএক করে, দু’তিনজন করে। ওদের শেষ করে ফেলবে।
দিনটা প্রায় কেটে গেছে। বাতাসে আর অপ নেই। ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। মরুভূমি এলাকায় এত উঁচুতে খুব দ্রুত সব ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
সবদিক চিন্তা করে রনি মোটামুটি আঁচ করতে পারছে জনির মতলবটা কি। কিন্তু সে জানে না সব কর্মচারীকে সে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছে। লাইন কেবিনে কেউ নেই। সম্পষ্টতই কিছু গলদ হয়েছে। ওর আঁচ যদি ঠিক হয় তবে ওরা উইলো স্ট্রিংস থেকে হয় উত্তরে ম্যাণ্ডালে কিংবা দক্ষিণে পোকার গ্যাপে গেছে। ওরা যদি ম্যাণ্ডালেতে যায় ওখানে ওরা কোন তাজা ঘোড়া পাবে না। র্যাবিষ্ট হোলেও কোন ঘোড়া নেই।
ঠিক আঁচ করতে পেরেছে কিনা তা রনি নিজেও জানে না। এটাও সে জানে না ওদের প্ল্যান মত হেনরির সাথে ওর গ্যাপে যাওয়ার কথা। এটাই যে জনি হিউবার্টের প্ল্যান, এটা সে তার রাইডারদের সাথে আগেই আলাপ করেছে। জনি পুনরায় দেখা না দিলে যে বিপর্যয় ঘটতে পারে এটা সে নিজেই জানে না।
থ্রী এইচ রাইডাররা বিকেলের দিকে ক্লান্ত ঘোড়ার পিঠে পোকার গ্যাপে পৌঁছল। ঘোড়াগুলোকে একটা কানা ক্যানিয়নে রেখে আগুন জ্বেলে সাপার তৈরি করল। পাহাড়ের মাথা থেকে হ্যানকিনস রনি ড্যাশারের অপেক্ষায় ট্রেইলের ওপর নজর রেখেছে। পোকার গ্যাপের দিকে রনির দেখা দেয়ার সময় হয়ে এসেছে। একজন একাকী রাইডারকে আসতে দেখল হ্যানকিনস।
লোকটাকে চিনতে পারল না সে। কারণ এখনও অনেক দূরে রয়েছে সে। ওর পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে। তাই পাহাড় থেকে নেমে সিলভার হিউবার্ট আর জেরি সমার্সকে সে কথাটা জানাল। আঁচ করছে ওই লোকটা হয়তো ভ্যাশার হতে পারে।
মনে হয় লোকটা ঝর্নার ধারে ক্যাম্প করবে। মন্তব্য করল সিলভার। এই অন্ধকারে সে এদিকে আসবে নাএলে মারা পড়বে।
ওর সাথে হেনরির থাকার কথা ছিল না? প্রতিবাদ করল ট্রয়।
হয়তো এমন কিছু ঘটেছে যাতে প্ল্যানটা বদলেছে। কিন্তু যাই হোক, সে আসছে, এটাই বড় কথা। চুপচাপ থাকো, ওকে ক্যাম্প করার সুযোগ দাও। ঝর্নাটা এখান থেকে কত দূরে?
আধ মাইল মত হবে, বলডি বলল। এর বেশি হবে না।
উইলোতে যাদের থাকার কথা ছিল তাদের কি হলো? জানতে চাইল ডাকি। আমরা দেরিতে রওনা হয়েছি, মনে হচ্ছে ড্যাশারের কোন বিশেষ মতলব আছে।
পিছনে হেলান দিয়ে একটা সিগারেট ধরাল জেরি। চুপ করো, ডাকি, তুমি বেশি চিন্তা করো। আমরা সবাই এখানে আছি না? একা ও কি করতে পারবে?
জনি এখানে নেই, বলল বলডি। এটা আমার ঠিক পছন্দ হচ্ছে না।
ওহ, এতক্ষণে সে হয়তো বাড়িতে, বলল সিলভার। সে জানবে। আমরা ট্রেইলে আছি। দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই।
জনি হিউবার্ট তখন কর্ন প্যাচে আগুন জ্বালাতে ব্যস্ত। গরমে ক্লান্ত আর ধুলোময় অবস্থায়, ফোস্কা পায়ে সে পাহাড় থেকে কর্ন প্যাচে ফিরেছে। ঘোড়াটাকে ধরতে পারেনি।
সেলুনে দু’জন মরে পড়ে আছে। ওদের এড়িয়ে তাড়াতাড়ি নিজের জন্যে কিছু খাবার তৈরির দিকে মন দিল সে।
এর মধ্যে ফিনলে হার্টও বিশেষ একটা উদ্দেশ্য নিয়ে পৌঁছল পোকার গ্যাপে। জনি যা বুঝেছে, সেও সেই একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। ওই দিনই সে শুনেছে স্টার সিটির কাছে নাকি জেরি সমার্স একটা মাইনে অনেক সোনা পেয়েছে। চোরাই সোনা পাচার করতে হলে আরেকটা সোনার খনি আবিষ্কার করার চেয়ে ভাল উপায় আর নেই।
সোনা গলিয়ে নতুন বার তৈরি করলে সেটা চেনার কোন উপায় থাকবে না। এই উপায়ে সহজেই নতুন খনির সোনা বলে সোনা পাচার করা যাবে। খনির কথাটা বিল ওয়াটসনই বেশি প্রচার করেছে। সে বুঝেছে সারাদিন আলস্য করে শহরে কাটিয়ে এখন হিউবার্টদের সাথে যোগ দিয়ে সোনা খুঁজে পাওয়ার সময় সে পায়নি? ওর জানা মতে, জেরি স্টার সিটির ধারে কাছেও কখনও যায়নি।
রনির মত সেও বুঝেছে এটা সোনা পাচার করারই একটা ফন্দি। সোনার বার এত সহজে সরানো অসম্ভব। শহরে গুজবটা প্রধানত অ্যাডামই ছড়িয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে যদিও মনে হয় অ্যাডাম আর জেরি সমার্সের সাথে কোন রকম সম্পর্কই নেই, কিন্তু ওদের মধ্যে যে জোরাল একটা গোপন আঁতাত রয়েছে, এবিষয়ে হার্ট নিশ্চিত। এবং খ্রী এইচ আউটফিটটা ওদের হাতের পুতুল। জনি হিউবার্ট একজন ভীষণ বদরাগী মানুষ। ভাবে মনে হয় জেরি সমার্সের তোয়াক্কা সে করে না। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না সহজ হাসি আর সুদর্শন চেহারার আড়ালে অত্যন্ত চতুর একটা মগজ কাজ করছে।
কর্ন প্যাচের ফাইটের পর রাতে জেরি শহরে এসেছিল। অল্প সময়ের জন্যে সে পিছনের গলির দরজা দিয়ে অ্যাডামের অফিসে ঢুকেছিল। ওই দরজাটার ওপর নজর রেখেছিল হার্ট। মুহূর্তে সে বুঝে নিল অ্যাডাম একজন পলিটিশিয়ান এবং প্রথম শ্রেণীর একজন জোচ্চোর। সমার্স শহর ছেড়ে রওনা হলে হার্ট ওকে অনুসরণ করেছিল। ট্রেইলটা পোকার গ্যাপের।
অন্ধকারে এলাকাটা শত্রুর আভাসে যেন জীবন্ত। জনি হিউবার্ট কর্ন প্যাচের রান্নাঘরে খাবার খাচ্ছে। একই সময়ে পোকার গ্যাপ ঝর্নার ধারে ক্যাম্প করল হার্ট। ওকে দেখেই থ্রী এইচের লোকজন ওকে ড্যাশার মনে করেছিল। রনি চারজন রাইডার সহ উত্তরপশ্চিম দিক থেকে এগোচ্ছে। থ্রী এইচের লোকজন যখন অপেক্ষা করছে, জেরি সমার্স ডাকিকে বিড়বিড় করে কিছু বলে ঘোড়া নিয়ে দক্ষিণ পশ্চিমে এগোল।
জেরি সমার্সের পশুর মতই আবহাওয়ার পরিবর্তন টের পাওয়ার শক্তি আছে। পারিপার্শ্বিক মানুষের মনোভাবও তাই জানতে পারে। সে বুঝতে পারছে রনি মারা গেলেও এই এলাকাটা অনেকদিন বিপজ্জনক থাকবে।
ডাকিকে সে পছন্দ করে ওর সাহসিকতার জন্যে। নিজে সে কোন নীতি বা বিবেকহীন মানুষ। একটা জিনিসই এখন চায় সে-প্রথমে সে রকিঙ কে-ও চেয়েছিল কিন্তু এখন সে সোনা ছাড়া আর কিছুই চায় না। এবং সবটা সে একাই নিতে চায়। এটাই স্বাভাবিক যে রনির চেয়ে অ্যাডামকে সামলানো ওর পক্ষে কঠিন হবে, এটা সে বুঝতে পারছে।
একবার থেমে সে পিছন দিকে চাইল। ওকে কেউ অনুসরণ করছে। হিউবার্টরা রনিকে শেষ করতে চাইছে। হয়তো পারবে। কিন্তু ওর কাছে এর বিশেষ কোন দাম নেই। সোনা পাচার করার প্ল্যান ওকে আপাতত বাদ দিতে হবে। ওকে এখন হাইডআউটে গিয়ে দামী যা কিছু আছে তা নিয়ে আসতে হবে। তারপর স্টার সিটিতে গিয়ে সোনা উদ্ধার করতে হবে। কি যে করবে এটা এখনও স্থির করে উঠতে পারছে না সে। আবার নিজের পথ ধরল সে। হিউবার্ট যে রনিকে শেষ করে ফেলতে চাচ্ছে, এতে আসলে তার কিছু আসে যায় না। এই যুদ্ধে যদি হিউবার্টরা জেতে তবে হয়তো সে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু সে কোনরকম অযৌক্তিক হত্যায় অংশ নিতে চায় না। বিশেষ করে রনির মত লোকের। কারণ এতে বার ২০-র সব নোক ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে-বার ২০-র লোকজন সম্পর্কে সে যা শুনেছে, তাতে ওর বাঁচার কোন সম্ভাবনাই থাকবে না। কঠিন লোক ওরা।
থ্রী এইচ থেকে তাজা ঘোড়া ধার নিয়ে রনি ড্যাশার তার লোকজনকে নিয়ে এগিয়ে চলল। উপরে এক ফালি আকাশে কিছু তারা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ওদের সামনে আর পিছনে সবই অন্ধকার। ঘোড়ার খুরের শব্দ, জিনের চামড়া ককানো, আর মাঝে মাঝে ঘোড়ার নাক ঝাড়া ছাড়া আর কোন শব্দ নেই।
রেঞ্জ যুদ্ধে অভিজ্ঞ রনি এত বোকা নয় যে সরাসরি পোকার গ্যাপে ঢুকবে। ঘুরে রকি ক্যানিয়ন পার হয়ে সে গ্যাপে ঢোকার প্ল্যান নিয়েছে। এদিক দিয়ে এলে কেউ ওদের অবস্থান টেরই পাবে না। গ্যাপের কোন প্রহরী ওদিকে খেয়াল করবে না। ঘণ্টাখানেক পরে সে তার নিজস্ব ক্যাম্প করল।
টেরি এগিয়ে গিয়ে এলাকাটা ঘুরে দেখে এল। ফিরে সে রিপোর্ট করল, কাছাকাছি আরও দুটো ক্যাম্প রয়েছে। আমরা উপর থেকে ওদের দিকে নজর রাতে পারি। একটা ক্যাম্প গ্যাপ স্প্রিংসের পাশে, কিন্তু ওই লোকটা আরও একটা আগুন জ্বেলেছে ওর থেকে প্রায় তিরিশ ফুট দূরে।
রনি নিজেই ওটা চেক করে দেখতে গেল। টেরি যা রিপোর্ট করেছে, ঠিক তাই। লোকটা খাবার তৈরির জন্যে কিছুটা দূরে আরও একটা ছোট আশুন জ্বেলেছে। প্রথমটা বড়। কিন্তু ক্যাম্পফায়ারের আগুনে সে নিজেকে দেখা দিতে চায় না। একই সময়ে সে বড় আগুনটার ওপরও নজর রাখতে পারবে।
ওহ, অবাক কাণ্ড, বলল টেরি। সাবধান লোক। কিন্তু লোকটা কে?
অন্য ক্যাম্পটা একটু পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
আগুনটা একটু ছোট। আগুনের আলোয় কয়েকজনের ছায়া দেখা যাচ্ছে। ওই যে, ওরা সবাই রয়েছে! ফিসফিস করে বলল হ্যারি। ওখানে নয় থেকে দশজন লোক আছে!
পরিস্থিতিটা বিচার করে দেখল রনি। লোকগুলো সতর্কতার সাথে ক্যাম্প-সাইট বেছে নিয়েছে। সম্ভবত একাকী লোকটা ওদের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবহিত নয়। ওই লোকগুলোও জানে না আশপাশে আর কারও ক্যাম্প রয়েছে। এই অন্ধকারে কোন ফাইটিং শুরু করলে, সেটা মিত্র আর শত্রু, দুই পক্ষেরই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। রনি এটা চায় না।
রিজের থেকে একটু নেমে পাথরের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে একটা সিগারেট ধরাল ড্যাশার। নিচে ওখানে রয়েছে একগাদা ঝামেলা, বলল সে। এখন কথা হচ্ছে, নিজেরা গুলি না খেয়ে পরিস্থিতিটা কিভাবে সামলানো যায়।
শর্টি মাইক বলল, দু’হাতে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ওদের আক্রমণ করি। ওরা এমন হকচকিয়ে যাবে যে একটা গুলিও ছোড়ার সুযোগ পাবে না।
হয়তো, স্বীকার করল রনি, কিন্তু আমার মাথায় আরেকটা প্ল্যান এসেছে। যদিও সেটা তেমন কিছু নয়, তবু এতে হয়তো কাজ হবে।
নিচু স্বরে প্ল্যানটার ব্যাখ্যা দিল সে। শুনতে শুনতে লোকগুলো খিকখিক করে হাসতে শুরু করল। ওদের চারজনই ফাইট-প্রিয় লোক। রকিঙ K-এর জন্যে শেষ বিন্দু রক্ত দিতেও ওরা কেউ দ্বিধা করবে না। তবে প্রত্যেক কাউহ্যাণ্ডেরই প্র্যাকটিক্যাল জোকের একটা রুক্ষ সেন্স অব হিউমার থাকে। একে ঠিক হাস্যরসের পর্যায়ে ফেলা না গেলেও এটা যে তাদের শত্রুর ওপর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তা ঠিক।
প্রথমে, প্রশ্ন করল রনি, তোমাদের মধ্যে সবথেকে ভাল ইণ্ডিয়ান। কে? আসলে দুজন দরকার।
আমি, লেকার চট করে জবাব দিল। ইউটের সাথে বড় হয়েছি আমি। একটা লঙহর্ন চামড়া আমি চুরি করে আনতে পারি, গরুটা টেরও পাবে না আমি কাছে আছি।
অও! বাধা দিল হ্যারি। ওর কথা বিশ্বাস কোরো না, রনি। দিনের বেলাতেও সে একটা গুদাম খুঁজে পাবে না। গুদামের সাথে দড়ি বাধা থাকলেও না। তাছাড়া ও বেশি ছোট। কিড বেশি বড়াই করছে।
হ্যাহ্! বড়াই আমি মোটেও করছি না, প্রতিবাদ জানাল লেকার।
ঠিক আছে, তোমরা দুজনেই যেতে পারো। ক্লান্ত ঘোড়াগুলোকে নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার নেই। গা যদি ভেজা নাও থাকে ওদের লোম শুকিয়ে শক্ত হয়ে থাকবে। চেনা কঠিন হবে না।
ঘোড়ার লাথি খেয়ে মাথা খুইয়ে এসো না যেন, উপদেশ দিল শটি। অবশ্য তোমাদের দু’জনের মাথায় কি প্রয়োজন সেটাই আমি বুঝি না।
বিড়বিড় করে শর্টির মুণ্ডুপাত করে, ওরা অন্ধকারে অদৃশ্য হলো। টেরি ওদের দিকে নড় করে বলল, আসলে কিড অত্যন্ত পটু ছেলে। হ্যারিও ভাল, তবে লেকারের তুলনায় সে কিছুই না।
রনিকে উঠে দাঁড়াতে দেখে শর্টি প্রশ্ন করল, তুমি আবার কোথায় চললে?
ঘুরে দেখে আসি ওখানে ওই লোকটা কে। তোমরা দুজন এখানেই থাকো। প্রয়োজন হলে কিড আর হ্যারিকে কাভার দেয়ার জন্যে তৈরি থেকো। আমি ফিরে এলে আমরা বাকি ব্যবস্থা নেব।
রনির সামনের ঢালু ঢালটা পাথরে ভরা, ঝোঁপ ঘাসও জন্মেছে। মাঝে মাঝে গ্রীজউড গাছ আর জুনিপার। এগুলো নিচে নামার পথে ওকে কিছুটা আড়াল দিল। অন্ধকারে নিচে নামাটা খুব কঠিন কাজ।
দ্বিতীয় আগুনটা এখন প্রায় নিতে এসেছে। কিন্তু প্রথমটায় আবার কাঠ চাপানো হয়েছে। চক্রাকারে ঘুরে সতর্ক ভাবে আগুনের দিকে এগোল রনি। বারো গজ দূরে থাকতে একটা হালকা খসখস শব্দ ওর কানে এল। আড়ষ্ট হয়ে কান পেতে অপেক্ষা করছে সে। শব্দটা আবার শুনতে পেল! ঘাস কিংবা ঝোঁপের সাথে খসখসে কাপড় ঘষার শব্দ। বাম দিকে আরও একটা শব্দ হলো। বুঝল ওর পাশাপাশি আরও কয়েকজন লোক বুকে হেঁটে আগুনের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু ওরা কি ছোট আগুনটা দেখেছে? মনে হয় না। ওটা কেবল উপর থেকেই দেখা যায়। একটু একটু করে বুকে হাঁটা লোকটার কাছে সরে এল রনি। মুহূর্তের জন্যে তারার আলোয় ওর মাথাটা দেখতে পেয়ে পিস্তল দিয়ে কষে বাড়ি মারল। ঘোৎ করে একটা শব্দ করে ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে থাকল লোকটা।
নীরবতা।
হঠাৎ বুনো একটা চিৎকারে সঙ্কেত পেয়ে লোকগুলো একসাথে ধাওয়া করে আগুনের দিকে ছুটে এগোল। তারপর সবাই থমকে দাঁড়াল। যেটাকে ঘুমন্ত মানুষ মনে করেছিল সেটা দুই সারি পাথরের ওপর একটা কম্বল ছাড়া আর কিছুই নয়। বোকার মত মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে ওরা।
চলে গেছে। একটা গালি দিল হ্যানকিনস। পাজি ড্যাশার আমাদের ফাঁকি দিয়েছে!
অন্ধকারে মনে মনে হাসল রনি। আগুনের আলোয় কয়েকজনকে চিনতে পারল সে। জনি হিউবার্ট, ডাকি, ড্রেনান, হ্যানকিনস, আর রেড!
আরে। ট্রয় কোথায়? চিৎকার করল হ্যানকিনস। ওর কি হলো?
সে কিছুক্ষণ আগেও আমাদের সাথে ছিল। ও করছে কি? লুকিয়েছে?
রনি অন্ধকারে মিশে দ্রুত ঢালের উদ্দেশে রওনা হলো। লোকটা যে কে তা আর জানা হলো না। সে কাছেই কোথাও আছে। পালায়নি। নইলে রনি ওকে দেখতে পেত বা তার আওয়াজ শুনতে পেত। পাহাড়ের মাথায় উঠে হ্যারি আর কিডকে ফিরতে দেখে অবাক হলো।
দু’জনেই হাসি চাপার চেষ্টা করছে।
আমরা ওদের সব ঘোড়াই নিয়ে এসেছি, জানাল হ্যারি। এখন পায়ে হেঁটে ফেরা ছাড়া ওদের উপায় নেই।
জানো, হঠাৎ বলল রনি, আমি জেরিকে দেখলাম না, কিন্তু ওর সাগরেদ ডাকি স্মিথ ওখানে ছিল।
তাহলে ওটা নিশ্চয় জেরিই ঘোড়া ছিল! সামনে ঝুঁকে এল লেকার। একটা ঘোড়া ওখানে কম দেখলাম। ঘোড়া বাঁধার দড়িটা মাটিতে পড়ে আছে।
ও কোথায় যেতে পারে? প্রশ্ন করল টেরি।
রনি ভাবছে লোকটা হয়তো অ্যাডামের সাথে দেখা করতে যেতে পারে। হঠাৎ আর একটা চিন্তা ওর মাথায় এল। সে হাইডআউটে যায়নি
তো? হয়তো সেই ওদের লীডার!
যে লোক সায়মনকে মেরেছে, পিস্তলে তার হাত খুব দ্রুত চলে। জেরির হাতও তাই। মুহূর্তে রনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল তার কি করতে হবে।
হঠাৎ রনি বলল, থ্রী এইচ এখান থেকে তিরিশ মাইলের উপরে। পায়ে হেঁটে ওরা আগামীকাল রাতের আগে র্যাঞ্চে পৌঁছতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তোমাদের বাড়ি ফিরে যাওয়াই ভাল।
আর তুমি? প্রশ্ন করল টেরি।
আমার একটা ছোট্ট কাজ রয়েছে। তোমরা ফিরে যাও। কাল বা পরশু আমি র্যাঞ্চে ফিরব। হাই তুলল সে। আমাদের সবারই এখন ঘুমানো দরকার। কাল সকালে রওনা হলেই চলবে।
ভোর হতেই ওরা রওনা হয়ে গেল। রনি একা পুব দিকে এগোল। সতর্ক ভাবে এগোচ্ছে সে। কারণ সামনে কোথাও একজন গানম্যান আছে, যার পিস্তলে দক্ষতা ড্যাশারের সমান, কিংবা বেশিও হতে পারে।
কিছুদূর এগিয়ে রনি আউটল লোকটার ট্র্যাক দেখতে পেল। নিশ্চিত লোকটা কোথায় যাচ্ছে তা সে জানে।
আরও এগিয়ে আরেকটা ঘোড়ার ট্রাক ওর চোখে পড়ল। ঘোড়ার খুরে নাল নেই। কিন্তু আরোহী কোন ইণ্ডিয়ান নয়।
তাহলে লোকটা কে? ক্যানিয়নের সেই রহস্যময় ক্যাম্পার? একজন বন্ধু, নাকি শত্রু?
১০. সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটেছে
সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটেছে তাতে অ্যাডাম বিচলিত। এতক্ষণে কিছু খবর আসা উচিত ছিল। কয়েকজন রাইডার, যারা শহরে এসেছে, তারা জানিয়েছে রকিঙ কে বা ত্রী এইচ রেঞ্জে কোন কাউহ্যাণ্ডের ছায়া পর্যন্ত ওরা দেখতে পায়নি।
ঘটনাটা অদ্ভুত আর অযৌক্তিক। রেঞ্জ-ওয়ারে কেমন সাংঘাতিক দাঙ্গা হয় এটা সে জানে। এই নীরবতা ওকে অস্থির করে তুলেছে। সায়মন মারা যাওয়ার পর, ওর পকেট সম্পূর্ণ খালি পাওয়া গেছে শুনে, তখন থেকেই সে দুশ্চিন্তায় ভুগছে। যদি খুনী ওগুলো নিয়ে থাকে, আর ওর পকেটে তাকে অভিযুক্ত করার মত কাগজ থাকে, সেটা এখন খুনীর হাতে-এবং অ্যাডাম জানে খুনী কে।
শেষে খবর এল চারজন রাইডার রকিঙ কে-তে ফিরেছে। কিন্তু ওদের সাথে ড্যাশার ছিল না। সে যদি আবার হাইডআউটে যায়? কিংবা স্টার সিটির মাইনে? সে কি প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবে তা কিছুই বলা যায় না। লোকটা যে বোকা নয়, সেটা জেমস হার্টকে যে খুন করা হয়েছে, এটা ধরে ফেলা থেকেই বোঝা যায়।
অ্যাডাম অনুভব করছে ভাগ্য চারপাশ থেকে ওকে যেন ঘিরে ফেলছে। অথচ সবকিছুই এত সুন্দর ভাবে এগোচ্ছিল! অবশ্য আউটফিটের যদি কিছু হয়, ওদের সাথে সমার্সও মারা পড়তে পারে। কিন্তু ওর মন থেকে সংশয় দূর হলো না। লোকটার বেঁচে থাকার ক্ষমতা অসাধারণ। ড্যাকোটা জ্যাকের ভাগ্যে কি ঘটেছিল? নিজের লোকই ওকে গুলি করে মেরে ওর ঘোড়া নিয়ে পালিয়েছিল। জেরি সমার্স নিঃসন্দেহে ভয়ানক।
জন মার্সার বারে অ্যাডামকে পার হওয়ার সময়ে বুড়ো আঙুল ঝাঁকিয়ে হ্যারিংটনকে দেখাল। ও তোমার সাথে কথা বলতে চায়।
অ্যাডাম যখন ওর পাশে এসে দাঁড়াল হ্যারিংটন তখন হাসছে। রুমাল দিয়ে ঘাম মুছল অ্যাডাম। গরম, বলল সে।
হ্যাঁ। বিল হ্যারিংটনের উফুল্ল ভাব। এবং আরও গরম হবে। ওরা হেনরি আর ওয়াটসনকে পেয়েছে–দুজনেই মৃত। মনে হয় ওরা দুজন নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করে মরেছে।
আমার ধারণা ছিল ওরা একসাথেই কাজ করত।
হয়তো। কিন্তু আজকাল মানুষ যে কে কোনদিকে যাবে তা বলা মুশকিল।
কর্ন প্যাচে আর কেউ আছে?
একেবারে খালি।
জনি হিউবার্ট যদি মারা গিয়ে থাকে, তাহলে ফাইট হয়তো এখানেই শেষ।
হঠাৎ ভীষণ ক্লান্ত আর ভীত বোধ করছে অ্যাডাম। ওর সব প্ল্যান ব্যর্থ হয়ে গেল–সম্পূর্ণ ব্যর্থ?
সোনা নিয়ে আরেক দুশ্চিন্তা। ওগুলো স্টার সিটির মাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রেডও নেই যে ওগুলো পাহারা দেবে। বোকার মত জের সাথে ওকে থ্রী এইচে যোগ দেয়ার অনুমতি দিয়েছে সে। ভেবেছিল ওখানে সে সমার্সের ওপর নজর রাখতে পারবে। কিন্তু বিগ গানফাইটার নিজের ইচ্ছামত কোনদিকে গেলে ওকে অনুসরণ করার মত যুক্তিসঙ্গত কোন অছিলাই রেডের থাকবে না। অ্যাডাম ভেবেছিল জেরিকে সে বাগে রাখতে পারবে। কিন্তু এখন ভাবতে গিয়ে মনে পড়ছে, লোকটা তার কথা আপাত সম্প্রমের সাথে শুনলেও সবসময়ে নিজের ইচ্ছে মতই চলেছে। অ্যাডাম তার শুকনো ঠোঁট চাটল।
রাতে যে ওর ভাল ঘুম হয়নি, তার চেহারায় এর স্পষ্ট ছাপ পড়েছে। দরজার কাছে এগিয়ে লিভারি আস্তাবলের দিকে তাকাল সে। শহরে কেউ এলে ওখানেই প্রথম থামে।
কোন খবর না পেলে আমি শান্তি পাচ্ছি না, রাগের সাথে বলল সে। এই নীরবতা আমাকে টেনশনের মধ্যে ফেলে রেখেছে।
চিন্তাযুক্ত ভাবে ওর দিকে চাইল বিল। এর ভিতর তোমার স্বার্থটা কোথায়? তুমি হিউবার্টদের সাথে নেই, এবং আর যাদের ক্ষতি হতে পারে তারা হচ্ছে রাসলার। যদি না, সে সাবধানে যোগ করল, যদি না সেটা স্টেজ ডাকাতি সম্পর্কিত হয়।
তুমি কি ইঙ্গিত করছ ওদের সাথে আমার সম্পর্ক আছে?
তুমি? নিরীহ সুরে প্রশ্ন করল সে। এমন কথা কে ভাবতে পারবে? একটু থেমে আবার বলল, সমার্স? এখন সেটা সম্পূর্ণ আলাদা কথা। ওর কাছে সব সময়েই টাকা থাকে, কিন্তু কোথা কে সে তা পায়, সেটা আমি কখনও বুঝে পাইনি। একটা চুরুট ধরাল সে। আসি, পরে আবার দেখা হবে, অ্যাডাম।
ওর যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে রইল অ্যাডাম, ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসেছে। ওকে এখন থেকে আরও সাবধান থাকতে হবে।
জন মার্সার ওকে লক্ষ করছিল, গোপনে হাসল সে। অ্যাডাম যদি সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়, তাতে ক্ষতির চেয়ে তার লাভই হবে বেশি। রনি ড্যাশার আসার পর থেকেই, নিজে নগণ্য খেলোয়াড় বলে জন মনেমনে ছোট বলে তাকে কেউ খেয়াল করবে না, এবং সে সাধারণত আড়ালেই থাকে। এটাই ওর পছন্দ। নগণ্য হয়েও বেঁচে থাকাটা ওর কাছে অনেক বেশি কাম্য।
জনি হিউবার্ট শেষ পর্যন্ত একটা ঘোড়া ধরতে সক্ষম হলো। জোরে ঘোড়া ছুটিয়ে থ্রী এইচে পৌঁছে খালি করাল আর নীরবতাই কেবল দেখতে পেল। র্যাঞ্চে কোন খাবার বা গোলাগুলি নেই। তার ভাই বা লোকজনের কোন চিহ্নও নেই। দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে দূরবীন নিয়ে কাছেই একটা পাহাড়ের মাথায় উঠে চারপাশ খুঁটিয়ে দেখল। প্রথমে কিছুই দেখতে পায়নি, তারপর দেখল একটা সরু কালো রেখা যেন নড়ছে। হয়তো একটা গরুর দল-ওয়াটারহোলের দিকে যাচ্ছে।
চেষ্টা করেও ওটা কি বা কে বুঝতে পারল না সে। আসলে, ওরা তারই লোকজন। গরমে আর পিপাসায় ওদের ঠোঁট ফেটে গেছে। পুরু ধুলোয় ঢাকা সারা দেহ-মেজাজ চড়া।
দ্রুত চিন্তা করছে জনি। একটা ঘোড়া ওর এখন সব থেকে বেশি প্রয়োজন। কিন্তু র্যাঞ্চে কোন ঘোড়া নেই। ম্যাণ্ডালেই সবচেয়ে কাছে যেখানে ঘোড়া পাওয়া যাবে। সে জানে না যে ওগুলোকেও তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যে মাসট্যাঙটার পিঠে চড়ে সে র্যাঞ্চে ফিরেছে, সেই ক্লান্ত ঘোড়াটার পিঠেই আবার চাপল জনি। হঠাৎ তার মনে পড়ল ম্যানডালের থেকে রকিঙ কে অনেক কাছে। রাইডাররাও সব বাইরে থাকবে।
ঘোড়ার মুখ পশ্চিমে ঘুরাল সে। ম্যাণ্ডালেতে গেলে ওর নিশ্চিত মৃত্যু হত না। যেটাকে সে খালি র্যাঞ্চ মনে করেছিল, সেখানে কেবল দু’জন ভাড়া বাকি সবাই উপস্থিত। শর্টি মাইক সঙ্গীদের ফাঁকি দিয়ে সরে পড়েছিল। এখন সে রনিকে ট্রেইল করছে। ওর সাহায্যের দরকার হতে পারে মনে করে শর্টি পিছু নিয়েছে।
তপ্ত সূর্যের নিচে পুব দিকে যাচ্ছে ড্যাশার, তারপর পক্ষণে ফিরল। দক্ষিণে কতগুলো ছোট টিলার পরেই ট্রিনিটি পর্বত-শ্রেণীর প্রথম উঁচু চূড়াটা দেখা যাচ্ছে। চওড়া হ্যাটের ধারের তলা দিয়ে কঠিন নীল চোখে সে পুরো এলাকাটা সার্চ করে দেখল। প্রথমে কাছে থেকে শুরু করে পরে দূরে-আরও দূরে সবই সে খুঁটিয়ে দেখল। ফোঁটাফেঁটা ঘাম ওর ঘাড় বেয়ে নিচে নামছে। ঘোড়ার প্রতি পদক্ষেপে চিকন ধুলো আকাশে উড়ে টপার আর রনির ওপরই পড়ে স্থির হচ্ছে।
হঠাৎ সায়মনের পকেটে পাওয়া কাগজগুলোর কথা ওর মনে পড়ল। ঘটনার চাপে ওগুলোর কথা সে একেবারেই ভুলে গিয়েছিল। বর্ষাতির পকেট থেকে সব বের করে পরীক্ষা করে দেখল। কয়েকটা চিঠি রয়েছে ওখানে। প্রথম চিঠিটার ঠিকানাঃ সিম সায়মন, মবীটি, টেক্সাস।
চিঠির বক্তব্য:
একশো ডলার পাঠাচ্ছি। পৌঁছলে তুমি আরও চারশো পাবে। বাকি পনেরোশো কাজ শেষ হলে পাবে। জেরি সমার্সের নাম হয়তো তুমি শুনেছ। কেমন করে, কোথায়, এবং কখন সেটা তোমার ওপর। কিন্তু যত শীঘ্র হয় ততই ভাল।
‘এ’
ওই ‘এ’টা হয়তো অ্যাডামের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে জেরি সমার্সকে হত্যা করার জনেই গানম্যানকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। রনির বিশ্বাস অ্যাডাম স্টেজ ডাকাতিতে জেরির সাথে জড়িত। হয় সে ওকে সোনার ভাগ দিতে চায়নি, কিংবা ভেবেছিল সমার্সের বেঁচে থাকা তার জন্যে বিপজ্জনক। সায়মনকে হত্যা করার কারণটা পরিষ্কার হলো। কিন্তু কে কিজন্যে ওকে ডেকে পাঠিয়েছে জেনেও কেন সে অ্যাডামকে মারেনি? এর কারণ একটাই হতে পারে-নিজের স্বার্থেই ওকে ব্যবহার করার জন্যে অ্যাডামকে আরও কিছুদিন বাচিয়ে রাখতে চায় সে।
দ্বিতীয় চিঠিটা শেরিফের অফিস থেকে এসেছে।
চিঠির বক্তব্য:
জেরি সমার্স সম্পর্কে তোমার প্রশ্নের জবাবে বলছি, নামটা আমার কাছে অপরিচিত। কিন্তু ওর বিবরণ বন্ড নব পরিবারের ভাস্কো গ্ৰেহামের সাথে মেলে। দু’জন যদি একই লোক হয় তবে জেনো ভাস্কো একজন নিষ্ঠুর খুনী এবং পিস্তলে ওর হাত ভয়ানক চালু।
বাকি চিঠিগুলো ব্যক্তিগত। তবে ওতে সায়মনের টাকা পাঠাবার একটা ঠিকানা পাওয়া গেল। ওকলাহোমায় ওর মেয়ে থাকে।
এই ভাস্কো গ্ৰেহামই তার পার্টনার ডেকোটা জ্যাককে খুন করে ওর ঘোড়া নিয়ে পালিয়েছিল। এই জন্যেই এলাকাটা জেরির এত পরিচিত।
ছয় মাইল পিছনে রনিকে ট্র্যাক করছে শর্টি। সাধারণত কাজটা কঠিন হওয়ার কথা নয়, কারণ ট্র্যাক লুকাবার কোন চেষ্টা ড্যাশার করেনি। কিন্তু ছোট ছোট ঘূর্ণি-বাতাস (dust devil) মরু-এলাকার ধুলো
উড়িয়ে অনেক জায়গাতেই ট্রাক নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। এগিয়ে চলল শর্টি। সামনের রেঞ্জটা খুঁটিয়ে দেখে সে বোঝার চেষ্টা করছে এদিকে আসার পিছনে তার ফোরম্যানের কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
শক্ত বাদামী রঙের মুখটা মুছে, গরমকে একটা গালি দিল শর্টি। বৃষ্টি হোক মনেমনে এই কামনাই করছে সে। ভেজা আঙুলে সিগারেট তৈরি করে তাতে একটা লম্বা টান দিয়ে, পাহাড়ের ভাঙা অংশটার দিকে এগোল মাইক। কোন একটা বিরাট বিশৃঙ্খলা পাহাড়টাকে ওখানে ভেঙে ফেলেছে, ভাবল সে। একটা শকুন বিরাট চক্কর দিয়ে আকাশে ঘুরছে। কোন তাড়া নেই। ওর অভিজ্ঞতায় সে জানে শেষে সবকিছু তার কাছেই আসে।
ঘোড়াটার সাথে কথা বলল শর্টি। ঘোড়া সামনে এগোল। প্রচণ্ড তাপের হাত থেকে রেহাই পেতে ওটা যেকোন জায়গায় যেতে রাজি। সেভেন পাইনস রেঞ্জের ওপর মেঘ জমেছে। হয়তো শর্টির কামনা পুরো হবে। বৃষ্টি হতে পারে।
ইনডোর স্টেডিয়ামের মত পাথরের দালানটা হয়তো কোন বিলুপ্ত ইণ্ডিয়ান ট্রাইব তৈরি করেছিল। রোদ আড়াল হয়েছে বলে ভিতরটা আরামদায়ক ভাবে ঠাণ্ডা। একটা ভোলা বোতল সামনে নিয়ে টেবিলের ধারে বসে আছে জেরি। লারামির দিকে চেয়ে হাসছে সে।
ডাকির সাথে কথা বলেছ তুমি? লারামি প্রশ্ন করল।
অবশ্যই না। লোকটা ভাল কিন্তু ওর এঞ্জিন একবার চালু হলে সে তোমার বাহু টেনে উপড়ে ফেলবে।
তোমার মনে হয় রেড রিভার রেগানই ড্যাশার?
নিশ্চয়। কিন্তু সে কিভাবে এই হাইডআউট খুঁজে পেল সেটা সত্যিই একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। যতবারই আমি বাইরে যাই এটা আবার খুঁজে বের করতে আমার ঝামেলা হয়।
তোমার ধারণা সে আবার এখানে আসবে?
আসবে। কিন্তু যখন আসবে, ওকে আমরা কবর দেব। ঢোকার পথে গার্ড আছে। ওকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সে যেন ড্যাশারকে ঢুকতে বাধা না দেয়। মুখ তুলে তাকিয়ে ঠাণ্ডা চোখে লারামিকে পরখ করে দেখল জেরি। এটা একটা চরম মোকাবেলা। অ্যাডাম আমাকে হত্যা করার জন্যে সায়মনকে এখানে আনিয়েছিল। জেমস হার্টকেও সে একই কাজে নিয়োগ করার চেষ্টা করেছিল।
জেমস কখনও কাউকে টাকার বিনিময়ে হত্যা করতে পারত না।
অ্যাডাম চেষ্টা করেছিল। আমি ওদের কথা বলতে দেখে জেমসকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিলাম। সে আমাকে স্পষ্ট কোন জবাব দেয়নি। কেবল জিজ্ঞেস করেছিল অ্যাডাম আর আমার মধ্যে কোন রিরোধ আছে কিনা।
ওটাই কি যথেষ্ট? নিশ্চয় তাই। পুরো সোনাই অ্যাডাম চায়। সবটাই।
কাঁধ উঁচাল লারামি। ওকে কখনও আমি বিশ্বাস করিনি।
অল্পক্ষণের মধ্যেই ড্যাশারের ব্যাপারটা মিটবে। এরপর অ্যাডামের সাথে আমি বোঝাপড়া করব। এভাবে সব ফাস না হলে হয়তো ওকে আমরা কাজে লাগাতে পারতাম। কিন্তু এখন আর তা হয় না। সোনা নিয়ে এখান থেকে আমরা সরে পড়ব। তারপর সোনা বিক্রি করে অন্য কোথাও রাজার হালে কাটাব।
জনি হিউবার্টের কি হলো?
বলতে পারি না। ওর ঘোড়াটা কর্ন প্যাচে মরে পড়ে আছে। ওদিকে ওয়াটসন আর হেনরি দু’জনেই গান ডুয়েলে মরেছে। কাঁধ উঁচাল জেরি। ভাবিনি হেনরির ভিতর এতও ছিল।
না। লারামি তার চেয়ারে একটু নড়ে বসল। অন্যমনস্ক হয়ে খালি টেবিল আর বোতলটার দিকে চেয়ে আছে সে। এটাই কি এই সবের পরিণতি? লুকিয়ে থাকা, পালিয়ে বেড়ানো, একটা ভাল মানুষকে ফাঁদে ফেলার জন্য অপেক্ষা করা? মানুষকে এসব ভাবতে বাধ্য করে, সে বলে উঠল হঠাৎ। বিল ওয়াটসন শক্ত লোক ছিল। মানুষের জন্যে সে ছিল আতঙ্ক আর বিভীষিকার কারণ। কিন্তু কি হলো? কুপির মত দপ করে নিভে গেল সে। বিল যদি এত সহজে মরতে পারে, যেকেউ পারে।
নীরবে বসে আছে ওরা। দূর থেকে মেঘের গর্জন ভেসে এল। দুজনেই মুখ তুলে তাকাল। বৃষ্টি! ভালই হলো, পৃথিবীটা এবার ঠাণ্ডা হবে।
সিগারেট ধরাল সমার্স। তারপর আগুনের ধারে গিয়ে ওটাকে উস্কে কিছু কাঠ চাপিয়ে কফি বসাল।
ড্যাশারের ডীলটা কি? আমরা ওকে ভিতরে ঢুকতে দেব? প্রশ্ন করল লারামি।
নিশ্চয়। ওকে আমরা সামনে থেকে আক্রমণ করব, আর পিছনে থাকবে ডাক বেইলি। মাঝখানে খোলা জায়গায় ফাঁদে পড়ে ঝাঁঝরা হয়ে যাবে সে।
বেইলি বাইরে পথটার ওপর নজর রেখেছে বটে, কিন্তু রনি সেই আগের পথ ব্যবহার করে ক্যানিয়নে ঢুকে পড়েছে। বিকেল হয়ে আসছে। সেভেন পাইনসের ওপর স্তরে-স্তরে মেঘ জমে আকাশটা কালো হয়ে আসছে। ক্যানিয়নের নিচে পৌঁছে রনি আর কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। এখন ওর উদ্দেশ্য একটাই–জেমস হার্টের খুনের জন্যে যারা দায়ী তাদের শুটিঙের আওতায় পাওয়া। ওরা আর কি করেছে তা সে মোটেও বিবেচনা করছে না। একজন আহত আর অসহায় মানুষকে ওভাবে খুন করার মত জঘন্য অপরাধ আর দুটো নেই।
দেয়ালের কাছঘেঁষে একটা পাথরের আড়াল থেকে পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করল ড্যাশার। পাথরের দালানটা থেকে ধোঁয়া উঠছে। বুঝল বাইরের দিকের ক্যানিয়নে, যেখানে ট্রেসারের সাথে ফাইট হয়েছিল, কেবল সেখানেই নয়, এখানেও লোক আছে।
এখানে প্রচুর আড়াল রয়েছে। আড়ালকে পুরো কাজে লাগিয়ে ধীরে পাথরের দালানের দিকে এগোল সে। ভিতরের দুজনই দক্ষ পিস্তলবাজ। যেকোনজন হয়তো তার সমকক্ষ হতে পারে। দু’জনে মিলে তারচেয়ে অনেক শক্তিশালী, এতে সন্দেহ নেই। এসব লোকের বিরুদ্ধে ঝুঁকি নেয়া বোকামি। একটা ভুল করলে সেটাই হবে তার শেষ ভুল।
আবার মেঘের গর্জন শোনা গেল, এবার আরও কাছে। শুনে একটু থামল রনি। এতে তার অভিযানে কতটা লাভ বা ক্ষতি হতে পারে তা সতর্ক ভাবে যাচাই করে নিয়ে আবার এগোল।
আধ মাইল দূরে প্রবেশ পথের কাছে গার্ড দেয়া ছেড়ে ফিরে আসার জন্যে রওনা হলো বেইলি। ওদিকটা পুরো কালো হয়ে গেছে। কালো মেঘের ভিতর থেকে উজ্জ্বল রেখায় বাজ পড়ছে। ঝোড়ো মেঘ প্রায় তার মাথার উপর পৌঁছে গেছে। বুঝতে পারছে তাকে ভিজতে হবে। এত উঁচুতে যেকোন সময়ে তার ওপর বাজ পড়তে পারে। দ্রুত নামতে নামতে ক্যানিয়নের পাথরের দালানটার দিকে চেয়ে সে চমকে উঠল।
কে যেন ওটার দেয়াল ঘেঁষে সন্তর্পণে এগোচ্ছে!
কি ঘটেছে বুঝতে পেরে ওর বুকের ভিতরটা ধড়াস করে লাফিয়ে উঠল। ড্যাশার ক্যানিয়নে ঢুকে পড়েছে।
বোঝার সঙ্গে সঙ্গে সে নিচে নামার জন্যে ছুটল। হঠাৎ প্রবেশ পথের মুখে একজন আরোহীকে দেখতে পেল ডাক। লোকটা তারই দিকে চেয়ে আছে। আরোহী শর্টি মাইক। রনির ট্রেইল হারিয়ে সেটার খোঁজে সে হেলে-পড়া পাথরের গোলক-ধাঁধায় ঘুরছিল।
বেইলি ক্যানিয়নের নিচে পৌঁছেই পাথরের দালানটার দিকে ছুটল। এবার ওরা ড্যাশারকে বাগে পেয়েছে। ওর বাঁচার কোন পথ নেই।
পাথরের দালানের দরজা ঠেলে খুলে সে চিৎকার করল, ড্যাশার ভিতরে! হাঁপাতে-হাঁপাতে বলল বেইলি। কি করে ঢুকল জানি না, কিন্তু সে ভিতরে! আমি ওকে দেখেছি!
একটা বাঙ্কে শুয়ে ম্যাগাজিন পড়ছিল লারামি। ওটা নামিয়ে রেখে, উঠে পিস্তলের বেল্টটা পরে নিল সে। বুকের ভিতরটা ধড়াস-ধড়াস করছে-মুখের ভিতরটা শুকিয়ে এসেছে।
ক্ষছছ তাদের পক্ষে হলেও, সে জানে কার বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছে। স্বস্তি বোধ করছে না ও।
রনি গর্তটার পিছনে করালটার কাছে পৌঁছেছে। কোন ঘোড়ার পিঠেই জিন নেই। জেরি সমার্সের হয় আউফিটে ফেরার ইচ্ছে নেই, কিংবা তার ঘোড়াটা আউটার করালে।
পাথরের দালানটা দোতালা। কিন্তু উপরের তালার পুরো সংস্থা করা হয়নি। ক্লিফের ধারেই ওটার পিছনের দেয়াল। কয়েকটা পাইন আর ফার গাছ দালান ঘেঁষেই উঠেছে। আরও তিন-চারটে করালের কাছে।
দালানের ভিতরে ঢোকার সবথেকে সহজ উপায় দোতালার ভাঙ কোনা দিয়ে। দালানটা স্যাওস্টোনের তৈরি। যদি একতালার ছাদটাও পাথরের তৈরি হয় তবে হয়তো নিঃশব্দে নিচের লোকগুলোর অজান্তে সে ওটা পার হতে পারবে।
এখন ক্যানিয়নের উপর চলে এসেছে মেঘ। ভিতরে কেউ একটা তেলের বাতি জ্বালাল। দেয়ালের দিকে এগোতে যাচ্ছে, দেখল সব ক’টা ঘোড়া কান খাড়া করে সদর দরজার দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। ওত পেতে চিলের বাঁটে হাত রেখে তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছে রনি।
একটু নড়াচড়া দেখা গেল। পরক্ষণেই অদৃশ্য হলো। বুঝল আউটার ক্যানিয়ন থেকে কেউ এসে সন্তর্পণে লুকাল। সে জানে এখানে তার কোন বন্ধু নেই। তবে কি ফিনলে হার্ট এই গোপন আজ্ঞা খুঁজে পেয়েছে? সেটার সম্ভাবনা খুব কম। অর্থাৎ লোকটা তার শত্রু। সে জানে রনি এখানে আছে।
দেয়াল ঘুরে পিস্তল হাতে এগিয়ে আসছে ডাক বেইলি। এখনও বেশ দূরে থাকলেও লোকটা রনির দিকেই আসছে। করালের কোনায় ওত পেতে বসে পরিস্থিতিটা নতুন করে বিচার করে দেখল সে। সম্ভবত গোলাগুলি করে এখান থেকে ও নিরাপদেই সরে পড়তে পারবে। কিন্তু একবার যা প্ল্যান করেছে সেটা থেকে সহজে সরে যাওয়া ওর স্বভাব নয়।
ক্লিফের ওপর কিছুটা বেয়ে উঠে লাফিয়ে দালানের ভাঙা কোনাটা ধরে ফেলল রনি। নিজেকে টেনে তুলে একতালার ছাদে সটান শুয়ে পড়ল। বেইলি বা লারামি কেউই ঘনিয়ে আসা অন্ধকারে ওকে দেখতে পায়নি। ওরা দুজন দু’দিক থেকে আসছিল।
লোকটা গেল কোথায়?
অবাক কাণ্ড! সত্যি বলছি, এখানেই আমি ওকে দেখেছি! কোথায় যেতে পারে সে?
কিছুক্ষণ কান পেতে শুনে বুঝল, বাইরে দু’জন লোক কথা বলছে। দেয়াল হাতড়ে এগোল রনি। নিচে থেকে একচিলতে আলো উপরে আসছে। ওদিকে গিয়ে দেখল এvা চোরা দরজার ফাঁক দিয়েই আলোটা আসছে। ফাঁক দিয়ে চেয়ে বুঝ ওনি থেকে কোন সিঁড়ি নিচে নামেনি। অদূরেই একটা গর্ত হয়েছে দেয়ালে। ওখান দিয়ে আলো আসছে। সেইসাথে নিচে থেকে মৃদু কথাবার্তার শব্দ শোনা যাচ্ছে।
জেরি সমার্স কথা বলছিল। ওখানে নেই? মনে হচ্ছে ডাক নার্ভাস হয়ে উল্টো-পাল্টা দেখছে।
যাক, সে এই জায়গাটা চেনে। সন্দেহ নেই আমার খোঁজে ও আসবে। ওটা কি?
কোনটা?
মনে হলো কি যেন একটা শুনলাম।
লারামি উঠে দাঁড়াল। ওই দরজা ছাড়া এখানে ঢোকার আর কোন পথ আছে?
আমার জানামতে নেই। তবে ওই চোরা দরজার পাশে দেয়ালে একটা গর্ত আছে। কেউ যদি ছাদে ওঠে-
দুজনেই একসাথ ওদিকে ফিরল। অন্ধকারে চৌকাঠের আড়ালে রনি দাঁড়িয়ে আছে ডান হাতটা কনুইয়ের কাছে একটু বাঁকা হয়ে তৈরি।
সাহস হারিয়ে আতঙ্কিত বোধ করছে জেরি। এই লোকটা তাকে হত্যা করার জন্যেই এখানে এসেছে। তার জটিল আর সুষ্ঠু প্ল্যান এড়িয়ে সে ভিতরে ঢুকে পড়েছে। নিচু স্বরে একটা চিৎকার করে পিস্তলের দিকে হাত বাড়াল জেরি।
রনির বাঁকা হাতটা বিদ্যুৎ বেগে সক্রিয় হলো। ওর পিস্তলের মুখে আগুন দেখা গেল। সমার্স পিস্তল উঁচানোর পথেই মাথার পাশে একটা প্রচণ্ড আঘাতে সে মেঝের ওপর পড়ল। ওর বুলেটটা ছাদে লাগল।
লারামির পিস্তলটা লাফিয়ে হাতে উঠে এসেছে। ওর গুলিটা চৌকাঠে বিধল। পাল্টা গুলি করল ড্যাশার।
তারপর দোতালার মেঝেটা দুলে উঠল। একটা দেয়ালে ফাটল ধরল। পরক্ষণেই মেঝেটা ধসে পড়ল। বাইরে থেকে ভয়ের একটা বুনো চিৎকার শোনা গেল। রনি লাফিয়ে দরজার দিকে এগোল। বাইরে বেরিয়ে লম্বা একটা বিজলির আলোয় দেখল করাতের দাঁতের মত পাহাড়গুলো পরস্পারের দিকে সরে আসছে। পাথরের সাথে পাথর ঘষা খেয়ে ভয়ঙ্কর আওয়াজ করছে। পরিচিত বেরোবার পথের দিকে ছুটল সে।
পর মুহূর্তে একজন আরোহী ঘোড়া ছুটিয়ে এসে রনির সামনে আড়াআড়ি ভাবে থেমে দাড়াল। পিস্তল উঁচাল। বিজলি চমকাল, ড্যাশার দেখল লোকটা হার্ট।
ফিনলে! সে চিৎকার করল। আমি ড্যাশার! জলদি এখান থেকে বেরিয়ে পড়ো! পথটা যেকোন সময়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে!
ঘোড়াটাকে কাছে নিয়ে এল হার্ট। ওঠো! চেঁচিয়ে বলল সে। আমার পিছনে!
বিধ্বস্ত দালান থেকে ছুটে খোলা জায়গায় বেরিয়ে এল লারামি। রনিকে ঘোড়ার পিঠে উঠতে দেখে পিছলে থেমে দাঁড়িয়ে পিস্তল তুলল। ফিনলে হার্টের লম্বা ব্যারেলের পিস্তলটা উঠে এসেছে ওর হাতে। প্রায় একই সাথে গর্জে উঠল দুটোই। লারামি এক-পা পিছিয়ে আধ-পাক ঘুরে শক্ত মাটির ওপর আছড়ে পড়ল।
পরক্ষণেই বেরোবার মুখটার দিকে ঘোড়া ছুটাল হার্ট। সামনে একজন আরোহীকে আসতে দেখা গেল। রনি? শটি মাইক হাঁকল।
বেরিয়ে পড়ো! চিৎকার করে নির্দেশ দিল ড্যাশার। জলদি!
জোর বৃষ্টি নেমেছে। ভূমিকম্প এখনও থামেনি। সাময়িক বিরতির পর এক বন্ধনে পর আবার চারপাশ কেঁপে উঠল। বড় বড় পাথর গড়িয়ে পড়ল নিচে–কিন্তু ততক্ষণে ওরা খোলা জায়গায় বেরিয়ে এসেছে।
ঘোড়া ঘোরাও, সুপারিশ করল রনি। রিজের অন্যপাশে আমার ঘোড়াটা জুনিপারের সাথে বাঁধা আছে।
জেরি কি শেষ? হঠাৎ প্রশ্ন করল হার্ট।
মনে হয়। ভূমিকম্পটা সব ওলটপালট করে দিল। আমার গুলিতে সে আছড়ে মেঝের ওপর পড়ার সাথে সাথে লারামি আমার দিকে গুলি চালাল।
ওকে আমি খতম করেছি-ডেড সেন্টার। তোমার ভাইকে সমার্সই খুন করেছিল। আঁচ করেছিলাম। সে অথবা অ্যাডাম। অ্যাডামও এর সাথে জড়িত আছে।
আমার ধারণা, জবাব দিল ফিনলে, সোনার চালান কখন যাচ্ছে, খবরটা অ্যাডামই ওদের জানাত। তবে এব্যাপারে আমি নিশ্চিত না।
তোমার সাহায্য ছাড়া ওই জায়গা খুঁজে পাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল, হঠাৎ বলে উঠল হার্ট। পোকার গ্যাপ থেকে জেরিকে ট্র্যাক করছিলাম আমি, কিন্তু ওর ট্রেইল হারালাম। পরে তোমার ট্র্যাক দেখতে পেয়ে অনুসরণ করলাম। সেটাও হারালাম। নিরুপায় হয়ে তুমি যেদিকে গেছ মনে হলো, অনুমান করে সেদিকে এগিয়ে আবার জেরির ট্র্যাক দেখতে পেলাম।
টপারের পিঠে চড়ে ট্রেইল ধরল রনি। বাকি দুজনও ওর পাশাপাশি চলল।
ওদের পিছনে পাথরের টুকরো ভরা মেঝের ওপর একজন রক্তাক্ত মানুষ, ককিয়ে উঠে নড়ার চেষ্টা করল। গড়িয়ে টেবিলের তলায় চলে যাওয়ায় ধসে পড়া ছাদের পাথরের নিচে সে থেঁতলে যায়নি। কানের কিছুটা উপরে একটা গভীর রক্তাক্ত খাজ। বিদ্যুৎ চমকাল। লারামির লাশটা বাইরে পড়ে আছে দেখতে পেল সে। যে এসব কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাকে সে খুন করবে।
১১. হ্যারিই প্রথম
হ্যারিই প্রথম জনি হিউবার্টকে দেখতে পেল। কয়েক মাইল দূরে থাকতেই সে একক আরোহীকে দেখতে পেয়েছে। ভেবেছিল ওটা হয়তো মাইক বা ড্যাশার হবে। আরোহীকে চিনতে পেরে টিলার ওপর থেকে ছুটে নামতে গিয়ে প্রায় পা ভাঙার জোগাড় করল। টেরি আর কিড লেকার বাঙ্কহাউসের সামনে অলস ভাবে সময় কাটাচ্ছে। রনির নির্দেশ অনুযায়ী আজ আর রেঞ্জে যায়নি কেউ।
পাহারা ছেড়ে হ্যারিকে টিলা থেকে ছুটে নামতে দেখে বেন কেসি ঘর ছেড়ে বাইরে বিরিয়ে এল। ওর সাথে ডক্টর হ্যাডলে, শেলী আর লিসাও বাইরে বেরোল।
ব্যাপার কি হ্যারি? প্রশ্ন করল বেন।
হিউবার্ট হাঁপাচ্ছে হ্যারি। দু’মিনিটের মধ্যেই এখানে পৌঁছে যাবে।
হয়তো সে আপোষ করতে চায়, বলল বেন। তারপর রাইডারদের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে সে আবার বলল, যা বলার, আমি বলব।
বস, আপত্তি জানাল কিড, হয়তো সে আমার খোঁজে এসেছে। ওকে আমার হাতে ছেড়ে দাও।
না। বেন কেসির স্বরে কতৃত্বের ছাপ। আমি নিজেই এটা হ্যাণ্ড করব।
প্রচণ্ড রাগে জনির সারা শরীর জ্বলছে। ওর লোকজনের কি হয়েছে তার কিছুই সে জানে না। রাগের মার্থায় এখন সে কেয়ারও করে না। সূর্যের তাপে চোখের কিনারাগুলো লাল হয়ে উঠেছে। ধুলোর পাতলা পরতের নিচে মুখটা হিংস্র। রকিঙ কের লোকজনই যে তার র্যাঞ্চ থেকে খাবার, গোলা-বারুদ আর ঘোড়া সরিয়েছে, এতে তার মনে কোন সন্দেহ নেই। রাগে ফুসতে-ফুঁসতে রকিঙ কের রাঞ্চে এসে পৌঁছল হিউবার্ট।
আশা করেছিল র্যাঞ্চটা জনশূন্য থাকবে। কিংবা বড়জোর বেন আর তার বোন দুটো থাকতে পারে। ওরা তাকে বাধা দিতে সাহস পাবে না। কিন্তু দেখল উঠানে টেরি, হ্যারি, স্টি লেকার রয়েছে-বাঙ্কহাউসের দরজায় রজারকে দেখা যাচ্ছে। ওদের থেকে অল্প দূরেই রয়েছে দুটো মেয়ে, ডাক্তার আর বেন কেসি। কেসি ওর দিকে এক-পা এগিয়ে এল।
হাওডি, জনি? স্পষ্ট স্বরে বলল সে। ঘোড়া থেকে নামো। নিশ্চয়। সন্ধি করতে এসেছ তুমি?
ওর কথায় ষাঁড়ের সামনে লাল কাপড় নাড়ার মতই প্রতিক্রিয়া হলো। সন্ধি? তোমার হাড়ের সবক’টা সন্ধি আমি ছুটিয়ে দেব ইডিআ্যাট!
স্থির দাঁড়িয়ে আছে বেন। চেহারাটা সংযত, গম্ভীর। কেসি আগে কখনও এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করেনি। ঠোঁট চাটল টেরি। সে এখানকার সবথেকে পুরানো কর্মচারী। মনে মনে সে জানে বস্ এটা সামলাতে পারবে না। এগিয়ে গিয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে ফাইটটা নিজের কাঁধে তুলে নিতে তার খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু তাতে কেসির তীক্ষ্ণ অহঙ্কার বোধ ক্ষুণ্ণ হবে-এটা সে মোটেও পছন্দ করবে না। র্যাঞ্চের সবাই একই কথা ভাবছে জেনে সে ফিসফিস করে বলল, এগিও না। এটা ওর ফাইট।
বেন শান্ত স্বরে বলল, হিউবার্ট, বোকামি কোরো না। আমরা আগেও বলেছি আমাদের দুজনের পাশাপাশি থাকার মত যথেষ্ট রেঞ্জ এখানে রয়েছে। কেবল তুমি বুজের ওপারে থাকলেই আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ হবে না। বাবা মারা গেছে বলেই ভেব না তোমরা আমাদের ওপর চড়াও হতে পারবে।
শান্তিপূর্ণ অবস্থায় বাস করা ছাড়া তোমার আর কোন পথ নেই। তোমার লোকজন এখন হেঁটে মরুভূমি পার হচ্ছে। খাবার আর পানির অভাবে ওদের এখন খুব খারাপ অবস্থা। তোমার র্যাঞ্চে কোন ঘোড়া নেই–অন্য স্টেশনগুলোতেও নেই। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমরা কর্ন প্যাচে গিয়ে সব জ্বালিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে আসব।
এটাই আমার শেষ কথা। তুমি এখনই শান্তিচুক্তি করে পাহাড়ের ওপাশে থাকতে পারো, নইলে আমরা গিয়ে থ্রী এইচ পুড়িয়ে দেব। তারপর তোমার রাইডারদের পায়ে হেঁটেই দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য। করব–সাথে তোমাকেও!
এত দ্রুত ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল হিউবার্ট যে প্রায় পড়েই যাচ্ছিল। বেনের মুখোমুখি হলো সে। তার আগে তোমাকে আমি জাহান্নামে পাঠিয়ে ছাড়ব! গর্জে উঠল জনি।
আমি দুঃখিত, হিউবার্ট। বেন এখনও শান্ত। তুমি যদি ওই পথই বেছে নিতে চাও, তবে তাই হোক।
কোন যুক্তিই হিউবার্ট মানবে না। জীবনে কখনও সে পরাজয় স্বীকার করেনি। ওর চোখে এখন খুনের নেশা। পিস্তল বের করার জন্যে ঝট করে হাত নামাল সে।
টেরির কাছে দৃশ্যটা কচ্ছপ-গতিতে এগোচ্ছে। মানস চোখে বেনের নিশ্চিত মৃত্যু দেখতে পাচ্ছে সে। দেখল, জনির হাতে পিস্তল উঠে এল–ঠিক ফাস্ট ড্র বলা যায় না, তবে কেসির থেকে অনেক দ্রুত। বেনও পিস্তল বের করেছে। একটা তীক্ষ্ণ গুলির আওয়াজ শুনতে পেল টেরি। আশ্চর্য! যুবক র্যাঞ্চার এখনও দাড়িয়ে!
ধীরে পিস্তল উঁচিয়ে লক্ষ্য স্থির করছে বেন। টারগেট প্র্যাকটিসের ভঙ্গিতে কাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিউবার্ট আবার গুলি করল, এবং আবার। এবার বেন কেসি গুলি করল।
জনির হাঁটু ধীরে ভাঁজ হয়ে মাটি ছুঁলো। তারপর মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ল সে। উপস্থিত সবাই বুঝছে লোকটা মারা গেছে। ফেকাসে মুখে ধীরে পিস্তল নামাল কেসি।
টেরি, নিচু স্বরে বলল সে, তোমরা সবাই মিলে ওর লাশটা আপাতত গুদামে নিয়ে রাখো। ওদের আউটফিটের কেউ যদি আজ রাতের মধ্যে ওর দেহটা দাবি না করে, আমরা সকালে ওকে কবর দেব। ডাক্তারের দিকে ফিরল সে। হ্যাডলে, তোমার ব্যাগটা বের করো। মনে হচ্ছে আমি গুলি খেয়েছি।
রনি আর শর্টি সেভেন পাইনস শহরে পৌঁছল। আঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। ওরা দুজনেই ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত। লিভারি আস্তাবলে ঘোড়া রেখে রাস্তা ধরে ওরা এগোল। হার্ট ওদের অনেক পিছনে-মুখটা কঠোর।
কী একটা দেশ! তেতো স্বরে বলল শর্টি। হয় রোদে পুড়ে যাচ্ছে, নয়তো বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে!
হোক বৃষ্টি! জবাব দিল রনি। খাবার তো এত রাতে কোথাও পাওয়া যাবে না, আমার কেবল একটা বিছানা আর কম্বল হলেই চলবে।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে হ্যাট আর প্লাসটিকের বর্ষাতি থেকে পানি ঝেড়ে সেলুনের হোটেলে ঢুকল ওরা। লবিতে টিমটিম করে একটা বাতি জ্বলছে। সাড়া পেয়ে ঘুমে কাতর কেরানি তার দরজা খুলে গলা বাড়াল। স্থিরদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল, সাত নম্বর। নিজেই র্যাক থেকে চাবিটা নিয়ে নাও। আমি শুয়ে পড়ছি!
দরজা টেনে দিলেও বিছানায় গেল না সে। এক মিনিট চিন্তা করে তাড়াতাড়ি প্যান্ট পরে নিল। তারপর তাড়াতাড়ি আ্যাডামের কামরার দিকে এগোল।
একঘণ্টা আগে বিছানায় গেলেও ঘুমায়নি অ্যাডাম। অনেক কিছুই ঘটছে, কিন্তু কোন খবর সে পাচ্ছে না। দরজার ওপর মৃদু টোকার শব্দ ওর কানে এল। বালিশের তলা থেকে পিস্তলটা বের করে কান পেতে রইল। আবার টোকা পড়ল। কে? নিচু স্বরে প্রশ্ন করল সে।
আমি-জেরেমি! তোমার জন্যে খবর আছে!
বিছানা ছেড়ে নেমে দরজা খুলে দিল অ্যাডাম। জেরেমি ঢুকতেই আবার বন্ধ করল।
ভাবলাম তোমার জানা দরকার। রনি ড্যাশার এখন শহরে! ওর সাথে শর্টি মাইকও এসেছে। মাত্র কয়েক মিনিট আগেই পৌঁছেছে। ওদের আমি সাত নম্বর কামরাটা দিয়েছি।
ড্যাশার? কিছু বলল সে? কোন খবর?
একটা কথাও না। দুজনেই ক্লান্ত, কিন্তু ওদের গায়ে একটা আঁচড়ও লাগেনি।
ঠিক আছে, ঘুমোতে যাও। কাল সকালে একটু ঘুরেফিরে খবর নেয়ার চেষ্টা কোরো কি ঘটছে।
ভোরবেলা থেকেই খবর আসতে শুরু করল। জনি হিউবার্ট মারা গেছে। এবং সে মারা পড়েছে বেন কেসির হাতে! তিনটে গুলি করেছিল হিউবার্ট। বেন, মাত্র একটা!
হিউবার্টের রাইডাররা ফাঁদে পড়ে পায়ে হেঁটে অ্যালকেলি বেসিন পার হচ্ছে। ওদের সব ঘোড়া তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঘণ্টাখানেক পর আরও দু’জন লোক শহরে পৌঁছল।
হ্যানকিনস আর ড্রেনান দল ছেড়ে ভিন্ন পথ ধরেছিল। অল্পক্ষণ পরেই ওদের কপাল ফিরে গেল। থ্রী এইচের কিছু ঘোড়া দেখতে পেল ওরা। একটা ছোট শাখা ক্যানিয়নে ঘোড়াগুলো ঘাস খাচ্ছিল। সুখকর পরিবেশে দলের সাথে ওদের বিচ্ছেদ হয়নি বলে ঘোড়া নিয়ে দলের কাছে ফিরে যাওয়ার কোন প্রয়োজন বোধ করেনি ওরা। ঘোড়ার খালি পিঠে উঠে সোজা সেভেন পাইনসের দিকে রওনা হয়েছে!
মুখে ফোস্কা পড়েছে পায়ের অবস্থা কাহিল। এই অবস্থায় এদের একটাই ইচ্ছে, থ্রী এইচ থেকে দুরে থাকতে চায় ওরা।
রনি ড্যাশার দ্বিতীয় কাপ কফি নিয়ে বসেছে, এই সময়ে হ্যানকিনস আর ড্রিনান প্রায় টলতে টলতে মলির রেস্টুরেন্টে ঢুকল। ঠাণ্ডা নীল চোখে ওদের যাচাই করে দেখল সে।
এখানকার কফি ভালে। কিন্তু তোমরা নাস্তা চাও, নাকি ঝামেলা?
হ্যানকিনস ক্ষুব্ধ চোখে চেয়ে থাকল। ড্রিনান মুখ খুলল। নাস্তা আর গোসলের পর দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাই। তুমি কি বলল, রনি?
শর্টির হাত দুটো পিস্তলের ব্যাটের কাছে। অপেক্ষা করছে। তুমি ওর সাথে একমত? হ্যানকিনসকে প্রশ্ন করল রনি।
বেজার মুখে মাথা ঝাঁকাল হ্যানকিনস। ওই দিনই পরের দিকে শহর ছেড়ে চলে গেল ওরা। সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই কর্ন প্যাঁচ পুড়িয়ে দেয়া হলো। জনি হিউবার্টকে ওর ভাইয়ের পাশেই কবর দেয়া হলো। রেঞ্জটা এখন শান্ত। কেন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।
থ্রী টি এল-এর মরিসন যে রনির পথ চেয়ে আছে, এটা সে জানে। তবু যে কেন ও এখানেই থাকছে, তা সে নিজেও জানে না। রেড শহরে ফিরে গেছে। অ্যাডামের পাশেই ওকে সর্বক্ষণ দেখা যায়। কেউ ডাকি স্মিথকে ইউনিয়নভিলে দেখেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু সে যে শহর ছেড়ে কোথায় উধাও হয়েছে তা কেউ জানে না।
গত দশ দিন যাবৎ একটা অদ্ভুত অনুভূতি রনির মনে অস্বস্তি জাগাচ্ছে। র্যাঞ্চের বারান্দায় বসে সবদিক বিচার করে সে এর কারণটা বুঝল। জেরিকে সে পড়তে দেখেছে বটে, কিন্তু নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবে না লোকটা মরেছে। সমার্স বেঁচে থাকতে এই এলাকায় শান্তি কখনও ফিরে আসবে না। সুতরাং যা-ই ঘটুক না কেন, হাইডআউটে গিয়ে তাকে নিজেই দেখে আসতে হবে।
অল্পক্ষণ আগেই হাইডআউটে পৌঁছেছে ড্যাশার। রকস্লাইড-যেপথে রনি কানিয়নে ঢুকেছিল সেটা আগের মতই আছে। কিন্তু করাতের দাঁতের মত পাহাড়গুলো আর আগের জায়গায় নেই, লক্ষ করল সে। ক্যানিয়নের দুটো অংশেই প্রাণের কোন সাড়া নেই। চারদিক নিঝুম। ক্যানিয়নের তলায় পাথর পড়ে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। পাথরের দালানটার কেবল দুটো দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে। দুটোতেই ফাটল ধরেছে। বাকিটা পুরোই ধ্বংস হয়েছে। জেরি জীবিত থাকলেও সে ক্যানিয়নে নেই। করালে একটা ঘোড়াও নেই। দালানের পাথরের স্কৃপের ভিতর রনি কোন লাশ খুঁজে পেল না–তবে রক্তের দাগ ওখানে রয়েছে। তারপর করালের কাছে একটা কবর দেখতে পেল।
লারামি
১৮৮১
বুট পরেই মরেছে সে
একটা কবর! জেরি সমার্স বেঁচে আছে! দ্রুত দ্বিতীয় আস্তানাটার দিকে এগোল রনি। তাড়াহুড়ো করে ওটা ছেড়ে চলে যাওয়ার সব চিহ্নই রয়েছে ওখানে। টপারের দিকে এক নজর চেয়ে দেখল ঘোড়াটা কান খাড়া করে বুনো চোখে এদিকওদিক দেখছে। রনিও একবার চারপাশে দেখল। হঠাৎ জমিটা একটু কেঁপে উঠল।
ছুটে এসে এক লাফে ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসল সে। পুরোদমে প্রবেশ পথের দিকে ছুটল টপারকে নিয়ে। ঘোড়ার পায়ের নিচে মাটিটা যেন ককাচ্ছে। পাথরের সাথে পাথর প্রচণ্ড চাপের সাথে ঘষা খাওয়ার আতঙ্ক-জাগানো শব্দ তুলে দক্ষিণের পাহাড়গুলো আরও-আরও উঁচু হয়ে আকাশের দিকে উঠছে। বেরোবার ফাঁকটা এখন আরও সরু হয়েছে। ঘোড়াটাকে নিয়ে লাফিয়ে ফাঁক গলে বেরিয়ে এল রনি। ভূমিকম্পের জের এখানেও সুস্পষ্ট। লম্বা সরু ফাটলগুলো মরুভূমির মধ্যে যতদূর দেখা যায় এগিয়ে গেছে। র্যাঞ্চে ফেরার পথ ধরল রনি।
জেরি সমার্স বেঁচে আছে। তাই যদি হয়, কোথায় আছে সে? কর্ন প্যাচে আগুন ধরিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। থ্রী এইচে যোগ দিয়ে থাকতে পারে সে। কিন্তু তার সম্ভাবনা কম। জেরি সমার্স হচ্ছে লীডার-অন্যের আদেশ মেনে চলা ওর ধাতে সইবে না।
মরুভূমিতে জেরি ট্র্যাক খোজা অর্থহীন। জেরির মত আউটলকে ট্র্যাক করতে হলে মাথা খাটিয়ে করতে হবে। ইউনিয়নভিলে সে যাবে, কারণ ওখানে সে পরিচিত। রনির বিশ্বাস, জেরি চাইবে ওর শত্রুরা সে মারা গেছে মনে করে নিশ্চিন্ত থাকুক।
রাত হয়ে আসছে। এতক্ষণে রনি অনুভব করল সে ক্লান্ত। টপার যেভাবে চলছে, তাতে বুঝতে পারছে ঘোড়াটাও তাই। বাটির মত একটা বড় গর্তে কিছু কটনউড গাছ দেখে ওদিকেই এগোল রনি। ওখানে পানি থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। ওর ধারণা ভুল নয়। চুয়ে পড়া পানিতে মাঝখানে একটা ছোট্ট পুকুর মত হয়েছে। একপাশে ম্যানজানিটার ঘন ঝোঁপ। উপড়ে পড়া একটা বিশাল গাছের পাশে ক্যাম্প করল। ছোট্ট একটা আগুন জ্বেলে কফি চাপাল সে।
কফি ঢালছে, এই সময়ে পাথরের ওপর ঘোড়ার খুরের ক্লিক্লিক শব্দ ওর কানে এল। কাপটা নামিয়ে রেখে গাছের গুড়ির মোটা দিকটার আড়ালে চলে গেল–হাতে রাইফেল। অনেকক্ষণ সব চুপচাপ। গরম কফি ভরা কাপটার দিকে সতৃষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল রনি। আসার আর সময় পেল না লোকটা!
একটা উপায় ওর মাথায় খেলল। খুব সতর্কতার সাথে কাপের হাতলটার সাথে রাইফেলের মাথায় বসানো নিশানা করার কাঁটায় বাধিয়ে ধীরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে এল। কপাল ভাল, কাপ থেকে চলকে খুব কমই পড়ল। তৃপ্তির সাথে কফি শেষ করল রনি। আসুক ওরা, এখন সে তৈরি।
আবার একটা ক্লিক শোনা গেল–আরও কাছে। লোকটা যে-ই হোক, খুব সাবধানে এগোচ্ছে। নিচু হয়ে আকাশের দিকে চাইল সে–কোন তারা আড়াল হয় কিনা খেয়াল করছে। কিন্তু তা হলো না। মৃদু কথাবার্তার আওয়াজ রনির কানে এল। মাথা কাত করে কান পেতে শোনার চেষ্টা করল। যখন বুঝতে পারল, হেসে গুঁড়ি ঘুরে ঘাসের ভিতর দিয়ে বুকে হেঁটে এগোল। যখন আকাশের পটভূমিতে ওদের চওড়া হ্যাটগুলো দেখতে পেল; সে উঁচুস্বরে বলে উঠল, তোমরা যদি ক্যাম্পের দিকে এগোলে নিজেদের আগে থেকেই ঘোষণা করো, তাহলে এভাবে ধরা পড়তে হবে না।
বাধ্য ছেলের মত ঝোঁপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল শর্টি আর হ্যারি। হ্যারি বলল, ভাবলাম তোমার হয়তো সঙ্গ ভাল লাগবে। তাছাড়া এদিকে যখন এলামই মনে করলাম তোমাকে কিছু খবরও দিয়ে যাই।
কি খবর? ডক হ্যাডলে আর মিস শেলী শীঘ্রি বিয়ে করতে যাচ্ছে।
পুরানো খবর। আমি আগেই শুনেছি, বলল রনি।
আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে থ্রী এইচে। বলডি আর সিলভারের মধ্যে কিছু গরম কথা কাটাকাটি চলছিল, এই সময়ে ওই কয়েটি ট্রয়, বলডিকে পিছন থেকে গুলি করে বসেছে। ডক হ্যাডলের ধারণা বলডি হয়তো বেঁচেও যেতে পারে–কিন্তু এর কোন নিশ্চয়তা নেই।
ওই আউটফিটটা নিজেদের মধ্যেই মারপিট করে–অন্যের সাথে মিলেমিশে চলবে কিভাবে? মন্তব্য করল রনি। এসো, ক্যাম্পে চলো-কফি তৈরি।
কফিতে চুমুক দিয়ে লারামির কবর খুঁজে পাওয়ার কথা জানাল রনি। আরও বলল, তার বিশ্বাস জেরি সমার্স বেঁচে আছে।
সেটা আমরা শুনেছি। ফিনলে হার্ট ওর ঘোড়ার ছাপ দেখতে পেয়েছে। সাথে আরও একজন আছে–সম্ভবত বেইলি। ওদের কিছুদূর অনুসরণ করার পর হার্ট ট্র্যাক হারিয়ে ফেলেছে।
ওরা কোন দিকে যেতে পারে বলে মনে করছ? হ্যারি জানতে চাইল।
বলা যায় না। হয়তো স্টার সিটির সেই মাইনে।
এখন কি করবে? প্রশ্ন করল শর্টি। তুমি কি জেরির পিছু নেবে?
সম্ভবত। একটা সিগারেট রোল করল রনি। তবে হতে পারে ওর যথেষ্ট হয়েছে। লোকটা দেশ ছেড়ে চলেও যেতে পারে। চলে গেলে ওকে আর ধাওয়া করব না। আর থ্রী এইচের বেলায়, আশা করি ওরা আর ঝামেলা করবে না। এড়াতে পারলে বেন হাঙ্গামা চায় না। আমারও একই মত।
শর্টিকে একটু মনমরা দেখাচ্ছে। ইশ! একটা ভাল ফাইটের চান্স মিস হয়ে গেল!
স্টার সিটিতে খুব উন্নত মানের আকর পাওয়া গিয়েছিল। ওটা দু’বছর টিকেছিল, তারপর ফুরিয়ে গেল। মাইনাররা করার কিছু না পেয়ে কেউ কেউ ইউনিয়নভিলে, আর অন্য লোকজন বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ল। ছাপড়াগুলো রয়েই গেল।
ফেকাসে মুখে, আধমরা অবস্থায় জেরিকে নিয়ে স্টার সিটিতে পৌঁছল বেইলি। সবথেকে ভাল অবস্থায় যেটা আছে, সেই ছাপরাতেই আশ্রয় নিল ওরা। গুলির জখমের সেবায় বেইলির বিস্তর অভিজ্ঞতা আছে। কানের পাশে মাথার চামড়া হাড় পর্যন্ত চিরে গেছে। খুলিতেও একটা প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে। কিন্তু পাথর পড়ে দেহের জখমগুলোই বেশি মারাত্মক হয়েছে, কারণ পুরো দেহ টেবিলের তলায় ঢুকাতে পারেনি সে। যখন আহত জেরিকে মোটামুটি নিরাপদে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব, তখন ডাকির সাথে যোগাযোগ করে ওকে স্টার সিটিতে নিয়ে এল।
পুরো সাতদিন যমের সাগ্নে লড়ল জেরি। বেইলি আর ডক বেনটন ওকে সাহায্য করল। ইউনিয়নভিল শহর থেকে ডাক্তারকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে এসেছে ডাকি স্মিথ। প্রাক্তন আর্মি স্যারন বেনটন এখন মদে ডুবে থাকলেও ডাক্তারি ভুলে যায়নি। শেষ পর্যন্ত ওকে যখন ইউনিয়নভিলের সেলুনে ফিরিয়ে দিয়ে আসা হলো, জেরি তখন দ্রুত সেরে উঠছে। সুস্থ হচ্ছে বটে, কিন্তু যত সারছে ততই মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে উঠছে ওর। শেষে এটা আরও বাড়ল।
মেঝের ওপর পায়চারি করে বেড়াচ্ছে জেরি। সরু, ফেকাসে মুখ। চাপা একটা রাগে ফুসছে। বেইলি উদ্বিগ্ন চোখে ওকে লক্ষ করছে-ধীর প্রকৃতির ডাকিও আশঙ্কিত। ড্যাশারের কাছে হেরে যাওয়াই কি এর কারণ? নাকি এটা মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাওয়ার ফল–বোঝা যাচ্ছে না। তবে এটা ঠিক যে এখন ওর আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে। সহজ হাসির আচ্ছাদনটা অদৃশ্য হয়েছে, কেবল রয়েছে একটা খুনী-ভাল কিছুই আর ওর মধ্যে অবশিষ্ট নেই।
আমার মতে, প্রস্তাব দিল ডাক বেইলি, আমাদের আপাতত এখান থেকে সরে যাওয়াই ভাল। ড্যাশার যতদিন আছে, এখানে কারও কিছু করার উপায় নেই। পরে অ্যাডামকে আমরা দেখে নেব।
যাওয়ার কথা ভুলে যাও! ঝট করে বেইলির দিকে ফিরল জেরি। ওর চেহারাটা ভীষণ হয়ে উঠেছে। ড্যাশার আর অ্যাডাম না মরা পর্যন্ত আমরা এদেশ ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না! ওই সোনাও আমি চাই, কিন্তু তারচেয়ে বেশি চাই রনিকে!
বস, আপত্তি তুলল ডাক, পুরো দেশটাই এখন আমাদের বিরুদ্ধে। এখানে থাকলে আমাদের জীবন্ত ফেরার কোন আশা নেই। বাড়িয়ে বলছি না। এখন আমরা সরে পড়তে পারব। ওরা জানে না তুমি বেঁচে আছ, কি মরেছ। কিন্তু বিশ্বাস করো, ওরা সন্দিগ্ধ হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
ড্যাশার, বলে চলল সে, এলাকাটা চষে বেড়াচ্ছে তোমার খোঁজে। ফিনলে হার্টও তাই করছে। রিজের মাথায় বসে দূরবীন দিয়ে আমি দেখেছি তোমার ট্রেইল ধরেই সে এগোচ্ছিল, পরে হারিয়ে ফেলল। কিন্তু বারবার মুখ তুলে সে এই পাহাড়গুলোর দিকে তাকাচ্ছিল। মনে হলো এদিকটা ভাল করে খুঁজে দেখার ইচ্ছা ওর আছে। আমি তোমাকে বলছি জেরি, হার্ট ক্ষান্ত হওয়ার পাত্র নয়।
বিদ্বেষে জ্বলছে জেরির চোখ। কি ব্যাপার ডাক, ভয় পাচ্ছ? তোমার কাছ থেকে এটা আমি আশা করিনি!
দরজার দিকে এগিয়ে গেল সমার্স। ওখানে হঠাৎ ঘুরে নিচু স্বরে সে বলল, কেউ আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না। বুঝেছ? কেউ না!
বেরিয়ে গেল জেরি। ওর পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। ফেকাসে মুখে ডাকি স্মিথের দিকে তাকাল ডাক। অনেক বদলে গেছে ও, মন্তব্য করল সে।
নীরস মুখে মাথা ঝাকলি ডাকি। এখানে থাকার কোন মানে হয় না, ডাক! কোন মানেই নেই! ওই হার্ট লোকটা ব্লাডহাউণ্ডের মত–একবার ট্রেইল ধরলে সহজে ছাড়বে না। লারামিকে মেরেছে সে। আর ড্যাশারের মোকাবিলা করার চেয়ে বাঘের আস্তানায় ঢুকে চান্স নেয়া অনেক ভাল। ভূমিকম্পটা না হলে জেরিকে আজ আর বেঁচে থাকতে হত না।
আমরা তাহলে কি করব? প্রশ্ন করল ডাক।
জবাব না দিয়ে স্মিথ বিড়ালের মত নিঃশব্দ পায়ে জানালার কাছে সরে গিয়ে বাইরে উঁকি দিল। তারপর বসল। কি করব? উঁচু গলায় বলল সে। আমি বসের সাথেই থাকব। আর কি করব? এখন, ড্যাশারকে কি করে শেষ করা যায় সেটাই ভাবতে হবে!
ডাক চট করে স্মিথের দিকে তাকাল, তারপর জানালার দিকে একবার চেয়ে নড় করল। হ্যাঁ, বলল সে, ওকে মারাই হবে আমাদের প্রথম কাজ। পরে অ্যাডামকে শেষ করে সোনা ছিনিয়ে নিতে হবে।
হঠাৎ কামরায় ঢুকল জেরি। চাপা রাগের সাথে প্রথমে বেইলি, পরে ডাকির দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকাল সে। জেরি যে দূরে সরে গিয়ে আবার নিঃশব্দে ওদের কথাবার্তা শোনার জন্যে ফিরে এসেছিল, এটা ওরা দুজনেই বুঝতে পারছে। পায়চারির সাথে বিড়বিড় করছে সমার্স।
থেমে স্থির দৃষ্টিতে বেইলি আর ডাকির দিকে তাকাল সে। চোখে অনিষ্টকর আর অশুভ ইঙ্গিত। কিন্তু তার পিছনে আরও কিছু রয়েছে-বেইলি ওটা প্রথমবারের মত দেখল, এবং চিনে শিউরে উঠল। জেরি সমার্স বদ্ধ-পাগল।
১২. রনি শহরে ঢুকল
এক সপ্তাহ পর রনি শহরে ঢুকল ওর সাথে রয়েছে হ্যারি আর শর্টি। স্টার সিটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে ওরা কিছুই পায়নি। ডকি আর বেইলিকে বেশ কিছুদিন কেউ দেখেনি।
অ্যাডামকে কখনও একা দেখা যায় না। রেড সবসময়েই ওর পাশে রয়েছে। ওর হলুদ-কালো চোখ দুটো সর্বক্ষণ ঘুরছে। জানালা, দরজা আর গলির ওপর চোখ রাখছে সে। অ্যাডাম অনেক শুকিয়েছে। ওর ফোলা গালগুলো এখন চুপসে গালের উপরকার হাড় বেরিয়ে এসেছে। ভিড়ের ভিতর ওকে আর সেলুনে দেখা যায় না।
ফিনলে হার্ট শহরে ফিরে এসেছিল। কিছু সাঃ ই নিয়ে মলির আপত্তি সত্ত্বেও আবার বেরিয়ে পড়েছে। লোকটা স্বীকার করেছে এখন পর্যন্ত সে কিছু খুঁজে পায়নি কিন্তু এখন সে সসবে কাজ করছে। পুরো এলাকাটাকে ভাগ করে নিয়ে, প্রত্যেvটা অংশ ভাল করে খুঁজে দেখছে।
রনির সাথে ফিনলের লিভারি আস্তাবলে দেখা হয়েছিল। সেও মাত্র ঢুকেছে আর ফিনলে তখন বেরোচ্ছে। কোন ট্র্যাক দেখতে পেলে, হার্ট?
কাঁধ উঁচাল সে। সম্প্রতি পাইনি। তবে সে বেঁচে আছে। আমার অনুভূতি তাই বলছে।
হ্যাঁ। খড়ের একটা গাটের ওপর বসে সিগারেট ধরাল রনি। ওকে খুঁজে বের করতে হলে তোমাকে মাথা খাটাতে হবে। চাক্ষুষ ট্রেইল নয়-বুদ্ধি খাটিয়ে ওর পিছু নিতে হবে।
ওতে আমি কখনও ভাল ছিলাম না, হার্ট বলল। ট্রেইলের চিহ্ন আমি আর দশজনের মতই পড়তে পারি–কিন্তু ওই পর্যন্তই। চিন্তিত মুখে রনির দিকে তাকাল সে। ও এখন কি করবে বলে তোমার ধারণা?
বলা কঠিন, স্বীকার করল রনি। কিন্তু যদি ধরে নিই ডাক আর ডাকি ওর সাথেই আছে, তাহলে ওরা তিনজন। ওদের খাবার, পানি, গোলা-বারুদ, আর নিরাপদে লুকানোর মত একটা জায়গা দরকার।
ওরা সেভেন পাইনএ নেই এটা নিশ্চিত। এর উত্তরে পুরোটাই রকিঙ কে রেঞ্জ। ওখানে লুকোবার কোন জায়গা নেই। কর্ন প্যাঁচ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
ইউনিয়নভিলে ওর অনেক শত্রু আছে, তাই ওখানে সে যাবে না। পোকার গ্যাপ দিনের বেলায় একেবারে খোলামেলা। তাহলে বাকি কি রইল?
বেশি না, ভুরু কুঁচকে স্বীকার করল হার্ট। একটা শব্দে সে ঘুরে দেখল হ্যারি আর শর্টি ধুলোর ওপর ম্যাপ এঁকে মনোযোগ দিয়ে দেখছে।
ফিনলে? প্রশ্ন করল শর্টি, স্টার সিটিতে হাই কার্ড মাইনের ওদিকে তুমি গেছিলে? আগে থেকে না জানলে ওটা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
ওটা কোথায়?
শর্টি ম্যাপের ওপর আঙুল দিয়ে দেখাল। ক্যানিয়নের গভীরে–এখানে।
না, স্বীকার করল ফিনলে। ওট মিস করেছি। পানি আছে ওখানে?
হ্যাঁ। বেশি ভাল না, তবু পানি,
গম্ভীর ভাবে মাথা ঝাঁকাল হার্ট। আমি তাহলে ওদিকেই রওনা হচ্ছি। রনির দিকে ফিরে সে প্রশ্ন করল, তুমি আসতে চাও?
মাথা নাড়ল ড্যাশার। আমাকে র্যাঞ্চে বেনের সাথে দেখা করতে হবে।
ফিনলে রওনা হয়ে গেল। গলা ভেজাতে সেলুনে ঢুকল ওরা। টেবিলে ড্রিঙ্ক নিয়ে বসে চারদিকে চোখ রেখেছে। অফিসের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে অ্যাডাম। রেড ওর দিকে এগিয়ে কি যেন রিপোর্ট করল। দু’জনেই কিছুক্ষণ উত্তেজিত কথাবার্তার পর বাইরে জানালার নিচে দাঁড়িয়ে মাটি পরীক্ষা করে দেখে ভিতরে এসে অফিসে ঢুকল।
নিজের ড্রিঙ্কটা চট করে শেষ করে উঠে দাঁড়াল ড্যাশার। ওরা কেন এত উত্তেজিত, এটা ওর জানা দরকার। বেরিয়ে জানালার তলায় এসে পঁড়াল সে। ট্রাকগুলো পরিষ্কার। জানালার নিচে দাড়িয়ে ছোট বুট পরা কেউ যে জানালা জোর করে খোলার চেষ্টা করেছিল। জানালার কাঠ আর ধারের দাগ দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু খুলতে পারেনি।
জেরি সমার্স শহরে এসেছিল!
সেলুন রাত দুটো পর্যন্ত খোলা থাকে। সুতরাং চেষ্টাটা তোর-রাতে হয়েছে। তাহলে কোথায় গেছে সে? আর সেলুনেই বা কেন ঢুকতে চেয়েছিল?
আস্তাবলে নিজের ঘোড়ার জিনের ওপর হাত রেখে রনি ভাবছে। একটা চিন্তা ওর মাথায় এল। জেগারের স্টোরের দিকে চেয়ে তার মনে হলো জেগার হয়তো কিছু শুনে থাকতে পারে। লোকটা স্টোরেই ঘুমায়, আর হাইগ্রেড সেলুন থেকে স্টোরের দূরত্ব মাত্র কয়েক ফুট। আস্তাবল ছেড়ে স্টোরের দিকে এগোল সে।
ওকে ঢুকতে দেখে জেগার এগিয়ে এল। কিছু চাই তোমার?
হ্যাঁ। কিছু .৪৪ গুলি। দুই বাক্স দাও। লোকটা গুলি বের করতে কাউন্টারের পিছনে গল। ঘুরেফিরে দেখছে ড্যাশার। পুরোপুরি একটা ওয়েস্টার্ন স্টোর। মাঝের কাউন্টারে পুরুষ আর মহিলাদের নানা ধরনের পোশাক। দেয়াল ঘেঁষে তিনটে দেয়াল জুড়ে ছাদ পর্যন্ত তাক। রেঞ্জে যত রকম জিনিস মানুষের দরকার হতে পারে সবই আছে ওখানে সাথে রকমারি খাবারও।
গুলির বাক্স দুটো রনির সামনে কাউন্টারের ওপর রাখল জেগার। ওর দিকে তাকাল ড্যাশার। ওই ঠাণ্ডা চোখ দুটো দিয়ে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছে দোকানি। তুমি তো এখানেই ঘুমাও, তাই না? আলাপের ছলে প্রশ্ন করল রনি।
আড়ষ্ট হলো জেগার। হ্যাঁ। আর কিছু চাই তোমার? না চাইলে আমি যাই, আমার কাজ আছে।
কাজ একটু পরে করলেও চলবে। রনির চোখ দুটো একটু কঠিন হলো। গত রাতে বিছানায় যাওয়ার পর কিছু শুনতে পেয়েছিলে? এই ধরো, দুটোর পরে?
কি শুনব? পাল্টা প্রশ্ন করল সে। একটু অস্থির। রাত দুটোয় হাই গ্রেড সেলুন বন্ধ হয়। এরপর শহরটা কবরের মত হয়ে যায় তিরিশ মিনিটের মধ্যেই।
স্টোরের ভিতর আবার চোখ বুলিয়ে এক বাক্স বাটালির ওপর ওর চোখ পড়ল। এগিয়ে একটা হাতে তুলে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখল। এই রকমই কিছু জানালা খোলার চেষ্টায় ব্যবহার করা হয়েছিল। চওড়াতেও জানালার দাগের সাথে মেলে। হঠাৎ চোখ তুলে চেয়ে জেগারের চোখে ভয়ের চিহ্ন দেখতে পেল। এই রকম বাটালি কি ইদানীং বিক্রি করেছ। তুমি?
না…করেছি বলে মনে পড়ছে না। জেগারের কথা বেধে যাচ্ছে।
গত রাতে একটা বেচেছ? কিংবা তোমার থেকে জোর করে কেউ নিয়েছে?
না! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল দোকানি। গত রাতে আমার দোকান বন্ধ ছিল। বেশ আগেই বন্ধ করেছিলাম আমি! যদি করতাম, তাহলে কি তোমাকে বলতাম না?
হয়তো বলতে, কিংবা নাও বলতে পারতে। যদি করে থাকো তাহলে বলে ফেলাই ভাল।
কিছুক্ষণ নীরব থাকল জেগার। ওর চোখ দুটো সরু হলো, চোয়াল শক্ত হয়েছে। বিরক্ত স্বরে সে বলল, যদি করেও থাকি, সেটা আমার ব্যাপার-তোমার কি? আর কিছু কেনার না থাকলে এবার তুমি যাও আমার কাজ আছে।
জেগার–বুক কেঁপে ওঠার মত ঠাণ্ডা রনির স্বর–আমি তোমার শত্রু নই। সম্পর্কটা ওই রকম রাখাই তোমার জন্যে ভাল হবে। এখন থেকে রকি কে আর মাইনগুলোই হবে তোমার সব থেকে বড় খদ্দের-যেমন আগে ছিল। হিউবার্টরা এখন আর বড়-মুখে কথা বলবে না। জেরি সমার্সের দিনও ফুরিয়েছে। মননস্থির করে নাও তুমি কোন দলে থাকতে চাও।
এবং গুলি খেয়ে মরি? খেকিয়ে উঠল জেগার।
হয়তো। কিন্তু সৎ মানুষকে মাঝেমাঝে এমন ঝুঁকি নিতে হয়। তোমার কাছে গত রাতে যদি কেউ এসে থাকে, তুমি না বললেও সেটা আমি জানতে পারব। আর, যদি সৎ মানুষদের দলে যোগ না দাও, তবে দোকান বন্ধ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবো।
ইতস্তত করছে জেগার। চোখ দুটো কুৎসিত হয়ে উঠেছে। ঠিক আছে, তেতো স্বরে বলল সে। গতরাতে জেরি এখানে এসেছিল। আমাকে জাগিয়ে একটা নতুন রাইফেল আর গুলি কিনেছে সে। তারপর একটা বাটালি তুলে নিয়ে আমাকে বলল, নিজের ভাল বুঝলে আমি যেন মুখ বন্ধ করে রাখি। বাটালি দিয়ে কিছুক্ষণ সেলুনের জানালা খোলার চেষ্টা করল, কিন্তু পেরেক দিয়ে আটকানো থাকায় ওটা খুলল না। রাস্তা দিয়ে কিছু আরোহী এসে পড়ায় ওকে বাধ্য হয়ে সরে পড়তে হলো।
ওকি একাই ছিল? না, ওর সাথে আরও দু’জন ছিল। ওদের একজন ডাকি। আর কি নিয়েছে সে?
খাবার জিনিসপত্র–অনেক খাবার! রনির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল দোকানি। তোমার আর কিছু জানার আছে?
এখান থেকে বেরিয়ে সে কোথায় গেছে?
তা আমি কিভাবে জানব? রাগের সাথে বলল জেগার। ও কোথায় গেছে তা জানি না, জানতে চাইও না। আমাকে নির্বিঘ্নে থাকতে দিলে ও যা করে করুক, আমি কেয়ার করি না।
স্টোর থেকে বেরিয়ে বর্তমান সমস্যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মলির রেস্টুরেন্টের দিকে এগোল রনি। জেরি যে অ্যাকশনের জন্যে তৈরি হচ্ছে, এটা ওর কেনাকাটার বহর দেখেই বোঝা যায়। লোকটা দেশ ছেড়ে পালাবার পাত্র নয়। পরাজয় যন্ত্রণাদায়ক, এবং দেশ ছেড়ে যেতে ছোট হলেও একটা জিত ওর চাই। অবশ্য সে আদৌ যাবে কিনা সন্দেহ।
লোকটার সেলুনে ঢোকার চেষ্টা দেখে বোঝা যায় অ্যাডামের সাথে তার সম্পর্ক ভাল নয়। তাছাড়া অ্যাডাম ওকে খুন করবার চেষ্টা করেছিল। অ্যাডামের দুশ্চিন্তায় শুকিয়ে যাওয়ার কারণটাও এখন পরিষ্কার। যাহোক, জেরির এখন যা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে একটা নতুন হাইডআউট।
মলির রেস্টুরেন্টের দরজা ঠেলে ঢুকেই দেখল, ভিতরে সিলভার হিউবার্ট বসে আছে। কিন্তু ওর হাবভাবে সে ঝামেলা চায় মনে হলো না।
কঠিন চেহারার লোকটা ওকে ঢুকতে দেখে নড় করল। হাওডি, ড্যাশার! এসো, বসো।
ধীর পায়ে এগিয়ে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল রনি। কি ব্যাপার, সিলভার?
বিশাল লোকটা একটু ইতস্তত করল, তারপর মুখ তুলে চাইল। ওর চেহারা নতি স্বীকার করার লজ্জায় একটু লাল হয়ে উঠেছে। তোমার জন্যেই আমি এখানে অপেক্ষা করছিলাম। আসলে এসব বড়াই করার পর কথাটা নিজের মুখে উচ্চারণ করতে বাধে ড্যাশার। শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলল সে, আমি শান্তি চাই। বিবাদ আমি আর চাচ্ছি না।
অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কথা, সায় দিল রনি। ঝামেলা আমিও চাই না।
হিউবার্ট আশ্বস্ত হলো। কেসিরও কি একই মত?
নিশ্চয়! সে তো প্রথম থেকে শান্তিই চেয়েছিল।
তা ঠিক। ভুলটা আমাদেরই। জনিই আমাদের উস্কে এর মধ্যে ঢুকিয়েছিল। অবশ্য আমি ওকে দোষ দিচ্ছি না। আমি নিজেও কোন অংশে ভাল ছিলাম না। আমরা ভেবেছিলাম বুড়ো কেসি মরে যাওয়ার পর বেন হাল ছেড়ে দেবে। ওর ভিতরে যে লড়ার সাহস আছে, এটা আমরা বুঝতে পারিনি। আমরা ঝামেলা চেয়েছিলাম–পেয়েছি। যা চেয়েছিলাম তারচেয়ে বেশিই পেয়েছি।
আর তোমার আউটফিট? বিশেষ করে ট্রয়। ওই লোকটা খুব খারাপ, সিলভার।
হ্যাঁ। সিলভারের ঠোঁট দুটো এঁটে বসল। ওকে নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না, রনি। সে আর এতে জড়াতে আসবে না। একটু ইতস্তত করল সে, তারপর বলল, আমি এমন কিছু না। জেল খেটেছি, মানুষও মেরেছি। কিন্তু বলডি আর আমি যখন ঝগড়া করছিলাম, তার মধ্যে নাক গলিয়ে বলডিকে পিছন থেকে গুলি করা…এটা অসহ্য।
শেষে কি ঘটল?
আমি ওকে দুটো পথের একটা বেছে নেয়ার সুযোগ দিলাম। বললাম, হয় দেশ ছাড়ো, নইলে পিস্তল বের করো। খুব খেপেছিল সে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে ঘোড়ায় জিন চাপাল। তারপর হঠাৎ পিস্তল বের করল। হয়তো ভেবেছিল আমি পিছন ফিরেছি। আমি ওকে লক্ষ করছিলাম এবং–যাক, সে হেরে গেল।
ঠিক আছে, সংক্ষেপে বলল রনি। কেসির সাথে আমি এই বিষয়ে আলাপ করেছি। তোমাদের গরু রুর পুবে চরবে–এবং পশ্চিমে। কিন্তু তোমাকে মানতে হবে ওরা রকিঙ কে রেঞ্জে আছে। একটা জিনিসই আমরা অপছন্দ করি সেটা হচ্ছে, কেউ যদি আমাদের ঠেলে সরিয়ে জবর-দখল করতে চায়। এখানে আমাদের সবার জন্যেই যথেষ্ট পানি আর ঘাস রয়েছে। পরিষ্কার?
আশ্বস্ত হলো সিলভার। নিশ্চয়। এটা আমাদের জন্যে খুব ন্যায্য ব্যবস্থা হয়েছে। চেয়ার পিছনে ঠেলে উঠে পড়ল সে।
রনি তাকিয়ে ওর যাওয়া দেখল। একটা সমস্যার ভাল সমাধান হলো। কিন্তু জেরি সমার্সের সমস্যাটা রয়ে গেল, এবং ওটাই গুরুতর। লোকটা যে ভয়ানক, সেটা অ্যাডামের চেহারা দেখলেই বোঝা যায়।
কাপ হাতে উঠে রান্নাঘর থেকে ওটা আবার ভরে নিয়ে বিল হ্যারিংটনের পাশে এসে দাঁড়াল সে।
মাইনের মালিক মুখ তুলে চাইল। হাওডি, রনি। বসো।
হা। কফিতে একটা চুমুক দিয়ে কাপটা টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখল সে। গতরাতে জেরি সমার্স শহরে এসেছিল।
বিস্ময়ে হ্যারিংটনের চোখ দুটো বড় হয়ে গেল। শহরে? এখানে?
হ্যাঁ, তাই। তুমি এখানকার এলাকা সব ভাল করে চেনো?
নিশ্চয়। পুরো ছেলেবেলা আমি এখানেই কাটিয়েছি। বড় হয়ে পুবে পড়তে গেছিলাম। কিছু ঘোরাঘুরির পর আবার এখানেই ফিরেছি। কিন্তু কেন বলো তো?
জেরি যতদিন আশপাশে আছে, এখানকার কেউই নিরাপদ নয়।
হার্ট ওকে খুঁজে বের করবে।
সময়ে, কিন্তু হাতে সময় খুব কম। অ্যাডাম এখন নিজের ছায়া দেখেও ভয়ে লাফিয়ে উঠতে শুরু করেছে। রেড এমনভাবে হাঁটে মনে হয় যেন ডিমের খোসার ওপর হাঁটছে। আমি জানতে চাই, একটা লোক এখানে কোথায় লুকোতে পারে? ওর কাছে খাবার আছে, গোলা বারুদও আছে, কিন্তু ওর পানির প্রয়োজন হবে। সাথে এমন একটা জায়গা যেখানে হঠাৎ করে কারও ওকে দেখে ফেলার সম্ভাবনা নেই। আমার ধারণা এখান থেকে সে খুব একটা দূরে নেই।
বেশির ভাগ ওয়াটার হোল তো তুমি নিজেই চেনো। হ্যারিংটন হাত দিয়ে নিজের চোয়াল ঘষছে। জেরি জীবিত, আর কাছেই কোথাও আছে শুনে সে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। তার টাকার প্রয়োজন, এবং সোনার একটা বড় চালান পাঠাবার কথা ভাবছে সে। উত্তরে আর দক্ষিণে লুকোবার মত কোন জায়গা নেই। পুবের এলাকাটা তুমি চেনো, পোড়া কর্ন প্যাঁচ, ইউনিয়নভিল, আর স্টার সিটি।
স্টার সিটিতে সে ছিল, বলল রনি। কিন্তু ওটা ছেড়ে সে কাছে কোথাও আশ্রয় নিয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। মনে হয় একটা আঘাত হানার মতলব আঁটছে সে। আচ্ছা, পশ্চিমে কি আছে?
সমস্যাটা মনেমনে ভেবে দেখল হ্যারিংটন। সোজা পশ্চিমে আছে জমাট বাধা লাভা সোত। কিন্তু ওর ওপরে হাঁটা খুব ঝুঁকির কাজ। ওই পাথরে বেশ কিছু বুদ্বুদ আছে, যেগুলোর ওপরটা খুবই পাতলা। ভুল করে ওগুলোর একটার ওপর পা ফেললে নিচে পড়ে নিশ্চিত মৃত্যু। দেয়াল এত মসৃণ যে বাইরের সাহায্য ছাড়া কারও বেরিয়ে আসা অসম্ভব। তাছাড়া ওই পাথরগুলো খুরের মত ধারাল। বুট পরে হাঁটলেও ফালি-ফালি করে কেটে অল্পক্ষণের মধ্যেই শেষ করে ফেলে।
পানি নেই?
হ্যাঁ, ওটার ধারে পানি আছে। পুবে, সামান্য উত্তর ঘেঁষে একটা ঝর্না আছে। লাভার কিনার ধরে এগোলে ওটা মিস করার উপায় নেই। জানা মতে লাভার ভিতরে কিছুই নেই। লাভা স্রোতটা দশ মাইল লম্বা, আর দুই থেকে তিন মাইল চওড়া। কিছু উঁচু পাহাড়ও আছে ভিতরে।
হ্যারিংটন চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতিটা নিয়ে ভাবছে রনি। যতই ভাবছে, লাভা স্রোতের ভিতরেই জেরি আশ্রয় নিয়েছে বলে তার মনে হচ্ছে। বাইরে বেরিয়ে পানি সংগ্রহ করা কঠিন কাজ নয়। তাছাড়া হয়তো ভিতরেও পানি থাকতে পারে।
পরদিন সকালে মলির রেস্টুরেন্টে ঢুকে রনি দেখল ফিনলে ভিতরে বসে কফি খাচ্ছে।
শর্টি ঠিকই বলেছিল, বলল সে। ওরা হাই কার্ড মাইনেই ছিল। কিন্তু কয়েকদিন আগে ওটা ছেড়ে আর কোথাও গেছে।
কাছে এগিয়ে চেয়ার টেনে বসল রনি। আমার মাথায় একটা আইডিয়া খেলছে। শুনতে চাও?
নিশ্চয়। আমার মাথায় আর কিছুই আসছে না।
কফির কাপ ভরে দেয়ার সময়ে মলির দিকে চেয়ে হাসল ফিনলে। মনে হয় এখানে থাকার সময় আমার ফুরিয়ে আসছে, বলল সে। তুমি পাহাড়ে বাস করার কথা কখনও ভেবেছ, মলি?
বাস করার জন্যে ওটাও ভাল জায়গা, সায় দিল মলি। আমি অনেক জায়গার কথাই ভেবেছি।
এই অভিযান থেকে ফিরে এসে আমি বাড়ির পথ ধরব। হয়তো আমাকে একাই ফিরতে হবে, হয়তো না।
দাঁত বের করে হেসে কফির কাপ তুলল রনি। আড়চোখে দেখল, মলি ওর দিকে সন্দিগ্ধ চোখে চেয়ে আছে। চোখ টিপল রনি, তারপর মন্তব্য করল, পাহাড়ে কারও একা থাকা ঠিক না। বেশিদিন তো নয়ই। মানুষের সঙ্গ দরকার।
তোমরা দুজনে কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছ? হাসি চেপে জানতে চাইল মলি। ধাঁধার ভাষায় কথা বলছ। রান্নাঘরের দিকে রওনা হয়ে একটু ইতস্তত করল সে। তারপর বলল, কারও যদি পাহাড়ে বাস করার ইচ্ছে থাকে, তবে তার তাড়াতাড়ি সব ব্যবস্থা করা দরকার। বেশি অপেক্ষা করলে ফল শুভ হয় না।
১৩. রান্নাঘর থেকে ডিম ভাজার শব্দ
রান্নাঘর থেকে ডিম ভাজার শব্দ ভেসে আসছে। হার্টকে খুঁটিয়ে দেখছে রনি। খোঁচাখোঁচা দাড়ির আড়ালে ওর চেহারাটা সুশ্রী। জামা-কাপড় ব্যবহারে কিছুট জীর্ণ হলেও পরিষ্কার। জুটিটা ভালই মিলবে।
হ্যাঁ, তোমার আইডিয়ার কথা কি যেন বলছিলে? জানতে চাইল ফিনলে।
নিজের ধারণার কথা ওকে জানাল রনি। আমার ধারণা ভুল হতে পারে, আবার সে ওখানে থাকতেও পারে। ওখানে গিয়ে আমি নিজের চোখে দেখে নিশ্চিত হতে চাই। কিন্তু শহরে হয়তো ওর কিছু বন্ধু-বান্ধব থাকতে পারে, তাই আমাদের একসাথে রওনা না হওয়াই ভাল।
রকিঙ কের পথ ধরল রনি। শহর ছেড়ে তিন মাইল দূরে ট্রেইল পানির যোতে কাটা একটা শুকনো নালায় নেমেছে। এখানে নিচে নেমে দিক পরিবর্তন করে লাভার দিকে এগোল সে।
মিউল ক্যানিয়নের মুখে রনির জন্যে অপেক্ষা করছিল হার্ট। দাঁত বের করে হেসে উঠে দাঁড়াল সে। ঠিক মতই এসে পৌঁছেছ দেখছি। মাথা আঁকিয়ে পিছনে লাভার দিকে ইঙ্গিত করল ফিনলে। বিচ্ছিরি
একটা জায়গা। তবে মনে হচ্ছে এখানেই ওকে পাওয়া যাবে।
যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। হার্টের তৈরি ছোট্ট আগুনটার পাশে বসল রনি। শুকনো গ্রীজউড কাঠের আগুন থেকে কোন ধোয়া উঠছে না। রাতে এগিয়ে লাভার কিনারে কোথাও লুকিয়ে থাকতে হবে।
হ্যাঁ। দিনের বেলা ওরা নজর রাখবে। প্রসঙ্গ পাল্টাল হার্ট। মলি সত্যিই একটা দারুণ মেয়ে, তাই না?
শব্দ করে হেসে উঠল রনি। অন্তত এই এলাকার সবথেকে ভাল কফি সে তৈরি করে। যাক, আমার মতে ওকে তাড়াতাড়ি পাহাড়ে নিয়ে যাওয়াই তোমার জন্যে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
মুখ বিকৃত করল হার্ট। আমি শুনেছি শর্টির সাথে ওর খুব ভাব।
মানুষ অনেক কথাই শোনে! কালো লাভার দিকে মুখ ফেরাল রনি। সব কথায় কান দিতে নেই।
দিন গড়িয়ে চলল, সূর্যটা ধীরে ধীরে নিচে নেমে লাভা স্রোতের মাথায় একটা লাল গোলকের মত জ্বলছে। একটা নাইটহওক পোকা ধরার জন্যে ছোঁ মেরে ওদের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। রনি উঠে টপারের পিঠে জিন চাপাল।
আরও বিশ মিনিট সময় দাও, সে বলল, পিছনে এই পাহাড়গুলো থাকায় ওরা আমাদের দেখতে পাবে না।
শেষে ওরা বেরিয়ে পড়ল। দু’জনের কেউই কথা বলার মুডে নেই। অকাশে একটা-দুটো করে তারা উঠতে শুরু করেছে। এক মাইল এগোবার পর দিক পরিবর্তন করে উত্তর দিকে রওনা হলো রনি। ওদের যদি কেউ দেখেও থাকে, তবে দিক বদল করায় ফাঁদ পেতে রাখা অসম্ভব হবে।
রাত দশটার কয়েক মিনিট আগে ঝর্না থেকে ঘোড়া দুটোকে পানি খাওয়াল ওরা। তারপর লাভার একটা খাজে সরে গেল। ওখানে আংশিক আড়াল রয়েছে। লাভার ওপর চড়ে তাকিয়ে রইল ফিনলে। বুনো আর নির্জন দৃশ্য, অসম্ভব রকম সুন্দর। যেন চাঁদের দেশের কোন এলাকা। মনে হচ্ছে যেন একটা সমুদ্র হঠাৎ জমাট বেঁধে পাথর হয়ে গেছে। গাছ নেই, ঝোঁপ নেই, ঘাসও নেই, কেবল ঢেউ খেলানো অনুজ্জ্বল কালো পাথর দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পাথরের কোনা আর পিঠগুলো ভাঙা কাঁচের মতই ধারাল।
বিষণ্ণ মনে দূরের দিকে তাকাল হার্ট। জেমসের কথা ওর মনে পড়ছে। বুনো এলাকা জেমসের কাছে ছিল সব থেকে প্রিয়। কিন্তু ওর জীবন শুরু হওয়ার আগেই ওকে গুলি করে মেরে ফেলা হলো। হার্টের পাশে এসে দাড়াল রনি। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে ওরা। কঠিন গানফাইটারের নীরব সান্ত্বনা, ওর উপস্থিতি থেকেই অনুভব করছে হার্ট।
ওরা এখানেই আছে, মন্তব্য করল রনি। ওদিকে কোথাও আস্তানা করেছে। আমরা জানি, জেরি আসলে ভাসকো গ্ৰেহাম। ড্যাকোটা জ্যাকের সাথে সে এই এলাকা চষে বেড়িয়েছে। ড্যাকোটা এই এলাকা পাইউট ইণ্ডিয়ানদের থেকেও ভাল চিনত।
মাথা ঝাঁকাল ফিনলে হার্ট। হ্যাঁ, কিন্তু ওদের ঘাটি কোথায়? দূরে চেয়ে আছে সে।
সামনের পাহাড়টা দেখাল রনি। আমরা ওখানে খুঁজে দেখব। ওখান থেকে পাহাড়ের গা বেয়ে পানি নিচে নামবে। হয়তো কিছু পানি ওখানে জমেছে।
হঠাৎ হাত তুলল হার্ট। শোনো!
কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে কান পেতে শুনল রনি। পিছন থেকে স্তব্ধতা চিরে একটা কয়োটির ডাক শোনা গেল। তারপর অস্পষ্ট, এবং বহুদূরে, কুড়াল দিয়ে কাঠ কাটার শব্দ!
হ্যাঁ, শব্দটা ভিতর থেকেই আসছে। হয়তো ওখানে ওয়াটার-হোল আর কিছু গাছ আছে।
হ্যাঁ।
হার্ট তার সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। রনি, নিচু স্বরে বলল সে, মানুষ কেউ জানে না আগামীতে কি ঘটবে। হয়তো এবার আমার মরণ হবে। ওই লোকগুলো কঠিন। আমার যদি কিছু হয়, তুমি আমার হয়ে সমার্সকে শেষ কোরো, করবে তো?
কাউকে সেটা করতেই হবে, বলল রনি। ও একটা লাগাম ছাড়া বুনো ঘোড়া।
আর মলিকে বোলো ফিনলের গলার স্বর আরও নিচু হয়ে থেমে গেল। কাঁধ উঁচাল সে। জাহান্নামে যাক ওই চিন্তা! আমি ওকে নিজেই বলব!
ড্যাশার হাসল। নিশ্চয়। আমি সেটা জানতাম।
হার্ট কৌতূহলী চোখে গানফাইটার সঙ্গীকে দেখল। রনি, তোমার মৃত্যু নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়? দেখে তো মনে হয় না।
কাঁধ উঁচাল ড্যাশার। না, দুশ্চিন্তা নেই। ওটা যখন আসার তখন আসবেই। আমি নিজের মত চলি। প্রয়োজন নেই, এমন কোন ঝুঁকি নিই –যা হবার তা হবে।
ভোরের সূর্যটা লাভা স্রোতের ওপর ফেকাসে চাঁদের মত অর্ধেকটা বেরিয়েছে। এরই মধ্যে হার্ট, ছোট একটা আগুন জ্বেলে কফি চাপিয়ে দিয়েছে। রনি মরুভূমিতে শুকনো গ্রীজউড আর জুনিপার খুঁজতে গেছে।
আগুনের গন্ধটা ভাল, কিন্তু কফির গন্ধ আরও ভাল। ভিতরে ঢোকার নিশ্চয় কোন রাস্তা আছে, মন্তব্য করল হার্ট। আমাদের সেটা খুঁজে বের করতে হবে।
হ্যাঁ। কিন্তু সেটা যে কোনপাশে হবে তা বলা মুশকিল। মনে হচ্ছে ওই পাহাড়টা লাভা স্রোতকে দুই ভাগে ভাগ করায় মাঝখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়ে গেছে। লাভা ভয়ানক বিপজ্জনক এলাকা। ভিতরে অনেক বুদ্বুদ আছে। তাদের মধ্যে কিছু আছে, যার উপরটা ডিমের খোসার মতই পাতলা। ওর ওপর পা ফেললে তোমাকে সোজা নিচে পড়তে হবে। কেউ তোমাকে খুঁজে পাবে না। তাই লাভার ওপর দিয়ে চলতে হলে, সাথে একটা লাঠি রাখতে হবে। পা ফেলার আগে লাঠি ঠুকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে ভিতরটা ফাপা কিনা।
ওরা নিশ্চয় পায়ে হেঁটে লাভা পার হয়নি।
হয়তো না, কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হলে আমাদের তাই করতে হতে পারে।
ঘোড়া দুটোর পিঠে জিন চাপাল হার্ট। আগুন নিভিয়ে, লাথি দিয়ে ওটার সব চিহ্ন রনি মুছে দিল। তুমি উত্তরে যাও, বলল সে, আমি দক্ষিণে যাচ্ছি। যদি কোন পথ খুঁজে পাও, মরুভূমিতে কিছুদূর ঢুকে পাথরের একটা স্থূপতৈরি কোরো আমিও তাই করব।
দুজনে একসাথেই ঘোড়ার পিঠে উঠল। ফিনলে ঘুরে হাত তুলে বলল, ও. কে.। গুডলাক। তারপর ফোলা লাভার কিনার ঘেঁষে এগিয়ে গেল।
দক্ষিণের পথ ধরল রনি। এদিকে লাভা একটা দেয়ালের মত। নিচে কিছু ভাঙা চাই পড়ে আছে। তারপর দেয়ালটা ধীরে ধীরে একটা জমাট বাধা কালো ঢেউয়ের আকার নিল। একঘণ্টার উপর হলো কোন পরিবর্তন নেই। হতাশ হয়ে উত্তরের পথ ধরার কথা ভাবছে, এই সময়ে একটা বিশাল থাবার চিহ্ন দেখতে পেল সে। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে ছাপটা পরীক্ষা করে দেখল। আরও ছাপ র ছ ওখানে। ওটা পাহাড়ী সিংহের ট্র্যাক, এবং সোজা আবার লাভার দিকেই ফিরে গেছে ওটা!
পায়ে হেঁটে এগোল রনি। সিংহের পায়ের ছাপ অনুসরণ করছে। একটা সরু খাজে ঢুকেছে ট্রাক। মনে হচ্ছে ওটা জুনিপারের কতগুলো ঝোঁপের কাছে এসে শেষ হয়েছে। ঠেলে ঝোঁপ পার হয়ে দেখল, দুটো লাভা স্রোতের মাঝখানে কিছুটা ফাঁক রয়েছে-ওটা অনেক গভীরে ঢুকেছে বলে মনে হচ্ছে। বেরিয়ে পাথরের স্তূপ তৈরি করে, সে আবার ভিতরে ঢুকল। টপারকে জুনিপারের ঝোঁপ পার করিয়ে আগে বাড়ল। সিংহটার থাবার ছাপ ওই সরু পথ ধরেই এগিয়ে গেছে। বুঝতে পারছে সিংহটা তার গুহায় ফিরেছে। এই পথে আর কোন প্রাণীর যাতায়াতের চিহ্ন ওখানে নেই।
আধঘণ্টা ট্রেইল ধরে চলার পর হঠাৎ ওটা বেশ ঢালু হয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করল। নিচে সবুজ পাইনের মাথাগুলো দেখা যাচ্ছে। ঘোড়াটাকে একটা লাভার ছোট একটা গর্তে ঢুকিয়ে বেঁধে রেখে, লাভার ওপর দিয়ে বুকে হেঁটে গাছগুলোর দিকে এগোল রনি।
ওর সামনে বাটির মত একটা গর্ত। এলাকাটা তিন বিঘার বেশি হবে। কিনার ঘেঁষে পাইনের সারি। মাঝখানেও কয়েকটা জন্মেছে। দূরের দেয়ালটার গায়ে একটা আধ-ভাঙা পাথরের বাড়ি। পাথরের একটা ফাইল থেকে পানি চুয়ে পড়ছে। কাছেই পাচটা ঘোড়া চরতে দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ রনির চোখের সামনে, পাথরের বাড়ির ভিতর থেকে একটা লোক বেরিয়ে প্যান থেকে কিছুটা পানি বাইরে ফেলল। লোকটা ডাক।
কিছুদূর ফিরে সাবধানে আরেকটা পথ বেছে নিয়ে আরও নিচে নামল সে। পথটা একটা ভাঙা পাথরের স্থূপ, ম্যানজেনিটা ঝোঁপ আর পাইন গাছের ভিতর শেষ হয়েছে। একপা আগে বাড়তেই একটা চাপা গর্গর শব্দ ওকে সাবধান করল। মাথা ফিরিয়ে পাহাড়ী সিংহটাকে সে দেখতে পেল। বাম দিকে, কিছুটা উপরে, একটা পাথরের ওপর ওত পেতে বসে আছে ওটা। সিংহটা বিশাল। রনি কেবল ওর মাথা আর কাঁধ দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু তাতেই বুঝছে, জীবনে যতগুলো বড় বড় সিংহ সে দেখেছে, এটা তার প্রথম সারিতে পড়ে। কান দুটো মাথার সাথে সাঁটিয়ে, সবুজ বিদ্বেষ ভরা চোখে একদৃষ্টে রনির দিকে চেয়ে আছে জন্তুটা। তারপর দাঁত বের করে ভেঙচি কাটল।
স্থির দাঁড়িয়ে সিংহের দিকে চেয়ে আছে সে। পাহাড়ী সিংহ সচরাচর মানুষকে আক্রমণ করে না। কিন্তু যদি নিজেকে কোণঠাসা বলে মনে করে, সে লড়বে। গুলির শব্দ জেরিকে সাবধান করে দেবে। তখন নিজের জীবন রক্ষার জন্যে তাকে তিনজন আউটল আর সিংহের বিরুদ্ধে
একসাথে লড়তে হবে। পিস্তল হাতে অপেক্ষা করছে রনি। আবার ভেঙচি কাটল জন্তুটা, কি করবে মনস্থির করতে পারছে না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইল রনি।
কয়েক সেকেণ্ড পর ওত পাতা ছেড়ে নিজের গুহায় অদৃশ্য হলো। স্বস্তিতে বড় একটা শ্বাস ছাড়ল রনি।
গাছের ভিতর দিয়ে এগিয়ে বাড়িটার আরও কাছে চলে এল সে। নিজের পিস্তলের পাল্লা তার জানা আছে। ওখান থেকে ওই তিন একর এলাকার প্রতিটা কোনা সে কাভার করতে পারবে। কিন্তু আরও কাছে যেতে চায় ও।
ডাক বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা ওর দিকেই এগিয়ে এল। তারপর শুকনো কাঠ সংগ্রহ করার জন্যে ঝুঁকল। কোন ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নিশ্চয় ওকে সাবধান করেছে, কারণ সে মুখ তুলে চাইল।
চিৎকার করলে তোমাকে হেঁদা করে দেব, ডাক! নিচু স্বরে কেবল ওকে শুনিয়ে কথাটা বলল রনি।
ডাকের হাঁসের মত ঠোঁটগুলো বাঁকা হলো। কে-কে তুমি?
আমি ড্যাশার–তোমার কাছে রেড রিভার রেগান। আমি যা বলি তা করলে চোট পাবে না।
কয়েক সেকেণ্ড রনির দিকে চেয়ে রইল সে। তারপর ওর পিছনে দরজা খোলার আওয়াজ হলো। কেউ চেঁচিয়ে ডাকল, ডাক! তোমার কি হলো?
রনির ডান পাশে গর্তের কিনার থেকে জোরাল কণ্ঠে কেউ চিৎকার করে বলল, হাত তুলে বেরিয়ে এসো, ডাকি স্মিথ! অমি জেরিকে চাই!
ডাক বাম দিকে ঝাপিয়ে পড়ল। পিস্তলটা উঠে এসেছে ওর ডান হাতে। মুহূর্তে এলাকাটা প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে ভরে উঠল। টলতে টলতে একটু পিছিয়ে গেল রনি। কোত্থেকে একটা গুলি এসে ওর পাশে গাছে বিধল। বাকল ছিটকে চোখে মুখে লাগল। বাঁচার জন্যে পিস্তল খাপে ভরে মাটির ওপর আছড়ে পড়ল সে। হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে গড়িয়ে ঝোঁপের তলায় সরে গেল রনি। একটা গুলি ওর মুখে বালু ছিটাল। আরেকটা গাছে বাড়ি খেয়ে অন্যদিকে চলে গেল। এতক্ষণে চোখ খুলতে পেরে গড়িয়ে একটা উপড়ে পড়া গাছের গুঁড়ির আড়ালে সরে গেল। হঠাৎ সব শব্দ থেমে গেল। তারপর ডাকের চিৎকারে নীরবতা ভঙ্গ হলো। ড্যাশার শেষ! আমি রনিকে মেরেছি!
চুপ করো! স্বরটা ঠাণ্ডা। গুলিটা আমি করেছি দরজার আড়াল থেকে!
আগ্রহের সাথে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল ড্যাশারের দেহে। ওটা জেরি সমার্সের স্বর! ধীরে উঠে দাঁড়াল সে। তারপর গাছের আড়ালে আড়ালে খোলা জায়গাটার দিকে এগোল।
ওরা কতজন ছিল? সুরটা বেইলির।
আমার ধারণা, দু’জন। তবে ড্যাশার মরার পর ওকে শেষ করা মোটেও কঠিন হবে না। এসো, কাজটা সেরে ফেলি। ডাকির স্বরে উৎসাহ।
দাঁড়াও। জেরির স্বরটা অস্বাভাবিক শোনাল। হয়তো আরও লোক থাকতে পারে।
মাত্র দুটো শট, স্মিথ বলল। তুমি শিওর ড্যাশার মরেছে?
জেরির বদলে ডাক জবাব দিল। আমি ওকে পড়তে দেখেছি। জোরে আছড়ে পড়েছে।
ড্যাশার বুঝতে পারছে, সম্ভবত হার্টও কথাগুলো শুনতে পাচ্ছে। রনি মরে গেছে বিশ্বাস করে তিনজন আউটলর বিরুদ্ধে সে একাই মোকাবিলা করার প্ল্যান করবে। জেরি সমার্সকে মারার একটা চেষ্টা না করে সে যে কিছুতেই ফিরবে না, এটা রনি জানে। এলাকাটা ছোট, তাই সে কিছু করলে, হার্ট সেটা শুনতে পাবে।
অন্য লোকটা পালিয়েছে, হঠাৎ বলল ডাকি স্মিথ। আমি দেখছি।
যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হয়ে খোলা এলাকা পেরিয়ে পাইন গাছগুলোর দিকে এগোল সে। ডাক অস্বস্তিভরে ওর দিকে চেয়ে আছে লক্ষ করল রনি। জেরি সমার্স দ্রুত ঘুরে জঙ্গলের দিকে এগোল। তারপর গাছের আড়ালে অদৃশ্য হলো।
অপেক্ষা করছে ড্যাশার! হার্ট কোথায় আছে স্থির করার চেষ্টা করছে-বুঝতে চায় ও কি প্ল্যান করেছে। খোলা এলাকায় কোন শব্দ নেই। হঠাৎ কাছেই একটা সরু ডাল ভাঙার শব্দ হলো!
নীরবতা। এবং পরে পদক্ষেপের শব্দ। লোকটা সাবধানে এগোচ্ছে। নিশ্চিন্ত সহজ ভঙ্গিতে এগিয়ে আসছে–যেন বেড়াতে বেরিয়েছে।
উৎকণ্ঠা নিয়ে অপো করছে রনি। গাছের মাঝে ফাঁকটার দিকে সে নজর রেখেছে। ওই পায়ের শব্দে কেমন যেন একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ঠিক স্বাভাবিক নয়।
ড্যাশার! শব্দটা ওর পিছন থেকে এল!
তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল রনি। দেহ ঘোরার সাথে কোল্টটা ওর হাতে উঠে এল। জেরি সমার্স, ছুরির পাতের মত চিকন, ওর সুদর্শন চেহারাটা এখন কঠিন আর হিংস্র। বনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে। ওর ড্র এত দ্রুত যে হাতটা ঝাঁপসা হতে দেখা গেল।
ড্যাশারের চেহারা শক্ত। কোমরের কাছ থেকেই গুলি করল সে। আবার ওদিক থেকেও গুলি আসছে। একটা কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। গরম বাতাস অনুভব করল রনি। ওর হাতে কোল্টটা লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে–এগিয়ে যাচ্ছে সে। পিছিয়ে গেল জেরি। ওর শার্টের সামনের দিকটায় লাল রঙ ছড়িয়ে পড়ছে।
তবু ওর পিস্তল দুটো আবার উঠল। এবার দ্বিতীয় কোল্ট বের করে একসাথে দু’হাতে গুলি ছুঁড়ল রনি। বুকের ওপর ভারি বুলেটের আঘাতে টলতে টলতে পিছিয়ে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেলো খুনী জেরি সমার্স। মাথায় একটা বুলেটের ক্ষত থেকে রক্ত ওর মুখ প্রায় ঢেকে ফেলেছে। পড়ে গেল সে। এক হাতের ওপর গড়িয়ে মাথা তুলল, অন্য হাতে রয়েছে একটা পিস্তল।
আর গুলি না করে রনি অপেক্ষা করছে। জেরির আঙুল ফসকে পিস্তলটা পড়ে গেল। নাক দিয়ে পাইনের কাটা ঘষে মাথাটাও মাটি ছুঁলো। ছুটে এগিয়ে গেল রনি।
ওর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে, মরণাপন্ন লোকটাকে চিত করল। চোখের পাতা কয়েকবার কাঁপার পর ওর চোখ খুলল। ধোকা তোমাকে ধোকা দিয়েছি! ফেঁসফেঁসে গলায় সে বলল। অদ্ভুত-একৌ (echo)। জেরির চোখ দুটো স্থির হয়ে গেল। কোল্টে গুলি ভরতে ভরতে ধীরে উঠে দাঁড়াল রনি।
ফিনলে হার্ট ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। হাত উঁচু করে তুলে হার্টের আগে আগে চলছে ডাক। কিন্তু পায়ের শব্দটা রনির পিছন থেকে আসছে বলে মনে হচ্ছে।
ব্যাপারটা কি? কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করল ফিনলে।
পিছনের ক্লিফটার জন্যে এমন হচ্ছে, ব্যাখ্যা করল ডাক। পুরো বেসিনে এমন আরও কয়েকটা জায়গা আছে। মনে হয় শব্দ উল্টো দিক থেকে আসছে।
ডাকি স্মিথ কোথায়?
আমার পিছু নিয়ে বনে ঢুকেছিল ও, রনির প্রশ্নের জবাব দিল হার্ট। প্রথম গুলি সে মিস করেছিল। জেরি সমার্সের লাশটার দিকে তাকাল ফিনলে। ভাল, তুমি শেষ করেছ ওকে। হয়তো এখন জেমসের আত্মা শান্তি পাবে।
রকিঙ কের দু’মাইলের মধ্যে আসতেই শর্টি ওদের দেখতে পেল। টেরি আর হ্যারিকে নিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে ফোরম্যানকে অভ্যর্থনা জানাতে
এগিয়ে গেল। ডাকের দিকে চাইল শর্টি।
দেখছি একটা বড় হাঁস ধরে এনেছ তোমরা, বলল সে। অন্যদের কি খবর?
ওরা আর কাউকে জ্বালাতে আসবে না, জবাব দিল ফিনলে। তারপর বন্দীকে নিয়ে শহরের দিকে এগোল। ফিনলে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলে সবাইকে শুনিয়ে শর্টি বলল, ওই যে লোকটা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যেই ও বিয়ে করবে! তোমরা দেখে নিও!
ফিনলে? অবাক হলো হ্যারি। পাত্রীটাকে?
মলি।
মলি? বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হলো টেরি। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি ওকে ভালবাসো। সারাক্ষণ তো ওখানেই পড়ে থাকতে।
নিশ্চয় ভালবাসি। হাসল শর্টি। ওর রোদে পোড়া চেহারা কৌতৃকে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মলি আমার বোন!
তোমার বোন? চেহারায় কপট আতঙ্কের ভাব ফুটিয়ে তুলে হ্যারি বলল, কে ভাবতে পারবে তোমার মত কদাকার একটা লোক, আর মলির মত একটা সুন্দর মেয়ে একই ঝুড়ি থেকে এসেছ!
হ্যাঁহ! তুমি আর বোলো না! পাল্টা আক্রমণ করল শর্টি। আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখেছ কখনও?
শব্দ তুলে হাসল রনি। এবার তার যাবার সময় এসেছে। এদিককার সব এখন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। হিউবার্ট আপস করেছে; কর্ন প্যাচের রাসলাররা, যারা বেঁচে ছিল, তারা পালিয়েছে, স্টেজ ডাকাতি যারা করত, তাদের মধ্যে ডাক ছাড়া আর কেউ জীবিত নেই। ভয়ে সোনা কোথায় লুকিয়ে রাখা আছে, সেটাও বলে দিয়েছে ডাক-অ্যাডামের কথাও। টাকা, আর অ্যাডামের দোষ প্রমাণ করা চিঠিও সে হার্টের কাছে দিয়ে দিয়েছে। বাকি সব ব্যবস্থা শেরিফ রবার্ট আর হ্যারিংটনকে নিয়ে ফিনলে হার্টই করবে। এখানকার কাজ তার পুরোপুরি শেষ হয়েছে। এখন আর বেন কেসির ফাইটিঙ সেগুন্দোর প্রয়োজন হবে না।
রাঞ্চে বেন কেসি ওকে থাকার জন্যে অনেক করে বলল। কিন্তু যুক্তি দেখাল রনি। বলল, আমি উত্তরে থ্রী টি এল-এর মরিসনের সাথে দেখা করার জন্যে রওনা হয়েছিলাম। ওখানে আমার দু’জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ডেড শট ওয়াইলস্ আর ডাগ মারফিও থাকবে বলে খবর পেয়েছি। এটা চমৎকার জায়গা, কিন্তু আমি ভবঘুরে মানুষ। আর শান্ত পরিবেশে আমি অশান্ত হয়ে উঠি।
রনি ব্ল্যাক স্যাণ্ড মরুভূমির কির পৌঁছলে পূব আকাশে সূর্য উঠল। পিস্তল দুটো আলগা করে, হ্যাটটা একটু নামিয়ে, সামনের চৌরাস্তার দিন ঘোড়া ছুটাল সে। দুপুর নাগাদ থ্রী টি এল রেঞ্জে পৌঁছল সে। দূর থেকে র্যাঞ্চহাউসটা দেখা যাচ্ছে। তিনজন লোক র্যাঞ্চহাউস থেকে বেরিয়ে উঠানে দাঁড়াল। ওরা তার বন্ধু। অনেকদিন হলো ওদের সাথে রনির দেখা হয়নি।