- বইয়ের নামঃ রক্তরাঙা ট্রেইল
- লেখকের নামঃ কাজী মাহবুব হোসেন
- সিরিজঃ ওয়েস্টার্ন সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী বই
- বিভাগসমূহঃ ওয়েস্টার্ন
রক্তরাঙা ট্রেইল
০১. ন্যাড়া রিজটার মাথায়
ন্যাড়া রিজটার মাথায় রনি তার সাদা গেল্ডিংটা থামাল। ওখানে কোন মাটি নেই, বাতাস ঝেঁটিয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। কেবল কয়েকটা সিডার গাছ পাথরের উপরই জায়গা করে নিয়েছে। ওরা যে পাথর থেকে কেমন করে খাবার জোগাড় করে সেটা সত্যিই একটা আশ্চর্যের বিষয়। এক ঘণ্টার মধ্যেই সূর্য ডুবে যাবে। বাতাসটা অসম্ভব রকম পরিষ্কার। এত পরিষ্কার যে সামনের উপত্যকার প্রতিটা খুঁটিনাটি দেখা যাচ্ছে। যদিও উপত্যকাটা কম হলেও দশ মাইল দূরে।
যেখানে সে থেমেছে সেখানে সূর্যের আলোটা উজ্জ্বল। পশ্চিমেই যাচ্ছে রনি। বাম দিকের বিশাল উঁচু উঁচু পাহাড় বাকিগুলোকে বামুন করে দিয়েছে। পুব দিকে মেঘ করেছে। বৃষ্টি আসন্ন। মেঘের দিকে চেয়ে দেখল রনি। ওর ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। ভিজতে হবে।
সেভেন পাইনস পশ্চিমের একটা কঠিন জায়গা। ওটা এখনও বারো মাইল দূরে। পাহাড়ের পিছনে। কিন্তু ওখানে পৌঁছানোর আগেই বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হতে হবে ওকে। এখন ওর একটা আশ্রয় দরকার। বিশেষ প্রয়োজন।
ঘোড়ার পিঠে চড়ে সে চারদিক খুঁটিয়ে দেখল। স্টেজের রাস্তা মাইল খানেক উত্তরে। কিন্তু ওদিকে কোন আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগেই খোঁজ খবর নিয়ে এসেছে সে। পাকা খবর। মেঘ এগিয়ে আসছে। বিজলি চমকাচ্ছে। ভিজতেই হবে-বাঁচোয়া নেই। রক্তরাঙা ট্রেইল
দক্ষিণ আর পশ্চিমে উপত্যকাটা সরু হয়ে পরে আবার চওড়া হয়েছে। বৃষ্টির পর জায়গাটা পিছল, আর কাদাকাদা হয়ে যায়। পথ চলাই বিপদ। পাহাড়ে খাঁজ রয়েছে, কিন্তু এই ঝড়ে ওগুলো নিরাপদ হবে না। রনি জানে, পশ্চিমে অনেক দিন আছে সে। কোথায় বিপদ এটা ওর ভাল করেই জানা আছে।
রওনা হতে যাচ্ছে, এই সময়ে ওর চোখের কোনে একটা নড়াচড়া ধরা পড়ল। থমকে দাড়াল সে। নিচের ক্যানিয়নে কয়েকজন রাইডার দেখা যাচ্ছে। ওদের মাঝে কি যেন একটা বিশেষ কিছু রনিকে সাবধান করল। ঘোড়াটাকে একটা জুনিপার গাছের আড়ালে কিছুটা আড়াল করল। এত দূর থেকে বিনকিউলার দিয়েও সে কোন চেহারা চিনতে পারল না। কেবল একটা ঘোড়ার সাদা নাক ওর চোখে পড়ল। ছয়জন আরোহী। দ্রুত উত্তর দিকে এগোচ্ছে ওরা।
ওরা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত ওদের লক্ষ করল রনি। একটু বিকৃত মুখে-কারণ এই দেশটাকে সে ভাল করেই চেনে। এই এলাকায় যদিও সে নতুন তবু ওর বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না যে লোকগুলোর মতলব খারাপ। পাহাড়ের কোল ঘেঁসে ওরা স্টেজ রাস্তার দিকে এগোচ্ছে। নিজেদের অবস্থান যতদূর সম্ভব লুকাবার চেষ্টা করছে।
ঠিক আছে, টপার, শান্ত স্বরে ঘোড়াটাকে বলল রনি। চলো দেখা যাক ওদের কি মতলব। আমাদের মত ওদেরও ভেজার শখ নেই।
সাদা ঘোড়াটা দ্রুতবেগে কোনাকুনি উত্তর দিকে ছুটে চলল। আর একবার কাছিয়ে আসা মেঘের দিকে চেয়ে রনি তার পিস্তল দুটো বের করে ধুলো মুছল। দুটোই বহুল ব্যবহৃত কোল্ট ৪৫। ওগুলোর হাড়ের হাতলে চিকন ফাটল ধরেছে, কিন্তু চমৎকার ব্যালেন্স। বেশ কিছুদিন হলো সে পিস্তল ব্যবহার করেনি, কিন্তু ওগুলোর ব্যবহারে ওর পাকা হাত।
বর্তমানে ওর গন্তব্য স্থান সেভেন পাইনস। কিন্তু আসলে সে ঘুরতে বেরিয়েছে। উত্তরে তার এক বন্ধু আছে, নাম মরিসন। থ্রী এম র্যাঞ্চে সে তার বিধবা মেয়ের সাথে থাকে। ওদের সাথে কিছুদিন কাটিয়ে উত্তরে মনট্যানা যাওয়ার ইচ্ছা আছে তার।
সামনের আরোহীরা রনিকে কিছুটা বিব্রত করছে। কিন্তু ওদের সাথে বিরোধে যাওয়ার ইচ্ছে ওর নেই। ওর এই যাত্রাটা কেবল দেশ দেখার জন্যে। সাথে যথেষ্ট টাকা আছে, কোন তাড়া নেই।
কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ল হ্যাটের উপর। পানি ঝেড়ে ফেলে, বর্ষাতি বের করল রনি। ঘোড়ার গতি একটুও না কমিয়ে বর্ষাতি পরে নিল সে। রিজ থেকে নেমে ব্যস্ত চোখে আশ্রয় খুঁজছে। একটা মাইন চোখে পড়ল, কিন্তু টানেলটা ধসে পড়েছে। দালানও ভেঙে গেছে।
পাহাড়ের ধারে এসে সামনের মানুষগুলোর ট্রেইল দেখতে পেল রনি। বইয়ের পাতার মতই সহজে দাগগুলো পড়ল সে। ঘোড়াগুলো তাজা-একটার খুর কেটে সরু করা হয়েছে। আবার এক পশলা বৃষ্টি এল। তারপর বেগ বেড়ে মুষল ধারে বৃষ্টি শুরু হলো।
মাইন থেকে একটা ক্ষীণ ট্রেইল নিচের দিকে নেমেছে। এতে কিছুটা জোরে ঘোড়া ছুটাবার সুযোগ পেল রনি। পাহাড়ের গা বেয়ে মেইন রাস্তায় নেমে এল সে। ক্ষণিকের জন্যে থেমে আবার আরোহীদের ট্রাকগুলো দেখতে পেল। বৃষ্টিতে এখনও মুছে যায়নি। রাস্তা পার হয়ে ঝোঁপের ভিতর দিয়ে রাস্তার সমান্তরাল ভাবে এগিয়েছে ওরা।
বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমে এল। বৃষ্টির ফোঁটা অনেক দিনের শুকনো ধুলোর ওপর পড়ার পরিচিত গন্ধ ওর নাকে এল। তারপর প্রচণ্ড শব্দে একটা বাজ পড়ার সাথে আবার বৃষ্টি শুরু হলো। বাতাসের বেগও বেড়েছে। মেঘে সূর্য ঢাকা পড়ার পর এখন বেশ অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। কেবল বারবার বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় কিছুটা দেখা যাচ্ছে।
স্টেজের রাস্তায় উঠল রনি। ঘোড়াটা তার স্বাভাবিক গতি বজায় রেখেছে। হঠাৎ করেই ঝড়ের বেগ শান্ত হয়ে এল। নীরবতার মাঝে কতগুলো গুলির আওয়াজ রনির কানে এল।