- বইয়ের নামঃ বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান
- লেখকের নামঃ মরিস বুকাইলি
- প্রকাশনাঃ দারুস সালাম বাংলাদেশ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, প্রবন্ধ
বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান
০১. ভূমিকা নয়, সূচনা
বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান / মূল : ড. মরিস বুকাইলি / রূপান্তর : খন্দকার মাশহুদ-উল-হাছান
প্রকাশক : জ্ঞান বিতরণী
প্রথম প্রকাশ : একুশে বইমেলা-২০১২
.
অনুপ্রেরণার প্রয়াসে
শামীমা হাছান নিম্নি
.
ভূমিকা
প্রকৃতপক্ষে, পাঠকদের উদ্দেশে আমার প্রথমেই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি কামনা করা উচিত। কেননা, “ভূমিকার বদলে” এই গ্রন্থে আমি একটি ভূমিকার স্বরূপ সন্নিবেশিত করেছি কিন্তু তবুও “প্রথা” বলে কথা। বইতে যেন ভূমিকা একটি দিতেই হবে, এ না হলে আমাদের দেশের পাঠক-প্রকাশকদের একটি বদ্ধমূল ধারণা জন্মে গেছে যা ভেঙে দেবার সাহস, সাধ আমার থাকলেও সাধ্য নেই।
যাহোক কথা বাড়িয়ে লাভ নেই; এখানে এখন শুধু এটুকুই বলবো, এই গ্রন্থ গ্রন্থিত হয়েছে ড. মরিস বুকাইলির বাইবেল কোরআন বিজ্ঞান গ্রন্থকে উপলক্ষ করে। আর তাই এই বইয়ের নাম দেয়া হয়েছে “বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান”।
এক্ষেত্রে, ড. মরিস বুকাইলির বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান বইতে যা পাঠনীয় রয়েছে, উপরন্তু আরও বেশিকিছু নতুন তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। ফলে, এই বইয়ের পাঠক বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান বইতে পঠনীয় পাঠসহ আরও বেশকিছু নতুন তথ্য পাবেন। এই গ্রন্থকারের এই গ্রন্থনার উদ্দেশ্য তিনি মনে করেন, ড. মরিস বুকাইলি এখন যদি তার বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান বইটি লিখতেন, সম্ভবত তিনি এ সকল তথ্য সন্নিবেশিত করতেন। এমনকি আরও বেশিকিছু।
যাহোক, অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন কলেবরে কম অথচ তথ্যেসমৃদ্ধ এ আবার কেমন দাবি? উত্তরে বলবো, বইটি পড়ে দেখুন।
শেষোক্ত, গ্রন্থকার নিজের সকল ঔদ্ধত্যপনা এবং পুনর্ব্যক্ততার জন্য পরীক্ষা প্রার্থনীয় হয়ে সকলের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি প্রার্থনা করে আমার একমাত্র পুত্র খন্দকার শামস্ ইবতেহাজ জাহানের প্রজন্মের হাতে বইটি তুলে দেয়া হলো যেন বইটি সর্বপঠনীয় হয়ে ওঠে এই কামনায়। প্রকাশকসহ প্রকাশনার কাজে যারা নিরলস কাজ করেছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানাবার দুঃসাহস আমার না থাকলেও জানালাম, পাঠকদের নিকট পরীক্ষা প্রার্থনীয় থেকে বিদায় নিলাম।
–খন্দকার মাশহুদ-উল-হাছান
ভূমিকা নয়, সূচনা
নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থ রয়েছে, একত্ববাদী এমন তিনটি ধর্ম-ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম। এ সকল ধর্মে বিশ্বাসীদেরকে তাদের ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমান। যে ধর্মে যে বিশ্বাসী তাদের কাছে তিনি যে-ই হোন-না-কেন, তাঁর ধর্মগ্রন্থ তাঁর বিশ্বাসের বুনিয়াদ, নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থকে আসমানী ওহীর লিপিবদ্ধ রূপ বলে বিবেচনা করেন। তাঁদের বিশ্বাস, এ ধরনের ওহী হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং হযরত মুসা (আঃ) সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছিলেন এবং ওহী হযরত ঈসা (আঃ) লাভ করেন ফাদার বা পিতার নামে আর হযরত মোহাম্মদ (দঃ) লাভ করেছিলেন প্রধান ফিরিস্তা জিব্রাইলের মাধ্যমে।
ধর্মীয় ইতিহাসের নিরপেক্ষ বিচারে তাওরাত, জবুর, ইঞ্জিল অর্থাৎ বাইবেলের পুরাতন ও নতুন নিয়ম এবং কোরআন একই ধরনের ওহী বা প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত ধর্মগ্রন্থ।
যদিও বর্তমান সভ্য-জগতের সাল-গণনার প্রথম শতকে এবং আরও অনেক আগেও ‘বাইবেল’ শব্দটি কারও জানা ছিল না। অর্থাৎ কোন পুস্তককে, নাম বাইবেল ছিল না। অবশ্য, চতুর্থ শতকে কনস্টান্টিপোলের (বর্তমানে যে-স্থান ইস্তাম্বুল) একজন গোষ্ঠীপতি জন ক্রাইসোটর ইহুদিদের দ্বারা সংগৃহীত পুঁথিগুলোকে ‘বিবলিয়া’ অর্থাৎ ‘বুকস’ (গ্রন্থমালা) বলে উল্লেখ করেছেন।
বাইবেলের দুটি অংশ : প্রথম অংশকে বলা হয় ‘পুরাতন নিয়ম’ (The old Testament)। এতে রয়েছে, যীশুর অবর্তমানে বিভিন্ন লেখক কর্তৃক যীশুর জীবনী, উপদেশাবলী এবং প্রতি প্রত্যাদিষ্ট ঐশীবাণীসমূহের অংশবিশেষ প্রসঙ্গক্রমে বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্নভাবে।
এখন থেকে সোয়াশ’ বছর আগে থেকে আরম্ভ করে এখনপর্যন্ত অনেক জ্ঞানীব্যক্তি বিশুদ্ধ খ্রিস্টান হয়েও বাইবেলের উক্তিগুলোকে ঠিক আপ্তবাক্য বলে মেনে না নিয়ে, নিজেদের বিচার-বুদ্ধির আলোকে ক্রমাগত তথ্য অনুসন্ধান করতে করতে সুসমাচার সম্বন্ধে অনেক নতুন নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। যা আপ্তবাক্যের চেয়েও নির্ভরযোগ্য।
তাঁদের সকলের সিদ্ধান্ত সবসময় একইরকম না হলেও তা থেকে মোটামুটি ধারণা জন্মে যে, বাইবেলের নতুন নিয়ম ‘পুরাতন নিয়ম’-এর বৈপরীত্য ছাড়াও নানারকম তর্ক-বিতর্ক বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি করে।
এই পুস্তকে কোনো ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মাবলম্বীকে বা তাঁর বা তাদের বিশ্বাসকে আঘাত হানার প্রয়াস চালানো হয়নি বরং বিশ্বাস করে নিতে দ্বিধা নেই একত্ববাদী ধর্মাবলম্বীদের নিকট অবশ্যই অনেক ঐশ্বরিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত ধর্মগ্রন্থ এসেছে।
যদিও মুসলমানেরা এই নীতি মেনে চলেন, কিন্তু কোরআনকে পাশ্চাত্যের ইহুদী-খ্রিস্টান সংখ্যাগুরু সমাজ প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত ধর্মগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চান না। ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে পরস্পরের এই যে দৃষ্টিভঙ্গি, খুব সম্ভবত এ থেকেই কারো বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়, একটি ধর্মীয় সমাজ অপর ধর্মীয় সমাজ সম্পর্কে কি ধরনের মনোভাব পোষণ করেন। ইহুদিদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিব্রু ভাষার বাইবেল। উল্লেখ্য, হিব্রু বাইবেল খ্রিস্টানদের বাইবেলের অন্তর্ভুক্ত ‘ওন্ড টেস্টামেন্ট বা পুরাতন নিয়ম’ থেকে আলাদা।