- বইয়ের নামঃ আমিই কিশোর
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
আমিই কিশোর
১
চোখ মেলে বিছানায় উঠে বসলাম। আড়মোড়া ভেঙে হাই তুললাম।
আউ! বাঁ কাঁধ ব্যথা করছে! কাঁধ ডলে দেয়াল ঘড়ির দিকে চাইলাম।
সকাল সাতটা পঁচিশ? চাচা-চাচী আমাকে ডাকেনি কেন? স্কুলে তো দেরি হয়ে যাবে আমার! বিছানা থেকে লাফিয়ে নেমে বাথরুমের দিকে এগোলাম। আয়নায় কাঁধটা দেখে নিলাম। জখমটা গুরুতর, কালশিটে পড়ে গেছে। কীভাবে হলো এটা? গতকালকের ফুটবল প্র্যাকটিসের সময়? নাকি দুএকদিনের মধ্যে বাইক থেকে পড়ে গেছিলাম? মনে করতে পারলাম না।
কাঁধ নিয়ে ভাবতে ভাবতে নীচে নেমে এলাম। রাশেদ চাচা, মেরি চাচী আর ডন টেবিলে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে।
থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমার চেয়ারটা নেই। আমার জন্য খাবারও দেওয়া হয়নি।
আজব তো! বললাম, ফাঁকা জায়গাটার দিকে চেয়ে রয়েছি। ডন, ঠাট্টা করছ আমার সাথে? আমার চেয়ার কোথায় সরিয়েছ? এখন মজার সময় নয়। স্কুলে দেরি হয়ে যাবে।
হঠাৎই অনুভব করলাম ঘরে কীরকম পিনপতন নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। চাচা-চাচী আর ডনের দিকে চাইলাম।
চাচা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছে। চাচী সরে গিয়ে ডনের পিছনে দাঁড়াল। ভাবখানা এমন যেন ওকে রক্ষা করছে! ওরা তিনজন আমার দিকে এমনভাবে চেয়ে রয়েছে, আমি যেন…অচেনা কেউ।
এখানে কী ঘটছে? বলতে শুরু করলাম।
আমরাও সেটাই জানতে চাই, ইয়াং ম্যান, ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলল চাচা। গম্ভীর শোনা তার কথাগুলো।
থমকে গেলাম আমি, চোখ পিটপিট করলাম, হাসার চেষ্টা করলাম।
আগে বলল আমার চেয়ার কই? বললাম।
চাচী ঝুকে পড়ে ডনের কানে কানে কী যেন বলল। মনে হয় ওকে নিজের কামরায় যেতে বলছে।
আমরা যতক্ষণ না আসি ঘরেই থাকিস, চাচীকে বলতে শুনলাম।
ও কি খারাপ লোক, আণ্টি? আমার দিকে আঙুল তাক করে বলল ডন।
হ্যাঁ, আমি খুব খারাপ লোক, বলে কটমট করে চাইলাম ওর দিকে। আমি কিশোর পাশা, খুনে দানব।
ডন, চলে যা! চাচী বলল, এবং ডন চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে বেরিয়ে গেল কিচেন থেকে।
চাচা ঘুরে দাঁড়িয়ে চাইল আমার দিকে। মুখের চেহারা কঠোর। সরাসরি চোখ রেখেছে আমার চোখে।
শোনো, ইয়াং ম্যান, বলল, আমরা এখানে কোন ঝামেলা চাই। তুমি এক্ষুনি চলে যাও এবাড়ি ছেড়ে। দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাও, আমরাও ভুলে যাব ঘটনাটা, নইলে-
নইলে কী? কী বলছ তুমি এসব, চাচা?
নইলে, চাচী চাচার কথাগুলো শেষ করল, আমরা পুলিস ডাকতে বাধ্য হব। আর আমাদেরকে চাচা চাচী বলা বন্ধ করো। আমরা তোমার চাচা-চাচী নই এবং কোন কিশোর পাশার নামও আমরা শুনিনি!
ঠিক আছে, শ্রাগ করলাম। তোমরা যা বলো। স্বীকার করতেই হবে এটাই এখন অবধি আমাদের সেরা পারিবারিক কৌতুক। কিন্তু আমাকে এর শেষ দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এখন বাজে পৌনে আটটা, আর পনেরো মিনিট পর প্রথম ঘণ্টা পড়বে।
ভাবতেই পারছি না আমাকে ব্রেকফাস্ট মিস করতে হচ্ছে, বলে কিচেনের দরজার দিকে এগোলাম। স্কুলে ক্যাফেটেরিয়া থেকে দুই পিরিয়ডের ফাঁকে একটা আপেল খেয়ে নেব।
দরজার কাছে বইয়ের র্যাক। স্কুল ব্যাগ নেওয়ার জন্য দাঁড়ালাম ওখানে। ব্যাগটা নেই। আরেকটা ঠাট্টা?
অনেক হয়েছে, বললাম, কিন্তু আমার স্কুল ব্যাগ কোথায়?
তোমাকে চলে যেতে বলা হয়েছে, কথা কানে যায়নি? চাচা বলল।
বই ছাড়া স্কুলে যাব কীভাবে, চাচা? বললাম।
আর নয়। আমি এবার পুলিস ডাকছি, চাচী বলল, কিচেন ফোনের দিকে পা বাড়াল।
এখুনি বেরিয়ে না পড়লে দেরি হয়ে যাবে। না হয় একদিনের জন্য কোন ক্লাসমেটের বই ধার নিয়ে নেব।
ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি, বললাম। রকি বীচ পুলিস ডিপার্টমেন্টকে আমার শুভেচ্ছা। গত বসন্তে সার্জেন্ট কলিন্স আমাকে স্কুল প্রজেক্টে সাহায্য করেছিল। সবাই ভাল থেকো, চলি।
স্কুলে পৌঁছতে আমার যতক্ষণ সময় লাগে, আজকে এসব মশকরার জন্য তার চাইতে আগেভাগে পৌঁছে যেতে হবে।
বাপ রে, চাচা-চাচীকে আগে কখনও এমন করতে দেখিনি। আজকে কি এপ্রিল ফুল? নাহ্, এখন অক্টোবরের মাঝামাঝি। তা হলে ওরা এমন করল কেন?
এর তল বের করতে হলে আমাকে সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখন আমার সামনে সারাদিনের ক্লাস এবং তারপর দুঘণ্টার ফুটবল প্র্যাকটিস। সামনে বড় ম্যাচ আমাদের, দলের সেরা পাস রিসিভার হিসেবে অনেক দায়িত্ব আমার। প্রচুর খাটতে হবে।
এসব ভাবছি এসময় এক মিনিভ্যান স্টপ সাইনে এসে দাঁড়াল। ভ্যানটাকে সঙ্গে সঙ্গে চিনতে পারলাম। আমাদের ফুটবল কোচ হেনরির। উনি আমাকে লিফট দিলে দুমিনিটের মধ্যে স্কুলে পৌঁছতে পারব।
হাই, কোচ হেনরি! চেঁচিয়ে উঠে হাত নাড়লাম।
আজকের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। সামনের জানালা খোলা তার। আমার গলা শুনতে পেয়ে ঘাড় ফিরিয়ে চাইলেন। কোচ হেনরি শুধু যে ভাল কোচ তা-ই নয়, ভাল মানুষও। সব সময় শিষ্যদের সাহায্য করতে একপায়ে খাড়া।।
আমাকে লিফট দেবেন? আমার একটু দেরি হয়ে গেছে।
আমাকে অবাক করে দিয়ে কোচ হেনরি আমার দিকে চেয়ে রইলেন দুমুহূর্ত। চিনতে পারার কোন লক্ষণ নেই তাঁর দৃষ্টিতে। মুখে চিরাচরিত হাসি নেই। আমি আবারও গলা ছাড়ার আগেই অ্যাক্সিলারেটরে পা দাবিয়ে রওনা হয়ে গেলেন তিনি।