অন্যান্য যন্ত্রপাতি
একটা জাদুর কাঠি
একটা কলড্রন (পিউটার স্ট্যান্ডার্ড সাইজ–২)
এক সেট গ্লাস অথবা স্কটিক ফিঅল
একটি দূরবীন
এক সেট তামার স্কেল
ছাত্রছাত্রীরা একটা পেঁচা বা একটা বিড়াল অথবা একটা ব্যাঙ আনতে পারবে।
অভিভাবকদের জানানো যাচ্ছে যে প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদেরকে তাদের নিজস্ব ঝাড়ুলাঠি ব্যবহার করতে দেয়া হয় না।
এগুলো সবই লন্ডনে কিনতে পাওয়া যাবে? হ্যারি প্রশ্ন করল।
কোথায় পাওয়া যাবে সেটা তোমার জানা থাকলে অবশ্যই পাওয়া যাবে–হ্যাগ্রিড জবাব দিলেন।
হ্যারি এর আগে কখনও লন্ডন যায়নি। সে যে কোথায় যাচ্ছে-এটাও তার জানা ছিল না। তবে যাওয়ার পথ ও পদ্ধতি খুব বিচিত্র। ট্রেনের আসনগুলো ছোট, গতি খুবই কম। জাদুবিদ্যার সাহায্যে এরা এসকেলেটর দিয়ে উঠল। এই তো রাস্তা। এই তো সারি সারি দোকান।
হ্যাগ্রিড এত বিশালদেহী যে ভিড় ঠেলে যেতে কোন অসুবিধেই হলো না। আর হ্যারির কাজ হলো পেছনে থেকে তাকে কেবল অনুসরণ করা। তারা বইয়ের দোকান, মিউজিকের দোকান, ফাস্টফুডের দোকান এবং সিনেমা হল পার হয়ে গেল, কিন্তু কোথাও তারা জাদুর কাঠি বিক্রি হতে দেখল না। রাস্তায় লোকজনের ভিড়। এখানে মাটির তলায় কোন জাদুকরের গুপ্তধন কি লুকিয়ে থাকতে পারে? জাদুবিদ্যার বইপত্র, জাদু ঝাড়ু কোথায় বিক্রি হয়? এটা নিশ্চয়ই ডার্সলিদের তৈরি বড় রকমের কৌতুক নয়? হ্যারি যদি জানত যে ডার্সলিদের কোন রসবোধ নেই, তাহলে হয়তো সে রকম কিছু একটা ভাবত। যদিও হ্যাগ্রিড তাকে যা যা বলেছেন তার অনেক কিছুই অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। হ্যারি তাকেও খুব একটা বিশ্বাস করতে পারছিলো না।
এক জায়গায় এসে হ্যাগ্রিড বললেন–আমরা এসে গেছি, এ জায়গার নাম লিকি কলড্রন এটা খুব বিখ্যাত স্থান।
এটা দেখতে অনাকর্ষণীয় ছোট পাব। হ্যাগ্রিড যদি তাকে না দেখাতেন তাহলে হ্যারি বুঝতেই পারত না যে এটা পাব।
এটা বিখ্যাত কোনও স্থানের মত নয়, অন্ধকার ও অপরিষ্কার। কয়েকজন বয়স্কা মহিলা এক কোণায় বসে ছোট গ্লাসে শেরি পান করছিলো। তাদের মধ্যে একজন লম্বা পাইপে ধূমপান করছিলো। একজন ছোট খাটো লোক টাকমাথা বৃদ্ধ বার–ম্যানের সাথে কথা বলছিলো। তারা ভেতরে ঢুকতেই কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেল। সবাই হ্যাগ্রিডকে দেখে হাসলো ও হাত নেড়ে সম্ভাষণ জানালো। মনে হলো হ্যাগ্রিডকে সবাই এখানে চেনে। বার-ম্যান গ্লাস বের করে বলল, তোমার সেটাই দেবো?
একজন লোক বেরিয়ে এল, হ্যাগ্রিডের পূর্ব পরিচিত। হ্যারির সাথেও তার আলাপ হলো! আরও বেশ কয়েকজনের সাথে হ্যারির পরিচয় হলো। তারা বেশ একটু ঘুরে দেখল। এখানে হ্যাগ্রিডকে সবাই চেনে।
হ্যারির কাঁধে হাত রেখে হ্যাগ্রিড বললেন–না টম, আমি হোগার্টসের কাজে এখানে এসেছি।
গুড লর্ড ভদ্রলোক বললেন-এ কি সে?–তা কি করে হয়? লিকি কলড্রনের দোকানপাট মুহূর্তের মধ্যেই সম্পূর্ণ নীরব হয়ে গেল।
আমার আত্নাকে আশীর্বাদ করুন। বারের বৃদ্ধ লোকটা বললেন আমার কী সৌভাগ্য যে হ্যারি পটার আপনার সাথে দেখা হলো। কি সম্মানের বিষয়.. !
বৃদ্ধ বার-ম্যান বারের পেছন থেকে বের হয়ে হ্যারির দিকে ছুটে আসলেন। তিনি হ্যারির হাত ধরলেন–তার চোখে জল।
মি. পটার, তোমাকে পুনরায় স্বাগতম, মি. পটার তোমাকে পুনরায় স্বাগতম। কী বলবে হ্যারি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। হ্যারি অবাক হয়ে দেখল–সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে। হ্যাগ্রিডের মুখে স্মিত হাসি। বৃদ্ধা মহিলাটির তামাক শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু তিনি পাইপ টেনেই চলছেন সেদিকে খেয়াল না করে।
তারপর চেয়ার টানাটানির শব্দ শোনা গেল। পরক্ষণেই হ্যারি দেখল যে লিকি কলড্রনের প্রত্যেকেই তার সাথে করমর্দন করছেন।
আমি ডরিস ক্রকফোর্ড, কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না, তোমার সাথে দেখা হবে, মি. হ্যারি পটার।
তোমার সাথে দেখা হওয়ায় আমি নিজেকে খুব গর্বিত মনে করছি, মি. পটার।
তোমার সাথে করমর্দন করার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। আজ আমার আনন্দের দিন।
তোমার সাথে দেখা হওয়াতে আমি যে কত আনন্দিত হয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না–মি. পটার’ ডিডালুস ডিগল বললেন।
জবাবে হ্যারি বলল–আমি আপনাকে আগে দেখেছি। একটা দোকানে আপনি আমাকে বো করেছিলেন।
ডিডালুস সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন–তোমরা কি দেখেছ–সে আমাকে এখনও মনে রেখেছে এখনও।
হ্যারি সবার সাথে করমর্দন করল। ডরিস ক্রকফোর্ড প্রায় সময়ই হ্যারির কাছাকাছি থাকলেন।
একজন তরুণ উদ্বিগ্নভাবে হ্যারির দিকে এগিয়ে এলেন। হ্যাগ্রিড বললেন–হ্যারি, ইনি অধ্যাপক কুইরেল। হোগার্টসের জাদুবিদ্যা স্কুলে তিনি তোমার একজন শিক্ষক।
প-প-পটার তোতলাতে তোতলাতে অধ্যাপক কুইরেল বললেন হ্যা…রি। তোমার সাথে দেখা… হওয়াতে আমি যে ক–কত খুশি হয়েছি ভা-ভা-ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
আপনি কী ধরনের জাদু শেখান, অধ্যাপক কুইরেল।
কালো জাদুর বিরুদ্ধে আত্নরক্ষার জাদু–অধ্যাপক কুইরেল জবাব দিলেন।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিতে হ্যারির–প্রায় দশ মিনিট লেগে গেল।
হাতে আর সময় নেই। হ্যারি, তাড়াতাড়ি কর। হ্যাগ্রিড তাগিদ দিলেন।
ডরিস ক্রকফোর্ড হ্যারিকে বিদায়ী করমর্দন করলেন। এরপর ওরা দোকান থেকে বেরিয়ে এলেন।