- বইয়ের নামঃ হ্যারি পটার এন্ড দি ফিলসফারস স্টোন (১)
- লেখকের নামঃ জে. কে. রাওলিং
- প্রকাশনাঃ অঙ্কুর প্রকাশনী
- সিরিজ বইঃ হ্যারি পটার সিরিজ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রহস্য, রোমাঞ্চকর, গোয়েন্দা কাহিনী
হ্যারি পটার এন্ড দি ফিলসফারস স্টোন (১)
০২. কাঁচের খাঁচার অন্তর্ধান
হ্যারি পটারকে যেদিন ডার্সলিরা কোলে তুলে নিয়েছিলেন, সেদিন থেকে দেখতে দেখতে দশটা বছর কেটে গেছে। তবে প্রিভেট ড্রাইভে তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি।
সূর্য আগের মতোই পূর্বদিকে উঠছে আর পশ্চিমে অস্ত যাচ্ছে। আজ থেকে ঠিক দশ বছর আগে যেদিন মিসেস ডার্সলি তার দরোজার সামনে থেকে হ্যারি পটারকে কুড়িয়ে কোলে তুলে নিয়েছিলেন, যে রাতে মি. ডার্সলি পেঁচা সম্পর্কে দুঃখজনক খবর শুনেছিলেন। সবই আগের মত চলছে, শুধু দেয়ালে ঝুলানো তাদের ছবিগুলো দেখে বোঝা যায় কত বছর পার হয়ে গেছে।
ডাডলিও আর এখন শিশু নয়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি ছেলে সাইকেল চালাচ্ছে। মেলা দেখতে যাচ্ছে। বাবার সাথে কম্পিউটারে গেমস খেলছে। ঘরে ঢুকে কিছুতেই বোঝা যাবে না এখানে ডাডলির কোন এক সঙ্গী আছে বা আর কেউ এখানে থাকে! হ্যারি পটার তখনও ঘুমোচ্ছে। কিন্তু বেশিক্ষণ সে ঘুমোতে পারল না। আন্ট পেতুনিয়ার কর্কশ কণ্ঠ তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলল। তার উচ্চ কণ্ঠ দিনের নীরবতা ভঙ্গ করল
এখনি উঠে পড়। এখুনি।
হ্যারি উঠে পড়ল।
তার আন্ট দরোজা ধাক্কাচ্ছেন।
হ্যারি, ওঠো বলে আন্ট পেতুনিয়া চিৎকার করছেন।
হ্যারি বুঝতে পারল তার আন্ট রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছেন। চুলার ওপর কড়াই বসানো হচ্ছে।
পাশ ফিরে হ্যারি স্বপ্নের কথা ভাবছিল। একটু আগেই সে একটা মজার স্বপ্ন দেখছিল। স্বপ্নে দেখছিল যে একটা উড়ন্ত মোটর বাইকে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আন্ট পেতুনিয়া দরোজার কাছে এসে আবার জিজ্ঞেস করলেন–হ্যারি তুমি কি উঠেছ?
উঠেছি। হ্যারি জবাব দিল।
তাড়াতাড়ি এদিকে এসো। আন্ট হ্যারিকে নির্দেশ দিলেন–তুমি শূকরের মাংসের দিকে খেয়াল রেখো। দেখো সবকিছু যেন পুড়ে না যায়। আমি চাই আজ ডাডলির জন্মদিনে সব কিছু নিখুঁত হোক।
হ্যারি বিড় বিড় করে কী যেন বলল।
আন্ট তাকে প্রশ্ন করলেন–হ্যারি, তুমি কি কিছু বলছিলে?
হ্যারি জবাব দিল–না, কিছু নাতো।
ডাডলির জন্মদিনের কথা তো সে ভুলে যেতে পারে না। হ্যারি বিছানা থেকে উঠে মোজা খুঁজতে লাগল। বিছানার নিচেই সে এক জোড়া মোজা পেল। মোজার ওপর থেকে একটি মাকড়সাকে তাড়িয়ে দিয়ে হ্যারি মোজা দুটি পরল। হ্যারি মাকড়সাকে ভয় পায় না কারণ কাবার্ডে অনেক মাকড়সা। আর সিঁড়ির নিচের ঘুপচির এই কাবার্ডেই হ্যারিকে ঘুমোতে হয়।
জামা পরে হ্যারি নিচে রান্নাঘরের দিকে রওনা হলো। ডাডলির জন্মদিনের উপহারগুলোর জন্য টেবিলটাই দেখা যাচ্ছে না। জন্মদিনে ডাডলি তার পছন্দের সব জিনিসই পেয়েছে বলে মনে হলো। সে নতুন কম্পিউটার পেয়েছে, আরেকটা টেলিভিশন পেয়েছে, রেসের বাইক পেয়েছে।
ডাডলি কেন রেসের বাইক চেয়েছে এটা হ্যারির কাছে রহস্যই রয়ে গেল। কাউকে সাইকেল দিয়ে ধাক্কা মারার জন্য হলে ঠিক আছে। ডাডলি খুব মোটা এবং ব্যায়াম সে একেবারেই পছন্দ করে না। অবশ্য কাউকে ঘুষি মারা সেটা অন্য কথা–বিশেষ করে হ্যারিকে। এই ব্যায়ামটাই সে সব সময় করে থাকে। তবে হ্যারিকে বাগে পাওয়া সহজ ছিল না।
হ্যারি কিন্তু গায়ে–গতরে তেমন বড় হয়ে ওঠেনি। তার শরীর রোগা পাতলা। ডাডলির বড় জামা–কাপড়ে তাকে আরো বেশি রোগা দেখায়। আকারে–আয়তনে ডাডলি ছিল তার চার গুণ। হ্যারির মুখ পাতলা, হাঁটু গোল, চুল কালো আর চোখ উজ্জ্বল সবুজ। চোখে গোল কাঁচের চশমা। চশমায় অনেক সেলোটেপের টুকরো, কারণ ডাডলি প্রায়ই তার নাকে ঘুসি মেরে চশমা ভাঙতো। নিজের চেহারার যে জিনিসটা হ্যারির ভালো লাগে তা হলো তার কপালের চিকন দাগ। ঝিলিক মারা বিদ্যুতের মতো আঁকাবাঁকা।
তার কপালে এই দাগ কেন-এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে আন্ট পেতুনিয়া জবাব দেন–যখন মোটর দুর্ঘটনায় তোমার বাবা–মা দুজনই মারা যান তখন থেকেই তোমার কপালে এই দাগ। এর বাইরে তুমি আমাকে আর কোন প্রশ্ন করো না।
হ্যারি জানে, ডার্সলি পরিবারের সাথে থাকতে হলে-এ ব্যাপারে দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন করা যাবে না।
হ্যারি যখন কড়াই-এ শূকরের মাংস উল্টাচ্ছিলো ঠিক তখনই আঙ্কল ভার্নন রান্নাঘরে প্রবেশ করলেন।
চুল আঁচড়াওনি কেন? তিনি হ্যারির কাছে যেন কৈফিয়ত চাইলেন।
আঙ্কল ভার্নন সপ্তাহে একদিন পত্রিকার শিরোনামের ওপর চোখ বোলান এবং উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করেন–হ্যারির এখনই চুল কাটা দরকার। কিন্তু এতে কিছু যায় আসে না। হ্যারির চুল যথারীতি বাড়তেই থাকে।
হ্যারি যখন ডিম ভাজছিল ঠিক তখনই ডাডলি এবং তার মা রান্নাঘরে প্রবেশ করলেন। ডাডলির চেহারার সাথে আঙ্কল ভার্ননের অনেক মিল আছে। ডাডলির মা বলেন, ডাডলির চেহারা শিশু এ্যাঞ্জেলদের মতো। আর হ্যারির কাছে মনে হয় ডাডলি পরচুলা পরা একটা শূকর।
টেবিলের ওপর ডিম ও শূকরের মাংস রাখতে হ্যারিকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। কারণ টেবিলে তেমন জায়গা নেই। আর ডাডলি তখন তার উপহারগুলো গুনছে।
উপহার গুনতে গুনতে ডাডলির মন একটু দমে গেল।