- বইয়ের নামঃ একান্ন পদ
- লেখকের নামঃ অক্ষয়চন্দ্র সরকার
- বিভাগসমূহঃ কবিতা
একান্ন পদ
১।
বিভাষ। প্রভাত সময়।
নিশি অবশেষে জাগি সব সখীগণ বৃন্দাদেবী মুখ চাই।
রতিরস আলসে শুতি রহু দুহুঁজন তুরিতঁহি দেহ জাগাই।।
তুরিতঁহি করহ পয়ান।
রাই জাগাই লেহ নিজ মন্দিরে নিকটহি (১) হোয়ত বিহান।।
শারী শুক পিক সকল পক্ষীগণ তুই সব (২) দেহ জাগাই।
জলিলাগমন সবহু মেলি ভাগই শুনইতে জাগই (৩) রাই।।
বৃন্দাদেবী সব সখীগণে জনে জনে মধুর মধুর করু ভাষ। (৪)
মন্দির নিকটহি ঝারি লই ঠাড়ই হেরতহি গোবিন্দ দাস।।
———
(১) ভিন্নপাঠ—“য নহি।” (২) “তুহুঁ সব” ভিন্নপাঠ—“সুস্বরে। (৩) “চমকই”—ভিন্নপাঠ। (৪) ভিন্নপাঠ—“বৃন্দাবনে সকল পক্ষীগণে মন্দ মন্দ করুভাষ।”
২।
বিভাষ বা ললিত।
সময় জানি সখী মিলল আই।
আনন্দে মগন দুহুঁ (১) দুহুঁ মুখ চাই।
দুহুঁজন সেবন সখীগণ কেল।
চৌদিকে চাঁদ হেরি রহি গেল।।
নীলগিরি বেড়ি কিয়ে কনকের মাল।
গোরি মুখ সুন্দর ঝলকে রসাল।
বানরী রব দেই, কক্খটী নাদ।
গোবিন্দ দাস পহুঁ শুনি (২) পরমাদ।
——–
(১) “মগন ভেল”—ভিন্নপাঠ। (২) “কহ শুনি”–-ভিন্নপাঠ।
৩।
বিভাষ বা রামকিরি।
নিশি অবশেষে কোকিল ঘন কুহরই জাগলি রসবতী রাই।
বানরী নাদে চমকি উঠি বৈঠল তুরিতঁহি শ্যাম জাগাই।।
শুন বর নাগর কান!
তুরিতঁহি বেশ বনাহ যতন করি যামিনী ভেল অবসান॥ধ্ৰুং।
শারী শুক পিক কপোত ঘন কুহরত ময়ূর ময়ূরী করু নাদ।
নগরক লোক যব জাগি বৈঠব তবহি পড়ব পরমাদ।।
গুরুজন পরিজন ননদিনী দুজন তুহুঁ কিনা জানসি রীত।
গোবিন্দদাস কহে উঠি চলু সুন্দরী বিঘটন কামুক পিরীত।।
৪।
হরি নিজ আঁচরে রাই মুখ মুছই কুঙ্কুম তনু পুন মাজি।
অলকা তিলক দেই সীথি বনায়ই চিকুরে কবরী পুন সাজি।।
মাধব সিন্দুর দেয়ল সীঁথে।
কতহুঁ যতন করি উর পর লেখই মৃগমদ চিত্ৰক পাঁতে।
মণিময় নূপুর চরণে পরায়ল উর পর দেয়লি হার।
তাম্বুল সাজি বদন ভরি দেয়ল নিছই তনু আপনার।।
নয়নহি অঞ্জন করল সুরঞ্জন চিবুকহি মৃগমদ বিন্দ।
চরণ কমল তলে যাবক লেখই কি কহব দাসগোবিন্দ।
৫।
বিভাষ।
বেশ বনাই বদন পুন হেরইতে পদতলে পড় বারে বার।
ঢর ঢর (১) লোর ঢরকি বহে লোচনে নিজ তনু নহে আপনার।।
বিনোদিনী (২) কোরে আগোরল কান।
দেহ বিদায় মন্দিরে হাম যাওব দিনকর করল পয়ান॥ ধ্রু॥
কামুক চিত থির করি সুন্দরী কুঞ্জর্সে গমনহি কেল।
বসনহি বারি ঝাঁপি মণিমঞ্জীর নিজ মন্দিরে চলি গেল।।
রতন শেজোপর বৈঠলি সুন্দরী সখীগণ ফুকরই চাই।
রজনী পোহায়ল গুরুজন জাগল গোবিন্দদাস বলি যাই।।(৩)
———-
(১)“মরি মরি” ইতি বা পাঠ। (২) “সুন্দরী কোরে।”
(৩) “কানুক চিত থির করি সুন্দরী কুঞ্জহি বাহির ভেল।
রতন পালঙ্গপরি বৈঠল রসবতী নিজগেহে আসি দেখা দেল।।
বিরহ মদন দাহে বিরস বদন ফুকারই সখী মুখ চাই।
রজনী পোয়ল” ইত্যাদি–ভিন্নপাঠ।
৬।
গুরুজন জাগল ভৈ গেল বিহান।
গৃহ নিজ কার্য সমাপল জান।।
কো সখী দধি মন্থন করু যাই।
ঘন ঘন গরজন উপমা নাই।।
কোই সখী গুরুজন সেবন কেলি।
কনক কুম্ভ লই কোই চলি গেলি।।
কুসুম তোড়ি কোই গাঁথই হার।
কোই ঘর বাহির করত বিহার।
নিতি নিতি করতঁহি ঐছন রীত।
গোবিন্দদাস কহে অনুপ চরিত।
——–
৭।
রামকিরি বা রামকেলি।
রামক নীল বসন কাহে পিন্ধ।
অরুণ উদয় ভেল, না ভাঙ্গল নিন্দ।। (১)
ব্রজকুল চান্দ নিছনি যাঙ তোর।
অঙ্গ বিভঙ্গ কতহুঁ তনু মোড়।।
ফাগু ভরল কিয়ে লোচন জোর। (২)
কাঁহা লাগল হিয়া কণ্টক আঁচড়।।
ঝামরু ভেল নীল উতপল দেহ।
জানি পাপ দিঠি দেয়ল কেহ।।
মঙ্গল সিনান করাব আজু গেহ।
তবহুঁ ভুঞ্জাব দধি ওদন এহ।।
এতহিঁ শুনল যব যশোমতী ভাষ।
আঁচরে বারি (৩) নিবারল হাস।।
গোবিন্দ দাস কহে ব্ৰজ অধিদেবী।
পুনহি নিরাপদ গৌরিক সেবি।।
———-
(১) “উদিত অরুণ নাহি ভাঙ্গল নিদ।”
(২) ফাগু অরুণ কিয়ে লোচনক ওর।”
(৩) ঝাঁপি।
৮।
রামকিরি বা সুহই।
নিজ গৃহে শয়ন করল যব্ কান।
জননী জাগায়ল ভৈগেল বিহান।।
আলস ত্যজি উঠ যদুরায়।
আগত ভানু রজনী চলি যায়।।
শয়ন উপেখি চলল বরকান।
নূপুরের নাদে জাগল পাঁচবাণ।।
প্রাতহি দোহঁন করত যদুষ্টাদ।
তুরিতহি দেয়ল দোহঁন ছাঁদ।।
নিকটহি গোঠ মিলল যব আয়।(১)
গোবিন্দদাস মুটকি লই ধায়।।
———–
(১) “নিজহি গোঠে মিলল যদুরায়।
৯।
গোঠ মাঝহি করল পয়ান।
গোধন দোহন করতি হঁ কান।।
ঘন ঘন হাম্বা রব বৎসক রাব।
হুঁ হুঁ গরজে ধেনু সব ধাব।।
সুন্দর অপরূপ শ্যামরু চন্দ।
দোহত ধেনু কত কত ছন্দ।।
গোধন গরজত বড়ই গভীর।
ঘন ঘন দোহন করত যদুবীর।।
গোরস ধীর বিরাজিত অঙ্গ।
তমালে বিথারল মোহিত রঙ্গ।।
মুটকি মুটকি ভরি রাখত ঢারি।
গোবিন্দদাস পহুঁ করত নেহারি।।
১০।
বিভাষ।
রজনী প্রভাতে চলল বররঙ্গিণী নদী অবগাহন রঙ্গে।
সুবাসিত তৈল হলদি লই আমলকী (১) প্রিয় সহচরী সঙ্গে।।
গজবর গতি জিনি গমন সুমন্থর চাঁদ জিনিয়া মুখ-জ্যোতিঃ।
কবরী বিরাজিত মণিময় সুরচিত সীখে উজারল মোতি।।
নীলবসন মণি বলয়া বিরাজিত উচকুচ কঞ্চুক ভার।
শ্রবণহি টাকট মণিময় হাটক কণ্ঠে বিরাজিত হার।।
চরণ কমলতল আতুল রাতুল রুনুঝুনু নূপর বাজে।
গোবিন্দদাস কহে ওরূপ হেরইতে ভুলল বিদগধ রাজে।।