খুব কঠোরভাবে বললে এই বইটি নাম হওয়া উচিৎ না ‘The Selfish Cistron’ of ‘The Selfish Chromosome but The slightly selfish big bit of chromosome and the even more selfish little bit of chromosome, sports ‘ক্রোমোজোমের খানিকটা স্বার্থপর বড় টুকরা এবং ক্রোমোজোমের আরো বেশী স্বার্থপর ছোট টুকরো”। অন্ততপক্ষে বইয়ের শিরোনাম হিসাবে এটি তেমন আকর্ষণীয় নয়। সুতরাং ক্রোমোজোমের সংক্ষিপ্ত অংশ বহু প্রজন্ম টিকে থাকার মত যারা সম্ভাবনাময়, তাদের জিন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে আমি এই বইটির নাম দিয়েছি, ‘দ্য সেলফিশ জিন।
আমরা আবার সেই প্রসঙ্গেই ফিরে এসেছি, অধ্যায় ১ এর শেষে যা আমরা ছেড়ে এসেছিলাম। সেখানে আমরা দেখেছিলাম যে, স্বার্থপরতাই প্রত্যাশা করা যাবে এমন কোনো কিছুর কাছে, যা কিনা ‘প্রাকৃতিক নির্বাচনের কাজ করার একক’ শিরোনামটি দাবী করতে পারে। আমরা দেখেছি কেউ কেউ প্রজাতিকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কাজ করার একক হিসাবে মনে করেন, অন্যরা ভাবেন এই দাবী করতে পারে জনগোষ্ঠী অথবা কোনো প্রজাতির মধ্যে কোন গ্রুপ বা গোষ্ঠী, আবার কেউ কেউ ভাবেন প্রজাতির একক সদস্যরা হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কাজ করার একক। আমি বলেছিলাম যে, আমি মনে করি জিনরাই হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মৌলিক একক এবং সেকারণে আত্ম-স্বার্থের মৌলিক একক। আমি এখন যা করলাম সেটি হচ্ছে জিনকে ‘সংজ্ঞায়িত করলাম এমনভাবে, যে আমি চাইনা সেখানে ন্যূনতম সংশয় আর ভুল হবার অবকাশ থাকুক!
প্রাকৃতিক নির্বাচনের সবচেয়ে সাধারণতম রুপে নানা এনটিটি বা সত্তার বৈষম্যমূলক ভাবে টিকে থাকাকেই বোঝায়। কিছু সত্তারা টিকে থাকে আর কিছুর কোনো অস্তিত্ব থাকে না। এই বাছাইকৃতভাবে মারা যাওয়ার বিষয়টির এই পৃথিবীর উপর কোনো প্রভাব রাখতে হলে, আরো একটি বাড়তি শর্ত মেনে নিতে হবে। প্রতিটি সত্তাকে অবশ্যই অস্তিত্বশীল হতে হবে বহু সংখ্যক প্রতিলিপি রুপে। এবং কমপক্ষে কিছু সত্তার অনুলিপি রুপে– যথেষ্ট পরিমান বিবর্তন সময়ের জন্যে এর টিকে থাকার অবশ্যই সম্ভাবনা থাকবে। ছোটো জেনেটিক ইউনিটগুলোর এই বৈশিষ্ট্যাবলী আছে: প্রজাতির কোনো একক সদস্য, গোষ্ঠী বা গ্রুপ বা প্রজাতির এই বৈশিষ্ট্য নেই। গ্রেগর মেন্ডেলের একটি অসাধারণ অর্জন হচ্ছে তিনি দেখিয়েছিলেন যে, হেরেডিটারি বা বংশগতির এককগুলোকে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এমনভাবে গ্রহন করা যেতে পারে, যেন সেটি অবিভাজ্য এবং স্বতন্ত্র কোনো পার্টিকেল বা ক্ষুদ্রতর কোনো অংশ বা কণা। ইদানীং আমরা জানি যে এটি একটি বেশী সরলীকরণ। এমনকি একটি সিসট্রোনও মাঝে মাঝে বিভাজিত হতে পারে এবং যেকোনো দুটি জিন একই ক্রোমোজোমে আসলে পুরোপুরিভাবে স্বতন্ত্র স্বাধীন নয়। আমি যেটা করেছি সেটি হচ্ছে, কোনো একটি জিনকে একটি ইউনিট হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছি, যা কিনা একটি উচ্চ মাত্রা অবধি অবিভাজ্য ক্ষুদ্র স্বতন্ত্র কনার আদর্শ বৈশিষ্ট্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। কোনো একটি জিন অবিভাজ্য নয় বটে, কিন্তু এটি কদাচিৎ বিভাজিত হয়। কোনো একটি একক সদস্যর শরীরে এটি হয় সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থিত থাকবে বা সুনির্দিষ্টভাবে অনুপস্থিত থাকবে। একটি জিন অখণ্ডিত অবস্থায় পিতামহ থেকে পৌত্রের শরীরে যাত্রা করে। যা অতিক্রম করে মধ্যবর্তী প্রজন্মটি, কিন্তু সেখানে তার কোনো মিশ্রণ হয়না বা অন্য কোনো জিনের সাথে এটি মিশে যায় না। যদি জিনরা সারাক্ষণই একে অপরের সাথে মিশে যেত, ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ বলতে আমরা এখন যা বুঝি, সেটি অসম্ভব একটি ব্যাপার হতো। ঘটনাচক্রে, এটি প্রমাণ হয়েছিল ডারউইনের জীবদ্দশায় এবং এটি ডারউইনকে ভীষণ চিন্তায় ফেলেছিল কারণ সেই সময় ধারণা করা হতো বংশগতি বা হেরেডিটি হচ্ছে মিশে যাবার একটি প্রক্রিয়া। মেন্ডেলের আবিষ্কার ততদিনে প্রকাশিত হয়েছিল, এবং সেটি ডারউইনকে দুশ্চিন্তা মুক্ত করতে পারতো, কিন্তু হায় তিনি সে বিষয়ে কিছুই জানতেন না। ডারউইন ও মেন্ডেল দুজনেরই মারা যাবার বহু বছর পরে ছাড়া আসলে কেউই মনে হয় সেটি মনোযোগ দিয়ে পড়েননি। হয়তো মেন্ডেল নিজেও তার আবিষ্কারের গুরুত্বটি বুঝতে পারেননি, নয়তো তিনি হয়তো ডারউইনকে বিষয়টি জানিয়ে লিখতেন।
জিনের পার্টিকুলেটনেস বা ক্ষুদ্র কণার মত বৈশিষ্ট্যের আরো একটি দিক হচ্ছে এটি কখনোই সেনাইল বা জরাগ্রস্থ হয় না। এটি যেমন মিলিয়ন বছর বয়স হলেও মরার সম্ভাবনা যতটুকু বাড়েনা, ঠিক তেমনই সেই সম্ভাবনা বাড়ে না এর যখন বয়স মাত্র একশ। এটি এক শরীর থেকে অন্য শরীরে লাফিয়ে চলে প্রজন্মান্তরে, একটার পর একটি শরীরকে তার নিজের মত করে ব্যবহার করে, তার নিজের উদ্দেশ্যে, ধারাবাহিকভাবে মরনশীল দেহগুলো সে পরিত্যাগ করে, দেহগুলো জরাগ্রস্থ আর মৃত্যুর কাছে পরাজিত হবার আগে।
জিনরা আসলে অমর, অথবা বরং তাদের সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে জিনগত সত্তা হিসাবে যারা এই আখ্যা পাবার জন্য সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছায়। আমরা, এই পৃথিবীতে একক সেই সারভাইভাল মেশিন, কয়েক দশক বেঁচে থাকার আশা করতে পারি। কিন্তু জিনরা এই পৃথিবীতে তাদের যে সময়ব্যাপী জীবনকাল আশা করতে পারে, সেটি দশক দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব না বরং হাজার এবং মিলিয়ন বছর দিয়ে পরিমাপ করতে হবে।