রেমির দিকে তাকালো স্যাম। তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো রেমি। স্যাম বুঝতে পারছে তাদেরকে অবশ্যই দ্বিতীয় বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ ছিলো, অন্তত আগুনের ঘটনার পর সেটাই স্বাভাবিক ছিলো। আমাদেরকে এখানে নিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে, স্যাম বলল, তবে আমরা আসলে রবিন হুড, কিং জন, উইলিয়াম দ্য মার্শাল এবং চার চেম্বারের সাথে জড়িতগুলোর ব্যাপারেই জানতে চাচ্ছি।
তোমরা চার গুহার কথা বলছো? পার্সি জিজ্ঞেস করলেন।
ওরকমই কিছু মনে হয়, বলল স্যাম। পার্সির নাম শুধরে দেওয়াটা বুঝাচ্ছে যে লোকটা এখন আবার স্বাভাবিকত্বে ফিরে এসেছে। আপনি কি জানেন ওটা কোথায় আছে?
অনেকদিন আগে গিয়েছিলাম ওটাতে। মনে হয় আবারো খুঁজে বের করতে পারবো। তবে ওখানে কাউকে যেতে মানাই করবো আমি। খুবই ভয়ানক জায়গা। অনেক প্যাঁচ-মোচড় আছে ওটাতে। ঘুরে দেখার জন্য ওটার থেকেও আরো অনেক অনেক ভালো জায়গা আছে কিন্তু।
আমাদের খোঁজাখুঁজি করতে ভালো লাগে, প্রফেসর, রেমি বলল। হয়তো আপনি আমাদেরকে সেখানে যাওয়ার পথটা বলে দিতে পারবেন?
প্রায় দুপুর হয়ে যাচ্ছে তো। আমি তো এখনো লাঞ্চ করিনি। বলে ঘুরে বাইরের গুহা এবং দোকানে উঠার সিঁড়িটার দিকে পা বাড়ালেন পার্সি। আমার মনে হচ্ছে আমি কিছু একটা ভুলে যাচ্ছি। তবে আমার জীবনই তো এমন। ভুললামনা মানুষ। ওখানে কেন যেতে চাও তোমরা? অলড্রিজকে জিজ্ঞেস করলেন।
তারা আসলে ঐতিহাসিক আর্টিফ্যাক্টের খোঁজ করছে।
ওহ, হ্যাঁ, এখন মনে পড়েছে আমার। কিছুই পাওয়া যাবে না ওখানে। অনেক সুড়ঙ্গ আছে, ওগুলোতে ঢুকলে পথ হারানোরও সম্ভাবনা আছে। আর দেয়ালে কিছু কেল্টিক খোদাইকৃত নকশাও আছে। এগুলোই তো। আর্টিফ্যাক্টগুলো তো অনেক আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে স্যাম অলড্রিজকে জিজ্ঞেস করলো, আপনি নিশ্চিত কাজটা ঠিক হবে?
ভুলে যেয়েন না, পার্সি কিন্তু আজ স্বাভাবিক নেই। আগুনটা নিশ্চিতভাবেই তাকে অনেকটা নাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, এখন আপনি চাইলে অন্য বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারেন। আপনি চাইলে আমি তাকে কল করে জানাবো।
যেহেতু প্রফেসর অবস্থা ভালো নয়, তাই আমাদের মনে হয় সেটাই করা উচিৎ, যেহেতু এসবের ওপর নাইজেলের জীবন-মরণ নির্ভর করছে, তাই সে আর এখন এই ভুললামনা অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসরের ওপরে ভরসা করতে পারছে না। প্রফেসর অলড্রিজকে কল করার কথে বলে সে রেমির কাছে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা জানালো।
তোমার সাথে আমি একমত, তবে…
তবে কী?
প্রফেসর কিন্তু ঠিকই চার গুহা আর কেল্টিক নকশাগুলোর কথা বলেছে। এর সাথে কিন্তু লাযলোর বলা চার চেম্বার আর সাইফার হুইলের কেল্টিক খোদাইটারও মিল আছে। এরমানে হচ্ছে তিনি ভুল কিছু বলছেন না।
উনি মনে করতে পারলে আর ভুল করেন না। কিন্তু মনে হওয়ারই তো কোনো ভরসা নেই।
আমার মনে হচ্ছে শর্ট-টার্ম মেমরি লস ছাড়াও আরো কিছু সমস্যা আছে প্রফেসরের। যেহেতু সেই ছেলেবেলা থেকেই তিনি এই গুহাগুলোতে ঘুরে বেড়াতেন…
এখন কিন্তু ওসবের সময় নেই, রেমি। আমরা এখানে এসেছি ম্যাপের খোঁজে, আর তিনি আমাদেরকে ওয়াইন সেলার ঘুরিয়ে দেখালেন। উনার সাথে আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটলে হয়তো তিনি পারলে আমাদেরকে অন্য আরেক বিপদেও ফেলতে পারেন। এটার সম্ভাবনাও কিন্তু কম না। এমনিতেই নাইজেলকে এসবের মধ্যে জড়িয়ে বিপদে ফেলে দিয়েছি আমরা। তাই এখন আমাদের মূল কাজ হলো-নাইজেলকে বাঁচানো। আর পার্সির কিন্তু বিপদ নিয়ে কোনো ধারণাও নেই। এটা নিয়েই বেশি দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে আমার।
আমি অবশ্য ওভাবে ভাবিনি। আশা করো যেন প্রফেসর অলড্রিজ অন্য বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
কল করার জন্য দোকান থেকে বেরিয়ে গেলেন অলড্রিজ। ফিরে এলেন আবার কিছুক্ষণের ভিতরেই। স্যরি, তবে সুইফটের স্ত্রী বলেছে তাকে নাকি বিকালের আগে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। একটা বিজনেস ট্রিপে গেছে। সে আসলেই মহিলা কল করবে আমাকে। তবে আমার মনে হচ্ছে যে আপনারা চাইলে পার্সির ওপর ভরসা করে দেখতে পারেন। সে এটা করতে চায়। বিশেষ করে যেহেতু এটার সাথে ঐতিহাসিক গুরুত্বের আবিষ্কারের বিষয়টা জড়িয়ে আছে, তাই সে খুব করেই চায় এটার অংশ হতে।
তারা যদি সাধারণ কোনো মিশনে আসতো, তাহলে পার্সির সাথে কাজ করতে কোনো সমস্যা হতো না। ঘড়ি দেখলো স্যাম। দুপুর গড়াচ্ছে মাত্র। যেভাবে সময় চলে যাচ্ছে, তাতে এখন এটা ছাড়া উপায়ও নেই তাদের হাতে। নাইজেল এখন বন্দী হয়ে আছে শত্রুদের হাতে। পার্সিই এখন তাদের একমাত্র অপশন। ম্যাপটা খুঁজে না পেলেও হয়তো অবস্থানটা মনে করে জায়গাটা চিহ্নিত করে দিতে পারবেন তিনি। তাই সবকিছুই অলড্রিজকে খুলে বলল স্যাম। এমনকি তারা কেন এটার সাথে পুলিশকে জড়াচ্ছে না সেই কারণটাও বলল।
এতে আসলেই অনেক কিছু বদলে যাচ্ছে, অলড্রিজ বললেন। গিয়ে দেখি আমি তাকে শান্ত করে ম্যাপের অবস্থানটা বের করতে পারি কিনা। আমি নিশ্চিত সে এটা এই দোকানেই রেখেছে। এইজন্যই তো আমাদেরকে প্রথমেই
এখানে নিয়ে এসেছে। গুহা নিয়ে প্রায়ই এলোমেলো লেগে যায় তার।
ধন্যবাদ, স্যাম বলল।
****
স্যাম ও রেমি বাইরে অপেক্ষা করছে, আর ওদিকে অলড্রিজ কথা বলছেন পার্সির সাথে।