- বইয়ের নামঃ দ্য সলোমন কার্স
- লেখকের নামঃ ক্লাইভ কাসলার
- প্রকাশনাঃ রোদেলা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী, উপন্যাস
দ্য সলোমন কার্স
০১. গোয়াডালক্যানেল, সলোমন আইল্যাণ্ড, ১১৭০ এ.ডি.
বিশ্বের এক নম্বর অ্যাডভেঞ্চার লেখক ক্লাইভ কাসলার-এর — দ্য সলোমন কার্স
সহযোগী লেখক : রাসেল ব্লেক
রূপান্তর: সাঈম শামস্
অনুবাদকে উৎসর্গ
আফসানা আক্তার বিন্দু
প্রায় চার বছরের বন্ধুত্বের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি,
“সব মেয়ে খারাপ নয়” এই বাক্যটিকে সঠিক প্রমাণ করেছ তুমি।
.
পাঠকদের উদ্দেশে কিছু কথা
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার অনুবাদের উপর ভরসা রেখে ক্লাইভ কাসলার-এর দ্য সলোমন কার্স সংগ্রহ করার জন্যে। যারা আমার অনূদিত ব্ল্যাক অর্ডার বা শক্ ট্রিটমেন্ট পড়েছেন তারা ইতিমধ্যে জানেন আমি কেমন অনুবাদ করি।
ব্ল্যাক অর্ডার ও শক্ ট্রিটমেন্ট-এর ভাবানুবাদ যেভাবে পাঠকদেরকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছিল এবার দ্য সলোমন কার্স সেই সম্ভষ্টির মাত্রাকে অতিক্রম করতে পারবে আমার বিশ্বাস।
দ্য সলোমন কার্স ট্রেজার হান্টিং থ্রিলার নভেল। অর্থাৎ, গুপ্তধন উদ্ধার সম্পর্কিত রোমাঞ্চ উপন্যাস। কাহিনি সংক্ষেপ যেহেতু পেছনের কভারে দেয়া আছে। আমি বরং এখানে পাঠকদেরকে এই বইয়ের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে একটু ধারণা দিচ্ছি।
বইটির প্রথম অংশে বেশ সময় নিয়ে টুকরো টুকরো দৃশ্যের সাহায্যে কাহিনির গাঁথুনি শুরু হয়েছে, পাশাপাশি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন চরিত্রের সাথে। অতএব, প্রথম অংশ একটু ধীর গতিতে এগিয়েছে। তারপর দৌড়, একটু বিশ্রাম, আবার দৌড়, আবার একটু বিশ্রাম; এভাবে চক্রাকারে এগিয়েছে উপন্যাসের কাহিনি। শেষ অংশে গিয়ে আর বিশ্রাম নেই। শুধু দৌড়! একদম নাভিশ্বাস তুলে তারপর পাঠকদের রেহাই দিয়েছেন ক্লাইভ কাসলার।
বইটি অনুবাদ করার জন্য আমাকে দিয়েছিলেন সম্মানিত প্রকাশক রিয়াজ খান। তার পছন্দের বই। পড়তে গিয়ে আমারও পছন্দ হয়েছে। আর অনুবাদ করে তো এখন প্রেমেই পড়ে গেছি।
পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানচ্ছি যে, এবার প্রথমবারের মতো নিজেই নিজের বইয়ের প্রুফ দেখে প্রয়োজনীয় সংশোধন করেছি। হয়তো তারপরও শতভাগ নিখুঁত করতে পারিনি তবে বানান বিভ্রাটে পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে বলে আমার বিশ্বাস।
আশা করছি, দ্য সলোমন কার্স পাঠকদের ভাল লাগবে। পাঠকবৃন্দ, অনেক কথা হলো, আর দেরি না করে এবার ফারগো দম্পতির সাথে গুপ্তধন উদ্ধার অভিযানে যোগ দিন! শুভ কামনা রইল।
-সাঈম শামস
উত্তরা, ঢাকা
.
.
প্রস্তাবনা
গোয়াডালক্যানেল, সলোমন আইল্যান্ড, এক সপ্তাহ আগে
জীবন বাঁচাতে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে প্রাণপণ দৌড়াচ্ছে আলভো। ছুটতে ছুটতে একটু থামল ও। রাস্তা খুঁজছে। ঘাম গড়াচ্ছে কপাল বেয়ে। গাছের ডালপালার খোঁচা লেগে ওর এখানে ওখানে ছড়ে গেছে, রক্ত ঝরছে জখম থেকে। পেছন থেকে আওয়াজ ভেসে আসতেই ব্যথাকে পাত্তা না দিয়ে আরও জোরে ছুটল ও।
জলধারা বয়ে যাচ্ছে। জঙ্গলের আরও ভেতরে কিংবা সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে। এই ধারা।
আওয়াজ শুনতে পেল ও।
কুকুর।
খুব বেশি পিছিয়ে নেই ওগুলো।
আলভোকে এগোতেই হবে। যারা ধাওয়া করছে ও যদি তাদের হাতে ধরা পড়ে তাহলে তার পরিণাম হবে মরে যাওয়ার চেয়েও জঘন্য।
নগ্ন পায়ে পানি মাড়িয়ে এগোতে শুরু করল আলভো। চোখা পাথরে খোঁচা লেগে ওর পা কেটে গেল, ব্যথা পেলেও থামল না বেচারা। ওপারে ওকে যেতেই হবে। পানি মাড়িয়ে ওপারে গেলে হয়তো কুকুরগুলো অনুসরণ করতে পারবে না।
চতুরতা নয় স্রেফ সহজাত প্রবৃত্তি খাঁটিয়ে এগোচ্ছে আলডো। ওর বয়স মাত্র ১৭ বছর। কিন্তু আজ যদি ধরা পড়েই যায় তাহলে কিশোর নয়, একজন পুরুষের মতো মরবে ও।
এই ভাবনাটা ওকে আরও শক্তি যোগাল। তাদের হারাতে হবে নয়তো নিজে মরতে হবে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
পেছনে ডালপালার মচমচানি শুনে আরও গতি বাড়াল আলডো। শব্দটা খুব কাছেই হয়েছে। ওকে আরও দ্রুত ছুটতে হবে। যদি বাঁচতে চায় তাহলে যেভাবেই হোক ধাওয়াকারীদের সাথে দূরত্ব বাড়াতে হবে ওকে।
গোয়াডালক্যানেলের স্থানীয় বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও আলতো কখনও দ্বীপের এই অংশে আসেনি। শুধু আলডো নয়, কেউ-ই আসেনি এখানে। ফলে দ্বীপের এই অংশ সম্পর্কে ওর বিশেষ কোনো জ্ঞান নেই। তাই কোনো কৌশল অবলম্বন করে নিজের জন্য বাড়তি সুবিধাও করতে পারছে না। আলভোর বর্তমান অবস্থা একটা বেকায়দায় পড়া ইঁদুরের মতো। দিশাহারা ও আতঙ্কিত।
পেছন থেকে আওয়াজগুলো আরও কাছে চলে আসছে।
এই ঘোর বিপদে আলডো কীভাবে জড়িয়ে গেল? ওর বিশ্বাসই হতে চাইছে না, এই রাতের অন্ধকারে ও জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়াচ্ছে। ডান পাশে একটা মোটা বাশ উদয় হলো। এক মুহূর্তের জন্য আলডো ভাবল বাশটাকে এড়িয়ে যাবে কিন্তু পারল না।
বাশটা আলভোর ডান পাশে আঘাত করেছে। পাজরের কাছে ব্যথা অনুভব করল বেচারা। তবুও জখমকে পাত্তা দিল না। ওকে সামনে এগোতে
কিন্তু যাবে কোথায়? পেছন থেকে ধেয়ে আসা ব্যক্তিদের এড়িয়ে আলডো কোথায় যাবে? নিরাপদ জায়গা আছে? এই দ্বীপটা বেশ ছোট। ও চাইলে পুরো ঘটনাটাকে একটা দুঃস্বপ্ন ধরে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারে। কিন্তু বাড়িতে পৌঁছুনোর আগেই তো আলডো ধরা পড়ে যাবে। বাকিদের মতো গায়েব করে দেয়া হবে ওকে। কাউকে কিছু বলারও সুযোগ পাবে না।