- বইয়ের নামঃ অরিজিন অফ স্পিসিস
- লেখকের নামঃ চার্লস ডারউইন
- প্রকাশনাঃ দীপায়ন
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
অরিজিন অফ স্পিসিস
০. ঐতিহাসিক রূপরেখা / ভূমিকা
অরিজিন অফ স্পিসিস – প্রথম ভাগ – চার্লস ডারউইন / ভাষান্তর – শান্তিরঞ্জন ঘোষ
প্রাকৃতিক নির্বাচন অথবা জীবনসংগ্রামে আনুকূল্যপ্রাপ্ত জাতসমূহের সংরক্ষণের সাহায্যে প্রজাতির উৎপত্তি।
.
মাতৃভাষায় সর্বস্তরে বিজ্ঞানশিক্ষার আপোষহীন সংগ্রামী প্রয়াত অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর স্মৃতির উদ্দেশে এই অনুবাদ পুস্তকটি নিবেদিত হলো
.
প্রকাশনা প্রসঙ্গে
ক্রমবিকাশের ধারা বেয়ে মানুষের উদ্ভব এবং তার ক্রমান্বয় বিকাশের ইতিবৃত্ত, মানবসমাজের ক্রমোন্নতির ইতিহাস, সম্পত্তি ও অর্থের বিভিন্ন রূপ ও তাদের ক্রমপরিবর্তনের অর্থাৎ আর্থ-সামাজিক কাঠামোর কালানুক্রমিক ইতিহাস, রাষ্ট্র, ধর্ম, ন্যায়নীতি ও দর্শনচিন্তার ক্রমবিকাশ, লিপি-বর্ণমালা ও শিল্পকলা-সাহিত্যের ইতিহাস এবং বিজ্ঞানের নানা ধারায় নিত্যনতুন আবিস্কার ও ক্রমসংযোজনের বৃত্তান্ত–এই বিষয়গুলিকেই মূলত আমরা বেছে নিয়েছিলাম মানুষের সামগ্রিক ইতিহাসকে উপলব্ধি করার জন্য। বিষয়গুলির ব্যাখ্যা হাতের কাছে পাওয়ার জন্য কয়েকটি বই বাছাই করা হয়েছিল। অধিকাংশই প্রকাশিত হয়েছে। এই পর্যায়ে এখন প্রকাশিত হল চার্লস ডারউইনের যুগান্তকারী বই ‘অরিজিন অফ স্পিসিস’। প্রকাশনার সুবিধার্থে বইটিকে দু-খন্ডে প্রকাশ করেছি আমরা। এখন প্রথম খন্ডের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হল। এই পর্যায়ের বাকি বইগুলি সুধী পাঠকবৃন্দের হাতে যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে তুলে দেওয়ার অঙ্গীকার করছি।
বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে উভয় বাংলার বহু। শুভানুধ্যায়ী বন্ধু ও সহমর্মী সাথী নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন, প্রেরণা যুগিয়েছেন। এঁদের প্রতেকের কাছেই আমরা কৃতজ্ঞ। এ বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। অকৃত্রিম সুহৃদ বাসব ঘোষের নাম। তার আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া এ-বই প্রকাশ করা সম্ভব হত না।
.
কিছু প্রাসঙ্গিক কথা
প্রসঙ্গ ও বাংলা অনুবাদ
বেশি দিনের কথা নয়, একজনকে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসে তুলে দিতে সকালবেলা হাওড়া স্টেশনে যেতে হয়েছিল। ট্রেনের সময়ের বেশ খানিকটা পূর্বেই উপস্থিত হওয়ায় আজকাল বসবার জন্য গোল করে চেয়ার পেতে তৈরি দ্বীপের দুটি চেয়ারে আমরা। দুজনে বসে কথা বলছিলাম। আমি যাকে তুলে দিতে গেছিলাম, তিনি তার সপ্তাহ। খানেক আগেই বেশ কিছুদিন মস্কো, আজকের রাশিয়ায় ঘুরে এসেছেন। তার কাছে প্রশ্ন করছিলাম দেশটাকে কেমন দেখলেন, সাধারণ মানুষের অবস্থা, তাদের মনোভাব কেমন বুঝলেন, পুরাতন সোবিয়েত ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের এখনকার মনোভাব কেমন, এই সব আর কি।
তার উত্তরের প্রধান কথাই ছিল, “আমি ত পুরাতন সোবিয়েত দেখিনি, তাই তুলনার কোন প্রশ্নই আমার কাছে ছিল না। সব থেকে বড় বাধা ছিল ভাষা। কোথাও কেউ রুশ ভাষা ছাড়া কথা বলে না, বা অন্য ভাষা, যেমন ইংরাজি, জার্মান, ফরাসি, বাংলা, হিন্দি কোন ভাষাই কেউ বোঝে না। তাই সর্বত্র প্রচণ্ড অসুবিধা।” তবু ওনার আত্মীয়রা বিগত ৩০ বছরেরও বেশি ও-দেশে থাকায় ও সকলেই রুশ ভাষায় যথেষ্ট পারঙ্গম হওয়ায় তারা কেউ সঙ্গে থাকলে তবেই কথা বলা বা তাদের কথা বোঝা সম্ভব হয়েছে। অন্যথায় একেবারেই জম্বৎ চলাফেরা। তবে বিদেশিদের, বিশেষ করে ভারতীয়দের প্রতি একটা হৃদ্যতা ও কথা বলার চেষ্টা, একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার ইচ্ছা বয়স্ক পুরুষ মহিলাদের মধ্যে বেশ লক্ষণীয়। আমরা এই সব কথা যখন আলোচনা করছিলাম, তখন আমাদের পাশেই বসে থাকা আর একটি পরিবারের প্রৌঢ় মহিলা বোধ হয় আমাদের কথা একটু মন দিয়েই শুনছিলেন। তিনি বলে উঠলেন, “কেন, ওরা ইংরাজি জানে না বা বোঝে না?” উত্তরে না শুনে চোখেমুখে যত না বিস্ময়, তার অপেক্ষা অবিশ্বাসের ছাপটাই যেন ধরা পড়ে বেশি। ইংরাজি ভাষা সম্পর্কিত প্রভাবে এঁরা এতই প্রভাবিত ও বিশ্ব সম্পর্কে এঁদের জ্ঞানের বহর এতদূর যে এঁরা মনে করেন যে পৃথিবীর সব দেশেই সবাই না হলেও লেখাপড়া জানারা ইংরাজি জানেন বা বোঝেন আর উচ্চশিক্ষার। অর্থই ইংরাজি। ফলস্বরূপ স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ শক্তিশালী বেশ কয়েকটি ভারতীয় ভাষা থাকা সত্ত্বেও ইংরাজি ছাড়া উচ্চশিক্ষার দরজা আমাদের কাছে বন্ধ। কারণ জিজ্ঞাসা করলে একটাই উত্তর–নানা বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বই কোথায়? কথাটি অসত্য নয়। কিন্তু কেন এই অবস্থা? আমাদের অধিকাংশ পণ্ডিত, বিজ্ঞ ব্যক্তিরা মাতৃভাষার পুস্তক রচনা করতে চান না। কারণ তারা মনে করেন ইংরাজিতে না লিখলে তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ তাদের কম বিদ্বান বলে মনে করবে। অথচ এশিয়া, আফ্রিকার পূর্বের ঔপনিবেশিক দেশগুলির প্রভুরা নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার প্রয়োজনে যেমন নিজেদের উন্নত মানুষ হিসাবে জাহির করেছে, তেমনি নিজেদের ভাষাকে শ্রেষ্ঠতর ভাষা হিসাবে ব্যবহার করে এখানেও স্থানীয় শ্রেষ্ঠতর মানুষ সৃষ্টি করে তাদের দিয়েই নিচের তলার মানুষকে শাসন-শোষণের পাকা বন্দোবস্ত করেছিল। সেই ট্রাডিশন আজও সমানে চলেছে।