পরদিন সকালে ডেস ভাড়া করা গাড়িটা অফিসে ফেরত দিল, ওর সাথে ছিল স্যাম। অফিস থেকে গাড়িটা স্যাম নিজের নামে ভাড়া নিল। ডেসকে পৌঁছে দিল বন্দরে। রেমি, লাজলো, আর লিওকে হোটেলে রেখে এসেছে। আড্ডা দিচ্ছে ওরা।
‘আপনারা চলে যাওয়ার আগে আরেকবার দেখা করব আমি।’ বলল স্যাম।
‘গুহায় অভিযান চালাতে আবার যাচ্ছেন তাহলে?
‘যেতে তো হবেই। স্যাম এখনও ডেসকে কঙ্কাল পাওয়ার ব্যাপারে কিছুই বলেনি।
‘ঠিক আছে। গুড লাক। আর হ্যাঁ, আপনাদের একজন লোক লাগবে বলেছিলেন। কখন লাগবে জানাবেন। পাঠিয়ে দেব।’
“আচ্ছা, গ্রেগ আসতে পারবে?
‘যদি রাজি না হয় আমার পক্ষে জোর করা সম্ভব হবে না।’
“ঠিক আছে। যাকে সম্ভব হয় পাঠিয়ে দেবেন।
‘আপনারা কি আজই আবার অভিযানে যাচ্ছেন?
না। আজকে আর যাব না। সম্ভবত কালকে বের হব। একটা টো-ট্রাক যোগাড় করতে হবে। এই দ্বীপে যেকোনো কাজ করতে হলে সময় দরকার। সমস্যা নেই, জানাব আপনাকে।
“ঠিক আছে।
স্যাম রওনা হলো হোটেলের দিকে আর ডেস চড়ল ছোট নৌকায়। গন্তব্য: ডারউন।
***
‘স্যাম তোমার বন্ধুকে বলল সে যেন আমাদের সাথে অভিযানে যাওয়ার বায়না না ধরে। হোটেলে ফিরে প্রথমেই রেমি’র নালিশ হজম করল স্যাম।
কী ব্যাপার? লিও কি যেতে চাচ্ছে? অসম্ভব! স্যাম জবাব দিল।
‘তোমরা কী ভেবেছ? আমাকে এখানে ফেলে রেখে তোমরা গুপ্তধন উদ্ধার করে মজা নেবে আর আমি সেটা চুপচাপ মেনে নেব? কক্ষনো না!’ দাবি জানাল লিও।
ডাক্তার কী বলেছে শোনোনি? বা পায়ে কোনো চাপ দেয়া যাবে না। স্যাম বলল।
যাবে, যাবে। বারো ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে ফেলেছি। তোমরা এখুনি বেরোবে নাকি?
না। কাল…’
তাহলে তো কোনো সমস্যাই নেই। আমি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাব। রাশিয়ান রক্ত বইছে শরীরে। সুস্থ হতে সময় লাগবে না।
স্ত্রীর সাথে দষ্টি বিনিময় করল স্যাম। বন্ধু, এখানে ব্যক্তিগত কোনো চাপ নেই। আমরা চাই তুমি যেন আর আহত না হও। বুঝতে চেষ্টা করো।
হাত নেড়ে স্যামের কথা উড়িয়ে দিল লিও। কী হয়েছে আমার? একটু কেটে-ছড়ে গেছে। ভাঙেনি তো। কালকের মধ্যে আমি একদম ফিট হয়ে যাব। দেখে নিয়ো।
সিদ্ধান্তটা বোধহয় ভাল হচ্ছে না।’ রেমি বলল।
‘আমরা আর কী বলব। লিও তো আর বাচ্চা খোকা নয়।’ বলল স্যাম।
‘হ্যাঁ, বাচ্চা নয়। কিন্তু আর একটু হলেই তো সর্বনাশ হয়ে যেত।
ঘোঁতঘোঁত করল লিও। আমি একটু বেখেয়ালি হয়ে পড়েছিলাম তাই আরকী। তবে কথা দিচ্ছি, এরকম ঘটনা আর হবে না।’
রেমি মাথা নাড়ল। ঠিক আছে। খুব ভাল কথা। আমি তোমার সাথে ঝগড়া করতে চাই না। তবে তুমি যদি আমাদেরকে দেরি করিয়ে দাও, তাহলে কিন্তু তোমাকে কুমীরের কাছে দিয়ে আমরা চলে যাব। হুম!
‘আমি শুনেছি কুমীর এক মাইল দূর থেকেই রক্তের ঘ্রাণ পেয়ে যায়! ফোড়ন কাটল ল্যাজলো।
ব্যাপার না। তাহলে কয়টার সময় বের হচ্ছে তোমরা? লিও জানতে চাইল।
‘খুব সকাল সকাল।’ জবাব দিল স্যাম।
‘আমি রেডি হয়ে থাকব।
স্যামের দিকে তাকাল রেমি। আমাদেরকে এখন টো-ট্রাকের ব্যবস্থা করতে হবে। তাই না?
স্যাম দীর্ঘশ্বাস ফেলল। না করতে হলেই ভাল হতো। কিন্তু উপায় নেই।’ ল্যাজলো’র দিকে তাকাল ও। কয়েক ঘণ্টা আপনি আমার রাশিয়ান বন্ধুকে সঙ্গ দিন, আমরা একটু কাজ সেরে আসি কেমন?
‘এই কাজটা আমি খুব ভাল পারি।’ ল্যাজলো সম্মতি দিল চওড়া হাসি দিয়ে।
টো-ট্রাক ম্যানেজ করতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হলে ওদের। বনের ভেতরে গিয়ে গাড়ি আনতে হবে শুনে কেউ টো-ট্রাক ভাড়া দিতে রাজি হচ্ছিল না। অবশেষে একজনকে কোনমতে রাজি করানোর পর হাসপাতালের দিকে পা বাড়াল ফারগো দম্পতি।
আজ ভ্যানাকে পাওয়া গেল। রিসিপশন কাউন্টারের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ডা. ভ্যানা।
‘কী ব্যাপার? কী মনে করে?’ ফারগো দম্পতিকে দেখে ভ্যানা হাসিমুখে প্রশ্ন করল।
‘এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম, ভাবলাম উঁকি দিয়ে যাই।
‘আমি গতকালের এন্ট্রিগুলো দেখছিলাম। আপনাদের এক বন্ধুকে এখানে এনেছিলেন। ডা. বেরি ট্রিটমেন্ট দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন।’
‘হ্যাঁ। পাহাড়ে উঠতে গিয়ে আহত হয়েছিল। রেমি জানাল।
এখানে এরকম দূর্ঘটনা প্রায়ই হয়। আপনাদের উচিত সহজ পথ ধরে এগোনো। এই দ্বীপে কখন কোনদিক দিয়ে বিপদ আসে কেউ বলতে পারে না। কোন পাহাড়ে উঠছিলেন আপনারা?
দ্বীপের ওইপাশে…’
‘ওদিককার পাহাড়ে ওঠা তো বেশ চ্যালেঞ্জিং।
‘আমাদেরও তা-ই মনে হয়। স্যাম বলল। ডা, ভ্যান, আপনার সাথে কিছু কথা বলা দরকার। সময় হবে?
‘অবশ্যই। ভাগ্যক্রমে আজকে রোগীদের চাপ নেই। দেখুন, ওয়েটিং এরিয়া ফাঁকা। অবশ্য ভরে যেতে খুব বেশি সময়ও লাগে না।’ রুমে থাকা সিটের দিকে ইশারা করল সে। কী ব্যাপার?
বসল সবাই। স্যাম গলার স্বর নিচু করে বলতে শুরু করল। আমার মনে আছে, আপনি একদিন এক মহিলার মেয়ে হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কথা বলছিলেন।
‘হ্যাঁ, বলেছিলাম। এরকম পালিয়ে যাওয়ার কাহিনি এখানে অনেক আছে।
‘আসলেই অনেক।
‘এবং সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে।
‘এপর্যন্ত কতজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, বলতে পারেন?
ভ্যানা মাথা নাড়ল। নাহ। আমি তো ডাক্তার, সমাজকর্মী হলে হয়তো বলতে পারতাম। আসলে সত্যি বলতে ডাক্তারি করায় এত ব্যস্ত থাকি যে সমাজের খবর নেয়ার মতো আর সময় থাকে না। ওসব খবর নিয়ে আমার কোনো কাজও নেই, আমার কাজ রোগীর সেবা করা। কথাগুলো একটু স্বার্থপরের মতো শোনালেও এটাই সত্যি।