- বইয়ের নামঃ দ্য ফারাও’স সিক্রেট
- লেখকের নামঃ ক্লাইভ কাসলার
- প্রকাশনাঃ রোদেলা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী, উপন্যাস
দ্য ফারাও’স সিক্রেট
০১. নীল নদের মোহনা
NUMA ফাইলস/কার্ট অস্টিন অ্যাডভেঞ্চার – দ্য ফারাও’স সিক্রেট / মূল : ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন / অনুবাদ : অসীম পিয়াস / প্রথম প্রকাশ আগস্ট ২০১৬
পূর্বকথা – মৃতদের শহর
অ্যাবাইডোস, মিসর
খ্রিস্টপূর্ব ১৩৫৩
ফারাও আখেন আতেন-এর রাজত্বের সপ্তদশ বর্ষ
পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় মিসরের বালুকণা সব এক নীলাভ দ্যুতিতে ঝিকিমিক করছে। দেখে মনে হয় কেউ যেন বালির ওপর রঙ লেপে দিয়েছে। দূরের পাথুরে মন্দিরগুলোও মার্বেল পাথরে তৈরি বলে ভ্রম হয়। চাঁদের আলোর বিপরীতে সেগুলোর লম্বা ছায়া পড়েছে। এই আলো-আঁধারির ফাঁক দিয়েই একদল লোক চুপিসারে অনুপ্রবেশ করল মৃতদের শহরে’।
মোটমাট তিরিশজন পুরুষ এবং মহিলা। সবার চেহারা চাদরে ঢাকা, তবে দৃষ্টি আটকে আছে সামনের রাস্তায়। কেমন একটা ক্লান্ত, বিষণ্ণ ভঙ্গিতে হাঁটছে সবাই। ইতোমধ্যেই তারা পেরিয়ে এসেছে প্রথম রাজবংশের ফারাওদের সমাধিক্ষেত্র আর দ্বিতীয় যুগের দেবতাদের সম্মানে তৈরি বিভিন্ন মন্দির আর সৌধ।
কিছুদূর এগুতেই দেখা গেল পাথুরে রাস্তাটার ওপর বালু জমে তূপ হয়ে আছে। অভিসারী দলটা নীরবে দাঁড়িয়ে পড়ল সেখানে। তাদের দলনেতা মানু-হটেপ অন্ধকারে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল ওপাশে কিছু আছে কি-না। তারপর মাথা বাঁকিয়ে কিছু শোনার চেষ্টা করল, আত্ম রক্ষায় বর্শায় চেপে বসেছে আঙুল।
এক মহিলা এগিয়ে এলো ওর দিকে, “কিছু শুনতে পেলে?” মহিলাটি মানু-হটেপ-এর স্ত্রী। আর পিছনে যারা দাঁড়ানো, তারা কয়েকটা পরিবারের সদস্য। সাথে আছে ডজন খানেক চাকর-বাকর, তাদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে খাঁটিয়া। আর খাঁটিয়াতে একটা করে শিশুর লাশ প্রত্যেকটা শিশুই একই রকম অদ্ভুত এক রোগে মারা গেছে।
“একটা ফিসফিসানি শুনলাম মনে হলো, মানু-হপেট জবাব দিল।
“কিন্তু এই শহরে তো কেউ থাকে না। এসব সমাধি ক্ষেত্রে প্রবেশ তো একেবারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা নিজেরাই এসেছি মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে।” মহিলা বলল।
“সে কথা আমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না,” বলতে বলতে লোকটা তার মাথার ওপর থেকে কাপড়টা নামালো। মাথায় চুল নেই। কামানো, গলায় একটা স্বর্ণের নেকলেস। আখেন আতেন-এর পরিষদের সদস্যরাই এরকম নেকলেস পরিধান করে।
শত শত বছর ধরেই এই অ্যাবাইডোস বা মৃতদের শহর ‘ওসাইরিস’ এর পুরোহিত পূজারি আর ভক্তদের জন্য পুণ্যভূমি হিসেবে বিবেচ্য। ওসাইরিস’ হলো পরলোকের শাসক আর উর্বরতার দেবতা। প্রথম দিকের রাজবংশের সকল ফারাওকেই এখানেই সমাহিত করা হয়েছে। ইদানীংকালের ফারাওদের অবশ্য অন্যত্র কবর দেয়া হয়। তবে এখনও এখানে ওসাইরিস-এর সম্মানে মন্দির বা সৌধ নির্মাণ করেন সবাই।
তবে আখেন আতেন এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ফারাও হবার কিছুদিন পরেই আখেন আতেন ঘোষণা দেন যে তিনি আর পুরাতন দেবতাদের পূজা করবেন না। যুগ যুগ ধরে চলা আসা সমস্ত দেবতাদের ওপর ডিক্রি জারি করেন এবং নির্দেশ দেন এখন থেকে শুধু একজন দেবতার-ই পূজা করবে সবাই। সেটা হলো সূর্য দেবতা-আতেন।
এরপর থেকেই অ্যাবাইভোস শহর তার শৌর্য হারানো শুরু করে। ভক্ত পুরোহিত সবাই চলে যায় শহর ছেড়ে। এখন এটা পুরোপুরি পরিত্যক্ত। এর সীমানার ভেতরে কাউকে পাওয়া গেলে তার মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। আর মানু হটেপ-এর মতো খোদ ফারাও-এর পরিষদের কোনো সদস্য যদি ধরা পড়ে। তবে তার শাস্তি হবে আরো ভয়ংকর। মারার আগে তার ওপর এমন অত্যাচার চালানো হবে যে তার চেয়ে মৃত্যুও শ্রেয়।
মানু-হটেপ কিছু বলার জন্যে মুখ খুললো, কিন্তু তার আগেই একটা নড়াচড়া টের পেয়ে থেমে গেল। তিনজনের একটা দল অন্ধকার কুঁড়ে ওদের দিকেই দৌড়ে আসছে। হাতে উদ্যত অস্ত্র। মানু-হটেপ তার স্ত্রীকে পিছনে ঠেলে দিয়ে বর্শা বাগিয়ে সামনে এগুলো। সবার সামনের লোকটা জায়গায় গেঁথে গেল এফোঁড় ওফোঁড়। আর নড়লো না। কিন্তু লাশটার বুক থেকে বর্শা বের করার আগেই দ্বিতীয় লোকটা পৌঁছে গেল সেখানে। বিন্দুমাত্র দেরি না করে আততায়ী তার তরবারি চালালো।
আঘাত এড়াতে গিয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে গেল মানু-হটেপ। তবে ততোক্ষণে মুক্ত হয়েছে তার বর্শা। দ্বিতীয় আততায়ী আবার আঘাত করার আগেই তার দিকে ছুঁড়ে দিল বর্শা। দ্বিতীয় আততায়ী শুয়ে থাকায় নিশানা ঠিক মতো হয়নি, লাগল না। আততায়ী এবার নিরস্ত্র মানু-হটেপের দিকে এগুতে চাইলো। কিন্তু পিছন থেকে একটা বর্শা তার পেট ভেদ করে বেরিয়ে গেল। মানু-হটেপের এক চাকর ছুঁড়েছে সেটা। দ্বিতীয় আততায়ী হাঁটু ভেঙে পড়ে গেল, হাসফাস করছে বাতাসের জন্য। এ দিকে তৃতীয় আততায়ী আর দাঁড়ালো না। উল্টো দিকে ঘুরেই দিল ভো দৌড়।
মানু-হটেপও সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে বর্শা ছুড়লো সেদিকে। এক ইঞ্চির জন্য লক্ষ্য ভ্রষ্ট হলো সেটা। রাতের আঁধারে ছুটন্ত পদশব্দ মিলিয়ে গেল কিছুক্ষণ পরেই।
“লাশ চোর নাকি?” কেউ জিজ্ঞেস করল।
“গোয়েন্দাও হতে পারে”। মানু-হটেপ জবাব দিল। “আর গত কয়েকদিন ধরেই মনে হচ্ছে কেউ আমাদের চোখে চোখে রাখছে। দ্রুত পা চালাও সবাই। লোকটা ফারাওয়ের কানে কথাটা লাগালে কাল সকালে সূর্যের মুখ আর দেখা লাগবে না।”