‘ধরুন… সাতটার দিকে।
“ঠিক আছে। আপনাদের সাথে কি কোনো গেস্ট থাকবে?
না।
কথা শেষ করে রুমের দিকে এগোল ফারগো দম্পতি। রেমির কানে ফিসফিস করল স্যাম। লবিতে একলোক পত্রিকা পড়ছিল, খেয়াল করেছ? খাকি প্যান্ট পরা। স্থানীয়।’
না। সর্তকবাণী শোনায় ব্যস্ত ছিলাম। অন্য কোনোদিকে খেয়াল করতে পারিনি।’
‘লোকটাকে দেখে মনে হলো, আমাদের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী।
হু।
স্যাম দাঁত বের করে হাসল। অবশ্য তুমি যখন হেঁটে যাও তখন অনেক পুরুষই তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে। এটা নতুন কিছু নয়।’
নিজের কোঁচকানো কারগো প্যান্ট আর টি-শার্টের দিকে তাকাল রেমি। ‘এই পোশাকে আমাকে খুব সুন্দরী লাগছে, তাই না?
‘আমার কাছে তো হেব্বি লাগছে।’
‘অ্যাই শোনো, মিষ্টি কথায় আমাকে তুমি বোকা বানাতে পারবে না, বুঝেছ, মিস্টার স্যাম ফারগো?
আমি অবশ্য ‘ফ্রি শ্যাম্পেন খাইয়ে বোকা বানানোর কথা ভাবছিলাম।
***
সন্ধ্যা ৭ টার একটু আগে রুম থেকে লবিতে নামল ওরা। কিন্তু সেই লোকটাকে কোথাও দেখতে পেল না। জ্যাকবের রেস্টুরেন্টের দিকে এগোল স্যাম ও রেমি।
রেস্টুরেন্টের স্টাফ বুকিং লিস্টে ওদের দুজনের নাম খুঁজে পেয়ে অমায়িক হাসি দিল। ওদের জন্য নির্ধারিত টেবিলের দিকে নিয়ে গেল সে। পুরো রেস্টুরেন্ট ভর্তি লোকজন। যেতে যেতে স্যামের হাত আঁকড়ে ধরল রেমি। অরউন ম্যানচেস্টার একটা টেবিলে বসে আছে। তার টেবিলে এক তাক কাগজপত্র আর একটা বিয়ার রাখা। রেমিকে দেখতে পেয়ে হাত নাড়ল অরউন।
‘দেখো দেখি কাণ্ড! আমাকে ফলো করছেন নাকি আপনারা? হাসতে হাসতে বলল অরউন ম্যানচেস্টার।
‘পৃথিবীটা অনেক ছোট, তাই না?’ রেমি বলল।
হয়তো অতটা ছোটও নয়। আজ রাতে অল্প কয়েকটা রেস্টুরেন্ট খোলা আছে। তা আপনাদের যদি কোনো বিশেষ পরিকল্পনা না থাকে তাহলে আমার সাথে বসুন। আশা করি, আমি আপনাদের রোমান্টিক ক্যান্ডেললাইট ডিনারে উটকো সমস্যার সৃষ্টি করছি না।
হেসে মাথা নাড়ল রেমি। না, না, তেমন কিছুই নয়। স্যাম তুমি কী বলে? ‘বসি।’ রেমির জন্য একটা চেয়ার বের করল ও।
‘আজকে রাতে আপনারা শহরের বাইরে না গেলেই ভাল হয়। ওরা দু’জন বসার পর বলল ম্যানচেস্টার। বাইরের পরিবেশ ভাল।’
‘হ্যাঁ, আমাদের ম্যানেজেরাও তা-ই বলল। দু’জন বিদেশিকে খুন হয়েছে বলে এতটা বাজে অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কারণ কী?’ জানতে চাইল রেমি।
‘দেখুন, গোয়াডালক্যানেলের অধিকাংশ লোকজন গরীব। তবে জনসংখ্যার কিছু অংশ সচ্ছল। এখানে মাঝেমধ্যে এরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে একটা সংগঠন আছে যারা ঘোর বিদেশি বিদ্বেষী। বিদ্রোহীরা নিজেদের কাজ হাসিল করার জন্য এবার বিদেশিদেরকে টার্গেট করেছে। আর গরীব লোকজন সুযোগ পেলে নিজেদের খারাপ অবস্থার জন্য অন্যকে দোষারপ করে। এটাই গরীবদের স্বভাব। ম্যানচেস্টার মাথা নেড়ে জানাল।
‘এই বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বেশ পরিষ্কার বলে মনে হচ্ছে। বলল স্যাম।
বিয়ারের বোতলের দিকে তাকাতেই অরউনের মনে পড়ল অর্ডার দিতে হবে। ওয়েটারকে ডেকে আরও দুটো বিয়ার অর্ডার দিল সে। রেমি নিজের জন্য একটা সোডা অর্ডার করল।
অর্ডারকৃত ড্রিঙ্কসের সাথে শ্যাম্পন দেখতে পেয়ে অবাক হলো ওরা।
‘আপনাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাগড়া দেয়ার কথা বলে আমি নিজেও স্বস্তি পাচ্ছি না। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত কিছু করার নেই। রেমির দিকে তাকাল অরউন, দৃষ্টিটা এবার আগের চেয়ে নরম। ‘আমি চাই না এত সুন্দর একটা উঁটি কোনো বিপদের মুখে পড়ক।’
আমরাও সেরকমটাই শুনে আসছি। কিন্তু এখন তো অনেক দেরি হয়ে গেছে। অনেক দূর থেকে বন্ধুকে সাহায্য করতে এসেছি আমরা। প্রজেক্টটা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের জন্যও। বলল স্যাম।
কিন্তু ম্যানচেস্টার স্যামের কথায় পাত্তাই দিল না। এখান থেকে সিডনি যেতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা লাগে। ওখানকার রেস্টুরেন্টে নাকি এই মৌসুমে খুব সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
‘আসলে ঘটনাস্থলে বিপদের আঁচ টের পেয়ে লেজ গুটিয়ে পালানোটা আমাদের স্টাইল নয়। রেমি বলল।
‘অবশ্যই সেরকম নন আপনারা। কিন্তু আমি স্রেফ একজন বন্ধু হিসেবে পরামর্শ দিচ্ছি। আসলে পরিস্থিতি খারাপ হলে মানুষের অন্ধকার দিকটা বেরিয়ে আসে। কোনোভাবে দ্বীপের অবস্থা অবনতি হলে যারা ঘাপটি মেরে আছে তারা বেরিয়ে আসবে। খারাপ পরিস্থিতে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নেবে তখন। তাই বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে এখানে না থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে এসব দেখাই মঙ্গল।
‘আপনার যুক্তি আমরা মেনে নিলাম। নিজের গ্লাস উঁচু করল রেমি। ভাল সময়ের আশায়…’
‘খাসা বলেছেন!’ ম্যানচেস্টার হাসল। কিন্তু বরবারের মতো এবারও তার হাসি চোখ ছুঁলো না।
.
২০.
সকালের নাস্তা খেতে যাওয়ার আগে রেডিওতে খবর শুনে নিল স্যাম ও রেমি। নাস্তা সেরে সৈকতের দিকে যাবে ওরা। এখানকার পর্যটকদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় রোডব্লক ও চেকপোস্ট থাকার কারণে তাদের গন্তব্যে পৌঁছুতে দেরি হবে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী ছুটিতে থাকা এক ডজন পুলিশ অফিসারকে আবার কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছেন। জানিয়েছেন, তিনি সন্ত্রাসীদের সাথে কোনো পরিস্থিতিতেই সমঝোতা করবেন না।