কার্ট পকেটে হাত ঢুকিয়ে ওয়াটার প্রুফ ব্যাগ থেকে ব্লাকমিস্ট ভরা প্যাকেটটা বের করল। তারপর সেটা খুলে একটা ভায়াল বের করল।
“আমি যা ভাবছি এটা কী সেই জিনিস?” জো জিজ্ঞেস করল।
“ব্লাক মিস্ট।” কার্ট জবাব দিল।
পিছন থেকে আবার গুলির শব্দ পাওয়া গেল।
“এখন কী করবো?” জো বলল।
“আমাদেরকে যারা ধরতে আসছে ওদেরকে ঘুম পাড়াবো।”
কার্ট ওদের গাড়ির যতদূর সম্ভব দূরের একটা দেয়ালে ভায়ালটা ছুঁড়ে মারলো। দেয়ালে লেগে এটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল আর ওর ভেতরের সবকিছু ছড়িয়ে পড়ল বাইরে। কয়েক মুহূর্ত পরেই দেখা গেল ওদের ধাওয়া করা গাড়ি দুটোর আলো আর সামনে এগুচ্ছে না।
ভায়াল ভাঙ্গা এলাকাটা পেরুতেই প্রথম গাড়িটার মুখ একদিকে ঘুরে গিয়ে দেয়ালের গায়ে আছড়ে পড়ল। সাথে সাথে ওটা উল্টে একপাশে কাত হয়ে পড়ে গেল। দ্বিতীয় গাড়িটা সরাসরি এটার গায়েই বাড়ি খেলো আর সিটে থাকার লোকগুলো ছিটকে পড়ে গেল মাটিতে। আর উঠল না। রেনাটা তাতে বিন্দুমাত্র গতি না কমিয়ে আরো দূরে সরে গেল।
“ভালোই তো জিনিসটা।” জো বলল।
“আমার এটার সবটা ব্যবহার করতে পারবো না। যতদ্রুত সম্ভব এটা কোনো ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে” কার্ট জবাব দিল।
“সে জন্যই কি বরফে ঢাকা নাকি?”
“লোকটা বলেছে আট ঘণ্টার মধ্যে কাজে লাগাতে না পারলে এটা নষ্ট হয়ে যাবে।”
“এজন্য তার ধন্যবাদ প্রাপ্য।” জো বলল।
“লোকটা খারাপ ছিল না। বাধ্য হয়ে করেছে এসব।” কার্ট জবাব দিল।
সামনেই দেখা গেল সুড়ঙ্গ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। বাম পাশেরটার বাঁক দিয়ে আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে।
“শালার ব্যস্ততা থাকলে রাস্তায় জ্যাম লাগবেই।” বলল রেনাটা। তারপর ডানদিকে ঢুকে গেল। সুড়ঙ্গটা ধরে এগোতেই দেখা গেল এটাও দুই ভাগ হয়ে গিয়েছে। রেনাটা বেশি চওড়া যেটা সেটা দিয়ে ঢুকে গেল। যাওয়ার পথে ছোট বড় আরো অনেক সুড়ঙ্গ পেরুতে হলো। কোনটা চলে গেছে ওপরে, কোনোটা নেমেছে নিচের দিকে।”
“প্রধান সুড়ঙ্গ থাকবে নিশ্চয়ই একটা।” জো বলল।
“আমার মনে হয় আমাদের ওপর দিকেই যাওয়া উচিত। খনিটার একটা না একটা বের হওয়ার রাস্তা নিশ্চয়ই আছে।” কার্ট বলল।
“পাইপের ওখানে ফিরবো না?” রেনাটা বলল।
“ওদিকটায় এখন পাহারা থাকবে। হয় আমাদেরকে আরেকটা রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে। নয়তো ফারাওদের মতো অনন্তকাল এখানেই থেকে যেতে হবে।” বলল কার্ট।
.
৫২.
ইদো ছোট নৌকাটার গলুইতে দাঁড়িয়ে আছেন। একটা নাইট ভিশন গগলস দিয়ে নীলনদের চারপাশটা দেখছেন। জো আর ওর বন্ধুরা ওসাইরিস বিল্ডিংটায় ঢুকেছে কয়েক ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে।
পয়তাল্লিশ মিনিট আগে হেলিকপ্টারটাও চলে গিয়েছে। পানি বিদ্যুতের প্রণালিটার পানি এখন আর স্থির নেই। ভীষণ স্রোত ওখানে, কিন্তু ওদের এখনো দেখা নেই।
একেকটা সেকেন্ড যাচ্ছে আর ইদোর দুশ্চিন্তা ততোই বাড়ছে। জোর জন্য তার দুশ্চিন্তা হচ্ছে অবশ্যই, তবে সাবেক মিলিটারির মানুষ হিসেবে তিনি ভালোই জানেন ব্যর্থ অভিযানের বিপদটা কি। এতে করে পাল্টা আঘাত খাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বহুগুণ।
যদি ওদের কেউ ধরা পড়েই যায় তাহলেই সর্বনাশ। যতক্ষণ পর্যন্ত না সব স্বীকার করবে ততোক্ষণ ওরা অত্যাচার করতেই থাকবে। ইদোর নামও বলে দেবে নিশ্চয়ই। ওদের জন্যেই তার আজ এই বিপদ। খুন, গ্রেপ্তার, জেন যেকোনো কিছুই হতে পারে তার। আর যদি এমন কিছু নাও হয় তাহলেও তো যেই লাউ সেই কদুই থেকে যাবে। তাকে আবার তার দুলাভাইয়ের ডেরায় ফিরে গিয়ে চামচাগিরি করতে হবে। মনে হচ্ছে এই চক্র থেকে তার মুক্তি নেই।
ভাগ্যটা তার অন্য সবার চাইতেই খারাপ।
হঠাৎই তার মনে হলো আর দেরি করা যাবে না। উনি বিভিন্ন জায়গায় ফোন করা শুরু করলেন। ফোনগুলো জো যখন প্রথম এসেছিল তখনি করা উচিত ছিল। কিন্তু তার পুরনো বন্ধুরা তাকে প্রথমে পাত্তা দিল না।
“বোঝার চেষ্টা করো, “মিসরের সন্ত্রাসবিরোধী ব্যুরোয় কর্মরত এক বন্ধুকে বোঝনোর চেষ্টা করছেন উনি। “আমার কাছে খোঁজ-খবর আসে এখনো। আমার পরিচিত অনেকেই আছে যারা তোমার মতো লোকদের সাথে কথা বলতে ভয় পায়। আমার কাছে খবর আছে যে সাকির ইউরোপের দেশগুলোতে হামলা চালাবে।
ল্যাম্পেডুসার ঘটনাটাও সে-ই ঘটিয়েছে। লিবিয়াতে যা হচ্ছে তার পিছনেও সাকির আর ওসাইরিস দায়ী। এখনি কিছু না করতে পারলে মিসরও ওদের হাত থেকে রক্ষা পাবে না।”
নানান পদের লোকদের সাথে ইদো কথা বলতে লাগলেন। প্রাক্তন গেরিলা, বা বর্তমান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, রাজনীতিবিদ কেউই বাদ গেল না। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো তাদের সবার প্রতিক্রিয়া হলো একই।
“সাকির আর ওসাইরিস যে বিপদজনক তা আমরা জানি, কিন্তু কী করার আছে?”
“আমাদেরকে ঐ প্লান্টে ঢুকতে হবে। যদি আমরা প্রমাণ করতে পারি যে আসলেই ওরা কি করছে, তাহলে সবাই আমাদের পক্ষে চলে আসবে, আর সেনাবাহিনী আরো একবার দেশটাকে রক্ষা করতে পারবে।”
কথা শুনে ওপাশ নীরব হয়ে গেল। তবে ইদো হাল ছাড়লেন না। আবার পুরো ব্যাপারটা ধৈর্য নিয়ে বোঝানো শুরু করলেন। কাজ হলো তাতে। সবাই তার কথার গুরুতু ধরতে পারলো।
“যা করার এখনি করতে হবে। সূর্য ওঠার আগেই। সকাল হতে হতে দেরি হয়ে যাবে।” ইদো জোর করলেন। একে একে তারা রাজি হতে লাগল।