- বইয়ের নামঃ ড্রাগন
- লেখকের নামঃ ক্লাইভ কাসলার
- প্রকাশনাঃ রোদেলা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী, উপন্যাস
ড্রাগন
০১. ডেনিংস ডেমনস
ড্রাগন – মূল : ক্লাইভ কাসলার
অনুবাদ : মখদুম আহমেদ
উৎসর্গ
এনায়েত নগর
আমি যেতে চাই সবুজ সুন্দরে; যেখানে বহুকাল আগে গিয়েছিলাম আমি।
আমি স্বপ্নহীন, নিরাবেগ, অক্লান্ত, ক্লিব ওই তালগাছটাকে আবারো দেখতে চাই;
দেখতে চাই তার পরিচর্যা-না-করা-ময়লা-সবুজ পাতারা কেমন গাঢ় দেখায়
অন্ধকার রাতে।
আমার জানালা ছুঁয়ে হাত বাড়িয়ে রেখেছিলো সেই পাতারা, যেনো
কবাটের শিক গলে ঢুকতে চাইছিলো ভেতরে।
আশ্রয়ের জন্যে নয়; আমি জানি, এ হীন আশ্রয় তাকে টানে না।
সম্ভবত আমাকে একটু পবিত্র করে দিতে চাইছিলো সে
তার দীর্ঘ পাতার ছোঁয়ায়।
আমি দেখতে চাই সেই চাঁদ; রূপালি-ঘোলাটে চাঁদ,
প্রেমহীন-কামহীন-নিপ্রভ
অথচ
কী সুতীব্র আলোয় আলোয়
আলোয় আলোয় স্নান করে যখন ঘুমন্ত চরাচর,
কেবল আমি জাগবো সেখানে।
দিনের আলোর স্পর্শ বাঁচিয়ে আমি জাগবো মধ্যরাতে,
গাঢ় ছায়ারা যখন খেলা শুরু করে ধনাগোদা নদীর বুকে।
.
.
ডেনিংস ডেমনস্
৬ আগস্ট, ১৯৪৫।
শেমাইয়া আইল্যান্ড, আলাস্কা।
ডেনিংস ডেমনস্
শয়তান তার বাম হাতে একটা বোমা আঁকড়ে ধরে আছে, মুখে বোকা বোকা হাসি। চোখ দুটো আধখানা চাঁদ আকৃতির, ঘন ভুরু, চেহারায় ভাড়সুলভ একটা ভাব এনে দিয়েছে। চিরাচরিত লাল স্যুট পরে আছে শয়তান, ডগার দিকে দ্বিধাবিভক্ত লম্বা লেজ, মাথায় বাঁকা শিং। পা দুটো থাবার মত, একটা সোনালি দাঁড়-এ দাঁড়িয়ে আছে সে, থাবার নখগুলো পেঁচিয়ে ধরেছে দাঁড়টাকে। দাঁড়ের গায়ে লেখা রয়েছে 24K.
ছবিটা একটা বৃত্তের ভেতর, বি-টোয়েনটিনাইন বোমারুর ফিউজিলাজে আঁকা। বৃত্তের ওপর ও নিচে লেখা রয়েছে ডেনিংস ডেমনস।
ভৌতিক একটা নিঃসঙ্গ কাঠামোর মত বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্লেনটা। ওটার নাম রাখা হয়েছে কমান্ডারের নাম অনুসারে এবং তার ক্রুদের কথা মনে রেখে। পোর্টেবল কয়েকটা ফ্লাডলাইটের আলোয় পেটের নিচটা আলোকিত, চকচকে অ্যালুমিনিয়াম কাঠামোর চারপাশে কিম্ভুতকিমাকার ছায়া ফেলছে গ্রাউন্ড ক্রুরা। বৃষ্টি, বেরিং সী থেকে ছুটে আসা জোরাল বাতাস, তার সঙ্গে ঘন ঘন বজ্রপাত পরিবেশটাকে আরও ভৌতিক করে তুলেছে।
স্টারবোর্ড ল্যান্ডিং গিয়ার-এর জোড়া টায়ারের একটায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মেজর চার্লস ডেনিংস, হাত দুটো লেদার ফ্লাইট জ্যাকেটের পকেটে ঢোকানো, শান্ত ও নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে নিজের চারপাশের কর্মচাঞ্চল্য লক্ষ্য করছে। গোটা এলাকায় সশস্ত্র এমপি ও কে-নাইন সেন্ট্রিদের কড়া পাহারা। ক্যামেরা ক্রুদের ছোট একটা দল রেকর্ড করছে ঘটনাটা। অস্বাভাবিক মোটা বোমাটা দেখে ভয়ে শিরশির করে উঠল তার শরীর, উইঞ্চের সাহায্যে বি-টোয়েনটিনাইনের সংস্কার করা বম্ববেতে ভোলা হচ্ছে ওটা। বোমারুর নিচে ফাঁকা জায়গা বেশি নয়, তার তুলনায় বোমাটা অনেক বড়, সেজন্যে একটা গভীর গর্ত থেকে তোলা হচ্ছে ওটাকে।
ইউরোপে দুবছর বোমারু পাইলট হিসেবে কাজ করেছে ডেনিংস, হামলায় অংশ নিয়েছে চল্লিশবার, কিন্তু এ ধরনের ভয়ঙ্কর জিনিস জীবনে কখনও দেখেনি সে। বোমাটাকে প্রকাণ্ড ফুটবলের মত লাগল তার, এক ধারে বাক্স আকৃতির খোপের ভেতর কয়েকটা ফিন ওটার কাঠামোটাকে আরও যেন বিদঘুটে করে তুলেছে। গোলাকার ব্যালিস্টিক কেসিং হালকা ধূসর রঙ করা, ওটাকে ধরে রাখার জন্যে মাঝখানে ব্যবহার করা হয়েছে কয়েকটা ক্ল্যাম্প, দেখে মনে হবে বিশাল একটা যিপার।
ওটাকে তার তিন হাজার মাইল বয়ে নিয়ে যেতে হবে, ভাবতেই শিউরে উঠল ডেনিংস। লস আলামোসের বিজ্ঞানীরা বোমাটাকে বেঁধেছেদে প্লেনে তোলার কাজ যারা তদারক করছেন, কাল বিকেলে ডেনিংস ও তার ক্রুদের ব্রিফ করেছেন। ট্রিনিটি টেস্ট এক্সপ্লোসন-এর সচল ছবি দেখানো হয়েছে তরুণ ক্রুদের। অবিশ্বাসে দম বন্ধ করে রেখেছিল সবাই। একটা মাত্র বোমার বিস্ফোরণ এমন ব্যাপক ধ্বংসকাণ্ড ঘটায় কিভাবে। একটা পুরো শহর নিশ্চিহ্ন করে দিতে একটা বোমাই যথেষ্ট হয় কি করে।
আরও আধ ঘণ্টা পর বম্ব-বের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। আর্মড অর্থাৎ বিস্কোরনের জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে অ্যাটম বোমাটা, ব্যবস্থা করা হয়েছে নিরাপদে রাখার; ফুয়েল ভরা হয়েছে প্লেনে, টেকঅফ করার জন্যে সম্পূর্ণ তৈরি।
নিজের প্লেনকে দারুন ভালোবাসে ডেনিংস। বাতাসে একবার ডানা মেলতে পারলে এই বিমান আর তার শরীর যেনো এক হয়ে যায়। এ এমন একটা মিলন যা তারপক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। প্রতিবার মিলিত হবার মুহূর্তে রোমাঞ্চ অনুভব করে সে, অথচ আজ তার ভয় করছে, অজানা আশঙ্কায় কাঁপছে বুকটা।
মন থেকে অশুভ চিন্তা ঝেড়ে ফেলে একটা ঘরের দিকে ছুটল ডেনিংস, ক্রুদের শেষবারের মত ব্রিফ করবে। ভেতরে ঢুকে ক্যাপটেন বম্বারডিয়ার হার্ব স্ট্যানটনের পাশে বসল। গোলগাল আকৃতির হাসিখুশি লোক স্ট্যানটন, দেখার মত চওড়া গোঁফ আছে মুখে।
স্ট্যানটনের আরেক পাশে বসে আছে ক্যাপটেন মর্ট স্টম্প, ডেনিংসের কো পাইলট। হালকা-পাতলা গড়ন তার, একটু চঞ্চল টাইপের। ঠিক তার পিছনে বসে আছে লেফটেন্যান্ট জোসেফ আর্নল্ড, নেভিগেটর। তার পাশে বসেছে নেভী কমান্ডার হ্যাঁঙ্ক বায়ারনেস, উইপনস এঞ্জিনিয়ার। প্লেন চলার সময় বোমার ওপর নজর রাখবে সে, দায়িত্ব পালন করবে মনিটরিং-এর।