“তাহলে ঐ লোকটা সন্দেহ ভাজন না হলে কে?”
“হ্যাগেন নামের একজন ডাক্তার। লোকটা হাসপাতালে পার্ট টাইম কাজ করতো। হ্যাগেন-এর অতীত ইতিহাস বিশেষ সুবিধার না। আমাদের কাছে খবর ছিল যে আজই ওর কাছে একটা ডেলিভারি আসবে। শুধু জানতাম না কোত্থেকে এটা আসছে। কে ডেলিভারি দিচ্ছে বা কি জিনিস সেটাও ঠিকমতো জানা ছিল না। তবে এর আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে এরকম তিনটা জায়গাতেই তার উপস্থিতি ছিল। সে জন্যেই ধারণা করা হয় যে লোকটা ওর সাথে সম্পৃক্ত।”
কার্ট ছেঁড়া সুতোগুলো জোড়া দেয়ার চেষ্টা করল, তার মানে পিস্তল হাতে লোকটা-ই জিনিসটা নিয়ে আসছিল সম্ভবত। ডা, হ্যাগেনকে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল যা শেষমেশ আক্ষরিক অর্থেই তার কপালেই জুটলো।
“আমাদেরও সেরকমটাই ধারণা, রেনাটা জবাব দিল।
“হ্যাগেনের কি অবস্থা?”
ডা, রেনাটার চেহারা কঠোর হয়ে গেল, “ল্যাম্পেডুসার পাঁচ হাজার মানুষের মধ্যে শুধু হ্যাঁগেনের-ই কোনো খোঁজ নেই। ওকে আমরা সর্বক্ষণ নজরদারিতে রেখেছিলাম কিন্তু গ্যাসের প্রভাবে আমাদের দলটাও কোমায় চলে গেছে। কার্ট চেয়ারে হেলান দিয়ে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে রইল। ছাদে দুই টা রঙ করা। মাঝামাঝি একটা জায়গায় একটা রঙ অন্যটার ওপরে উঠে গেছে। ফলে সেখানে গাঢ় তৃতীয় একটা রঙের সৃষ্টি হয়েছে। তার মানে এই প্রাণঘাতী মেঘের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ মাত্র দুজন। একজন আপনাদের সন্দেহভাজন, অন্য হলো যে আমাদেরকে মারতে চেয়েছিল।”
ডা. রেনাটা মাথা ঝাঁকালো। “ঠিক। এ থেকে কি আপনি কিছু ধরতে পারছেন?”
“তাদের কাছে নিশ্চয়ই কোনো ধরনের প্রতিষেধক আছে। এমন কিছু যা এই আজব টক্সিনের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।”
“এটাও আমাদের সাথে মিলে গেল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা হ্যাঁগেনের অফিসে কিছুই খুঁজে পাইনি। তার বাসা আর গাড়িতেও খোঁজা হয়েছে। কিছু নেই। এমনকি আমরা এই লোকটার রক্তেও কিছু পাইনি যাতে প্রতিষেধকটা বের করে ফেলবো।
“ব্যাপারটা কি অবাক করার মতো?”
“পুরোপুরি না। যেহেতু বিষটার আয়ু কম, ওটার প্রতিষেধকেরও আয়ু কমই হওয়ার কথা।”
কার্ট ব্যাপারটা ধরতে পারলো, “তার মানে প্রতিষেধক নষ্ট হয়ে গেছে। তবে যদি ডাক্তারটাকে খুঁজে পান তাহলে ব্যাটাকে ডলা দিলেই সুড়সুড় করে বলে দেবে প্রতিষেধক কোথায়।”
কান পর্যন্ত হাসি দিল ডা. রেনাটা, “আপনার মাথা আসলেই শার্প মি. অস্টিন।”
“মিস্টার বলা বন্ধ করুন প্লিজ। নিজেকে কেমন বুড়ো বুড়ো লাগে।”
“আচ্ছা কার্ট ডাকবো, আমাকেও রেনাটা বলে ডাকবেন।”
কার্টের প্রস্তাবটা পছন্দ হলো, “লোকটা কোথায় লুকাতে পারে কোনো ধারণা আছে?”
রেনাটা বাঁকা চোখে তাকাল, “কেন? সেটা জেনে আপনি কি করবেন?”
“এমনি?”
“আপনি নিশ্চয়ই লোকটাকে ধরতে যাওয়ার ধান্দা করছেন না?”
“আরে নাহ! কাজটা তো মারাত্মক বিপজ্জনক। কোন দুঃখে সেধে বিপদে পড়তে যাবো,” কার্ট জবাব দিল।
“কি জানি, মনে হলো তাই বললাম।” হালকা লজ্জা পেয়েছে রেনাটা। সেটা সামলে বলল, “আপনাকে যেটুকু দেখেছি আর NUMA-র অ্যাসিসন্ট্যান্ট ডিরেক্টরের সাথে কথা বলে আপনাকে ওরকম মনে হয়েছে তাই।”
কার্ট অবাক চোখে তাকাল, “আপনি আমার বসের সাথে কথা বলেছেন?”
“হ্যাঁ, রুডি গান। চমৎকার মানুষ। এখানে আসার আগে ওনার সাথেই কথা বলছিলাম। উনি বলেছেন যে আপনি সাহায্য করতে চাইবেন। আর যদি আমি সাহায্য না নেই তাহলে জোর করে হলেও সাহায্য করতে গিয়ে সবকিছু লেজে-গোবরে অবস্থা করে ফেলবেন।”
রেনাটার মুখে চওড়া হাসিটা ফিরে এসেছে। কথোপকথন এই প্রসঙ্গে চলে আসায় খুব খুশি। কার্ট এখন সহজেই বুঝতে পারছে যে কেন ওকে ডেকে এনে সব খুলে বলছে রেনাটা।”
“তা আমাকে বিক্রি করে কত পেল তারা?”
“বেশি না। বিনিময়ে একটা গান গেয়ে শোনাতে হয়েছে।”
“ওরে নীল দরিয়া?”
“শুধু নীল দরিয়া না। বোনাস হিসেবে মি. জাভালাকেও দিয়ে দিয়েছেন।” শুনে প্রচণ্ড আহত হয়েছে ভাব ধরলেও, মনে মনে কার্ট প্রচণ্ড খুশিই হয়েছে ব্যাপারটায়।
“তা বেতন কি ইউরোতে পাব নাকি”
“টাকা পাবেন না, মজা পাবেন। আমরা এই ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী লোকটাকে খুঁজে বের করব। আর যদি ভাগ্য ভালো হয়, তাহলে হ্যাগেন বা ঐ লোকটা যে প্রতিষেধক ব্যবহার করেছে ওটা খুঁজে বের করে এই লোকগুলোকে আবার জ্যান্ত করে তুলবো।” রেনাটা কথাটা শেষ করল।
“এরকম প্রস্তাব ফেরানো মুশকিল। কোত্থেকে শুরু করবো আমরা।” কার্ট বলল সিরিয়াস ভঙ্গিতে।
“মাল্টা। গত মাসে হ্যাগেন তিনবার সেখানে গিয়েছে।” রেনাটা জানালো। তারপর ড্রয়ার খুলে একটা ফোল্ডার বের করে সেখান থেকে কয়েকটা ছবি বের করে কার্টের হাতে দিল। ছবিগুলো দূর থেকে গোপনে তোলা।
“হ্যাগেন এই লোকটার সাথে বেশ কয়েকবার দেখা করেছে। গত সপ্তাহে একবার কথা কাটাকাটিও হয়েছে ওদের মধ্যে।” রেনাটা জানালো।
কার্ট ছবিটা ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলো। ছবিটার লোকটার পরনে টুইডের জ্যাকেট, কনুইয়ের কাছে অন্য কাপড় দিয়ে তালি মেরে ডিজাইন করা। দেখে মনে হয় খুব পড়াশোনা জানা লোক। বসে আছে একটা ক্যাফেতে, আরো জনা তিনেক লোকের সাথে কথা বলছে। যেন ঐ তিনজন তাকে ঘিরে রেখেছে।
“মাঝখানের এটা হ্যাগেন। বাকি দুজন কারা আমরা জানি না। ওর সঙ্গী সাথী হবে হয়তো।” রেনাটা বলল।