চেহারায় বিষণ্ণতা ফুটিয়ে পড়েছে দেখে স্যানডেকার বললেন, সময় নষ্ট করা উচিত হচ্ছে না। টেক-অফ করার জন্যে তৈরি হয়ে রয়েছে ওরা।
অ্যাডমিরালের পিছু পিছু অফিসের মতো দেখতে একটা কমপার্টমেন্টে ঢুকল ওরা। সিটবেল্ট বাঁধছে, এ সময় সচল হলো দৈত্যাকার বিমান। আটাশটা চাকা ঘুরতে শুরু করল, ঘোর গতি ক্রমশ দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। তারপর এক সময় আকাশে উঠে এলো ওরা।
হাতঘড়ির ওপর চোখ বুলিয়ে অ্যাল বলল, ছো দিয়ে আমাদের তুলতে মাত্র তিন মিনিট সময় নিল পাইলট।
গম্ভীর সুরে অ্যাডমিরাল বললেন, হাতে নষ্ট করার মতো সময় সত্যি নেই।
পেশীতে দিল দিল পিট, লম্বা করল পা দুটো। ধরেই নিচ্ছি আপনার একটা প্ল্যান আছে।
কাইড ইনগ্রাম আর কার্টিস মিকার কতটুকু বলেছেন তোমাদের? অ্যাডমিরাল জানতে চাইলেন।
বলেছেন একটা বি-টোয়েনটিনাইন সাগরের তলায় পড়ে আছে, বলল পিট। তারপর সোসেকি দ্বীপের চারধারের জিওলজি ও সিসমিক ফল্ট সিস্টেম সম্পর্কে লেকচার দিলেন। কার্টিসের ধারণা, প্লেটার ভেতর যে অ্যাটকি বোমাটা আছে তা ফাটিয়ে দিতে পারলে শক ওয়েভের কারণে দ্বীপটা সাগরের নিচে ডুবে যাবে।
আমার বিশ্বাস, এটা একটা ফালতু ধারণা।
মাথা ঝাঁকিয়ে পিট বলল, তারপর মেল পেনার আমাদেরকে ছুটি দিয়ে ওয়েক আইল্যান্ডের সৈকতে ফুর্তি করতে বললেন। ইতোমধ্যে টিমের বাকি সবাই প্লেনে চড়ে আমেরিকায় চলে গেছে। আমি জানতে চাইলাম, আমাদেরকে আটকে রাখা হয়েছে কেন। উত্তরে তিনি বললেন, আপনি এসে সব কিছু ব্যাখ্যা করবেন।
মেল পেনার উত্তর এড়িয়ে গেছে, কারণ উত্তরগুলো তার জানা নেই, বললেন স্যানডেকার। এমনকি কাইড ইনগ্রাম ও কার্টিন্স মিকারও অ্যারিজোনা সম্পর্কে কিছু জানেন না।
অ্যারিজোনা মানে? পিট কৌতূহলী।
আমাদের অপারেশনের কোড নেম।
আমাদের অপারেশন? সতর্ক প্রশ্ন অ্যালের।
আশা করি বিগ বেন-এর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই? কিংবা পার্ল হারবারে ওই নামে যে যুদ্ধজাহাজটা আছে, তার সাথে?
থাকতে পারে আবার না-ও থাকতে পারে। কোড নেম সাধারণত অর্থবহ হয় না। পিট ও অ্যালের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন অ্যাডমিরাল। পুরো একটা দিন বিশ্রাম নেয়ায় উপকার হলেও, এখনো অত্যন্ত ক্লান্ত ওরা। অপরাধবোধের একটা অস্বস্তিকর খোঁচা অনুভব করলেন তিনি। ওদেরকে এতটা ধকল সইতে হয়েছে, সেজন্যে তিনিই দায়ী। এখন আবার প্রেসিডেন্ট ও রেইমন্ড জর্ডানকে ওদের সার্ভিস নেওয়ার জন্যে পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ জানেন মহাসাগরের অতল পরিবেশ সম্পর্কে ওদের দুজনের মতো অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান জীবিত আর কোনো লোকের মধ্যে নেই। আবার একটা ঘূর্ণি বহুল বিপদের মুখে ওদেরকে ঠেলে দেওয়াটা সত্যি নিষ্ঠুরতারই নামান্তর, কিন্তু তাঁর সামনে দ্বিতীয় কোনো বিকল্প ছিল না।
টেবিলে রেখে একটা জিওলজিকাল চার্টের ভাঁজ খুললেন তিনি, সোসেকি দ্বীপের চারদিকে পঞ্চাশ কিলোমিটার সাগরের মেঝে দেখা যাচ্ছে। ড্রাগন সেন্টার ধ্বংস করার মতো যোগ্য লোক কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় নি, কাজেই আবার তোমাদেরকেই নির্বাচন করা হয়েছে। ডীপ সী মাইনিং ভেহিকেল সম্পর্কে একমাত্র তোমরাই অভিজ্ঞ।
ভাবতে ভাল লাগছে মানুষের উপকারে লাগি আমরা, বিড়বিড় করে বলল অ্যাল।
কী বললে?
অ্যাল জিজ্ঞেস করছে, ঠিক কী করতে হবে আমাদের, বলে চার্টের ওপর ঝুঁকল পিট, তাকালো একটা ক্রস চিহ্নের দিকে নিচে লেখা রয়েছে ডেনিংস ডেমনস। বোমাটা ফাটাবার জন্যে ডিএসএমভি ব্যবহার করতে হবে আমাদের, তাই না?
হ্যাঁ, বললেন অ্যাডমিরাল। আমরা টার্গেট সাইটে পৌঁছুনোর পর তোমাদেরকে ও বিগ বেকে প্যারাসুটের সাহায্যে পানিতে নামিয়ে দেওয়া হবে।
তারপর? জানতে চাইল অ্যাল।
সাগরে নামার পর নিচে, তলায় চলে যাবে তোমরা-প্যারাসুট থাকায় গতি দ্রুত হবে না। তারপর ওটাকে চালিয়ে নিয়ে যাবে বি-টোয়েনটিনাইনের কাছে। ফিউজিল্যাজে আছে অ্যাটমিক বোমাটা, বের করে আনবে। নির্দিষ্ট একটা জায়গায় বয়ে আনতে হবে ওটাকে, ফাটাবার জন্যে।
আড়ষ্ট হয়ে গেল অ্যাল, যেন হঠাৎ ভূত দেখেছে। ওহ্ গড! যা ভয় করেছিলাম তার চেয়ে মারাত্মক।
ঠাণ্ডা চোখে অ্যাডমিরালের দিকে তাকিয়ে আছে পিট। পাশে দাঁড়িয়ে একটা অ্যাটম বোমা ফাটাতে বলছেন, একটু বেশি আশা করা হয়ে যাচ্ছে না কি?
ইউনিভার্সিটির পঞ্চাশজন বিজ্ঞানী ও এঞ্জিনিয়ার একসাথে বসে অপারেশন অ্যারিজোনার প্রোগ্রাম ফাইনাল করেছেন। আমার কথায় বিশ্বাস রাখো, সফল হবার নিখুঁত একটা ডায়াগ্রাম তৈরি করেছেন তারা।
এতটা নিশ্চিত তাঁরা হন কীভাবে? জানতে চাইল অ্যাল। এর আগে একটা প্লেন থেকে পঁয়ত্রিশ টন ডীপ সী ভেহিকেল সমুদ্রে নামায় নি কেউ।
সমস্ত দিক অঙ্ক কষে বিবেচনা করা হয়েছে, ব্যর্থতার সমস্ত সম্ভাবনা বাতিল করা হয়েছে এক এক করে। তোমরা পানিতে নামবে খসে পড়া একটা পাতার মতো হালকাভাবে।
নরকের পথে প্রথম পদক্ষেপ, কৌতুক করল অ্যাল, যদিও আওয়াজটা ভাল করে ফুটল না।
বিপদ সম্পর্কে আমরা সচেতন, মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি বলে তোমাদের ওপর আমাদের সহানুভূতিও আছে, কিন্তু তোমার আচরণ কোনো উপকারে আসবে না।
প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে পিটের দিকে তাকাল অ্যাল। কী আচরণ?