.
ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো হেডকোয়ার্টার, নিউ দিল্লি
ত্রস্ত্র পায়ে এক অধস্তনকে ঢুকতে দেখে চোখ তুলে তাকালেন ইমরান। কী ঘটেছে জানার জন্য ভ্রু উঁচু করতেই ডেস্কের উপর একতোড়া কাগজ রেখে দিল লোকটা।
“ওকে, লেটস গো।” পেপারস পড়ে আদেশ দিলেন। দরজার দিকে যেতে যেতেই জানালেন, “কমান্ডোদেরকে অ্যালার্ট করে দাও।” এরই মাঝে একদল কমান্ডোকে স্ট্যান্ড বাই থাকার আদেশ দেয়া হয়েছে। মিনিটখানেকের মধ্যেই আই এস পি ডাটাবেইজ থেকে পাওয়া ঠিকানানুযায়ী ছোটার জন্য তৈরি হয়ে গেল আইবি টিম।
এমন সময়ে এক এজেন্টের ফোন বেজে উঠল; ওপাশের কথা শুনে ইমরানকে জানাল, “স্যার আমাদের টার্গেট মেডিকেল ফ্যাসিলিটিতে এইমাত্র আগুন লাগার ঘটনা রিপোর্ট করেছে ফায়ার ডিপার্টমেন্ট।”
দাঁতে দাঁত ঘষে সময়মত পৌঁছে দেবার জন্য প্রার্থনা করলেন ইমরান।
.
০৯. থেসালোনিকি, গ্রিস
বিছানায় নিঃসাড় হয়ে পড়ে থেকে বাঁচার আনন্দে মুখ ডুবিয়ে দিল এলিস। কথা মতই পুলিশ এসকর্ট তাকে এ হোটেলে নিয়ে এসেছে। তারপর ভুয়া একটা নাম নিয়ে হোটেলে চেক ইন করেছে। অবস্থা সম্পর্কে ওদেরকে কী বলা হয়েছে না জানালেও এটুকু বুঝতে পারছে যে ওর সত্যিকারের পরিচয় গোপন রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পুলিশ একটা কেস ফাইল করে স্ট্যাভরস আর পিটারকে ধরার জন্য তদন্তও শুরু করেছে। কিন্তু, এলিসের কেন যেন মনে হচ্ছে যে ওরা কখনো ধরা পড়বে না।
এরই মাঝে কনস্যুলেটও ফোন করে জানিয়েছে যে আগামীকাল দুপুরের আগেই এদেশ ছেড়ে যাবার সমস্ত কাগজপত্র তৈরি হয়ে যাবে। নিশ্চয়তা দিয়েছে যে এখন আর কোনো ভয় নেই। এ সবকিছুই ওয়ালেসের জন্য সম্ভব
হয়েছে ভাবতেই কৃতজ্ঞতায় ছেয়ে গেল মন।
কেবল একটা কাজ বাকি আছে। টিকেট বুক করতে হবে। আগামীকালও করা যাবে। কিন্তু ইউএস এ ফিরবে না। সেটা মোটেও ভালো আইডিয়া হবে
। স্ট্যাভরস আর পিটার ওর আদ্যোপান্ত সবকিছু জানে। হয়ত বাসার ঠিকানাও। এখানে এতটা নিরাপত্তা পেলেও ইউএস-এ ওকে কে বাঁচাবে? সারাক্ষণ তো আর ওয়ালেসের কাছে ছুটে যাওয়া যাবে না। এমনিতেই লোকটা যথেষ্ট করেছে।
তাহলে আর কোথায় যাবে? শাওয়ার নিতে নিতে বহুক্ষণ ভাবল। এখন চারদোনের গ্লাস হাতে নিয়ে রিল্যাক্স করলেও প্রশ্নটার কোনো উত্তর পেল না।
টিভির সুইচ অন করতেই লোকাল একটা গ্রিক চ্যানেল এল। কিন্তু হেডলাইনের সাথে সাথে ফুটে উঠা ইমেজ বোঝার জন্য ভাষাটা জানার কোনো প্রয়োজন নেই। খবরে বলা হল, থেসালোনিকির হাইওয়ের দুপাশে অ্যাকসিডেন্টের খবর পাওয়াতে সমস্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভুয়া একজন কলারের ফোন পেয়ে পুলিশ পৌঁছে গেলেও জড়িত কাউকেই পাওয়া যায় নি।
শোনার সাথে সাথেই শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল ভয়ের একটা শীতল স্রোত।
কিসের মাঝে জড়িয়ে ফেলেছে নিজেকে?
এটা তো কোনো সাধারণ ষড়যন্ত্র নয়। যা-ই হোকনা কেন বড় বড় রথী মহারথী জড়িত আছে। খনন সাইট থেকে কেউ যেন জীবিত বেঁচে ফিরতে না পারে সে কারণে কয়েক ঘণ্টা হাইওয়ে আটকে দেয়ার মত পাগলামো যদি করতে পারে তাহলে তাদের মূল পরিকল্পনা আরো কতটা ভয়ংকর!
কিন্তু সেটা কী? মাথা খাটাতে চাইলেও জুৎসই কোনো ব্যাখ্যা পেল না।
ফোন বেজে উঠতেই কেটে গেল চিন্তার সুতো।
“এলিস?” ভেসে এলো ওয়ালেসের মসৃণ স্বর।
“মিঃ ওয়ালেস, আপনাকে যে কিভাবে ধন্যবাদ জানাব।” কৃতজ্ঞতায় নুয়ে। পড়ল এলিস। “আমি থেসালোনিকির একটা হোটেলে উঠেছি।”
“হ্যাঁ, আমি জানি।” উত্তরে জানালেন ওয়ালেস। “বাই দ্য ওয়ে, তোমাকে বোধহয় আগেও বলেছিলাম যে আমাকে কার্ট ডাকবে। যাই হোক, তুমি নিরাপদে আছো জেনে খুশি হয়েছি।”
“আমিও তাই” উত্তর দিল এলিস, “কিন্তু এখনো ভয় পাচ্ছি।” টেলিভিশনে দেখা হাইওয়ে, হাইওয়ে অ্যাক্সিডেন্টের কথা জানাল। “কাল সকালে প্রথমেই আগে টিকেট বুক করব। এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব চলে যেতে চাই।”
“আহ, আমিও এ কারণেই ফোন করেছি। নিশ্চিত না হয়ে কিছু প্রমিজ করতে চাইনি। মনে হয়না এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রিসের কোনো কমার্শিয়াল। এয়ারলাইনে সিট পাবে। কিন্তু পরিচিত কয়েকজনের সাথে কথা বলে তোমাকে ইউএসে ফিরিয়ে আনার জন্য একটা প্রাইভেট জেট রেডি করেছি। আগামীকাল দুপুরেই রওনা হতে পারবে।”
আপনা থেকেই হা হয়ে গেল এলিসের মুখ। প্রাইভেট জেট? কার্ট ওয়ালেসের বন্ধুরা নিশ্চয় বেশ উঁচু স্তরের মানুষ। ভদ্রলোক ওকে নিরাপদে ঘরে পৌঁছে দেবার প্ল্যান করছেন বুঝতে পেরেই নিজেকে শক্ত করে ফেলল।
“এ ব্যাপারে আসলে আমিও চিন্তা করেছি কার্ট।” হঠাৎ করেই ঠিক করে ফেলল গন্তব্য। ইউএস সম্পর্কে সন্দেহের কথা জানিয়ে খুব নম্রভাবে কিন্তু কঠোর হয়েই নাকচ করে দিল ওয়ালেসের প্রস্তাব।
“এ ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত?” এলিসের অভিপ্রায়ের কথা শুনে অবশেষে জানতে চাইলেন ওয়ালেস।
“অবশ্যই।” অন্তত এ ব্যাপারে আর কোনো দ্বিধা নেই। “আর যদি সম্ভব হয় তো আরেকটা অনুরোধ করতে চাই।” ওয়ালেসকে আরো কিছু প্রয়োজনের কথা জানিয়ে দিল।
“ফাইন, দেন। সবকিছু রেডি হয়ে যাবে। সকাল দশটার দিকে একটা ফোনের জন্য অপেক্ষা করো। হ্যাভ আ সেফ ফ্লাইট আর অন্য কোনো দরকার হলেও জানিয়ে দিও।”