“না, তা না।” কেউ আশাই করেনি এমন একজন এবার আলোচনার খেই ধরলেন। প্যাটারসন। “মানুষের জিন আর ভাইরাস সংক্রান্ত এখনো এমন অনেক তথ্য আছে যা আমরা আবিষ্কার করতে পারিনি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো নতুন আবিষ্কার হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ ধরো এডেনো অ্যাসোসিয়েটেড ভাইরাস টাইপ টু কিংবা এএভিটু যা মানুষকে আক্রমণ করলেও কোনো
অসুস্থতা ছড়ায় না। ইঁদুরের উপর এক পরীক্ষায় দেখা গেছে ল্যাবরেটরিতে কাসপাসেস নামক প্রোটিন ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ব্রেস্ট ক্যান্সারের কোষকে মেরে ফেলতে পারে এএভিটু, যা কোষের প্রাকৃতিকভাবে মৃত্যুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এছাড়াও এএভিটু সংক্রামিত ক্যান্সার কোষ আরো বেশি মাত্রায় কি-সিক্সটি সেভেন উৎপন্ন করে; এমন এক প্রোটিন; যা প্রতিষেধক প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলে আর সি-মিক নামক আরেকটা প্রোটিন যা কোষ বৃদ্ধির হার বাড়াবার পাশাপাশি স্থবির হয়ে যাওয়া রোধ করে।”
“এছাড়াও যোগ করলেন রয়সন, “মানুষের জিনের আট শতাংশই হল ভাইরাস জিন আর তাদের অবশিষ্টাংশ। হাজার হাজার বছর আগে রেট্রোভাইরাসে সংক্রামিত সৃষ্টির শুরু থেকে সর্বোচ্চ শ্রেণির স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহাবশেষ পর্যন্ত। তাছাড়াও আমরা এমন কিছু ভাইরাসের কথা জানি যা আশ্রয়দাতা ব্যক্তির ডিএনএ’তে পরিণত হয়। যেমন এইচ আই ভি ভাইরাস। তাই রেট্রোভাইরাস ডিএনএ’র সাথে সম্পর্কিত এমন এক প্রোটিন উৎপন্ন করবে যা স্থানাস্তরিত হতে পারে; এর সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। মানব জিন এখনো এক মহা রহস্য। এর মানচিত্র পাওয়া গেলেও কোন অংশটা যে বেশি কাজ করে তা এখনো অনাবিষ্কৃত। অনেক দিন ধরেই জিনের বেশ বড় একটা অংশকে, ৯০ শতাংশেরও উপরে, বলা হত “জাঙ্ক ডিএনএ।” কারণ এটা প্রোটিনের জন্য তৈরি নয়। আজ অবশ্য নব নব আবিষ্কারের আলোর মুখ দেখায় মুছে গেছে এ তকমা।”
এবার শুরু করলেন গ্যালিপস, “ঠিক তাই। দ্য এনকোড প্রজেক্টের মতে, প্রায় সত্তর শতাংশ ডিএনএ’কে আর এনএ’তে নকল করা যায় যা পূর্বে হত না। তাই জোর সম্ভাবনা আছে যে আরো মিলিয়ন মিলিয়ন জিনও রয়ে গেছে। আমরা যা এখনো জানি না। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এক ধরনের জিনগত শ্রেণিতে লিঙ্ক আরএনএ’র তিরাশি শতাংশই হল স্থানবিন্যাসে সক্ষম উপাদান। এগুলোকে “জাম্পিং জিন” বলা হয়; কারণ তারা জিনের মধ্যেই লাফিয়ে বেড়াতে সক্ষম। আর এগুলোর বেশির ভাগই হল প্রাচীন রেট্রোভাইরাসের বংশধর। যা অন্যান্য জিনের সাথে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হয়ে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে রেট্রোভাইরাসের অবশিষ্টাংশের মধ্যে স্থানান্তরে সক্ষম জিনও থাকতে পারে। তাই মানব দেহে রেট্রোভাইরাসের প্রবেশ করিয়ে জিন স্থানান্তরের ধারণা একেবারে অমূলক নয়।”
“তাহলে অমৃত পান করার পরেও আলেকজান্ডার মারা গেলেন কেন?” জানতে চাইল কলিন, “যদি এই অলৌকিক ওষুধটা সত্যিই পান করে থাকেন তাহলে তো চিরকাল বেঁচে থাকার কথা।” তারপরই অবশ্য কেঁপে উঠে বলল, “অবশ্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে তিনি বাঁচেন নি।”
“আমি বলছি, কেন।” উত্তর দিল বিজয়, “ক্যালিসথিনসের কারণে।”
“মানে?” গ্যালিপস অবাক হয়ে গেলেন।
মিটিমিটি হাসছে কলিন, “গ্রিক ইতিহাসবিদ যাকে আলেকজান্ডার হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন। তারপর বিজয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “তো ক্যালিসথিনস কী করেছিল?”
মাথা ঝাঁকাল বিজয়, “উনি কিছু করেন নি। ঘটনা হল যা করেন নি, সেই কারণেই আলেকজান্ডার মারা গেছেন। আমরা তিন ভ্রাতার কাছে পৌঁছানোর পর সাপের সিলটাকে ভেঙে ফেলা হয়। প্রথমবার তৈরির পর থেকেই এভাবে আছে চেম্বার। ক্যালিসথিনস কখনো আসলে চেম্বারে যান নি। আর চূড়ায় উঠে পাথর ভেঙে ভেতরে গেলেও গুহাকক্ষের দরজা দিয়ে যান নি। প্রয়োজনমত ফল আর ঔষধি গাছ নিয়ে গেছেন। ভাইরাস নয়।”
শিস দিয়ে উঠল কলিন, “তার মানে আলেকজান্ডারকে মেরে ফেলাই উদ্দেশ্য ছিল? মানে পদ্যগুলো তো খুব স্পষ্ট। নির্দেশ না মানলে কোনো সুযোগই পাবে না। ভাইরাস সম্পর্কে এখন যতটুকু জানি এতে তো অবাক হবার কিছু নেই।”
“আসলে তা না।” উত্তরে জানাল বিজয়। আমার মনে হয় এটা ক্যালিসথিনসের পরিকল্পনা ছিল না। মনে হয় শুধু ভেবেছিল যে এত উপরে উঠে সিল ভাঙ্গা সম্ভব নয়। হয়ত ভেবেছিল সিলের আড়ালে থাকা জিনিসটা তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু সে সম্পর্কে আলেকজান্ডারকে কিছু বলেন নি। কেননা ততদিনে নিজের বিরুদ্ধ মতকে একেবারেই স্বীকার করতে পারতেন না জেদি আলেকজান্ডার।”
কথাটা শুনে বিস্ময়ে সবাই চুপ মেরে গেল। মহাভারতের এক পৌরাণিক কাহিনি এক দিগ্বিজয়ীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। তেত্রিশ বছর জন্মদিনের কয়েকদিন পরেই যদি আলেকজান্ডার মারা না যেতেন তাহলে পৃথিবীর ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হত।
“টাইটানের অবস্থা কী?” জানতে চাইল বিজয়। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আবদ্ধ রোগীসহ আটটা গোপন ফ্লোর আবিষ্কারের সাথে সাথে তাদেরকে জয়পুরে নিয়ে। আসার ব্যবস্থা করেছেন ইমরান। তারপর জয়পুর থেকেই প্যাটারসনকে ফোন করে সমস্ত কিছু জানিয়েছেন।
“আমরা ওয়ালেসের সাথেও কথা বলেছি।” তীব্র কণ্ঠে উত্তর দিলেন প্যাটারসন, “মেডিকেল ফ্যাসিলিটির কথা শুনে তো একেবারে চমকে উঠেছেন। কিন্তু একই সাথে এটা যে টাইটানের নয় তাও জানিয়েছেন। জয়পুর ফ্যাসিলিটিও টাইটানের সাথে জড়িত নয়। যাই হোক এ ব্যাপারে কিরবাঈ কাজ শুরু করেছে।”