অবশেষে সামরিক আর কূটনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে কাজাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতেও সক্ষম হয়েছেন। তবে একটা কথা ভোলেননি যে তার পাওয়া তথ্য মতে এ মিশন অত্যন্ত গোপনীয় হওয়ায় সকল কথা প্রাক্তন সোভিয়েত দেশটাকে খুলে বলাও যাবে না। অথচ কাজাকদেরকে উসিয়র্ত মালভূমিতে সেনাবাহিনি কিংবা কমান্ডো দল পাঠানোর জন্য রাজি করানোও বেশ দুরূহ ব্যাপার, যাক সবশেষে তারা অন্তত দুটো হেলিকপ্টার পাঠিয়ে মালভূমি পরিভ্রমণ করে শত্রুপক্ষের অবস্থান ও শক্তি সামর্থ্য সম্পর্কে রিপোর্ট করতে রাজি হয়েছে।
পুরো অপারেশন মনিটর করছে কাজাক বিমান বাহিনি। তবে প্যাটারসন আর ইমরানের সাথে ভিডিও লিঙ্ক শেয়ার করছে।
কাজাক হেলিকপ্টারে লাগানো ক্যামেরা মাটিতে জুম করতেই স্পষ্ট দেখা গেল যে, কাজাক বিমান বাহিনির চপার দেখে প্রতিক্রিয়া হিসেবে কুপার বাহিনি প্রথমে দ্রুত হাতে মাল লোডিং করলেও একটু পরেই সে চেষ্টা বাদ দিয়ে টপাটপ ফ্লাইটে চড়ে বসল।
আর তারপরেই দেখা গেল দৃশ্য থেকে পালানোর উদ্দেশ্যে একটা হেলিকপ্টার পূর্বদিকে ছুটলেও, আরেকটা সিদ্ধান্তহীনভাবে আকাশে চক্কর দিচ্ছে। যেন কী করবে বুঝতে পারছে না।
তখনই প্যাটারসন উপলব্ধি করলেন অগাস্তা ওয়েস্টল্যান্ড এর ডব্লিউ ওয়ান থ্রি নাইন এম হেলিকপ্টার কাজাক চপারের উপর আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু অগাস্তা শুধু মেশিন গানের জন্য উপযুক্ত হলেও যেহেতু অপেক্ষা করছে তার মানে তাদের কাছে রকেট লঞ্চার আছে।
কাজাক বিমান বাহিনিও ব্যাপারটা ঠিকই টের পেয়েছে। পাইলটদ্বয়কে সতর্ক করে দিয়ে পরবর্তী করণীয় জানানোর জন্য উত্তেজিত সব আদেশ প্যাটারসন আর ইমরানের কানে এলো। সশস্ত্র প্রতিরক্ষা আশা করেনি কাজাক বাহিনি। এই লোকগুলো সম্পর্কে কেউই সঠিক কোনো তথ্য না জানায় তাদের আক্রমণের ক্ষমতা সম্পর্কেও ধারণা করতে পারেনি। অন্যদিকে ইসি টু সেভেন ফাইভ হেলিকপ্টারের কাছে কেবল মেশিন গান আর টুয়েন্টি এম এম কামান আছে।
এ ডব্লিউ ওয়ান থ্রি নাইন এমের একটা বিশাল স্লাইডিং কেবিন ডোর খুলতেই দুটো রকেট লাঞ্চারের মাজল দেখেই আতঙ্কে জমে গেলেন প্যাটারসন আর ইমরান।
.
জঙ্গি বিমানের এলোমেলো লড়াই
রকেট লঞ্চার ছোঁড়া হলেও এয়ার কমান্ডের সতর্কবাণী পেয়ে আক্রমণ ঠেকানোর জন্য এড়িয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিল দুই কাজাক পাইলট। স্বয়ংক্রিয় ক্ষেপণাস্ত্র খোলা আকাশ পেরিয়ে নিচের দিকে নেমে সোজা তিন ভ্রাতার দিকে এগিয়ে গেল।
পাথুরে বিন্যাসের মাঝখানে আঘাত করে বড় দুটো চূড়া উড়িয়ে দেয়ার পর আবার রকেট লঞ্চার রিলোড করে ফেলল ভ্যান কুকের দল। কান ফাটানো আওয়াজ হলেও নিচে কী হচ্ছে তাই নিয়ে অগাস্তা চপারের যেন কোনো মাথা ব্যথ্যা নেই।
তারা কেবল কাজাক হেলিকপ্টারকেই আঘাত করতে ব্যস্ত।
তাই আবারো ছুড়ল রকেট লঞ্চার।
.
এক আবিষ্কার
গুহাটার যেন কোনো সীমানা নেই। পা টিপে টিপে সাপদের পাশ দিয়ে চলতে গিয়ে চারপাশে কেবল অন্ধকারই চোখে পড়ছে। বিজয়ের মনে পড়ে গেল গত বছরের একই রকম একটা গুহাকক্ষের কথা। পার্থক্য কেবল সেখানে এত সাপ ছিল না।
বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল বিজয়। তবে এখন পর্যন্ত পাশ দিয়ে হেঁটে, লাফিয়ে পার হয়ে এসেছে সব সাপ। মোটের উপর প্রাণীগুলো বিজয়কে উপেক্ষা করলেও মাঝে মাঝে হিসহিস সতর্কবার্তা যে শোনেনি তা নয়। জানে না এভাবে ভাগ্য কতক্ষণ তার সহায় হবে?
চারপাশে সার্চলাইটের আলো ফেলে অবাক হয়ে ভাবছে যে কতদূর এলো। কালো একটা পর্দার মত গুহাকক্ষের প্রবেশ মুখকে ঢেকে রেখেছে অন্ধকার। যেন সূর্যের আলো ভেতরে ঢুকতে দিতে চায় না। আরেকটা প্রশ্নও খুব জ্বালাচ্ছে; সার্চলাইট আর কতক্ষণ জ্বলবে?
কিন্তু সামনে এগোনো ছাড়া উপায় নেই। এখন থামা মানে হল আত্মহত্যা করা।
হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল পায়ের নিচের মাটি। আর গুহাকক্ষ জুড়ে বয়ে গেল সেই কম্পন। গুঙ্গিয়ে উঠল অদৃশ্য দেয়াল আর ছাদ।
একেবারে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল বিজয়। কিছু একটা ঘটছে। থর থর করে অনবরত কাঁপছে নিচের মাটি। সাপগুলোও এলোমেলো দৌড় শুরু করেছে। এত দ্রুত সরে যাচ্ছে যে এতটা গতি বিজয়ও আশা করেনি।
মনে হচ্ছে যেন কিছুর হাত থেকে পালাতে চাইছে। কী?
তারপরেই মনে হল যদি সাপগুলোকে অনুসরণ করে তাহলে হয়ত পালাবার রাস্তা পাওয়া যাবে। যদি না এগুলো যেটার ভয়ে ছুটছে সেটা তাকেই আগে ধরে ফেলে।
সাপের পিছু নিল বিজয়। সর্বত্র কেবল সাপ আর সাপ। পাশ দিয়ে যাচ্ছে; দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে যাচ্ছে; কখনো এমনকি পায়ের উপর দিয়েও যাচ্ছে। মনে হল বিষধর প্রাণীগুলো বিজয়ের উপস্থিতি পুরোপুরি ভুলে গেছে। তাদের এখন একটাই লক্ষ্য যত দ্রুত সম্ভব সরে যাওয়া।
দ্রুত সামনে এগোচ্ছে বিজয়। ওর আগেই সামনের অন্ধকারে হাওয়া হয়ে গেল সব সাপ।
হঠাৎ করেই থেমে যেতে হল। যা দেখছে তা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। ডানদিকে পনের থেকে বিশ ফুট সামনেই পাথরের এক ধাপ সিঁড়ি। বেড়ে গেল আশা। সিঁড়িতে উঠার জন্য আর তর সইছে না।
কিন্তু সময়ের হিসেবে গন্ডগোল হয়ে গেল। ঠিক সে সময়েই সামনে দিয়ে যাচ্ছিল দুটো কোবরা। একটার উপর বিজয়ের পা পড়ায় সাথে সাথে আঘাত করার জন্য ফণা তুলল।