সুইচবোর্ড আর মেশিন কনসোল চালায় যে কন্ট্রোল ডেস্ক সেটার কাছে গিয়ে যে ফোনটার বাতি বিন্ করছে সেটার বোতাম টিপলাম। আরো লক্ষ্য করলাম তেষট্টি নাম্বার ড্রাইভ-এর লাল বাতি জ্বলছে। এটাতে নতুন টেপ লাগাতে হবে। আমি বেল বাজিয়ে টেপ ভল্টের একজন অপারেটরকে ডাকলাম এখানে আসার জন্য, তারপর তুলে নিলামইরং হতে থাকা ফোনটা। আমার দু’চোখে ঘুম জড়িয়ে আছে।
“প্যান অ্যাম নাইট শিফট থেকে বলছি,” বললাম আমি।
“দেখলে তো?” উৎফুল্ল একটা কণ্ঠ বললো খাঁটি আপার-ক্লাস বৃটিশ টানে। “আমি তোমাকে বলেছিলাম না সে ওখানে কাজ করতে থাকবে! সে সব সময়ই কাজ করে। অন্যপ্রান্তে কারো সাথে কথা বলছে লোকটা। তারপর বললো, “ক্যাট ডার্লিং, তুমি দেরি করে ফেলছো! আমরা সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। এগারোটারও বেশি বেজে গেছে। আজরাতটা কিসের রাত সেটা কি জানো না?”
“লিউলিন,” আমি বললাম। “আমি সত্যি আসতে পারছি না। আমাকে একটা কাজ করতে হবে। জানি আমি কথা দিয়েছিলাম কিন্তু-”
“কোনো কিন্তু-কিন্তু চলবে না। এই নিউইয়ার্স ইভের দিন আমরা সবাই জানতে চাই আমাদের ভাগ্যে কি আছে। আমাদের সবার ভাগ্য গণনা করা হয়ে গেছে, ব্যাপারটা খুবই মজার। এখন তোমার পালা। হ্যারি জোরাজুরি করছে তোমার সাথে কথা বলার জন্য।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো বেল টিপলাম অপারেটরের জন্য। অপারেটররা গেলো কোথায়? আর কেনই বা তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হিম-শীতল অন্ধকার টেপ ভল্টে গিয়ে কাপড় বুনে বুনে নিউইয়ার্স ইভ কাটাতে চাইছে?
“ডার্লিং,” গমগমে কণ্ঠে হ্যারি বললো। আমি যখন টপল এম-এ কাজ করতাম তখন হ্যারি আমার ক্লায়েন্ট ছিলো। এখনও আমরা ভালো বন্ধু হিসেবে রয়ে গেছি। সে তার বাড়ির সবার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে আমাকে তার বাড়িতে দাওয়াত করবেই। তার বউ ব্লাঁশে আর শ্যালক লিউলিনের সাথেও আমার ভালো সখ্যতা আছে। তবে হ্যারি মনেপ্রাণে চায় আমি তার বিরক্তিকর মেয়ে লিলির সাথে ভাব জমাই, যে আমারই সমবয়সী।
“ডার্লিং,” বললো হ্যারি। আশা করি তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেবে, আমি সলকে একটা গাড়ি দিয়ে তোমার কাছে পাঠিয়েছি।”
“গাড়ি পাঠানো ঠিক হয় নি, হ্যারি,” বললাম আমি। “এই তুষারপাতের মধ্যে সলকে গাড়িসহ পাঠানোর আগে আমাকে জানালে না কেন?”
“কারণ তুমি বারণ করতে,” হ্যারি সোজাসুজি বলে দিলো। কথাটা একদম সত্যি। তাছাড়া সল গাড়ি চালাতে খুব পছন্দও করে। এটাই তো তার কাজ, সে একজন শফার। যাইহোক না কেন, এটুকু করার জন্য তুমি আমার কাছে ঋণী থাকার কথা।”
“আমি তোমার কাছে মোটেও ঋণী নই, হ্যারি,” বললাম তাকে। “ভুলে যেও না কে কার জন্যে কি করেছে।”
দুই বছর আগে হ্যারির কোম্পানিতে আমি একটি ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ইনস্টল করে দিয়েছিলাম, এরফলে তার কোম্পানিটা শুধুমাত্র নিউইয়র্কেই নয় বরং সমগ্র উত্তর-হ্যাম্পশায়ারে শীর্ষ ফারকোট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আর্বিভূত হয়। এখন ‘হ্যারিস কোয়ালিটি বৃটি ফার’ যেকোনো জায়গায় মাত্র। চব্বিশ ঘণ্টায় ডেলিভারি দিতে সক্ষম তারা। আমি আবারো টেপ ভল্টে বেল বাজালাম। অপারেটররা গেলো কোথায়?
“শোনো হ্যারি,” অধৈর্য হয়ে বললাম, “আমি জানি না তুমি কিভাবে জানতে পারলে আমি এখানে আছি, কিন্তু আমি এখানে এসেছি একদম একা থাকতে। কেন সেটা এখন বলতে পারছি না। তবে মনে রেখো আমি বিরাট সমস্যার মধ্যে আছি।”
“তোমার সমস্যা হলো তুমি সব সময় কাজ করো, আর সব সময়ই তুমি বড় একা।”
“আমার কোম্পানি সমস্যা করছে,” বললাম তাকে। তারা আমাকে এমন একটা ক্যারিয়ারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে যার সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্রও ধারণা নেই। তারা আমাকে দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। আমার এখন ভাবার জন্য সময় দরকার। কি করবো না করবো সেটা ঠিক করতে হবে।”
“আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম,” হ্যারি বললো, “ঐ ইহুদি নামধারী খৃস্টানগুলোকে কখনও বিশ্বাস কোরো না। লুথারান একাউন্টেন্টের দল! ঠিক আছে, জলদি কোটটা পরে ভালো মেয়ের মতো নীচে নেমে আসো। আমার এখানে এসে মদ খেতে খেতে এ নিয়ে কথা বলা যাবে। তাছাড়া তোমাকে কি আর বলবো, ঐ গণক মহিলা অসাধারণ, বুঝলে? অনেক বছর ধরে এখানে কাজ করে যাচ্ছে অথচ এর আগে আমি তার কথা শুনি নি। আমি আমার ব্রোকারকে বরখাস্ত করে তার শরণাপন্ন হয়েছি।”
“তুমি সত্যি বলছো না তো!” অবাক হয়ে বললাম।
“আমি কি তোমার সাথে কখনও ঠাট্টা-তামাশা করেছি? শোনো, ঐ মহিলা জানে তুমি আজ রাতে ওখানে থাকবে। এখানে এসেই সে প্রথম যে কথাটা বলেছে সেটা হলো, আপনার কম্পিউটার বিশারদ বন্ধুটি কোথায়?’ তুমি বিশ্বাস করতে পারছো?”
“না, পারছি না,” বললাম আমি। “আচ্ছা, তুমি এখন কোথায়?”
“ডার্লিং, আমি তোমাকে বার বার বলছি এখানে চলে আসো। ঐ মহিলা এমন কি এটাও বলেছে তোমার আর আমার ভবিষ্যত কোনো না কোনোভাবে একসূত্রে গাঁথা। শুধু তাই না, লিলি যে এখানে থাকবে না সেটাও মহিলা জানতো।”
“লিলি আসতে পারছে না?” বললাম আমি। কথাটা শুনে দারুণ স্বস্তি পেলাম। তবে অবাক হলাম তাদের একমাত্র সন্তান নিউইয়ার্স ইভের সময় বাবা-মা’র সাথে থাকবে না বলে। মেয়েটার বোঝা উচিত এতে করে তার বাবা-মা কতোটা কষ্ট পাবে।