খাদেমা আপনাকে বলবে, এই অমূল্য মধু সে কোত্থেকে পেয়েছে। আপনি এ দুধ আমীরে উন্দলুসের কাছে নিয়ে যাবেন। তাঁকে বলবেন, শাহী মহলের আস্তাবলের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘোড়ার মুখে এখান থেকে মাত্র এক ঢোক দুধ যেন পান করানো হয়।
আমার জন্য এই চমৎকার বিষ নিশ্চয় সুলতানার পক্ষ থেকে আসছে?
আর কার পক্ষ থেকে আসতে পারে? হুররানী বললেন, সে আমাকে ডেকে নিয়ে এমন বিষ বানিয়ে তোমাকে দিতে বলে এবং শাসিয়ে দেয়, তোমার কাছে। সবচেয়ে মারাত্মক যে বিষ আছে সেটা তোমার হাতে পান করতে হবে, যদি না তুমি এ কাজটা না করো…।
আপনি কি এখনো আমীরে উন্দলুসকে কিছু বলবেন না?
না, মুদ্দাসসিরা মুচমি হেসে বললো, যদি বলে দিই তাহলে উন্দলুসের এই কালনাগিনী সবার আগে আপনাকে দংশন করবে। আপনি এই মহিলাকে এখনো ভালো করে চিনেননি। তার রূপ-যৌবন, অভিনয় শক্তি, উপস্থাপনার মধ্যে এমন বিষয়ে রয়েছে যে, যা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঘোড়াকে মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিতে পারে। আপনি কি ওর হাতে সেই বিষ তুলে দিয়েছেন?
হ্যাঁ, তুলে দিতে হয়েছে, হুররানী এতই প্রভাবান্বিত ও মুগ্ধ হলেন যে, মুদ্দাসসিরার জামার এক প্রান্ত খামচে ধরে তাতে চুমু খেয়ে বললেন, দয়া করে আমীরে উন্দলুসকে এই বিষের কথা বলে দিন। আমি এখন এটাই চাইবো যে, সুলতানা আমাকে জল্লাদের হাতে তুলে দিক। আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না।…….
খোদা আমাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞান ভান্ডার দান করেছেন তার রোগগ্রস্ত বিপদগ্রস্ত বান্দাদেরকে তারই ইশারায় তারই হুকুমে সুস্থ করে তুলতে। কিন্তু তারই এক বান্দি এই বিদ্যা দিয়ে অন্যকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে
বলতে বলতে তিনি আরো পেরেশান হয়ে চাপা কণ্ঠে বললেন, আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই। আমি আর এখানে থাকতে চাই না।
না, আপনাকে কোথাও যেতে হবে না। মুদ্দাসসিরা বললো, আপনার এখানে অনেক প্রয়োজন রয়েছে। আমি তো সে সময়টাও আমার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে লেখতে পাচ্ছি, যখন এই বিষই আপনার হাতে দুধ শরবতে মিশিয়ে কারো মাধ্যমে আমীরে উন্দলুসের সামনে পেশ করা হবে। আপনি যেভাবে আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন সেটা আমীরে উন্দলুসকেও জানিয়ে দেবেন।
কখনো ইচ্ছা হয়, এই বিষ সুলতানার গলায় ঢেলে দিই। কিন্তু আমি মৃত্যুদূত নই, মানুষের সুস্থতার প্রতীক।
আপনি অস্থির হবেন না। সুলতানার বিশ্বস্ত হয়ে থাকুন। মুদ্দাসসিরা বলল।
আমি তো হয়রান হচ্ছি, সে এই শাহী মহলে বসে ইসলামের দুশমনের হাতকে শক্তিশালী করছে। তাদের সঙ্গ দিচ্ছে।
না। মুদ্দাসসিরা বললো, কালনাগিনী কখনো কারো সঙ্গীনী বা সহমর্মী হয় না। সে যা কিছু করছে নিজের জন্য করছে। সে তো এখন এ আশায় বুক বেঁধে আছে যে, সে সিংহাসনের উত্তরাধিকারকে জন্ম দিচ্ছে। খ্রিষ্টানদের সহযোগিতায় সে এক অঙ্গ রাজ্যের রানী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। আমীরে উন্দলুসের বিশ্বস্ত রক্ষিতা হয়ে নিজের বাচ্চাকে সে উন্দলুসের সিংহাসনে বসানোর স্বপ্ন দেখছে।…..
আর আমীরে উন্দলুসের বিচক্ষনতাও এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, তিনি এই মহিলার মানব বিধ্বংসী মন মানসিকতা বুঝে উঠতে পারছেন না। আমি তাকে অন্যকোনভাবে বুঝতে চেষ্টা করছি। আপনি আমার ওপর অনুগ্রহ করেছেন। আমি এর প্রতিদান অবশ্যই দেবো। আপনি মুখ বন্ধ রাখুন এবং নিশ্চিন্ত থাকুন।
হুররানী সেখান থেকে নিশ্চুপ হয়ে চলে এলেন। কিন্তু তার চেহারা ও চলার ভঙ্গি বলে দিচ্ছিলো, দুশ্চিন্তা তাকে অনেকটাই কাবু করে ফেলেছে।
***
পরদিন হেরেমে এক খাস খাদেমা মুদ্দাসসিরার কামরায় এলো। মুদ্দাসসিরা ওকে ভালো করেই জানে। মেয়েটি দারুণ চতুর এবং বেশ সপ্রতিভও।
খাদেমা মুদ্দাসসিরাকে বললো, তার এক ভাই মিসর থেকে এসেছে। ওখান থেকে এমন এক ধরনের মধু নিয়ে এসেছে যা ওখানকার এক বিশেষ এলাকায় পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে, এই মধু ফেরাউনের যুগ থেকে পাওয়া যায়। এ শুধু তাদের শাহজাদাদের স্ত্রীদেরকে পান করানো হতো।
এই মধুর বৈশিষ্ট্য হলো, এতে মেয়েদেরকে বহু বছর পর্যন্ত সজীব রাখে এবং বিশেষ অঙ্গসমূহকে যেড়ষী যুবতীদের মতো সতেজ রাখে। এই মধু এখনো ফেরাউনের যুগের পোড়া এলাকার কথাও কোথাও পাওয়া যায়।
আপনি চাইলে এই মধু দুধের সাথে মিশিয়ে আপনার জন্য নিয়ে আসবো খাদেমা বললো, খুব সামান্যই আছে। তবে দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে ওই সামান্যই অনেক দিন কাজ করে।
নিয়ে এসো। এখনই নিয়ে আসো।
খাদেমা গিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই এক পেয়ালা দুধ নিয়ে এলো।
নিন মালিকা! এখন এটা আরাম করে পান করুন।
মুদ্দাসসিরা দুধের পাত্র হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
সুলতানা তোমাকে এই দুধ দিয়ে কী বলেছে? আমাকে দুধ দিয়ে এখান থেকে চলে যেতে, না দুধের প্রতিক্রিয়া কী হয় সেটা দেখতে?
খাদেমা ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
আপনি এসব কি বলেছেন? মালিকায়ে তরূবের তো এই দুধের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
আচ্ছা বখশিশ যা পাওয়ার সেটা কী নিয়ে নিয়েছে, না দুধের প্রতিক্রিয়া দেখার পর এর জন্য বখশিষ পাবে?
এতো এক খাদেমা। যত চালাকই হোক আমীরে উন্দলুসের এক স্ত্রীর সামনে সেটা আর কতক্ষণ ধরে রাখতে পারবে? সে স্পষ্ট বুঝলো, আমীরে উন্দলুসের এরই রূপবর্তী স্ত্রী বিষের ব্যাপারটা টের পেয়ে ফেলেছে।