- বইয়ের নামঃ ঈমানদীপ্ত দাস্তান
- লেখকের নামঃ এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস
ঈমানদীপ্ত দাস্তান
১.১ নারীর ফাঁদ
ঈমানদীপ্ত দাস্তান – ১ (প্রথম খণ্ড)
সিরিজ – নারীর ফাঁদ – ১ / ঐতিহাসিক উপন্যাস
এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ / অনুবাদ –মুহাম্মদ মুহিউদ্দী
প্রকাশকের কথা
সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবীর শাসনকাল। পৃথিবী থেকে বিশেষত মিশর থেকে ইসলামের নাম-চিহ্ন মুছে ফেলে ক্রুশ প্রতিষ্ঠার ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে খৃস্টানরা। ক্রুসেডাররা সালতানাতে ইসলামিয়ার উপর নানামুখী সশস্ত্র আক্রমণ পরিচালনার পাশাপাশি বেছে নেয় নানারকম কুটিল ষড়যন্ত্রের পথ। গুপ্তচরবৃত্তি, নাশকতা ও চরিত্র-বিধ্বংসী ভয়াবহ অভিযানে মেতে উঠে তারা। মুসলমানদের নৈতিক শক্তি ধ্বংস করার হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে অর্থ, মদ আর ছলনাময়ী রূপসী মেয়েদের। সুলতান আইউবীর হাই কমান্ড ও প্রশাসনের উচ্চস্তরে একদল ঈমান-বিক্রেতা গাদ্দার তৈরি করে নিতে সক্ষম হয় তারা। ইসলামের মহান বীর মুজাহিদ সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবী পরম বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, দু:সাহসিকতা ও অনুপম চরিত্র মাধুরী দিয়ে সেইসব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ছিনিয়ে আনেন বিজয়। সুলতান আইউবী ময়দানে অবতীর্ণ হয়ে অস্ত্র হাতে খৃস্টানদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ লড়েছিলেন, খৃস্টানরা মুসলমানদের উপর যে
অস্ত্রের আঘাত হেনেছিলো, ইতিহাসে ক্রুসেড যুদ্ধ নামে তার উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু সালতানাতে ইসলামিয়ার বিরুদ্ধে পরিচালিত খৃস্টানদের নাশকতা, গুপ্তহত্যা ও ছলনাময়ী রূপসী নারীদের লেলিয়ে দিয়ে মুসলিম শাসক ও আমীরদের ঈমান ক্রয়ের হীন ষড়যন্ত্র এবং সুলতান আইউবীর তার মোকাবেলা করার কাহিনী এড়িয়ে গেছেন অমুসলিম ঐতিহাসিকগণ। সেইসব অকথিত কাহিনী ও সুলতান আইউবীর দু:সাহসিক অভিযানের রোমাঞ্চকর ঘটনাবলী নিয়ে রচিত হলো সিরিজ উপন্যাস ঈমানদীপ্ত দাস্তান। ভয়াবহ সংঘাত, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও সুলতান আইউবীর ঈমানদীপ্ত কাহিনীতে ভরপুর এই সিরিজ বইটি ঘুমন্ত মুমিনের ঝিমিয়েপড়া ঈমানী চেতনাকে উজ্জীবিত ও শাণিত করে তুলতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। পাশাপাশি বইটি পূর্ণমাত্রায় উপন্যাসের স্বাদও যোগাবে। আল্লাহ কবুল করুন।
বিনীত
মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন
১১৪, সবুজবাগ, ঢাকা।
.
১.১ নারীর ফাঁদ
১১৫৭ সালের এপ্রিল মাস। সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবী আপন চাচাতো ভাই খলীফা সালেহ-এর গভর্নর সাইফুদ্দীনকে লিখলেন–
তোমরা খাঁচায় বন্দী রং-বেরংয়ের পাখি নিয়ে ফুর্তি করো। নারী আর সুরার প্রতি যাদের এতো আসক্তি, তাদের জন্য সৈনিক জীবন খুবই বেমানান।
খলীফা সালেহ আর তার বংশজ গভর্নর সাইফুদ্দীন গোপনে মুসলিম খেলাফতের চিরশত্রু ক্রুসেডারদের চক্রান্তে ফেঁসে গেলেন। খেলাফতের রাজভাণ্ডার–মণি-মুক্তা, হীরা-জহরত, দিনার-দেহরাম দিয়ে এই দুই শাসক ক্রুসেডারদের প্ররোচিত ও সহযোগিতা করতে লাগলেন সালাহুদ্দীন আইউবীর বিরুদ্ধে। সুলতান আইউবীকে হত্যা করার চক্রান্ত আঁটা হলো ।
একদিন ঠিক কাক্ষিত সুযোগটি এসে গেলো ক্রুসেডারদের হাতে। তাঁরা মুসলিম শাসকদের মধ্যেই তালাশ করছিলো দোসর । খলীফা সালেহ স্বেচ্ছায় ক্রুসেডারদের সেই ভয়ানক চক্রান্তে পা দিলেন। খলীফা ও ক্রুসেডারদের সমন্বিত চক্রান্তে দু দুবার হত্যার উদ্দেশ্যে আইউবীর উপর আঘাত হানা হলো। দুবারই সৌভাগ্যবশত বেঁচে গেলেন সুলতান সালাহুদ্দীন। তছনছ করে দিলেন। ঘাতকদের সব চক্রান্ত। আঘাতে-প্রত্যাঘাতে পরাস্ত করলেন শত্রুদের। ফাঁস হয়ে গেল গভর্নর সাইফুদ্দীনের চক্রান্তের খবর।
গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে ক্রুসেডারদের দোসর গাদ্দার সাইফুদ্দীন ঘর-বাড়ী, বিত্ত-বৈভব ফেলে পালিয়ে গেলো। গভর্নরের আবাস থেকে উদ্ধার হলো বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ, বিলাস-ব্যসন। গভর্নরের বাড়িতে পাওয়া গেলো দেশী-বিদেশী অনিন্দসুন্দরী যুবতী, তরুণী, রক্ষিতা। এদের কেউ ছিলো নর্তকী, কেউ গায়িকা, কেউ বিউটিশিয়ান, কেউ ম্যাসেঞ্জার। সবই ছিলো সাইফুদ্দীনের মনোরঞ্জনের সামগ্রী ও ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের জঘন্য উপাদান।
সাইফুদ্দীনের বাড়ীতে আরো পাওয়া গেলো নানা রঙের নানা প্রজাতির অসংখ্য পাখি। দেয়ালে দেয়ালে ঝুলানো ছিলো বিভিন্ন ভঙ্গিমার নগ্ন, অর্ধনগ্ন। নারীদের উত্তেজক অশ্লীল ছবি। সুরাভর্তি অসংখ্য পিপা।
সালাহুদ্দীন খাঁচার বন্দী পাখীদের মুক্ত করে দিলেন। গভর্নরের বাড়ীতে বন্দী সেবিকা, নর্তকী, বিউটিশিয়ান ও শিল্পী-তরুণীদের আপনজনদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন। তারপর সাইফুদ্দীনকে লিখলেন
তোমরা দুজনে কাফের-বেঈমানদের দ্বারা আমাকে হত্যা করাবার অপচেষ্টায় মেতেছো। কিন্তু একবারও ভেবে দেখোনি, তোমাদের এই চক্রান্ত মুসলিম খেলাফতের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তোমরা আমাকে হিংসা করো। তাই আমাকে তোমরা ধ্বংস করে দিতে চাও। দু দুইবার আমাকে হত্যা করার জন্যে লোক পাঠিয়েছে; কিন্তু সফল হতে পারোনি। আবার চেষ্টা করে দেখো, হয়তো সফল হবে। তোমরা যদি আমাকে এ নিশ্চয়তা দাও যে, আমার মৃত্যুতে ইসলামের উন্নতি হবে, মুসলমানদের কল্যাণ হবে, তাহলে কাবার প্রভুর কসম করে বলছি, আমি তোমাদের তরবারী দিয়ে আমার শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করিয়ে তোমাদের পদতলে উৎসর্গ করতে অসিয়ত করে যাবো। আমি তোমাদের শুধু একটি কথাই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, কাফের-বেঈমানরা কখনো মুসলমানদের বন্ধু হতে পারে না। ইতিহাস তোমাদের চোখের সামনে। আমাদের সোনালী অতীতের দিকে একবার ফিরে দেখো। আশ্চর্য, রাজা ফ্রাংক-রেমণ্ডের মত প্রচণ্ড ইসলাম বিদ্বেষী অমুসলিম শাসকরা তোমাদের সাথে একটু বন্ধুত্বের অভিনয় করলো, আর অনি তোমরা তাদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহস যুগিয়েছো! ওরা যদি সফল হতো, তাহলে ওদের পরবর্তী প্রথম শিকার হতে তোমরা-ই। এরপর হয়তো দুনিয়া থেকে ইসলামী খেলাফত মুছে ফেলার কাজটিও সমাধা হতো।