- বইয়ের নামঃ কাল নাগিনী
- লেখকের নামঃ এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ
- প্রকাশনাঃ বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস
কাল নাগিনী
১. উন্দলুস কী নাগিন
কাল নাগিনী / মূলঃ এনায়েতুল্লাহ আলতামাস / অনুবাদঃ মুজাহিদ হুসাইন ইয়াসীন
আমার কথা
‘উন্দলুস কী নাগিন’ এর রূপান্তরিত নাম কাল নাগিনী। স্পেনে মুসলমানদের আটশ বছরের শাসনকাল বিশ্ব ইতিহাসে আনন্দ বেদনার স্মৃতি হয়ে আছে। আজো শত কোটি মুসলমানের মনের জিজ্ঞাসা অস্কুট আর্তনাদ হয়ে উঠে- কেন স্পেনে মুসলমানরা এক গৌরবময় অধ্যায় রচনা করেও ব্যর্থতার গ্লানিতে নিজেদের ভাগ্যকাশকে কালিমাযুক্ত করলো? অলৌকিকতার দীপ্তিতে পূর্ণ এক জয়কে কি করে পরাজয়ের বেদনা বিদূর অনাকাংখিত এক অধ্যায়ে রূপান্তরিত করলো? এ জন্য কারা দায়ী? কেনই বা দায়ী? আসল খলনায়ক কারা? তাদের পরিণতি হয়েছিলো কেমন?
এধরণের অসংখ্য ব্যক্ত-অব্যক্ত জিজ্ঞাসা ও রহস্যময়তার নাটকীয় সমাধান দিয়েছেন এনায়েতুল্লাহ আলতামাস এই কালনাগিনীতে। শুধুই দুর্লভ নয়, ইতিহাসের অচেনা-অজানা দরজা খুলে দিয়েছেন পাঠকের সামনে। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন এর কলা-কুশলী, নায়ক-নায়িকাদের ঔপন্যাসীয় মনোমুগ্ধকার উপস্থাপনায়।
এটা ঠিক যে, স্পেনের ইতিহাস অবলম্বনে আরো ঐতিহাসিক উপন্যাস রচিত হয়েছে; তুলনা নয় এক শব্দে বলা যায়, এখানে যেসব চমক জাগানো তথ্যের সমাহার ঘটেছে এর সিকিভাগও সেগুলোতে অনূদিত হয়নি। পাঠক যখন এর প্রামাণ্যতার সজীবতায় আলোকিত হবেন তখন নিজেই এই সরল সত্য উপলব্ধি করতে পারবেন।
সময়, পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং সমকালের উপলদ্ধিকে বিবেচনা রেখে এর ভাষা আঙ্গিক কিছুটা পরিমার্জিত করতে হয়েছে। তাই কালনাগিনী অনূদিত না হয়ে রূপান্তরিত বললেই বোধ করি আমাদের প্রতি সুবিচার করা হবে।
—মুজাহিদ হুসাইন ইয়াসীন
.
.
কাল নাগিনী
মুসলমানদের আলো ঝলমলে একটি অতীত, প্রদীপ্ত গৌরবে প্রাঞ্জল একটি ইতিহাস, অপরাজেয় বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্যে ভরা অনবদ্য এক অমরগাঁথা আজো জুড়ে আছে ইউরোপের অন্যতম শক্তিধর দেশ স্পেনের সঙ্গে।
৮২৫ খ্রিঃ। তখনকার যে স্পেনে মুসলমানদের শাসন ছিলো তাতে বর্তমানকালের পর্তুগালও অন্তর্ভুক্ত ছিলো। পুরো স্পেনকে তখন বলা হতো উন্দলুস।
ফ্রান্সের বাদশাহ লুই তার রাজমহলের এক খাস কামরায় বসা। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্র পোথাক মার্চের বাদশাহ ব্রেনহার্টও রয়েছেন সেখানে। আর উন্দলুসের কর্ডোভা প্রদেশের ইউগেলিস নামের এক খ্রিষ্টানও রয়েছে সেখানে। অবশ্য এ লোক তেমন পদাধিকারের অধিকারী নয়।
সভাষদ হিসাবে সেখানে উপস্থিত আছেন শাহ লুই-এর দুজন জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রীও।
ইউগেলিস! শাহ লুই রাজকীয় গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বললেন, আমাকে যখন বলা হলো তোমার কোন পদাধিকার নেই বা সরকারিভাবে তোমার উল্লেখযোগ্য পরিচিতি নেই তখন তোমাকে সাক্ষাতের অনুমতি দেবো কি দেবো না–এটা ফায়সালা করাআমার জন্য মুশকিল হয়ে গেলো…..।
কিন্তু এখন তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, তোমার মতো লোককে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়াটা জরুরী। তবে আমার শুধু একটা সন্দেহ দূর করতে হবে, আমি কি করে নিশ্চিত হবো যে, তুমি মুসলমানদের গুপ্তচর নও?….
আরেকটি কথা হলো, তুমি আবেগে উত্তেজিত হয়ে কথা বলছো। এখানে দরকার হলো কাজ করা ও সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়া। যারা আবেগে অন্ধ হয়ে কথা বলে তারা কিন্তু প্রয়োজনের সময় লাপাত্তা হয়ে যায়। যখন ত্যাগ দেয়ার মতো চরম বাস্তব অবস্থার সামনে দাঁড়াতে হয় তখন কিন্তু এদেরকে আর দেখা যায় না।
মহামান্য বাদশাহ! আমি আপনাকে কোন প্রমাণ উপস্থাপন করে বিশ্বাস করাতে পারবো না যে, আমি মুসলমানদের গুপ্তচর নই। ইউগেলিস আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললো, আপনার গোয়েন্দা বিভাগ যদি মুসলমানদের মতো বিচক্ষণ ও দূরদর্শী হয় তাহলে কর্ডোভার খ্রিষ্টান সমাজগুলো থেকে জেনে আসতে বলুন, আমি আপনার জন্য বিশ্বাসযোগ্য কিনা। আর আপনার দ্বিতীয় কথার জবাব তখনই পাবেন যখন ত্যাগ ও কুরবানী দেয়ার সময় উপস্থিত হবে।
আমি সাবধানতা ও সতর্কতার পক্ষে। তোমাকে নিয়ে না আমার ভয় আছে, না মুসলমানদের ব্যাপারে কোন ভয় আমাকে কাবু করতে পারবে! শাহ লুই বললেন।
আপনার পূর্বপুরুষরাও তো সতর্কতার পক্ষে ছিলেন। ইউগেলিস মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখে বললো। এর পরিণামেই মুসলমানরা আজ একশ বছরের বেশি সময় ধরে উন্দলুস শাসন করছে এবং দাপটের সঙ্গে। আপনিও তেমন সতর্কতা অবলম্বন করছেন। সেখানে আমরা আজ গোলাম হয়ে আছি। আমাদের পবিত্র ধর্ম গোলাম হয়ে আছে।…..
আপনার অন্তরে যদি পবিত্র পিতা ঈসা মাসীহ ও চিরকুমারী মরিয়ামের ভালোবাসা ও মর্যাদাবোধ থাকতো, তাহলে আপনি এমন নিশ্চিন্ত মনে সিংহাসনে বসে থাকতে পারতেন না। আমি কি কেবলই একটি অকর্মা-আবেগী লোক, যে এতদূর থেকে আপনার দরবারে পৌঁছেছে? আমি এক উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি।…
আর এটা আমার ব্যক্তিগত কোন উদ্দেশ্য নয়। আমার কাছে যদি সেনাবাহিনী থাকতো, যেমন আপনার কাছে আছে তাহলে মুসলমানদেরকে আমি উন্দলুস থেকে বের করে দিতে না পারলেও তাদেরকে সেখানে শান্তিতে দেশ শাসন করতে দিতাম না। আর কিছু হোক না হোক, তাদের ওপর অনবরত গেরিলা ও নৈশ হামলা চালিয়ে যেতাম।…