আর যারিয়াব! এবং সুলতানা তুমিও শুনে যাও। আমি তোমাদেরকে ভবিষ্যতে আমার ওযীর বা কোন সালারের সঙ্গে এভাবে কথা বলার অনুমতি দেবো না। এটা সালতানাতের ব্যাপার। এতে তারাই হস্তক্ষেপ করতে পারে যারা এর প্রতি দায়িত্ববান এবং যারা এ সম্পর্কে সবিশেষ অভিজ্ঞ। মনে রেখো, আমার মতোই তাদের হস্তক্ষেপের অধিকার রয়েছে।
যারিয়াব এমনভাবে ঝুঁকে পড়লো যেন আধখানা হয়ে গেছে। এটা দেখে সুলতানাও মাথা নুইয়ে ফেললো।
সুলতানা! আবদুর রহমান আঁঝালো গলায় বললেন, আমার গোসলের ব্যবস্থা করে। তার পরই দুই খ্রিষ্টানকে আমার সামনে হাজির করবে। প্রধান বিচারপতি ওদের শাস্তি দেবেন। তবে আমিও জানতে চাই, ওদের মিশন কি এবং ওরা কি চায়?
সুলতানা কামরা থেকে বেরিয়ে গেলো। আবদুর রহমান শয়ন কক্ষে চলে গেলেন। আর যারিয়াব বের হয়ে সিপাহীদেরকে বললেন, দুই কয়েদীকে তার হাতে ছেড়ে দিতে।
***
গোসলের পর আমীরে উন্দলুস তার সাক্ষাতের বিশেষ কামরায় গিয়ে বসলেন। তার সামনে দুই খ্রিষ্টান কয়েদী দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে আছে যারিয়াব এবং প্রধান বিচারপতি ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া।
যদি সত্য না বলো তাহলে এমন শাস্তি দেবো যে, মৃত্যুর চেয়ে তা হবে জঘন্য। মরবেও না, আবার বেঁচেও থাকতে চাইবে না। আবদুর রহমান কয়েদীদেরকে বললেন, এটা কোন্ কোন্ মাথার আবিষ্কার? আমি অবশ্য সেই কুট-বুদ্ধির মাথাওয়ালাদের প্রশংসা করি। কিন্তু ওরা শাস্তি থেকে বাঁচতে পারবে না। যদি তোমরা দুজন বলে দাও তাহলে আমি তোমাদেরকে ছেড়েও দিতে পারি।
আমরা কি অপরাধ করেছি, কি পাপ করেছি? তাদের একজন এমন গলায় বললো যাতে রাগ, ক্ষোভ এবং অত্যাচারিতের আর্তনাদ ফুটে উঠলো, আমরা আপনার প্রজা। আপনার ওযীর ও সালারের বিপক্ষে তো আমাদেরকে মিথ্যাবাদীই বলবেন। কিন্তু বাস্তবতা কিন্তু অন্যরকম। আমাদের ঐ গির্জায় আপনার হাকিমরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। যেটা হযরত ঈসা (আ) এর যুগ থেকে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়েছিলো।…..
সে গির্জাকে আপনারা পরিত্যক্ত বলবেন; কিন্তু এই গির্জা আমাদের কাছে এতই পবিত্র যেমন আপনাদের কাছে কাবা শরীফ। আমরা কখনো কখনো রাতে ওখানে ইবাদত করতে যাই। আমরা যখন ইবাদত করছিলাম তখন আপনার সিপাহীরা সেখানে গিয়ে হামলা চালায়। আমাদের সবাইকে হত্যা করে দেয়া হয়েছে। আর আমাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে। আমরা যেহেতু কয়েদী হয়ে এসেছি এজন্য আপনি আমাদেরকে অপরাধী মনে করবেন এটাই তো স্বাভাবিক।
ইসলাম কি কখনো অন্য ধর্মের উপাসনালয়ে আগুন দেয়ার অনুমতি দেয়? অপর কয়েদী তর্ক করার ভঙ্গিতে বললো, এই যে দেখুন ঈসা মাসীহের মূর্তি এখানে পড়ে আছে। আপনার সালার ওখান থেকে ছিনিয়ে এনে এখানে ফেলেছে। আপনি যদি আশা করেন এভাবে ভয়-ভীতি দেখালে আমরা মুসলমান হয়ে যাবো তাহলে কখনো আপনার এ আশা পূর্ণ হবে না।
ইয়াহইয়া! আমি কি এটা মেনে নেবো যে, আমার প্রধানমন্ত্রী ও এক সালার মিথ্যা বলেছে? আবদুর রহমান প্রধান বিচারপতিকে জিজ্ঞেস করলেন।
ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া কী জবাব দেবেন এটা চিন্তা করছিলেন, তখনই এক কয়েদী বলে উঠলো,
ওযীর ও সালার তো আমাদের মতোই মানুষ, উনারা তো কোন ফেরেশতা নন। উনারা আমাদের ওপর যে জুলুম করেছেন সেটা উনাদের ধর্মের স্বার্থেই করেছেন। কিন্তু তারা পুরো খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে যে নিজেদের বিরুদ্ধে নিয়ে গেছেন সেটা বুঝতে পারেননি।
আমরা আপনার অনুগত প্রজা। ফ্রান্সের বাদশাহ লুই ও ওদিকে আলফাসো খ্রিষ্টান। কিন্তু তাদেরকে আমরা এজন্য দুশমন মনে করি যে, তারা আপনার ও সালতানাতে উন্দলুসের দুশমন।
এদের দুজনকে বাইরে নিয়ে যাও। আমাকে কিছু একটা ভাবতে দাও। আবদুর রহমান বললেন।
***
দুই কয়েদীকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো। যারিয়াবের ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠলো। ইয়াহইয়া গভীর চিন্তা-মগ্ন। আবদুর রহমান নিজেন মাথায় হাত বুলাচ্ছেন।
তিনি ও ইয়াহইয়া তো জানেন না, আব্দুর রহমান যখন গোসলের জন্য চলে গেলেন, তখন দুই কয়েদীকে যারিয়াব অনেক কিছুই শিখিয়ে দেয়। এখানে যারিয়াবের শেখানো বুলিই ওরা আওড়ে যায়।
আমি কি আমার ওযীর ও সালারের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেবো? আবদুর রহমান ইয়াহইয়াকে জিজ্ঞেস করলেন এবং নিজেই জবাব দিলেন, না, আমি এমন কিছুই করবো না।
ওদের বিরুদ্ধে আপনার কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত হবে না শাহে উন্দলুস! যারিয়াব তার সঙ্গে তাল মেলাতে মেলাতে এবং আবদুর রহমানের মাথায় তার ফয়সালা ঢুকিয়ে দিতে দিতে বললো, আপনি দুই সালারের শত্রুতা সামাল দেয়ার ঝুঁকি নিতে পারেন না। আবদুল করীম একজন ওযীর এবং সালারও। উনারা অনেক বড় ভুল করেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারটি ধামাচাপা দেয়া যাবে। আমি খ্রিষ্টান নাগরিকদেরকে শান্ত করতে পারবো। এই দুই কয়েদীর মুক্তির হুফুম দিয়ে দিন।
আপনি ওদের মুক্ত করতে চাইলে মুক্ত করতে পারেন। ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া বললেন, কিন্তু এটা ভুলবেন না, বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমি জানতে পেরেছি, যে পুরনো ও পরিত্যক্ত গির্জায় আগুন লেগেছে সেখানে কিছু সন্দেহভাজন খ্রিষ্টান রহস্যজনক কায়দায় খ্রিষ্টানদেরকে ভীত ও আতংকিত করে তুলেছে…..