সে এখন কোথায়?
চলে গেছে। তার এ বাক্স তারেককে তুহফা হিসেবে পেশ করতে চাই। এর মাঝে কি আছে? তুমি অনুভব করতে পারছ না এ থেকে কি পরিমাণ দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে
এতে কি আছে তা কেবল তারেক ইবনে যিয়াদ দেখবে। অন্য কারো দেখা সমীচীন হবে না। তিনি যদি খারাপ মনে করে কোন শাস্তি দিতে চান তাহলে তা আমি নির্দ্বিধায় গ্রহণ করব।
চারজন ব্যক্তি বাক্স বহন করে চলল। আওপাস মেরীনাকে সাথে নিয়ে তারেকের সম্মুখে উপস্থিত হলো।
আওপাস : ইবনে যিয়াদ! এ হলো সেই লাড়কী যে হাজার হাজার গোথা ও ইহুদী ফৌজ আমাদেরকে দান করেছে। রডারিকের সাথে যুদ্ধে যে কয়েক হাজার গোখা ও ইহুদী ফৌজ আমাদের সাথে এসে মিলে ছিল তার ইন্তেজাম এ লাড়কী করেছিল।
তারেকঃ আমরা তাকে আশাতীত ইনয়াম প্রদান করব।
মেরীনা : হে সিপাহসালার! আমি এ কাজ ইনয়ামের আশায় করিনি।
আমি রডারিক থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেছি। আমি আপনার কৃপা চাই না। আমি আমার অন্তরকে তৃপ্তি প্রদান করেছি। আপনার জন্যে একটা হাদিয়া নিয়ে এসেছি।
বাক্স তারেকের সম্মুখে পেশ করা হলে মেরীনা চাবি বের করে তার তালা খুলে ঢাকা উঠানোর সাথে সাথে তারেক ইবনে যিয়াদ ও তার সাথে আরো যারা ছিলেন সকলে দূরে সরে গেলেন। চেপে ধরলেন নাক। এত পরিমাণ দুর্গন্ধ বের হলো যে কামরাতে অবস্থান করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াল।
“বাক্সে কি আছে” তারেক ইবনে যিয়াদ জিজ্ঞেস করলেন।
মেরীনা : এক ব্যক্তির লাশ। এক বছর অবধি এ বাক্সে তালা বন্ধ রয়েছে।
জুলিয়ন : রডারিকের লাশ নয় তো?
মেরীনা : না। শাহ্ রডারিককে আমরা যেতে দেখেছি ফিরে আসতে দেখিনি। জুলিয়ন! এ লাশ যার তাকে আপনি চিনেন। রডারিকের প্রিয় যাদুকর বুদাজনের এ লাশ। সিপাহ্ সালারকে বলছি। এ যাদুকর যদি জীবিত থাকত তাহলে, সিপাহু সালার আজ এখানে বিজয়ী বেশে দাঁড়িয়ে থাকতেন না। এখানে থাকতো রডারিক আর সিপাহ্ সালার থাকতেন তার সম্মুখে জিঞ্জির পরা।
তারেক : এ রমণীকে বল, পুরো ব্যাপারটা খুলে বর্ণনা করতে।
জুলিয়ন : এ ব্যক্তির নাম ছিল বুসাজন। রডারিককে ভবিষ্যত্বানী শুনাতো। এ ব্যক্তি ছিল জ্যোতিঃশাস্ত্রে পারদর্শী। রডারিক তাকে বিশেষভাবে নিজের কাছে রেখে ছিল। তাকে জিজ্ঞেস না করে রডারিক কোন কাজ করত না। সে ছিল যাদুকর।
তারেক : সে কি ইহুদী ছিল।
জুলিয়ন : হ্যাঁ ইবনে যিয়াদ। ইহুদী ছিল।
তারেক : যাদু বিদ্যা ইহুদীদেরই উদ্ভাবিত। ইহুদীরাই এ ব্যাপারে পারদর্শী হয়।
আওপাস : মেরীনা এখন বল, এ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে কিভাবে?
মেরীনা : রডারিক যখন আপনার মুকাবালায় যাচ্ছিল তখন সে কিছু অশুভ নিদর্শনের সম্মুখীন হয়েছিল। তখন সে এ ব্যক্তিকে ডেকে বলেছিল এ অশুভ নিদর্শন কে শুভতে পরিণত করার জন্যে তথা আপনার ওপর বিজয় অর্জনের তদবীর করার জন্যে। এ যাদুকর রডারিকের কাছে ষোল-সতের বছরের এক লাড়কীর আবেদন করে বলল, সেই লাড়কীর কলিজা বের করে এমন আমল করবে যাতে রডারিক বিজয়ী হবে আর হামলাকারীরা পরাজিত হয়ে একেবারে চিরতরে খতম হয়ে যাবে। রডারিক আমাকে হুকুম দিল আমি যেন এ ধরনের এক লাড়কী ব্যবস্থা করে দেই। আমার কাছেএ বয়সের এক লাড়কী ছিল। আমি রাতের বেলা সে লাড়কীকে নিয়ে যাদুকরের কাছে গেলাম। যাদুকর সে লাড়কীর কলিজা বের করার জন্যে তাকে তার টেবিলে শয়ন করিয়ে তার দিকে ঝুঁকে পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন সময় আমি তার মাথাতে লোহার ডান্ডা দ্বারা স্বজোরে আঘাত হানি। সে বেহুশ হয়ে পড়ে গেলে তার গলাটিপে তাকে হত্যা করে পরে আমরা দুজন মিলে তার লাশ এ বাক্সে ভরে রাখি। সকালে রডারিক রওনা হয়ে গেল আর আমি ঐ লাড়কীকে তার ঘরে পৌঁছে দিয়ে এলাম। সে হতে তার লাশ এ বাক্সে বন্দি রয়েছে। সে যদি তার তদবীর পূর্ণ করতে পারত তাহলে বিজয় রডারিকের হতো।
তারেক : তার মৃতদেহ আমার কাছে কেন নিয়ে এসেছ?
মেরীনা : এর চেয়ে উত্তম তুহফা আর আমার কাছে ছিল না যা আমি আপনার কাছে পেশ করব। এখন কেবল হাড়গুলো রয়েছে। আপনি এগুলো হয়তো জ্বালিয়ে ফেলুন বা দাফন করুন তা আপনার ইচ্ছে… আজ থেকে আমি পূর্ণ মুক্ত।
মেরীনা ঝুঁকে তারেককে সালাম করল। তারপর “এখন আমি মুক্ত, এখন আমি মুক্ত” একথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেল।
তারপর আওপাস তাকে বহু তালাশ করল, কোথাও তার সন্ধান পেল না।
৫. এখন আমি স্বাধীন
“যারা মুসলমানদের কাছে হাতিয়ার সমর্পণ করেছে তারা ছিল বুজদিল-বেগায়রত। তারা তাদের বেটীদের দুশমনের হাতে তুলে দিয়েছে। তোমরা কি তোমাদের কন্যাদের জংলী-বর্বরদের হাতে তুলে দেবে?”
“এখন আমি স্বাধীন, এখন আমি মুক্ত!” একথা বলতে বলতে মেরীনা যে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল তারেক ইবনে যিয়াদ সেদিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন। তিনি হয়তো চিন্তে করছিলেন, হুজুর (স) স্বপ্নে যে বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছেন তা পূর্ণ করার জন্যে আল্লাহ্ তায়ালা অলৌকিক বহু ঘটনার অবতারনা করেছেন। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুশমন ইহুদী সম্প্রদায়ের এক ইজ্জত হারা রমণী তার নিজ গোত্রের এক যাদুকর হত্যা করেছে, যে মুসলমানদেরকে পরাজিত করার জন্যে যাদুর মাধ্যমে চেষ্টা করেছিল। তারেক গভীরভাবে বিষয়টা নিয়ে ভাবছিলেন এরি মাঝে বাহিরে কয়েকজনের কথা-বার্তা শুনতে পেলেন আর দারোয়ান সামনে দন্ডায়মান হলো।