- বইয়ের নামঃ দামেস্কের কারাগারে
- লেখকের নামঃ এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ
- প্রকাশনাঃ আল-এছহাক প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস
দামেস্কের কারাগারে
১. সাতানব্বই হিজরী
দামেস্কের কারাগারে / মূল : এনায়েতুল্লাহ্ আলতামাশ / ভাষান্তর: জহীর ইবনে মুসলিম
অনুবাদকের কথা
আমাদের দেশে গল্প-উপন্যাসের পাঠক একেবারে কম নয়। গল্প উপন্যাসও বাজারে অনেক রয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, সেসব উপন্যাস-গল্পের অধিকাংশই আপত্তিজনক ও চরিত্র বিধ্বংসী। যেহেতু মার্জিত ও আদর্শ মণ্ডিত গল্প-উপন্যাস একেবারেই অপর্যাপ্ত তাই পাঠক সচরাচর যাচ্ছে তা-ই হাতে তুলে নিচ্ছে, এতে করে যুব সমাজের একটা বৃহৎ অংশ বিপদগামী হচ্ছে। এদিক থেকে মার্জিত ঐতিহাসিক গল্প-উপন্যাসের প্রয়োজনীয়তা একেবারে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
বর্তমানে ইসলামী ঐতিহাসিক উপন্যাস জগতে ‘এনায়েতুল্লাহ আল তামাশ’ এক আলোচিত নাম। তার পরিচয় নতুনভাবে পেশ করার দরকার আছে বলে আমরা মনে করি না। তিনি ইসলামী ইতিহাসকে গল্পোচ্ছলে অত্যন্ত সাবলীল ও প্রাঞ্জলভাবে হৃদয়াহগ্রী করে তুলতে চেষ্টা করেছেন। এতে তিনি পূর্ণ মাত্রায় সফল। বর্ণনার ক্ষেত্রে মূল : ইতিহাসকেও ধরে রাখতে যথেষ্ট সচেষ্ট হয়েছেন। এ নন্দিত লেখকের আলোচিত উপন্যাস ‘দামেস্ককে কয়েদ খানেমে’ নামক গ্রন্থ দামেস্কের কারাগারে অনুবাদের মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের সামনে পেশ করতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত। মানুষ মাত্রই ভুল-ত্রুটি হওয়া স্বাভাবিক। দামেস্কের কারাগারের ক্ষেত্রেও হয়তো এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তাই ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্যে পাঠক মহলের প্রতি রইল আন্তরিক নিবেদন।
আল-এছহাক প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী জনাব তারিক আজাদ চৌধুরী ভাই বইটি প্রকাশের পথ সুগম করে কৃতজ্ঞতাবেশে আবদ্ধ করেছেন। তাই তাকে মুবারকবাদ না জানালে অকৃতজ্ঞ হতে হয়। অনুবাদের সময় বন্ধুমহলের অনেকে এবং আমার কিছু স্নেহভাজন ছাত্র সাহস ও প্রেরণা, যুগিয়েছে, তাদের সকলকেই জানাই আন্তরিক মুবারকবাদ। লেখকের বাকী বইগুলোও আমরা অনুবাদের মাধ্যমে পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার আশাবাদী। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দিন।
–জহীর ইবনে মুসলিম
৫/১/২০০৩
.
দামেস্কের কারাগারে
সাতানব্বই হিজরী। সাত শ পনের খৃষ্টাব্দ। মক্কা নগরীতে মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে, কোথাও তিল ধারনের ঠাই নেই। শহর-বন্দর, হাট-বাজার সর্বত্র মানুষ আর মানুষ। এ উদ্বেলিত ভিড়ের একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাদের সকলের পোষাক-পরিচ্ছদ এক। কাঁধ হতে টাখনু পর্যন্ত সাদা চাদরে আবৃত। এক স্কন্ধ, মাথা ও পদযুগল উন্মুক্ত। তাদের চিন্তা-ফিকির, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, অন্তর ও মনের মারকাজ এক, তাহলে খানায়ে কাবা।
যেমনিভাবে তাদের পোশাক-আষাক এক, তেমনিভাবে তাদের চিন্তা-চেতনা, ধর্ম বিশ্বাসও এক। লা-ইলাহা ইল্লাল্ লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্। তারা সবাই মুসলিম। তারা হারাম শরীফ আবাদকারী। তারা হাজী, হজ্জের ফরজ আদায় করতে সমবেত হয়েছে।
মক্কা নগরীর অদূরে গড়ে উঠেছে, ভাবুর এক ঘন পল্লী। সে পল্লীতে রয়েছে। নারী-পুরুষ এমন কি শিশু-কিশোররাও।
তাদের সকলের পরিচ্ছদ এক কিন্তু গায়ের রং ভিন্ন। কেউ ফর্সা, কেউ নিকষ কালো। কেউ গোরা আবার কেউ ধলা। তাদের মাঝে যেমন রয়েছে প্রভাব। প্রতিপত্তিশালী তেমনি রয়েছে দুর্বল-হীন। যেমনি রয়েছে সিপাহসালার তেমনি আছে মামুলী সৈনিক। আছে মুনিব, আছে গোলাম। এ ভেদাভেদ থাকার পরেও মনে, হচ্ছিল তারা সকলে এক অভিন্ন, একই রংগে রঞ্জিত। তাদের সকলের চলা-ফেরা, কথা-ঝর্তার ধরন এক।
তারা কোন এক দেশের বাসিন্দা নয়। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত। তাদের মাঝে রয়েছে আফ্রিকী, চীনী, হিন্দুস্তানী, ইরানী মোটকথা যেখানে ইসলামের জ্যোতি পৌঁছেছে, সেথা হতে মুসলিম উম্মাহ্ একত্রিত হয়েছে পবিত্র মক্কা নগরীতে।
তারা একে অপরের মুখের ভাষা অনুধাবন করতে পারছিল না কিন্তু অন্তরের কথা ভাল করেই অনুভব করতেছিল। হাজার হাজার ক্রোশ দূরে বসবাসকারীদের হৃদয় মন ছিল একই সূতিকায় গ্রোথিত। কারো অন্তরে ছিলনা বিন্দুপরিমাণ বিভেদ। সকলের মাঝে ছিল সুনিবীড় সম্পর্ক। কেউ নিজেকে একাকী মনে করছিল না। ইহরামের সাদা কাপড় পরিহিত প্রতিটি ব্যক্তিই মনে করছিল যেন সে এখানেই জন্মেছে এবং জীবন তরীর সফর এ মঞ্জিলেই শেষ হবে।
অগাধ ভক্তি ও শ্রদ্ধা সকলের মাঝে এক অপার্থিব অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। পূণ্যভূমি মক্কা নগরীতে সৃষ্টি হয়েছিল অবিরাম গুঞ্জন। সবার মুখে অনুরিত হচ্ছিল ‘তালবিয়া”,
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা-শারীকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকাওয়াল মুলক, লা-শারীকালাক। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাদশাহ আমীর, ধনী-গরীব সকলের শির হচ্ছিল নত। মুখের অনুরিত ধ্বনিতে অন্তরের অবস্থা পরিবর্তন হচ্ছিল। বংশ গৌরব ও শরীরের রং-এর পার্থক্য না করে সকলে হচ্ছিল আল্লাহর রঙ্গে রঞ্জিত।
হজ্জের এখনও বেশ কিছুদিন বাকী। দূর-দূরান্ত থেকে এখনো কাফেলা আসছে। তাবুর সংখ্যা বাড়ছে। উট ও দুম্বার আওয়াজ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।