- বইয়ের নামঃ পরাজিত অহংকার
- লেখকের নামঃ এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস
পরাজিত অহংকার
১. কিসরা ও কাইসার
পরাজিত অহংকার (অবিরাম লড়াই-২) / মূল : এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ / অনুবাদ : নাসীম আরাফাত
পেশে লফজ
কিসরা ও কাইসার। রোম সম্রাট ও পারস্য সম্রাট। পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুই সুপার পাওয়ার। এদের সৈন্য-সামন্ত, অস্ত্রশস্ত্র ও অর্থের কোন হিসাব-নিকাশ নেই, কোন পরিমাণ-পরিমাপ নেই। গোটাবিশ্ব এদের হাতে বন্দী। গোটা পৃথিবী এদের হাতের পুতুল। তাদেরকে চোখ রাঙ্গিয়ে কিছু বলার সাহস কারো নেই। এ দুশক্তির মাঝে অবস্থিত আরব উপদ্বীপ। দিগন্ত বিস্তৃত মরুর দেশ, লুহাওয়া আর বালুর দেশ। এদেশে সবুজের খুবই অভাব, পানির দারুণ সংকট। তাই যেখানেই কুয়ো আছে বা পাহাড় গাত্র বেয়ে ঝর্ণাধারা নেমে আসে, সেখানে মানুষ বসতি স্থাপন করে, মিলেমিশে থাকে। পানির সংকট দেখা দিলে আবার অন্যত্র চলে যায়।
এরা যাযাবর। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম করে এরা বেঁচে থাকে। এরা স্বাধীনচেতা। কারো অধীনে এরা থাকতে চায় না। এদের স্থায়ী কোন নিবাস নেই। এদের মাঝে শিক্ষা-দীক্ষা, সভ্যতা বা রাষ্ট্রব্যবস্থার চিহ্ন নেই। এদের ইতিহাস মারামারি, কাটাকাটি, রক্তারক্তি আর বর্বরতার ইতিহাস। এদের ইতিহাস মদ, জুয়া, নারী আর আত্মম্ভরিতার ইতিহাস।
আল্লাহ্ তায়ালা এদের মাঝেই প্রেরণ করলেন আকায়ে নামদার তাজদারে মদীনা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। তিনি হলেন এদের রসূল, এদের রাহবার, এদের শিক্ষক। এরপর ইতিহাসের গতি দ্রুত অন্যদিকে চলতে লাগল। মরুর বুকে এক নতুন জাতির উন্মেষ ঘটল। এক নতুন উম্মাহ জন্মলাভ করল। এরা মুসলিম জাতি। এরা আল্লাহর সৈনিক। ইসলামের জন্য এদের সুখ-শান্তি। ইসলামের জন্য এদের জীবন-মরণ।
মাত্র এক দশক ঘুরতে না ঘুরতেই মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপিত হল। সুখ-শান্তি আর সমৃদ্ধির হাওয়া বইতে লাগল। মারামারি, কাটাকাটি, বর্বরতা, মদ, জুয়া, নারীভোগ আর আত্মম্ভরিতার অবসান হল। দুদশকের মাথায় গোটা আরব পদানত হল। ইসলাম এবার একটি শক্তির রূপ ধারণ করল। একটি জীবনব্যবস্থার রূপ ধারণ করল।
আরব উপদ্বীপ ছাড়িয়ে এবার ইসলাম রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যে প্রবেশ করতে লাগল। তারপরই শুরু হল সুপার পাওয়ারদের সাথে যুদ্ধ, খৃস্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, অগ্নিপূজারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, পারস্য সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। একই সাথে উভয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে লাগলেন রাসূলের (সা.) উত্তরসূরী সাহাবায়ে কেরাম। শ্বাসরুদ্ধকর সে ইতিহাস। লোমহর্ষক সে কাহিনী। যুদ্ধে যুদ্ধে একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল পারস্য সাম্রাজ্য। ধূলিস্যাৎ হয়ে গেল এ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। আর রোম সাম্রাজ্য পিছু হটতে হাঁটতে একেবারে রোম সাগরের তীরে গিয়ে ঠেকল।
ঐতিহাসিকরা সাধারণত ইসলামের বিজয় ইতিহাস এখানে এসেই শেষ করে দেয়। মিশর বিজয়ের অগ্নিঝড়া রক্তে আঁকা দিনগুলোর কথা বাদ পড়ে যায়। যে মিশরের রণপ্রান্তরসমূহে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের যুদ্ধকৌশল, বীরত্ব ও প্রতিভা নিষ্প্রভ হয়ে গেছে। শত-সহস্র বিজয়ে উদ্ভাসিত হয়েছে মুসলিম বীর মুজাহিদদের শাণিত তরবারী ও তাকবীরের হৃদয় কাঁপানো ধ্বনি-প্রতিধ্বনি।
মাত্র আট-দশ হাজার মুজাহিদ নিয়ে লাখ লাখ রোমান সৈন্যকে কিভাবে তাড়িয়ে নিয়ে গেছেন বীর সেনানী হযরত আমর ইবনে আস (রা.)। কিভাবে প্রতিটি রণাঙ্গনে তাদের পরাভূত করলেন আর বীরদর্পে সামনে এগিয়ে গেলেন। এ বিস্ময়কর কাহিনী ও শ্বাসরুদ্ধকর ইতিহাস এ গ্রন্থের পাতায় পাতায় উপন্যাসের বর্ণিল আবরণে পেশ করা হয়েছে।
নির্ভেজাল ইতিহাস-নির্ভর এ সিরিজটি পাঠকের মনে এক দীপ্তময় আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারলেই আমাদের শ্রম সার্থক হবে। সবশেষে ব্যর্থতা আর সফলতার তুলাদণ্ড বিদগ্ধ পাঠকের হাতে অর্পণ করে এখানেই ইতি টানলাম। এবার চলুন, আমরা ইতিহাসের সেই উত্তাল দিনগুলোতে হারিয়ে যাই। অনুভব করি পরাজিত অহংকারের।
—নাসীম আরাফাত
ঢাকা।
.
প্রকাশকের আরয
উর্দু ভাষার নন্দিত ঔপন্যাসিক এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ এখন আর এদেশেও অপরিচিত নন। তাঁর উপন্যাসের পাঠক-প্রিয়তা প্রচুর। ইতিহাসকে অবিকৃত রেখে উপন্যাস লেখায় তার জুড়ি মেলা ভার। ইতিহাস-বিমুখ মুসলিম জাতিকে ইতিহাস জানতে বাধ্য করা তার অঙ্গীকার ছিল কি-না জানি না, তবে কেউ তার বই পড়া শুরু করলে শেষ না করে স্বস্তি পায় না। তাঁর লেখায় পাঠক একই সাথে পায় ইতিহাসের জ্ঞান, আদর্শ ও উপন্যাসের অনাবিল স্বাদ। তাঁর দক্ষ উপস্থাপনায় বাঙ্গময় হয়ে উঠে আমাদের গৌরবময় ঐতিহ্য-ইতিহাস। তরুণপ্রাণ খুঁজে পায় তার কাঙ্ক্ষিত ঠিকানার সন্ধান। এসব কারণে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী আলতামাশ। আমরা এবার পাঠকের সকাশে পেশ করছি তার বাহতা নীল দরিয়া-এর বাংলা অনুবাদ অবিরাম লড়াই। অন্তত পাঁচটি খণ্ডে শেষ হবে এ উপন্যাস। বর্তমান খণ্ডের নাম পরাজিত অহংকার। ইসলামের অভ্যুদয়ের প্রথম দিনগুলো থেকে নিয়ে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে হেঁটে এ কাহিনী শেষ হয়েছে মিশর বিজয়ের মধ্য দিয়ে। সংঘাত, লড়াই ও বিজয়ের টান টান উত্তেজনায় ভরা এর প্রতিটি পাতা ও অধ্যায়। প্রদীপ্ত ঈমান ও জাগরণের যথেষ্ট উপকরণ-উপাত্ত রয়েছে এ সিরিজে। সিরিজের প্রথম খণ্ড পাঠকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। আশা করি দ্বিতীয় খণ্ড পরাজিত অহংকার ভালো লাগবে। বইটি সকল বিষয়ে ভাল করার চেষ্টা করা হয়েছে। জানি না কতটুকু সফল হয়েছি। বলে রাখছি, হয়ত অসংখ্যক ভুল ও দুর্বলতা এ বইয়ে রয়ে গেছে। তাই পরবর্তী সংস্করণে এর ছোট-বড় দুর্বলতাগুলো দূর করার ওয়াদা করছি। আল্লাহর রহমতের আশায় সাহসে ভর করে পাঠকের হাতে বইটি তুলে দিচ্ছি। সকল পাঠকের কল্যাণ ও শুভ কামনায়।