রডারিক : আমি ঐ বুরুজ দেখেছি। আমি তাকে কোন পুরাতন ইমারত মনে করছিলাম। তোমরা দু’জন কি ঐ বুরুজেই বাস কর?
বৃদ্ধ বলল, না হে শাহে আন্দুলুস! আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি। এ চাবি আমাদের বাপ-দাদারা দিয়েছে। এ বুরুজের হেফাজত করা আমাদের খান্দানের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব আমাদের খান্দানের আগত প্রজন্ম পালন করবে।
রডারিক : তোমাদের সে দায়িত্ব আমি এখানেই শেষ করে দেব।
অপর বৃদ্ধ : হে শাহান শাহ! আমাদেরকে তুমি তোমার প্রজা জ্ঞান কর না। বুরুজ খোলার ইরাদা যদি তোমার থেকে থাকে তাহলে তুমি ভাল করে শুনে নাও, পরিণামে তুমি অনুশোচনায় আগুনে পুড়বে। অত্যন্ত ভয়াবহ পরিণামের শিকার হবে।
ইতিপূর্বে যে সব বাদশাহরা সে দরজা খুলেছে তাদের পরিণাম কি পরিমাণ ভয়াবহ হয়েছিল তা তুমি কোন বিজ্ঞ ইতিহাসবিদকে ডেকে জিজ্ঞেস কর। জুলিয়াস সিজারের চেয়ে জালেম আর শক্তিশালী বাদশাহ্ কে ছিল? সেও ঐ দরজা খোলার চেষ্টা করেনি…। আমরা চলে যাচ্ছি। সাবধান বাদশাহ! আমরা বাস্তব বিষয় বর্ণনা করেছি। তুমি ঐ বুরুজের দরজায় যে তালা লাগাবে কিছুদিন পর আমরা তার চাবি নেয়ার জন্যে আসব।
বৃদ্ধ দু’জন চলে গেল।
***
বৃদ্ধ দু’জন চলে যাবার পর রডারিক ঘোষণা দিল, “রডারিক যদিএ মুলকের বাদশাহ হয়ে থাকে তাহলে এ মুলকের কোন বিষয় গোপন থাকবে না। আমি ঐ বুরুজে তালা তো লাগাবই না বরং তামাম তালা ভেঙ্গে দরজা খুলে দেখব ভেতরে– কি আছে।
একজন পরামর্শ দাতা বলল, গোস্তাগী মাফ করবেন বাদশাহ নামদার। আমাদের মাঝে কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে বাদশাহ্ নামদারের সাহসীকতা, বীরত্ব দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। কিন্তু শাহান শাহূকে বিপদের হাত থেকে বাঁচান আমাদের একান্ত কর্তব্য। বৃদ্ধ রাহেব বলে গেল বুরুজে হিরাক্লিয়াস কোন যাদুমন্ত্র বন্ধ করে রেখেছে। কোন মানুষ যাদুর মুকাবালা করতে পারে না। আমি শাহান শাহের দরবারে নিবেদন করছি তিনি যেন বুরুজের সিংহদ্বারে তালা লাগিয়ে দেন এবং এ বিষয় যেন ভুলে যান।
রডারিক : এ পরামর্শ যদি তুমি আমাকে দাও তাহলে আমাকে শাহানশাহ বলা ছেড়ে দাও। এ মুলুকের জমিন আমার; এর প্রতিটি রহস্য ভেদ আমার দরকার। ইতিপূর্বে আমি ঐ বুরুজের দিকে কখনো দৃষ্টিপাত করি নাই। এখন যেন মনে হচ্ছে পুরো বুরুজ আমার বুকের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।
পুরোহিত বললেন, শাহান শাহে রডারিক! স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানের পাহাড় শাহ্ রডারিকের নাম শুনে কেঁপে উঠে কিন্তু কিছু অলৌকিক ক্ষমতা এমন রয়েছে যার সামনে মানুষ অক্ষম হয়ে পড়ে। শাহান শাহ্ যদি আমাকে নিজ ধর্ম গুরু মানেন তাহলে আবেদন করব, শাহান শাহ্ যেন ঐ বুরুজের দরজা না খোলেন।
রডারিক : হিরাক্লিয়াস আমার মতই একজন বাদশাহ ছিল। সে যদি কোন অলৌকিক ক্ষমতা ঐ বুরুজে বন্ধ করে থাকে তাহলে সে ক্ষমতা তার কজাতে ছিল এখন তা আমি আমার কজাতে আনতে পারি। বাদশাহু মুচকি হেসে দরবারে উপস্থিত সকলের প্রতি নয়ন ফিরিয়ে দাম্ভিকতার স্বরে বলল, হে ভীতুর দল! ঐ বুরুজে রোমীয়রা ধনভান্ডার লুকিয়ে রেখেছিল। সেখানে নিশ্চয় অমূল্যবান হিরা মতি পান্না রয়েছে। তাতে ভয় কেবল এটাই যে হয়তো সেখানে বড় ভয়ংকর বিষধর সাপ লুকিয়ে রয়েছে। তোমাদের মাঝে কে কে আছে যারা ঐ বুরুজের গোপন রহস্য উৎঘাটনে আমার সাথে থাকবো।
রডারিক একথা বলে জেনারেলদের প্রতি দৃষ্টিপাত করল, যেসব জেনারেলরা বাহাদুর হিসেবে খ্যাত ছিল, তারা বাদশাহর নজরে ভীতু বুজদিল হতে চায় না। তারা সকলে একে একে উঠে বলল, আমি শাহানশাহর সাথে আছি। আমি শাহান শাহর সাথে আছি।
যেসব ইতিহাসবিদরা এ ঘটনা উল্লেখ করেছেন তারা লেখেছেন, পরামর্শ দাতাগণ, বড় পাদ্রীরা এবং তার পরিবারের লোকরা রডারিককে বাধা দিল। কিন্তু সে কারো বাধা মানল না এবং চার-পাঁচ দিন পরে যুদ্ধ সাজে সেজে বুরুজে (দুর্গে) গিয়ে পৌঁছল। তার সাথে এমন দুতিনজন জেনারেল ছিল যারা বেশ কয়েকটা যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব-সাহসীকতা দেখিয়ে সুনাম কুড়িয়েছে। তাদের সাথে বিশেষ ঘোড় সোয়ার দল ও তালা ভাঙ্গার জন্যে মিন্ত্রী ছিল।
বুরুজ একটা প্রশস্ত টিলার ওপর ছিল। তার চতুর্দিকে ছিল উঁচু টিলা। বুরুজ মর্মর পাথর দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। সৌন্দর্যের জন্যে জায়গায় জায়গায় রোপা খচিত যা আলোতে ঝলমল করে উঠত। ভেতরে যারার জন্যে টিলা কেটে সুড়ংগ রাস্তা বানান হয়েছিল। সে রাস্তা এত প্রশস্ত ও উঁচু ছিল যে ঘোড়ায় সোয়ার হয়ে অতিক্রম করা যেত। তার প্রবেশদ্বারে লোহার মজবুত দরজা ছিল যাতে বহু তালা লাগান ছিল। এসব তালা হিরাক্লিয়াস থেকে ডেজা পর্যন্ত সকল বাদশাহদের লাগান।
যে দু’জন বৃদ্ধ পাদ্রী রডারিকের দরবারে গিয়েছিল তারা সেখানে বিদ্যমান ছিল। একজন বৃদ্ধ বলল, আমরা তোমাকে আবার সাবধান করে দিচ্ছি।
রডারিক; ওদের থেকে কুঞ্জীগুলো ছিনিয়ে নাও এবং তামাম তালা খুলে ফেল। রডারিকের শক্তিশালী বাহিনীর সাথে বৃদ্ধরা জবরদস্তি করতে পারল না, তাদের থেকে চাবি ছিনিয়ে নেয়া হলো।
তালা ছিল অসংখ্য, মরিচা ধরা তালাও ছিল। তাছাড়া এটাও জানাছিল না কোন চাবি কোন তালার। সারাদিন তালা খোলার চেষ্টা-তদবীর চলল। সূর্য ডুবার কিছুক্ষণ পূর্বে তামাম তালা খোলে সদর দরজা উন্মুক্ত করা হলো। রডারিক ভেতরে প্রবেশ করল তার সাথে কয়েকজন জেনারেল ও মুহাফেজ গেল। একটু সামনেই বড় প্রশস্ত হল রূম ছিল। তার একটা দরজা ছিল যদ্বারা এক কামরাতে যাওয়া যেত।