.
রাষ্ট্রপতি ভবনে বাসকাল এবং মুঘল গার্ডেন ও অন্যান্য উদ্যান যে আনন্দদান করেছিল তা আমাকে স্মৃতিকাতর করে তোলে। সবার সঙ্গে এই আনন্দকে ভাগ করে নেওয়া ছিল আমার কাছে এক সুখকর অভিজ্ঞতা। যেমন, ওই উদ্যানে যে প্রখ্যাত শিল্পীরা অনুষ্ঠান করতেন তা সকলের সঙ্গে উপভোগ করার চেষ্টা। ঈশ্বরের পরম করুণায় প্রকৃতি উপভোগ করার এই সৌভাগ্য প্রাপ্ত হয়েছি বলে আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।
১৩. বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলি
১৩. বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলি
বিবেক হল আত্মার আলোক
রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমার যে ভাবনাচিন্তা বা কার্যকলাপ ছিল তা রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে বা পরের ভাবনাচিন্তার সঙ্গে কোনও পার্থক্য ছিল না। যতই হোক, মানুষটি তো একই, এবং একজন ব্যক্তির অভিজ্ঞতার এক ধারাবাহিক রূপ। যদিও যুক্তি এবং কারণের ওপর ভিত্তি করে কাজ করা হয়েছিল এমন তিনটি পরিস্থিতির কথা আমি বলতে পারি যা আমার ব্যক্তিগত অনুভবকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। প্রথমটি হল বিহার বিধানসভা ভেঙে দেওয়া। আমি এই বিষয়টি নিয়ে বহুবার আলোচনা করেছি, আবার আর-একবার করব।
আমার কার্যকালে তথ্যপ্রযুক্তির প্রভূত অগ্রগতি হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি ভবন সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিনভাবে সংযুক্ত ছিল। যেখানেই আমি থাকতাম, পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক আমি ফাইল থেকে সঠিক সময়ে তথ্য সংগ্রহ করতে এবং আলোচনায় তা প্রয়োগ করতে পারতাম। ই-মেল তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করিয়ে দিত। এইভাবে মনমোহন সিং যখন আমায় বললেন বিধানমণ্ডলের স্বতঃপরিবর্তনশীলতায় রাজ্যপালের পরামর্শের ভিত্তিতে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিহার বিধানসভা ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেবে, তখন যা আমায় আশ্চর্য করল তা হল বিধানসভা ছয়মাসের বেশি সময় ধরে বরখাস্ত অবস্থায় রয়েছে। সেখান থেকে আমি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলাম, কীভাবে এই হঠাৎ পরিবর্তন সম্ভব হল? তিনি বললেন যে, তিনি আমার সঙ্গে পরে যোগাযোগ করবেন। দ্বিতীয় ফোনটি মস্কোর সময় অনুযায়ী রাত একটার সময় এল। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি আলোচনা করেছিলাম। আমার বিশ্বাস হয়েছিল যদি আমি মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুমোদন নাও করি তাতে কিছু যাবে-আসবে না, কারণ যেভাবেই হোক এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, ফলে আমি ঠিক করেছিলাম বিধানমণ্ডল ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করব।
আদালত আরও প্রায়োগিক পরিভাষা ব্যবহার করেছিল, ‘বিহারের রাজ্যপাল ভারতের রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে দুটো প্রতিবেদন তৈরি করেছিল-২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল এবং ২০০৫ সালের ২১ মে তারিখে। ২০০৫ সালের ২৩ মে সংবিধানের ১৭৪ অনুচ্ছেদের ২ ধারার (বি) উপপ্রকরণ দ্বারা ক্ষমতার অধিকার অর্পণ করার অনুশীলনীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল। সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদের অন্তর্গত ২০০৫ সালে ৭ মার্চ-এ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি জি এস আর ১৬২ (ই)-এর ধারা (এ)-সহ পঠিত হবে এবং বিহার রাজ্যের বিধানমণ্ডল তৎক্ষণাৎ ভেঙে দেওয়া হল…’ এখন উচ্চতম ন্যায়ালয় এই বিষয়ে বিতর্ক শুরু করেছে এবং আলোচনায় নানা দৃষ্টিভঙ্গির উদ্ভব ঘটেছে।
উচ্চতম ন্যায়ালয় তার রায়ে বলেছে যে, ২০০৫ সালের ২৩ মে-র বিজ্ঞপ্তি একটি অভিনব বিষয়। ‘আগেকার মামলাগুলোয় আদালতে উপস্থিত বিষয়গুলির ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলির বিধানসভার প্রতি অনাস্থা পোষণ করার কারণে বিধানসভা ভঙ্গ করার আদেশ জারি করা হয়েছিল। বর্তমান ক্ষেত্রে বিষয়টি সেই ধরনের, যেখানে জোড়াতালি দিয়ে সংখ্যালঘু দলকে সংখ্যাগুরু দেখানোর প্রচেষ্টা এবং রাজ্যে সরকার গঠনের দাবি করা হয় এবং যদি এই প্রচেষ্টা বজায় থাকে তবে তা সাংবিধানিক বিধানের সঙ্গে কারচুপি করা হবে, এই পরিপ্রেক্ষিতে বিধানমণ্ডলের প্রথম বৈঠক হওয়ার আগে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।’
বিচারালয় চারটি প্রশ্ন উত্থাপিত করেছিল—
১. প্রথম বৈঠক অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই কি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৭৪ (২) (বি) অনুযায়ী বিধানসভা ভেঙে দেওয়া অনুমোদনযোগ্য?
২. বিহার বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার ২০০৫ সালের ২৩ মে-র ঘোষণা কি অবৈধ এবং অসাংবিধানিক?
৩. যদি পূর্বোক্ত প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ-বাচক হয় তবে ৭ মার্চ, ২০০৫ অথবা ১৪ মার্চের ২০০৫ এর আগে যে অবস্থা ছিল তা বজায় রাখার জন্য নির্দেশের কোনও প্রয়োজনীয়তা আছে কি?
৪. রাজ্যপালকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ ৩৬১-এ কী সুযোগ আছে?
যখন উচ্চতম ন্যায়ালয় এ-বিষয়ে বিতর্ক শুরু করে তখন বিভিন্নরকম দৃষ্টিভঙ্গির উদ্ভব ঘটে। আমি যে প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলাম তা ঠিকভাবে যে আদালতে পরিবেশন করা হয়নি সে-কথা প্রধানমন্ত্রীকে আমি জানিয়েছিলাম। প্রথমবার টেলিফোনে, পরে সামনাসামনি তাঁকে বলি। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, মস্কোর ঘটনাপরম্পরা এবং প্রকৃত সত্য দ্বারা সমর্থিত রাষ্ট্রপতির ক্রিয়া পরিবেশন করার জন্য আইনজীবীদের সংক্ষিপ্তাকারে বলে দেবেন এবং এও বলবেন যে চূড়ান্তভাবে ভেঙে দেবার অনুমোদন করার আগে কতবার আমরা আলোচনা করেছি। শেষাবধি আমি নিশ্চিত হলাম যে, প্রত্যাশা অনুযায়ী আইনজীবীরা আমার কাজের দিকটা গোচরে আনেননি। সুপ্রিমকোর্ট এর বিরুদ্ধ মতে রায় দেয়। অবশ্যই বিচারকরা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী এবং তাঁরা রাজ্যপাল এবং কিছুদূর অবধি সরকারের ওপর দায়ভার প্রদান করেছিলেন। যতই হোক, ক্যাবিনেট হল আমার অধীনে এবং আমাকে এই দায়িত্ব নিতে হবে।