- বইয়ের নামঃ সন্ধিক্ষণ : প্রতিকূলতা জয়ের লক্ষ্যে যাত্রা
- লেখকের নামঃ এ পি জে আবদুল কালাম
- প্রকাশনাঃ আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত)
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস
সন্ধিক্ষণ : প্রতিকূলতা জয়ের লক্ষ্যে যাত্রা
০. মুখবন্ধ / কৃতজ্ঞতা স্বীকার
সন্ধিক্ষণ : প্রতিকূলতা জয়ের লক্ষ্যে যাত্রা – এ পি জে আবদুল কালাম
অনুবাদ: ব্রততী সেন দাস
.
মুখবন্ধ
লেখা বই ‘অগ্নিপক্ষ’ ১৯৯২ সাল অবধি আমার জীবনকে বিবৃত করেছে। ১৯৯৯ সালে বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর অভাবনীয় প্রতিক্রিয়া দেখা গেছিল এবং বইটির ১০ লক্ষের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল। আরও উৎসাহজনক মনে হয় যে, হাজার হাজার মানুষের জীবনে এই বইটি এক ইতিবাচক প্রভাব এনেছিল ও তাদের জীবনকে উন্নততর করতে সাহায্য করেছিল।
আমি যখন ‘সন্ধিক্ষণ’ লিখছিলাম তখন আমার মনে ভাবনার উদয় হয়েছিল যে, কেন আমি বইটা লিখছি। কেউ হয়তো বলতে পারেন আমার কাহিনিতে অসংখ্য ভারতীয়র দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। আমি আমার জীবনসিঁড়ির সর্বনিম্ন ধাপ থেকে শুরু করেছিলাম। আমার প্রথম চাকরি ছিল বরিষ্ঠ সহকারী বৈজ্ঞানিক সহায়কের। ক্রমে আমাকে অধিকতর দায়িত্বভার নিতে হয়েছিল এবং পরিশেষে ভারতের রাষ্ট্রপতির দপ্তরের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলাম। গত শতকে অবশ্যই অজস্র ঘটনা ঘটেছিল এবং তারও বেশি ঘটনা স্মরণের প্রয়োজন আছে। বলা যেতে পারে এ এক অতি ঐকান্তিক অভিজ্ঞতা।
যাই হোক, ‘সন্ধিক্ষণ’ লেখার পেছনে আমার কারণগুলো একটু আলাদা ছিল। ‘অগ্নিপক্ষ’-এর দ্বারা যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল তাতে আমার মনে হয়েছিল এই বইটির দ্বারা সামান্য কিছু মানুষও যদি উপকৃত হন তাতে আমার প্রচেষ্টা সার্থক হবে। সত্যি বলতে কী, একজন মানুষ বা একটি পরিবারও যদি এই বই-এর ক্ষুদ্রাংশের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জীবনকে উন্নততর দিশায় নিয়ে যেতে পারেন আমি নিজেকে পরিপূর্ণ মনে করব। প্রিয় পাঠক, অতএব এই বই আপনাদের উৎসর্গ করলাম।
এ পি জে আবদুল কালাম
৩০ মে, ১০১২
নিউ দিল্লি
.
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
প্রিয় বন্ধুগণ, আমার এখন আশি বছর বয়স এবং ঠিক এই মুহূর্তে আমি আমার একুশতম বই ‘সন্ধিক্ষণ’ সমাপ্ত করেছি। এর সূচনা হয়েছিল এক শীতের সকালে ১০, রাজাজি মার্গ, নিউ দিল্লিতে। আমি এবং আমার ব্যক্তিগত সচিব এইচ শেরিডন দু’জনে মিলে আমার ডায়েরি পড়ছিলাম। এবং আমরা দেখলাম আমার সম্পূর্ণ জীবনে সাফল্যলাভের ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্রপতি দপ্তরভার পরিত্যাগকে অষ্টম বলে ধরা হয়, তবে এর আগে সাতটা সন্ধিক্ষণ বা চ্যালেঞ্জ আমার জীবনে এসেছিল।
আমার প্রতি যাঁরা সারাজীবন অকুণ্ঠ স্নেহ ও ভালবাসা জানিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমি অসীম কৃতজ্ঞ। যাঁরা তাঁদের চ্যালেঞ্জ ও আনন্দ আমার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন তাঁদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞতা বোধ করি। আমার বইয়ের পাঠকসমাজে এঁদের অন্তর্ভুক্ত করি। আমায় দুটি বইয়ের পাঠকসংখ্যা দশলক্ষ ছাড়িয়েছে এবং অন্য পাঁচটি বইয়ের পাঠকসংখ্যা ১০০,০০০ জনেরও বেশি। আমি সবার প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। বিশেষত আমার জীবনের ত্রিশ বছরের সাথি মেজর জেনারেল আর স্বামীনাথনকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। মেজর আমার জীবনের সমস্ত পর্যায়ে অজস্র সাফল্য এবং কতিপয় অসাফল্যের সাক্ষী। তিনি একজন সখা, দার্শনিক ও পথপ্রদর্শক। ‘সন্ধিক্ষণ’-এর বিস্তারিত বর্ণনা নির্ভুল রাখার ক্ষেত্রে তিনি এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। এই গ্রন্থটি বাস্তবে রূপায়িত হওয়ার অন্তরালে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতিতে ধন শ্যাম শর্মা ও বিশাল রাস্তোগির নিরলস ও নিবেদিত প্রচেষ্টা রয়েছে। নারায়ণমূর্তি ও ভি পেনরাজের সূক্ষ্ম তথ্যনিবেশ আমার কাছে মূল্যবান। পাণ্ডুলিপি পর্যালোচনা এবং আমার সঙ্গে অবিরত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রন্থ কাঠামো গড়ে তোলা ও নিখুঁত সম্পাদনার জন্য হারপার কলিন্সের কৃষ্ণণ চোপরার কাছে আমি গভীরভাবে ঋণী। অতি স্বল্পসময়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি টাইপ করে বইটি মুদ্রণালয়ে পাঠানোয় সাহায্য করার জন্য রাজিন্দর গাঞ্জুকেও ধন্যবাদ জানাই।
০১. কবে আমি একটি ভারতের গান গাইতে পারব?
১. কবে আমি একটি ভারতের গান গাইতে পারব?
‘প্রকৃতিকে ভালবাসো এবং তার আশীর্বাণীর মূল্য দাও,
তবেই তুমি ঈশ্বরত্বকে সর্বত্র খুঁজে পাবে।’
সেদিনটা ছিল ২৪ জুলাই, ২০০৭ সাল। আমার রাষ্ট্রপতিপদের কার্যকালের শেষ দিন। দিনটা আগাগোড়া নানা আনুষ্ঠানিক কার্যসূচিতে পূর্ণ ছিল। সেদিন সকালবেলা আমি আমার ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত ছিলাম। পরে, বেলার দিকে তিনটে পঁচিশ থেকে সিএনএন-আইবিএনের তরফ থেকে রাজদীপ সরদেশাই এবং দিলীপ ভেঙ্কটরামনের সঙ্গে ছোট একটা সাক্ষাৎকারের আয়োজন ছিল। এর পরেই ছিল ছত্তিশগড়ের রাজ্যপাল ই এস এল নরসিংহনের সঙ্গে একটা মিটিং। তারপরে আমার উত্তরাখণ্ডের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রী ড. রমেশ পোখারিয়াল ‘নিশাঙ্ক’-এর সঙ্গে দেখা করার ছিল। এ ছাড়াও ছিল— দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী কুমারী করিশ্মা থাঙ্কাপ্পন, তাঁর বাবা-মা ও আরও পাঁচজনের সঙ্গে আমার একটা মিটিং, পরে বিকেল চারটে নাগাদ বৈদেশিক মন্ত্রকের প্রোটোকল প্রধান সুনীল লাল ও তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি মেয়ে নীতিকাকে নিয়ে দেখা করতে এসেছিলেন। এরকম নানা বিদায়কালীন সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকার চলেছিল রাত আটটা অবধি।