- বইয়ের নামঃ টাইম মেশিন
- লেখকের নামঃ এইচ জি ওয়েলস
- প্রকাশনাঃ পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
টাইম মেশিন
০১. সূচনা – সময়-পর্যটক
টাইম মেশিন ( Time Machine ) – উপন্যাস – এইচ জি ওয়েলস
[‘The Time Machine’ প্রথম প্রকাশিত হয় ধারাবাহিক আকারে ‘The New Review’ পত্রিকায় জানুয়ারি থেকে মে ১৮৯৫ সালে। ‘Henry Holt and Company’ পুস্তকাকারে উপন্যাসটি সে বছরেরই মে মাসে প্রকাশ করে। সময় পরিক্রমার উপর সবচেয়ে জনপ্রিয়। কাজ হিসাবে এখনও উপন্যাসটি উল্লেখযোগ্য। এখনও অবধি উপন্যাসটি থেকে অনেকবার রেডিয়ো নাটিকা, সিনেমা হয়েছে এবং কমিকস ফরম্যাটেও এটি যথেষ্ট জনপ্রিয়। মে ১৯২৭ সালে গল্পটি পুনঃপ্রকাশিত হয় ‘Amazing Stories’ পত্রিকায়। অদ্রীশের কলমে গল্পটি প্রথম অনূদিত হয়েছিল ১৯৬৩ সালের জানুয়ারি মাসে ‘আশ্চর্য!’ পত্রিকায় প্রথম সংখ্যায়। ১৯৮৪ সালে অদ্রীশ ‘কিশোর মন’ পত্রিকার শারদীয়া ১৯৮৪ সংখ্যায় এটিকে কমিক্সের জন্য অ্যাডাপ্ট করেন।]
১। সূচনা
আদি-অন্তহীন সময়ের পথে যাঁর পর্যটন, তাঁকে সংক্ষেপে ‘সময়-পর্যটক’ই বলব। খুব জটিল একটা বিষয় আমাদের বোঝাচ্ছিলেন তিনি। কথা বলতে বলতে তাঁর ধূসর চোখ দুটো চিকচিক করে উঠছিল–সদা-পাণ্ডুর মুখেও লেগেছিল উত্তেজনার রক্তিম আভা। চুল্লির গনগনে আগুনে ঘরের আবহাওয়া বেশ গরম হয়ে উঠেছিল–আর তারই মাঝে কিম্ভুতকিমাকার চেয়ারগুলোয় মহা-আয়াসে নিজেদের এলিয়ে দিয়ে শুনছিলাম ওঁর বক্তৃতা। অস্থিসার লম্বা আঙুল নেড়ে নেড়ে ভদ্রলোক তাঁর অসম্ভব থিয়োরির দুর্বোধ্য পয়েন্টগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন আমাদের।
মন দিয়ে শুনুন আমার প্রতিটি কথা। সবাই যা নির্বিবাদে মেনে নিয়েছে, এমন কতকগুলো ধারণা আমি পালটে দেব যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে। যেমন ধরুন-না কেন, স্কুলে যে জ্যামিতি আপনার শিখেছেন, তা যে আগাগোড়া একটা ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে, তা আপনাদের কারওই জানা নেই।
বাধা দিয়ে তার্কিক স্বভাবের লালচুলো ফিন্থি বলে ওঠে, আমাদের বয়সের তুলনায় বিষয়টা কিন্তু নিতান্তই।
তা অবশ্য ঠিক বলেছেন। বলেন মনস্তত্ত্ববিদ।
ঠিক তেমনি শুধু দৈর্ঘ্য, বিস্তার আর বেধ থাকলেও ঘনক (CUBE)-এর কোনও আদত অস্তিত্বই নেই।
এখানেই আমার প্রতিবাদ শুরু করে ফিল্বি।
সবাই তাই জানাবে। বেশ তো, বলুন তাহলে, কোনও ক্ষণিক ঘনকের অস্তিত্ব সম্ভব?
মোটেই বুঝলাম না। বলে ফিল্বি।
যে-ঘনকের স্থায়িত্ব এক কণা সময়ের জন্য নেই, তার অস্তিত্ব সম্ভব?
আমতা আমতা করতে থাকে ফিল্বি।
সময়-পর্যটক আবার বলে চলেন, তাহলেই বুঝতে পারছেন, যে-কোনও আদত বস্তুর চারদিকে চার রকমের ব্যাপ্তি থাকতেই হবে অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, বিস্তার, বেধ ছাড়াও থাকবে স্থায়িত্ব। অবিশ্বাস্য হলেও বাস্তবিকই মাত্রার (DIMENSION) মোট সংখ্যা হল চার। প্রথম তিনটে স্থানের (SPACE), আর চতুর্থটি হল সময় (TIME)। চতুর্থটির অন্তহীন পথেই আমাদের জীবন গড়িয়ে এসে ফুরিয়ে যায় মৃত্যুর দোরগোড়ায়। আসলে প্রথম তিন মাত্রা আর সময়-মাত্রার মধ্যে বিশেষ কোনও তফাতই নেই। আমাদের চেতনাবোধ শুধু সময়-মাত্রার নিরবচ্ছিন্ন পথে যতিহীন গতিতে বয়ে চলেছে–এইটুকুই শুধু যা তফাত। এ ছাড়া চতুর্থ মাত্রার যে-সংজ্ঞা আপনারা শুনেছেন আজ পর্যন্ত–তা একেবারেই ভুল। কেমন, তা-ই নয় কি?
সংজ্ঞাটা সম্বন্ধে আমার কোনও ধারণাই নেই। স্বীকার করেন প্রাদেশিক মেয়র।
খুব সহজ সংজ্ঞা। আমাদের গণিতবিদরা বলেন যে, দৈর্ঘ্য, বিস্তার আর বেধ–স্থানের এই তিন মাত্রা প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে সমকোণে অবস্থিত। কয়েকজন চিন্তাশীল ব্যক্তি হঠাৎ একদিন বলে বসলেন, তা-ই যদি হবে, তবে ওই তিন মাত্রার সঙ্গে সমকোণ করে চতুর্থ মাত্রার অবস্থানই বা সম্ভব নয় কেন? আর তা-ই ভেবেই চার মাত্রার জ্যামিতি লেখার জন্যে উঠে-পড়ে লাগলেন সবাই। এই তো মাসখানেক আগেও নিউ ইয়র্ক ম্যাথেমেটিক্যাল সোসাইটিতে প্রফেসার সাইমন নিউকোর্স এ নিয়ে এক সারগর্ভ বক্তৃতা শুনিয়ে দিলেন আর পাঁচজন গণিতবিদকে। আপনারা জানেন, দু-মাত্রাওয়ালা সমতলে কীভাবে আমরা তৃতীয় মাত্রার ছবি আঁকি। তাঁরা বলেন, ঠিক এইভাবেই নাকি তিন মাত্রার মডেলের ওপর চতুর্থ মাত্রাকেও দেখানো সম্ভব। বুঝলেন তো?
বুঝলাম। কপাল কুঁচকে বিড়বিড় করেন প্রাদেশিক মেয়র।
বেশ কিছুদিন ধরেই চার মাত্রার এই জ্যামিতি নিয়ে গবেষণা করছিলাম আমি। বিজ্ঞানীমাত্রই জানেন যে, সময় কেবল স্থানেরই আর-এক রূপ। আবহাওয়ায় খবর-আঁকা এই কাগজটা দেখলেই বিষয়টা একটু পরিষ্কার হবে আপনাদের। এই যে, এই লাইনটা– এটা গতকালের ব্যারোমিটারের পারার ওঠা-নামা নির্দেশ করছে। এবার দেখুন, গতকাল দিনের বেলায় কোথায় ঠেলে উঠছে লাইনটা, রাত্রে নেমে গেছে, আবার আজ সকালে ঠেলে উঠেছে। স্থানের যে তিন মাত্রাকে আমরা জানি, তার কোনওটার ওপরেই কিন্তু পারা এ লাইন আঁকেনি। এঁকেছে সময়-মাত্রার ওপর।
গনগনে আগুনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বসে ছিলেন ডাক্তার–এবার তিনি মুখ খুললেন, স্থান-মাত্রার আর-এক রূপ যদি সময়, তবে স্থান আর তিন মাত্রার মধ্যে আমরা ইচ্ছামতো যেমন ঘুরে-ফিরে বেড়াতে পারি, তেমনটি সময়ের মধ্যে কেন পারি না?