উপরন্তু, ভিডিও কনফারেন্স ব্যাপকাকারে ব্যবহৃত করা সম্ভব। এই ব্যবস্থা বৃহদাকারে ব্যয়সংকোচন এবং বিচারাধীনের সঙ্গে পুলিশবাহিনীর গমনাগমনের অনাবশ্যক ঝঞ্ঝাট থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব করবে।
যেখানে একাধিক ব্যক্তি মামলায় জড়িত সেখানে ভিডিও কনফারেন্স অত্যন্ত উপযোগী। তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটি (ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি) দ্বারা সাক্ষী চিহ্নিতকরণ এবং অপরাধ পুনর্নির্মাণ ক্ষেত্র অতুলনীয়ভাবে লাভবান হয়েছে।
অনেক রাষ্ট্র, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়া ইন্টারনেট বিচারালয় এবং সম্ভাব্য মামলা দায়েরকারীর মামলার আইনসম্মত সংশোধন বিষয়ে পরামর্শদান করতে পারায় আইনমাফিক পরামর্শদান পরিষেবা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছে। সর্বক্ষেত্রে, আইসিটি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও সেসঙ্গে প্রতারণা মামলা অগ্রাহ্য করার ক্ষেত্রে খুব উপযোগী, এই প্রভাব আমাদের বিচারব্যবস্থাকে গতিশীল করবে। পরিশেষে, সময়মতো দেশের নাগরিককে ন্যায়বিচার দিতে বিচারব্যবস্থাকে সক্ষম করে তুলতে নয়টি পরামর্শ দিয়েছিলাম:—
১. বিচারপতি এবং আইনজীবী সম্প্রদায়ের সদস্যরা মুলতুবি মামলার সংখ্যা কীভাবে সীমিত করবেন তার বিবেচনা করা যেতে পারে।
২. আমাদের বিচারালয়ে ই-বিচারব্যবস্থার প্রয়োগ ঘটানো যেতে পারে।
৩. মামলাগুলো তাদের তথ্য এবং প্রাসঙ্গিক আইনানুযায়ী শ্রেণিবিভাগকরণ ও গোষ্ঠীবদ্ধকরণ করা যেতে পারে।
৪. বিশেষ আইনশাখা যেমন, সামরিক আইন, পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়, করসংক্রান্ত এবং সাইবার আইনে দক্ষ ব্যক্তিকে বিচারক পদে গ্রহণ করা যেতে পারে।
৫. আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শিক্ষার মান, আইন স্কুলের বিন্যাসে উন্নীত করা যেতে পারে।
৬. অকারণ মুলতুবি এবং তুচ্ছ মামলা দায়ের করার জন্য দৃষ্টান্তমূলক দণ্ডপ্রদান রীতির প্রচলন করা যেতে পারে।
৭. সুপ্রিমকোর্টের প্রস্তাবিত মডেল উচ্চ আদালত এবং জেলা আদালতগুলির অনুসরণ করা উচিত এবং কাজের দিনে বাড়তি সময় এবং শনিবার কাজ করে মীমাংসিত মামলার সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে।
৮. অতিরিক্ত লোকবল এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত পরিচালন কাঠামো-সহ কর্মক্ষম উপযোগিতা বৃদ্ধি করার জন্য ‘বিচারালয়ে একাধিক অধিবেশন’ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন খণ্ডিত ও বর্ধিত সময়ের সঙ্গে (সময়সূচি এমনভাবে বিন্যাস করা উচিত যাতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন মানুষকে দিয়ে কাজ করানো সম্ভব হয়)।
৯. বকেয়া মামলাগুলোর সময়নির্দিষ্ট মীমাংসার জন্য দু’বছর প্রক্রিয়ার প্রয়োজন। এরজন্য দরকার একটা জাতীয় অমীমাংসিত মামলা হ্রস্বীকরণ মিশন ন্যাশনাল লিটিগেশন পেন্ডেন্সি ক্লিয়ারেন্স মিশন গঠন করা।
একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে দেখলাম আমাদের বিচার বিভাগ ওইসমস্ত পরামর্শ অনুধাবন করেছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে তার প্রয়োগ শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, ভারতে বসবাসকারী স্বামী এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী স্ত্রীর মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে অমীমাংসিত বিবাহবিচ্ছেদ মামলা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মীমাংসিত হওয়ায় আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।
সারা বিশ্বের মধ্যে ভারতবর্ষ অন্যতম চমৎকার সশস্ত্র বাহিনীর অধিকারী যারা বিশ্বাসী, নির্ভীক এবং নিয়মানুবর্তী। রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ অধিনায়ক। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি সব সময় তাদের পারিপার্শ্বিক জানতে আগ্রহী ছিলাম— কীভাবে তাদের চালনা করা হয়, তাদের প্রস্তুতি, তাদের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ। এই উপলক্ষে আমি বেশ কয়েক বার সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর ইউনিট পরিদর্শন করেছিলাম। সেখানকার আধিকারিক এবং জওয়ানদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ফলে আমি সমস্যাসংকুল অঞ্চল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। বিশেষ করে আমি সিয়াচেন হিমবাহের কুমার পোস্টে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলাম, ওটা ছিল পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র এবং ওখানে আমাদের বাহিনী তীব্র শীতের মধ্যে কাজ করে। আমি বিশাখাপত্তনম উপকূলে সাবমেরিন চালনাও পরিদর্শন করেছিলাম আর সুখোই-৩০ এমকেআই-এ বসে শব্দের প্রায় দ্বিগুণ গতিবেগে উড়ান দিয়েছিলাম। এইসব উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল এবং আমি আপনাদের সঙ্গে সেগুলো ভাগ করে নিতে চাই।
২০০৪ সালের ২ এপ্রিল, সিয়াচেন হিমবাহের কুমার পোস্টে অবতরণ করেছিলাম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০০০ মি. উচ্চে পোস্টটি অবস্থিত। তখন বরফ পড়ছিল, তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৩৫° সেলসিয়াস নীচে, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইছিল। যখন আমি ফিল্ড স্টেশনে পৌঁছলাম কর্নাটকের নায়েক, পশ্চিমবঙ্গের উইলিয়ামস এবং উত্তরপ্রদেশের সালিম— তিন সেনা এসে আমার সঙ্গে করমর্দন করলেন। তাঁদের করমর্দনের উষ্ণতা স্থানটার শৈত্যভাবকে দূর করে দিল। আমার মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস জাগাল যে এ ধরনের প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও যে সমস্ত সৈনিক দেশকে রক্ষা করে চলেছেন তাঁদের হাতে আমাদের দেশ সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। এই সংকটাকুল পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য অসাধারণ নেতৃত্বগুণের প্রয়োজন।
২০০৬ সালে, ১৩ ফেব্রুয়ারি নৌবাহিনীর সাবমেরিন আইএনএস সিন্ধুরক্ষকের সওয়ার চড়ে আমার জলের নীচে ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সাবমেরিনটা ৩০ মিটার জলের তলায় নিয়ন্ত্রিত গতিতে চলতে শুরু করেছিল। আমি কন্ট্রোল রুম পরিদর্শন করেছিলাম। ওখানকার কর্মীরা প্রবল উৎসাহে আমাকে চালানোর কৌশল (ম্যানুভারিং) কর্মপদ্ধতি, এবং প্লবতা-নিয়ন্ত্রক প্রযুক্তি ব্যাখ্যা করে সাবমেরিনের কার্যকলাপ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। নৌ-প্রধান অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ এবং তরুণ নাবিক ও আধিকারিকদের সঙ্গে ভ্রমণ আমার কাছে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। পর্যালোচনাকালে, আমাকে জলের গভীরে যোগাযোগ, লক্ষ্য চিহ্নিতকরণ এবং উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা দেখানো হল। এরপর সমুদ্রের অন্তঃস্তলে আমাদের বাহিনীর যুদ্ধের সক্ষমতা দেখানোর জন্য আক্রমণ করার অনুকরণে টর্পেডো ছোড়া হয়েছিল। টর্পেডোগুলো বৈশিষ্ট্যজনকভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে চালিত হওয়ার ক্ষমতা দেখিয়েছিল। জলের নীচে যুদ্ধের জটিলতা আমি অনুধাবন করেছিলাম।