‘কিন্তু’ আর কিছু বলার মতো খুঁজে পেল না ডেভিড। পরিকল্পনাটা চমৎকার, শ্বাসরুদ্ধকর আর আরো অনেক কিছুর সম্ভাবনাও থকে যায়। এর আগে বিপরীত সেক্সের সাথে অভিজ্ঞতা হয়েছে প্রচুর। কিন্তু কোনটাই তেমন গভীর ছিল না। তাই মনে হলো অজানা কোন দেশের সীমান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে।
“ওয়েল?’ অবশেষে জানতে চাইল ডেবরা।
তুমি বিয়ে করতে চাও?’ শব্দগুলো কেমন ভেঙ্গে ভেঙ্গে বের হলো ওর গলা দিয়ে। কেশে গলা পরিষ্কার করল ডেভিড।
‘ডার্লিং, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই যে, বিয়ের বাজারে তুমি সেরা কিনা। সকালের মতই সুন্দর তুমি আর মজা করে বলতে চাইল–তুমি স্বার্থপর নাবালক আর বখে যাওয়া।
‘ধন্যবাদ, তোমার অনেক দয়া।
‘ওয়েল, আমার ভেতর ঢং করে কথা বলার কোন প্রবণতা নেই। তখনো হয়তো থাকবে না যখন সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে তোমার মিসট্রেস হয়ে যাবো।
‘ওয়াও!’ আনন্দিত হয়ে উঠল ডেভিড। সমস্ত আড়ষ্টতা উধাও হয়ে গেল কণ্ঠ থেকে। এভাবে সরাসরি যখন কথা বললো আমার মাথায় প্রায় বিস্ফোরণের মতো ঘটে।
‘আমারও’, স্বীকার করল ডেবরা। কিন্তু শর্ত একটাই–আমাদের নিজেস্ব বিশেষ জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব আমরা। তোমার হয়তো মনে আছে জনসমক্ষে বীচে বা পাথুরে দ্বীপে তেমন সহজ নই আমি।
‘আমি কখনোই ভুলবো না।’ একমত হলো ডেভিড। এর মানে কী তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না?
‘আমি এটা বলিনি। বিড়বিড় করে উঠল ডেবরা। কিন্তু দু’জনেই যখন প্রস্তুত হবো এই সিদ্ধান্ত তখনকার জন্যই মুলতবী থাক।
‘রাইট অন ডল। সারা মুখে প্রায় বোকার মতো হাসি নিয়ে উত্তর দিল ডেভিড।
‘আর এখন, মেজর মরগ্যান, তুমি চাইলে আমাকে কিস করতে পারো। কিন্তু শর্তের কথা মনে রেখে আমাকে সাহায্য করবে।’ জানিয়ে দিল ডেবরা।
অনেকক্ষণ পরে হঠাৎ করে একটা চিন্তা এসে আতঙ্কিত করে তুলল ডেভিডকে।
মাই গড! প্রায় চিৎকার করে উঠল সে। ব্রিগ কী বলবে?
‘সে নিশ্চয় আমাদের সাথে থাকতে আসবে না। হেসে ফেলল দু’জনেই।
না সিরিয়াসলি, কী বলবে তোমার মা-বাবা কে? জানতে চাইলে ডেভিড।
‘আমি খুব সুন্দরভাবে মিথ্যা কথা বলব; তারাও এমন অভিনয় করবে যে আমার কথা বিশ্বাস করেছে। এ ব্যাপারে আমাকেই মাথা খাটাতে দাও।
“ঠিক আছে। তৎক্ষণাৎ একমত হলো ডেভিড।
‘এই তো তুমি শিখে যাচ্ছে সব।’ হাততালি দিয়ে উঠল ডেবরা।
‘আই লাভ ইউ। হিব্রুতে জানাল ডেভিড।
‘লক্ষ্মী ছেলে। বিড়বিড় করে উঠল ডেবরা।
কিছুদিনের মাঝেই ডেভিড আবিষ্কার করল যে জেরুজালেমে অ্যাপার্টমেন্ট খোঁজা আর হলি গ্রেইল খোঁজার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। যদিও অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে সুউচ্চ সব দালান। তারপরেও চাহিদারর তুলনায় তা কিছুই না।
ডেবরার এক ছাত্রের বাবা এস্টেট এজেন্ট। হৃদয় দিয়ে গৃহহীনদের আর্তি অনুভব করে ভদ্রলোক। নতুন ব্লকের জন্য অপেক্ষমান তালিকা কেবল বড় হতে থাকে। কিন্তু কোন কারণে পুরাতন একটি দালানের একটা অ্যাপার্টমেন্ট খালি হয়ে যাওয়ায় সব প্রভাব খাঁটিয়ে ডেবরাকে সাহায্য করে সে।
হঠাৎ করেই যখন আসার কথা নয় এমন সময়ে ডেবরার মেসেজ পায় ডেভিড। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্যাক্সি সহযোগে তাড়াতাড়ি শহরের উদ্দেশে রওনা হয় দু’জনে। ড্রাইভারকে তাড়া লাগিয়ে দেখে আসতে চায় নতুন পাওয়া সুযোগ।
জায়গাটা দেখার সাথে সাথে ডেভিডের মনে পড়ে গেল লরেন্স অব অ্যারাবিয়ার মুভি সেটের কথা। সামনের দিকে তাল গাছের সারি, প্রতিটি ব্যালকনিতে আর জানালাতে ঝুলছে রঙিন কাপড়-চোপড়, ভেসে আসছে আরবীয় উটের বাজারের গন্ধ আর শব্দ আর উঠানের একপাশে নার্সারি স্কুলের খেলার জায়গা।
অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে দুইটা রুম আর লাগোয়া একটা বাথরুমও আছে। ওয়ালপেপারের গোলাপগুলো ইতিমধ্যে ঝাপসা হয়ে গেছে। শুধুমাত্র যেসব জায়গায় অন্য কোন আসবাব ঝোলানো ছিল সেখানে এখনো অক্ষত আছে ওয়ালপেপারের সত্যিকারের নকশা আর রং।
বাথরুমের দরজা খুলে উঁকি দিল ডেভিড। ভেতরে না ঢুকেও নজর বুলিয়ে দেখে নিল এবড়ো-থেবড়ো মেঝে, সস্তা দামের বাথটাব। এরপর দরজাকে আরো একটু ধাক্কা দিতেই দেখতে পেল টয়লেট বোলের বেহাল দশা। এমন ভাবে হাঁ করে আছে যেন কোন মাতাল পরীর শূন্য মুখ।
‘তুমি আর জো নিশ্চয়ই এতে কাজ চালাতে পারবে। অনিশ্চয়তার সুরে বলে উঠল ডেবরা। এটা এত একটা খারাপও নয়।
কাঁধ ঝাঁকিয়ে এমনভাবে বাথরুমের দরজা আটকে দিল ডেভিড, যেন কোন কফিনের ঢাকনা।
তুমি নিশ্চয়ই মজা করছে–তাই না।’ ডেভিড বলতেই দেখা গেল ডেবরার মুখে নিশ্চিন্তের হাসি।
“ওহ, ডেভিড। আমরা আর কোন জায়গা পাবো না।’
“আর আমি বেশিদিন অপেক্ষা করতে পারব না।
‘আমিও না।’ স্বীকার করল ডেবরা।
“ঠিক আছে। দুই হাত ঘসলো ডেভিড। সময় হয়েছে প্রথম দল পাঠানোর।
জেরুজালেমে মরগ্যান গ্রুপের পরিচয় নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান ডেভিড। কিন্তু ডিরেক্টরীতে মরগ্যান ইনড্রাষ্ট্রিয়াল ফিন্যান্স নামে খুঁজে পেল অবশেষে। ম্যানেজিং ডিরেক্টর, অ্যারন কোহেন। প্রধান পোস্ট অফিসের পেছনে লিউমি ব্যাংক বিল্ডিংয়ে অফিস। গত দশ দিন ধরে জেরুজালেমে বাস করছে মরগ্যান পরিবারের সদস্য, জানতে পেরে হতভম্ব হয়ে যায় অ্যারন। যদিও দ্রুতই আবার সামলে নেয় নিজেকে।