- বইয়ের নামঃ ওয়াইল্ড জাস্টিস
- লেখকের নামঃ উইলবার স্মিথ
- প্রকাশনাঃ রোদেলা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস, রহস্য, রোমাঞ্চকর, ভূতের গল্প
ওয়াইল্ড জাস্টিস
১. সমুদ্রতীরবর্তী দেশ
ওয়াইল্ড জাস্টিস – উইলবার স্মিথ
অনুবাদ : মখদুম আহমেদ
সমুদ্রতীরবর্তী দেশ সেইশেলযের মাহে দ্বীপের ভিক্টোরিয়া বিমানবন্দর ছেড়ে উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট। কেবল পনেরো জন আরোহী এখান থেকে ওঠার অপেক্ষায় আছে বিমানটায়।
দুই জোড়া কপোত-কপোতী বিমানে ওঠার আগের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেওয়ার উদ্দেশ্যে বহির্গমন বিভাগের দিকে এগোল। সবাই তারা বয়সে তরুণ; ট্যান করা উজ্জ্বল ত্বক, ভূ-স্বর্গের মতোন এই দ্বীপ-দেশে ছুটি কাটিয়ে সবাই দারুণ চনমনে, নিরুদ্বিগ্ন। দলটার মধ্যে একটি মেয়ের শারীরিক সৌন্দর্য অন্যদের ম্লান করে দিয়েছে যেন।
দারুণ লম্বা মেয়েটা, সুগঠিত দীর্ঘ হাত-পা, মরাল গ্রীবার উপর গর্বোদ্ধত মস্তক। মোটা, সোনালি চুলগুলো বেণী করে মাথার উপর চূড়া করে বাধা, ঝকঝকে সূর্যালোকে স্নান করছে অসামান্য রূপ-যৌবন-স্বাস্থ্য।
চিতার মতোই ছন্দোবদ্ধ রাজকীয় ঢঙে হেঁটে গেল ও, খোলা একজোড়া স্যান্ডেল পরনে; পাতলা সুতির তৈরি সোয়েটারের নিচে বুকের গড়ন আঁটসাট, খাটো জিন্সের পিছনে দোল-দোল-দুলনি খেলে যৌবনের অকৃপণ সুষমা।
টি-শার্টের সামনে উজ্জ্বল হরফে লেখা রয়েছে আমি এক লাভ-নাট, নিচে সেই ফলেরই একটা ছবি। ফলটার নাম কোকো-ডি-মার। সেইশেলযের বিখ্যাত বাদাম।
ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার উদ্দেশে ঝকঝকে হাসিতে উদ্ভাসিত মুখে ইংরেজিতে কথা বলে নিজের আমেরিকান পাসপোর্ট বাড়িয়ে ধরল ও, কিন্তু নিজের ছেলে বন্ধুর সাথে কথা বলার সময়ে তার ভাষা হয়ে উঠল বিশুদ্ধ জার্মান। পাসপোর্ট ফিরে পেতে সঙ্গীদের নিয়ে নিরাপত্তা–এলাকার দিকে এগোল সুন্দরী। আগ্নেয়াস্ত্র আছে কিনা পরীক্ষা করার জন্যে দু’জন সেইশেল পুলিশ রয়েছে, তাদেরকেও মুক্তা ঝরা হাসি উপহার দিল সে। কাঁধ থেকে নেটের ব্যাগটা নামিয়ে দুষ্টামি করার ভঙ্গিতে দোলাতে লাগল। মদির কটাক্ষ হেনে জিজ্ঞেস করল, এগুলো আপনারা চেক করতে চান? তার কথা শুনে হেসে ফেলল সবাই। ব্যাগে একজোড়া কোকো-ডি-মার রয়েছে। ফলগুলো অদ্ভুত আকৃতির, আকারে মানুষের মাথার দ্বিগুণ হবে একেকটা। মাহে দ্বীপের অত্যন্ত জনপ্রিয় স্যুভেনির এই কোকো-ডি-মার, টুরিস্টরা প্রায় সবাই দু একটা করে নিয়ে যায়। মেয়েটার সঙ্গী-সাথীরা সবাই যার যার নেট ব্যাগে একটা দু’টো করে ভরে নিয়েছে। এ ধরনের পরিচিত জিনিস পরীক্ষা করে লাভ নেই মনে করে ওদের ক্যানভাস ফ্লাইট ব্যাগের দিকে নজর দিল অফিসাররা। প্রত্যেকের হাতেই একটা করে ক্যানভাস ব্যাগ রয়েছে। মেটাল ডিটেকটর দিয়ে পরীক্ষা করার সময় হঠাৎ করে কর্কশ যান্ত্রিক আওয়াজ শোনা গেল। মেয়েটার এক পুরুষ সঙ্গী লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করল, আড়ষ্ট ভঙ্গিতে ক্যানভাস ব্যাগ থেকে ছোট একটা নিকরম্যাট ক্যামেরা বের করল সে। আবার একবার হেসে উঠল সবাই, একজন পুলিশ অফিসার হাত নেড়ে এগিয়ে যেতে বলল দলটাকে। ডিপারচার লাউঞ্জে পৌঁছে গেল ওরা।
ট্রানজিট প্যাসেঞ্জারে এরই মধ্যে ভরে গেছে ডিপারচার লাউঞ্জ, এরা সবাই মৌরিশাস থেকে বিমানের আরোহী হয়ে এসেছে। লাউঞ্জের খোলা জানালার বাইরে, টারমাকের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রকাণ্ড বোয়িং সেভেন-জিরো-সেভেন জাম্বো। চোখ ধাঁধানো ফ্লাডলাইটের আলোয় আলোকিত হয়ে রয়েছে বিমানটা, সেটাকে ঘিরে এয়ারপোর্ট কর্মীরা রিফুয়েলিঙের কাজে ব্যস্ত।
লাউঞ্জে বসার জন্যে কোনো সীট খালি নেই, ঘুরতে থাকা একটা ফ্যানের তলায় গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল চারজন। রাতটা আজকের বেশ গরম, তার ওপর বন্ধ ঘরের ভেতর এতগুলো মানুষের নিঃশ্বাস আর তামাকের ধোয়ায় দম আটকে আসার জোগাড়।
হাসি-খুশি খোশগল্পে স্বর্ণকেশী মেয়েটাই সবাইকে মাতিয়ে রেখেছে, জলতরঙ্গের মতো তার হাসির শব্দ। ছেলে বন্ধুদের চেয়ে কয়েক ইঞ্চি, আর বান্ধবীর চেয়ে পুরো একমাথা লম্বা, কাজেই তার দিকেই তাকাচ্ছে সবাই। মেয়েটাও নিজের রূপ-লাবণ্য সম্পর্কে সচেতন। তবে দারুণ সপ্রতিভ সে, হাবভাবে কোন রকম জড়তা নেই। কয়েকশো আরোহীর কৌতূহলী দৃষ্টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সে তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে হাসি-তামাশায় মেতে আছে। লাউঞ্জে ঢোকার পর ওদের আচরণে সূক্ষ্ম একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে, চোখে-মুখে কি রকম যেন একটা স্বস্তির ভাব, যেন বড় ধরনের একটা বাঁধা পেরোনো গেছে। হাসির মধ্যেও কেমন একটা উল্লাসের বা উন্মাদনার চাপা সুর টের পাওয়া যায়। সবাই ওরা উত্তেজিত, মুহূর্তের জন্যেও স্থির থাকতে পারছে না। একবার এ পায়ে, আরেকবার ও পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াচ্ছে, হাত দিয়ে কাপড় বা চুল ঠিক করছে ঘন ঘন।
বোঝাই যাচ্ছে পরস্পরের সাথে ওদের নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্ক, সেখানে আর কারও প্রবেশাধিকার নেই, তবু ট্রানজিট প্যাসেঞ্জারদের একজন কৌতূহল চেপে রাখতে পারল না। সে তার স্ত্রীকে বসে থাকতে বলে সীট ছেড়ে উঠে দাঁড়াল, লাউঞ্জের আরেক প্রান্ত থেকে এগিয়ে এল দলটার দিকে।