- বইয়ের নামঃ ঈগল ইন দ্য স্কাই
- লেখকের নামঃ উইলবার স্মিথ
- প্রকাশনাঃ রোদেলা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস, রহস্য, রোমাঞ্চকর
ঈগল ইন দ্য স্কাই
১. হল্যান্ডের পর্বতমালা
ঈগল ইন দ্য স্কাই – উইলবার স্মিথ / অনুবাদ : জেসি মেরী কুইয়া
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
এই উপন্যাসটা লেখার সময় আমি একাধিক লোকের কাছ থেকে মূল্যবান সহযোগিতা পেয়েছি। মেজর ডিক লর্ড আর লেফটেনান্ট পিটার কুক যুদ্ধ বিমানের প্রযুক্তি এবং কৌশলগত নানা বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। ড. রবিন স্যানডল এবং ড. ডেভিড ডেভিস চিকিৎসা বিদ্যার নানা খুঁটিনাটি তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। শৌখিন মৎস্য শিকারি রেভারেন্ড অব রেডরাপ বইটির নাম বাছাই করতে সাহায্য করেছেন।
আমি তাদের সবার কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। ইস্রায়েলের অনেক নাগরিক আমাকে সাহায্য এবং আতিথিয়তা দিয়ে কৃতজ্ঞতার বাঁধনে জড়িয়েছে। কিন্তু আমি দুঃখিত-তাদের সবার নাম এখানে উল্লেখ করা সম্ভব হলো না।
আর বরাবরের মতো আমার বিশ্বস্ত গবেষক দরকারি প্রয়োজনের মুহূর্তে সমালোচনা, সাহস আর স্বস্তি যুগিয়েছে। আমার সৎ ছেলে-তার পুত্র-ডিয়েটার স্মিডটকে বইটা উৎসর্গ করলাম।
.
তিনটি জিনিস আমাকে বিস্মিত করে তোলে,
বুঝতে পারি না চতুর্থটি :
আকাশে ঈগল,
পাথরের উপরে সাপ,
গভীর সমুদ্রে জাহাজ,
আর একজন পুরুষের সাথে কুমারী।
প্রবাদ, ৩০-১৮-২০
তুষারাবৃত হটেনটটস্ হল্যান্ডের পর্বতমালা থেকে বয়ে আসা বাতাসটুকু আর্তনাদ করতে লাগল হারিয়ে যাওয়া পশুর মতো। নিজের ছোট্ট অফিসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে প্রশিক্ষক। কূজো হয়ে ফ্লাইট জ্যাকেটের নোম দিয়ে বানানো পকেটে পুড়ে রেখেছে হাতের মুঠি।
দেখতে পেল লৌহ নির্মিত বিশাল হ্যাঙ্গারে নেমে এলো ড্রাইভার চালিত ক্যাডিলাক। নিগ্রো ড্রাইভার দেখে জাকুটি করে উঠল আনমনেই। সম্পদের ফাঁদে আটকা পড়ে বার্নি ভেন্টার সবসময়ে গভীর দ্বেষ অনুভব করে।
ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে হ্যাঙ্গারের দেয়ালের বিপরীতে দর্শনার্থীদের জন্যে নির্ধারিত স্থানে পার্ক করা হলো ক্যাডিলাক। বালকসুলভ চপলতা নিয়ে পিছনের দরজা খুলে লাফ দিয়ে নামল এক বালক। নিগ্রো ড্রাইভারের সাথে সংক্ষিপ্ত বাক্যালাপ সেরে ত্রস্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে এলো বার্নির দিকে।
চলার মাঝে এমন একটা কিছু আছে যা সচরাচর কিশোরদের মধ্যে দেখা যায় না। লম্বা, ঋজু পদক্ষেপে এগিয়ে এলো ছেলেটি। এই তরুণ রাজকুমারকে এগোতে দেখে মনের মাঝে বিদ্বেষ ঘনীভূত হলো বার্নির। এসব আদরের পুটুলিদেরকে ঘৃণা করে সে আর দেখো এমনই ভাগ্য যে এদের সংস্পর্শে কাটাতে হয় দিনের বেশির ভাগ সময়। অসম্ভব বিত্তবানরাই কেবল ক্ষমতা রাখে সন্তানদের উড্ডয়নের রহস্য শেখানোর।
দু’বছর আগে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে, মেডিক্যাল টেস্টে অনুত্তীর্ণ হয় বার্নি। এর উপর নির্ভর করছিল সিনিয়র এয়ারলাইন ক্যাপ্টেন হওয়া। এখন সে নেমে যাচ্ছে পাহাড়ের অপর পাশে। সম্ভবত এর সমাপ্তি হবে গতানুগতিক উড়ে গিয়ে। ক্লান্ত হয়ে লাইসেন্সবিহীন নীতিবোধ বর্জিত চার্টার কোম্পানির বেতনভূক্ত কর্মচারী হিসেবে।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে গর্জন করে উঠল বার্নি, মাস্টার মরগ্যান, ঠিক বলছি কিনা?
‘ইয়েস, স্যার। কিন্তু আপনি আমাকে ডেভিড নামে ডাকতে পারেন। ছেলেটা হাত বাড়াতেই অভ্যাসবশে করমর্দন করল বার্নি–তৎক্ষণাৎ মনে হলো না করলেই ভালো হত। হাতটা শুকনো কিন্তু বজ্রকঠিন মুষ্টি।
‘ধন্যবাদ, ডেভিড। হতাশায় মুষড়ে গেল বার্নি। আর তুমি আমাকে “স্যার” ডাকতে পারো।
সে জানতো যে ছেলেটার বয়স চৌদ্দ। কিন্তু বার্নির পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি দেহের একেবারে মাথায় মাথায় ছেলেটার উচ্চতা। হাসল ডেভিড আর প্রায় সাথে সাথে তার শারীরিক সৌন্দর্যে চমকে উঠল বার্নি। মনে হলো স্বর্গীয় ভাস্কর নিজ হাতে সযতনে গড়েছেন ছেলেটার শরীরের প্রতিটি অংশ। পুরো প্রভাবটা মনে হলো অপার্থিব, নাটকীয়। মনে হলো হয়তো বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। কোঁকড়া চুলের গাঢ় উজ্জ্বলতা, স্যাটিনের মতো ত্বক, গভীর চোখে আগুনের খেলা।
বার্নি সচেতন হয়ে খেয়াল করল যে সে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। এমনই মুগ্ধ হয়ে গেছে যে–তাড়াতাড়ি ঘুরে অন্য দিকে ফিরল।
‘এসো।’ পথ দেখিয়ে নিজের অফিসের দিকে হাঁটা ধরল বার্নি। দেয়ালে ঝুলছে মাছির ডিমে ভর্তি ন্যড ক্যালেন্ডার আর হাতে লেখা কয়েকটা নোটিশ।
‘ওড়াউড়ি সম্পর্কে কিছু জানো? হ্যাঙ্গারের শীতল বিষাদের মাঝে ঢুকতে ঢুকতে ডেভিডকে প্রশ্ন করল বার্নি। লম্বা সারিতে পড়ে আছে এয়ারক্রাফট সমূহ। দরজা দিয়ে বের হতেই হালকা শীতের উজ্জ্বল রোদে চোখ ধাঁধিয়ে গেল।
‘কিছুই না, স্যার।’ সত্যি কথা স্বীকার করল ডেভিড। ঠিক হতে শুরু করল বার্নির মুড।
‘কিন্তু শিখতে চাও?
“ওহ্, হ্যাঁ স্যার। জোরাল উত্তরে ফিরে তাকাল বার্নি। ছেলেটার চোখ এত গাঢ় যে প্রায় কালোই বলা চলে। শুধুমাত্র সূর্যের আলো পড়লেই গাঢ় নীল হয়ে ওঠে।
‘ঠিক আছে–চললো শুরু করি। সামনেই কংক্রিটের উপর অপেক্ষা করে আছে এয়ারক্রাফট। এটা একটি সেসনা ১৫০ হাই-উইং মনোপ্লেন। চারপাশে ঘুরে চেক্ করতে লাগল বার্নি। অনুগত ছাত্রের মতো অনুসরণ করছে ডেভিড। কিন্তু কন্ট্রোল আর লিফট এবং উইং-ললাডিং সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে বলা শুরু করতেই বার্নি টের পেল যে ছেলেটা মোটামুটি ভালোই জানে। বার্নির প্রশ্নের উত্তরে ডেভিড একেবারে ঠিকঠাক জবাব দিয়েছে।