বাধা দেয়ার জন্যে দুঃখিত, পিটার-কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পৌঁছেছে।
ইয়েস, ডক্টর পার্কার।
টেরোরিস্টরা মাহে এয়ারপোর্ট থেকে প্লেনে উঠেছে ধরে নিয়ে সেইশেল পুলিশের কাছে জয়েনিং প্যাসেঞ্জারদের একটা তালিকা চেয়েছিলাম। পনেরো জন প্যাসেঞ্জার, দশজন স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী আর তার স্ত্রী, আটটা বাচ্চা, বয়স আট থেকে চৌদ্দ, ওদের সাথে কোনো অভিভাবক নেই। ওদের মা-বাবা সেইশেলয়ে সরকারি চাকরি করে, ছেলেমেয়েগুলো লন্ডন স্কুলে ফিরে যাচ্ছে।
দুর্ভাবনা বাড়ল পিটারের। বাচ্চাদের জীবন যেমন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর মূল্যবান, তেমনি বড় বেশি অসহায় ওরা।
টেলেক্স মেসেজে চোখ রেখে কথা বলে চলেছেন ডক্টর পার্কার, পাইপের গোড়া দিয়ে ঘাড়ের পিছনটা চুলকাচ্ছেন। আরো রয়েছে একজন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী, শেল অয়েল কোম্পানির একজন শেয়ার হোল্ডার, বাকি চারজন টুরিস্ট-একজন আমেরিকান, একজন ফ্রেঞ্চ, দুজন জার্মান। এই চারজন একসাথে ট্রাভেল করছে বলে মনে হয়েছে, ইমিগ্রেশন আর সিকিউরিটি অফিসাররা মনে রেখেছে ওদের। দুটো মেয়ে, দুটো ছেলে, সবাই তরুণ। নাম-স্যালি অ্যানি টেইলর, পঁচিশ বছর, আমেরিকান, হাইডি হটশওসার, চব্বিশ; জার্মান, শুভার রেইজ, পঁচিশ, জার্মান; হেনরি লারৌসে ছাব্বিশ, ফ্রেঞ্চ।
ওদের ব্যাকগ্রাউন্ড…
চেক করেছে পুলিশ। ভিক্টোরিয়ার কাছাকাছি রীফ হোটেলে দুসপ্তাহ ছিল ওরা, দুটো ডাবল রুমে মেয়েরা আর ছেলেরা আলাদাভাবে। ওদের সময় কাটে সাঁতার কেটে আর রোদ মেখে, প্যাটার্নটা বদলে যায় ভিক্টোরিয়ায় একটা সমুদ্রগামী ইয়ট ভেড়ার পর। পঁয়ত্রিশ ফুট লম্বা ইয়ট, স্কিপার একজন আমেরিকান। যে কদিন ওখানে ছিল, রোজই একবার করে ওটায় চড়েছে চারজনের দলটা। জিরো-সেভেন জিরো আকাশে ওড়ার চব্বিশ ঘন্টা আগে নোঙর তুলে চলে যায় ইয়ট।
ধরে নিচ্ছি ইয়ট থেকে অস্ত্র সাপ্লাই পেয়েছে, বলল পিটার। তার মানে অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে কাজে নেমেছে ওরা। ধীরে ধীরে হলেও, শত্রুদের চেহারা প্রকাশ পাচ্ছে, ভাবল ও। জানে, নতুন সবগুলো তথ্যই ভীতিকর হবে, আস্তে আস্তে কুৎসিত হয়ে উঠবে চেহারাগুলো। নামগুলো কম্পিউটারে চেক করিয়েছেন?
কোনো রেজাল্ট পাইনি, বললেন ডক্টর পার্কার। হয় ওদের সম্পর্কে কোনো ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট নেই, তা না হলে নাম আর পাসপোর্ট সব ভুয়া…।
একটা স্ক্রীনে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের ভেতরটা দেখা যাচ্ছিল, সেখানে অকস্মাৎ নতুন তৎপরতা শুরু হওয়ায় মাঝপথে থেমে গেলেন ডক্টর পার্কার। দ্বিতীয় একটা স্পীকারে অন্য একটা কণ্ঠস্বর শোনা গেল। ভলিউম খুব উঁচুতে দেয়া ছিল, কন্ট্রোল বোর্ডের টেকনিশিয়ান তাড়াতাড়ি অ্যাডজাস্ট করল কথা সুরে আমেরিকান পশ্চিম উপকূলের টান।
জান স্মুট টাওয়ার, দিস ইজ দি অফিসার কমান্ডিং দি টাস্ক ফোর্স অভ দি অ্যাকশন কমান্ডোর ফর হিউম্যান রাইটস দ্যাট হ্যাঁজ কন্ট্রোল অভ স্পীডবার্ড জিরো-সেভেন-জিরো। স্ট্যান্ড বাই টু কপি এ মেসেজ।
কন্ট্যাক্ট! চেপে রাখা নিঃশ্বাস ছাড়ল পিটার। শেষমেশ যোগাযোগ করল ওরা!
ছোট স্ক্রীনে নিঃশব্দে হাসছে কাল কলিন, কায়দা করে বারবার ঠোঁটের এক কোণ থেকে আরেক কোণে গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে চুরুটটা। অনুষ্ঠান শুরু হলো, ঘোষণা করল সে, কণ্ঠস্বর থেকে চাপা উত্তেজনা লুকিয়ে রাখতে পারল না।
.
ক্রুদের তিনজনকে ফ্লাইট ডেক থেকে সরিয়ে হাইজ্যাকারদের খালি সীটে বসানো হয়েছে। বোয়িংয়ের ককপিটকে নিজের হেডকোয়ার্টার বানিয়েছে ইনগ্রিড, এই মুহূর্তে পাশে তূপ করা আরোহীদের পাসপোর্ট পরীক্ষা করছে সে, ভজ খোলা সিটিং প্ল্যানটা কোলের ওপর, তাতে প্রতিটি আরোহীর নাম আর জাতীয়তা লেখা রয়েছে।
গ্যালির দিকে দরজাটা খোলা, এয়ারকন্ডিশনিংয়ের মৃদু গুঞ্জন ছাড়া প্রকা প্লেনটা আশ্চর্য রকম নিস্তব্ধ। কেবিনে কথা বলা নিষেধ করে দেয়া হয়েছে, নিষেধ মানা হচ্ছে কিনা দেখার জন্যে লাল শার্ট পরা কমান্ডোরা টহল দিচ্ছে প্যাসেজে। টয়লেট ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হলেও, নিয়ম করে দেয়া হয়েছে একজন ফিরে এসে সীটে না বসা পর্যন্ত আরেকজন সীট ছেড়ে উঠতে পারবে না। ব্যবহার করার সময় খোলা রাখতে হবে টয়লেটের দরজা, কমান্ডোরা যাতে চট করে তাকিয়ে চেক করতে পারে।
নিস্তব্ধ হলেও, গোটা কেবিন টান টান হয়ে আছে উত্তেজনায়। কিছু আরোহী ঘুমাচ্ছে, বেশিরভাগই শিশু, বাকি সবাই যে যার সীটে আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বসে আছে, চেহারায় ক্লান্তি আর উদ্বেগ; ভয় আর ঘৃণা মেশানো দৃষ্টিতে দেখছে কমান্ডোদের।
হেনরি, ফরাসি, ককপিটে ঢুকল।
আর্মারড কারগুলো ফিরিয়ে নিচ্ছে ওরা, বলল সে। একহারা গড়ন তার, কবিসুলভ মায়াভরা চোখ, প্রায় চিবুক ছোঁয়া বাকানো গোফ জোড়া তাকে মানায়নি।
মুখ তুলে তার দিকে তাকাল ইনগ্রিড।
তুমি খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছ, ডিয়ার। মাথা নাড়ল সে। সব ঠিক হয়ে যাবে, দেখ।
বাজে কথা, আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বলল হেনরি। নার্ভাস হব কেন?
মৃদু, মিষ্টি হেসে ভালোবাসার একটা হাত বাড়িয়ে হেনরির মুখ স্পর্শ করল ইনগ্রিড।
ভেব না তোমাকে আমি অপমান করছি। এবার দুহাত বাড়াল সে, হেনরির মাথা ধরে নিজের দিকে টানল, চুমো খেল তার ঠোঁটে। সাহসের পরিচয় আগেও দিয়েছ তুমি বহুবার, বিড়বিড় করে বলল সে।