- বইয়ের নামঃ গোল্ডেন ফক্স
- লেখকের নামঃ উইলবার স্মিথ
- প্রকাশনাঃ রোদেলা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস, রহস্য, রোমাঞ্চকর, ভূতের গল্প
গোল্ডেন ফক্স
১. সূর্যের আলোয় চকচক
গোল্ডেন ফক্স – উইলবার স্মিথ
অনুবাদ : জেসি মেরী কুইয়া
সূর্যের আলোয় চকচক করে উঠল প্রজাপতির মেঘ; হালকা বাতাস পেয়ে ছড়িয়ে পড়ল গ্রীষ্মের আকাশে। হাজার হাজার বিস্মিত চোখ উপরের দিকে চেয়ে দেখল এগুলোর চলে যাওয়া।
বিশাল জমায়েতের একেবারে সামনের দিকে বসে আছে মেয়েটা, দশ দিন হতে চলল যাকে সে অনুসরণ করছে। শিকারকে পরখ করছে শিকারি, অদ্ভুত এক অন্তরঙ্গতার মাধ্যমে জেনে নিচ্ছে মেয়েটার প্রতিটি পদক্ষেপ আর আচরণ। কোনো কিছু তার মনোযোগ কেড়ে নিলে কেমন করে সে মুখ ঘুরিয়ে মাথা উঁচু করে তাকায়, কান পেতে কিছু শুনতে চায়, বিরক্তি কিংবা অধৈর্য হলে মাথা ঝাঁকিয়ে কিভাবে তা দূর করে দেয়। এবারে তো একেবারে নতুন এক ভঙ্গিমায় মুখ তুলে তাকালো পাখনাওয়ালা মেঘখানার দিকে। এতদূর থেকেও সে ঠিকই দেখতে পেল মেয়েটার উজ্জ্বল দাঁতের মারি আর বিস্ময়ে ‘ও’ হয়ে উঠা নরম ঠোঁটদুটো।
সামনের উঁচু মঞ্চে সাদা সাটিনের শার্ট পরা লোকটা হাতে আরেকটা বাক্স নিয়ে হেসে ফেলল। নাড়া দিতেই বের হয়ে উঠল আরো এক ঝাঁক রঙীন পাখা। হলুদ, সাদা আর অসংখ্য রঙ দেখে সকলের দমবন্ধ হয়ে উঠার যোগাড়। সমস্বরে শোনা গেল “উহুহু”।
গোত্তা খেয়ে এলোমেলো ভঙ্গিতে নিচে নেমে এলো একটা প্রজাপতি। শত শত হাত এগিয়ে এলো ছোঁয়ার জন্যে। কিন্তু কেন যেন এটি বেছে নিল মেয়েটার-ই মুখ। সকলের গুঞ্জন ছাপিয়েও কানে এলো মেয়েটার হাসি। আপন মনে সে। ও হেসে ফেলল।
কপালে হাত দিয়ে খুব সাবধানে দু’হাতের মাঝে প্রতাপতিটাকে নিয়ে নিল মেয়েটা। খানিক তাকিয়ে রইল মুগ্ধ হয়ে। নীলরঙা ওই জোড়া চোখ ভালোভাবেই চেনে সে। হঠাৎ করেই সতৃষ্ণভাবে নড়ে উঠল ঠোঁট দুটো। ফিসফিস করে কিছু বলে উঠল মেয়েটা, কিন্তু শব্দগুলো তার শোনা হল না।
মন খারাপ ভাব কেটে গিয়ে হাসি ফুটল ওই চমৎকার ঠোঁটে। বৃদ্ধাঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে মাথার উপর দুই হাত তুলে ধরল মেয়েটা।
দ্বিধায় পড়ে গেল প্রজাপতি। খানিক মেয়েটার আঙুলের ডগায় অপেক্ষা করে অবশেষে উড়ে গেল। শুনতে পেল মেয়েটার কণ্ঠ। “উড়ে যাও! আমার জন্য উড়ে যাও।” একইভাবে সকলেই চিৎকার করে উঠল, “উড়ে যাও! শান্তির জন্য উড়ে যাও!”
খানিকক্ষণের জন্য সকলের মনোযোগ কেড়ে নিল মেয়েটা। মঞ্চের মাঝখানে থাকা সুসজ্জিত লোকটাকে ছাপিয়ে সবার দৃষ্টি এখন ওর উপর।
লম্বা আর নমনীয় গড়নের নগ্ন পাগুলো রোদে পুড়ে, স্বাস্থ্যের আভায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আধুনিককালের ফ্যাশন অনুযায়ী পরে আছে সাদা লেসঅলা খাটো স্কার্ট।
এটা এমন এক মুহূর্ত মনে হল যেন পুরো প্রজন্মের সামনে মহিমান্বিত হয়ে উঠল মেয়েটা। ও’র চারপাশে থাকা সকলের মাঝে এই বন্য আর মুক্ত উদ্দীপনার বোধটুকু অনুভব করল ছেলেটা। এমনকি মঞ্চের উপর থাকা লোকটা’ও সামনের দিকে ঝুঁকে এলো মেয়েটাকে আরো ভালোভাবে দেখার জন্য। মনে হল মৌমাছি কামড়ে দিয়েছে এমন মোটা কালশিরা পড়া ঠোঁটে হেসে, লোকটাও চিৎকার করে উঠল : “শান্তি!” মঞ্চের দু’পাশে উঁচুতে ঝুলিয়ে রাখা এম্পিফায়ারে ধাক্কা খেয়ে অসম্ভব জোরে শোনা গেল সেই শব্দ।
হাত থেকে উড়ে গেল প্রজাপতিটা আর সবকয়টি আঙুল ঠোঁটের উপর এনে কিস ছুঁড়ে দিল মেয়েটা। আস্তে আস্তে হারিয়ে গেল রঙিন প্রজাপতি। মিশে গেল ভিড়ের মাঝে। মেয়েটা ঘাসের উপর বসে পড়ল আবারো। কাছাকাছি বসে থাকা অন্যেরা এগিয়ে এলো ওকে ছুঁয়ে দেখতে, জড়িয়ে ধরতে।
মঞ্চের উপর দু’হাত দু’পাশে ছড়িয়ে সবাইকে নীরব হতে বলল মাইক জ্যাগার। এরপর কথা বলে উঠল মাইক্রোফোনে। কিন্তু ভালোভাবে কিছুই শোনা যাচ্ছিল না। উচ্চারণও এতটা মোটা আর দুর্বোধ্য যে দর্শকেরা বোধ হয় কিছুই বুঝলো না, উন্মত্ত এক সাপ্তাহিক পার্টির সময়ে মাত্র কয়েক দিন আগেই সুইমিং পুলে ডুবে মারা যাওয়া তার ব্যান্ডের সদস্যের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পড়া শোক গাথা।
সকলের ফিসফিসানি শুনে জানা গেল পানিতে নামার সময় নেশায় পুরো কুঁদ হয়েছিল মৃত লোকটা। তবে এটা ছিল বীরের ন্যায় মৃত্যু, কেননা এখন সময়ই হল মুক্তি, শান্তি, যৌবনের স্বাদ নেয়া আর নেশায় মত্ত হয়ে উঠা।
বক্তৃতা শেষ করল জ্যাগার। বেশ সংক্ষিপ্তই হল বলা চলে, তাই জমায়েতের উজ্জ্বল ভাবটুকু রয়েই গেল। ইলেকট্রিক গিটার বাজিয়ে নিজের সর্বস্ব দিয়ে “হঙ্কি টঙ্ক উইমেন” গেয়ে উঠল জ্যাগার। সেকেন্ডের মাঝে তার সাথে দৌড়াতে লাগল হাজার হাজার হৃদপিণ্ডের গতি, শত শত তরুণ দেহ নড়ে উঠল, আর এর দ্বিগুণ হাত উঠে গেল মাথার উপরে। ঠিক যেন বাতাসে দুলছে কোনো গমের ক্ষেত।
সেনাবাহিনীর বোমাবর্ষণের মতো তিক্ত হয়ে কানে বাজতে লাগল সেই সুর। মনে হল যেন খুলি ভেদ করে ঢুকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেবে সবকিছু। খুব দ্রুত সকলেই হয়ে পড়ল এক বিশাল পোকার মত। এক সাথে দুলছে আর মাঝে থেকে উড়ছে ধুলা আর ঘামের গন্ধ। ক্যানাবিসের অসুস্থ করে দেয়া বোটকা ধোয়া।