মিনটাকা তার চোখ বন্ধ করল। আমি দুঃখ ও হতাশায় নিঃশেষিত, কিন্তু আমার প্রিয় তোমার মুখটা সব চাইতে সুন্দর ও সুখকর দৃশ্য যা আমি এখন পর্যন্ত দেখেছি। এখন আমি একটু বিশ্রাম নেব। বলেই সে তার জ্ঞান হারাল।
*
ধীরে ধীরে মিনটাকা চোখ খুলল এবং চোখ খুলে সে দুনিয়ার সবচেয়ে প্রিয় দুজন মানুষের মুখ দেখতে পেল। তার বিছানার একপাশে টাইটা বসে আছে এবং অন্য পাশে নেফার।
কতক্ষণ? জিজ্ঞেস করল সে। কত সময় চলে গিয়েছে?
একদিন ও একরাত। টাইটা তাকে উত্তর দিল। আমি তোমাকে লাল সেপেন ফুল দিয়েছিলাম। মিনটাকা হাত দিয়ে তার মুখ স্পর্শ করল এবং মুখের উপর একটা পুরু মলমের প্রলেপ পেল। সে নেফারের দিকে তার মাথা ঘুরাল এবং ফিসফিসিয়ে বলল, আমি কুৎসিত।
না! সে উত্তর দিল। তুমি সবচেয়ে সুন্দর মহিলা যাদেরকে আমি জীবনে দেখেছি এবং আমি তোমাকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসি।
তোমাকে অমান্য কারার জন্যে তুমি আমার উপর রেগে নেই?
তুমি আমাকে একটি মুকুট ও একটি ভূমি দিয়েছ। সে তার মাথা ঝকালো এবং এক ফোঁটা অশ্রু তার মুখের উপর পড়ল। তার চেয়েও বড় তুমি আমাকে তোমার ভালোবাসা দিয়েছ যা ওটা থেকেও আমার কাছে অধিক মূল্যবান। আমি কীভাবে তোমার উপর রাগ করবো?
টাইটা আস্তে করে উঠে তাঁবু ত্যাগ করল এবং দিনের বাকিটা সময় তারা এক সাথে কাটাল।
সেদিন সন্ধ্যায় নেফার সবাইকে ডাকল এবং তারা সবাই মিনটাকার বিছানার পাশে জামায়েত হল টাইটা এবং ম্যারন, প্রেন, সোক্কো এবং শাবাকো।
আপনারা দেখেছেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে তাদেরকে বলল এবং দরজার প্রহরিদের দিকে ঘুরল। হেজারেট নামের মহিলাকে নিয়ে এসো, সে আদেশ করল।
মিনটাকা চমকে উঠল এবং ওঠে বসার চেষ্টা করল, কিন্তু সে তাকে জোর করে শুইয়ে দিল।
আমাদের সৈন্যরা তাকে ইশমাইলিয়ার ফিরতি পথে মরুভূমিতে এলামেলো চলাফেরা অবস্থায় পেয়ছে। নেফার ব্যাখ্যা করল।
প্রথমে তারা তাকে চিনতে পারেনি আর বিশ্বাস করতে পারেনি সে একজন রাণী। তারা ভেবেছিল সে একজন পাগল মহিলা।
হেজারেট তাঁবুতে প্রবেশ করল। নেফার তাকে গোসল ও নতুন কাপড় পড়ার অনুমতি দিয়েছে এবং টাইটা তার ক্ষতগুলোর চিকিৎসা করেছে। এখন সে তার হাত রক্ষীদের কাছ থেকে ছোটানোর চেষ্টা করল এবং চারপাশের তাকালো।
আমার সামনে থেকে তোমরা সরে যাও। সে লোকগুলোকে আদেশ করল যারা তার সামনে ছিল। আমি একজন রাণী।
কেউ নড়ল না এবং নেফার তার জন্য একটা টুল আনতে আদেশ দিল। যখন সে ওটার উপর বসল নেফার তার দিকে এক দৃষ্টিতে এতো নির্মমভাবে তাকিয়ে রইল যে হেজারেট তার মুখ ঢাকল এবং কাঁদতে শুরু করল। তুমি আমাকে ঘৃণা কর। সে বোকার মতো যুঁফিয়ে বলল। কেন তুমি আমাকে ঘৃণা কর?
মিনটাকা তোমাকে বলবে কেন? সে উত্তর দিল এবং বিছানার উপরে শোয়া মেয়েটির দিকে ঘুরল। দয়া করে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা কর কীভাবে রাজকন্যা মেরিকারার মৃত্যু হলো।
মিনটাকা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সব কিছু বর্ণনা করে গেল এবং এ দীর্ঘ সময়ে কেউ সরল না এবং কথাও বলল না, শুধু তাদের বন্ধ রাখা দম খেলল এবং মাঝে মাঝে ভয়ে কেঁপে উঠল তারা। শেষে নেফার হেজারেটের দিকে তাকালো, তুমি কি এ বিবরণের কোন কিছু অস্বীকার কর?
হেজারেট নির্মম দৃষ্টিতে এবার তার দিকে তাকাল। সে একটা বেশ্যা ছিল এবং সে আমার স্বামীর জন্য কলংক বয়ে এনেছিল, যিনি মিশরের ফারাও। সে মৃত্যুরই যোগ্য। আমি সন্তুষ্ট যে আমি নিজ হাতে তাকে শাস্তি দিতে পেরেছি।
এমনকি এখনও আমি তোমাকে হয়তো ক্ষমা করে দিব। নেফার নরম স্বরে বলল, যদি তুমি এক বিন্দু পরিমাণ দুঃখ দেখাও।
আমি একজন রাণী। আমি তোমার ঐ সব ক্ষুদ্র আইনের উর্ধ্বে।
তুমি এখন আর রাণী নও। নেফার জবাব দিল এবং তাকে দ্বিধান্বিত দেখালো।
আমি তোমার নিজের বোন। তুমি আমার কোন ক্ষতি করবে না।
মেরিকারাও তোমার বোন ছিল। তুমি কী তাকে ছেড়ে দিয়েছিলে?
আমি তোমাকে খুব ভালো করেই চিনি, নেফার সেটি। তুমি আমাকে আঘাত করবে না।
তুমি ঠিক হেজারেট। আমি তোমার ক্ষতি করব না কিন্তু একজন আছে যে তোমাকে ছাড়বে না। সে তার পাশে জামায়েত হওয়া ক্যাপ্টেনদের দিকে ঘুরল। এটা সবচেয়ে পুরনো অধিকারের আইন একজন সবচেয়ে আহত ব্যক্তির জন্যে। সামনে এসে দাঁড়াও, ম্যারন ক্যামবাসিয়েস।
ম্যারন দাঁড়াল এবং সামনে এল, ফারাও, আমি আপনার লোক।
তুমি রাজকুমারী মেরিকারার বাগদত্তা ছিলে। তুমি সবচেয়ে বেশি আহত। আমি হেজারেট ট্যামোসকে তোমার হাতে তুলে দিলাম যে মিশরের রাজ পরিবারের রাজকন্যা ছিল।
হেজারেট কান্না করতে শুরু করল যখন ম্যারন একটা স্বর্ণের চেইন তার গলায় পরিয়ে দিল:
আমি একজন রাণী এবং একজন দেবী। তুমি আমাকে ক্ষতি করার সাহস করো না।
কেউ তার কান্নার দিকে লক্ষ্য করল না এবং ম্যারন নেফারের দিকে তাকাল। মহামান্য আপনি কি আমার উপর কোন বাধ্যবাধকতা আরোপ করেন? আপনি কি আমাকে তার প্রতি করুণা ও সহানুভূতি দেখানোর উৎসাহ বা আদেশ দিবেন?
আমি তাকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি কোন শর্তারোপ না করেই। তার জীবন এখন তোমার। ম্যারন তার তলোয়ার উন্মুক্ত করল এবং চেইনে ধরে হেজারেটকে টেনে দাঁড় করালো। সে যখন তাকে তাবু থেকে টেনে নিয়ে গেল তখনও সে বক বক করছিল এবং আর্তনাদ করছিল। কেউ তাদের অনুসরণ করল না।