আবারো ইসাবেলাকে ছেড়ে দিল রামোন। ছোঁ মেরে কোলের কাছে পড়ে থাকা পিস্তল তুলে গুলি ছুড়ল শ’নের মুখে। ক্রোধে জ্বলছে রামোনের চেহারা।
কিন্তু একপাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্টিয়ারিং হুইল ধরে ফেলল বেলা। রামোন ফায়ার করতেই সর্বশক্তি দিয়ে পিস্তল টেনে ধরল বেলা। রাতের আকাশে উড়ে গেল বুলেট। বিপদজনক গতিতে ঝাঁকি খেল জিপ; ধুপ করে পড়ে গেল নদীর তীরে।
গাড়িটা উধাও হবার আগ পর্যন্ত বেলা আর রামোন’কে দুজনকেই উইন্ডস্ক্রীনের ওপারে দেখতে পেল শন আর পেছনের সিট থেকে নিকির ছোট দেহটা শূন্যে উঠে আবার অন্ধকারে হারিয়ে গেল। এরপরই জায়গাটা পেরিয়ে এলো শ’নের জিপ। কিন্তু প্রচণ্ড কষ্ট করে ব্রেক কষে গাড়িটার উপর কন্ট্রোল এনে গিয়ার লিভারকে পেছনে ঘোরাল শন্ আর গর্জন করতে করতে পিছিয়ে এলো রামোনের গাড়ির সন্ধানে।
আকাশে এখনো ভাসছে ধূলিকণা, টায়ারের ঘর্ষণে এখনো ডেবে আছে কিনারার মাটি। ড্রাইভারের সিট থেকে লাফ দিয়ে পড়ে তীরের দিকে দৌড় দিল শন। নিচেই নদীতে পড়ে আছে বেলা’র জিপ। ডুবে যাওয়া চাঁদের মতো এখনো দেখা যাচ্ছে হেডলাইটের আলো। পানির একেবারে কিনারে নদীতীরে পড়ে আছে নিকি’র ছোট্ট শরীর।
আস্তে আস্তে নামতে শুরু করল শন। হোঁচট খেতে খেতেও সামলে নিল নিজেকে। বিড়ালের মতো মাটি আঁকড়ে নেমে এলো লং ক্লিন রেসিং ডাইভ দেবার মতো দুরত্ব পর্যন্ত তারপর অলিম্পিক রেসারের মতই পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল শন্।
এক ডুবে একেবারে গভীর পর্যন্ত চলে গেল। পানির নিচে তেমন ভালো দেখা যাচ্ছে না। পানির নিচে জিপের ডুবে যাওয়া দেহের ভেতরে চলে গেল শন। ফুয়েল ট্যাংকের বাতাস পেয়ে তলাতে গিয়ে ঠেকার হাত থেকে বেঁচে গেছে জিপ।
সামনেই লম্বা মতন কী একটা দেখে হাত বাড়াল শন্। ইসাবেলার লম্বা চুলের মুঠি ধরে টেনে ওকে বের করে উপরে নিয়ে এলো। নিচে পড়ে রইল জিপের ধ্বংসস্তূপ।
পানির উপরে উঠে বেলা’কে দুর্বলভাবে নড়ে উঠতে দেখে স্বস্তি পেল শন। নদী তীরে বেলা’কে নামিয়ে দিল। স্কাউটদের একজন আবার তাৎক্ষণিক বুদ্ধি খাঁটিয়ে জিপ চালিয়ে নিয়ে এসেছে একেবারে তীরের ডগায়। ফলে হেডলাইটের আলোতে নিচ পর্যন্ত আলোকিত হয়ে উঠল।
হামাগুড়ি দিয়ে ভেজা গায়ে নিকি’র কাছে চলে এলো বেলা। ছেলেকে কোলে তুলে নিল। ধস্তাধস্তি শুরু করে দিল নিকি।
“মাই ফাদার” ফোঁপাতে লাগল নিকি। “মি পাদ্রে!”
হাঁটু পর্যন্ত কাদায় দাঁড়িয়ে নিচের পানির দিকে তাকাল শন্। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে ওখানেই আটকে রেখে দিয়েছে জিপ আর গভীরে হেডলাইট দুটো এখনো জ্বলছে।
ইচ্ছের বিরুদ্ধে হলেও রামোন মাচাদোকে খোঁজার তাগিদ অনুভব করলন শন। ভাল করেই জানে যে এতক্ষণে গেরিলা ক্যাম্প থেকে রওনা হয়ে গেছে বাড়তি সৈন্য। হয়ত মাত্র কয়েক মিনিট মাত্র আছে হাতে। ঘুরে দাঁড়িয়েই বেলা’র কাছে যাবে শন এমন সময় পানির মাঝে কী যেন একটা নড়ে উঠল। তার আর হেডলাইটের আলোর মাঝ দিয়ে যেন চলে গেল গাঢ় একটা ছায়া।
বাস্টার্ড! তীরে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের স্কাউটদেরকে আদেশ দিল শন : “আমার রাইফেলটা দাও।”
একজন সাথে সাথে নেমে এলো। কিন্তু শনের হাতে একে এম দেবার আগেই পানির মাঝে আলোড়ন শুরু হল। বেশ খানিকটা দূরে ভেসে উঠল রামোনের মাথা।
“ধরো ওকে!” গর্জন করে উঠল শন। “বাস্টার্ডটাকে ধরো।”
চোখের উপর লেপ্টে আছে রামোনের চুল। বাতাসের জন্য হাঁসফাঁস করতে করতে চেহারা থেকে গড়িয়ে নামছে জলের ধারা। নদীতীর থেকে একজন স্কাউটের ছোঁড়া গুলি রামোনের মাথার চারপাশ থেকে পানির ফোয়ারা বানিয়ে দিল। গভীরভাবে দম নিয়ে আবার পানির মাঝে ডুবে গেল রামোন।
“বাস্টার্ড! বাস্টার্ড!” চিৎকার করে একে এম টেনে নিল শন। রামোন যেখানে হারিয়ে গেছে সেখানে বুলেট বৃষ্টি সৃষ্টি করল শন্। কিন্তু রামোন মাচাদো’র গায়ে একটাও লাগলো না। উধাও হয়ে গেছে কেজিবি কর্নেল জেনারেল।
আবারো রামোনোর মাথা ভেসে উঠার বৃথা আশা করল শন। ম্যানগ্রোভের বনে রামোনের লুকোবার জায়গার অভাব নেই।
আরেকটা মিনিট কেটে যাবার পর শন্ বুঝতে পারল যে হাওয়া হয়ে গেছে রামোন। নিজের ঘৃণা আর হতাশা চেপে বেলার দিকে তাকাল শন। ভেজা শরীর কাদায় মাখামাখি হয়ে আছে। উইন্ডস্ক্রিনের কাঁচে কেটে গেছে হেয়ারলাইন।
কাঁধ থেকে নিজের ভেজা জার্সি খুলে বোনের গায়ে পরিয়ে দিল শন।
হাত ঢুকাতে ঢুকাতে ফোঁপাতে লাগল বেলা। “রামোনের কী হয়েছে?”
“বাস্টার্ডটা পালিয়ে গেছে।” বেলাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করল শন। ‘সময় নষ্ট হচ্ছে, আমাদেরকে এখান থেকে সরে পড়তে হবে।”
মায়ের হাত ছাড়িয়ে পানির দিকে দৌড় দিতে চাইল নিকি, “মাই ফাদার আমি আমার বাবাকে ছেড়ে যাব না।”
এক হাত দিয়ে নিকিকে জাপটে ধরল শন, “কাম অন নিকি?” ঘুরে দাঁড়িয়েই শ’নের কব্জিতে কামড় দিল নিকি।
“ইউ লিটল সোয়াইন” খোলা হাত দিয়ে নিকি’র মাথাকে তুলে ধরল শন। “তোমার এসব ফাজলামো বাদ দাও, বন্ধু।”
কাঁধের উপর বস্তার মতো নিকি’কে ফেলে নিয়ে হাঁটা ধরল শন। ওদিকে নিকি সামনে হাত-পা ছুঁড়ছে। “আমি যাবো না, আমি আমার বাবার সাথে থাকতে চাই।”
ইসাবেলা’র হাত ধরে এগোতে লাগল শন। হঠাৎ করে জিপের চারপাশে আরো কয়েকজনকে দেখে আচমকা বুঝতে পারল না লোকগুলো কারা। বেলা কে ছেড়ে দিয়ে আবার একে এম তুলে নিল শন্।