বাতিস্তা’র কারাগারে পিতার গ্রেফতার হওয়া আর মৃত্যুবরণের পূর্ব পর্যন্ত ধনী অভিজাত পরিবারের একমাত্র পুত্র সন্তানটির জন্য সর্বোচচ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাই হারো’র ছাত্র হিসেবে মাতৃভাষা স্প্যানিসের মতই ইংরেজিও বলতে পারে। বিদ্যালয়ে থাকাকালীন পড়াশোনায় ভালো ফলাফলের পাশাপাশি তার মাঝে গড়ে উঠেছে ভদ্রলোকের সমস্ত আদব-কায়দা। গুলি ছোঁড়া, নাচ-গান, ঘোড়ায় চড়া, মাছ ধরা, সব কিছুতেই পারদর্শী রূপবান এই তরুণ ১৯৫৬ সালের দোসরা জিসেম্বর কিউবাতে ফিরে আসে ফিদেল ক্যাস্ট্রো ও অন্যান্য বিরাশি জন বীরের সাথে। আর তখনই প্রমাণ পেল যে মারামারিতেও সে সমানভাবে দক্ষ।
কাস্ট্রোর সাথে পর্বতের দিকে পালিয়ে যাওয়া অন্যান্যের সাথে রামোনও ছিল। পরবর্তীতে শুরু হওয়া গেরিলা যুদ্ধের সময়ে এল জোরো’কে শহরে আর গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয় নারীদের উপর তার ক্ষমতা অনুশীলনের জন্য। তরুণী কিংবা তরুণী নয়, সুন্দরী অথবা সাধারণ সব ধরনের নারীকুল রামোনের বাহুতে এসে হয়ে উঠে বিপ্লবী কন্যা। প্রতিটি বিজয়ের সাথে সাথে রামোন হয়ে উঠে আরো দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী। পরবর্তীতে দেখা যায় বিপ্লবের চূড়ান্ত বিজয় আর বাতিস্তাকে উচ্ছেদ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তার নারীবাহিনী।
এরই মাঝে নিজের এই তরুণ আত্মীয়ও সেনার সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেছেন ফিদেল কাস্ট্রো। তাই ক্ষমতায় এসে পুরস্কার হিসেবে। রামোন’কে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাঠিয়ে দিলেন আমেরিকাতে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক ইতিহাস ও সামাজিক নৃতত্ত্ব বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়নের পাশাপাশি নিজের অমোঘ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দেশান্তরী কিউবানদের ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দেয় রামোন। যারা কিনা আমেরিকান সি আই এর সহাযযাগিতায় দ্বীপটিতে কাউন্টার রেভোলিউশন ও আক্রমণের গোপন পরিকল্পনা করছিল।
বিশেষভাবে রামোনের বুদ্ধিতেই বে অব পিগ’স ল্যান্ডিং এর সময় ও স্থান পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে ঠিক করা হয়েছে। ফলাফলে নির্মূল হয়েছে বিশ্বাসঘাতকের দল। এরই মাঝে মিত্রদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে তার মেধার সুখ্যাতি।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর কেজিবি’র কিউবা ডিরেক্টর ফিদেল কাস্ত্রো ও ডিজিএ’র ডিরেক্টরকে প্রভাবিত করেছেন রামোনকে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য মস্কোতে পাঠানোর ব্যাপারে। আর রাশিয়াতে গিয়ে তার দক্ষতা সম্ভাবনা সম্পর্কে কেজিবি’র ধারণাকে ভালোভাবেই উৎরে গিয়েছে ছেলেটা। রামোন হচ্ছে সেসব দুর্লভ সৃষ্টিদের একজন যারা কিনা অনায়াসে সমাজের যে কোনো স্তরে প্রবেশ করতে পারে। জঙ্গলের নিষ্ঠুর গেরিলা ক্যাম্প থেকে শুরু করে ড্রয়িংরুম কিংবা ধনতান্ত্রিক দুনিয়ার প্রাইভেট ক্লাবগুলোসহ সব জায়গায়।
ফিদেল ক্যাস্ট্রোর আশির্বাদ ধন্য হয়ে কেজিবি’তে নিয়োগ পেয়েছে রামোন। তাই স্বাভাবিক যে আফ্রিকাতে রাশান ও কিউবা’র স্বার্থ রক্ষায় তৈরি যৌথ কমিটির ডিরেকটর হিসেবেই কাজ করছে রামোন। একই সাথে এ এন সি’র সদস্য হিসেবে আফ্রিকান রেজিস্ট্যান্স দলকে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণও দিচ্ছে।
স্বল্প সময়ের মাঝে নিজের কর্মক্ষেত্রে থাকা সমস্ত আফ্রিকান দেশ চষে ফেলেছে রামোন। নিজের স্প্যানিশ পাসপোর্ট আর পদবী, চতুর্থ মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে সরবরাহ করা কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে পুজিবাদী ব্যবসায়ী হিসেবে ভ্রমণ করেছে সর্বত্র। সবাই সাদরে তাকে গ্রহণও করেছে। তাই আফ্রিকান ডিভিশনের অসুস্থ জেনারেল সিসেরো’র জায়গায় নতুন স্টেশন হেড হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য রামোন হয়ে উঠে এক নম্বর পছন্দ।
বেইজ ওয়াটার রোডের রাশান কনস্যুলেটের ব্যাক রুমে কৃষাঙ্গ আফ্রিকান গেরিলা নেতার সাথে বসে থাকা রামোনের বিশ্বস্ততা তাই তার উপর অলার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
রালেই তাবাকা’র ঘোষণা শুনে বিমূঢ় হয়ে গেছে রামোন। কেননা “যতটুকু প্রয়োজন” নীতিতেই কাজ করে সে। এছাড়া তার আর তার সরকার, উভয়েরই ধারণা, আফ্রিকা মহাদেশের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ জুড়ে আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্র ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য অর্জনে এই লোকটা কিংবা তার প্রতিষ্ঠান খুব নগণ্য ভূমিকাই পালন করবে।
“অবশ্যই, এ বিষয়টুকু ছাড়াও যৌথ স্বার্থ রক্ষায় জড়িত সমস্ত ব্যাপারে সবসময়ে আপনাকে জানানো হবে। এতটা আন্তরিকভাবে রামোন উত্তর দিল যে কৃষাঙ্গ লোকটা নিশ্চিত হয়ে চেয়ারে হেলান দিল; ফিরিয়ে দিল রামোনের হাসি। নারী কিংবা পুরুষ খুব কম লোকই তার মায়াজাল কাটাতে পারে। এহেন কঠিন কারো উপরেও নিজের যাদু দেখতে পেয়ে তৃপ্তি ফুটে উঠল রামোনের চোখে।
অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গ লোকটার আত্ম-তুষ্টি ভালোভাবেই টের পেলেন রালেই তাবাকা। যদিও চেহারায় তেমন কোনো ভাব বোঝা গেল না। বহু বছর ধরেই রাশিয়া আর কিউবা থেকে আগত শ্বেতাঙ্গদের সাথে কাজ করে আসছেন। তাই ভালোভাবেই জানেন যে এদের ব্যাপারে একমাত্র নীতি হলো কখনোই বিশ্বাস করা যাবে না। কোনো অবস্থাতেই না। যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন সে ব্যাপার।
এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে যান না যে তারা শ্বেতাঙ্গ। অন্যান্য বেশিরভাগ আফ্রিকানের মতে, রালেই নিজেও গোত্র আর জাতির শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী। শার্পভিলে গুলি ছোঁড়া সেই শ্বেতাঙ্গ পুলিশগুলোকে যতটা ঘৃণা করে ততটাই করে কনফারেন্স টেবিলে বসে থাকা এসব শ্বেতাঙ্গকেও।