আর মাত্র চারটে ক্রেট ঝোঁপের ভেতর পড়ে রয়েছে। ফ্রেডের তাগাদায় কান না দিয়ে ড্যানিয়েল আর নিকোলাস র্যাম্প বেয়ে ছুটলো। ঝোঁপের ভেতর ঢুকে দুটো করে বাক্স মাথায় তুললাম ওরা, ছুটে ফিরে আসছে আবার। র্যাম্প ইতোমধ্যে উঠতে শুরু করেছে, প্লেলে ইঞ্জিন গর্জে উঠলো, গড়াতে শুরু করেছে চাকা। টেইলবোর্ডের উপর দিয়ে ক্রেইগুলো ছুঁড়ে দিল ওরা, তারপর লাফিয়ে ধরে ফেললো দরজার কিনারা। প্লেনের ভেতর ঢুকে ড্যানিয়েলকে টেনে নিল নিকোলাস।
আবার যখন পেছনে তাকালো ও, ঝোঁপের পাশে নিঃসঙ্গ আর একা লাগলো টিসেকে। মেককে আমার ধন্যবাদ আর শুভেচ্ছা জানাবেন! চিৎকার করে বলল ও।
টিসেও চিৎকার করলো, আমাদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করতে হবে আপনি জানেন।
গুডবাই, টিসে, রোয়েনের চিৎকার ইঞ্জিনের গর্জনে চাপা পড়ে গেল, ধুলোর সচল মেঘে ঢাকাও পড়ে গেল টিসে। হিসহিস শব্দ তুলে পুরোপুরি উঠে এলো র্যাম্প।
রোয়েনের কাঁধে হাত রেখে বিশাল গুহার মতো কার্গো হোল্ড হয়ে ককপিটের কাছাকাছি একটা জাম্প সিটের পাশে এসে দাঁড়ালো নিকোলাস। রোয়েনকে সিটে বসিয়ে দিয়ে বলল, স্ট্র্যাপ বাধুন। তারপর ছুটলো ককপিটের দিকে।
ভাব দেখে মনে হচ্ছিল আপনি বোধহয় থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, হেসে উঠে নিকোলাসকে বলল জেনি, কন্ট্রোল থেকে চোখ না তুলেই। শক্ত হোন! আকাশে ডানা মেলছি!
পাইলটের সিটের পেছনটা আঁকড়ে ধরল নিকোলাস, জেনি আর ফ্রেড কন্ট্রোল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। থ্রটল লিভার ঠেলে দিয়ে ফুল পাওয়ার দিল ওরা, প্লেনের গতি ক্রমশ বাড়ছে।
জেনি বাদেনহোর্সটের কাঁধের উপর দিয়ে সামনে তাকালো নিকোলাস, রানওয়ের শেষ মাথায় ঝোঁপ-ঝাড়ের ভেতর ক্রামোফ্লেজ ড্রেস পরা অস্পষ্ট ছায়া। ছায়া আকৃতি দেখা যাচ্ছে। ওদিকেই ছুটছে প্লেন, ঝোঁপের ভেতর থেকে সৈনিকরা গুলি করছে এদিকে।
এসব ক্ষুদে বুলেটে আমার হারকিউলিসের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না, জেনি বলল। হারকিউলিস খুব শক্ত বুড়ি। তারপর প্লেনটাকে আকাশে তুলে ফেললো সে।
জমিনে ছড়িয়ে থাকা সরকারি সৈন্যদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে এলো প্লেন, আকাশের দিকে নাক উঁচু করে আরো ওপরে উঠে যাচ্ছে। ওয়েলকাম অ্যাবোর্ড, ওয়েলকাম অ্যাবোর্ড। বাপ-বেটা, জেনি ও ফ্রেডের উপর ভরসা রাখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। তারপর মাত্র পাঁচ সেকেন্ড পর বেলুনের মতো চুপসে গেল জেনি, প্রায় কাতরে উঠে, বলল, ওই ফড়িং আবার কোত্থেকে এলো?
নীলনদের পাড় ঘেঁষা ঝোঁপ থেকে সরাসরি প্লেনের সামনে আকাশে উঠে আসছে পেগাসাস কোম্পানির জেট রেঞ্জার হেলিকপ্টার। এমন তির্যক একটা কোণ ধরে ওপরে উঠছে ওটা, বোঝাই যায় যে দ্রুতগতি হারকিউলিস এখনো পাইলটের দৃষ্টি পথের বাইরে রয়েছে, তা না হলে প্লেনের পথ থেকে সরে যাবার চেষ্টা করত।
মাত্র পাঁচশো ফুট ওপরে উঠেছি আমরা, স্পীঢ় একশো দশ নট, ডান দিকের সিট থেকে চিৎকার করে বাপকে সাবধান করলো ফ্রেড। এই অবস্থায় দিক বদল সম্ভব নয়।
জেট রেঞ্জার এতো কাছে যে ফ্রন্ট সীটে বসা কর্নেল নগুকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে নিকোলাস, তার চশমায় লেগে প্রতিফলিত হচ্ছে রোদ। পাইলটের আগে সেই প্রথম হারকিউলিসকে দেখতে পেল। নিকোলাস তার চোখ দুটো আতঙ্কে বিস্ফারিত হয়ে উঠতে দেখলো। সম্ভাব্য শেষ মুহূর্তে কপ্টারটাকে ঘুড়ির মতো গোত্তা খাওয়াতে চেষ্টা করলো পাইলট, বিশাল হারকিউলিসের পথ থেকে সরে যাবার চেষ্টায়। সংঘর্ষ এড়ানো অসম্ভব বলে মনে হলো, তবে দক্ষতার সঙ্গেই কপ্টারটাকে পাক খাওয়াতে শুরু করলো সে, ডিগবাজি খাওয়ানোর ভঙ্গিতে হারকিউলিসের পেটের নিচে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে ওটা, প্লেনের আরোহীরা অনুভব করলো দুটো আকাশযানের ফিউজিলাজ পরস্পরকে আলতো চুমো খেলো।
ছোঁয়াটুকু যতই সামান্য হোক, কপ্টারের নাক জমিনের দিকে ঘুরে গেল, সেটা মাত্র চারশো ফুট নিচে। হারকিউলিস ফুল স্পীডে ছুটছে, ওপরে উঠছে ক্রমশ, কিন্তু হেলিকপ্টারের পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। কপ্টার যখন জমিন থেকে দুশো ফুট ওপরে, হারকিউলিস টার্বোপ্রপ ইঞ্জিনগুলো, প্রতিটি চার হাজার নয়শো হর্সপাওয়ার, বাতাসে তীব্র আলোড়ন তুললাম, সেই আলোড়ন প্রচণ্ড পাথরধসের মতো আঘাত করলে, ওটাকে।
বাতাসে ভেসে থাকা ঝরা পাতার মতো লাগছে এখন। কপ্টারটাকে, ডিগবাজি খাচ্ছে বিরতিহীন। ইঞ্জিন ফুল পাওয়ারে চালু, জমিনের উপর পড়লো সেটা। ফিউজিলাজ অ্যালুমিনিয়াম ফুয়েলের মতো দুমড়ে মুচড়ে গেল, কর্নেল নগু মারা গেল এমন কী ফুলের ট্যাংক বিস্ফোরিত হওয়ার আগেই। আগুনে বিশাল একটা কুণ্ডলি গ্রাস করলো জেট রেঞ্জারকে।
*
উত্তরের কোর্স ধরে ছুটছে হারকিউলিস। নিচে সুদান। দিগন্তবিস্তৃত মরুভূমি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেইন কেবিনে ফিরে এলো নিকোলাস।
আহতদের আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করা যাক, ড্যানিয়েলকে বলল ও। স্যাপারের সঙ্গে রোয়েনও সেফটি বেল্ট খুলে হাত লাগালো বলল ও। ড্যানিয়েলের সঙ্গে রোয়েনও সেফটি বেল্ট খুলে হাত লাগালো কাজে। তাড়াহুড়োর মধ্যে স্ট্রেচারগুলো প্লেনের দরজার কাছাকাছি রাখা হয়েছিল, সেগুলো সরিয়ে আরো ভেতর দিকে আনা হলো। জেনি কিছু ওষুধ-পত্র নিয়ে এসেছে, সঙ্গে অল্প কিছু খাবারও, সে সব বিলি-বণ্টন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ওরা। খানিক পর রোয়েন আর ড্যানিয়েলকে ওখানে রেখে ফ্লাইট-ডেকের পেছনে, গ্যালিতে চলে এলো নিকোলাস। ফ্রিজ খুলে টিনের কৌটা থেকে সুপ আর তাজা পাউরুটি বের করলো ও, চুলোয় আগেই চায়ের পানি চড়িয়েছে।