- বইয়ের নামঃ দ্য টাইগার’স প্রে
- লেখকের নামঃ উইলবার স্মিথ
- প্রকাশনাঃ রোদেলা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস, রহস্য, রোমাঞ্চকর, ভূতের গল্প
দ্য টাইগার’স প্রে
১. ডাওজার নামের জাহাজ
দ্য টাইগার’স প্রে – উইলবার স্মিথ / টম হারপার
অনুবাদ: অসীম পিয়াস
উৎসর্গ : বইটি উৎসর্গ করছি আমার প্রিয়তমা স্ত্রী নিসো-কে, দিন রাত্রির প্রতিটি ক্ষণ যে আমার পৃথিবী আলোকিত করে রেখেছে।
ভাষায় যতোটা প্রকাশ করা সম্ভব, তার চাইতেও অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায়।
.
.
ডাওজার নামের জাহাজটায় বিশাল বিশাল অনেকগুলো পাল। সেই সাথে মালপত্রে বোঝাই। উষ্ণ মৌসুমি বায়ু চাবুকের মতো বাড়ি দিয়ে সমুদ্রের নীল বুকে সফেদ রেখা একে দিয়ে যাচ্ছে। আকাশে মেঘ নেই, ঝকঝকে। ফলে সূর্য কিরণ পড়ে দাগগুলো ঝিকমিক করে উঠছে। বাতাসে জাহাজের পালগুলো ফুলে আছে, মাস্তুলের সাথের বাঁধনগুলো এতো টানটান হয়ে আছে যে মনে হচ্ছে এখুনি ছিঁড়ে যাবে। ভারী জাহাজটা ভারত মহাসাগরের ঢেউয়ের তালে একবার উপরে উঠছে আর নামছে। আসলে জাহাজটা প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে।
ডাওজারের মাস্টার জোশিয়াহ ইঞ্চবার্ড জাহাজের পিছনে দাঁড়িয়ে পিছু ধাওয়াকারী জাহাজটার দিকে তাকিয়ে আছে। ভোরের আলো ফোঁটার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে ওটাকে। লম্বা, সরু জাহাজটা একটা ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতোই ধীরে ধীরে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। ওটার কালো গায়ে লাল রঙ করা কামানের চারকোণা খোপ চিহ্নিত করা। ধীরে ধীরে কমছে জাহাজ দুটোর
ইঞ্চবার্ড মাথার উপরের পালগুলোর দিকে তাকালো। বাতাস একধারে বয়েই চলেছে, পালগুলোও তাই এখনো টানটান হয়ে আছে। এভাবে যদি চলতেই থাকে তাহলে ছিঁড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে সময় লাগবে না, কিন্তু আবার এই ঝুঁকিটা না নিলেও সর্বনাশ হওয়াটা নিশ্চিত।
“মি. ইভান্স,” ফাস্ট মেট-এর দিকে হাক ছাড়লো জোশিয়াহ। “সবাইকে দ্রুত স্টেসেইল (জাহাজের আগা থেকে মাথা পর্যন্ত যে পাল খাটানো হয়) টাঙ্গাতে বলো।”
মিস্টার ইভান্সের বাড়ি ওয়েলশ। বয়শ তিরিশের শেষ দিকে। সে উপরের পালগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। “এই বাতাসের ভিতর স্যার? আর বেশি হলে মাস্তুল ভেঙে যাবে।”
“ঠিক বলেছো মি. ইভান্স, কিন্তু তোমার কাজ আমার কথার উপর কথা বলা না, তোমার কাজ আমার কথা শোনা। গতি আর আধা নট বাড়াতে পারলেও বেঁচে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকবে।”
ইঞ্চবার্ড প্রায় বিশ বছর যাবত এই সাগরে জাহাজ চালাচ্ছে। প্রতি পদে পদে মামা চাচার জোরওয়ালা লোকদের সাথে প্রতিযোগিতা করে নিজের যোগ্যতায় আজ ও এই অবস্থানে এসেছে। ভারত আর স্পাইস দ্বীপের জঘন্য সব বন্দরের এমন সব অভিযান থেকে ও বেঁচে ফিরে এসেছে যেসব অভিযানে অর্ধেক ক্রু তাদের বিছানাতেই সমাহিত হয়ে আছে। আর এখন, এই মুহূর্তে ও নিজের জাহাজকে বিপদে ফেলতে পারবে না।
“করছেন কি?”
কথাটা বললো একজন মহিলা। স্বরটা শান্ত কিন্তু কর্তৃত্বপূর্ণ। পিছন থেকে এসেছে কথাটা। কয়েকজন ক্রু দড়ি বেয়ে মাস্তুলে ওঠা থামিয়ে থমকে গেলো। সাগরের অথৈ জলের মাঝে তিন সপ্তাহ কাটানোর পর একজন মহিলার মুখ দর্শন সত্যিকার অর্থেই বড় মনোরম।
ইঞ্চবার্ড দ্রুত ঠোঁটের আগায় চলে আসা গালিটা আটকালো। “সেনোরা দুয়ার্তে। এসব আপনার ভাবার বিষয় না। আপনি বরং নিচের ডেকে থাকলেই ভালো করবেন।”
দুয়ার্তে উপরের দিকে তাকালো। বাতাসে ওর লম্বা কালো চুল উড়ছে। তার মাঝখানে ওর জলপাই রঙের সুন্দর মুখটা দেখা যাচ্ছে। ও এতোটাই হ্যাংলা যে দেখে মনে হচ্ছে আর একটু জোরে বাতাস দিলেই উড়ে গিয়ে সমুদ্রে পড়বে। কিন্তু নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে ইঞ্চবার্ড জানে যে মেয়েটা মোটেও ততোটা দুর্বল নয়।
“অবশ্যই এটা আমার ভাববার বিষয়,” দুয়ার্তে বললো। “জাহাজের কিছু হলে আমরা সবাই-ই মারা পড়বো।”
লোকগুলো তখনও ঝুলতে ঝুলতে ওকে দেখেই চলেছে। ফার্স্ট মেট ইভান্স তা দেখে চেঁচিয়ে উঠলো, “কাজে মন দে সবাই। নইলে হাতের রশি দিয়ে পিটাবো কিন্তু।”
অনিচ্ছা সত্ত্বেও আবার উঠতে শুরু করলো সবাই। ইঞ্চবার্ড টের পেলো, এই মহিলার উপস্থিতি ওর খবরদারি ফলানোতে সমস্যা করছে।
“নিচে যান,” আদেশ দিলো ও। “জলদস্যুরা একটা মেয়েকে ধরতে পারলে কি করবে সেটা কি আমাকে বলে দিতে হবে?”
“সর্বনাশ,” মাস্তুলের মাথায় দাঁড়ানো লোকটা চেঁচিয়ে বললো। “ওরা পতাকা তুলে দিয়েছে। তারপর এতো জোরে যীশুর নাম ধরে ডাক দিলো যে নিচের সবাই শুনতে পেলো।
অবশ্য লোকটা না বললেও চলতো। সবাই দেখতে পেয়েছে ততোক্ষণে ওদের শত্রু জাহাজের মূল মাস্তুল থেকে একটা কালো পতাকা উড়ছে, তার নিচেই উড়ছে আর একটা লাল পতাকা।
এর মানে হচ্ছে, কাউকেই জ্যান্ত ছাড়া হবে না!
*
পতপত করে উড়তে থাকা পতাকা দুটো দেখতে পেয়ে ফাইটিং কক-এর ক্যাপ্টেন জ্যাক লেগ্রাঞ্জের মুখে ক্ষুধার্ত একটা হাসি ফুটে উঠলো। মাদাগাস্কারের উপকূলে প্রথমবার চোখে পড়ার পর থেকেই, গত তিন দিন ধরে ওরা সামনের মার্চেন্টম্যানটা (ব্যবসার উদ্দেশ্যে মালবাহী জাহাজ) ছায়ার মতো অনুসরণ করে চলেছে। জাহাজটা বন্দর ছাড়তে দেরি করে ফেলেছে, এ কারণে ভারত মহাসাগরের জলদস্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্যে যে পাহারাদার জাহাজের দলটা আছে সেটার সাথে আসতে পারেনি। রাতে প্রচুর বাতাস হয়েছে, সে কারণে লেগ্রাঞ্জ জাহাজের সবগুলো পালই তুলে দিয়েছে, আশা করছে ওর জাহাজটা সামনের পেটমোটা জাহাজটাকে সহজেই ধরে ফেলতে পারবে। জুয়াটা কাজে লেগেছে বলা যায়, ওরা আর এক কি দেড় লীগ পিছিয়ে আছে মাত্র। আর কিছু পরেই ধরে ফেলবে।