“না, প্রাইম মিনিস্টার। আমি শুধু অস্ত্র চুরির ঘটনা থেকে এটুকু বলতে পারি যে, ওরা ভেবেছিল হয়ত কায়রো প্রথম চালান পৌঁছাবার পরই চুরিটা ফাঁস হবে। নিশ্চয় তারা তার আগেই কার্যসিদ্ধির পরিকল্পনা করে রেখেছে।”
“কায়রোতে কখন পৌঁছাবে সেই চালান?”
“এখন থেকে বড়জোর দুই সপ্তাহ।”
“তার মানে সপ্তাহ নয় কয়েকদিনের ভেতরেই ওরা কিছু করবে?”
“আমিও সে ভয়ই পাচ্ছি, প্রাইম মিনিস্টার।”
“আমার পরের প্রশ্ন হল ক্লেইন, তোমার তদন্ত কতদূর এগোল?” তোমার কাছে কী ওবির রিং লিডারদের পুরো তালিকা আছে?”
“পুরো তালিকা বলা যাবে না। কারণ মাত্র ছয়শ’ নাম পাওয়া গেছে। তবে এতে তাদের হোতারা সবাই আছে, যদিও নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই।”
“ধন্যবাদ ব্লেইন।” চুপচাপ নিচের রুপালি দাড়িতে হাত বোলালেন চিন্তিত প্রধানমন্ত্রী। অথচ নীল চোখ দুটো একেবারে শান্ত আর কোনোরকম দুশ্চিন্তার ছায়া পর্যন্তও নেই। সবাই অপেক্ষা করছে উনি আবার কিছু বলবেন; জানতে চাইলেন, “লিস্টের নামগুলো কতটা স্পর্শকাতর?”
“ওরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের প্রশাসক আছেন।
“ইয়েস, উনার সম্পর্কে আমরাও জানি।”
“সংসদের বারোজন সদস্য যার মাঝে প্রাক্তন কেবিনেট মিনিস্টারও আছেন।”
“সংসদীয় ক্ষমতাবলে ওরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে।” বিড়বিড়। করে উঠলেন ফিল্ড মার্শাল স্মুটস।
“আরো আছে চার্চ লিডারস। উচ্চ পর্যায়ের চারজন আর্মি অফিসার, অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনারসহ সরকারি চাকরীজীবী।”
ততক্ষণে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী; বললেন, “আমরা আসলে অপেক্ষা করতে পারব না। সংসদ সদস্য ছাড়া তালিকার বাকি সবাইকে সন্দেহবাদী হিসেবে বিচারের আওতায় নিয়ে আসুন। ড্রাফট রেডি হলেই আমি সাইন করে দিব। এই ফাঁকে কীভাবে গ্রেফতার করা হবে আপনি তার পরিকল্পনা করুন।”
“ইটালিয়ান যুদ্ধ বন্দিদের জন্য কনসেনট্রেশন ক্যাম্প আছে।”
মনে করিয়ে দিলেন ব্লেইন। “গুড।” একমত হলেন স্মুটস “তাহলে যত দ্রুত সম্ভব এদেরকে কারাগারে পাঠানো আর চুরি যাওয়া অস্ত্র আর বিস্ফোরক উদ্ধারের ব্যবস্থা নিন।”
***
“আমরা আসলে আর অপেক্ষা করতে পারব না।” সাবধানে বলে উঠল ম্যানফ্রেড ডি লা রে, “প্রতিটি ঘণ্টাই এখন বিপজ্জনক।”
“কিন্তু আমরা তো প্রস্তুত নই। আরো সময় দরকার।”
বলে উঠল ফার্স্ট ক্লাস রেলওয়ে কম্পার্টমেন্টের আরেক যাত্রী। গত দুইশ মাইলের মধ্যে আলাদা আলাদা করে সবাই ট্রেনে উঠেছে। বাইরের করিডোরে পাহারা দিচ্ছে ওদেরই লোক। তাই আড়িপাতার সুযোগ পাবে না কেউ।
“আপনি তো আরো দশদিন দিবেন বলেছিলেন।”
“আমাদের হাতে আর দশ দিন নেই ম্যান। যা বলছি বুঝতে পারছে না?”
“হবে না। এত অল্প সময়ে কিছুতেই হবে না।” একগুয়ের মত বলে উঠল লোকটা।
“হতেই হবে!” গলা চড়ালো ম্যানফ্রেড।
তীরে এবারে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জানালেন, “জেন্টলম্যান যুদ্ধ নিজেদের সাথে নয় শত্রুর সাথে করবেন।”
প্রচণ্ড কষ্টে রাগ সামলাল ম্যানফ্রেড, “আমি ক্ষমা চাইছি। তবে আবারও বলছি, হাতে একদম সময় নেই। ওয়ার্কশপ থেকে অস্ত্র চুরির কথা ফাঁস হয়ে গেছে। মার্শাল স্কয়ার থেকে একজন এও জানিয়েছে যে, সিনিয়র মেম্বারদের মধ্যে দুইশজনকে কারাগারে প্রেরণের অর্ডার দেয়া হয়েছে। যা রবিবারেই ঘটবে। মানে আর মাত্র চারদিন।”
“এসব আমরাও জানি। যেটা ভাবতে হবে তা হল পুরো পরিকল্পনাটা বাস্তবে রূপ দেয়ার সামর্থ্য আমাদের আছে কী নেই? আমি সবার রায় শুনতে চাই। তারপর ভোট হবে। সবার আগে বিগ্রেডিয়ার কুপম্যানের কথা শুনি।” বলে উঠলেন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর।
সবাই এবার আর্মি জেনারেলের দিকে তাকাল; সাদা পোশাকে থাকলেও অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছে তিনি কতটা প্রভাবশালী। টেবিলের ওপর বিশাল একটা মানচিত্র বিছিয়ে পেশাদার কণ্ঠে কুপম্যান প্রথমেই যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাবাহিনির অবস্থান, দেশে থাকা এয়ারক্রাফট আর আমর্ড কারের সংখ্যা জানিয়ে বললেন, “তো আপনারা এতক্ষণ দেখলেন যে রবাটস হাইটস আর • ডারবানের প্রধান দুটি ব্যারাকে সৈন্যদেরকে বাইরের দায়িত্ব পালন করার জন্য ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে আর বলা যায় প্রস্তুতিও শেষপর্যায়ে। তবে সংখ্যায় পাঁচ হাজারের বেশি হবে না। তাদের কোনো আধুনিক এয়ারক্রাফটও নেই। তাই সমস্ত বড় বড় রাস্তা আর রেলওয়ে ব্রিজ বিশেষ করে ভাল, অরেঞ্জ আর উমজিনদুসি নদীর উপরের সেতু উড়িয়ে দিতে পারলেই সৈন্যদের মনোবল ভেঙে দেয়া যাবে।”
এভাবে আরো দশ মিনিট বর্ণনা দেয়ার পর অবশেষে জানালেন, “সেনাবাহিনির একেবারে সাধারণ কর্মীদের থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ সর্বত্র আমাদের লোক থাকায় যে কোনো অ্যাকশনের খবর আগেই পাওয়া যাবে। এরপর স্যুটসকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনিকে আমাদের পক্ষে নিয়ে আসব। যারা নতুন রিপাবলিকান সরকারকেই সমর্থন করবে।”
একের পর এক বাকিরাও তাদের নিজ নিজ রির্পোট পড়ে শোনাবার পর ম্যানফ্রেড বলল, “জেন্টলমেন, গত বারো ঘণ্টায় পর্তুগিজ অ্যাঙ্গোলার প্রতিনিধির মাধ্যমে আমি জামান আবওয়ের সাথে সরাসরি রেডিওতে কয়েকবার কথা বলেছি। তিনি আমাকে জার্মান হাই কমান্ড আর স্বয়ং ফুয়েরারের সমর্থন সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে আশ্বস্ত করেছেন। কেপটাউনের তিনশ’ নটিক্যাল মাইলের ভেতরেই পাঁচশ টন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করছে জার্মান সাবমেরিন। সিগন্যাল পেলেই আমাদের সাহায্যে ছুটে আসবে।” ধীরে ধীরে জোর দিয়ে শব্দগুলো উচ্চারণ করল ম্যানফ্রেড। বেশ বুঝতে পারছে যে সবাই তার প্রতি কতটা মনোযোগী।