এরপর এক এক করে দেরাজগুলো টেনে বের করল পোয়ারো। একটা দেরাজে দেখলাম একটা পাত্র রয়েছে, একটা স্পিরিট ল্যাম্প আর ছোট সসপ্যান রয়েছে। সসপ্যানের মধ্যে রয়েছে কিছু গাঢ় রঙের তরল পদার্থ। কাছেই একটা খালি কাপ আর রেকাবি রয়েছে।
এই জিনিষগুলো কেন আমার নজরে এল না ভেবে নিজের ওপর ভীষণ রাগ হল। দেখলাম পোয়ারো ঐ তরল পদার্থের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে জিভে লাগালো, বলল কোকোর সাথে একটু রাম মেশানোই আছে বলে মনে হচ্ছে।
এবার ঘরের মেঝের দিকে নজর দিল সে। বিছানার কাছে একটা টেবিল উল্টে পড়ে আছে–একটা টেবিল ল্যাম্প, কিছু বই, দেশলাই, একগোছ চাবি আর একটা কফির কাপের ভাঙা টুকরো চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে।
পোয়ারো বলে উঠল ব্যাপারটা খুবই আশ্চর্যজনক। আমি কি হয়েছে জানতে চাইলাম। পোয়ারো বলল চিমনির কঁচটা মাটিতে পড়ে দুটুকরো হয়ে গেছে, কিন্তু কফির কাপটা একেবারে গুঁড়িয়ে আছে।
আমি বললাম কেউ মনে হয় ওটাকে মাড়িয়ে দিয়েছে। পোয়ারো বলল সত্যিই কেউ কাপটা মাড়িয়ে দিয়েছে একেবারে গুঁড়ো করে দেবার জন্য। হয়ত ওটার মধ্যে স্ত্রিকনিন ছিল আবার হয়ত বা ওটাতে আদৌ স্ট্রিকনিন ছিল না।
ব্যাপারটা আমার ঠিক বোধগম্য হল না। কিন্তু এই মুহূর্তে পোয়ারোকে কিছু প্রশ্ন করা বৃথা, কোনো কথাই সে এখন বলবে না দেখলাম, পোয়ারো আবার অনুসন্ধান শুরু করেছে। মেঝে থেকে চাবির গোছাটা তুলে নিয়ে দুএকটা চাবি পরীক্ষা করে শেষে একটা চাবি দিয়ে গোলাপী হাতব্যাগটা খুলে ভেতরে দু একবার নজর বুলিয়ে আবার বন্ধ করে দিয়ে চাবির গোছাটা পকেটে চলান করল এবার।
হাত ধোয়ার বেসিনের দেরাজগুলো খুব সতর্কভাবে পরীক্ষা করল সে। তারপর বাঁদিকের জানলার কাছে এগিয়ে গেল, মেঝের কার্পেটে একটা গাঢ় বাদামী রঙের দাগ ওর নজের পড়ল। গন্ধশোঁকার একটু চেষ্টাও করল পোয়ারো।
শেষ পর্যন্ত একটা টেস্ট টিউবে কিছু কোকো ঢেলে মুখটা বন্ধ করে একটা ছোট খাতা বের করল পোয়ারো। এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল এই ঘরটা থেকে সে ছটা সূত্র পেয়েছে।
আমি তাকে এক এক করে সেগুলো বলতে বললাম। পোয়ারো বলতে শুরু করল–প্রথমতঃ গুঁড়িয়ে যাওয়া একটা কফির কাপ; দ্বিতীয়ত তালায় চাবি দেওয়া হাতব্যাগ; তৃতীয়ত মেঝের ঐ দাগটা।
আমি বাধা দিয়ে বললাম দাগটা তো অনেক পুরনো হতে পারে। পোয়ারো বলল, দাগটা এখনও ভিজে রয়েছে। তা থেকে কফির গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে সুতরাং দাগটা একেবারে টাটকা।
সে আবার বলতে লাগল–চতুর্থতঃ এক-টুকরো গাঢ় সবুজ রঙের কাপড়ের ছেঁড়া টুকরো যেটা সে খামের মধ্যে রেখেছে। পঞ্চমতঃ মেঝের টেবিলের পাশে পড়ে থাকা মোম। সেদিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে পোয়ারো বলল মোেমটা গতকাল পড়েছে বলে তার মনে হয়। আমি বললাম তাই হবে, কারণ গতকাল যা অবস্থা গেছে, মিসেস ইঙ্গলথর্প হয়ত নিজেই বাতিটা মেঝেতে ফেলে দিয়েছেন। আবার এও হতে পারে লরেন্স গতকাল ঐ সময় যে বাতি হাতে ঘরে ঢুকেছিল–এটা সেটা হতে পারে।
পোয়ারো বলল এটা লরেন্সের বাতি নয়, লরেন্স যেটা এনেছিল সেটা গোলাপী রঙের আর এটা সাদা রঙের। আর মিসেস ইঙ্গলথর্পের ঘরে কোনো বাতি ছিল না, শুধু ঐ ল্যাম্পটা ছিল।
এরপর ছনম্বর সূত্রটা কি জিজ্ঞাসা করতে পোয়ারো বলল সেটা এখন সে বলবে না।
ঘরের চতুর্দিকে শেষবারের মত চোখ বুলিয়ে নিয়ে পোয়রা তাপচুল্লীটা দেখতে গেল। ধীরে ধীরে হাঁটু গেড়ে বসে, পোয়ারো তাপচুল্লীর ছাই উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে হঠাৎ আমার কাছে চিমটেটা চাইল।
চিমটেটা ওর হাতে দিতেই খুব সাবধানে তাপচুল্লীর ছাইয়ের মধ্যে থেকে পোয়ারো আধ পোড়া এক টুকরো কাগজ টেনে বের করল। কাগজটা নিয়ে ভাল করে লক্ষ্য করতেই চোখে পড়ল কাগজটায় দুটো ইংরেজী হরফ–এল আর এবং লেখা। কাগজটা সাধারণ কাগজ অপেক্ষা বেশ পুরু।
হঠাৎ একটা কথা মনে উঁকি দিল, পোয়ারোকে বললাম কাগজটা উইলের ছেঁড়া অংশ নয়। তো, পোয়ারো শান্তভাবে জানাল আমরা ধারণা ঠিক। পোয়ারোর শান্তস্বর শুনে আমি হতবাক হলাম। পোয়ারো বলল সে এরকমই একটা কিছু পাবে বলে আশা করেছিল।
কাগজের টুকরোটা আমি পোয়ারোর হাতে ফিরিয়ে দিতেই সেটাকে যত্ন করে সে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম উইলটা কে পোড়ালো।
পোয়ারোর ডাকে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে মিঃ ইঙ্গলথর্পের ঘরে ঢুকলাম। পোয়ারো চারদিকে গভীর মনোযোগ সহকারে তাকালো। একটু পরে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমরা মিঃ ও মিসেস ইঙ্গলথর্পের ঘর দুটোর দরজাই বন্ধ করে দিলাম।
পোয়ারো বলল সে ডরকাসকে কিছু প্রশ্ন করতে চায় আর মিসেস ইঙ্গলথর্পের নিভৃত কক্ষটা দেখতে চায়। সেই ঘরে পোয়ারোকে পৌঁছে দিয়ে আমি ডরকাসের খোঁজে গেলাম।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডরকাসকে নিয়ে ফিরে এলাম কিন্তু যে ঘরটাতে পোয়ারো ছিল সেখানে তাকে পেলাম না। পোয়ারোর নাম ধরে ডাকতেই সে সাড়া দিল, দেখলাম জানলার পাশে ফুলগাছের কাছে দাঁড়িয়ে সে ফুলগুলোর তারিফ করছে।
আমি বললাম সে যেন ফুলের প্রশংসা ছেড়ে এই ঘরে আসে কারণ তার কথা মতো ডরকাসকে আমি নিয়ে এসেছি।
একটা ছোট ঘরে ডরকাস অপেক্ষা করছিল। এই বাড়ির পরিচারিকা সে। বয়স হয়েছে চুলে যথেষ্ট পাক ধরেছে। পোয়ারোকে দেখে মনে হল ডরকাসের মন সন্দিগ্ধ হয়ে উঠল। কিন্তু পোয়ারো কৌশলে ওর মন জয় করে ফেলল।