- বইয়ের নামঃ দি মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
দি মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস
০১. স্টাইলস রহস্যের কথা
০১.
বসে বসে স্টাইলস রহস্যের কথা ভাবছিলাম। সারা পৃথিবী জুড়ে এই নিয়ে প্রচুর হৈ চৈ হল। উৎসাহের জোয়ারে যেই একটু ভাটা পড়েছে, তখনই এল বন্ধুবর পোয়ারো। সে জানাল স্টাইলস পরিবারের সকলের মিলিত অনুরোধ-ঘটনাগুলির একটা বিবরণ আমাকে লিখতে হবে। কারণ এ ব্যাপারে চতুর্দিকে প্রচুর দুর্নাম ছড়িয়েছে। সকলকে এবার আসল ব্যাপারটা জানানো একান্ত প্রয়োজন।
স্টাইলস পরিবারের সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও, ঘটনাচক্রে ব্যাপারটার সঙ্গে শুরু থেকে জড়িয়ে পড়ায় লেখার দায়িত্বটা আমাকে নিতে হল।
অতএব, কাহিনীর সূচনা এখানেই।…
তখন চতুর্দিকে যুদ্ধের আগুন জ্বলছে। সেই আগুন আমাকেও স্পর্শ করল। অগত্যা একদিন সোজা আমি যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে রওনা দিলাম। কিন্তু দিন কয়েক যেতে না যেতেই আহত হয়ে হাসপাতালে আশ্রয় নিতে হয়। কয়েক মাস সেখানে কাটানোর পর একটু সুস্থ হলাম। এর ফলে এক মাস ছুটিও পেয়ে গেলাম। এবারই দেখা দিল আসল সমস্যা। কারণ আত্মীয় স্বজন বা এমন কোনো বন্ধুবান্ধব আমার নেই যে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হব।
হঠাৎ দেখা হয়ে গেল জন ক্যাভেণ্ডিসের সঙ্গে। জন আমার চেয়ে বছর পনেরোর বড়। বহুদিন পরে ওর সঙ্গে দেখা হল। ওর সঙ্গে আমার খুব একটা অন্তরঙ্গতা ছিল না, তবে ওদের এসেক্সের বাড়িতে আগে মাঝেমাঝে গেছি।
বিগত দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতেই জন আমাকে তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাল, বলল আমাকে দেখলে নাকি তার মা খুশী হবেন। আমি জানতে চাইলাম তার মা কেমন আছেন। জন বলল ভালই এবং সেই সঙ্গে একটা অবাক করা কথাও শোনাল। জানাল তার মা নাকি বিয়ে করেছেন।
ওদের পারিবারিক ইতিহাস আমার অজানা নয়। জনের মা মারা যাওয়ার পর জনের বাবা আবার বিয়ে করলেন। এই ভদ্রমহিলাই জনের মা অর্থাৎ সৎ মা। মিসেস ক্যাভেণ্ডিস মধ্যবয়স্কা মহিলা হলেও বেশ সুন্দরী, এখন বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি, ভদ্রমহিলাকে দেখে আমার বেশ কর্তৃত্বপরায়ণা বলেই মনে হয়েছে। ভদ্রমহিলা দান-ধ্যানও করতেন। তবে সমাজে যে অল্প বিস্তর নিন্দেও ছিল না তা নয়। তবে আসল কথা হল মহিলা বেশ হৈ চৈ করে নিজেকে জাহির করতে চাইতেন।
জনের বাবা মিঃ ক্যাভেণ্ডিস তার বিয়ের প্রায় পরেই তার দেশের বাড়ি স্টাইলস কোর্ট তার সম্পত্তি থেকে ছেলেদের বঞ্চিত করে জনের সৎ মা অর্থাৎ মিসেস ক্যাভেণ্ডিসকে দিয়ে গেলেন। সৎ মা হলেও মহিলা ছেলেদের খুব স্নেহ করতেন। বাবার বিয়ের সময় ওরা এত ছোট ছিল যে সত্যকেই নিজের মা বলে জেনে এসেছে।
জনের ছোট ভাই লরেন্সের শরীরটা বরাবরই খারাপ। ডাক্তারী পাস করার পর চিকিৎসা করার চেষ্টা না করে সে বাড়িতে বসে কাব্যচর্চা শুরু করে দিল। এতে অবশ্য কোনো সুনাম জুটল না।
জনও কিছুদিন ওকালতি করার পর সেসব পাট চুকিয়ে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে এল। দুবছর আগে জন বিয়ে করেছিল। বউও স্টাইলেসে থাকত। আমার একটা কথা প্রায়ই মনে হত। জনের আসল ইচ্ছে হয়ত মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা কড়ি নিয়ে অন্য কোথাও বাসা বাঁধে।
মিসেস ক্যাভেণ্ডিস বেশ জাঁদরেল মহিলা ছিলেন। তিনি চাইতেন সবাই তার হুকুম মেনে চলুক। সব টাকাপয়সা তার হাতে থাকায় একাধিপত্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সুবিধাটাও তিনি ভোগ করতেন।
তার বিয়ের কথা শুনে আমাকে বিস্মিত হতে দেখে জনের ঠোঁটে একটা ক্লিষ্ট হাসি ফুটে উঠল।
একটু পরে জন জানতে চাইল আমার ইভিকে মনে আছে কিনা। আমি মাথা নেড়ে জানালাম আমি তো ঐ নামে কাউকে চিনি না। জন বলল তারই ভুল হয়েছে। আসলে শেষবার আমি চলে আসার অনেক পরে নাকি ইভি এসেছে। মেয়েটা সব কাজে পারদর্শী, তবে চেহারাটা এমন কিছু নয়। কথা বলতে বলতে জন হঠাৎ থামল।
আমি প্রশ্ন করলাম জন কি বলতে গিয়ে থেমে গেল। জন জানাল, একদিন একটা লোক কোথা থেকে এসে হাজির হল আর নিজেকে ইভির দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলে পরিচয় দিল। লোকটা দেখতে একেবারের বাউণ্ডুলের মত–একমুখ ভর্তি দাড়ি মুখটাও কুৎসিত, জনের মা লোকটার মধ্যে কি দেখলেন সেকথা জনের আজও বোধগম্য নয়। তিনি লোকটাকে একেবারে সেক্রেটারি করে নিলেন। তার বিভিন্ন সমিতির কাজকর্ম বেশ মন দিয়ে করে লোকটা মিসেস ক্যাভেণ্ডিসের মন জয় করে ফেলেছিল। এরপর যা ঘটল সেটাই তাজ্জব ব্যাপার। মিসেস ক্যাভেণ্ডিস মাস তিনেক আগে জানালেন তিনি ঐ লোকটাকে বিয়ে করছেন। লোকটা মহিলার চেয়ে প্রায় কুড়ি বছরের ছোট। লোকটা খুবই ধুরন্ধর। তার নজর আসলে মহিলার ধনসম্পত্তির ওপর। শেষ পর্যন্ত বিয়েটাও হয়ে গেছে।
আমি বললাম তাহলে জনকে বেশ অস্বস্তির মধ্যেই দিন কাটাতে হচ্ছে। জন বলল একটা কদর্য আবহাওয়ার মধ্যে বাস করছে।
এরপর জনের আমন্ত্রণ গ্রহণ না করে পারলাম না। দিন তিনেক পর ট্রেনে করে পৌঁছে গেলাম স্টাইলসের সেন্ট মেরী স্টেশনে। স্টেশনটা বেশ ছোট, চারদিকে সবুজ মাঠ আর সরু সরু রাস্তার মাঝখানে যেন নিতান্তই বেমানান। জন আমার জন্য প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিল। ট্রেন থেকে নেমে ওর সাথে গাড়িতে উঠলাম।