- বইয়ের নামঃ দি মিস্ট্রি অফ ব্লু ট্রেন
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
দি মিস্ট্রি অফ ব্লু ট্রেন
১. সাদা চুলের লোকটি
দি মিস্ট্রি অফ্ ব্লু ট্রেন (এরকুল পোয়ারো সিরিজ) – আগাথা ক্রিস্টি
০১.
সাদা চুলের লোকটি
প্রায় সারারাত। জানুয়ারির কনকনে শীতে সারা প্যারী শহরটা যখন ঝিমিয়ে পড়েছে তখন প্রেস দ্য লা কনকর্ড দিয়ে একটি লোক হনহন করে চলছে। নাম বোরিস আইভনোভিচ। খর্বাকৃতি সাধারণ চেহারা সেভিয়েট দূতাবাসের একজন পদস্থ কর্মচারী। তার দেহের শীর্ণতা গায়ের পুরু ফার কোটেও ঢাকা পড়েনি।
সে হাঁটতে হাঁটতে সীন নদীর ওপরে যে ব্রীজটা আছে সেটা পার হয়ে অখ্যাত পল্লীর ভেতরে ঢুকে পড়ল। বেশ কিছুদূর যাবার পর সে একটা আধভাঙা বড় ফ্ল্যাট বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল।
চারিদিকটা দেখে সে সোজা বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। খোলা দরজা দিয়ে ঢুকে একেবারে সিঁড়ি বেয়ে সোজা পাঁচ তলায় উঠে একটা ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দাঁড়াতেই দরজা খুলে দেখা দিল এক তরুণী– ওলগা ডেমির। সেও সেভিয়েত দূতাবাসের কর্মচারী।
কোনোরকম অভ্যর্থনা বা কোনো কথা বলল না ওলগা। বোরিসও কোনো কথা না বলে ভেতরে ঢুকে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে ওম্মা দরজা বন্ধ করে দিল।
–এদিকে সব ঠিক আছে তো? চাপাকণ্ঠে জিজ্ঞেসা করল বোরিস।
– মনে হয় আমার আসার পথে কেউ পিছু নেয়নি। কথাগুলো আপনমনে বলেই জানলার কাছে এগিয়ে গিয়ে পর্দাটা সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়েই কয়েক পা পিছিয়ে এল।
– কি ব্যাপার?– ওলগা জিজ্ঞেস করল।
–সামনে ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে দুটো লোক এই ঘরটার দিকে তাকিয়ে আছে– বোরিসের বিস্মৃত কণ্ঠস্বর।
– ওরা তোমার আসার আগে থেকেই আছে। ওলগা আশ্বাস দিল।
–কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, ওরা আমাদের দিকে নজর রাখছে।
– হতে পারে, কারণ সন্ধ্যার ঠিক আগেই ওই লোক দুটোকে একটা সাদা চুলওয়ালা লোকের সঙ্গে কথা বলতে দেখছি। লোকটার চাল চলন যেন কেমন, আমার মনে হচ্ছিল ওদের কিছু নির্দেশ দিচ্ছিল।
-তাহলে তো মনে হয় তোক দুটো তার ভাড়া করা গুণ্ডা।
— ঐ রকম একটা কিছু মনে হয়।
— তাহলে তো রীতিমত ভয়ের কথা।
–তোমার আবার ভয় কিসের? তুমি তো আর বামাল সমেত যাচ্ছ না।
–বামাল সমেত না হলেও টাকা নিয়ে তো যেতে হবে। যাকগে, এখন সেই আমেরিকান সময়মত এলে হয়। ভালো কথা, প্যাকেটটা ঠিক আছে তো?
–হ্যাঁ, ওটা যথাস্থানেই আছে।
ঠিক সেই মুহূর্তে কলিং বেলটা বেজে উঠল।
– এলেন বোধ হয়– মন্তব্য করল বোরিস।
ওলগা দরজা খুলতে গেল। ভদ্রলোক দেখছি খুবই পাংচুয়াল।
এক দশাসই প্রৌঢ়কে নিয়ে একটু পরেই ফিরে এলো।
তিনি বোরিসের দিকে তাকিয়ে : মঁসিয়ে, ক্রাসনিন?
–হ্যাঁ, আমিই সেই সেই লোক। কাজটা খুবই গোপনীয় বলে আপনাকে কষ্ট দিয়ে এতদূর আনার জন্য ক্ষমা চাইছি।
– আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। কেউ আমাদের লেনদেনের ব্যাপারে জানবে না। নিন্ মালটা বের করুন এবার।
টাকা এনেছেন তো?
— নিশ্চয়ই।
বোরিস্ ওলগাকে ইশারা করল। ও চুল্লীর কাছে গিয়ে ভেতরে হাত দিয়ে ছাই আর পোড়া কয়লার মধ্যে থেকে একটা কাগজ মোড়া প্যাকেট বার করে আনল।
প্যাকেটটা নিয়ে বোরিস কাগজের মোড়কটা খুলতেই বেরিয়ে পড়ল একটা ভেলভেটের বাক্স।
গভীর আগ্রহে বোরিসের হাত থেকে বাক্সটা নিয়ে ভদ্রলোক ঢাকনিটা খুলে ফেলল। ভেতরে পায়রার ডিমের মতো একটা নিটোল রুবী এবং সঙ্গে আরও কয়েকটা ছোট রুবী।
জিনিসগুলো দেখে আপন মনে বুঝে সে নিশ্চিন্ত হল। বাক্সটা বন্ধ করে বেলটের পাশের পকেটে ঢুকিয়ে রেখে ভেতরের পকেট থেকে এক তাড়া নোট বের করে বোরিসের হাতে দিয়ে দিল।
নোটগুলো সবই ছিল হাজার পাউণ্ডের। গুণতে বেশি সময় লাগল না। এবার সে বলল, ঠিক আছে স্যার।
এবার তাহলে চলি। গুড নাইট। ওলগা দরজা খুলে দিল। ভদ্রলোককে বিদায় দিয়ে এসে বলল, এবার আমার পাওনা মিটিয়ে দাও তো।
দুখানা নোট তার হাতে দিল বোরিস। খুশী তো? আশাতীত পেয়ে খুশীতে ঝলমলিয়ে উঠল সে। নোট দুটোকে ভাজ করে সে তার মোজার ভেতরে রাখল।
জানলার কাছে গিয়ে ওরা দেখল ভদ্রলোক দ্রুতপায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। তারপরেই দুটো ছায়ামূর্তি বেরিয়ে এসে তাকে অনুসরণ করতে লাগল।
–যা সন্দেহ করেছিলাম তাই হলো দেখছি। চাপাকণ্ঠে বলল বোরিস।
একটু বাদেই দেখা গেল আরেকটি লোক তাদের অনুসরণ করছে। ওগাঁ লোকটিকে চিনতে পারল।
ওই দেখ সেই লোকটা। বোরিস সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার দিকে তাকাল। ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে একটি লোক–তার মাথার চুলগুলো বেশ ঘন আর ধবধবে সাদা।
.
০২.
মঁসিয়ে নে মার্কুইস
সাদা চুল লোকটা গদাইলস্করি চালে হাঁটছে। যেন কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। তারপর একটা মোড়ের কাছে সে হাজির হলো। দুটো রাস্তা দুদিকে গেছে। সে ডানে না গিয়ে বাঁ দিকের রাস্তা ধরল। কিছুদূর গিয়েই আরেকটি মোড় এবার ডানদিকে গেল।
কয়েক মিনিট বাদেই দুটো গুলির আওয়াজ শোনা গেল। থমকে দাঁড়িয়ে লোকটা বুঝতে চেষ্টা করল আওয়াজটা কোনোদিক থেকে এসেছে। তার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল কুর হাসির রেখা।
আবার সে চলতে শুরু করল ঠিক আগের মত করে। একি! সামনে ওটা কিসের ভিড় জমেছে। সে ভিড়ের কাছে গেল।